চন্দ্ররঙা প্রেম -Part 8

0
437

#চন্দ্ররঙা_প্রেম
#পর্ব-৮
#আর্শিয়া_সেহের
-“এই ভাইয়া,ভাবির সাথে কবে দেখা করাবি?”
সপ্তাদশী শিরীনের কন্ঠে শান পেছনে তাকালো। মুচকি হেঁসে বললো,
-“আগে ভাবি বানানোর প্রসেসিং শেষ করি তারপর দেখা করাবো।”
শিরীন খুব ব্যস্ত ভঙ্গিমায় বিছানায় বসে পড়লো। বাবা-মা বেরিয়ে যাওয়ার পর সে ঢুকেছে। শানের দৃষ্টি তখন জানালার কাঁচ গলিয়ে বাইরে কোথাও বিচরণ করছিলো।
-“ভাইয়া ,ভাবি বুঝি দেখতে খুব সুন্দর?”
শান হেঁসে বোনের মাথায় একটা গাট্টা মারলো।
-“বেশি পেঁকেছিস তুই। যা এখান থেকে।”
শিরীন মুখ ফুলিয়ে উঠে পড়লো। দরজা দিয়ে বের হওয়ার আগে আরেকবার পিছু ফিরে বললো,
-“ভাইয়া তোর বন্ধুরা এখন আমাদের বাড়িতে আর আসে না কেন?”
শান আড়চোখে একবার শিরীনের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো,
-“ওদের দরকার হয়না এজন্য আসে না। দরকার পড়লে ঠিকই আসবে। এখন যা তুই আর দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে যাস।”
-“দরজা ভেজাতে হবে না আপু। আমি এখন ম্যাথ করবো ভাইয়ার কাছে। ”
-“আমি কি তোকে ডেকেছি এখন ম্যাথ করার জন্য? যা ফুট।এখন আমি ম্যাথ করিয়ে দিতে পারবো না।”
শান্ত বই-খাতা নিয়ে শানের বিছানায় উঠতে উঠতে বললো,
-“আম্মু বলেছে আজ তোমার মন‌ অনেক ভালো। আজ তোমার কাছে ম্যাথ করতে চাইলে তুমি সারারাত করাতেও পিছুপা হবা না। তাই আম্মু আমাকে বই খাতা নিয়ে এখন পাঠিয়ে দিয়েছে। তুমি আজ ম্যাথ না করানো অবধি আমি এখান থেকে যাবো না।”
-“আমার বিয়ের দিনও আমি খুব খুশি থাকবো। তুই তোর আম্মুকে বলে আমার বাসর রাতে এসেও সারারাত আমার কাছে ম্যাথ করিস , ঠিক আছে?”
শিরীন দুই ভাইয়ের কথা শুনে দরজায় দাঁড়িয়ে হো হো করে হেঁসে উঠলো। শান অসহায়ের মতো তাকালো সেদিকে একবার।
..
রুমঝুম জানালায় মাথা ঠেকিয়ে দূরে একটা নারিকেল গাছের দিকে তাকিয়ে আছে। নারিকেল গাছের লম্বা লম্বা পাতার ফাঁকা দিয়ে আকাশ দেখতে খুব সুন্দর লাগে। বাতাসে যখন পাতাগুলো মৃদু দুলে ওঠে তখন আরো ভালো লাগে। রুমঝুম একধ্যানে সেদিকে তাকিয়ে আছে।
তার ধ্যান ভাঙে ফোনের রিংটোনের শব্দে। কলেজ থেকে এসে রুমে ঢুকেছে আর বের হয়নি ।‌ আজ তার মনটা কেমন যেন উদাস হয়ে আছে।
ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো রুশান ফোন করেছে। রুশানকে নিজ থেকে ফোন দিতে পারে না রুমঝুম।রুশানই বারন করেছে। ছেলেটা নিজে যখন ফোন দেয় তখনই কথা হয়। রুমঝুম দীর্ঘশ্বাস ফেলে কল রিসিভ করলো।
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রুশানের কন্ঠ ভেসে এলো ।
-“হ্যালো আপু। কেমন আছো?”
-” এইতো ভালো‌ আছি। তোরা কেমন আছিস?”
-“আমি ভালো আছি আপু। বাবার খবর জানি না। তুমি যে রাতে চলে গেছো তার পরের রাতে বাবাও চলে গেছে। তারপর আর যোগাযোগ হয়নি। ফোনও অফ বলছে।”
রুমঝুম আৎকে উঠলো। হালকা চেঁচিয়ে বললো,
-“তুই আগে জানাসনি কেন আমাকে?”
রুশান গাঢ় একটা শ্বাস ছাড়লো। বললো,
-“জানালে কিছু করতে পারতে তুমি?”
রুমঝুম কিছু বললো না। সত্যিই তো,সে কি বা করতে পারতো। রুশান আবারও বললো,
-“তবে চিন্তা করো‌ না। বাবা ভালো‌ আছেন। শুধু আমাদের থেকে একটু দূরে থাকছেন। হয়তো কোনো ব্যাপার নিয়ে ডিপ্রেশনে আছে।”
-“তুই কিভাবে জানলি?”
-” আজ দুপুরের পরপরই উকিল আঙ্কেল এসেছিলো। বাবা সব সম্পত্তি তোমার আর আমার নামে উইল করে দিয়েছেন। তবে তোমার নামে একটুখানি বেশি দিয়েছেন। কেন দিয়েছে জানোই তো।”
রুমঝুমকে হঠাৎ করেই খারাপ লাগা জেঁকে ধরলো। যে নেই তার অংশ রুমঝুমকে কেন‌ দিবে বাবা? রুমঝুম হতাশ কন্ঠে বললো,
-“হুম জানি।‌ কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি সম্পত্তি ভাগ করলো কেন বাবা?”
-“আমি তো জানিনা।”
-“ওহ।‌ মায়ের কি খবর?”
রুশান হালকা হাসলো। বললো,
-” যে তোমার এতো এতো ক্ষতি করলো তাকে তুমি মা ডাকো কেন আপু? তোমার রাগ হয়না তার উপর?”
-“না রে,হয়না। সে যে আমাকে তিন মাস বয়স থেকে এতো বড় করেছে এটাই তো কত। চাইলে তো‌ আমাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতে পারতো। কিন্তু মারেনি । এটার জন্য হলেও তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ আমার তাই না?”
রুশান চুপ রইলো কিছুক্ষণ। আসলেই মেয়েদের মন খুব নরম। তবে তার মা টা কেন‌ ভিন্ন‌ হলো? শুধুই কি টাকার জন্য?
রুশান উদাস কন্ঠে বললো,
-“জানো আপু, আজকাল আম্মু ও কেমন যেন বদলে গেছে। সারাক্ষণ কাঁদে। গতকাল সকাল অবধিও তোমার ব্যাপারে জানতে চাইতো কিন্তু তারপরই কেমন নিস্তেজ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে ভয়ংকর রকমের অনুশোচনায় ভোগা শুরু করেছে।”
রুমঝুম একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেললো।পাপের শাস্তি সবাই ভোগ করে।কেউ আগে, কেউ পরে। তবে রুমঝুম বুঝতে পারছে না যে তাহমিনা বেগম এমন কি বড় অপরাধ করেছে যার জন্য এতোটা অনুশোচনায় ভুগছে। রুমঝুম আর মাথা ঘামালো না এ নিয়ে। এক হাতে জানালার গ্রিল ধরে সেই হাতের উপর মাথা এলিয়ে দিয়ে বললো,
-“এসব ছাড়। তোর কথা বল রুশান। দিনকাল কেমন যাচ্ছে তোর?”
রুশান বুঝলো রুমঝুম টপিক চেন্জ করতে চাইছে। তাই সে ও এই ব্যাপারে আর কথা বললো না। চুপচাপ বোনের কথাতেই সুর মেলালো। কথা বলার এক পর্যায়ে রুশানের মনে হলো রুমঝুমের মন ভালো নেই। সে অকপটে জিজ্ঞেস করলো,
-“আপু তোমার কি মন খারাপ?”
রুমঝুম নড়ে উঠলো। তার ভাইটা এতোই বড় হয়ে গেছে যে কথা শুনেই বুঝে ফেলছে মন‌ খারাপ কি না? রুমঝুমের ইচ্ছে করলো না মিথ্যে বলতে। এই ছেলেটা তাকে বইয়ের লেখার মতো স্পষ্টভাবে পড়তে জানে। একে মিথ্যে কেন বলবে? রুমঝুম চোখ বন্ধ করে ক্ষীণ আওয়াজে বললো,
-“হ্যাঁ, রে। মনটা ভীষণ খারাপ।”
-“কারনটা কি আপনার এই অধম ভাই জানতে পারে ,আমার প্রিয় আপু?”
রুমঝুম না চাইতেও হালকা হাসলো। সকালের পুরো কাহিনী বললো রুশানকে। সাথে সেদিনের বাসের কাহিনীটাও বললো। রুশান সবটা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
-“ওই ভাইয়াটা একদম বাংলা সিনেমার মতো মেরেছে ভিলেনটাকে তাই না আপু?”
রুমঝুম খিলখিল করে হেঁসে বললো,
-“একদম।”
হঠাৎ রুমঝুমের মনে হলো তার মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে উঠেছে। এটা কি শানের কথা মনে পড়ার জন্য নাকি রুশানের সাথে কথা বলছে সেজন্য? রুমঝুম বুঝতে পারলো না। তবে এটুকু বুঝতে পারলো, তার মন শান্ত, শীতল, স্নিগ্ধ জোৎস্নার মতো আলোকিত হয়ে উঠেছে।শতশত রঙিন প্রজাপতি উড়ছে তার মন বাগানে। রুমঝুম চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে নিলো। ওপাশ থেকে রুশানের কন্ঠস্বর আর তার কানে আসছে না।

কেটে গেছে এক সপ্তাহ। রুমঝুম আর মেঘাকে এই এক সপ্তাহ মেহেদী ভার্সিটি যেতে দেয়নি। ভার্সিটির পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখে তাদের আজ ভার্সিটিতে যাওয়ার অনুমতি দিলো মেহেদী। মেঘা বিরবির করে ভাইয়ের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে রুমঝুমের হাত ধরে ভার্সিটির পথে রওনা হলো।
ডিপজল স্যারের ক্লাস শেষে দুজন বাইরে বের হলো। রুমঝুম নিচের দিকেই চেয়ে আছে। তার মন বলে সে হারানো নুপুরটা পাবে।
মেঘা এদিক সেদিক চেয়ে বললো,
-“চল , কৃষ্ণচূড়া তলায় যাই। সেদিন শান ভাইয়ারে থ্যাংকস জানানো‌ হয়নি। অনেক বড় উপকার করেছিলো আমাদের। আজকে জানিয়ে আসি চল। ”
রুমঝুমের ভীষণ শান্তি লাগলো এই ভেবে যে ওখানে গেলে শানকে এক সেকেন্ড দেখতে পাবে। রুমঝুম সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর দিলো,
-“হ্যাঁ,ঠিক বলেছিস। চল, চল।”
মেঘা রুমঝুমের অগোচরেই মুচকি হাসলো। রুমঝুমের মনের কথা বোধহয় ওর সামনে ভেসে উঠলো। মেঘা তো এমনটাই চাইতো যে রুমঝুমের একটা নিজের মানুষ হোক,যে ওর রক্ষাকবচ এর মতো ওকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে। সেই রক্ষাকবচটা বোধহয় রুমঝুম এবার পেতে চলেছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই দুজন এসে উপস্থিত হলো কৃষ্ণচূড়া তলায়। বিথী আর শান সেখানে নেই। রুমঝুমের মন হঠাৎই নিকষ কালো আঁধারে ঢেকে গেলো। তবে সেই আঁধার প্রায় সাথে সাথেই কেটে গেলো শানকে খানিকটা দূর থেকে আসতে দেখে। রুমঝুমকে দেখেই সিন্থিয়া চেঁচিয়ে উঠলো।
-“ঝুমমম। কোথায় ছিলে এতো দিন? জানো তোমাদের দুজনকে কত খুঁজেছি?”
সিন্থিয়ার কথায় রুমঝুম হাসলো। সিন্থিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,
-“জানি তো খুজেছো। এজন্যই এসে গেছি।”
শান ততক্ষণে এসে সবার মধ্যে বসে পড়েছে। রুমঝুমের দিকে তাকাচ্ছে না। তার কেন যেনো মেয়েটার উপর রাগ হচ্ছে এভাবে না বলে কয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার জন্য। মেয়েটা কি জানে এই সাতটা দিন শানের কেমন কেটেছে? আচ্ছা,রুমঝুম কি ওকে ফিল করে মোটেও? কথাটা ভাবতেই শান মাথা উঁচু করে তাকালো রুমঝুমের দিকে। রুমঝুম শানের দিকেই তাকিয়ে ছিলো তাই দু’জনের চোখাচোখি হয়ে গেলো। রুমঝুম আচমকা এমন হওয়াতে হকচকিয়ে গেলো। চোখ সরিয়ে আশেপাশে মন দেওয়ার চেষ্টা করলো। শান মনে মনে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলো।
সিন্থিয়ার দিকে তাকিয়ে শান ইশারাতে কিছু একটা বুঝাতেই সিন্থিয়া উঠে দাঁড়ালো। রুমঝুমের কাছে গিয়ে বললো,
-“ঝুম আমার সাথে একটু চলো তো। মেঘা এখানে একটু অপেক্ষা করো। ওদের সাথে কথা বলো,ঠিক আছে? আমরা এক্ষুনি আসছি।”
মেঘা কিছু না বুঝেই মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা বুঝালো। রুমঝুমও বুঝতে পারলো না মেঘাকে কেন রেখে যাচ্ছে। তবে কেউই কোনো কথা বললো না এটা নিয়ে।
-“মেঘা?”
শানের ডাকে ওদের দিকে ফিরলো মেঘা। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে বললো,
-“জ্বি ভাইয়া।”
শান মুচকি হেসে বললো,
-“এখানে বসো। তোমার সাথে কথা বলার জন্যই রুমঝুমকে সরালাম এখান থেকে।”
মেঘা এক মূহুর্তেই সব বুঝে ফেললো। শানের কথা শেষ হতেই অতি আগ্রহের সাথে প্রশ্ন করলো,
-“ভাইয়া আপনি কী সত্যিই রুমঝুমকে ভালোবাসেন?”
জবাবে শান চোখ ধাঁধানো একটা হাসি উপহার দিলো। কোনো কথা বললো না।
-“মেঘা,রুমঝুমের অতীত সম্পর্কে বলো।”
প্রান্তের প্রশ্নে মেঘার মুখটা ছোট হয়ে গেলো। রুমঝুম পালিয়ে এসেছে এটা জানলে শান ভাইয়া কি ওকে মেনে নিবে?
মেঘার মনের কথাটা হয়তো প্রান্ত ধরতে পারলো। তাই মেঘা কিছু বলার আগেই বললো,
-“ডোন্ট ওয়ারি। রুমঝুমের পালিয়ে আসার ব্যাপারটা আমরা জানি। তুমি শুধু ওর পরিবার আর পালিয়ে আসার কারন সম্পর্কে বলো।”
মেঘা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। ওরা এটুকু আগে থেকে জানা মানে প্রবলেম অর্ধেক সলভ্। তিহান আর বিথী মনোযোগী শ্রোতার ভূমিকা পালন করছে। তবে বিথী মেঘার কথা শোনার থেকেও তিহানের দিকে মনোনিবেশ করছে বেশি। বোঝার চেষ্টা করছে যে তিহানের মনে মেঘার জন্য কিছু আছে কি না।
মেঘা একটু চুপ থেকে বলতে শুরু করলো,
-“ওর জন্মের সময়ই ওর মা মারা যায়। দুধের বাচ্চা লালন-পালন করা চারটি খানি কথা না। ওর বাবা অনেকটা বাধ্য হয়েই ওর তিন মাস বয়সে আরেকটা বিয়ে করে আনেন। ওর সৎ মা ওদের সাথে বাজে ব্যবহার করতো। ওর বাবা ও কিছু বলতে পারতেন না। মেয়েটা অনেক ছোট ,যদি কিছু করে ফেলে মেয়েটার সাথে। বাবার বিশাল সম্পত্তি থাকার পরও অনাদরে অবহেলায় বড় হতে শুরু করলো।
ঝুমের তিন বছর বয়সে ওর সৎ মায়ের কোলে জন্ম নেয় একটি ছেলে।ছেলেটা ভীষণ ভালোবাসে ঝুম কে। সেই ছেলে বড় হয়েছে রাজকুমারের মতো। অথচ ওরা পথশিশুর চেয়েও কষ্টে বড় হয়েছে।”
-“ওরা মানে? রুমঝুম আর কে?”
তিহানের প্রশ্নে মেঘা খানিকটা চুপ থাকলো। ও নিজেও পুরোপুরি ভাবে কিছু জানে না। মেঘা প্রসঙ্গ পাল্টে বললো,
-“আপনাদের যা‌ জানা প্রয়োজন আমি সেটুকু বলি আজ। সময় কম তো।”
প্রান্তেরও ওই বিষয়ে জানার ইচ্ছা থাকলেও সেটা আপাতত চেপে গিয়ে বললো,
-“আচ্ছা এরপর বলো।”
মেঘা জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আবার বলতে শুরু করলো,
-“আরমান নামে একটা লোক আছে। এমন খারাপ কাজ নেই যা সে করে না। বয়স সাইত্রিশ বা আটত্রিশের কাছাকাছি। রুমঝুমের বয়সের প্রায় দ্বিগুণ। বড় কথা হলো তার মেয়ে নেশা আছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন মেয়ে লাগে তার। রুমঝুমের সৎমা তার টাকা দেখেই গলে গিয়েছিলো। রুমঝুমকে ওখানে বিয়ে দিলে আরো টাকা পাবে ভেবে ওকে জোর করে ওখানে বিয়ে দিচ্ছিলো। কিন্তু এমন মানুষকে কি কেউ জেনে বুঝে বিয়ে করবে বলুন?
করবে না। রুমঝুম উপায়ান্তর না পেয়ে পালিয়ে এসেছে। ওই লোকের হয়তো ইগো হার্ট হয়েছে তাই এখন‌ পাগলা কুত্তার মতো খুঁজছে রুমঝুমকে। জানি না ওকে পেলে কি করবে।”
উপস্থিত সকলেই চুপ করে আছে। মেয়েটা ছোট থেকেই কত ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে এসেছে।
মেঘা শানের দিকে ফিরে আকুতি ভরা কন্ঠে বললো,
-“ভাইয়া ,আপনি কি ঝুমের নিজের মানুষ হবেন? ওকে আগলে রাখবেন সব বিপদ থেকে? একটু সুখের মুখ দেখাবেন ওকে?”
শান তখন তাকিয়ে আছে বেশ খানিকটা দূরে হেঁটে আসা রুমঝুমের দিকে। নিজ মনেই বললো,’ এই মেয়েটার সুরক্ষা বলয় হলে ক্ষতি কি? বুকপিঞ্জিরায় লুকিয়ে রাখবো যেন কেউ খুঁজে না পায় ওকে।’
শান‌ ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে মেঘাকে বললো,
-“আমি ওর নিজের মানুষ হবো, মেঘা। একান্তই তার নিজের।ইর সেটা খুব দ্রুতই হবো।”
রুমঝুম ধীর গতিতে হেঁটে আসতে আসতে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে শানের সেই হাঁসি মাখা মুখের দিকে।
-“আচ্ছা তোমরা দুজন কি আজ আর ক্লাস করবে?”
প্রান্তের প্রশ্নে রুমঝুম মেঘার দিকে তাকালে মেঘা ডানে বায়ে মাথা নাড়ালো। সিন্থিয়া হেঁসে বললো,
-“গ্রেট। চলো ফুসকা খাই। খূব ফুসকা খেতে ইচ্ছে করছে।”
রুমঝুম বোকার মতো তাকালো সিন্থিয়ার দিকে। এই মাত্র ফুসকার ওখান থেকেই ঘুরে এলো অথচ সেদিকে তাকালো পর্যন্ত না আর এখন বলছে ফুসকা খেতে ইচ্ছে করছে। কি অদ্ভুত।
প্রান্ত মেঘাকে বললো,
-“চলো মেঘা,গল্প করতে করতে হাঁটি।”
মেঘা কয়েক সেকেন্ড হা করে তাকিয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলো। বোঝার পর দাঁত কেলিয়ে বললো,
-“চলুন ভাইয়া।”
সিন্থিয়া তিহান আর বিথীর সাথে এমনভাবে কথা বলতে বলতে হাঁটছে যেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মিটিং করছে সে। রুমঝুম বলদের মতো দেখছে শুধু। মেঘা পেছনে তাকিয়ে বললো,
-“ঝুম, শান ভাইয়ার সাথে আয়।”
মেঘার কথায় রুমঝুমের হঠাৎই খুব লজ্জা লাগলো। তবে সে লজ্জাবিলাস করার সময় পেলো না।কারন শান ততক্ষণে দুই-চার পা এগিয়ে গেছে। শানকে এভাবে চলে যেতে দেখে সে খানিকটা রুমঝুম দৌড়ে তার কাছাকাছি চলে গেলো। ছেলেটার আজ হয়েছে কি? কথাও বলছে না, তাকাচ্ছেও না। শান এমন ভাব করছে যেন সে জানপ্রাণ দিয়ে ফোন টিপছে।
রুমঝুম খানিকটা ইতস্তত করে বললো,
-“শুনছেন? ”
শান তার দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিলো,
-“বলো।”
-“আ.. আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন?”
শান ভ্রু কুঁচকে তাকালো রুমঝুমের দিকে। রুমঝুম সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো। শান ঠোঁট টিপে হাসলো। বললো,
-“তোমার সাথে রাগ করার কোনো কারন আছে?”
রুমঝুম উত্তর দিতে পারলো না। নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁসফাঁস করছে সে। শান রুমঝুমের এই অবস্থা দেখে মনে মনে বেশ মজা পাচ্ছে। রুমঝুমের গাল দুটো হালকা লাল হয়ে উঠেছে। শান দাঁত দিয়ে ঠোট কামড়ে নিজের হাঁসি আটকালো। বললো,
-“বাই দা ওয়ে,তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো রুমঝুম?”
রুমঝুম আরো নিচু করে ফেললো মাথা। ইশশ ছেলেটা বুঝলো কিভাবে? সে লজ্জা পেলে কি তার মুখে লেখা ভেসে ওঠে যে এই মুহূর্তে রুমঝুম লজ্জা পাচ্ছে? রুমঝুম মুখ লুকাতে তার অগোছালো দৃষ্টি দিয়ে আশেপাশে দেখতে লাগলো। আর শান প্রেমময় দৃষ্টিতে দেখলো তার লজ্জাবতী চন্দ্রকন্যা কে।
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here