#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৯
সাদাফ পাগলের মত এদিক সেদিক দৌড়াচ্ছে,সারা শপিংমল খুঁজে চলেছে তন্নতন্ন করে।কিন্তু কোথাও সাবিহাকে পাচ্ছে না,সাদাফের অবস্থা খুবই খারাপ।সারা শরীর ঘেমে গিয়ে অবস্থা খুবই করুন, চোখগুলো কেমন অস্থির হয়ে এদিক সেদিক সাবিহাকে খুঁজে চলেছে।সাদাফের অস্থির চোখের দিকে তাকালে যে কেউ বুঝতে পারবে ঐ চোখে কতটা ভালবাসা লুকিয়ে আছে,কতটা ভালবাসলে কেউ এতটা অস্থির হয়ে খুঁজতে পারে কাউকে।সাদাফ এবার এক জায়গায় দাড়িয়ে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফোন লাগায় মনির সাহেবকে।ফোনটা ধরতেই সাদাফকে কিছু বলতে না দিয়েই মনির সাহেব উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে,,,
“সাদাফ সাবিহার খোঁজ পেয়েছো!সাবিহার মা ত কান্নাকাটি করে অবস্থা খারাপ করে ফেলছে।”
সাদাফ কথাটা শুনে চোখ বন্ধ করে কয়েকটা শ্বাস ফেলে নরম গলায় বলে উঠে,,,
“সাবিহাকে পাই নি আঙ্কেল,আমি পুলিশ স্টেশনে যাচ্ছি।আপনি আন্টি আর শীলার দিকে খেয়াল রাখুন।চিন্তা করবেন না সাবিহাকে ঠিক খুঁজে পাব আমরা।”
কথাটা বলে সাদাফ মনির সাহেবকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ফোনটা রেখে দেয় আর একটা জায়গায় বসে পড়ে মাথা নিচু করে,চুলগুলো টেনে ধরে ভেজা গলায় বলে উঠে,,,
“কোথায় চলে গেলে তুমি?প্লিজ ফিরে এসো।এতটুকু সময়েই তুমি হীনা নিজেকে পাগল মনে হচ্ছে।আমি পারব না তোমাকে ছেড়ে থাকতে,প্লিজ ফিরে এসো আমার কাছে।ভালবেসে যত্ন করে আমার কাছে রেখে দিব,কোথাও হারাতে দিব না তোমাকে।প্লিজ ফিরে এসো আমার কাছে।”
_______________________________________
কাব্য এখনও হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে,আর সাবিহা হাতে একটা রড নিয়ে কাব্যর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।কাব্য সেটা দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলে উঠে,,,
“তুই এটা দিয়ে কী করবি?”
সাবিহা কাব্যর কথা শুনে বাঁকা হাসল,তারপর রডটা ঘুরাতে ঘুরাতে বলে উঠল,,,
“সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল টা বাঁকাতে হয়,কথাটা জানেন নিশ্চয়ই!”
“দেখ সাবিহা একদম বারাবাড়ি করবি না,তখন থেকে এমন শুরু করেছিস আমার সাথে।তুই হয়ত ভুলে যাচ্ছিস আমি বয়সে তোর বড় আর তোর মামাত ভাই।”
“ওহহ রিয়েলি!নিজের বেলায় ষোল আনা আমার বেলায় এক আনাও নয় তাই না!কিডন্যাপ করার সময় মনে ছিল না যে আমি ছোট,আপনার ফুপাত বোন।তখন এসব কোথায় ছিল হে,আপনার ঐ গার্লফ্রেন্ড ইশার কাছে?”
“সাবিহা দেখ কথায় কথায় কিডন্যাপ করেছি কথাটা টেনে আনবি না।তকে কিডন্যাপ করে নিজে কিডন্যাপ হয়ে গেছি তোর কাছে।এখন ইচ্ছে করেছে নিজের চুল নিজে টেনে ছিড়ি।আর ঐ থার্ড ক্লাস মেয়েটার কথা আমার সামনে বলবি না,ঐ মেয়ের কথা মনে হলেই গা গুলোয়,বমি আসে।”
“গিরগিটির থেকেও খুব তাড়াতাড়ি আপনি রং বদলান কাব্য ভাই।আপনার থেকে গিরগিটির প্রশিক্ষন নেয়া দরকার,যে কীভাবে এত দ্রুত রং পাল্টানো যায়।”
“মুখ সামলে কথা বলবি সাবিহা,নয়ত খুব খারাপ হয়ে যাবে।”(ধমকে)
কাব্য ধমক দেয়ার সাথে সাথে সাবিহা কাব্যর মুখে রডটা ডুকিয়ে দিয়ে রেগে বলে উঠে,,,
“এই একদম ধমক দিবেন না,আপনার খাইও না পড়িও না যে ধমক দিবেন আমাকে।আর এত কথা আপনাকে বলতে বলি নি আমি।যেটা জানতে চাইছি সেটা বলুন নয়ত এখান থেকে বাড়ি ফিরতে হবে না সোজা কারাগারে ডুকাব।ত ভালোয় ভালোয় বলুন এখানে তুলে এনেছেন কেন?”
মুখে রড থাকার কারনে কাব্য কিছু বলতেও পারছে না।তাই মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করছে যাতে সাবিহা মুখ থেকে রডটা সরায় কিন্তু সাবিহা সেটা বুঝতে পেরেও সরায় না।
“এত সিগন্যাল দিয়ে কোন লাভ হবে না,আগে আমার উওর চাই কেন তুলে এনেছেন এখানে?মাথা নাড়িয়ে উওর দিন বলবেন কী বলবেন না!যদি বলেন ত সরাব নয়ত এই রড দিয়ে মাথা দুই ভাগ করে ফেলব।”
সাবিহার কথা শুনে কাব্যর চোখ বের হওয়ার উপক্রম,তাই কাব্য জলদি মাথা ঝাঁকিয়ে বুঝায় সে বলবে কেন তুলে এনেছে!সেটা দেখে সাবিহা মুচকি হাসল তারপর ইশারা করল বলার জন্য।কাব্য এবার বলতে শুরু করে,,,
“তোকে সারপ্রাইজ দিয়ে এতদিনের করা সব খারাপ আচরনের জন্য সরি বলে তোর সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য তুলে এনেছিলাম।”
সাবিহা কাব্যর কথা শুনে বোকা বনে গেলো,এভাবে তুলে না এনে ভালো করে বললেই ত হত।এভাবে তুলে আনার কী মনে হয়?সাবিহা এবার রেগে কাব্যর পিঠে ধামধুম কয়টা কিল ঘুসি বসিয়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,,,
“ইচ্ছে করতাছে মেরে দাঁত ভেঙ্গে দিতে আপনার, পাগল আপনি?এভাবে তুলে এনেছেন সরি বলে বন্ধুত্ব করার জন্য?
Like seriously?ঐদিক দিয়ে আমার পরিবারের সবাই আমাকে খুঁজে না পেয়ে হয়ত চিন্তা করতে করতে অস্থির হয়ে পড়েছে।আর আপনি এমন বোকার মত কাজটা কীভাবে করতে পারলেন?আপনি ত আমার বাসাতেও যেতে পারতেন?”
কাব্য মাইর খেতে খেতে শেষ,কাব্য নিজেকে সামলে বলে উঠল,,,
“বইন আর মারিস না,আর তুই ত আমার সাথে দেখাই করতে চাইতি না তাই এই ব্যাবস্থা।”
মাথা নিচু করে কাব্য বলল,সেটা দেখে সাবিহা আরো রেগে বলে উঠে,,,
“তাই নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আমাকে এভাবে তুলে এনেছেন!আর কত ক্ষতি করবেন আপনি আমার?আপনাকে আমি পুলিশে দিব,আপনাকে আরো আগেই পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার দরকার ছিল।তবে আজ হয়ত এমন কিছু হত না,কিন্তু এবার আর কোন ছাড় নেই।এবার ছাড় দিলে দেখা গেলো ভবিষ্যতে আপনি আরো বড় কোন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন তাই শাস্তি পাওয়ার জন্য তৈরি হন কাব্য ভাই।”
“সাবিহা দেখ এমন কিছুই করবি না তুই,আমি জাস্ট,,,
” একদম চুপ,আমি আপনার কোন কথা শুনতে চাইনা,এবার যা করার পুলিশ করবে।কত্ত বড় সাহস ছোট একটা কারনে আমাকে তুলে এনেছে, আমার পরিবারকে মানসিক ভাবে কষ্ট দিচ্ছে।”
“আর আমি যে কষ্ট পাচ্ছি!তার কী হবে?”
কাব্য কথাটা কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠে,সাবিহা এবার কাব্যর দিকে তাকায় আর বলে উঠে,,,
“আপনার কষ্ট ত আমাকে তুলে এনেছেন কেন?আপনার কষ্ট কমানোর ঔষধ ত আপনার ইশা বেপি,ত তার কাছে না গিয়ে আমাকে তুলে এনেছেন কেন?”
“সাবিহা তুই এতটাও অবুঝ নস যে বুঝতে পারছিস না আমার কষ্টের কারনটা কী?”
“আমি কোন কবিরাজ কিংবা বিজ্ঞানী না যে কষ্টের কারন জেনে তার ঔষধ দিব।”
“সাবিহা প্লিজ এতটা কঠোর হসনা আমার প্রতি।আমাকে ক্ষমা করে দে দয়াকরে,আয় না আমরা অন্য সব মামাত,ফুপাত ভাই বোনের মত স্বাভাবিক জীবন কাটাই।আমি পারছি না এত কষ্ট যন্ত্রণা শয্য করে বাঁচতে।ইশা যদি আমাকে না ঠকাত তবে হয়ত আমার মধ্যে মনুষ্যত্ব বোধটাই আসত না।আগের মতই হয়ত পশুর মত আচরন করতাম কিন্তু এখন আমি হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি যে আমি কী কী করেছি?কতটা কষ্ট আমার পরিবারকে দিয়েছি,কতটা খারাপ আচরন করে তকে কষ্ট দিয়েছি।আমাকে তুই ক্ষমা করে দিয়ে নতুন করে বাঁচার সুযোগ করে দে দয়াকরে।”
কাব্য কথাগুলো বলতে গিয়ে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল,সাবিহার সেটা দেখে একটু খারাপ লাগছে না।ছেলে মানুষকে সহজে কাঁদতে দেখা যায় না।কিন্তু যখন তারা কাঁদে তখন সে দৃশ্য চোখে পড়লে খুবই খারাপ লাগে।কিন্তু সাবিহা নিজেকে যতটা সম্ভব কঠোর রাখার সেটা রাখতে চাইছে।সাবিহা কাব্যকে কিছু না বলে রুমটার বারান্দায় চলে যায়।
_____________________________________
সাদাফ পুলিশ স্টেশনে রিপোর্ট করে ফিরছিল তখন একটা জায়গায় সাদাফের চোখ আটকে যায়।সাদাফের মুখে অটোমেটিক হাসি ফুটে উঠে,সাদাফ দৌড়ে সেখানে যায় আর সামনে থাকা মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে।
#চলবে…