#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন
৩১+৩২
আদ্রিশ মিনি টেবিলের উপরে কাচের ছোট গ্লাসে বরফের কুচি রাখছে। সেজান ওর বরাবর একটা চেয়ারে মাথা নুইয়ে বসে আছে। অস্বস্তিতে মাথা তুলতে পারছে না। এটা প্রথম বার নয় ও আদ্রিশের সাথে ড্রিংক করতে বসেছে৷ আদ্রিশ গ্লাসে মদ ঢেলে সেজানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“কতদিন ধরে এসব চলছে?”
সেজান অস্বস্তিতে আরো নুইয়ে পড়ছে। কিছুই বলতে পারছে না। আমতা আমতা করে গলা ঝেরে বলল,
“ভাই, আপনাকে মিথ্যা বলব না। আপনি যেমন ভাবছেন তেমন কিছু নয়। আমাদের মধ্যে একটা ভালোলাগা ছিল সেটা দুজনেই অনুভব করতাম কিন্তু কেউ কাউকে বলিনি। আমাদের এই অনুভূতি কোন পরিনতি পায়নি। কিন্তু আমরা দুজনেই জানতাম আমরা একে অপরকে পছন্দ করি। জাস্ট এটুকুই।”
আদ্রিশ কপাল কুঁচকে কিছু ভাবল তারপর গ্লাসে চুমুক দিল। তখনও ভাবনা থেকে বের হয়নি।
“যদি তাই হবে তাহলে মান-অভিমান কীসের? অনুভূতির পরিনতি পায়নি কেন? সমস্যা কী ছিল?”
সেজান শুকনো ঢোক গিলে মিনমিন করে বলল,
“ভাবি একবার আপনাকে বলতে গিয়েছিল কিন্তু আপনি নেগেটিভ রিয়েকশন দিয়েছিলেন। তাই আর আগাইনি।”
আদ্রিশ থমকে গেল। মনে পড়ে গেল সেদিনের কথা। আর্দ্রের জন্মের অনেক আগে রুশা সেজানের বিয়ের কথা বলতে এসেছিল। আর তখন সম্পূর্ণ কথা না শুনেই আদ্রিশ রিয়েক্ট করেছিল। সেদিনের জন্য আদ্রিশ অনুতপ্ত হলো। এতগুলো দিন সেজানকে কষ্ট দিয়েছে আর সেজান চুপচাপ সব মেনে নিয়েছে। নিজে থেকেও কিছু বলেনি। নিজে থেকে কিছু না বলার কারণে আদ্রিশ কিছুটা রেগে গেল।
“ওহ শিট! সেজান তোমার কি মনে হয় না একবার এসে আমাকে বলা উচিত ছিল? আর রুশাও তো আমাকে তেমন কিছু বলেনি। ওর উচিত ছিল তোমার আর কথার সম্পর্ক আই মিন অনুভূতির কথা আমাকে জানানো।”
সেজান মাথা নিচু করে বলল,
“ভাবির দোষ নেই। আমি ভাবির কাছে সব অস্বীকার করেছিলাম তাই ভাবি আর এ নিয়ে ঘাটতে যায়নি। আর কথাও এ কারণে আমার উপর অভিমান করে আছে।”
আদ্রিশ শক্ত কন্ঠে বলল,
“তোমার একবার জানানো উচিত ছিল। তুমি না বললে আমি কী করে বুঝব? আমি তখন ডিপ্রেসড ছিলাম। রুশার করা প্রতারণার জন্য আমি ভেঙে পড়েছিলাম তাই চাইনি তুমি এমন একটা সম্পর্কে জড়াও আর কষ্ট পাও। তাই আমি ওমন রিয়েক্ট করেছিলাম।”
“ভাই, বাদ দিন। যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমি ঠিক আছি।”
“এখন আর চাইলেও বাদ দিতে পারব না। আমি আগামীকাল রুশার সাথে কথা বলব। কথাকে চাইব তোমার জন্য।”
সেজান আদ্রিশের কথার পেছনে কথা না বলে গ্লাসে চুমুক দিল। আদ্রিশ সেজানকে চুপ দেখে বলল,
“সব ঠিকঠাক হলে খুব শীঘ্রই তোমাদের এনগেজমেন্ট করে ফেলব। রুশার ভাইয়ের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করে তোমাদের ধুমধাম করে বিয়ে দেব। আমি চাইনা কোন প্রকার টেনশন নিয়ে তোমাদের বিয়েটা হোক। তাই ওই চ্যাপ্টার ক্লোজ করা প্রয়োজন।”
সেজান উৎসুকভাবে প্রশ্ন করল,
“কিছু ভেবেছেন?”
“হুম ভাবা শেষ। এখন শুধু এক্সিকিউট করা বাকি। তবে অতি সাবধানে আগাতে হবে। কাউকে সন্দেহ থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। সাজ্জাদ চৌধুরীর দলের প্রতিটি সদস্যকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হবে।”
“হ্যা, হতে পারে পদ পাওয়ার জন্য কেউ উনাকে সরিয়ে দিয়েছে যেমনটা উনার বাবার সাথে হয়েছিল।”
আদ্রিশ ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে বলল,
“রুশার পস্তানোর সময় চলে এসেছে। ওর বোঝার সময় হয়ে গেছে ও এই গেমের খেলোয়াড় নয় বরং সামান্য একটা গুটি। তখন আপসোস করা ছাড়া ওর কাছে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।”
সেজান বিষন্ন স্বরে বলল,
“ভাবি খুব ভেঙে পড়বে। উনি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। আপনার সাথে করা অন্যায় উনাকে কুড়ে কুড়ে খাবে। এতদিন আপনার ক্ষতি করা, আপনাকে ভুল বোঝা, আপনাকে হার্ট করার জন্য নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না। ভাবিকে কী করে সামলাবেন?”
আদ্রিশ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“এটুকু ওর প্রাপ্য। ভুল যখন করেছে শাস্তি পেতেই হবে। ওর উচিত ছিল কান চিলে নিয়ে গেছে শুনে চিলের পেছনে ছোটার আগে অন্তত একবার ভাবা, কানটা দেখা। এভাবে অন্ধ বিশ্বাস এবং অনুকরণ করা উচিত হয়নি। সব যদি ঠিক থাকে রুশা অনেক বড় শিক্ষা পাবে যা ওর ভবিষ্যতের জন্য সুফল বয়ে আনবে। পরবর্তীতে সাবধান হবে। অন্যকে নয় নিজের উপর ভরসা করবে।”
“এই জন্য প্লান সাকসেস হওয়া জরুরি। আমাদের অতি সাবধানে কদম রাখতে হবে। সব কিছু ভাবির সামনে আনতে হবে। তবেই তার এই ভুল ধারণা ভাঙবে।”
“হুম, গুটি আমাদের দিকেও ঘুরে যেতে পারে তাই যা করার সাবধানে করতে হবে। সেজান,কাক পক্ষীও যেন এ খবর না পায়।”
“জি ভাই নিশ্চিত থাকুন। কেউ জানবে না।”
.
~পরের দিন নাস্তার টেবিল~
সেজান নাস্তা করছে আর আদ্রিশের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। ওর মন উসখুস করছে। রুশা তাড়াহুড়ো করে নাস্তা করছে। ছেলে কখন কান্না শুরু করে দেয় বলা তো যায় না।
আদ্রিশ সেজানের অবস্থা বুঝে বলল,
“রুশা, তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।”
রুশা আদ্রিশের কথা শুনে অবাক হয়ে বলল,
“আমার সাথে আবার কী কথা ছিল?”
আদ্রিশ ভনিতা না করে বলল,
“আসলে আমি সেজানের জন্য কথাকে চাইছি। আমি ওদের বিয়ে দিতে চাইছি।”
রুশা আদ্রিশের কথা শুনে রীতিমতো শকড। রুশা বিস্ময় নিয়ে সেজানের দিকে তাকাল তারপর আবার আদ্রিশের দিকে। রুশা মনে মনে খুশি হলেও এতগুলো দিনের কথা মনে করে রাগি ফেস করে বলল,
“মানে? কথাকে কেন? সেজান ভাইয়ের জন্য অন্য মেয়ে দেখুন।”
“ওরা একে অপরকে ভালোবাসে।”
“তো? এতগুলো দিন যে সেজান ভাই কথাকে এত কষ্ট দিল তার কী হবে? সেজান ভাইয়ের সাথে কথাকে বিয়ে দেব না। আমি প্রস্তাব রিজেক্ট করছি।”
সেজান অসহায় মুখ করে বলল,
“ভাবি!”
“কিসের ভাবি? এতদিন ভাই ভাই করে কথাকে অনেক কষ্ট দিয়েছেন। আমাকে আর কথাকে মিথ্যা বলেছেন। এখন ভাবি ভাবি বলে লাভ হবে না।”
“ভাবি প্লিজ।”
“আমাকে এসব বলে লাভ হবে না। আপনার কী মনে হয় কথা এতকিছুর পরেও রাজি হবে? আমি ওকে ফোর্স করতে পারব না আর না কাউকে ফোর্স করতে দেব।”
“কেউ ওকে ফোর্স করবে না। আমি শুধু আপনার সাপোর্ট চাই। আমি আপনার কাছে কখনো কিছু চাইনি প্লিজ ভাবি।”
“আচ্ছা, ঠিক আছে। কথাকে রাজি করান। আমার আপত্তি নেই।”
“থ্যাংকস ভাবি। আমি বাকিটা ম্যানেজ করে নেব। থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ।”
কথা ভার্সিটির জন্য তৈরি হয়ে ব্যাগ নিয়ে এসে তরিঘটি করে নাস্তার টেবিলে জয়েন করল। ওর দেরি হয়ে গেছে। তাড়াহুড়ো করে প্লেটে নাস্তা নিচ্ছে৷ সবার দৃষ্টি ওর দিকে। কথা প্লেটের দিকে চোখ রেখেই বলল,
“সিরিয়াস কিছু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বুঝি?”
রুশা উত্তর দিল,
“হ্যা, তোমার বিয়ে নিয়ে কথা বলছি।”
কথা রুশার কথা শুনে চমকে উঠে। রুশার দিকে বিস্ময় নিয়ে চেয়ে বলল,
“বিয়ে! আপু, আমি তো গতকাল মজা করেছিলাম। তুমি সিরিয়াসলি নিচ্ছো কেন? আমি এখুনি বিয়ে করব না। মাত্র ভার্সিটিতে এডমিশন নিলাম। পড়াশোনা শেষ করি আগে৷ পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটা চাকরি করতে চাই তারপর বিয়ে নিয়ে ভাবব। এখুনি আমি বিয়ে করব না। প্লিজ আপু। প্লিজ প্লিজ।”
সেজান বিরবির করে বলছে,
“শ্বাস নিয়ে ভাবির পুরো কথা তো শুনো।”
রুশা মুচকি হেসে বলল,
“সেজান ভাই হলেও না?”
কথার ভ্রু প্রসারিত হয়ে এল। চোখ বড়বড় করে বলল,
“কী বললে?”
“আদ্রিশ, সেজান ভাইয়ের সাথে তোমার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।”
কথা ঘোরের মধ্যে চলে গেল৷ রুশা কি বলছে বুঝতে পারছে না। একবার আদ্রিশের দিকে চেয়ে সেজানের দিকে তাকাল। সবাই সিরিয়াস লুক নিয়ে চেয়ে আছে। কথা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেল। তাড়া দেখিয়ে উঠতে উঠতে বলল,
“আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি যাচ্ছি আপু।”
কথা সবার চোখের সামনে দিয়ে দ্রুত চলে গেল কিন্তু কেউ ওকে দাঁড়াতে বলল না। সবাই ওর যাওয়ার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে।
রুশা সেজানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“সেজান ভাই, নাস্তা অনেক করতে পারবেন, এই মুহুর্তে আপনার কথার পেছনে যাওয়া উচিত।”
সেজান যাওয়ার জন্য বসা থেকে দাঁড়াতেই আদ্রিশ বলল,
“সব সময় ছেলেরাই কেন মেয়েদের পেছনে পেছনে যাবে?”
সেজান থমকে দাঁড়িয়ে গেল। রুশা টেডি স্মাইল দিয়ে বলল,
“এটাই রুলস।”
তারপর সেজানের দিকে দিকে চেয়ে বলল,
“এই ভাইয়ের কথা শুনলে কথা কেন কোন মেয়ে জুটবে না৷ যাই করুন না কেন অন্তত প্রেম ভালোবাসার ক্ষেত্রে ওর কথা শুনবেন না। নিজের মনের কথা শুনুন।”
সেজান আদ্রিশের দিকে তাকাল। রুশা যাওয়ার জন্য ইশারা করল। সেজান চেয়ার সরিয়ে এক দৌঁড় দিল। আদ্রিশ ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে চেয়ে আছে। রুশা আদ্রিশকে পাত্তা না দিয়ে খেতে লাগল।
কথা গাড়িতে ওঠে বসেছে। সামনের সিটে ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে। কথা এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। ওর বুক ঢিপঢিপ করছে। আচমকা সেজান গাড়িতে ওঠে বসে কথার পাশে। কথা চোখ বড়বড় করে ওর দিকে তাকায়। সেজান ওকে পাত্তা না দিয়ে ড্রাইভারকে বলল গাড়ি স্টার্ট দিতে।
“কথা আমি তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাই।”
“আমি কোন কথা বলতে চাই না। নামুন গাড়ি থেকে। আমি এখন ভার্সিটি যাব৷ আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
“গাড়ি তো চলছে সমস্যা কী?”
“সমস্যা আপনি।”
“কথা, প্লিজ। আমার কথা শুনো। আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি তো। আমি জানি আমি তোমাকে অনেক হার্ট করেছি। কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম। আমার কিছু করার ছিল না। আমি নিজেও কষ্ট পেয়েছি।”
কথা কাঠ গলায় বলল,
“আমি আপনাকে কষ্ট দিয়েছি? নিজেকে নিজে দিয়েছেন তাই আমাকে শোনাতে আসবেন না।”
“আমি শুনাচ্ছি না জাস্ট বুঝাচ্ছি আমি কিসের মধ্যে ছিলাম। তুমি তো জানো ভাই আমার জন্য কি। আমার জন্য কি কি করেছে সব জানো। রুশা ভাবির প্রতারণায় ভাই একদম ভেঙে পড়ে। এতটাই ভেঙে পড়ে যে প্রেম, ভালোবাসা, বিয়ে এসবের প্রতি বিশ্বাস চলে যায়। ঘৃণা করতে শুরু করে। আর তখনই ভাবি ভাইয়াকে আমার বিয়ের কথা বলে। বুঝতেই পারছো পরিস্থিতি কি ছিল। পরিস্থিতির কাছে আমি অসহায় ছিলাম। তাই তোমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম।”
“অন্য ভাবেও সমাধান করা যেত।”
“তোমাকে পাওয়ার আশা আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম। তাই তোমাকেও আশা দিতে চাইনি। এতে তোমার কষ্টটা বেড়ে যেত। তাই চেয়েছিলাম আমাকে ভুলে যাও। আমাকে ভুলে সুখে থাকো।”
“হ্যা, তাই হয়েছে। আমি আপনাকে ভুলে গেছি।”
সেজান রাগি কন্ঠে ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলল। গাড়ি থামালে সেজান গাড়ি থেকে নেমে কথাকে জোর করে গাড়ি থেকে নামায়।
“আর ইউ শিওর তুমি আমাকে ভুলে গেছো?”
কথা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর।”
সেজান কথার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,
“গুড! আমি গাড়ির নিচে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছি। তুমি তো আমাকে ভুলেই গেছো কি আর করার।”
কথা ওর কথা শুনে চোখ বড়বড় করে চেয়ে আছে। ও ভালো করেই জানে এসব ওর ড্রামা। সেজান ধেয়ে আসা গাড়ির দিকে ইশারা করে সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চারপাশের মানুষ ওদের দেখছে। কথার ভীষণ রাগ হচ্ছে আবার ভয়ও লাগছে।
“দেখুন আমি জানি আপনি নাটক করছেন। ফাজলামি করতে গিয়ে দেখা যাবে সত্যি সত্যিই একটা দূর্ঘটনা ঘটে যাবে। সবাই দেখছে। কিছুক্ষণ পরে ভিডিও করতে শুরু করবে। তারপর সবাই ট্রল করবে।”
“আই ডোন্ট কেয়ার।”
সেজান থামছে না। রাস্তার মাঝে চলে যাচ্ছে প্রায়। কথা বাধ্য হয়ে চেঁচিয়ে বলল,
“ঠিক আছে, মেনে নিচ্ছি আপনাকে ভুলি নি। ক্ষমা করে দিয়েছি। এইবার নাটক বন্ধ করুন।”
সেজান মুচকি হেসে থেমে গেল। দৌড়ে কথার
কাছে এসে মিটমিট করে হাসতে লাগল। রাগে কথা ফোঁসফোঁস করছে। সেজানকে একটা ধাক্কা মেরে চলে গেল।
~~~~
আজকে কথা আর সেজানের এনগেজমেন্ট। আদ্রিশ কোন কিছুর কমতি রাখেনি। নিজে ঘুরে ঘুরে ডেকোরেশন দেখছে। রুশা তৈরি হচ্ছে। আর্দ্রকে আগেই রেডি করে আদ্রিশ নিয়ে গেছে। রুশা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখছে। লাল শাড়িতে আবৃত করেছে নিজেকে। আজকে অনেক দিন পরে এভাবে পার্টির জন্য সেজেছে। কথা তৈরি হয়েছে কিনা দেখতে চলে গেল। কথা পার্পল কালার গাউন পরেছে। সাথে ডায়মন্ডের নেকলেস। নিজেকে রাজকন্যা লাগছে। ওর চোখ ছলছল করছে। কখনো ভাবেনি নিজেকে এই সাজে দেখবে। যার বাবা-মা নেই তার এমন স্বপ্ন দেখতেও নেই। রুশা ওর ঘরে এসে ওকে দুচোখ ভরে দেখে বলল,
“মাশাল্লাহ! একদম পরীর মতো লাগছে।”
“সব তোমার জন্য আপু। আজ আমি যেখানে সবকিছু তোমার জন্য।”
“বোকা মেয়ে, আমার জন্য কেন হবে? তোমার ভাগ্য গুণে তুমি এখানে। নিজের ভাগ্যের ক্রেডিট মানুষকে দেওয়া ঠিক না। তুমি যা ডিজার্ভ করো তাই পেয়েছো এবং পাবে। এখন চলো সবাই অপেক্ষা করছে।”
রুশা কথাকে নিয়ে নিচে গেল। সেজান কথাকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রুশা আংটি বদলের আগে ওদের একা ছেড়ে দিল। ওর চোখ আদ্রিশকে খুঁজছে। আদ্রিশকে পেয়েও গেল। ছেলেকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলে ঘুমিয়ে পড়েছে। আদ্রিশকে বরাবরের মতোই ড্যাশিং লাগছে৷ রুশা চোখ সরিয়ে নিল। মেহমানদের সাথে কথা বলতে লাগল। হঠাৎ করে আদ্রিশের চোখ পড়ে রুশার দিকে। রুশার দিকে ওর চোখ আঁটকে যায়। মেহমানদের ছেড়ে ছেলেকে নিয়ে এসে রুশার পাশে দাঁড়ায়। রুশার দিকে নিষ্পলক চেয়ে আছে। রুশা ওর দৃষ্টি বুঝতে পারছে। এত মানুষের সামনে ওকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে অস্বস্তিতে পড়ে।
রুশা গলা ঝেরে বলল,
“আংটি পরানোর সময় হয়ে গেছে। আর্দ্রকে চাচার কাছে দিয়ে ওদের কাছে চলো। আংটি পরাতে হবে৷ ওরা অপেক্ষা করছে।”
রুশা কথা আর সেজানের কাছে গিয়ে ওদের ডেকে আনে।
আনন্দ, হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে সুখময় পরিবেশে ওরা আংটি বদল করে নিল। কথার চোখ বেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে। সেজান ওর চোখের পানি মুছে হাতটা শক্ত করে ধরে জানান দিল স্বপ্ন নয় সত্যি।
চলবে…..
(গতকাল এই পর্বটা ডিলিট হয়ে গিয়েছিল। আবার লিখলাম কিন্তু গতকালের মতো হলো না। গতকাল পর্বটা বিস্তারিত ছিল।)
#লাভ-গেম
#ফাবিহা_নওশীন
৩২.
আদ্রিশ আর রুশার কলিজার টুকরো ছোট্ট আর্দ্রের বয়স এখন সবে তিন মাস। আদ্রিশ, রুশা ওকে নিয়ে শপিংয়ে এসেছে। আর্দ্রকে বেবি ব্যাগে আদ্রিশ কেরি করছে। আর্দ্র হাসছে আর চারপাশে পিটপিট করে দেখছে। রুশা আর্দ্রের জন্য খেলনা দেখছে। আদ্রিশ আর্দ্রকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুশা অনেকটা দূর পর্যন্ত এগিয়ে গেছে। ওর হাতে ছোট ছোট জামা।
রুশা সেখান থেকে পছন্দ মতো ছেলের জন্য কতগুলো জামাকাপড় সিলেক্ট করল।
“হায় পিউ!”
রুশা চমকে উঠে কন্ঠস্বর শুনে। কপাল কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে তাকাল সামনের দিকে।
রকি মুচকি মুচকি হাসছে। রুশা ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে চেয়ে জামাকাপড় রেখেই পেছনে হাঁটা ধরল। আদ্রিশ যদি দেখে তবে ঝামেলা হয়ে যাবে। রুশা চায়না শপিংমলের মধ্যে কোন সিন ক্রিয়েট হোক। রকি দ্রুত হেঁটে ওর সামনে গিয়ে পথ আগলে দাঁড়াল। রুশা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকাচ্ছে।
রকি ওর ফ্যাকাসে মুখ দেখে বলল,
“আরে পিউ আমাকে ভয় পাচ্ছে? আনবিলিভেবল।”
রুশা রাগ কন্ট্রোল করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“তোমার মতো সামান্য কিটকে আমি ভয় পাব? নেভার! আমি চাইনা এখানে কোন সিন ক্রিয়েট হোক। আদ্রিশ যদি দেখে তাহলে কি হবে তুমি নিজেও ভাবতে পারবে না।”
রুশা সামনের দিকে চেয়ে দেখল আদ্রিশ আর্দ্রকে ওদের গার্ডের হাতে দিয়ে ওদের দেখে এগিয়ে আসছে। রুশা চোখ বন্ধ করে ফেলল। রকি পেছনের দিকে ঘুরল। আদ্রিশকে দেখে কিছুটা ভয় পেলেও প্রকাশ করল না।
“কী সমস্যা এখানে?”
রুশাকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল। রুশা উত্তর দিচ্ছে না। রকি আলতো হেসে বলল,
“এই একটু খোঁজ খবর নিচ্ছি।”
আদ্রিশ রুশার হাত ধরে বলল,
“চলো রুশা, আর্দ্র অনেকক্ষণ যাবৎ বাইরে আছে। আমাদের বাড়িতে যেতে হবে।”
রকি গার্ডের কোলে ছোট একটা বাচ্চা দেখল। রকি আর্দ্রের দিকে এগিয়ে গিয়ে দুহাত বাড়িয়ে বলল,
“বাবু, তোমার বাবা এসেছে। আসো, আসো।”
আর্দ্র ওর দিকে চেয়ে আছে। আদ্রিশ আর নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারল না। রুশার হাত ছেড়ে দিয়ে পেছনে থেকে গিয়ে ওর কলার চেপে ধরে। রকি কিছু বোঝার আগেই মুখে এলোপাতাড়ি ঘুষি মারল আদ্রিশ। রুশা কি করবে বুঝতে পারছে না। গার্ডকে ইশারা করল আর্দ্রকে নিয়ে সরে যাওয়ার জন্য। গার্ড আর্দ্রকে নিয়ে সরে গেল।
রকির নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। আদ্রিশ ওর কলার চেপে ধরা অবস্থায় বলল,
“তোকে তখন ছেড়ে দেওয়ায় ভুল হয়েছে। জানে মেরে দেওয়া উচিত ছিল। আমার ছেলেকে নিয়ে আবার আজেবাজে কথা বলছিস। আমি আর তোর নাটকে ফাঁসবো না। আর কখনো যদি রুশা আর আমার ছেলের আশেপাশে দেখি তবে জানে মেরে ফেলব।”
রকি হাসছে আর বলছে,
“পিউ, আগের চেয়ে হট হয়ে গেছো।”
রুশা রাগে রি রি করতে করতে ওর দিকে এগিয়ে গেলে আদ্রিশ রকিকে একটা লাথি মারল। তারপর সজোরে আরেকটা লাথি মেরে ফেলে দিল। রকি মেঝেতে পড়ে গিয়ে হাসছে। আদ্রিশ ওর দিকে এগিয়ে যেতে নিলে দেখে শপিংমলের গার্ডরা দৌড়ে চলে এসেছে। এসে ওকে নানান প্রশ্ন করছে। আদ্রিশ সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রকির দিকে রক্তচক্ষু চেয়ে রুশার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।
গাড়িতে ওঠে আদ্রিশ রাগে ফোঁসফোঁস করছে। রুশা আর্দ্রকে কোলে নিয়ে অবাক হয়ে ভাবছে আদ্রিশ এতকিছুর পরেও কেন রকিকে মারেনি। ওর আচরণ অনুযায়ী রকির এখনো বেঁচে থাকার কথা না। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন বড় কারণ আছে।
“তোমার সাথে ও কী কথা বলছিল?”
রুশা আদ্রিশের কথায় চমকে উঠে। আর্দ্রকে একবার দেখল। ও ঘুমাচ্ছে। আদ্রিশ যেভাবে কথা বলছে তাতে আর্দ্রের ঘুম ভেঙে যাবে।
“আদ্রিশ, আস্তে কথা বলো। ও জেগে যাবে।”
আদ্রিশ দ্বিগুণ তেজ নিয়ে বলল,
“আরে যাক না জেগে। ও কী বলছিল তোমাকে? নিশ্চয়ই আমার ছেলেকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলেছে।”
রুশা আর্দ্রকে ভালো করে আগলে নিয়ে বলল,
“ও শুধু আমার নাম ধরে ডেকেছে। আমি ওকে ইগ্নোর করে চলে আসছিলাম আর ও আমার পথ আগলে দাঁড়ায়। আমি ওকে চলে যেতে বলেছি। তারপর তুমি তো নিজেই সামনে আসলে।”
“চলে যেতে কেন বলেছো? দুইটা থাপ্পড় মারতে পারোনি? কী করেছে ভুলে গেছো?”
“আমি এত মানুষের মধ্যে সিন ক্রিয়েট করতে চাইনি। তাছাড়া আমার সাথে কে কি করেছে সেটা আমি কখনো ভুলব না।”
আদ্রিশ চুপ করে গেল। রুশা যে ওকেই বলেছে বুঝতে বাকি নেই। আর্দ্র জেগে গেছে। রুশা ওকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। আদ্রিশ কিছু একটা ভাবছে।
বাড়িতে ফিরে ফ্রেশ হয়ে রুশা আর্দ্রকে খাওয়াচ্ছে। আদ্রিশ বারবার ঘরে এসেও ফিরে যাচ্ছে। ওকে অস্থির অস্থির লাগছে। রুশা শুধু আড়চোখে দেখছে। আর্দ্রকে খাওয়ানো শেষ হলেই আদ্রিশ কথাকে নিয়ে ঘরে ঢুকে।
আদ্রিশ কথাকে বলল,
“আর্দ্রকে নিয়ে একটু নিচ থেকে ঘুরে আসো। রুশার সাথে আমার একটু কথা আছে।”
কথা রুশার কোল থেকে আর্দ্রকে নিচ্ছে। আদ্রিশ সিঙ্গেল সোফায় গিয়ে বসে পড়ল। রুশা বুঝতে পারছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তাই আর ত্যাড়ামি না করে কথার কাছে আর্দ্রকে দিয়ে দিল। কথা চলে যেতেই আদ্রিশ দরজা বন্ধ করে দিয়ে এল। রুশা গোলগোল চোখ করে চেয়ে আছে। আদ্রিশ ওর কাছে এসে দু-হাত পকেটে গুজে বলল,
“বস। ঠান্ডা মাথায় আমার কথা শুনবে আর সব প্রশ্নের উত্তর ভেবেচিন্তে দিবে।”
রুশা সোফায় বসে পড়ল। সামনের চুলগুলো কানের পেছনে গুজে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বসে আছে। ওর চোখ আদ্রিশের দিকে।
আদ্রিশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলল,
“তোমার ভাইয়ের মৃত্যুর ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই। তুমি আমাকে তোমার ভাইয়ের খুনি ভাবো। কিন্তু আমি তাকে খুন করিনি। হ্যা এ জীবনে অনেক মানুষ মেরেছি কিন্তু তোমার ভাইকে আমি মারিনি। আমি তোমার কাছে প্রমাণ করতে চাই আমি এসবের সাথে জড়িত নই। কেন প্রমাণ করতে চাইছি জানো? আর্দ্রের জন্য। ওর উপরে আমাদের দুজনের প্রব্লেম প্রভাব ফেলছে। নয়তো আমি কখনো তোমার কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে চাইতাম না। কে আমাকে কি ভাবে তাতে আমার বিন্দুমাত্র কিছু আসে যায় না। আমি তোমাকে ভালোবাসি কিংবা বাসি না এটা কোন ফ্যাক্ট না৷ ফ্যাক্ট আর্দ্রের ভবিষ্যৎ। আমি চাই ও স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিবার পাক। তাই আজ আমি নিজ থেকে তোমার সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে এসেছি। তোমার কাছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার ইচ্ছে থাকলে অনেক আগেই করতাম। আমি তোমার ভাইকে খুন করিনি রুশা।”
রুশা এতক্ষণ চুপ থাকলেও এইবার মুখ খুলল,
“আই উইশ এটা সত্যি হত।”
আদ্রিশ চোয়াল শক্ত করে বলল,
“এটাই সত্যি কিন্তু তুমি মানতে চাইছো না। একদিন এই জন্য তোমাকে আফসোস করতে হবে। ভেঙেচুরে শেষ হয়ে যাবে।”
“এই জন্য যদি কখনো আমাকে আফসোস করতে হয় তবে সেদিন হবে আমার জীবনের সেরা দিন। সেদিন আমি তোমার পায়ে পড়ব৷ মাফ চাইব। তুমি যা শাস্তি দিবে মাথা পেতে নেব৷”
“যদি সেদিন তোমাকে মাফ করতে না পারি? তাই বলছি আমাকে বিশ্বাস করো। তোমাকে মিথ্যা বলে আমার কী লাভ? তুমি আমার কী বিগড়াবে? আমি কারণ ছাড়া কাউকে মারি না।”
“যে লোক পঞ্চাশ লক্ষ টাকার জন্য একজন মানুষকে মারতে পারে সেখানে কোটি কোটি টাকার ব্যাপার। তুমি টাকার জন্য সব পারো।”
আদ্রিশ বুঝতে পারছে না কি করে রুশাকে বিশ্বাস করাবে।
“আচ্ছা, তুমি বলো আমি কেন মেরেছি সাজ্জাদ চৌধুরীকে?”
“কারণ তোমাদের পার্টনারশিপে সমস্যা হয়েছিল। তুমি চাইতে একটা ভাইয়া চাইতো একটা। দুজনের মতের বনিবনা হত না। তুমি শেষে ভাইয়ার কাছে প্রস্তাব করলে ভাইয়ার ভাগের টাকা দিয়ে দেবে। পুরো ব্যবসায় নিজের জন্য চাইলে ভাইয়া নিষেধ করায় ঝামেলা বেঁধে গেল। কারণ ভাইয়ার অনেক বড় স্বপ্ন ছিল এই ব্যবসায় নিয়ে।”
সব আদ্রিশের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ও এসব করেছে অথচ জানতোই না।
“তোমাকে এসব কে বলেছে? আমি এটাই বা কে বলেছে আমি তোমার ভাইয়াকে মেরেছি?”
রুশা চুপ করে গেল। আদ্রিশ ওকে চুপ করে থাকতে দেখে ধমকে উঠে,
“চুপ করে থেকো না। স্পিক আপ। চুপ করে থাকা কোন কিছুর সমাধান নয়। তোমাকে কেউ গুটি বানিয়ে খেলছে। অথচ তুমি জানোই না।”
রুশা চোখ তুলে তাকাল আদ্রিশের দিকে। তারপর আবার চোখ নামিয়ে নিল। আদ্রিশ প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে ক্ষেপে যায়।
“রুশা, আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি। শুনতে পাচ্ছো? উত্তর দেও। কে বলেছে এসব? রকি?”
রুশা নিচু স্বরে বলল,
“না, শান ভাইয়া।”
আদ্রিশ রুশার কথা শুনে প্রথমে শকড হলেও পরে কিছু একটা ভেবে হেসে ফেলল। রুশা বিস্ময় নিয়ে ওর হাসি দেখছে। চোখে মুখে রাজ্যের ভয়। আদ্রিশের হাসির ধরণ ভালো লাগছে না।
“তুমি শান ভাইয়ার ক্ষতি করার কথা ভাবছো না তো?”
“এত বড় মাপের মানুষের আমি কী ক্ষতি করব? ও তোমাকে মিথ্যা বলেছে। ও নিজেই জানে না তোমার ভাইয়াকে আদোও খুন করা হয়েছে কি না। ও ইচ্ছে করে আমার নাম বলেছে। এর পেছনে অবশ্য কারণ আছে।”
রুশা কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কী কারণ?”
“সাজ্জাদ চৌধুরী রাজনীতি করত। সেখানে ব্যস্ত সময় কাটাতো। তাই শান চৌধুরীকে ব্যবসার দায়িত্ব দিয়েছিল কিন্তু শানের সাথে আমার বনিবনা হচ্ছিল না। আমি এটা সাজ্জাদ চৌধুরীকে জানাই আর বলি যে শান নিজের খেয়াল খুশি মতো কাজ করলে আমি পার্টনারশিপ ভেঙে দেব কারণ লস করে বিজনেস আমি করব না। তার পরের দিন এসে শান চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয়।সাজ্জাদ চৌধুরীর ভাই বলে আমি ওকে ছেড়ে দিয়েছি। নয়তো আমার উপর চিৎকার চেঁচামেচি করবে আর আমি ছেড়ে দেব তা হয় নাকি? সাজ্জাদ চৌধুরী মাঝমধ্যে এসে সব খোঁজ খবর নিতেন৷ আমার সাথে সব সময় যোগাযোগ করতেন। সব ভালোই চলছিল। তারপর হঠাৎ তার মৃত্যুর খবর শুনলাম। তার মৃত্যুর পরে আমি শানের সাথে পার্টনারশিপ ভেঙে দেই। কারণ ও খুব লোভী। নিজের ফায়দা চায়। আর আমিও লস করতে কিংবা রাজি নই। প্রচুর তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে চুক্তি ভেঙে দেই। এতে শানের প্রচুর লস হয়। আমার উপর ভীষণ ক্ষেপে যায়। হাতাহাতিও হয়। ওকে উপরে পাঠাইনি সাজ্জাদ চৌধুরীর কথা ভেবে। তার প্রতি আমার একটা রেসপেক্ট কাজ করত। যদি মারার হতো শানকে মারা উচিত ছিল সাজ্জাদ চৌধুরীকে নয়৷ শান আমার উপর সেদিনের প্রতিশোধ নিচ্ছে৷ তাই তোমাকে আমার নাম বলেছে।”
রুশা বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল,
“শাট আপ! আমার ভাই এত নিচ নয়। একজনের উপর ব্যক্তিগত ক্ষোভের কারণে বড় ভাইয়ের খুনির উপাধি দেবে?”
“সেটাই করেছে। আমি খুন করিনি। আমি এখন তোমাকে একটা মিথ্যা কথা বললে কিংবা কোন বিষয়ে প্রতারণা করলে সেটা আর্দ্রের উপর প্রভাব পড়বে। তাই আমি মিথ্যা বলব না। আমি করিনি খুন সাজ্জাদ চৌধুরীকে। আর খুব শীঘ্রই প্রমাণ করে দেব। বুক চাপকে কাঁদার সময় এসে গেছে তোমার।”
আদ্রিশ দরজার কাছে গিয়ে থমকে দাঁড়াল। তারপর ফিরে বলল,
“জানতে ইচ্ছে করেনি রকিকে কেন মারিনি? ওকে মারিনি কারণ আমার মনে হয়েছে ওর বেঁচে থাকা জরুরি। ও এই রহস্যে জড়িয়ে আছে। অনেক কিছু জানে ও। তাই আমার ছেলেকে মারার চেষ্টা করার পরেও ওকে ছেড়ে দিয়েছি যাতে প্রয়োজনে ওকে ব্যবহার করতে পারি। ওকে গোডাউনে আঁটকে রেখেছি। এখন সেখানেই যাচ্ছি। তুমি চাইলে যেতে পারো।”
রকির মাথায় গরম পানি ঢালছে আর রকি গগনবিদারী চিৎকার করছে। আদ্রিশের পাশে রুশা দাঁড়িয়ে আছে।
আদ্রিশ ইশারা করল ওর লোককে চলে যেতে। আদ্রিশ আর রুশা ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আদ্রিশ ওর চুল টেনে ধরে বলল,
“রুশার ভাইকে আমি মেরেছি এসব কেন বলেছিস তুই আর শান? সাজ্জাদ চৌধুরীর মৃত্যু কিভাবে হয়েছে? সত্যি করে বল। আজকে আমার মেজাজ খারাপ আছে।”
আদ্রিশ তারপর গরম লাল হয়ে যাওয়া শিক এনে বলল,
“মিথ্যা বললে তোর দুই চোখ এই গরম শিক দিয়ে তুলে নেব।”
রকি এমনিতেই মুমূর্ষু রোগীর মতো ছটফট করছে। প্রাণ আসছে আর যাচ্ছে।
আদ্রিশ আবারও ধমকে বলল,
“মিথ্যা বলেছিস কেন রুশাকে?”
রকি বিরবির করে বলল,
“শান বলতে বলেছে। কিন্তু আদ্রিশ এসবের কিছুই জানে না। আমি সত্যি বলছি। আমাকে ছেড়ে দেও প্লিজ।”
রুশা ওর কথা শুনে ওইখান থেকে বের হয়ে এল। আদ্রিশ ওর পেছনে পেছনে গেল। রুশা রাগে ফুঁসছে। আদ্রিশের অস্তিত্ব অনুভব করে পেছনে ঘুরে বলল,
“আমাকে বোকা মনে হয়? তুমি ওর কী অবস্থা করেছো? ওকে মেরে এসব স্বীকার করিয়েছো তাই না? শান ভাইয়া কখনোও আমাকে মিথ্যা বলবে না।”
“উফফ, রুশা। তুমি এত বোকা কেন? আমি কেন ওকে দিয়ে স্বীকার করাব? তুমি শানকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো।”
“তুমি প্রমাণ করে দেও তুমি খুন করোনি। এক্সিডেন্ট অথবা অন্য কেউ মেরেছে আমার ভাই, ভাবিকে। আমি সব ধরনের সাপোর্ট দেব। কিন্তু আমার ভাইয়ের দিকে আঙুল তুললে আমি মেনে নেব না।”
আদ্রিশ বুঝতে পারছে এখানে রুশার ভাইয়ের প্রতি বিশ্বাস, ভালোবাসা, ইমোশন জড়িয়ে আছে।
“আচ্ছা, ফাইন। আমি প্রমাণ করব। এতে তোমার সাহায্য প্রয়োজন। সাজ্জাদ চৌধুরীর মোবাইল, ল্যাপটপ এগুলো প্রয়োজন।”
“ভাইয়ার মোবাইল এক্সিডেন্টে শেষ। আর ল্যাপটপে কিছু পাইনি। আমি চেক করেছি।”
“আর পার্সোনাল নোটবুক, ডায়েরি, কোন পেপার?”
“ওসব আমি খুঁজিনি।”
“গুড!”
আদ্রিশ অন্যদিকে ঘুরে ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছুক্ষণ ভাবল।
.
আদ্রিশ সাজ্জাদের ডাইরির একটা পেজ খুলে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। পেজটা ছিড়ে ডাইরি জায়গা মতো রেখে দিল। আদ্রিশ খুব সাবধানে ছেড়া কাগজটা পকেটে রাখল।
গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে একটা কথাই ভাবছে, “সাজ্জাদ চৌধুরী কাকে মানুষ করতে পারেনি।”
চলছে…..