#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৩+১৪
পরেরদিন সকালে কারো দরজাতে নক করার শব্দে সিয়ার ঘুম ভেঙে যায়। ঢুলুঢুলু পায়ে, চোখ দুটো কচলাতে কচলাতে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। আর দরজা খুলতেই স্পষ্ট চোখে চেয়ে সামনে তাকায়। সায়ন!! সে তার হাতে একটা ট্রে তে এক কাপ গরম কফি, আর জ্যাম-ব্রেড এগুলো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সিয়া;; জ্বি!
সায়ন;; জ্বি আসলে এগুলো আংকেল পাঠিয়ে দিলো আপনার জন্য।
সিয়া;; বিল্লাল চাচ্চু!
সায়ন;; হ্যাঁ।
সিয়া;; তো অন্য কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেই হতো। আপনি কষ্ট করে আবার…..
সায়ন;; না না ঠিক আছে। এখন ধরুন এটা।
সিয়া এগিয়ে গিয়ে সায়নের হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে নেয়। তারপর সায়ন চলে যায়। সিয়া ভেতরে এসে পা দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। আর সিয়ার একটা অভ্যাস আছে খালি পেটেই চা বা কফি খাওয়া। তাই সে কফি টা খেয়ে নিলো। তবে কফি মুখে তুলতেই সেটা আবার এক নিমিষেই ফিক করে বের হয়ে পরে। টিস্যু দিয়ে কোন রকমে মুখ চেপে ধরে। মাত্রাতিরিক্ত তেতো। হয়তো কফি পাউডার বেশি পরে গেছে তাই।
সিয়া;; মানুষ টাকে তো এতো তেতো লাগে না, ভালোই আছে ব্যাবহার। তবে কফি এতো তেতো কেনো?
সিয়া হাত থেকে কাপ টা টেবিলের ওপর রেখে দিয়েই ওয়াসরুমে চলে যায়। বেশ সময় পর টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে রুমে এসেই দেখে অর্নীলের ফোন।
সিয়া;; হ্যালো।
অর্নীল;; গুড মর্নিং সিয়াজান।
সিয়া;; হুম মর্নিং। কেমন আছেন?
অর্নীল;; ভালো আর থাকলাম কই তোমাকে ছাড়া!
সিয়া;; হয়েছে। কি করেন?
অর্নীল;; অফিসে আছি।
সিয়া;; ওহ, তাহলে কাজ করুন আমি রাখি।
অর্নীল;; আমি রাখতে বলছি, এতো বেশি বুঝো কেন!
সিয়া;; না মানে আপনি তো কাজ করছেন।
অর্নীল;; আর কাজ। নানু আর আন্টি এসেছে?
সিয়া;; না এখনো আসে নি।
আদিবা;; সিয়া, সিয়া।
সিয়া;; অর্নীল আপু এসেছে আমি পরে কথা বলি আপনার সাথে ওকে!
অর্নীল;; আচ্ছা, বায়।
দিয়া গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
আদিবা;; উঠেছিস!
সিয়া;; হ্যাঁ
আদিবা;; নিচে চল ব্রেকফাস্ট করতে।
সিয়া;; আরে না ওইতো সায়ন ব্রেড-জ্যাম আর কফি দিয়ে গিয়েছিল। সেগুলোই খেয়েছি, ব্রেকফাস্টে এতো ভারি খাবার খাই না।
আদিবা;; আচ্ছা চল।
সিয়া আদিবার সাথে নিচে চলে যায়। জাবেদ হঠাৎ আদিবা কে ডাক দেয় তাই চলে আয়। আর সিয়া বাইরে উঁকি দিয়ে দেখে সবাই একসাথে বসে আছে। তাই সিয়া ভাবলো কেননা সবার জন্য চা বানানো যাক। সিয়া রান্নাঘরে চলে গেলো। গিয়েই চা বানাতে লাগলো। সিয়া চা বানাচ্ছিলো তখনই হাতে একটা আপেল ঘুড়াতে ঘুড়াতে সায়ন আসে রান্নাঘরে। চাকু নিয়ে আপেল কাটতে কাটতে বলে ওঠে…..
সায়ন;; ভাবি, কি করছো?
সিয়ার এবার যেনো টনক নড়ে। সে চোখ তুলে ওপরে তাকায়।
সায়ন;; ও ভাবি কথা বলো না কেনো। আচ্ছা শুনো আমার চায়ে চিনি একদম কম দিবে। মানে এক চামচেরও হাফ বুঝলে।
সিয়া;; হু
সায়ন;; কি হু হু করো। কি হয়েছে?
সিয়া এবার তার হাতে চায়ের ট্রে টা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। সায়ন দেখে ভাবি না ভাবির বোন সিয়া।
সায়ন;; আব…স সরি আসলে আমি….
সিয়া;; ভাবি না আমি।
সায়ন;; আপনাকে পেছন থেকে অবিকল ভাবির মতোই দেখতে লাগে। আর আমি তেমন একটা খেয়াল করি নি। আসলে ভাবি রোজ চা বানায় তো তাই ভাবলাম।
সিয়া এগিয়ে গিয়ে সায়নের হাতে একটা চায়ের কাপ ধরিয়ে দেয়।
সিয়া;; আপনার হাফ চিনি ওয়ালা চা।
সায়ন;; ধন্যবাদ।
সিয়া চোখ নামিয়ে ট্রে টা নিয়ে গটগট করে রান্নাঘর থেকে এসে পরে বাগানের পাশে চলে যায়।
সিয়া;; এই যে তোমাদের সবার গরম-গরম চা, নাও নাও।
বিল্লাল;; কিরে তুই রান্না ঘরে গিয়েছিস কেনো?
সিয়া;; কেনো আদিবা আপু তো রোজ যায়। আজ না হয় আমিই গেলাম।
বিল্লাল;; আচ্ছা বুঝলাম।
সিয়া;; হুম।
বিল্লাল;; আচ্ছা শোন, আজ বিকেলের দিকে কিন্তু
ভাবি আর খালামনি আসছে।
সিয়া;; কথা হয়েছে তোমার?
বিল্লাল;; হ্যাঁ।
এভাবেই সময় টুকু পার হয়ে যায়। এক সময় সিয়া, আদিবা, জাবেদ আর রুমানা মিলে বাইরে বের হয়ে পরে৷ জাবেদ যদিও যেতে চায় নি কিন্তু আদিবা টেনে ধরে নিয়ে গেছে। তারা একের পর এক শপিং মলে ঘুড়েই যাচ্ছে ঘুড়েই যাচ্ছে আর যা পছন্দ হচ্ছে তা একটা একটা করে তুলে নিচ্ছে। আর সব ব্যাগ গুলো জাবেদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। জাবেদের তো নাজেহাল অবস্থা। এভাবে ঘুড়তে ঘুড়তেই হঠাৎ সিয়ার চোখ আটকে পরে মলের ভেতরে থাকা একটা পিংকিস কালারের বড়ো মাপের টেডি বিয়ারের ওপরে। সিয়া তা দেখে লোভ সামলাতে না পেরে সেখানে চলে যায়। কি সুন্দর দেখতে! সিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদিবার ডাক পরে। আদিবা এসে দেখে সিয়া একটা মলের ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে। তাই আদিবা গিয়ে দ্রুত সিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে পরে৷ সেখান থেকে চলে যাওয়ার আগে সিয়া আরেকবার তার মাথা ঘুড়িয়ে টেডি বিয়ার টার দিকে তাকিয়ে যায়। বাইরে এসে পরে। অনেক গুলো কেনাকাটা করেছে। তবে বাইরে এসেই সিয়া দেখে সায়ন দাঁড়িয়ে আছে।
সিয়া;; আদি…
আদিবা;; হ্যাঁ।
সিয়া;; ও এখানে কেনো?
আদিবা;; এসেছে, আমাদের সাথে না তবে কিছুক্ষণ আগেই এসেছে।
সিয়া;; ওহহ আচ্ছা।
আদিবা;; চল গাড়িতে ওঠ৷
তারা সবাই গাড়িতে ওঠে চলে যায়। বাড়ি গিয়েই দেখে সিয়ার মা আর নানু এসে পরেছে।
সিয়া;; মা এসেছো? আর নানু তোমার শরীর কেমন এখন?
শিউলি;; হ্যাঁ আছি ভালোই।
দোলা;; কোথাও গিয়েছিলি তোরা?
আদিবা;; হ্যাঁ জেঠিমা আসলে বাইরে গিয়েছিলাম একটু।
জাবেদ;; আর আমার অবস্থা খারাপ।
সবাই হেসে দেয়। তারপর যার যার রুমে চলে যায়৷
রাতের বেলা সিয়া তার রুমে বসে বসে ফোন ঘাটছিলো তখনই হাতে ছোট একটা বাটি নিয়ে আদিবা আসে৷
আদিবা;; এই ওঠ।
সিয়া;; হুম হুম, কি হয়েছে?
আদিবা;; আগে ওঠ তুই?
সিয়া;; উঠলাম, এখন কি!
আদিবা;; এদিকে আয়।
সিয়া;; আসলাম।
আদিবা;; মাথায় তেল দিয়ে দেই। ঘুম ভালো হবে৷
সিয়া;; এই না না না না। একদম না। বইন তুই না ভালা। প্লিজ তেল দিয়ে দিস না৷ একদম ফকিন্নির মতো লাগে রে৷
আদিবা;; কেনো সমস্যা কি? বাসায় ই তো আছিস। আর এই রাতের বেলা তোকে দেখতে কে আসছে! চল উঠ তেল দিয়ে দেই৷
সিয়া;; তুই এভাবে আদা লবণ খাইয়া আমার পেছনে পরছোস কেন? আমি তেল দিমু না। ভালো লাগে না। চিপ-চিপ করে ইয়াক।
আদিবা;; চুপ কর।
আদিবা সিয়া কে টেনে নিয়ে মাথায় তেল দিয়ে দিলো। তবে তেল দেওয়া শেষ হতে না হতেই সিয়ার ফোনে কল আসে। সিয়া ফোন হাতে নিয়ে দেখে অর্নীলের ফোন। এটা দেখেই তো চোখ ছানাবাড়া।
সিয়া;; হ্যালো
অর্নীল;; এই বাইরে আসো।
সিয়া;; হ্য?? কিন্তু কেনো আর আপনি কি বাসার বাইরে নাকি!!
অর্নীল;; হ্যাঁ বাইরে।
সিয়া;; খাইছে রে।
অর্নীল;; ২ মিনিটে নিচে নামবা।
সিয়া আয়নার সামনে গিয়ে একবার নিজেকে দেখে আরেক বার বাইরে। মাথায় তেল দিতে চুবু চুবু অবস্থা। তার ওপর মাঝখান দিয়ে সেথি করে দুই পাশে বেনী করা। ইশ পুরাই ফকিন্নি লুক। সিয়া মেকি একটা হাসি দিয়ে আদিবার দিকে তাকায়। আদিবা কিছু বুঝতে না পেরে ভ্রু নাচায়।
সিয়া;; তেল কম পরছে মাথায় আরো একটু দে।
আদিবা;; হয়েছে কি?
সিয়া;; হয়েছে কি মানে অর্নীল নিচে এসে দাঁড়িয়ে আছে৷ আর আমাকে যেতে বলছে এখন আমি এই ভাবে নিচে কীভাবে যাবো?!
আদিবা;; আরে আজব, তাই মাথায় তেল দিবি না। এই যা তো যা৷ কিছুই হবে না। যা তুই৷
আদিবা এক প্রকার ঠেলেই সিয়া কে নিচে পাঠিয়ে দেয়। আর সিয়াও মুখ টাকে একদম বাংলার পাঁচ বানিয়ে নিচে যায়৷ তবে কিছুটা লুকিয়েই। যেনো কেউ না দেখে। সিয়া বাইরে গিয়েই দেখে অর্নীল মাত্র গাড়ি থেকে নামছে। সিয়া অর্নীলের সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। অর্নীল সিয়াকে দেখে বুঝলো যে সে এমন কেনো করছে।
সিয়া;; কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন, আমি চলে যাবো।
অর্নীল;; আরে তেল দিয়েছো তাই কি হয়েছে৷ মানুষ কি দেয় না। আর তুমি কি জানো তোমাকে কি পরিমাণ চুম্পু চুম্পু দেখা যাচ্ছে।
সিয়া;; কি কি?
অর্নীল;; চুম্পু চুম্পু। মানে কিউট কিউট।
সিয়া;; হয়েছে জানি ফকিন্নি আল্ট্রা প্রো মেক্স লাগতাছে।
অর্নীল;; আচ্ছা ওয়েট একটা জিনিস আছে তোমার জন্য।
সিয়া;; কি?
অর্নীল;; ওয়েট জান।
এই বলেই অর্নীল গিয়ে তার গাড়ির পেছনের সীট থেকে একটা বড়ো সড়ো বক্স নিয়ে এলো।
অর্নীল;; নাও৷
সিয়া;; কি এটা?
অর্নীল;; আরে ধরো তো। আর হ্যাঁ রুমে গিয়ে খুলো দেখবা।
সিয়া;; আচ্ছা।
অর্নীল;; এবার যাও। এটা দিতেই এসেছিলাম আর দিলাম।
সিয়া;; আচ্ছা।
অর্নীল;; আমি যাই!
সিয়া;; আচ্ছা শুনুন।
অর্নীল;; বলো।
সিয়া;; ভালোবাসি।
অর্নীল সিয়ার গালে টুক করে একটা চুমু একে দেয়। তারপর চলে যায়। আর সিয়া কেউ দেখার আগেই রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে দরজা জানালা সব অফ করে আস্তে আস্তে কাচি দিয়ে র্যাপার টা খুলতে লাগে৷ প্রায় সিয়ার সমান বক্স টা। সে জানে না যে এতে কি রয়েছে৷ তাই এক্সাইটেড। আস্তে আস্তে বক্স টা খুলে ভেতরে দেখতেই সিয়া অবাক। আজ শপিং মলে গিয়ে যেই টেডি বিয়ার টা সিয়া দেখেছিলো আর পছন্দ হয়েছিলো কিন্তু কেনার সুযোগ পায় নি জলদি জলদি এসে পরেছে। সেই টেডি বিয়ার টা। সিয়ার সে কি খুশি। সে টেডি টাকে জড়িয়ে ধরে বেশ শক্ত করে৷ তবে আবার সিয়ার মনে পরে যে অর্নীল কি করে জানলো। সিয়া অর্নীল কে ফোন দেয়।
অর্নীল;; হ্যাঁ সিয়াজান।
সিয়া;; আপনি কি করে জানলেন যে এই টেডি টা আমার পছন্দ হয়েছিলো?
অর্নীল;; দেখেছি আজকে আমি তোমাকে। আদিবার সাথে ছিলে তুমি।
সিয়া;; কি? কখন দেখেছেন? আমাকে ডাক দেন নি কেনো?
অর্নীল;; না এমনি।
সিয়া;; থ্যাংক ইউ।
অর্নীল;; তা না হয় মানলান। কিন্তু দেখো আবার আমার থেকে বেশি ভালো তুমি ওই টেডি কে বেসো না।
সিয়া এভাবে আরো বেশ সময় কথা বলে ফোন কেটে দেয়।
।
।
।
পরেরদিন~~
দোলা;; বিল্লাল তোমার নাস্তা দিবো?
বিল্লাল;; না ভাবি, একজন আসবে তো তাই উনার সাথে দেখা করতে হবে। পরে যাই একটা দরকারি মিটিং আছে৷ আসলে ওইতো আমার কাজের জন্যই আর কি৷
দোলা;; কে আসবে??
বিল্লাল;; আবরার চৌধুরী অর্নীলের বাবা।
দোলা;; ওহ অর্নীল আচ্ছে, ওর বাবা কে?
বিল্লাল;; আরে ওইতো সাগর চৌধুরী।
ব্যাস এইতো দোলার মাথা টা ঘুরে গেলো। সে বেশ অবাক।
দোলা;; কি, কি বলো এইসব। অর্নীলের বাবা সাগর চৌধুরী?
বিল্লাল;; হ্যাঁ। কেনো জানো না!
দোলা সেখান থেকে চলে আসে। মাথা যেনো আর কাজ করছে না। দোলা বাইরে আসতেই দেখে সাগর চৌধুরী গাড়ি থেকে নামছে। এখন সবকিছু বাদ দিয়ে দোলার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুড়ছে তা হচ্ছে অর্নীলের বাবা সাগর চৌধুরী।
।
।
।
।
চলবে~~
#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৪ {বোনাস}
দোলা একমনে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে গেছে সে। বাইরে বেশ কোলাহলের আওয়াজ শুনে বিল্লাল বাইরে বের হয়ে পরে। সাগর চৌধুরী কে এগিয়ে নিয়ে আসছে। আর দোলা তাদের দেখছে। হুট করেই দোলার চোখ থেকে টুপ করে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে। বিল্লাল জানে না যে কি করছে, সে কার সাথে কাজ করছে। আস্ত একটা কালসাপ সাগর চৌধুরী। সাগর চৌধুরী কে ভেতরে আসতে দেখে দোলা সেখান থেকে আড়াল হয়ে যায়। বিল্লাল তার সাথে সাগর চৌধুরী ভেতরে এসে বসে। আর দোলা বেশ ঘাবড়ে গিয়ে দ্রুত বাড়ির একদম ভেতরের দিকে চলে যায়। সে যাচ্ছে আর খানিক বাদে বাদে ভয়ার্ত মুখে পেছন ফিরে তাকাচ্ছে। এভাবেই যেতে যেতে হঠাৎ সিয়ার সাথে দোলার ধাক্কা লেগে যায়।
সিয়া;; আরে মা! সাবধানে কি করছো! লেগে যেতো তো। আর মা, কি হয়েছে? এভাবে, এভাবে ঘেমে গেছো কেনো? ঠিক আছো তুমি? (চিন্তিত হয়ে)
দোলা;; সিয়া মা শোন না চল এখান থেকে আমরা চলে যাই!
সিয়া;; মা কি হয়েছে? বলো আমাকে। না কিছু তো একটা হয়েছে তাই না। সেইদিন আপুর রেসিপশনেও তুমি এমন করেছো আর আজও। মা কি হয়েছে?
দোলা;; অর্নীলের বাবা সাগর চৌধুরী?
সিয়া;; হ্যাঁ।
দোলা;; তুই আমাকে আগে কেনো বলিস নি?
সিয়া;; ওমা কেনো তুমি জানো না? আমি ভেবেছি তুমি অর্নীলের বাবা কে চেনো।
দোলা;; হ্যাঁ চিনি৷ আসলেই চিনি। হারে হারে চিনা আছে আমার৷
সিয়া;; মা…
দোলা;; চল এখান থেকে।
সিয়া;; আরে..
দোলা সিয়া কে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। রুমে এসে ধপ করে বসিয়ে দেয়।
দোলা;; শোন আগামী ২ ঘন্টা যাবত তুই রুম থেকে বের হবি না। যা কিছু লাগে আমাকে বলবি দিয়ে যাবো কিন্তু তুই বের হবি না ভুল করেও না বুঝেছিস!
সিয়া;; আজব।
সিয়া আর কিছুই বলে না দুই হাত রাগে ভাজ করে ঠোঁট গুলো উল্টিয়ে দিয়ে বসে থাকে। আর ওদিকে দোলা সিড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসে। তখনই আদিবার সাথে দেখা।
আদিবা;; আরে জেঠিমা যে, তুমি এখানে আর আমি তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।
দোলা;; কেনো কি হয়েছে?
আদিবা;; বাবা ডাকছে তোমাকে।
দোলা;; আব.. আদি মা বলছি কি যে আমি না যেতে পারবো না বুঝলি। আমি আমার রুমে যাচ্ছি। আসলে মাথা টা খুব ধরেছে। এখন না আমি যাই।
আদিবা;; ওহহ আচ্ছা ঠিকআছে যাও৷ আর কিছু দরকার পরলে আমায় বলো।
দোলা;; আচ্ছা।
এই বলেই আদিবা চলে যায় আর দোলা দ্রুত নিজের রুমে এসে পরে। এভাবেই সেইদিনের অর্ধেক বেলা কেটে যায়। দোলা প্রয়োজন ছাড়া আর রুম থেকেই বেরই হয় নি। রাত হয়ে গিয়েছে। দোলা নিজের রুমে রকিং চেয়ারে বসে দুলছে আর চিন্তায় মগ্ন। কোন কিছুতেই মন বসাতে পারছে না। আগের স্মৃতি গুলো যেনো মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। দোলা নিজের চোখ থেকে চশমা টা খুলে চোখ বন্ধ করে ফেলে। ডুব দেয় আগের ভাবনায় যখন সিয়ার বাবা রহমান শেখ বেঁচে ছিলেন।
।
।
“রহমান শেখ আর সাগর চৌধুরী এক কালে বিজন্যাস পার্টনার ছিলেন এমনকি ভালো বন্ধুও ছিলো। তবে দুইজনে দুই রকমের কাজ করতো। যেমন; রহমান শেখ সবসময় ভালোর পথে চলতো, এমনকি গরিব বা দুঃখী যারাই ছিলো সবাইকে এক চোখে দেখতো। অতি সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। এতো মার প্যাচ বুঝতেন না। তবে মানুষের মাঝে রহমান শেখের নাম নিতেই যেনো এক আলাদা সম্মান কাজ করতো। আর অন্যদিকে সাগর চৌধুরী এমন কোন দিন নেই যে জেল খাটে নি। মারামারি, অন্যের জিনিস আত্নসাত করা আরো নানা মন্দ কাজের সাথে লিপ্ত ছিলেন। এগুলো তে অর্নীলের মা যেনো একদম অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছিলেন। এগুলোর পাশাপাশি আরো একটা জিনিস সাগর চৌধুরীর মাঝে কাজ করতো তা হচ্ছে ‘হিংসা’। যেদিকে সাগর চৌধুরীর বাজে রিপোর্টের অভাব ছিলো না তার উল্টো দিকে রহমান শেখের ভালো কাজের কাবিননামারও অভাব ছিলো না। আস্তে আস্তে যারা সাগর চৌধুরীর পক্ষে ছিলো তারাও যেনো রহমান শেখের পাশে এসে দাড়াতে শুরু করে। একদিন রহমান শেখের বাসায় সাগর চৌধুরীকে আমন্ত্রণ করা হয়। রহমান শেখ আমন্ত্রণ তো করেছিলেন তাকে খুশি মনেই কিন্তু কে জানতো যে এই দিন টাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। হলরুমেই রহমান শেখ এবং সাগর চৌধুরী বসে ছিলেন। তবে কথার মাঝেই এক প্রসংগে তাদের বিজন্যাস নিয়ে কথা ওঠে৷ এতে দুজনেই দুই রকম মতামিত রাখে। যার দরুন বেশ রেশারেশি বেজে যায়। আর এক পর্যায়ে সাগর চৌধুরী তার রাগ দমিয়ে রাখতে না পেরে ফলের ঝুড়ি থেকে চাকু হাতে তুলে নিয়ে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে রহমান শেখের গলাতে আচড় কেটে দেয়। শ্বাসনালি বরাবর কেটে যায়। আর তার গায়ের ভেতরে যে ঠিক কতবার চাকু দ্বারা আঘাত করেছে তা গুনতির বাইরে। আর এই সবকিছুই দোলা নিজ চোখে দেখেছে। সে মূলত যাচ্ছিলো সিয়ার বাবার সাথে কথা বলতে তবে তার আগেই তার চোখে এই দৃশ্য এসে পরে। সেই সময়ে কোন কিছুই করার ছিলো না তার। কারণ সেই সময় কালে দোলাও সাগর চৌধুরীর কার্যাবলির সম্পর্কে কিছুটা ধারনা ছিলো। আর যখন একের পর এক ঘা রহমান শেখের গায়ে লাগানো হচ্ছিলো তখন তার কাছে নিজের মুখে শাড়ির আঁচল গুজে কাদা ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা ছিলো না। কেননা তখন তার সাথে ২ বছরের সিয়াও ছিলো। যদি দোলা তখন কিছু বলতো বা প্রতিবাদ করতো তাহলে হয়তো তারা মা-মেয়েও আজ বেঁচে থাকতো না। দোলা কোন কথা না বলেই সেখান থেকে সিয়া কে নিয়ে সোজা বের হয়ে এসে পরে। সাগর চৌধুরী দোলা আর সিয়া কেও সারা বাড়িতে খুঁজেছে মেরে ফেলার জন্য কিন্তু সেইদিন সেই অবস্থা তেই দোলা ছুটে তার মায়ের কাছে গাড়ি দিয়ে এসে পরে। দোলার মা সেইদিন দোলা কে এতো ভয়ার্ত মুখে দেখে চিন্তিত ছিলেন কিন্তু দোলা কিছুই বলে নি। এড়িয়ে গেছে। আর ওদিকে সাগর চৌধুরী ফ্লোরে চাকু টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে এসে পরে। তারপর বাড়ির সার্ভেন্ট রা রহমান শেখ কে এমন অবস্থায় পরে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। তারপর দোলার কাছে খবর যায় কারণ দোলা তখনও নিজের মায়ের বাড়িতেই। শিউলি বেগম সবই বুঝে যায়। দোলা কে জিজ্ঞেস করতেই সে আর কোনকিছুই এবার লুকিয়ে রাখতে পারে না। হুহু করে অঝোড়ে কেদে এক এক করে সব বলে দেয়। পুলিশে স্ট্রশনে ছোট্ট একটা বাচ্চা কে নিয়ে ঘুড়পাক খেতে খেতে দোলার যেনো জীবন যায় যায় অবস্থা। আর সাগর চৌধুরী আসলেই বেশ প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ছিলেন আগে থেকেই। তার বিরুদ্ধে মামলা করা বা তাকে জেলে ভরা চারটে খানিক কথা ছিলো না। আর সাগর চৌধুরী কে জেলে ভরলে যে দোলা তার মেয়ে বা তার মা কে নিয়ে শান্তিতে বেঁচে থাকতে পারতো সেই বিষয়েরও কোন গ্যারান্টি ছিলো না। আর আসলে কি টাকার ওপর নাম বাপ। এই টাকা দিয়ে মানুষের বিবেক-আক্কেল, ইমান-কামান সব কিনে নেওয়া যায়। আর কিনে নেওয়া হয়েছিলোও। পুলিশ অফিসার দের। তারা সব কিছু জানা সত্ত্বেও সাগর চৌধুরীকে এরেস্ট করে নি। কেননা তাদের মুখ টাকা দিয়ে বন্ধ করা ছিলো। কি আর করার এভাবেই দিনের পর দিন মাসের পর মাস কেটে যায়। দোলা এক প্রকার ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলো। কিন্তু তার একটা ফুটফুটে মেয়ে আছে এভাবে ভেঙে পরলে মেয়েটার জীবনে প্রভাব পরবে। তাই দোলা উঠে দাঁড়ায়। যা হওয়ার হয়েছে। ইনসাফ না পেলো তবে একটা ভালো আর সাধারণ জীবন নিজের মতো করে তো বাঁচতে পারবে। এই ভেবেই দোলা তাদের আগের বাসা অর্থাৎ যেখানে রহমান শেখ, দোলা আর সিয়া থাকতো দোলা ওই বাড়ি টা একেবারেই পানির দামে বেঁচে দেয়। তারপর থেকেই দোলার নিজের বাপের বাড়ি তার মাকে নিয়ে থাকা। সেখানে প্রায় ৭ বছরের মতো থেকেছে দোলা রা। তখন সিয়ার ৯ বছর বয়স। সে স্কুলে পরে। কিন্তু সাগর চৌধুরীর লোকেরা আস্তে আস্তে ওই এলাকা তেও এসে নিজেদের পাড়ি জমায়। বেশ বছর কেটে গিয়েছিলো কিন্তু কে জানে যদি আবার সাগর চৌধুরী কিছু করে বসে। দোলার না হলেও তার মেয়ের! এই ভয়েই দোলা নিজের বাপের বাড়িও ছেড়ে দেয়। তারপর অন্য একটা শহরে অন্য একটা ফ্ল্যাটে এসে পরে। এখান থেকেই থাকা। এখানেই সিয়ার বেড়ে ওঠা৷ আস্তে আস্তে স্কুল পেড়িয়ে কলেজ। তবে দোলা কখনোই সিয়াকে এই সবের ব্যাপারে ঘুনাক্ষরেও টের পেতে দেয় নি। সিয়া যখন নিজের বাবার কথা জিজ্ঞেস করতো তখন দোলা বলতো আল্লাহ”র কাছে। সিয়া বড়ো হলে বলেছে হার্ট এটাক করে মারা গিয়েছে। সিয়া তাই মনে করেছে। না দোলা আর না ই শিউলি সিয়াকে কেউ কিছুই বলে নি। এইসবকিছু হতে সিয়া অজানা। সিয়ার সাথে সাথে বিল্লাল নিজেও। বিল্লাল জানে যে তার ভাই রহমান খুন হয়েছে তবে কে করেছে বা কার হাতে হয়েছে তা সে জানে না। আর না ই দোলা বলেছে তাকে। সিচুয়েশন টাই এমন ছিলো। তবে কে জানতো সময়ের চাকা ঘুড়িয়ে একটা সময় এমন দিনও দেখতে হবে দোলাকে। বিল্লাল এখন কিনা নিজের ভাইয়ের খুনির সাথে কাজ করছে। এই খবর টা শুনলে হয়তো বিল্লাল নিজেই ৪৪০° এর ঝটকা খাবে কিন্তু দোলা এমন চাইছে না। সে চায় না যে সে নিজে যা যা সহ্য করেছে তা আবার আরেক দফা হোক। দোলা শুধু নিজের মেয়েকে নিয়ে একটা ভালো সুস্থ জীবন লিড করতে চায় ব্যাস।”
এগুলো কথাই যেনো দোলার মাথায় এসে বাড়ি খাচ্ছে। ফট করে চোখ মেলে তাকায় সে৷ চোখ বন্ধই করতে পারছে না। বন্ধ করতেই আগের সব কালো স্মৃতি এসে ভেসে ওঠে। দোলা জীবনেও নিজে সাগর চৌধুরীর সামনে পরতে চায় না। কেননা আগের সেই ভয় টা দোলা এখনো পায়। তবে দোলার এখন চিন্তা শুধু আর শুধুই নিজের মেয়ে সিয়া কে নিয়ে। দোলা বেশ ভালো করেই চিনে নিজের মেয়ে কে। সিয়া বেশি ইমোশনাল না তবে যার ওপর সিয়ার একবার মায়া পরে যায় বা যাকে সে ভালোবেসে-পছন্দ করে ফেলে তা সিয়া জীবনেও ভুলে না। ইন ফ্যাক্ট সিয়া অসুস্থ হয়ে যায়। এটা ছোট থেকেই। কোন একটা বিষয়ে সিয়া কে বেশি জোর করলে বা তাকে জোর করেই ওই জিনিস টা থেকে দুরে টেনে আনলে সিয়া অসুস্থ হয়ে পরে। এখন দোলা কি করবে? দোলা সিয়ার মধ্যে অর্নীলের জন্য প্রচন্ড রকমের ভালোবাসা দেখেছে। কিন্তু অর্নীলের বাবা তো সাগর চৌধুরী। দোলা কি করে নিজের স্বামীর খুনির একমাত্র ছেলের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে পারে। এটা হয়তো তাহলে রহমান শেখের ক্ষেত্রে ভারি অন্যায় হয়ে যাবে। তাহলে সিয়া? সিয়ার কি! ওর ভালোবাসা আর অর্নীল তাদের কি হবে? দোলা যেনো একটা সমুদ্রের মাঝে এসে পরেছে। যেখানে কোন কূল-কিণারা নেই। না যেতে পারছে ওইদিকে আর না যেতে পারছে এইদিকে। দোলা এই সব কিছু ভাবছিলো তারপরেই তার মনে পরে যে সে সিয়াকে রুমে রেখে এসেছিলো সেই সকালে আর এখন সন্ধ্যে হয়ে এলো বলে। এই কথা মনে পরতেই দোলা উঠে গিয়ে রুমের বাইরে পা রাখে। সিয়ার রুমে গিয়ে আলতো করে দরজা টা খুলে দেখে বিছানাতে বালিশের ওপর সিয়ার পা রাখা আর তার উল্টো দিকে তার মাথা। দোলা রুমের ভেতরে গিয়ে সিয়ার মাথায় হাত রাখে। আর সিয়া সরে আসে কিছুটা। দোলা বুঝলো যে ভারি অভিমান জমা হয়েছে মেয়ের। সিয়া যেনো না বুঝে যে তার মা কান্না করেছে নয়তো এখনই হাইপার হয়ে যাবে। তাই চোখের কার্নিশ ভালোভাবে মুছে গলা পরিষ্কার করে বলে ওঠে……
দোলা;; সিয়া!
সিয়া;; ___________
দোলা;; সিয়া মা রে, কথা বলবি না?
সিয়া;; না।
দোলা;; সরি।
সিয়া;; ___________
দোলা;; যাচ্ছি না তো এখান থেকে। আরে তখন তো শুধুই এমনি বলেছিলাম। যাচ্ছি না, মজা করেছি। তোকে জোর করবো না। তোর যতদিন খুশি এখানে থাক কোন মানা নেই। কেউ কিছুই বলবে না। যতদিন ইচ্ছে।
সিয়া এবার এক ঝটকায় উঠে বসে পরে।
সিয়া;; সত্যি?
দোলা;; হ্যাঁ সত্যি।
সিয়া;; আলাভুউউউউউ।
সিয়া তার মা কে জড়িয়ে ধরে।
দোলা;; আচ্ছা হয়েছে এবার নিচে যা। কখন থেকে রুমে বসে আছিস। যা নিচে যা আর গিয়ে দৌড়াদৌড়ি কর।
সিয়া;; আচ্ছা।
সিয়া নিজের ওরনা টা নিয়ে চলে যেতে ধরবে রুম থেকে তখনই আবার দোলার ডাক।
দোলা;; সিয়া!
সিয়া;; হ্যাঁ
দোলা;; আমি যদি তোর কাছে কিছু চাই তাহলে কি আমায় দিবি।
সিয়া;; আরে মাম্মি জান হাজির হ্যা। একবার বলো তো।
দোলা;; আজ না কাল।
সিয়া;; আচ্ছা। আমি এখন যাই।
সিয়া টাসটাস নিজের স্যান্ডেলের আওয়াজ তুলে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে পরে। আর দোলা তাকিয়ে দেখে রুমের সব অগোছালো তাই সে সব ঠিকঠাক করে দিতে লাগে।
।
।
।
এভাবেই দেখতে দেখতে মাঝখানে কেটে যায় আরো ৪-৫ দিন। তবে দোলা এখনো সিয়াকে কিছুই বলে নি। সিয়া যদিও বেশ কয়েক বার জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু দোলা বলে নি কিছুই। সিয়া রা এসে পরেছে তার চাচ্চুর বাসা থেকে। এখন তারা নিজেদের বাড়িতেই। সিয়া কলেজে যায় রোজ। দুইদিন বাদে তার এক্সাম। তারপরেই ইন্টার ২য় বর্ষে। এরই মাঝে অর্নীলের সাথে খুনশুটি সিয়ার লেগেই থাকে। সিয়াকে অর্নীলের হুট করেই কলেজ থেকে নিয়ে এসে পরা। কেউ কিছু বলে না। কি বলবে, কারো সেই সাহস নেই। আর অবশ্যই সিয়া আর অর্নীলের সেটা পারসোনাল ম্যাটার। সিয়ার বাসার বাইরে অর্নীলের যখন ইচ্ছে তখন এসে পরা। সিয়া মানা করলেও শুনে না সে। দোলা শুধু এইসব কিছু দেখে যায়। বলে না কিছুই। সে প্রিটেন্ড করে এমন যে কিছু হয়ই নি। দোলা সিয়ার মাঝে পাগলামি দেখে। আর অর্নীল যে সিয়াকে কম ভালোবাসে তা কিন্তু না। ইন ফ্যাক্ট সিয়ার থেকে বেশি পাগল অর্নীল নিজে। সিয়া কে সবকিছু কি করে ভেঙে বলে বুঝাবে দোলা তাই সে ভেবে উঠতে পারে না। সিয়া এখন যথেষ্ট বড়ো হয়েছে। তার সবকিছু জানার অধিকার রয়েছে তার। কিন্তু সিয়াকে বলার পরে সবকিছু আদৌ ঠিক থাকবে কিনা বা সিয়া কেমন রিয়েক্ট করবে তাই ভেবে পায় না দোলা। আর অর্নীল,, অর্নীলও জানে না যে তার বাবা সিয়ার বাবা কে খুন করেছে। তা না হলে অর্নীলের মনে নিজের বাবার ব্যাপারে যতটুকু ঘৃণা আছে তার থেকে আরো হাজার গুণে বেড়ে যাবে। অর্নীল নিজের মায়ের মৃত্যু কারণ হিসেবে তার বাবা কে জানে এখন যদি সিয়ার বাবাকে নিজের হাতে মারার খবর জানতে পারে না জানি তখন কি হবে। সময় আর ভাগ্য কত্তো অদ্ভুত জিনিস তাই না! কখন কাকে কার সাথে মিলিয়ে দেয় বা কাকে সামনে নিয়ে আসে তা বলা বড়ো দায়। তবে যাই হোক যত দ্রুত সম্ভব সিয়াকে বলতে হবে সব কিছুর ব্যাপারে৷
এখন রাত, সিয়া তার রুমেই আছে হয়তো বসে বসে গান শুনছে বা লিখালিখি করছে। দোলা সিয়ার রুমে চলে যায়।
।
।
।
।
চলবে~~