#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২০
কাব্য হেলেদুলে গেট দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করছে।কাব্যকে দেখে যে কেউ বলতে পারবে কাব্য নেশা করেছে।কাব্য হেঁটে যাচ্ছে আর বিরবির করে বলে চলেছে,,,
“সাবিহার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।ভাইয়ার ভালবাসা তার কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।”
এই কথাগুলোই কাব্য প্রতিনিয়ত বলে চলেছে,হঠাৎ করে কাব্য একটা টবের সাথে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় আর সেখানেই বসে পড়ে।
সাদাফ ভাইয়ের হাতের উপর এক হাত আর আরেক হাত গালে দিয়ে বসে আছি,উনার দৃষ্টি আকাশের দিকে।কিন্তু আমার মনে চলছে বাবাকে কীভাবে মেনেজ করব সেই ভাবনা।কিন্তু হঠাৎ কিছু পড়ার শব্দে দুজনেই চমকে উঠি।
“কী যেন একটা পড়ার আওয়াজ হল না!”
“হ্যাঁ আমিও ত শুনলাম,কেউ কী জেগে গেছে?”
“হতে পারে,আপনি এখান থেকে যান তাড়াতাড়ি কেউ দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।”
“আরে দাঁড়াও দেখতে দাও আগে,কোন চোর ডাকাতও ত হতে পারে।”
“আপনি এখান থেকে যান ত আপনার চোর,ডাকাত খুঁজতে হবে না।চোর,ডাকাত হলেও ভালো কিন্তু যদি সেটা না হয় অন্য কেউ হয় তবে তাদের সামনে পড়ে গেলে দুজনেই অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ব।”
“আরে শান্ত হও তুমি আর দেখতে দাও আমাকে।”
অতঃপর উনি আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই গটাগট পা ফেলে আওয়াজটা যেদিক থেকে আসছে সেদিকে চলে যায়।আমিও গাল ফুলিয়ে উনার পিছন পিছন যাই,কিন্তু একটু সামনে যাওয়ার পরই সাদাফ ভাইয়া থেমে যায়।উনাকে থেমে যেতে দেখে আমিও থেমে যাই,আর আশেপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করি ঠিক কী হয়েছে!পরক্ষণেই একটা জায়গায় আমার চোখ আটকে যায়,এটা দেখার জন্য আমি একটুও প্রস্তুত ছিলাম না।আমদের সামনে সাদাফ ভাই কেমন অস্বাভাবিক আচরন করছে মাটিতে বসে থেকে।একা একাই আঙুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে, আর হাসছে।সাদাফ ভাই আমার কাছে এসে আস্তে করে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,,,
“উনার এ অবস্থা কেন?নেশা টেশা করে নাকি?”
সাদাফ ভাইয়ার কথা শুনে আমি মাথা তুলে অবাক চোখে উনার দিকে তাকাই।মানুষ ত নেশা করলে আর পাগল হলেই এমন অস্বাভাবিক আচরন করে।তবে কাব্য ভাই কী সত্যি নেশা করেছে,কিন্তু উনাকে ত কখনও নেশা করতে দেখি নি আমি।সাদাফ ভাইয়ের কথায় আমার ঘোর কাটে।
“কোথায় হারিয়ে যাও বলো ত!একটা কথা জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে আর তার উওর না দিয়ে একদম চুপ করে গেলে।”
“আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“এখানে দাঁড়িয়ে থাকলেও কিছু বুঝবে না।বাড়ির সবাই কে ডাকো,তারপর উনাকে ঘরে নিয়ে তেঁতুল গুলিয়ে খাওয়ায়।নির্ঘাত নেশা করে এসেছে,তুমি একদম উনার কাছে যাবে না।কে জানে আবার কী করে ফেলে!উনাকে আমার একদম বিশ্বাস হয় না।”
“আহ্ আপনি একটু থামুন আর দেখতে দিন আমাকে।”
কথাটা বলেই কাব্য ভাইয়ের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম আমি,সেটা দেখে সাদাফ ভাই আমার হাত টেনে ধরে দাঁড় করিয়ে রেগে বলে উঠে।
“এই তোমাকে না এইমাত্র বললাম উনার কাছে না যেতে,আর তুমি এখনই চলে যাচ্ছো!”
“সাদাফ ভাই ছাড়ুন আমাকে দেখতে দিন কী হয়েছে?এখন এত কিছু ভাবলে চলবে না,আর আপনি ত এখানেই আছেন কিছু হলে আপনি আটকাইয়েন।”
কথাটা বলেই সাদাফ ভাইয়ার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কাব্য ভাইয়ের কাছে যাই।উনি আমাদের দেখতে পান নি,আমি উনার পিছনের দিকটায় বসি।।আর শুনতে পাই উনি একটা টবের দিকে আঙুল তুলে বলে যাচ্ছে,,,
“তুই আবার বাঁধা হলি কেন আমার চলার পথে হুম!চলার পথে ত এমনিতেই বাঁধার শেষ নাই,আবার তুই বাঁধা হয়ে দাঁড়ালি।”
উনার কথাশুনে আমি শিয়োর হয়ে গেলাম উনি নেশা করেছে,সেটা দেখে আমি সাদাফ ভাইয়ার কাছে গিয়ে বলে উঠি।
“উনি ত সত্যি সত্যি নেশা করেছে।এখন কী করব?”
“আমি ত তোমাকে আগেই বলেছি উনি নেশা করেছে।রুমে নিয়ে তেতুল গুলিয়ে খাওয়াতে,কিন্তু তুমি ত বিশ্বাস করলে না।”
“ভাইয়া এখন কী এসব বলার সময় নাকি?আপনি তাড়াতাড়ি যান এখান থেকে আমি মামুকে ডেকে আনছি।”
“ঠিক আছে চলে যাচ্ছি,তুমি নিজের খেয়াল রেখো।আর কাব্যর থেকে দূরে দূরে থাকবে,একদম কাছে ঘেসবে না বলে দিলাম।আর কাল সকালে বাড়িতে যাওয়ার আগে আমাকে একটা কল দিও,আঙ্কেলকে মেনেজ করতে তোমাকে হেল্প করব নে।”
আমি মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে ঘুরে যেই না যাব ওমনি সাদাফ ভাই আমাকে টেনে উনার সামনে দাড় করিয়ে দেয়।আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালে উনি আমার কপালে একটা চুমু একে দেয়।তারপর আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই বেরিয়ে যায়।আমিও আর ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলাম না,ভিতরে চলে এলাম মামুকে ডাকতে।
____________________________________
বাবার সামনে অপরাধীদের মত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।আর বাবা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি ভয়ে শুকনো ঢোক গিলছি বারবার,আর মনে মনে সাদাফ ভাইয়ের গুষ্টির ষষ্ঠী করছি।শালা বদ আমাকে হেল্প করবে বলে এখনও তার পাত্তাই নাই।সকালে আসার সময়ই ফোন করে জানিয়েছি বাড়িতে আসছি,আর সে নাকি আসছে।কিন্তু কই এখনও ত তার কোন নাম গন্ধও নাই,অনেকক্ষন উনার অপেক্ষা করার পরও যখন আসে না।তখন আমি আর উনার আশায় না থেকেই বাবাকে আপুর বিয়ের কথাটা বলে দেই।তারপর থেকে বাবা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রয়েছে আর একটু পর পর ধমকে জিজ্ঞেস করছে,”কাজটা করার আগে কার পারমিশন নিয়েছি”।
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রেখেছি,কী বলব কিছুই বুঝতে পারছি না।বাবা এবার খুব রেগে যায়,আর সোফার একটা কুশন ছুড়ে মারে আমার দিকে।আমি সেটা ধরে বাবার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাই সেটা দেখে বাবা বলে উঠে,,,
“বড়দের কথা অমান্য করে তুই এত বড় সিদ্ধান্তটা কীভাবে নিলি সাবিহা?কাকে বলে এত বড় একটা কাজ করেছিস তুই?”
“আআআসলে ববাব,,,
” চুপ একদম চুপ,তোর থেকে কোন কথাই শুনতে চাই না আমি।আমি এখনই ঐ বাড়িতে যাব আর শীলাকে নিয়ে আসব।ঐ মানুষটার বাড়িতে আমার মেয়েকে আমি কিছুতেই রাখব না।”
পরিস্থিতি হাতের বাহিরে চলে যাচ্ছে দেখা যায়,কিন্তু তার আগেই আমাকে কিছু করতে হবে নয়ত ঝামেলা আরো বাড়বে।আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে সাহস নিয়ে বাবাকে বলে উঠি,,,
“বাবা প্লিজ তুমি শান্ত হয়ে বোঝার চেষ্টা করো,যা করার কাব্য ভাইয়া করেছে মেঘ ভাইয়া ত কিছু করে নি।আর আপু,মেঘ ভাইয়া দুজন দুজনকে খুব ভালবাসে।মেঘ ভাইয়া আপুকে সুখে রাখবে,কোন কষ্ট পেতে দিবে না দেখো।”
“তুই আর একটা কথাও বলবি না,আমি তোর কোন কথাই শুনব না।আমি এই মুহূর্তে শীলাকে নিয়ে আসব ঐ বাড়ি থেকে আর এসে তোর ব্যাবস্থা করব।”
বাবা কথাগুলো বেশ রেগেই বলে,আর ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।আমি বাবার পিছন পিছন দৌড়ে আসি বাবাকে আটকাতে।কিন্তু ড্রয়িং রুমে আসার পর আমার চোখ বড়বড় হয়ে যায়।কারন শীলা আপু,মেঘ ভাইয়াকে নিয়ে সাদাফ ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে পকেটে হাত গুজে।আর বাবা সেটা দেখে দাঁড়িয়ে যায়,আর তখন সাদাফ ভাইয়া বলে উঠে,,,
“আঙ্কেল অনেকক্ষণ ধরে শুনছিলাম আপনি শীলাকে নিয়ে আসবেন,কিন্তু দেখুন আমি আপনার মনের কথাটা আগেই বুঝতে পেরেছি।আর তাই শীলাকে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে জামাই সহ তুলে আনলাম।এবার রেখে দিন নিজের মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে আপনার বাড়িতে।”
“আমি এই বিয়ে মানি না,আর না মেঘকে এই বাড়ির জামাই হিসেবে মানি।তাই মেঘকে বলো আমার মেয়েকে রেখে চলে যেতে।”
“আপনার না মানাতে এখন কিছুই হবে না আঙ্কেল,কারন তারা কোন টিনেজার নয় যে আপনি মানলেন না তাই বিয়ে ভেঙ্গে গেলো।তাদের বয়স 18 & 21 পেরিয়ে গেছে তাই তাদের বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার সম্পূর্ণ রয়েছে।”
“সাদাফ তুমি কী জানো না কাব্য সাবিহার সাথে কী কী করেছে?আর কাব্যর বাবা কেমন প্রকৃতির মানুষ!ঐ বাড়িতে আমার মেয়ে থাকলে এমনিই মরে যাবে।আর কোন বাবা জেনে বুঝে তার মেয়েকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিতে পারে?”
“আপনার ত কাব্য আর তার বাবাকে নিয়ে সমস্যা?মেঘ ভাইয়াকে নিয়ে ত কোন সমস্যা নেই,তবে আপনি আপনার মেয়ে সহ মেয়ের জামাই আপনার কাছেই রেখে দিন।এতে করে আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকলেন আর আপনার মেয়ে তার ভালবাসার মানুষের সাথে সুখে সংসার করতে পারল।”
“তুমি কী পাগল হয়েছো!আমি কখনও আমার মেয়েদের ঘর জামাই করব না।এতে করে সমাজের লোক অনেকে অনেক কথা বলবে।আমার মান সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে।”
“তবে আপনি যে আপনার মেয়েকে তার বিয়ের পরের দিন তার শ্বশুর বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে চাইছেন তাতে কী আপনার মান সম্মান বাড়বে!”
সাদাফ ভাইয়ের কথাশুনে এবার বাবা চুপ করে যায়,এতক্ষণ আমরা সবাই বাবা আর সাদাফ ভাইয়ার কথাটা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম।উনি কায়দা করে ঠিক বাবাকে চুপ করিয়ে দিয়েছে।এবার নিশ্চয়ই বাবা আপুদের মেনে নিবে,উফফ ভাবতেই খুব আনন্দ হচ্ছে আমার।এই খুশিতে সাদাফ ভাইয়াকে দুইটা চুমা দিতে ইচ্ছে করতাছে।পরক্ষনেই নিজের বলা কথাটা ভেবে নিজের মাথায় দুইটা চাপড় মেরে বলে উঠি,,,”পাগল ছাগলের মত লজ্জার মাথা খেয়ে কী বলে ফেললাম ইস্।”
#চলবে…