#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ২০
আজ সাদুরা চলে যাবে। সবাই সবার ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করে গাড়িতে উঠতে লাগলো এক এক করে।৷ সাদু আর মনির একসাথে,আলিফা আর আরিফ একসাথে,নূরের সাথে আফরান জোড় করে বসেছে নূর রাগ দেখালেও মনে মনে এটাই চাইছিলো তাই সে আফরানকে আর বেশি কিছু বললো না।এদিকে আলিশা সেদিন ‘নুহাসপল্লি’ থেকে আসার পর থেকেই কেমন চুপ-চাপ হয়ে গেছে।কারো সাথেই ঠিক মতো কথা বলে না।নিবির সেদিন এর পর অনেকবার ওর সাথে কথা বলতে চাইছে কিন্তু আলিশা সুযোগ ওই দেয় না।যতোবার নিবির ওর সামনে আসতো আলিশা এরিয়ে যেতো।এদিকে মেরাজকে বাধ্য হয়ে মিমের সাথে বসতে হচ্ছে কারন মনির,আফরান,আর আরিফ নিজ নিজ প্রেয়সীদের সাথে বসবে ও আগেই জানে।আর নিবির ওকে রিকুয়েস্ট করেছে যেনো সে মিমের সাথে একটু এটজাস্ট করে নেয়।এইজন্য ওকে মিমের পাশেই বসতে হলো।
নিবির আসতে করে আলিশা’র পাশে বসে পড়লো।আলিশা বাহিরে তাকিয়ে আছে কি জানি মেয়েটা বাহিরে কি দেখে এতো অন্ধকারে?আলিশা’র এই নিস্তব্দতা নিবির মেনে নিতে পারছে না।আচ্ছা ও কেন করলো এমনটা? রাগের বশে?কিন্তু তখন তো ওর বিন্দুমাত্রও রাগ লাগছিলোনা।আলিশার কাছে আসাতে তখন কেমন জানি একটা ঘোরে চলে গিয়েছিলো সে।তবে কেন এমনটা হলো?আমেরিকায় থাকতে তো কতো মেয়ে ওকে প্রোপোজ করেছিলো, কতো মেয়ে ওর ওকে জোর করে জোরিয়ে ধরতে চেয়েছিলো। কিন্তু তার তো এমনটা কক্ষনো মনে হয়নি? তবে আলিশার বেলায় এমন কেন হলো? কেমন যেন একটা টান অনুভব করে সে আলিশার প্রতি তবে কি এটা ভালোবাসা’র টান? উফফ! মাথাটা ছিরে যাচ্ছে নিবিররের ব্যাথায়। পর পর দুটো রাত সে ঘুমোতে পারি নি।পুরোটা রাত শুধু অস্থিরতা নিয়ে ছটফট করে কাটিয়েছে। যার ফল সরূপ এই ভয়ানক মাথা ব্যাথা।নিবির আলিশা’র সাথে কিভাবে কথা বলবে ভেবে পাচ্ছে না।বার বার কিছু বলতে গিয়েও থেমে যাচ্ছে।অবশেষে ক্লান্ত হয়ে সিটে গা এলিয়ে দিলো। চোখ বন্ধ করে সুয়ে রইলো।ওর সামনে ভেসে উঠছে আলিশা’র দুষ্টুমিগুলো, ওর খিলখিল হাসির শব্দ গুলো দারুনভাবে ঝংকার তুলছে ওর মনে।হঠাৎ সেদিনের চুম্বন দৃশ্যটা ওর সামনে ভেসে উঠতেই চোখ মেলে তাকায় নিবির।চোখ খুলতেই দেখে একটা হাত তার দিকে মাথা ব্যাথার বাম এগিয়ে দিচ্ছে।তাকিয়ে দেখে আলিশা’র দৃষ্টি এখনো বাহিরে কিন্তু তার দিকে হাত বাড়িয়ে আছে।নিবির কি জানি ভাবলো পরক্ষনে আলিশা’র হাতটা ঠেলে সরিয়ে দিলো। আলিশা আবারো বাহিরে দৃষ্টি রেখেই হাতটি বাড়িয়ে দিলো।নিবির আবারো ঠেলে সরিয়ে দিলো।আলিশা আবার ওর দিকে হাত বারি য়ে দিলো।এইবার নিবির ঠেলে দেওয়ার আগেই আলিশা ওর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
—–” কি সমস্যা বাম নিচ্ছেন না কেন?”
—–” বাম দিয়ে আমি কি করবো?” নিবির এর করা প্রশ্নে আলিশা চুপ করে আছে।নিবির আবারো বললো,
—–” কি হলো বলো এইটা দিয়ে আমি কি করবো?”
আলিশা’র রাগ লাগছে প্রচুর লোকটা কি জেনে শুনে তার সাথে এরকম করছে।এইবার সে দাতে দাত চেপে বলে,
—–” আপনি কি বুজতে পারছেন না? ঢং করেন আমার সাথে?”
নিবির অবাক হওয়ার ভান ধরে বলে,
—–” ওমা আমি কেন ঢং করবো? আমি কি মেয়ে সে র্যামসোতে আছি আর আমাকে ঢং করতে হবে!”
—–” আর একটা কথা বললে আমি আপনার জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো।”
—–” আমি আবার কি করলাম?”
—–” দেখুন আমাকে রাগিয়েন না।আপনার যে মাথা ব্যাথা সেটার জন্যেই আমি এটা দিয়েছি।এটা মাথায় মালিশ করে লাগিয়ে নিন মাথা ব্যাথা কমে যাবে।”
—–” তুমি কি করে বুজলে? ”
—–” আমি কি খুন করেছি কারো?”
আলিশা’র এহম প্রশনে থতমত খেয়ে যায় নিবির। বললো,
—–” তুমি খুন কেন করবে?”
আবার বিরবিরিয়ে বললো,,
—–” যেই সাপের মতো ফোসফোস করো। কাউকে না করলে আমাকে নির্ঘাত করতে পারো এতে সন্দেহ নেই!”
—–” কি বললেন না? আমি কি কাউকে খুন করেছি?”
নিবির সরু চোখে তাকিয়ে জবাব দেয়,
—–” তুমি খুন করতে যাবে কেন?আজীব!”
—–” তাহলে সি আই ডি’র মতো একেরপর এক প্রশ্ন কেন করছেন আমাকে?”
নিবির সস্থির নিশ্বাস ছাড়লো মেয়েটা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো ওকে।
ওর ভাবনার মাজেই নিবিরের হাতে বামের কৌটা দিয়ে পাশ ফিরে বসে পড়লো।পরক্ষনে আবার নিজের কোলে বামের কৌটো দেখতেই। রাগে রি রি করে উঠলো আলিশার পুরো শরীর। বললো,
—–” সমস্যা কি? এরকম করছেন কেন?
নিবির ঠোঁট উল্টে বললো,
—–” একা একা কিভাবে মালিশ করবো?”
—–” এভাবেই একা একাই করবেন!”
—–” নাহ থাক তাহলে লাগবে না।”
আলিশা বিরক্তির চরম পর্যায়ে।নিবির মিটিমিটি হাসছে।আর আলিশা রাগে নাক মুখ ফুলিয়ে অবশেষে বললো,
—–” আপনার মাথা আমার কাধেঁ রাখুন!”
—–” কিহহহহ!”
—–” সাট-আপ যা বলছি তাড়াতাড়ি করুন।নাহলে আই সুয়ের আমি এইবার আপনাকে এক ধাক্কা দিয়ে উগান্ডা পাঠিয়ে দিবো।”
নিবির ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লো।নিবির চুলের গুলো আলিশার কাধ ছুতেই হালকা কেপে উঠলো আলিশা।পরক্ষনে নিজের ডান হাতে কিছু বাম নিয়ে মালিশ করতে লাগলো নিবিরের কপালে।এদিকে নিবির আয়েশে চোখ বুজে আছে।এ কোন সুখের সন্ধান পেলো সে। আলিশার নরম হাতের ছোয়ায় মুহুর্তে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো নিবির।
🍁🍁🍁
সাদু কানে ইয়ারপোড্স গুজে গান শুনছে আর চোখ বন্ধ করে রয়েছে।মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে।এই মেয়েটার এই একটা বাজে স্বভাব গান না শুনলে তার ঘুম আসবেই না।আর ওর গান শুনা মানে ও ঘুমের দেশে চলে গেছে।
মনির তাকিয়ে সাদু’র দিকে।ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে ওর উম্মি ওকে মেনে নিয়েছে।শুধু আর একটু অপেক্ষা করতে হবে।এতো বছর যখন অপেক্ষা করতে পেরেছে আর একটু অপেক্ষা করতে পারবেই।একটু অপেক্ষার বিনিময়ে যদি ওর অপূর্ণ জীবনে পূর্ণতা’র ছোয়া হিসেবে ওর উম্মি একেবারে ওর হয়ে যায় এর থেকে সুখের আর কি আছে।হঠাৎ পিছন থেকে আফরানের আওয়াজ শোনা গেলো।
—–” কিরে কি করছে পিকু?”
মনির মৃদু হেসে বলে,
—–” ঘুমিয়ে পড়েছে।”
আফরান হাসলো পরক্ষনেই কিছু একটা ভেবে শয়তানি হাসি দিলো।
—–” মনির দুলাই তুই একটু আমার সিটে আয় না।আমার পিকু’র সাথে একটু কাজ আছে।”
মনির ভ্রু-কুচকে তাকায়,
—–” কি কাজ?”
—–” আহা! তুই আয় তো!”
আফরান এর জোড়াজোড়িতে অবশেষে মনির আফরান এর সিটে আর আফরান মনিরের সিটে বসে পড়লো।মনির সিটে বসতেই নূর প্রশ্ন করলো,
—–” কিরে! উনি আবার ওই সিটে গিয়ে করবে?”
—–” আমি কি জানি?তোর উনির থেকে তুই জিজ্ঞাস কর।”
নূর নাক মুখ কুচকে বললো,
—–” ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু আমার উনি কি হ্যা?”
মনির দাত কেলিয়ে বললো,
—–” আহালে ছোট্ট খুকি কিচ্ছু বুজেনা।”
—–” ভাই আমাকে রাগাস না।”
মনির হেসে দিলো আর রাগালো না ওকে।পরে দেখা যাবে আফরান কে আর এখানে বসতে দিবে না।
এইদিকে আফরান দেখে সাদু গান শুনছে সে আসতে করে সাদু’র কান থেকে সাবধানে একটা এয়ারপোড্স খুলে নিজের কানে দিলো।দিতেই নাকমুখ এমন একটা ভঙিমা করলো যেনো ওকে কেউ করলার জুস জোড় করে খায়িয়ে দিয়েছে। আসলে সাদু এখন গান শুনছে ‘BTS’ এর ‘pied piper’ গানটা।আফরান বিরবির করে বললো,
—–” আল্লাহ ভালো জানে এই মেয়ে এদের গান শুনে কি মজা পায়।সারাদিন এদের গান শুনে ব্যাঙের মতো লাফাতে থাকে।অবশ্য কাকে কি বলছি এর বান্দবি ‘রিপন ভিডিও’স’ দেখতে পারলে ও কেন এইসব গান শুনতে পারবে না।”
সাদ’র চোখ মুখ কেমন জানি করে ফেললো।মানে সে বুজতে পারছে আর গানের ভলিউম কমে গেছে।এদিকে ‘pied piper’ গানটায় একটা মিউজিক আছে। মিউজিকটা jimin দেয় যেটা সাদুর খুব ভালো লাগে।
আর এইদিকে আফরান এর মনে হচ্ছে কোন মুরগি কোক্কোরোক্কো করে ডাকছে তাই সে গানের তালে তালে চিল্লিয়ে উঠলো,
—–” উহুহুহুউউ কোক্কোরোক্কোক্কো উহুহুহু কোক্কোরোক্কোক্কো।”
আফরানের এরকম এর উদ্ভবমার্কা গান শুনে সাদু লাফিয়ে উঠলো।বেচারি ভয়ে পেয়ে গেছে।ও বলতে না সবাই চমকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।এমন কি বাশ ড্রাইভার অবদি গাড়ি থামিয়ে আফরান এর দিকে তাকিয়ে।কিন্তু সে একমনে এইভাবে গেয়েই চলেছে।
সাদু যখন বুজতে পারলো তার ভাই ‘BTS’ এর গান কে এমন করে গাইছে।রাগে চোখ মুখ শক্ত করে উঠে দাড়িয়ে হামলে পড়লো আফরানের উপর।আফরান থতপমত খেয়ে গেছে গান থামিয়ে কিছু বলবে তার আগেই নিজের চুলে জোড়েসোড়ে টান অনুভব করায় চেচিয়ে উঠলো,
—–” পিকুউউউউউ! মাগো ছাড় আমার চুল কি ছিড়ে ফেলবি ছাড়।”
সাদু চুল টানতে টানতেই বলে,
—–” তুই আমার এতো সুন্দর গান কে মুরগির মতো কোক্কোরোক্কো করে কি গাইছিলি আগে সেটা বল।কুত্তা কোথাকার। ”
আফরান চিল্লাচ্ছে চুল ছাড়ার জন্যে আর সাদু ওর চুল টেনেই যাচ্ছে।অবশেষে না পেরে সবাই নূর আর মনির এসে আফরান কে সাদু’র হাত থেকে ছুটালো।সাদু রাগে শক্ত হয়ে রইলো।মনির ওকে জড়িয়ে ধরলো শান্ত করার জন্য।
আর আফরান সিটে বসে হাপাচ্ছে। বেচারার চুল তার বোন আজ অর্ধেক টেনে মনে হয় ছিড়েই ফেলেছে।
সে কাদো কাদো হয়ে নূর কে বলল,
—–” দেখেছো কেমন দজ্জাল তোমার ভাবি+ননদ।”
—–” ভালো করেছে।আপনি খামোখা কেন ওকে রাগাতে গেলেন!”
আফরান আর কিছু না বলে নূরের কাধে মাথা এলিয়ে দিলো।নূর ও আর কিছু না বলে আফরানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
চলবে,,,,,,