#পর্ব_১৮
#প্রহর_শেষে_আলোয়_রাঙা
লেখিকাঃ #নুুরুন্নাহার_তিথী
খুব ধীর পায়ে বিনাশব্দে প্রহর ও সুদীপ্ত গুহার মুখে এসে পৌঁছায়। গুহার ভেতর থেকে হাসি-তামাশার ধ্বনি আসছে। সুদীপ্ত ও প্রহর একে-অপরের দিকে ইশারা করে এক ধারছে টিয়ার গ্যাস ও লাফিং গ্যাস স্প্রে করা শুরু করে। ভেতরে থাকা চারজন কিছু বুঝে উঠার আগে টিয়ার গ্যাসের শি*কা*র হয়। এই গ্যাস কয়েক ধরনের রাসায়নিক যৌগের একীভূত মিশ্রণ। তবে এটি শুধু গ্যাস নয়! মিহি গুড়ো পাউডার বা তরলের অতি ক্ষুদ্রকণার সমষ্টি নিয়ে এই গ্যাস গঠিত। গুড়োয় ক্ষারজাতীয় রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে। যার দরুণ চোখ জ্বালাপোড়া করে রক্তবর্ণ ধারণ করে ও কান্নার উদ্রেক ঘটায়।
লাফিং গ্যাসটা সুদীপ্ত কয়েক সেকেন্ড পরে স্প্রে করলে না*ইট্রাস অ*ক্সাইডের মিষ্টি সুঘ্রাণে হাসির উদ্রেক ঘটায়। একসাথে হাসি-কান্নাতে চারজন পাহাড়াদারের নাজেহাল অবস্থা। ডঃ আরমান শেখ গুহার একদম ভেতরের কর্নারে ঘুমিয়ে আছেন। তাকে এলার্জির ইনজে-কশন দেওয়া হয়েছিল। প্রহর ও সুদীপ্ত সময় ব্যয় না করে গুহার ভেতরে প্রবেশ করে ডঃ আরমান শেখের চোখে রুমাল ও মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে দেয়। হেলিকাপ্টার আসার সময় ঘনিয়ে এসেছে। সুদীপ্ত খুব দ্রুত শ*ত্রুপক্ষের সকল অ*স্ত্রশ*স্ত্র কবজা করে নেয় অতঃপর ওদের হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে দেয়। হেলিকাপ্টারের শব্দ আসছে তার মানে খুব কাছেই আছে। প্রহর ও সুদীপ্ত মিলে ডঃ আরমান শেখকে ঘুমন্ত অবস্থায় ধরে ধরে গুহার বাহিরে এনে হেলিকাপ্টার ল্যান্ড করার অপেক্ষা করছে। সাথে থাকা সে*নারা গুহার ভেতর থেকে চারজনকে ধরে নিয়ে আসে। প্রহর একজন সেনাকে ডেকে আরমান শেখকে ধরতে বলে কি মনে করে গুহার ভেতরে ক্লু খুঁজতে যায়। টর্চ দিয়ে কোনায় কোনায় খুঁজতে থাকে। ওই চারজনের যোগাযোগের জন্য ব্যাবহার করা ডিভাইসটা প্রহর পায়। সেখানে নেটওয়ার্ক একদম পূর্ণ। হেলিকাপ্টার আসার আগ পর্যন্ত সে অপেক্ষা করবে কেউ যোগাযোগের চেষ্টা করে কীনা।
পরপর তিনটা হেলিকাপ্টার এলে একটাতে সুদীপ্ত ও আরমান শেখের সাথে আরও পাঁচ-সাতজনের মতো সেনা উঠে। তারপরেরটাতে দশজনের মতো উঠে। প্রহর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। হুট করে ডিভাইসটা রিং হলে প্রহর বাঁকা হেসে রিসিভ করে। অপর পাশ থেকে ভেসে আসে,
“কি অবস্থা এখন স্যারের? ইন*জেকশন দেওয়া হয়েছিল?”
প্রহর বাঁকা হেসে বলে,
“ইটস প্রহর শেহমাত!”
লোকটি প্রচণ্ড অবাক হয়ে কিয়ৎক্ষণ স্তব্ধ থেকে বিস্ময় নিয়ে বলে,
“প্রহর! হাউ?”
“সারপ্রাইজ! প্রহর লাভস ইট ইউ নো? আলোকে আঘাত করে প্রহরকে দমাতে চাওয়ার মতো বোকামি করে ফেলেছ। প্রহর তাতে আরও এ*গ্রেসিভ হবে তা হয়তো ধারণা করোনি। তাই না?”
অপরপাশ মৌন রয়। প্রহর আবার বলে,
“বাই দা ওয়ে, ইউ কল হিম স্যার! ইজ ইউ??”
প্রহরের বলতে দেরি কিন্তু ডিসকানেক্ট হতে দেরি নেই। প্রহর বাঁকা হেসে ডিভাইসটা সাথে নিয়ে চলল। তিনটা বড়ো হেলিকাপ্টারেই সবাই ফিরে চলল।
_________
“না না না। এটা হতে পারে না। ডঃ আরমান শেখ আমার হাতের নাগালের বাহিরে চলে গেলো! হাউ কুড ইট? আমার ভাবনার বাহিরে এই প্রহর। সবসময় স্যার ওকে এই কারণেই বেশি পছন্দ করত। অ্যাই জাস্ট হেইট প্রহর।”
লোকটি নিজের অফিসরুমের টেবিলে থাকা মেটবুকটাকে ফ্লোরে ছুঁড়ে মা*রে। কেবিনের সবকিছু ভা*ঙচুর করে হনহনিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। অফিসের সকল স্টাফ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তারা তাদের বসকে এতোটা এ*গ্রেসিভ হতে দেখেনি। খুব অমায়িক তার ব্যাবহার।
_______
সেনানিবাসে ফিরে তিন ঘণ্টা হলো। আরমান শেখের সবে জ্ঞান ফিরেছে। ডাক্তার এসে তার চেকআপ করছে। চেকআপ করে বেরিয়ে তিনি প্রহরকে বলেন,
“হি ইজ কোয়াইট উইক প্রহর। প্রিভিয়াসলি হি সাফার্ড ফর্ম এ*লার্জিক রিয়কাশন। টেক কেয়ার অফ হিম।”
প্রহর ডাক্তারের কথায় মাথা নাড়ায়। ডাক্তার ওর হাতে প্রেসক্রিপশনটা দেয় যাতে কিছু টেস্ট লিখা আছে। প্রহর এখন আরমান শেখের কাছে যায়। আরমান শেখ ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। প্রহর মায়াভরা চাহনিতে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে চেয়ার টেনে বসল। উনার হাত ধরে বলল,
“স্যার!”
আরমান শেখ হাতে কারও স্পর্শ পেয়ে একবার প্রহরের দিকে তাকায় তো আরেকবার হাতের দিকে। তার দৃষ্টির ভাষা বলে দিচ্ছে সে প্রহরকে চিনতে পারছে না। প্রহর হতাশ হয়ে অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে উঠে গেল। কালকেই সাজেস্ট করা টেস্টগুলো করাতেই হবে।
বাহিরে গিয়ে প্রহর সুদীপ্তকে বলল,
“যেই ডিভাইসটা দিলাম তার থেকে নাম্বারটা জানতে পেরেছেন?”
সুদীপ্ত হতাশ কণ্ঠে বলে,
“এখনও না। ট্র্যাকিংয়ের চেষ্টা চলছে। ডঃ আরমান শেখ কিছুটা সুস্থ হলে তিনি আমাদের তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন। কী অবস্থা এখন উনার?”
“অ্যাই থিংক হি লস্ট হিজ মেমোরি!”
“হোয়াট!”
সুদীপ্তের হঠাৎ রিয়াকশনে প্রহর বলে,
“উনি আমাকে চিনতে পারেননি। চোখে-মুখে কোনো উচ্ছাসতা বা চেনার পতিক্রিয়া ছিল না।”
সুদীপ্ত প্রহরকে শান্তনা দিয়ে বলে,
“হতে পারে এতোদিন পর মুক্তির স্বাদে তিনি হতবাক হয়ে গিয়েছেন। বন্ধী পরাধীন জীবন যাপন করেছেন এতোদিন। এমনও হতে পারে তিনি শ*কে আছেন। গিভ হিম টাইম টু এডজাস্ট। এভরিথিং উইল বি ফাইন। ডোন্ট ওয়ারি।”
প্রহর চুপ করে থাকে। আলোর খবর নিতে শিতলকে হোয়াটসএপে কল করে। শিতল ল্যাবে কাজ করছিল। প্রহরের ফোন পেয়ে রিসিভ করে বলে,
“কেমন আছিস? কী অবস্থা এখন?”
“ভালো। স্যারকে খুঁজে পেয়েছি।”
প্রহর খবরটা জানানো মাত্রই শিতল খুশিতে আত্মহারা হয়ে উচ্ছাসিত কণ্ঠে বলে,
“রিয়ালি? অ্যাই কান্ট বিলিভ। কতোগুলো বছর পর। কেমন আছেন স্যার?”
প্রহরের হতাশ জবাব,
“ভালো না। জা*নো-য়া*রটা স্যারকে জীবন্ত লা*শ বানিয়ে দিয়েছে। সে আমাকে চিনতে পারছেন না শিতল! আমি স্যারের সবচেয়ে প্রিয় স্টুডেন্ট আর স্যার আমাকেই চিনতে পারছেন না। কলেজের প্রথম বর্ষ থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সাড়ে আট বছরে তার ভরসার জায়গায় আমি ছিলাম প্রথমে। নাহলে কেউ কি তার মেয়েকে বিয়ে দেয়?”
শিতল কি বলবে বুঝতে পারছে না। আরমান স্যার যে প্রহরের জীবনে অনেকক্ষাণি জায়গা জুড়ে আছে তা শিতল জানে ও বুঝে। শিতল বলে,
“তুই আর রেদওয়ান ভাইয়া ছিলি স্যারের সবচেয়ে পছন্দের স্টুডেন্ট। কিন্তু তুই সবার প্রথমে। তোর মনের স্নিগ্ধতায় ও কিছু মিলের কারণে স্যারের সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রের প্রথম স্থানে আসীন হয়েছিস। তোর কেমন লাগছে তা পুরোপুরি বোঝাও কঠিন। খেয়াল রাখ স্যারের আর আলোর চিন্তা করিস না। সে সেফ আছে।”
“হুম। এরা বাবা-মেয়ে আমাকে শান্তি দিবেনা রে। দুইজনের চিন্তায় আমি!”
“অতো চিন্তা করিস না। অতিসত্তর দেশে ফিরে আয়। আসল কা*ল*প্রিটকে জলদি খুঁজে পাব আমরা।”
প্রহর হালকা হাসে। শিতলকে সতর্ক করতে বলে,
“সেই অচেনা কা*লপ্রি*ট জেনে গেছে আমি স্যারকে উদ্ধার করে ফেলেছি এবং আলোর সাথে নেই আমি। খুব সাবধানে থাকতে হবে। আমি হেডকোয়াটারে বলে দিয়েছি। তারা তোদের সুরক্ষাতে আ*র্মি রাখবেন।”
“আমি খেয়াল রাখছি। চিন্তা করিস না। সব ঠিক হবে ভাই।”
প্রহর স্বস্থি পায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ,