#সে
#পর্ব_১০
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
____________________
আমি প্রায় হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি। সঙ্কিত মনে রুদ্রর মুখপানে তাকিয়ে থেকেও কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না। তবে রুদ্রর চোখে-মুখে বিস্ময়। তবে কি সে আমার থেকে এ ধরণের কোনো কথা আশা করেনি? আমি ভীষণ নার্ভাস হয়ে যাচ্ছি। স্বাভাবিক থাকতে চেয়েও পারছি না। জোরপূর্বক ঠোঁটের কোণে মেকি হাসি এনে বললাম,’ভালোবাসার কথা শোনার পর কেউ ক্রেজি বলে?’
রুদ্র একবার আশেপাশে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে। পকেটে দু’হাত পুরে বলে,’দেখো নবনী তোমার ভালোবাসার কথা শুনে এই মুহূর্তে আমি অন্যকিছু আর বলতে পারলাম না। মানে! মানে কী এসব? তুমি কীভাবে বলে ফেললে ভালোবাসি? এক বছরও হয়নি আমাদের পরিচয়ের। এর মধ্যেই ভালোবাসা হয়ে গেল? কতটুকুই বা চেনো আমায়? কতটুকুই বা জানো আমার সম্পর্কে? এত অল্প সময়ে ভালোবাসা হয় না।’
‘একটা মানুষকে ভালোবাসার জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়? এক ছাদের নিচে থেকেও তো একটা মানুষকে আগাগোড়া কখনো চেনা যায় না। সেখানে দীর্ঘ সময় নিলেও আমি আপনায় চিনে ফেলব?’
রুদ্র দুই ভ্রুঁ কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অথচ তার নিরবতা আমার প্রাপ্য নয়। আমি চাই তার মুখ থেকে উত্তর শুনতে। বিচলিত হলেও তাকে বুঝতে দিলাম না। জিজ্ঞেস করলাম,’আপনি আমায় ভালোবাসেন না?’
‘না।’ রুদ্রর সোজাসাপ্টা উত্তর।
‘না? তাহলে এত কেয়ার, সময় দেওয়া, পাগলামি করা এসব কী ছিল?’
‘দেখো প্রথমত, তোমার যেন কোনো ক্ষতি না হয় এজন্যই ছায়ার মতো তোমার সাথে ছিলাম। তোমায় স্বাভাবিক করতে অতিরিক্ত সময় দিতাম। তুমি যাতে হ্যাপি থাকো এজন্য পাগলামি করতাম। কিন্তু এগুলো ভালোবাসা নয়। তুমি আমায় ফ্রেন্ড বানিয়েছ। বন্ধুত্বের জন্যই এতটুকু করেছি বলতে পারো।’
‘শুধুই বন্ধুত্ব? এগুলাই রিজন?’
‘হ্যাঁ।’
‘অন্য কাউকে ভালোবাসেন আপনি?’
‘না।’
‘তবে সমস্যা কী?’
‘সমস্যা আছে নবনী। অনেক সমস্যা রয়েছে। আমার সম্পূর্ণ ফোকাস এখন শুধু ক্যারিয়ারের দিকে। অন্য আর কোনোকিছুতে আমি ফোকাস করতে পারব না। এখন যদি আমি কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি তাহলে একটু হলেও আমার ফোকাস থেকে আমি সরে আসব। তাই রিলেশনে যাওয়া সম্ভব নয়। বাকি রইল বিয়ের কথা? সে তো আরও পরের কথা।’
রুদ্রর প্রত্যেকটা কথাই শুনলাম। মনোযোগসহকারে শুনলাম। হয়তো রুদ্র তার জায়গায় সঠিক। আমিই অপাত্রে ভালোবাসা প্রদান করেছি। রুদ্র আবার বলল,’আমি নিজে টাকা ইনকাম করব। নিজের বাড়ি হবে, গাড়ি হবে। আমি একটা লাক্সারি লাইফ লীড করতে চাই।’
‘আচ্ছা।’
ব্যাস এইটুকু বলেই আমি বাড়ির দিকে হাঁটা ধরি। এর বেশি কিছু আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। বলারও তো নেই। কী-বা বলা যায় বলুন তো? এরপর থেকেই আমার মাঝে নিরবতা ভর করে। না আমি কখনো রুদ্রর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি; না রুদ্র কখনো চেষ্টা করেছে। আমি নিজের মধ্যে গুমড়ে মরলেও রুদ্র আগের মতোই ছিল। নিয়ম করে তার আইডিতে ঘোরা বন্ধ করতাম না। তার আইডি দেখতাম। পোষ্ট দেখতাম। বন্ধু, কাজিনদের সাথে ঘুরতে গিয়ে আপলোড করা ছবি দেখতাম। আর সবশেষে নিরবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়তাম।
পড়ার মাঝে ডুবে থাকার চেষ্টা করেও পারতাম না। এক লাইন পড়তে গেলেও বারবার রুদ্রর কথা মনে পড়ত। মনের মতো বেহায়া বোধ হয় আর কিছু নেই। নিজের সাথে যুদ্ধ করেও বারবার আমি পরাজিত হচ্ছিলাম। কেঁদেকেটে সময় কাটছিল আমার। মনের বিরুদ্ধে গিয়েই বই নিয়ে বসে থাকতাম। টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্টের পর এখন শুধু কোচিং হয়। আর প্রাইভেট পড়ি। এই দুটো নিয়ে পুরো দস্তুর ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু যখনই রুদ্রর আইডি চেক করি কষ্ট লাগে খুব। হতাশ হয়ে পড়ি। আমি ধুকেধুকে কষ্ট পেলেও ঐ মানুষ ভীষণ ভালো আছে।
মাঝে মাঝে মনে হতো ম্যাসেজ দেই। আবার ভাবতাম, না থাক! দেবো না। সে যদি আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারে তবে আমি কেন পারব না? আমাকেও পারতে হবে।
এদিকে স্কুল লাইফটাও একদম শেষের দিকে। আজকে বিদায় অনুষ্ঠান। কী যেন হারিয়ে ফেলার কষ্ট অনুভব করছি। হয়তো স্কুল জীবনটাকেই। স্কুলে গিয়ে সারাটাদিন ফ্রেন্ডসদের সঙ্গেই ছিলাম। চোখের পানি বাঁধ মানেনি আজ কারো।
বিকেলের দিকে অনুষ্ঠান শেষ হয়। সবার সঙ্গে স্কুল থেকে বের হওয়ার পর রুদ্রকে দেখতে পাই। প্রথমে ভেবেছি হয়তো কোনো কাজে এসেছে। কিন্তু যখন সে আমার দিকেই এগিয়ে এলো তখন বুঝলাম আমার জন্যই এসেছে। তবুও শিওর করে বলা যায় না। এখনও পর্যন্ত আমি তো তাকে চিনতেই পারলাম না। সে আমার বাকি বান্ধবীদের সঙ্গেই আগে কথা বলল। ওরা বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার পর রুদ্র বলল,’চলো সামনে আগাই।’
আমি কিছু না বলেই হাঁটা শুরু করি। রুদ্র একটা রিকশা ডাকে। রিকশায় উঠার পর রুদ্র-ই কথা বলা শুরু করে। জিজ্ঞেস করে,’কেমন আছো?’
‘আলহামদুলিল্লাহ্ । আপনি?’ বললাম আমি।
‘আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। মুখ এমন শুকিয়ে গেছে কেন? কান্না করেছ?’
তার এই প্রশ্নে আমি নিরুত্তর রইলাম। সে নিজেই বলল,’এতগুলো দিন কথা না বলে থাকতে পারলে?’
‘আপনিও তো বলেননি।’
‘মিস করেছি অনেক।’
‘কখনো একটা ম্যাসেজও তো দেননি।’
‘মিস করেছি এটা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আমি বলতে পারি না।’
‘অথচ আপনি আমায়ও বলেননি।’
‘রিলেশনশিপ না হলে কি বন্ধুত্বও রাখা যায় না?’
‘যেখানে অবহেলা থাকে, সেখানে আমি থাকতে পারি না।’
‘আমি অবহেলা করিনি নবনী। শুধু সত্যটা তোমায় জানিয়েছি।’
রিকশা বাড়ির সামনে চলে আসায় আর কিছুই বলিনি তাকে। তবে এরপর থেকে আবারও তার সাথে আমার যোগাযোগ শুরু হয়। কথা হয়। তবে আগের তুলনায় তেমন না। সে নিজে থেকে কিছু না বললে আমিও যেচে কিছু বলি না। এটাকে কেউ ইগো ভাববেন না। শুধুমাত্র রুদ্র যেন বিরক্ত না হয় এজন্যই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি।
ফাইনাল পরীক্ষা হলেও এবার মা ফোন নেয়নি। কারণ বিভিন্ন সাজেশন+ফ্রেন্ডের হেল্প ফোনের মাধ্যমেই নিতে হচ্ছে। আমি নিজেও এখন পড়া নিয়ে প্রচুর সিরিয়াস। প্রয়োজন ছাড়া ফোন হাতে নিই না। রাতে মা সঙ্গে ঘুমায় বলে বেশিক্ষণ ফোন চালানোরও সুযোগ নেই। রুদ্রর থেকে দূরে থাকার জন্য এটা আমার কাছে প্লাস পয়েন্ট। যদিও মন মানতে চাইত না। তবে মানিয়ে নিচ্ছি। এখনও অব্দি তো কম কিছুর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিইনি।
আমার নিরবতা রুদ্রর ওপর উল্টো প্রভাব ফেলল। সে আমার নিরবতা দেখেছে কিন্তু নিরব হয়ে যাওয়ার কারণ খোঁজেনি। এবার সেও আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিল। বন্ধ করে দিল বলতে সেও ম্যাসেজ করে না, আমিও করি না। প্রথম পরীক্ষা দিয়ে আসার পর ম্যাসেজ করে জিজ্ঞেস করেছিল,’পরীক্ষা কেমন হলো?’
আমি বললাম,’আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো হয়েছে।’
‘ভালোমতো পড়ো আর পরীক্ষা দাও।’
এরপর নরমাল কথাবার্তা হলো। আমি তার হাভভাব কিছুই বুঝি না। সে বলে আমায় ভালোবাসে না। আবার সে আমায় ছাড়তেও চায় না। আপনাদের একটা কথা শেয়ার করি। তাহলে বুঝতে পারবেন, আমার এমন কনফিউজড হওয়ার কারণ কী। পাঁচ নাম্বার পরীক্ষার পর তিনদিন গ্যাপ ছিল। ভালোই লম্বা একটা সময় হাতে। তাই পড়ার পাশাপাশি ফোনটাও অপ্রয়োজনে হাতে নেওয়া হতো। একদিন নিউজফিড ঘাঁটতে ঘাঁটতে রুদ্রর রিসেন্ট একটা পোষ্ট চোখের সামনে আসে। পোষ্ট অনেকটা এমন ছিল,’ভালোবাসার এক রাজ্যে যেতে চাই তোমায় নিয়ে। তুমি কি যাবে?’
কবিতার মতো করে ছিল। সবসময়ের মতো এবারও আমি তার এই পোষ্টের সব কমেন্টগুলো দেখছিলাম। সেখানে একটা মেয়ের কমেন্ট ছিল,’তুমি যাবে কী?’
রুদ্র কমেন্টে লাভ রিয়াক্ট দিয়ে রিপ্লাই করেছিল,’অবশ্যই।’ সঙ্গে লাভ ইমুজি দিয়েছিল। খটকা লাগার পাশাপাশি আমার ভীষণ খারাপ লাগছিল। হিংসা’ও বলা যায়। আমি দুজনের কমেন্টেই লাভ রিয়াক্ট দিয়েছিলাম।
সঙ্গে সঙ্গে রুদ্র আমায় ম্যাসেজ দিয়ে বলে,’আরিয়া কিন্তু আমার ছোটো বোন হয়। উল্টাপাল্টা কিছু ভেবো না।’
ওহহো, ঐ মেয়েটির নামই তো আপনাদের বলিনি। হ্যাঁ, ঐ মেয়েটির নামই আরিয়া। রুদ্রর ম্যাসেজ সীন করেই আমি রেখে দিলাম। এবার সে আবার ম্যাসেজ দিল,’তার বয়ফ্রেন্ডও আছে। ঐদিন তার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে কথাও হয়েছে দেখো।’
এটা বলে ওদের কথা বলার একটা স্ক্রিনশট পাঠায় আমায়। এবার আমি রিপ্লাই দিলাম,’এত কৈফিয়ত চেয়েছি আমি? নাকি প্রমাণ চেয়েছি? রিল্যাক্স থাকেন।’
‘আমায় বিশ্বাস করো। আমি সত্যি বলছি।’
এই ম্যাসেজটাও আমি সীন করে রেখে দিয়েছি। সে লিখেছে,’ম্যাসেজ সীন করো না! কথা বলো নবনী।’
এই ম্যাসেজও আমি সীন করে রেখে দিয়েছিলাম।
এখন আপনারাই বলুন, আপনাদের আসলে কী মনে হয়? সে কেন এমন করে? এত করে বলার পর কিন্তু আমার খুশি হওয়ার কথা। সে আমায় প্রমাণ দিচ্ছে, না চাইতেও কৈফিয়ত দিচ্ছে। কিন্তু আমি পারিনি খুশি হতে। উল্টো আমার মনের ভেতর আরও অনেক বেশি সন্দেহ দানা বেঁধেছিল। কেন জানেন? কারণটা ছিল রুদ্রর পাঠানো ঐ স্ক্রিনশট। সেখানে আরিয়া এবং রুদ্র দুজনই দুজনকে আপনি করে বলছিল। এর মানে দাঁড়ায় রুদ্র যেই স্ক্রিনশট আমায় পাঠায় সেটা ছিল ওদের প্রথমদিককার কথা। কমেন্টের কথাটা কি আপনারা খেয়াল করেছেন? সেখানে কিন্তু আরিয়া তুমি করে বলেছিল। তার মানে ওদের দুজনের কথোপকথনই এখন তুমিতে এসেছে। সেখানে দুজনের মধ্যে কোনো সম্পর্ক হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। আবার এমনও হতে পারে মেয়েটিই রুদ্রকে পছন্দ করে। চাইলেই প্রশ্নগুলো রুদ্রকে করতে পারতাম। কিন্তু করিনি। তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিরক্ত করতে চাই না। তার যা ইচ্ছে সে করুক।
সারাদিন আর কোনো কথা হয়নি আমাদের। রাতে আমি নিজেই ম্যাসেজ দিয়ে জিজ্ঞেস করি,’ডিনার?’
ওর রিপ্লাই ছিল,’হুম। আপনার?’
আমি অবাক হয়ে লিখলাম,’আপনি! ওয়েল। ফাইন। আপনি-ই ঠিক আছে।’
রুদ্র তখন মুখ ভেংচির একটা ইমুজি দিল আর আমি দিলাম লাইক। ব্যস এটাই ছিল আমাদের শেষ কথা। এরপর আবারও কথা বন্ধ। আমিও আর তাকে ঘাটাইনি। পুরো মনোযোগ ঢেলে দিয়েছি শুধু পড়ার দিকে। কিন্তু ঐযে বেহায়া মন! যতবার করে ভুলে থাকার চেষ্টা করেছি তত বেশিই মনে পড়েছে।
এদিকে পরীক্ষাও প্রায় শেষের দিকে। ওর সাথে কথা বলার ইচ্ছেও প্রবল হচ্ছিল। নিয়ম করে ওর আইডি ঘেটে ম্যাসেজ দিতে গিয়েও ফিরে আসতাম। অন্যদিন পরীক্ষা শেষ করে ওর আইডি চেক করতে গিয়ে দেখি ডে দিয়েছে। বলে রাখি, মাঝখানে আমাদের এক সপ্তাহের মতো কথা হয়নি। এর মাঝে একদিনও ওর ডে দেখিনি। ডে চেক করে দেখি তেরো ঘণ্টা আগে ডে দিয়েছিল। এরপর ছয় ঘণ্টা আগে একটা ডে। ঐটা ছিল কাজিনদের সাথে। অথচ ২০ মিনিট আগেও ওর আইডি আমি চেক করেছিলাম। কিন্তু তখন কোনো ডে দেখিনি। তার মানে রুদ্র আমার থেকে ডে হাইড করে রেখেছিল! রাগের পাশাপাশি কষ্টটাই আমার বেশি হচ্ছিল। এমন ইগনোর করার মানে কী? সিদ্ধান্ত নিলাম আজই এর একটা বিহিত করব। আর কত সহ্য করব? ডে তে রিপ্লাই করলাম,’আমার থেকে ডে হাইড করে রেখেছিলেন?’
রুদ্র একটিভ-ই ছিল। রিপ্লাই দিল দু’মিনিট পরে,’না।’
‘মিথ্যা কাকে বলেন আপনি?’
‘তোমাকে।’
আমি সেন্টি ইমুজি দিলাম। সে লিখল,’কেমন আছো?’
সে বিষয়টা এড়িয়ে যেতে চাইলেও আমি দিলাম না। ফের বললাম,’আমায় বিরক্ত লাগলে সেটা সরাসরি বলতে পারেন না? এভাবে ইগনোর করার মানে কী?’
‘আমি কি একবারও বলেছি যে তোমাকে আমার বিরক্ত লাগে? সবসময় দু’লাইন বেশি বোঝো। আর এত কীসের রাগ? রাগ, জেদ কমে না তোমার?’
‘আমি মোটেও রাগ-জেদ দেখাইনি। আমি শুধু জানতে চেয়েছি আমার থেকে ডে হাইড করার রিজন কী?’
রুদ্র এবার আর ম্যাসেজ সীন করল না। আমি একটু পরপর গিয়ে দেখি সীন করেছে কী-না! কিন্তু না। সীন-ই করেনি। আমি আবার ম্যাসেজ দিলাম,’ম্যাসেজ সীন করারও সময় নেই এখন?’
রুদ্র উত্তর দিল,’কাজে আছি। পরে কথা বলি।’
ম্যাসেজ সীন করে কিছু্ক্ষণ নিরুত্তর হয়ে বসে রইলাম আমি। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে আমার। এমন সূক্ষ্মভাবে একটা মানুষ কী করে ইগনোর করতে পারে? আমি এখনও তাকে ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। সে কেন এমন করে,কী চায় কোনো কিছুই আমার বোধগম্য নয়। কিন্তু তার এই অবহেলাও আমি আর নিতে পারছিলাম না। সিদ্ধান্ত নিলাম এভাবে তিলে তিলে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে একেবারেই কষ্টকে গ্রহণ করে নেবো।
ম্যাসেজ লিখলাম,’আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ রুদ্র। আপনি আমার জীবনে না আসলে আরও অনেক কিছুই অজানা থাকতো।একটা ধাক্কা আমার খাওয়ার প্রয়োজন ছিল। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। থ্যাংকস টু ইউ।’
আমার এই ম্যাসেজের রিপ্লাইও আসলো সেন্টি ইমুজি। আমি লিখলাম,’আহা! সেন্টি কেন? আজ কিছু শেষ কথা বলব শুনুন।’
‘শেষ কেন?’ রুদ্রর প্রশ্ন।
‘আমার ছোট্টো জীবনে মিথ্যাবাদীর কোনো জায়গা নেই। অন্যভাবে বলা যায়, আপনার জীবনে আমি বেমানান।’
এবার সে নিরুত্তর। নিজেই লিখে যাচ্ছিলাম,’মনে পড়ে সেই বিকেলে নৌকার কথা? আমায় বলা কথাগুলো? মনে থাকারও কথা না অবশ্য। সত্যি বলি, আসলেই চাইলে হাজারটা মানুষের সাথে কথা বলা যায়। কিন্তু ঐযে মন বলে একটা শব্দ আছে। সে সবার কথায় সায় দেয় না। কিন্তু কেন জানি আপনার কথায় সায় দিয়েছিল। সেদিন আপনাকে পেয়ে আমার মনে হয়েছিল, নাহ্ এই মানুষটাকে বিশ্বাস করা যায়। এই মানুষটাকে ভরসা করা যায়। এই মানুষটাকে মন খুলে সব কথা শেয়ার করা যায়।
কিন্তু আমি ভুল ছিলাম! এই মানুষটা আমার না, আমার না, আমার না!’
‘হুম।’
জি আমার বিশাল ম্যাসেজের উত্তর এসেছে তার ঐ ‘হুম।’ আমি অবশ্য অবাক হইনি। আমি তো জানি সে কেমন। আমি লিখলাম,’আপনি বলেছিলেন সবাই আপনাকে অপশোনাল হিসেবে ব্যবহার করে। সেদিন আমিও এটাই বিশ্বাস করেছিলাম। বাট এখন আমি এটা রিয়ালাইজ করতে পারছি, আসলে অপশোনাল আপনি নন বরং আপনার জীবনে অনেকগুলো অপশনের মধ্যে আমিও একটা অপশন ছিলাম।’
‘এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।’
‘প্লিজ! শেষবারের মতো আমায় অন্তত বোকা বানিয়েন না!
প্রত্যেকটা পদে পদে আপনি আমায় মিথ্যে সাজিয়ে বলেছেন, আপনাকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছেন। আমি বুঝেও চুপ থাকতাম। আপনার ব্যস্ততা,অবহেলা সব মেনে নিতাম।
কিন্তু ঐযে, মানুষের একটা দোষ আছে। এরা চাওয়ার চেয়ে বেশি কিছু পেয়ে গেলে সস্তা মনে করে। আপনার ক্ষেত্রেও সেম কাজটাই হয়েছে।’
‘দারুণ।’
‘তবে আপনি অনেক ভালো একটা মানুষ। মন ভালো করার মতো মানুষ। কিন্তু কারো সারাজীবনের সঙ্গী হওয়ার মতো অন্তত নন! সময়ের সাথে সাথে অবশ্য ঠিক হয়ে যাবে। আমার মতো, আমার চেয়েও বেটার আরও অনেকেই আসবে যাবে আপনার জীবনে। এসব কোনো ফ্যাক্ট না।’
‘ভেবেই রেখেছিলাম একদিন এসব শুনতে হবে। ভালোই বললে!’
‘আজ থেকে আমায় হাইড করে ডে দিতে হবে না। আজ থেকে আপনাকে কেউ বিরক্ত করবে না। এইটা করবেন না, ঐটা করবেন না, এটা করেন কেন? এসবও আর কেউ বলবে না। কাউকে কৈফিয়ত দিতে হবে না। কারো পাগলামি সহ্য করতে হবে না।’
ব্যস এইটুকু বলেই আমি রুদ্রকে ব্লক করে দিই। কষ্টের সমাপ্তি ঘটাই এখানেই।
চলবে…