রাজকীয় সিংহাসনে রাজকীয় কায়দায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে আদ্রিশ। ওর ঠিক বরাবর দু’জন লোক মর্ডান পোশাক পরা একটা মেয়েকে ধরে রেখেছে। মেয়েটার হাত আর মুখ বাঁধা। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।আর ছোটার জন্য ছটফট করছে। গোঙানির মতো শব্দ আসছে মুখ থেকে। আদ্রিশ উঠে দাঁড়িয়ে পরনের কোটটা ঠিক করে পকেটে দুহাত দিয়ে ওর সামনে গিয়ে হিসহিসিয়ে বলল,
“আমার জাহান্নামে তোমাকে স্বাগতম।”
মেয়েটা ছোটার জন্য ছটফট করছে আর কিছু বলার চেষ্টা করছে।
আদ্রিশ ইশারা করল ওর মুখ খুলে দেওয়ার জন্য। মেয়েটির মুখ খুলতেই মেয়েটি জোরে জোরে শ্বাস নিল। এতক্ষণ দম বন্ধ হয়ে আসছিল। চোখটাও কিছুক্ষণ আগে খোলা হয়েছে। মেয়েটি চারপাশ থেকে আঁতকে উঠে। অস্ত্রসস্ত্রসহ দশ বারোজন লোক কালো পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছে।
“আমি কি করেছি? আমার সাথে এমন কেন করছেন? আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন? আমাকে প্লিজ ছেড়ে দিন। আমি বাসায় যাব।”
আদ্রিশ ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
“আমি তিন ধরনের মানুষকে ঘৃণা করি। এক. ধোঁকাবাজ, দুই. লোভী আর তিন. চরিত্রহীন মানুষ। এদের আমি নিজের কায়দায় শাস্তি দিতে পছন্দ করি।”
মেয়েটা আতংকিত গলায় বলল,
“আমি তো আপনাকে ধোঁকা দেইনি। আপনার যদি ডিল না করার হয় না করুন। আমার কোনো সমস্যা নেই। আমাকে যেতে দিন।”
আদ্রিশ হো হো করে হেসে উঠল। ওর হাসিতে চারপাশ ভয়ানক হয়ে উঠল। মেয়েটা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।
আদ্রিশ হিংস্র চোখে ওর দিকে চেয়ে বলল,
“নষ্ট মেয়ে, স্বামীকে ঠকিয়ে স্বামীর টাকায় অন্যজনের সাথে ফূর্তি করে বেড়াস। একটা ডিল সাইনের জন্য আমাকে নিজের শরীর বিলিয়ে দিতে চাস, লজ্জা করে না?”
মেয়েটা আদ্রিশের পায়ে পড়ে যায়।
“আমাকে মাফ করে দিন। আমি আর কোনো দিন আপনার সামনে আসব না। আমাকে যেতে দিন। আমার ভুল হয়ে গেছে।”
আদ্রিশ ইশারা করল সেজানকে। সেজান পকেটে হাত দিয়ে মুচকি হেসে চুটকি বাজাল। বড় দরজাটা খুলে একটা বড় খাঁচা বেড়িয়ে এল। তার মধ্যে একটা ক্ষুধার্ত বাঘ গর্জন তর্জন করছে। মেয়েটি চিৎকার করে পেছনে সরে যায়। ওকে দুজন লোক ধরে সামনে আনে।
আদ্রিশ বাকা হেসে বলল,
“হ্যাপি জার্নি।”
“আমাকে ছেড়ে দিন। প্লিজ, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আর কখনো এমন কাজ করব না।”
“ধনী বয়স্ক পুরুষকে বিয়ে করে, ছলনা করে তার সব আত্মসাৎ করে, তার টাকায় ফুর্তিতে জীবন কাটাচ্ছিস, হাজার হাজার বয়ফ্রেন্ড পুষেছিস। আর শাস্তি পাবি না? যে মেয়ে একটা ডিল সাইনের জন্য নিজেকে বিকিয়ে দিতে পারে তার এটাই শাস্তি। এটাই আদ্রিশের দেওয়া শাস্তি।”
আদ্রিশ আবারও গিয়ে সিংহাসনে বসে পড়ল। দুজন লোক ওকে টেনে হিঁচড়ে খাঁচার কাছে নিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটি চিৎকার করে কাঁদতে আর আকুতি মিনতি করছে। ওকে খাঁচার ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া হলো। ক্ষুধার্ত বাঘটা ওকে মুহুর্তেই ছিড়েখুঁড়ে খেয়ে ফেলল। আদ্রিশ সিংহাসন ছেড়ে উঠে গায়ের কোটটা বাতাসে উড়িয়ে চুলে হাত দিয়ে ব্রাশ করতে করতে হেঁটে বেরিয়ে গেল। ওর পেছনে পেছনে সেজান।
~ফ্ল্যাশব্যাক~
আদ্রিশ গাড়ি থেকে নেমে লিফটে চড়ে অফিসে ঢুকল। ওর পেছনে পেছনে সেজান। ওরা ঢুকতেই ম্যানেজার ছুটে এসে বলল,
“স্যার, প্রিয়া মেম চলে এসেছেন। আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।”
সেজান বলল,
“আপনি মিটিং এরেঞ্জ করুন। আমরা আসছি।”
ম্যানেজার মিটিং এরেঞ্জ করতে চলে গেল। আদ্রিশ নিজের কেবিনে গেল। সেজান ল্যাপটপ খুলে কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করে বলল,
“ভাই, সবকিছু দেখে নিয়েছি। এভ্রিথিং ওকে। আমরা ডিলটা করতে পারি।”
আদ্রিশ চেয়ার ঘুরিয়ে বলল,
“ইউ নো লস যেখানে সেখানে আদ্রিশ এক সেকেন্ড সময় ব্যয় করে না।”
“ইয়েস, ভাই।”
মিটিং রুমে আদ্রিশের ওদের প্রেজেন্টেশন দেখে পছন্দ হয়। ডিলের টার্ম এন্ড কন্ডিশন দেখছিল। তখন প্রিয়া সবার চক্ষুর আড়ালে আদ্রিশের হাতের উপর হাত রেখে বলল,
“ডিলটা সাইন করলে আপনার কোম্পানি লাভবান হবে আর আপনিও।”
তারপর চোখ মেরে একটা কার্ড দেয় হোটেলের। আদ্রিশ মুচকি হেসে সাইন করে দেয়।
তারপর প্রিয়া যাওয়ার পথে ওকে কিডন্যাপ করে নিজের আস্তানায় নিয়ে চলে আসে।
সেহান আদ্রিশের হাতে ডিলের পেপারটা দিল। আদ্রিশ ডিল পেপার ছিড়ে বাতাসে উড়িয়ে দিল। সেজান গাড়ির দরজা খুলে দিল। আদ্রিশ গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ি চলতে চলতে হটাৎ সিগনাল পড়ে যায়। আদ্রিশ গাড়ির গ্লাস খুলে মোবাইলের স্কিনে চোখ রাখে। তখন কানে হটাৎ নুপুরের শব্দ কানে আসে। আদ্রিশ মোবাইল থেকে বাইরে চোখ রাখল। একটা মেয়ে আরেকটা মেয়ের হাত ধরে দৌড়ে ফুচকাওয়ালার সামনে গেল। সাদা কুর্তি পরা মেয়েটার পায়ে ঝুমঝুম করে নুপুর বাজছে। পাশেই ফুচকার স্টল। আদ্রিশ মেয়েটার চেহারা দেখার চেষ্টা করছে। কিন্তু ওর মাথায় ওড়না পরা। তাই মুখটা দেখা যাচ্ছে না। মুখটা দেখার জন্য উসখুস করছে। ওর সাথের মেয়েটা কথায় কথায় ওর ওড়নাটা টান দিতেই মুখের এক পাশ দেখতে পেল। কানের ঝুমকাটা নড়ছে, বাতাসে খোলা চুলগুলো উড়ছে। ঠোঁট নাড়িয়ে নাড়িয়ে কিছু বলছে। আদ্রিশ মুগ্ধ হয়ে চেয়ে আছে। ওরা ফুচকার প্লেট নিয়ে আরেকটু সরে আশায় আদ্রিশ মেয়েটাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। মাথায় আবারও ওড়না দিল।
ওর সাথের মেয়েটা বলছে,
“এইভাবে ইন্টারভিউ দিতে গেলে জব মিলবে না। একটু মর্ডান ড্রেস পরে সেজেগুজে ইন্টারভিউ দিতে যাবি সব হা করে চেয়ে থাকবে। ইন্টারভিউ ছাড়াই জব হয়ে যাবে।”
“শাট আপ! আমি জব করতে যাব মডেলিং না। আমার দক্ষতা দেখে জব দিবে, রুপ দেখে নয়। রুপ দেখে জব দিলে, পরে কাজ না পেলে রুপ ধুয়ে পানি খাবে? সততা দিয়ে কাজ করব, স্যালারি নেব।”
সেজান আদ্রিশকে বলল,
“ভাই, সিগনাল পরে গেছে। গাড়ি স্টার্ট দেব?”
“হ্যাঁ, দেও।”
আদ্রিশ মেয়েটার দিকে একবার চেয়ে মুচকি হেসে সানগ্লাস পরে নিল। তারপর বিড়বিড় করে বলল,
“খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে।”
অফিসে গিয়ে আদ্রিশ নিজের কেবিনে ঢুকে পরে। ম্যানেজার সেজানকে আজকের ইন্টারভিউ সিডিউল সম্পর্কে জানায়।
“আপনি দেখে নিন। ক্যান্ডিডেটদের মধ্যে যোগ্য লোক বাছাই করা চাই। ভাই কিন্তু অযোগ্য লোক একদম পছন্দ করেন না।”
“জি স্যার।”
আদ্রিশ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আজকের মতো কাজ শেষ।”
আদ্রিশের পেছনে পেছনে সেজান যাচ্ছে। লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। লিফট খুলতেই একটা মেয়ে বের হয়ে এলো। হাতে ফাইলপত্র, মুখে মিষ্টি হাসি। আদ্রিশ ওর দিকে নিষ্পলক চেয়ে আছে। এটা তো সেই মেয়ে যাকে রাস্তায় দেখেছিল। মেয়েটা ওদের দিকে চেয়ে মিষ্টি হেসে সালাম দিল।
আদ্রিশ সানগ্লাস খুলে বলল,
“এই মেয়ে দাঁড়াও।”
সেজান মনে করেছে এই মেয়ের মধ্যে সন্দেহজনক কিছু দেখেছে তাই আদ্রিশ এমন করছে।
“ভাই এনি প্রব্লেম?”
“নো, ওয়েট ফর এ মিনিট।”
তারপর মেয়েটির দিকে তাকাল। মেয়েটি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে। আজ প্রথম এখানে এসেছে ইন্টারভিউ দিতে আর এসেই কোনো ঝামেলায় ফেঁসে গেল। যদি সময় মতো ইন্টারভিউ রুমে যেতে না পারে? তাহলে কি হবে?
“তোমার নাম কি?”
“রুশা, রুশা খানম।”
“এখানে কেন এসেছো?”
“ইন্টারভিউ দিতে।”
“ওকে ইউ ক্যান গো নাও।”
মেয়েটিকে বলতে দেরি যেতে দেরি নয়। আদ্রিশের দিকে ভয়ে ভয়ে একবার চেয়ে দৌড়ে চলে গেল। পেছনে ঘুরে তাকায়নি।
সেজান আবারও প্রশ্ন করল,
“ভাই! কোনো সমস্যা? মেয়েটি কে?”
আদ্রিশ বিরবির করে বলল,
“খুব শীঘ্রই সবকিছু হয়ে যাবে।”
তারপর জোরে বলল,
“সেজান, ওর জব কনফার্ম করো।”
“ওকে ভাই।”
সেজান কিছুই বুঝতে পারছে না। শুধু সব শুনে যাচ্ছে। আদ্রিশের সব কথা মেনে চলাই ওর কাজ।
আদ্রিশ আবারও চোখে সানগ্লাস পরে লিফটে ঢুকে গেল। এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ আছে। কেউ একজন ওর কোম্পানির সব ইনফরমেশন পাঁচার করছে। তাকে ধরে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। আদ্রিশ পৈশাচিক হাসি দিল।
চলবে…..
#লাভ_গেম(সাইকো)
#ফাবিহা_নওশীন
পর্ব-১