#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৮
সাদাফ ভার্সিটি থেকে বাড়িতে এসে খেতে বসেছে,এমন সময় সাদাফের ফোনটা বেজে উঠে।সাদাফ ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে মনির সাহেবের ফোন।সাদাফ এক গাল হেঁসে ফোনটা রিসিভ করল,কিন্তু সাদাফের কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে মনির সাহেব অস্থির হয়ে বলে উঠে,,,
“সাবিহাকে পাওয়া যাচ্ছে না সাদাফ।”
মনির সাহেবের কথা শুনে সাদাফের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল,সাদাফের হাত কাঁপছে।সাদাফ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল,,,
“সাবিহাকে পাওয়া যাচ্ছে না মানে কী বলছেন এসব?”
“আমরা সবাই শীলার বিয়ের শপিং করতে এসেছি,শপিং করতে করতে একটা সময় সাবিহা পানি খেতে যায় তারপর আর ফিরে আসে নি।সারা শপিংমল খুঁজে ফেলেছি কিন্তু কোথাও সাবিহাকে পাচ্ছি না।”
“শপিং মল থেকে একটা মেয়ে কীভাবে উদাও হতে পারে?সাবিহা হয়ত আশেপাশেই আছে,ভালো করে খুজে দেখুন সবাই।নয়ত কোথাও কাজে আটকে আছে এক্ষুনি এসে পড়বে।”
“কোথাও কোন কাজে গেলে আর কাউকে না বললেও আমাকে বলবে,কিন্তু সাবিহা ত কিছু বলে নি শুধু পানি খেতে যাবে এটাই বলেছে,আর সাবিহাকে খুজে পাচ্ছি না ঘন্টাখানিক হবে।পানি খেতে কী এতক্ষণ লাগবে বলো তুমি।আর ফোনটাও বন্ধ সাবিহার,আশেপাশে অনেক খুঁজেছি সবাই কিন্তু আমরা সাবিহাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।তুমি কিছু একটা করো সাদাফ।আমার মেয়েটাকে খুঁজে এনে দাও দয়াকরে।”
“আঙ্কেল আপনি শান্ত হন আমি এখনি আসছি,আমি সাবিহাকে খুঁজে আনবই।সাবিহার কোন ক্ষতি আমি হতে দিব না,আপনি শান্ত হন।
কথাটা বলে সাদাফ তাড়াতাড়ি ফোনটা কেটে বাড়ি থেকে বের হতে নিলেই সাদাফের বাবা বলে উঠে,,,
” এখন কই যাচ্ছো?খাবার ত খেয়ে যাও।”
“বাবা এখন খাওয়ার সময় নেই,আমাকে যেতে হবে এখুনি।তোমরা সাবিহার বাড়িতে যাও সবটা জানতে পারবে।”
কথাটা বলে সাদাফ এক প্রকার দৌড়ে চলে যায় সাবিহাকে খুঁজতে।সাদাফ হন্তদন্ত হয়ে গাড়ি চালাচ্ছে,সাদাফের ভিতরটা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।সাবিহা কোথায় আছে?কেমন আছে?কেউ কোন ক্ষতি করে নি ত সাবিহার?সাদাফ কী সাবিহাকে খুঁজে পাবে না?সাদাফ কী চিরদিনের জন্য সাবিহাকে হারিয়ে ফেলল?এমন নানা ধরনের চিন্তা সাদাফের মাথায় ঘুরছে।সাদাফ এক হাতে গাড়ি ড্রাইভ করছে আরেকহাত বারবার নিজের মুখ মুচছে,গাড়িতে এসি চলছে তার পরও সাদাফ ঘেমে যাচ্ছে।
“সাবিহা তুমি কোথায় চলে গেলে?আল্লা তুমি সাবিহাকে সুস্থ রেখো।সাবিহার যাতে কোন ক্ষতি না হয়,তুমি রক্ষা করো সাবিহাকে।”
_____________________________________
সাবিহা একটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে,আার তার সামনেই কাব্য হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে।কাব্যর খুব রাগ হচ্ছে সাবিহার উপর,একে ত সাবিহা কাব্যকে ইচ্ছে মত দোলাই করল,হাত পা বেঁধে বসিয়েও রেখেছে।যেখানে সাবিহাকে কাব্য বিছানায় শুইয়ে রেখেছিল,হাত পা বাঁধে নি কিন্তু এই মেয়ে ত কাব্যকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ল।তার উপর এমন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে যেন কিছুই হয় নি।এসব ভেবে কাব্য নিজেকে নিজেই বকছে যে কেন এই বোম্বাই মরিচকে তুলে আনতে গেলো আর কিছুক্ষণ আগের কথা ভাবছে,,,
★ফ্লাসব্যাক★
সাবিহাকে একটা ঘরে আটকে রাখা হয়েছে,সাবিহার এখনও জ্ঞান ফিরে নি।সাবিহার সামনে কাব্য চেয়ার নিয়ে বসে আছে,আর এক দৃষ্টিতে সাবিহাকে দেখছে।এভাবে অনেকক্ষণ পরও যখন সাবিহার জ্ঞান ফিরে না তখন কাব্য সাবিহার চোখে পানির ছিটা দেয়।সাবিহা টিপটিপ করে চোখ খুলে তার সামনে কাব্যকে দেখতে পায়।কাব্য সাবিহার দিকে ঝুঁকে আছে।
জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে একটা ঘরে বিছানায় আবিষ্কার করি,আর সামনেই কাব্য ভাইকে ঝুঁকে থাকতে দেখে ঘাবড়ে যাই।কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ে যায় শপিংমলে কেউ আমাকে অজ্ঞান করেছিল। তারমানে কাব্য ভাই আমাকে কিডন্যাপ করে ছিল তখন।কাব্য কিছু বলবে কিন্তু তার আগেই সাবিহা তার দুই পা একসাথে করে কাব্যর পেটে লাথি দিয়ে দূরে সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়।কাব্য আবার সাবিহার কাছে এসে সাবিহাকে কিছু বলতে গেলে সাবিহা কাব্যর হাত মুচড়ে পিছনে নিয়ে কাব্যর পিঠে কনুই দিয়ে আঘাত করে।কাব্য মাটিতে পড়ে যায়,সাবিহা সঙ্গে সঙ্গে আশেপাশে দরি খুজতে থাকে।কিন্তু আশেপাশে কিছু না পেয়ে বিছানার চাদর পেচিয়ে কাব্যকে বেঁধে ফেলে।তারপর যেই চেয়ারে কাব্য বসে ছিল সেই চেয়ারে সাবিহা বসে,আর হাত ঝাড়া দিতে দিতে বলে উঠে,,,
“কী ভেবেছেন আপনি হুম মেয়ে বলে দুর্বল আমি,সেদিন আঘাত করে পাড় পেয়ে গেছেন বলে কী আজও ছেড়ে দিব আপনাকে?যদি এমনটা ভেবে থাকেন তবে ভুল ভাবছেন।তখন কাপুরুষের মত পিছন থেকে আঘাত করেছিলেন তাই রক্ষা পেয়ে ছিলেন তখন কিন্তু এখন কী করবেন হুম?”
কাব্য ছোটার জন্য ছটফট করছে,কিন্তু ছুটতে পারছে না।কাব্য আপ্রান চেষ্টা করেও খুলতে পারছে না হাতে পায়ের বাঁধন।সেটা দেখে সাবিহা একটা তৃপ্তির হাসি হাসল,সাবিহা এবার বাঁকা হেঁসে বলে উঠল,,
“কী সমস্ত শক্তি শেষ নাকি,ছুটতে পারছেন না!আমি না চাইলে আপনি ছুটতেও পারবেন না আর না এখান থেকে এক পাও নড়তে পারবেন।এবার বলুন ত আমাকে কিডন্যাপ কেন করেছেন আপনি?কী স্বার্থ আছে এসবের পিছনে হুম?এবার কী মেরে গুম করে দেয়ার প্ল্যান এঁটেছিলেন?”
“সাবিহা আমার হাতে পায়ের বাধনঁ খোল।”(ধমকে)
সাবিহা রেগে বলে উঠে,,,
“একদম ধমকাবেন না আমাকে,চোরের মায়ের বড় গলা কথাটা আবারও প্রমানিত হল।আমাকে এখানে তুলে এনে আবার ধমকাচ্ছেন আমাকে!আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি এতকিছুর পরও কী আপনার মন ভরে নি কাব্য ভাই!আপনি আজ আমাকে এখানে তুলে এনেছেন কেন?আবারও মারার জন্য তুলে এনেছেন!কিন্তু সেটা ভেবে থাকলে ভুল ভাবছেন আপনি।কারন সাবিহা আর আগের মত নরম নয় যে চুপচাপ সেদিনের মত মার শয্য করে যাবে।”
“বেশি কথা না বলে ছাড় আমাকে।”
“ছাড়লে যাতে মারতে পারেন আবারও তার জন্য ছাড়ব আপনাকে?”
“আমি এসব কিছু করার জন্য তকে এখানে আনি নি।”
সাবিহা এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আর কাব্যর গাল চেপে ধরে বলে উঠে,,,
“এখন ত ধরা পড়ে গেছেন তাই এসব বলছেন।আমাকে কী বলদ মনে হয় আপনার হুম?”
“সাবিহা ছাড় লাগছে আমার,মেয়েদের হাত মমতার হাত জানতাম কিন্তু তোর হাতের স্পর্শ পেয়ে মনে হচ্ছে সেটা ভুল।”
“চুপ একদম চুপ এত ডায়লগ দিবেন না।মেয়েদের বুঝার মত মন মানসিকতা আপনার নেই।তাই এসব ডায়লগ দিবেন না,কিন্তু জেনে রাখুন মেয়েরা প্রয়োজনে নরম,আবার গরমও। ”
“হুম সব জেনেছি এবার ছাড় আমাকে,আমার সারা শরীর ব্যাথা করছে।এত শক্তি তোর মধ্যে কোথ থেকে এলো রে!”
সাবিহা বাঁকা হেঁসে বলে উঠল,,,
“সবটা আপনার জন্য সম্ভব হয়েছে।এবার চুপচাপ মুখ খুলুন আর বলুন কেন এনেছেন আমাকে?”
সাবিহার এমন রূপ দেখে কাব্য কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।কে জানে কারনটা বললে রেগে আবার দুইটা লাগিয়ে দেয়,আগে ছাড়া পাই তারপর না হয় বলব তখন দুই একটা দিতে আসলে আটকাতে ত পারব।কিন্তু এখন ত সেটা পারব না,এসব মনে মনে ভেবে কাব্য বলে উঠল,,,
“আগে আমার হাতে পায়ের বাঁধন খুলে দে তারপর সবটা বলছি।”
“আগে কারন বলবেন তারপর ছাড়ব।তার আগে আপনার মুক্তি নেই।”
★বর্তমান★
কাব্য কারনও বলে নি আর সাবিহা কাব্যর হাতে পায়ের বাঁধনও খুলে নি,তখন থেকে এভাবেই পড়ে আছে কাব্য।
#চলবে…