তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম -Part 15+16

0
332

#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৫+১৬
দোলা সিয়ার রুমে গিয়ে দেখে সে রুমে নেই। পরবর্তীতে চোখ করিডরে গেলে দেখে সিয়া সেখানে একা একা বসে আছে, হাতে চায়ের কাপ । দোলা তার দিকে এগিয়ে যায়। নিজের পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সিয়া পেছন ঘুড়ে তাকিয়ে দেখে তার মা।
সিয়া;; আরে মা কখন এলে, বসো।
দোলা;; এখানে একা একা বসে কি করিস?
সিয়া;; না কিছু না এমনি বসে আছি।
দোলা;; কিছু হয়েছে?
সিয়া;; আরে না, এতোক্ষন বসে বসে নোটস বানাচ্ছিলাম রুমে আর ভালো লাগছিলো না তো তাই এখানে চা নিয়ে এসে বসলাম।
দোলা;; ওহহ।
সিয়া;; আচ্ছা তুমি কি যেনো একটা বেশ কিছুদিন যাবত বলতে চাইছো তবে বলছো না। কি কথা বলোত!
দোলা;; ___________
সিয়া;; ওই মা বলো না।
দোলা;; তুই অর্নীল কে খুব বেশি ভালোবাসিস তাই না!
সিয়া;; আব…. না মানে হঠাৎ এই কথা।
দোলা;; আমার মাথা পুরো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কি করবো, কি বলবো বুঝতে পারছি না।
সিয়া;; ব্যাপার টা খুলে বলো তো।
দোলা;; সিয়া শোন আমি তোকে মিথ্যা বলেছি। আমিও আর তোর নানুও।
সিয়া;; মানে?
দোলা;; তোর বাবা কোন হার্ট এটাকে মারা যান নি। তাকে খুন করা হয়েছিলো।
সিয়ার কপালে চিন্তার ভাজ এসে পরে।
সিয়া;; ক ক কি বলো এইসব?
দোলা;; নিজের চোখের সামনে তোর বাবার মৃত্যু দেখেছি। করার কিছুই ছিলো না। তোকে নিয়ে ভেগে এসে পরেছিলাম তোর নানুর কাছে।
সিয়া;; কে মেরেছে?
দোলা;; _________
সিয়া;; মা বলো না কেনো? (চিল্লিয়ে)
দোলা;; স সা সাগর চৌধুরী।
সিয়া;; কি?
দোলা;; অর্নীলের বাবা।
সিয়ার হাত থেকে ঠাস করে চায়ের কাপ টা নিচে পরে যায়। পরে যাওয়ার সাথে সাথে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। ফাটা চোখে সিয়া তাকিয়ে আছে তার মায়ের দিকে। সিয়ার বাবার খুন হয়েছে তাও কিনা অর্নীলের বাবার হাতে। সিয়ার মাথা এখন সত্যি ভনভন করে ঘোড়াচ্ছে। সিয়া তার চোখগুলো খিচে বন্ধ করে আবার ফট করেই মেলে তাকায়।
সিয়া;; মা, তুমি কি বলছো বুঝতে পারছো? অর্নীলের বাবা ক………
দোলা;; তুই বলতে চাচ্ছিস এখন কিনা আমি তাহলে মিথ্যা কথা বলছি তাও তোর মৃত বাবার নামে।
সিয়া;; আমি তা বলি নি, ভুল বুঝো না। কিন্তু আংকেল বাবা কে মারবে মানে কেনো?
দোলা;; প্রতিহিংসা, তার থেকে বেশি নাম-ডাক হওয়াতে।
সিয়া;; বাবা আংকেলের সাথে কাজ করতো?
দোলা;; হ্যাঁ, তারা এক সাথেই বিজন্যাস করতো।
সিয়া;; ত তুমি এ এতোদিন মি মিথ্যা বলে এসেছো আমাকে!
দোলা;; এছাড়া উপায় ছিলো না। ইভেন আমি নিজেই জানতাম না যে অর্নীলের বাবা সাগর।
সিয়া;; অর্নীল এইসব….
দোলা;; কিছুই জানে না।
দোলা এক এক করে সবকিছু খুলে বলে সিয়াকে।
সিয়া করিডর থেকে নিজের রুমে এসে বিছানার ওপর ধপ করে বসে পরে৷ মূহুর্তেই চোখ-নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে৷ নিজের ওরনা টা হাত দিয়ে খামছে ধরে। দোলা করিডর থেকে কাচের টুকরো গুলো তুলে নিয়ে এসে পরে। দোলা চলেই যেতো রুম থেকে কিন্তু আবার সিয়ার কাছে যায়। “সিয়া” বলে ডাক দিতেই সে মাথা তুলে তাকায়। দেখে সিয়ার চোখ থেকে আপনা আপনিই টপ টপ করে পানি গড়িয়ে পরছে। এটা দেখেই দোলার মন টা ভেঙে যায়। দোলা সিয়ার চোখের পানি গুলো মুছে দেয়। থেকে থেকে নাক টানছে সে। দোলা সিয়ার সামনে থেকে উঠে চলে যেতে ধরবে তখনই সিয়া তার মায়ের হাত ধরে ফেলে। দোলা পেছন ফিরে তাকায়। সিয়া টলমল চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলে…
সিয়া;; আমি অর্নীল কে ভালোবাসি, মা।
দোলার কিছুই বলার নেই এখন। যার ভয় ছিলো তাই হচ্ছে। দোলা তার হাত টা ছাড়িয়ে দিয়ে এসে পরে। সিয়া এবার হুহু করে কেদেই দেয়। অর্নীল কে এখন সে কি বলবে! অর্নীল তো কিছুই জানে না। যদি একবার সে জানে তাহলে কি হবে। তবে এটা সিওর যে অর্নীল কখনোই সিয়াকে ছেড়ে যাবে না। সিয়া এখন এক দ্বিধায় পরে গেলো। নিজের বাবার খুনির ছেলের সাথেই থাকবে নাকি দূরে এসে নিজেকে সবার থেকে গুটিয়ে নিবে। না, দোলা সিয়াকে অর্নীলের ব্যাপারে কিছুই বলে নি। সে না ই অর্নীলের কাছ থেকে সিয়াকে দূরে থাকতে বলেছে আর না ই ছেড়ে যেতে বলেছে। তবে এটা সিয়ার নিজের কাছেই কেমন আজগুবি লাগছে। যে তার বাবা কে খুন করলো তারই ছেলে কে ভালোবাসে৷ কেনো, কেনো সে আগে এইসব কিছু জানলো না! এই পর্যায়ে এসে থমকে দাঁড়ানো যেনো তার ভাগ্যে লিখাই ছিলো তাই তো এমন হয়েছে। সিয়ার কান্না যেনো থামছেই না, হাতের উল্টো পাশ দিয়ে বারবার চোখ গুলো মুছছে। নীরবতার মাঝে হুট করেই সিয়ার ফোন টা বেজে ওঠে। সিয়া চমকে গিয়ে বালিশের পাশ থেকে ফোন টা নেয়। তুলে দেখে অর্নীল। বুক টা কেমন যেনো ধক করে ওঠে৷ ফোন পিক করবে কি করবে না তা নিয়ে ভাবতে লাগলো। আর হাতে ফোন নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তা কেটে যায়। তার কয়েক সেকেন্ড পর আবারও ফোন আসে। সিয়া এবার ফোন টা ভাবলেশহীন ভাবেই কানে ধরে৷
অর্নীল;; এই মেয়ে একবারে ফোন ধরা যায় না নাকি। কত্তো বলবো।
সিয়া;; হুম।
অর্নীল;; সিয়াজান!
সিয়া;; __________
অর্নীল;; সিয়া।
সিয়া;; হু হুমম।
অর্নীল;; আর ইউ ওকে, মানে কিছু কি হয়েছে? ঠিক আছো?
সিয়া;; হ্যাঁ
অর্নীল;; মোটেও না। কি হয়েছে বলো। কেউ কি কিছু বলেছে?
সিয়া;; আরে না কে কি বলবে।
অর্নীল;; তাহলে গলা এমন কেনো। কান্না করেছো কেনো?
সিয়া;; কান্না করি নি। আ আসলে আইসক্রিম খেয়েছিলাম তো তাই ঠান্ডা লেগে গিয়েছে, গলা ভেঙে গেছে আর কি তাই এমন লাগছে।
অর্নীল;; Siya, Don’t lie
সিয়া;; আচ্ছা বাদ দিন, আপনি কোথায়?
অর্নীল;; ক্লাবে এসেছি।
সিয়া;; আচ্ছা, অর্নীল আমি রাখি হ্যাঁ, আমার ঘুমাতে হবে। কাল কলেজ আছে।
অর্নীল;; কিন্তু সিয়া……
অর্নীলের কিছু বলার আগেই সিয়া ফোন রেখে দেয়। এক সময় কান্না করতে করতে ঘুমিয়েও পরে। ওদিকে দোলা একদম মন মরা হয়ে নিচে নেমে আসতেই শিউলি বেগমের সাথে দেখা হয়।
শিউলি;; কিরে কি হয়েছে, মুখ টা এমন শুকনো লাগছে কেনো?
দোলা;; কিছু না মা।
শিউলি;; ভুলিস না তুই সিয়ার মা হলে আমি তোর মা। বুঝি সব, কি হয়েছে? মা-মেয়ে ঝগড়া করেছিস?
দোলা;; সিয়াকে তার বাবার বিষয়ে সব বলে দিয়েছি।
শিউলি;; কি বলিস! সিয়া ঠিক আছে?
দোলা;; হয়তো। ও অর্নীল কে ভালোবাসে অনেক। এখন আমি কি বলবো ওকে। আর অর্নীল যে খারাপ তা না, ছেলেটা যথেষ্ট ভালো।
শিউলি;; তাই বলে তুই রহমানের সাথে এমন টা করতে পারিস না। সিয়া কে বল অর্নীল কে ভুলে যেতে। যে ব্যাক্তি সিয়ার বাবা কে খুন করেছে তাকে সিয়া নিজের শশুড় হিসেবে কীভাবে মেনে নিবে। আর সিয়া এখন সবই জানে। এটা সম্ভব না। সিয়া কে বল অর্নীল কে ভুলে যেতে। আর যাই হোক আমার মেয়ের জামাই এর খুনির সাথে আমি আত্নীয়তা করতে পারবো না। দোলা বুঝেছিস তুই?
দোলা;; হুমমম।
শিউলি বেগম সেখান থেকে এসে পরে৷ দোলা রুমে চলে যায়, ঘুম নেই চোখে এক ফোটা। সিয়া যদি অর্নীল কে ভুলতে না পারে তাহলে কি হবে। আর অর্নীলই কি এতো জলদি সিয়ার পিছু ছাড়বে। মনে হয় না।
আর অর্নীল ড্যাম সিওর যে সিয়ার কিছু না কিছু তো হয়েছেই। নয়তো সে এমন করতো না। অর্নীল এগুলোই ভাবছে আর একের পর এক এলকোহলের পেগ মেরে যাচ্ছে।




পরেরদিন সকালে~~
সিয়া দ্রুত পা ফেলে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে পরে। দোলা কিছু বলতে যাবে কিন্তু সিয়া তার পাশ কাটিয়ে এসে পরে। কাউকে কিছু না বলেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। মুখ টা কেমন গোমড়া। সেটা শিউলি আর দোলা দুজনেই খেয়াল করে। শিউলি দোলা কে ইশারাতে শান্ত থাকতে বলে। এদিকে সিয়া তার বাড়ি থেকে বের হয়ে বাইরে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলো। বেশ সময় চলে গিয়েছে তবুও কিচ্ছু পাচ্ছে না। বারবার নিজের হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। তখনই সিয়ার সামনে স্বশব্দে একটা গাড়ি থামে। সিয়া কিছুটা পিছিয়ে যায়। গাড়ির উইন্ড খুলে নিচে নেমে এলে সিয়া দেখে সায়ন।
সায়ন;; এই যে বেয়াইন! কেমন আছেন?
সিয়া;; জ্বি ভালো, আপনি?
সায়ন;; হ্যাঁ এইতো ভালো। তো কোথায় যাওয়া হচ্ছে কলেজ?
সিয়া;; হ্যাঁ।
সায়ন;; উঠে পরুন। আপনাকে দিয়ে আসি।
সিয়া;; না না আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আমি একাই যেতে পারবো।
সায়ন;; আমিও হস্পিটালে যাচ্ছি। আর আমার হস্পিটাল থেকে আপনার কলেজ বেশি একটা দূরে তো না। এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করার থেকে চলুন দিয়ে আসি।
সিয়া ভেবে দেখলো এমনিতেই ১০ মিনিট দেরি হয়ে গিয়েছে। তাই সে সাত পাঁচ না ভেবে এক সময় উঠেই পরে গাড়িতে। সায়ন গাড়ি নিয়ে চলে যায়। ড্রাইভ করতে করতে হঠাৎ বলে ওঠে…..
সায়ন;; তো এই বাসা আপনাদের?
সিয়া;; জ্বি।
সায়ন;; আন্টি আর নানু কেমন আছেন?
সিয়া;; সবাই ভালো৷
সায়ন;; আর আপনি?
সিয়া;; আছি কোন রকম।
সায়ন;; চোখ মুখ কেমন লাল হয়ে আছে আপনার। কি হয়েছে?
সিয়া;; কিছু না এমনি।
সায়ন;; ডক্টর পাশে বসে আছে। অসুখের কথা বলতে পারেন।
সিয়া;; আরে না তেমন কিছু না। ঠিক আছি। আদিবা আপু আর বাকিরা সবাই কেমন আছে?
সায়ন;; হ্যাঁ সবাই বেশ ভালোই।
এভাবেই টুক টাক কথা বলতে বলতে একসময় সিয়ার কলেজের সামনে এসে পরে৷ সিয়া গাড়ি থেকে নেমে পরে। সায়ন কে বিদায় জানিয়ে এসে পরে। তবে কলেজের ভেতরে ঢুকতে গেলেই দেখে অর্নীল দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সে এখনো সিয়াকে দেখেই নি। সিয়াও যেনো অর্নীলের চোখে না পরে তার জন্য মুখে নিজের নাস্ক টা পরে নিয়ে দ্রুত পা চালিয়ে সেখান থেকে এসে পরে। যেই না একেবারে ক্লাস রুমের ভেতরে চলে যেতে ধরবে তার সাথে সাথেই অর্নীল সিয়ার হাত ধরে টান দিয়ে এনে টেনে নিয়ে যেতে লাকে। সিয়া নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে৷ বারবার অর্নীল কে হাত ছাড়ার কথা বলছে কিন্তু অর্নীল তো হাত ছাড়ার পাত্র না। তাকে একদম কলেজ মাঠে নিয়ে যায়। আর এখন যেহেতু ক্লাস টাইম তাই সবাই যার যার ক্লাসরুমে। মাঠ টা পুরোই ফাকা৷ অর্নীল সিয়া কে টান দিয়ে নিজের সামনে এনে দাড় করিয়ে দেয়। সিয়া বিরক্তি মাখা মুখ করে আবার চলে যেতে ধরলে অর্নীল আবার তার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের সামনে আনে। আর এবার অর্নীল তার হাত ছাড়ে নি। শক্ত করে ধরেই রেখেছে।
অর্নীল;; কি হয়েছে হ্যাঁ? প্রব্লেম কি? সকালে এত্তো গুলো ফোন দিলাম, মেসেজ দিলাম। ফোন ধরো না রিপ্লাই নেই। এখন আবার আমাকে দেখে চলে যাচ্ছো লুকিয়ে। সমস্যা কি তোমার? ইগ্নোর কেনো করছো?
অর্নীল সিয়ার বেশ কাছে গিয়েই কথা টা বলে। সিয়া তার চোখ বন্ধ করে অন্য পাশে তাকিয়ে ছিলো। অর্নীলের কথায় গতকাল রাতে সিয়ার তার নানুর কথা গুলো মনে পরে যায়। কাল রাতে সিয়া নিচে নামতে ধরেছিলো আর তখনই সে শিউলি বেগমের বলা সব কথাই শুনে ফেলে।
অর্নীল;; সিয়া চুপ করে থাকলে কিন্তু এখনই এখানে কিছু একটা করে বসবো আমি।
সিয়া;; কারণ আমার এইসব কিছু আর ভালো লাগছে না।
অর্নীল;; ভালো লাগছে না মানে কি? কি ভালো লাগছে না?
সিয়া;; অর্নীল প্লিজ হাত টা ছাড়ুন এখন আমার ক্লাস আছে।
অর্নীল;; ক্লাস রে গুল্লি মারি। তোমার কি হয়েছে বলবা? এমন করছো কেনো?
সিয়া;; ওকে ফাইন, আমরা কলেজ টাইম শেষে ক্যান্টিনে বসে আস্তে ধীরে এই ব্যাপারে কথা বলি। এখন আমি কিছু বলবো না তো অযথা চিল্লিয়ে লাভ নেই। আমরা কলেজ শেষে কথা বলি। আর আপনি এখন দয়া করে আপনার অফিসে যান। কলেজ ক”টায় শেষ হয় তা তো জানেনই। এসে পরবেন, এখন নিজেও যান। আর আমাকেও যেতে দিন। অর্নীল হাত ছাড়ুন।
অর্নীল এক ঝটকায় সিয়ার হাত ছেড়ে দেয়। তারপর রেখে-মেগে সেখান থেকে এসে পরে। সিয়া কতোক্ষণ অর্নীলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেও ক্লাসে এসে পরে।




চলবে~~
#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৬
একটা সময় সিয়ার কলেজ টাইম শেষ হয়ে যায়। সে ক্লাসের বাইরে এসে আশে পাশে অর্নীল কে খুঁজতে লাগে,, যদি কোথাও থেকে থাকে তো৷ সিয়া আশে পাশে তাকাতাকি করছিলো তখনই তার ফোনে মেসেজ আসে৷ মেসেজের শব্দে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে অর্নীলেরই মেসেজ। সে ক্যান্টিনে আছে৷ সিয়া সেখানে চলে যায়। অর্নীল একটা কর্ণারের টেবিলে বসে বসে কোল্ড কফিতে চুমুক দিচ্ছিলো৷ কারো আসার শব্দ পেয়ে পেছন ঘুড়ে তাকিয়ে দেখে সিয়া ভেতরে আসছে। সিয়া এসে টেবিলে অর্নীলের সামনে বসে পরে৷
চোখ নিচে নামিয়ে রেখেছে। সিয়া তার ব্যাগ টা পাশে রেখে টেবিলের ওপর নিজের দুই হাত জড়ো করে নিয়ে বসে। কাচের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আর অর্নীল তার কপালের সাইডে এক হাত রেখে সরু দৃষ্টিতে সিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সিয়া অর্নীলের দিকে তাকিয়ে দেখে সে উল্টো তার দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের চোখাচোখি হয়ে গেলে সিয়া আবার অন্য দিকে তাকায়, অর্নীল এবার সোজা হয়ে বসে। এক হাত মুখের কাছে ঠেকিয়ে বলে….
অর্নীল;; এমন করছো কেনো? আমাদের কি এটা প্রথম দেখা হচ্ছে নাকি!
সিয়া;; কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন প্লিজ।
অর্নীল;; Siya, what’s wrong with you?
সিয়া;; কিছু না।
অর্নীল;; কি বলবো মানে। যেখানে গতকাল সকাল অব্দিও তোমার আর আমার মাঝে সবকিছুই ঠিক ঠাক ছিলো আর সেখানে আজ কিনা এমন। সিয়া, দেখো আমার রাগ নেই। সহজে উঠে না বাট ট্রাস্ট মি যদি একবার আমার রাগ উঠে যায় তাহলে কি থেকে কি করে বসবো তা আমি নিজেও জানি না। আমি আশে পাশের কিচ্ছু মানবো না কিন্তু বলে দিলাম।
সিয়া অর্নীলের কথায় ভরকে যায়৷ আসলেই অর্নীলের মাথা একবার গরম হয়ে গেলে পরে বিপাকে পরতে হবে তাকে। তাই সিয়া এবার একটু ছাড় দেয়।
সিয়া;; আচ্ছা কুল ডাউন। এতো রাগার কিছুই নেই।
অর্নীল;; এই কিছুই নেই মানে কি হ্যাঁ। তুই আমার সাথে কাল রাত থেকে ঠিক ভাবে কথা বলিস না, মেসেজের রিপ্লাই দিস না। দেখ করতে বললে এড়িয়ে যাস। কি মনে হয় আমাকে?
সিয়া;; Arnil, behave yourself…
অর্নীল;; সিয়া ক্লিয়ারলি বলো আমাকে।
সিয়া;; কিছু না অর্নীল কিচ্ছু না। আপনি কেনো বুঝতে পারছেন না। কিছুই হয় নি আমার। আমার শুধু এখন ভালো লাগছে না তাই কথা বলি নি। মানুষের মন-মাইন্ড সবসময় একই রকম থাকে না। আমার জাস্ট ভালো ঠেকছে না তাই এমন করেছি। আপনি তো শুধু রাগ ঝাড়েন আমার ওপর।
অর্নীল;; এক্সাম কবে তোমার?
সিয়া;; কবে আর! আগামীকাল থেকেই। আজ রুটিনও দিয়ে দিয়েছে।
অর্নীল;; ওহহ আচ্ছা।
সিয়া;; আমাকে দয়া করে এখন বাসায় যেতে দিন প্লিজ। কাল থেকে আমার ফাইনাল এক্সাম শুরু, যদিও খুব বেশি একটা এক্সাম না৷ তবুও আমার পড়তে হবে৷ আমি যাই।
অর্নীল;; আমি দিয়ে আসছি।
সিয়া;; কোন দরকার নেই।
অর্নীল;; কি বললি?
সিয়া;; ন ন মা মানে আ…..
অর্নীল;; চলো।
অর্নীল সিয়ার হাত ধরে বাইরে নিয়ে এসে নিজের গাড়ির দরজা খোলে তাতে সোজা বসিয়ে দেয়। সিয়াও আর কিছুই না বলে গাড়িতে উঠে বসে পরে। বেশ কিছুক্ষন পরে সিয়ার বাসার সামনে গাড়ি থামাতেই সিয়া দ্রুত বেগে গাড়ি থেকে নেমে বাইরে বের হয়ে চলে যায়। না নিজে কিছু বলে আর না ই অর্নীল কে কিছু বলতে দেয়। অর্নীলও গাড়ি টান দিয়ে এসে পরে সেখান থেকে।
এরপরের দিন থেকে সিয়ার এক্সাম শুরু হয়। সিয়া এখন শুধু বাড়ি থেকে কলেজ আর কলেজ থেকে বাড়ি। অর্নীলের ফোন বেশি একটা ধরে না। মেসেঞ্জারে ব্লোক করে রেখে দিয়েছে৷ কলেজ থেকে বাসায় এক প্রকার পালিয়েই আসে যেনো অর্নীলের চোখে না পরে। এভাবে দেখতে দেখতেই চলে গেলো প্রায় এক সপ্তাহ। সিয়ার এক্সামও শেষ। হয়তো কিছুদিনের মাঝেই রেজাল্টও দিয়ে দিবে৷ সিয়া এতো দিন খুব পালিয়ে পালিয়ে ঘুড়েছে অর্নীলের কাছ থেকে। অর্নীল এক প্রকার হাপিয়ে উঠেছে সিয়ার সাথে দেখা & কথা বলার ট্রাই করতে করতে কিন্তু সেগুড়ে বালি। অর্নীল যতোই সিয়ার সাথে দেখা বা কথা বলতে চায় সিয়া যেনো তত দূরে দূরে পালিয়ে বেড়ায়। এটা সিয়ার কাছেও খারাপ লাগে। তবে সে নিরুপায় এখন। সিয়া বেশির ভাগই এখন মন মরা হয়ে থাকে৷ অর্নীলের সাথে সিয়ার সম্পর্ক টা যে কিছুটা ঢিলা হয়ে এসেছে তা দোলা নিজের বুঝতে পেরেছে। আজ কলেজে যাবার পর অনু সিয়াকে আকড়ে ধরে। কেননা আজ অনুর বার্থডে। আর অনু বলেছে যে সিয়া না গেলে নাকি সে কেকই কাটবে না। আর শান্তি তো যাবেই৷ আর কোন উপায় না পেয়ে সিয়া অনু কে বলে দেয় যে সে যাবে। বিকেলের দিকে সিয়া অনুর বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পরে। বার্থডে তে সব বান্ধুবী রা মিলে বেশ ভালোই মজা করে। অনু তো সিয়া কে যেতে দিতেই চাচ্ছিলো না কিন্তু দোলা সিয়াকে দ্রুত ফিরতে বলেছে এই ভেবেই সিয়া কোন রকমে অনুর কাছ থেকে পিছু ছাড়িয়ে চলে আসে। তবে বাইরে আসতেই সিয়া পরে আরেক বিপদে। কেননা কোন একটা যানবাহন কিচ্ছুই নেই। রাস্তা বলা যায় পুরোই ফাকা। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ৯ টা বেজে ৫৫ মিনিট। এরই মাঝে আকাশে মেঘ গর্জন করে ওঠে তীব্র ভাবে। সিয়া তার দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে৷ এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে সারা রাতেও গাড়ি খুঁজে পাবে না এই ভেবেই সিয়া পা বাড়ায়। রাস্তায় মানুষজনও বেশ কম। বেশ নীরবতা আর রাস্তার পাশে থাকা কুকুর গুলো৷ সিয়া দ্রুত পা ফেলে যাচ্ছিলো তখনই আরেক বার মেঘ গর্জে উঠে৷ সিয়া তার আশে পাশে তাকাচ্ছে আর সামনে হেটে চলেছে। আসলে সত্যি বলতে এখন সিয়ার কিছুটা ভয়ই করছে৷ কেননা রাতও বেশ হয়েছে আর এমন মেঘ-বৃষ্টির সময়। রাত যতটা আধার করে আসে নি তার থেকেও বেশি আধার করেছে এই কালো মেঘ। হঠাৎ যেতে যেতেই বিনাবাক্যে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমে পরলো। একেবারে হুরমুড়িয়ে মুষুলধারে বৃষ্টি। সিয়া মাথার ওপরে হাত দিয়ে দৌড়ে গিয়ে একটা ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে পরে৷ যাহ বাবা, তাও কাক ভেজা হয়েই গিয়েছে। থেকে থেকে বিদুৎ চমকাচ্ছে আর প্রবল বেগে বৃষ্টি হচ্ছে। এমন কি সিয়ার থেকে কয়েক হাত দূরের জিনিসও স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে না। বেশ ভালোই জোরে বৃষ্টি নেমেছে। বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমার জন্য সিয়া অপেক্ষা করতে লাগলো সেখানেই। তবে বৃষ্টি থামা বা কমা কিছুরই নাম নেই। সিয়া হাতে থাকা ঘড়ির দিকে আবার তাকায়। দেখে সাড়ে দশ টা বাজছে। এবার দোলা নিশ্চিত চিন্তা করছে তার জন্য। এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে কিছুই হবে না। কে জানে বৃষ্টি কখন থামবে। এটা ভেবেই সিয়া বৃষ্টির মাঝেই পা বাড়ায়৷ নিমিষেই পুরো ভিজে যায়। সিয়া ভিজে ভিজেই বাড়ি যাচ্ছে। এইতো আর ৫-১০ মিনিট তাহলেই বাড়ি। তবে সিয়ার এখব বেশ ঠান্ডা লাগছে। নির্ঘাত জ্বর এসে ছেড়েছে। ভাগ্যিস একটা পার্স ছিলো নিজের সাথে আর তাতে ফোন টা রয়েছে। নয়তো এই বৃষ্টির মাঝে নিজের সাথে সাথে নিজের ফোন কেও ভিজতে হতো৷ ভিজে ভিজে যাচ্ছিলো এর মাঝে আবার মেঘ গর্জে ওঠে। সাথে সিয়ার ভয়ও বাড়ছে। শীতের চোটে কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে বাড়ি অব্দি পৌঁছে গেলেই হলো ব্যাস। সিয়া যখন নিজের বাড়ির বেশ কাছে এসে পরে অখনই নিজের হাতে কারো এক হেচকা টান অনুভব হয়। এতে সিয়া বেশ ভয় পেয়ে যায়। কিছুটা চিল্লিয়েও ওঠে। তবে পেছন ঘুড়ে তাকাতেই দেখে অর্নীল। সেও এক্কেবারেই ভিজে চুবু চুবু৷ মাথার চুল গুলো ভিজে মুখ চুইয়ে চুইয়ে পানি পরছে। গায়ে থাকা জেকেট টা ভিজে গিয়েছে একদম। সিয়া শূন্য চোখে অর্নীলের দিয়ে তাকিয়ে থাকে। পরক্ষণেই নিজের হোস ফিরলে সিয়া নিজের বাহুতে অর্নীল কে শক্ত করে ধরে থাকতে দেখে। সিয়া নিজের বাহু ছাড়িয়ে নিয়ে চলে আসতে নিলেই অর্নীল এবার সিয়াকে অনেক জোরে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে হাত দিয়ে সিয়ার গাল চেপে ধরে। এতে সিয়া ব্যাথায় চোখ কুচকে ফেলে। অর্নীলের হাতের ওপর নিজের দুই হাত দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না৷ অর্নীল তার ডান হাত দিয়ে সিয়ার কোমড়ে প্যাচিয়ে ধরে বাম হাত দিয়ে তার গালে চেপে ধরে৷ অনেক রাগ নিয়ে সিয়ার মুখের সামনে নিজের মুখ এনে বলে ওঠে……
অর্নীল;; কম ভালোবাসছি তোকে! না বল আমায়। কিসের কমতি ছিলো। আমি আমার ভালোবাসায় কিসের কমতি রেখেছিলাম। তারপরে, তারপরেও তুই আমাকে রেখে ছেড়ে চলে যেতে চাস। তুই জানিস না তোকে ছাড়া আমার বাঁচা বড়ো দায় তারপরেও কেনো? আজ কতো টা দিন ধরে তুই আমার সাথে কথা বলিস না, দেখা করিস না৷ জানিস এগুলো আমাকে ঠিক কি পরিমাণ হার্ট করে। তোর এত্তো পরিমাণে অবহেলা আমি আর নিতে পারছি না সিয়া। আমি সত্যি আর পারছি না এইসব সহ্য করতে।
সিয়া;; অ অ অর্নীল, ছা ছাড়ুন আমাকে। আমার লা লাগ লাগছে অনেক।
অর্নীল সিয়াকে এক ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দেয়। এবার যেনো সিয়া একটু বুক ভরে দম নেয়। কেননা এতোক্ষন তার দম আকটে আসছিলো এতো টাই শক্ত করে চেপে ধরেছিলো অর্নীল তাকে। সিয়া খেয়াল করে দেখে অর্নীল রাগে ফুসছে।
অর্নীল;; কি করবো আমি বল আমাকে! না কি করতে হবে শুধু একবার বল আমাকে৷ আমি তাই করবো। তবুও তুই আমার হয়ে থাক। আমার আগের সিয়া হয়ে যা।
সিয়া;; হবো না কখনো আমি।
অর্নীল;; মানে?
সিয়া;; মন ভরে গেছে আমার আপনার থেকে। আর ভালো লাগে না আপনাকে। এখন ভালোবাসি না আমি আপনাকে৷ দূরে থাকুন আমার থেকে আর আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। শুনেছেন আপনি আমি আপনাকে আর ভালোবাসি না৷
অর্নীলঃ; এটা মিথ্যা সিয়া। এটা আমি বিশ্বাস করি না। তুমি ডাহা মিথ্যা কথা বলছো।
সিয়া;; অর্নীল এটাই সত্যি।
অর্নীল;; ওই শোন, তোকে আমি যে পরিমাণে চিনি না সেইটুকু তুই নিজেও নিজেকে চিনি না বুঝেছিস। সো আজাইরা কথা বাদ দে। আর এবার বল সমস্যা কি, কেনো দূরে দূরে পালিয়ে বেড়াস আমার কাছ থেকে?
সিয়া;; _______________
অর্নীল;; সিয়া কিছু জিজ্ঞেস করছি, বলো।
সিয়া;; _______________
অর্নীল;; সিয়া এই বৃষ্টি তে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার কোন মানেই হয় না। আর যতক্ষন পর্যন্ত না তুমি আমাকে কিছু বলছো ততক্ষন না আমি নিজে এখান থেকে যাবো আর না ই তোমাকে এখান থেকে যেতে দিবো৷ তো প্লিজ বলো। আরে আই লাভ ইউ ইয়ার,, ভালোবাসি আমি তোকে। পারবো না এখন তোকে ছাড়া নিজের জীবন লিড করতে। মাথামোটা কেনো বুঝিস না এই কথা৷ সিয়া কি হয়েছে? বলো আমাকে। কোন সমস্যা হলে তার সমাধানও আছে। বলো আমাকে হয়েছে কি? সিয়া! কেনো দূরে ঠেলে পাঠিয়ে দিচ্ছো আমাকে তোমার কাছ থেকে সিয়া, বলো?!
সিয়া;; কারণ আপনার বাবা সাগর আমার বাবা রহমান শেখের খুনি। আর আমি পারবো না আমার বাবার খুনির ছেলেকে নিজের জীবনের সাথে জড়াতে। (চিল্লিয়ে)
অর্নীলের লাগাতার করা এতো গুলো প্রশ্নে সিয়া অসহায় হয়ে এবার এক চিৎকারে এই কথা টা বলেই উঠে। হাপাচ্ছে সে, হয়তো শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাই। আর অর্নীল বেশ খেয়াল করে দেখলো যে সিয়ার চোখে অশ্রুবিন্দু গুলো জ্বলজ্বল করছে, যা বৃষ্টির পানিতে এক এক করে সব ধুয়ে-মুছে যাচ্ছে৷ অর্নীল সিয়ার দিকে কয়েক কদম এগিয়ে গেলো।
অর্নীল;; সিয়া তুমি কি পাগল? তুমি কি বলছো তা নিজেই একটা বার ভেবে দেখো তো? মানে কি এইসবের, বাবা তোমার বাবা কে খুন মানে? সিয়া কি বলছো?
সিয়া;; বিশ্বাস না হলে নিজের বাবা কে গিয়েই জিজ্ঞেস করবেন। আজ একমাত্র আপনার বাবার জন্য আমি কাউকে বাবা বলে ডাকতে পারি না। ভাগ্য ভালো আমি আর মা বেঁচে আছি নয়তো আপনার বাবা তো সেইদিন আমাদেরও মেরে ফেলতো।
অর্নীল;; কিন্তু বাবা এমন কেনো করবে?
সিয়া;; তা না হয় উনাকেই জিজ্ঞেস করবেন।
অর্নীল;; কিন্তু তাতে আমার কি দোষ, আমি কি করেছি? সিয়া আমি ভালোবাসি তোমাকে।
সিয়া অর্নীলের কাছে চলে যায়। বেশ রাগ আর ক্ষোভ এনে বলে ওঠে।
সিয়া;; না, আপনি কিছুই করেন নি। তবে হ্যাঁ যার সাথে এতো বড়ো একটা কান্ড হয়েছে সে আর কেউ না আপনারই বাবা। যা আমার পরিবার আমার মা কখনোই মেনে নিবে না। মা সব জেনে শুনে এক খুনির ঘরের ছেলের বউ হিসেবে আমাকে কখনোই পাঠাবে না। আপনি নিজেই একবার ভেবে দেখবেন। এভাবে হয় না অর্নীল, আপনি ব্যাপার টাকে যত ইজি ভাবছেন তত ইজি না।
এই বলেই সিয়া অর্নীল কে কিছুটা ধাক্কা দিয়ে দেয়। সিয়া কাদছে কিন্তু তা বুঝা যাচ্ছে না। অর্নীল রাগে মাথা তুলে সিয়ার উদ্দেশ্যে বলে…
অর্নীল;; এইটা যদি সত্যি হয়ে থাকে I swear আমি ওই ব্যাক্তি কে নিজে মেরে ফেলবো। ওই লোকের জন্য আমার মা মরেছে৷ এখন আমার শুধু তুমি আছো। কিন্ত তুমিও যদি একমাত্র ওই ব্যাক্তির জন্য আমার থেকে দূরে চলে যাও তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।
সিয়া;; আমাকে ভুলে যান অর্নীল। এই চরম সত্য জানার পর আমার পক্ষে আর সম্ভব না আপনাকে ভালোবাসা।
অর্নীল;; সিয়া, আমি বুঝতে পারছি তুমি এই মূহুর্তে ঠিক কোন অবস্থায় আছো। কিন্তু আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে, আমি সত্যি পারবো না।
সিয়া অর্নীলের দিকে এগিয়ে যায়।
সিয়া;; আমি এমন কেউ না যে যার জন্য আপনি বেঁচে থাকতে পারবেন না। আমার থেকে হাজার গুণে ভালো মেয়ে আপনি পেয়ে যাবেন। আর প্লিজ এই পাগলামি গুলো বাদ দিয়ে বাড়ি যান। এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে ভিজে কোন লাভই নেই। আর আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
এই বলেই সিয়া চলে আসবে কিন্তু অর্নীল তার বাহু চেপে ধরে।
অর্নীল;; লিসেন, তুই আমার তো আমারই। একবার যখন বলেছি আমার তাহলে আমারই হবি। কে কাকে মেরেছে আমি তা জানি না। তবে তুই আমার।
এই বলেই অর্নীল সিয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠে চলে আসে। সিয়ার সামনে দিয়েই অর্নীল সাই করে এসে পরে। অর্নীলের চলে যেতেই যেনো সিয়া অঝোর কান্নায় ভেঙে পরে। মাথা নিচু করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে। বেশ কিছুক্ষন এভাবে থেকে সিয়া নিজেও চলে আসে। আর ওদিকে অর্নীল যেনো এই মুষুলধারে বৃষ্টির মাঝেও হাওয়ার বেগে গাড়ি নিয়ে ছুটে চলেছে। কানের মাঝে শুধু সিয়ার বলে কথা গুলো এসে বারি খাচ্ছে। সিরিয়াসলি! অর্নীলের বাবা সিয়ার বাবা কে মেরেছে? এটাই এখন ভেবে চলেছে অর্নীল৷ আর যদি মেরেই থাকে তাহলে এত্তো বড়ো একটা সত্য অর্নীলের কাছ থেকে লুকালো কেনো। কোন ভাবেই অর্নীল জানতে পারলো না কেনো?? এইসব ভেবে ভেবেই অর্নীল একটা সময় তার বাসায় এসে পরে। সে একদম ভিজে একাকার অবস্থায় আছে। সেভাবেই বাড়ির ভেতরে ঢুকে পরে। নিজের ওপর থেকে জেকেট টা খুলে নিচেই ফেলে দেয়। অর্নীলও হলরুমে এলো আর তখনই সাগর চৌধুরী ওপর থেকে সিড়ি বেয়ে নিচে নামে। অর্নীল কে এমন A-Z ভিজা অবস্থায় দেখে সাগর চৌধুরী কপাল কুচকে তার দিকে এগিয়ে যান।
সাগর;; একি অর্নীল! তোমার এই অবস্থা কেনো? এভাবে ভিজলে কি করে?
অর্নীল;; _____________
সাগর;; অর্নীল কিছু তো বলো, এভাবে ভিজলে কেনো?
অর্নীল;; তুমি রহমান শেখ নামে কাউকে খুন করেছিলে?
অর্নীলের কথায় যেনো সাগর চৌধুরী মাথায় পুরো আকাশ ভেঙে পরে। অর্নীল এবার মাথা তুলে তাকায়।
অর্নীল;; কথা বলো না কেনো বাবা? বলো, তুমি রহমান শেখ নামে কাউকে খুন করেছিলে কি?
সাগর;; সে অনেক গুলো বছর আগের কথা অর্নীল।
অর্নীল;; কিন্তু অতীত যখন বর্তমান কে এসে গ্রাস করে ফেলে তখন তা আর অতীত থাকে না বাবা।
সাগর;; হয়েছে কি তোমার?
অর্নীল;; কিছু না, ধরে নাও খুব খারাপ একটা অতীত ঘুড়ে ফিরে আবার এসে পাড়ি জমিয়েছে। তবে তার মাশুল এখন আর তোমাকে না এই আমকে দিতে হবে।
সাগর;; অর্নীল সব খুলে বলো কি হয়েছে?
অর্নীল;; সব খুলে তো বলবে তুমি আমাকে। যে কেনো মেরেছিলে ওই লোকটাকে, কি দোষে মেরেছো?
সাগর;; অর……..
অর্নীল;; আমি একজন কে ভালোবাসি অনেক বেশি।
সাগর;; কাকে?
অর্নীল;; দোলা আর রহমান শেখের মেয়ে সিয়া কে।
অর্নীলের কথায় সাগর চৌধুরীর চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়। সে কখনো ভাবে নি যে তাকে এমন এক মুহূর্তের মাঝ দিয়ে পার করতে হবে। সাগর চৌধুরী ঠিক থাকতে না পেরে সোফার ওপরে ধপ করে বসে পরে৷




চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here