#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন
৩৫+৩৬
রুশা ব্যান্ডেজ করা শরীর নিয়ে বিবর্ণ মুখে শুয়ে শুয়ে আর্দ্রকে ঘুম পাড়াচ্ছে। রুশা এতটাই বেখেয়ালি যে আর্দ্র ঘুমিয়ে পড়েছে সেদিকেও খেয়াল নেই। একমনে কিছু ভেবে চলেছে আর আর্দ্রের গায়ে হাত দিয়ে ছোট ছোট করে ছুয়ে দিচ্ছে ঘুম পাড়ানোর জন্য। আদ্রিশ ঘরে এসে এভাবে রুশাকে দেখে ওর সামনে গিয়ে বলল,
“রুশা!”
রুশা ভাবনা থেকে বের হয়ে হকচকিয়ে আদ্রিশের দিকে চেয়ে বলল,
“হু।”
আদ্রিশ আর্দ্রের দিকে ইশারা করে বলল,
“ঘুমিয়ে পড়েছে।”
রুশা আর্দ্রের দিকে চেয়ে দেখে ও ঘুমে বিভোর। রুশা উঠে সোজা হয়ে বসে। আদ্রিশ ওকে আবারও বলল,
“এদিকে এসো কথা আছে।”
রুশা বিছানা থেকে নেমে আদ্রিশের পেছনে পেছনে গেল।
আদ্রিশ দাঁড়িয়ে গেলে রুশাও দাঁড়িয়ে গেল।
আদ্রিশ ওর কাঁধে হাত রেখে বলল,
“কী হয়েছে তোমার?”
রুশা চোখের পানি ছেড়ে দিল। তারপর বলতে লাগল,
“নিজের ভাইকে বিশ্বাস করা কী ভুল? যাদের ছায়ায় বড় হয়েছি তাদের কী করে অবিশ্বাস করি? সাজ্জাদ ভাইয়া শুধু ভাই নয়, বাবা আর বন্ধুও ছিল। দিন শেষে আমরা এক সাথে হয়ে কত আড্ডা দিয়েছি। স্কুলে, কলেজে, ভাইয়ার অফিসে কী হয়েছে সব আমরা একে অপরের সাথে শেয়ার করেছি। এমনকি নিজেদের সিক্রেটগুলোও। কোন ছেলে প্রপোজ করেছে, কিভাবে রিজেক্ট করেছি, শান ভাইয়া কোন মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করেছে সবকিছু বলত। শান ভাইয়াকে দেখেছি সব সময় সাজ্জাদ ভাইয়াকে সম্মান করতে, ভাইয়ার কাছ থেকে সব বিষয়ে পরামর্শ নিত, ভাইয়াকে সব সময় মান্য করত। আর সব সময় বলত সাজ্জাদ ভাইয়া আমাদের মাথার উপরের ছায়া। তার হাত যদি কখনো মাথার উপর থেকে সরে যায় তবে বাঁচা কঠিন হয়ে যাবে। ভাইয়া আমাদের জন্য যা করেছে তার ঋণ কখনো শোধ করার নয়। শান ভাইয়া তো সাজ্জাদ ভাইয়াকে ছাড়া চলতেই পারত না। আর আমি ছিলাম তাদের দুজনের চোখের মনি। সেই শান ভাইয়াকে আমি কী করে অবিশ্বাস করব? কেন করল এমন? শান ভাইয়া আমাদের কাউকে ভালোবাসেনি। সাজ্জাদ ভাইয়াকেও না আর আমাকেও না। যদি আমাকে ভালোবাসত তবে কিছুতেই আমার ব্রেইন ওয়াশ করত না। আমাকে উস্কাতো না তোমার লাইফে আসার জন্য। কারণ তুমি আমার সাথে কি করতে পারো তার আইডিয়া তো তার আছে। শান ভাইয়া জানত আমি কতটা জেদি। সে আমার জেদকেই পুঁজি করেছে। যখন বলেছে তুমি ভাইয়াকে খুন করেছো তখন আমার মাথায় আগুন জ্বলছিল। শোকে, রাগে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। তারপর আমি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম আমার ভাইয়ার মতো সহজ, সরল মানুষকে মারার জন্য আমিও ভয়ানক প্রতিশোধ নেব। তারপর তাই করলাম? রক্তের সম্পর্কের ভাইকে বিশ্বাস করা কি খুব দোষের? আমি কি করতাম?”
আদ্রিশ রুশার দুই হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল,
“দোষ তোমার নয়। তুমি সম্পর্কের মূল্য দিতে জানো। তাদের বিশ্বাস করো, ভালোবাসো। তবে বর্তমান দুনিয়ায় নিজের স্বার্থ ছাড়া কেউ কিছু বুঝে না সেক্ষেত্রে আমাদের সাবধান হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তুমি কী করে শিওর হলে শান খুনি? আমার ওকে ডাউট হয়েছিল কিন্তু এতটাও শিওর ছিলাম না।”
রুশা চোখ বন্ধ করে আবারও কাঁদতে লাগল। তারপর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চোখের পানি মুছল।
“আমি সেদিন ভাইয়ার ল্যাপটপে আজগর আলী নামে একজনকে পাই। সেখানে তোমার ছবি, এড্রেস আর কিছু ডিটেইলস দেওয়া ছিল। আর ছোট একটা বার্তা ছিল, এমন যে ‘আরেকটা মার্ডার করতে হবে সেম ওয়ে। সময় আমি বলে দেব।’ তোমাকে মারার কন্ট্রাক্ট দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলেও অবাক হয়নি। কেননা আমি জানি শান ভাইয়া তোমাকে মারতে চায়। কারণ আমিও জানতাম তুমি সাজ্জাদ ভাইয়ার খুনি। শান ভাইয়া সে হিসেবে নিজের প্রাণপ্রিয় ভাইয়ের খুনির শাস্তি চাইবে স্বাভাবিক। কিন্তু আমার সমস্যা সৃষ্টি হয় আরেকটা শব্দটাতে। এই ‘আরেকটা’ শব্দ আমার মন, মস্তিষ্কে এমন ভাবে গেঁথে যায় যে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না। কেমন অস্থির অস্থির লাগছিল। অনেক প্রশ্ন ঘুরছিল মাথায়। এর আগেও শান ভাইয়া কারো মার্ডার করিয়েছে কিন্তু কাকে? আর তাছাড়া আমি শান ভাইয়াকে যতটুকু চিনি খুনখারাবি করার মানুষ সে নয়। সাজ্জাদ ভাইয়া রাজনীতি করত, যে বাবাকে মেরেছিল চাইলে নিজের পাওয়ারের খাতিরে তাকে মেরে গুম করে দিতে পারত কিন্তু তেমন কিছু করেনি। যে পজিশনের জন্য, যে পাওয়ারের জন্য বাবাকে মেরেছিল তা কেড়ে নিয়েছিল এটাও সৎভাবে করেছিল। তার একটাই কথা কেউ অমানুষের মতো আচরণ করলে তার বিপরীতে অমানুষ হতে নেই। খুনের বদলা খুন হতে পারে না। বাবার দেওয়া শিক্ষা এমন ছিল না। সেখানে শান ভাইয়া কাকে মারতে পারে।
এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমি তোমাকে না জানিয়ে শান ভাইয়ার কাছে গিয়েছিলাম। তার মোবাইল নিয়ে আজগর আলীর নাম্বার সার্চ করি। পেয়েও যাই। ডিটেইলস চেক করে জানতে পারি গতকালও তার সাথে কথা হয়েছে। আমি তারপর কল রেকর্ডিং চেক করি। ভাইয়ার মোবাইলে সব সময় দেখতাম অটো কল রেকর্ড হয়ে থাকত। আমি সেখানে রেকর্ডিং চেক করি।”
রুশা আবারও কাঁদতে লাগল। কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“অন করে আমি ওদের কথোপকথন শুনি। এক পর্যায়ে ওই লোকটা বলছে টেনশন করবেন না। কেউ ঘূর্নাক্ষরেও টের পাবে না এটা মার্ডার। এই মার্ডারকে কার এক্সিডেন্ট বলে চালিয়ে দেব আগের বারের মতো। আগের বার কেউ বুঝেনি এইবারও বুঝতে পারবে না। কেউ আপনার দিকে ভুলেও আঙুল তুলবে না। ওই দুজনের মতো আদ্রিশকেও কার এক্সিডেন্টে মেরে ফেলব। আপনি শুধু ডেট বলুন। আর হ্যা ভাই প্রায় দুই বছর আগে যে টাকা দিয়েছেন তাতে কিন্তু হবে না। এইবার আরো বেশি লাগবে। ওই দুজন আর কার এক্সিডেন্টের কথা শুনে আমার মাথায় ভাই, ভাবির কার এক্সিডেন্টের কথাই মাথায় এসেছে। কারণ তাদেরকেও কার এক্সিডেন্টে মারা হয়েছে। আমি আর এক মুহুর্ত ওখানে দাঁড়াতে পারছিলাম না। এসেই ল্যাপটপ খুলে সাজ্জাদ ভাইয়ার মৃত্যুর তারিখের আগে পরে ওদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ হয়েছে কি না সেটা খুঁজতে লাগলাম। খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও গেলাম। ওদের মধ্যে অনেকদিনের পুরনো সম্পর্ক। মৃত্যুর আগের তারিখ গুলোর কিছু মেসেজ ডিলিট করা ছিল। হয়তো প্রমাণ রাখতে চায়নি। ভাইয়ার মৃত্যুর আগের দিন মেসেজ করে জানিয়েছে ভাইয়া আর ভাবি কোথায় যাচ্ছে আগামীকাল, কখন যাচ্ছে। ওরা ভাবিকেও ছাড় দেয়নি। ছোট বাচ্চাটা…”
রুশা কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ল। আদ্রিশের বাবাও কাছের মানুষের কাছে ধোঁকা খেয়েছে। কাছের মানুষ স্বার্থের জন্য তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। চোখের সামনে ভেসে উঠছে বাবার ঝুলানো লাশটা। হঠাৎ পায়ে রুশার স্পর্শ পেল। রুশা ওর পা ধরে বলছে,
“আমাকে মাফ করে দেও। আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। তোমার ইমোশনের সাথে খেলেছি। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবন নষ্ট করে দিয়েছি। আমি তোমাকে বিশ্বাস করিনি। আমাকে মাফ করে দেও।”
আদ্রিশ ওর দুইহাত পা থেকে সরিয়ে বলল,
“কী করছো? আমি তোমাকে মাফ করে দিয়েছি। তোমার প্রতি আমার কোন রাগ নেই।
আসলে আমি তোমাকে একটু বেশিই ভালোবেসে ফেলেছি। তাই আমার সাথে করা অন্যায়ের পরেও তোমার প্রতি আমার অভিযোগ নেই। তোমাকে আর আর্দ্রকে নিয়ে আমি একটা পৃথিবী গড়তে চাই। আমার পৃথিবী।”
আদ্রিশ রুশাকে জড়িয়ে ধরল। রুশাও পরম নির্ভরতার আশ্রয়ে ওর বুকে মাথা রাখল।
“আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি। সাজ্জাদ ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ আমি নেব। যে তোমার আবেগ নিয়ে খেলেছে, নিজের স্বার্থে তোমাকে ব্যবহার করেছে তাকে তার শাস্তি দেব। এতবড় ধোঁকার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।”
একদিন পর আদ্রিশ অনেক চেষ্টার পর আজগর আলীকে ধরতে সক্ষম হয়। কিন্তু সে কিছুতেই মুখ খুলছে না। আদ্রিশ অবশেষে বাধ্য হয়ে ওর উপর নির্মম অত্যাচার করে সব স্বীকার করিয়ে নিয়েছে। এতে করে ওরা সবটা শিওর হয়। পুরো দুনিয়ার কাছে শানকে অপরাধী প্রমাণিত করা যাবে। তার আগে রুশা কথা বলবে শানের সাথে। জবাব চাইবে কেন এমন করল। আদ্রিশ আর রুশা এক সাথে শানের বাড়িতে গেল। প্রথমে আদ্রিশ ঢুকল। শান ড্রয়িংরুমে আদ্রিশকে পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকতে দেখে রাগে জ্বলে উঠল।
“তুই? তোর সাহস হলো কী করে আমার বাড়িতে আসার?”
আদ্রিশ মুচকি হাসল তারপর বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“শুনলাম তুই নাকি আমাকে মারার জন্য খুঁজছিস? তাই নিজেই চলে এলাম।”
শান ওর কথা শুনে চমকে উঠে। ওকে মারার কন্ট্রাক্ট করলেও প্রসেস এখনো শুরু হয়নি। তাহলে আদ্রিশ কি করে জানল। চিন্তায় ওর কপালে ভাজ পড়ে গেল। আদ্রিশ ওর সামনে চুটকি বাজাল।
শান বিরক্ত হয়ে বলল,
“আজেবাজে কথা না বলে বের হয়ে যা।”
“আরে রিলেক্স সমস্যা কী? আমি তোর বড় ভাইয়ের খুনি আমাকে মারতে চাইতেই পারিস। আমি হলেও মারতাম। স্বীকার করতে ভয় পাচ্ছিস কেন?”
“হ্যা, তোকে আমি মারব। তোকে আমি মেরে পুঁতে দেব।”
আদ্রিশ কঠিন গলায় বলল,
“কিন্তু কেন? সাজ্জাদ চৌধুরীকে তো তুই মেরেছিস। তাহলে আমার উপর কীসের প্রতিশোধ নিবি?”
শান ওর কথা শুনে ঘাবড়ে গেল। ওর কপালে চিকন ঘামের রেখা দেখা দিয়েছে।
“আমার ভাইকে আমি মারব কেন? কেন মারব? তুই বললেই হয়ে যাবে না।”।
আদ্রিশ আলতোভাবে হাসল। তারপর বলল,
“তোর ওই আজগর আলী আমার কাছে। আর তোর সত্যটা কে বের করেছে জানিস? তোরই বোন পিউ চৌধুরী।”
শান এতক্ষণ তেমন ভয় না পেলেও রুশার কথা শুনে ভয় পেয়ে ওর দিকে স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইল। রুশা তখন ওর সামনে এসে ছলছল চোখে, বিমর্ষ মুখে বলল,
“কেন ভাইয়া? সাজ্জাদ ভাইয়া কী দোষ করেছিল? কেন করলে? ভাই হয়ে ভাইয়ের রক্ত ঝড়ালে কী করে?”
শান রুশার সামনে এসে অসহায় মুখ করে বলল,
“এই আদ্রিশ তোকে ভুল বুঝিয়েছে। আমার বড় ভাই, আমার বাবার মতো বড় ভাইকে আমি কেন মারব? তুই জানিস না ভাইয়াকে আমি কত ভালোবাসি?”
“ব্যাস ভাইয়া! আর নাটক করো না। ভালোবাসা না ওসব তোমার নাটক ছিল। তুমি আমাকে, সাজ্জাদ ভাইয়া কাউকেই ভালোবাসোনি। সব সময় অভিনয় করেছো। ভাইয়াকে কেন মারলে?”
“পিউ, আমার কথা… ”
“শাট আপ! আর মিথ্যা বলো না। সব প্রমাণ আছে আমার কাছে। আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি। যে ভাইকে ফেরেশতার মতো জানতাম সে নিজের স্বার্থের জন্য নিজের বড় ভাইকে খুন করল? ছোট বোনকে মিথ্যা বলে অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করতে বাধ্য করল? জানতো সেই ছেলে ওর বোনকে খুন করে ফেলতে পারে। তবুও তার রাগ, জেদ, বড় ভাইয়ের প্রতি বিশ্বাস, ছোট ভাইয়ের প্রতি অগাধ বিশ্বাসকে ব্যবহার করল। কিন্তু কেন? জবাব চাই আমার?”
রুশা রাগে চিৎকার করছে, কাঁপছে থরথর করে।
শান বুঝতে পারছে না রুশা এতটা শিওর কিভাবে।
“পিউ, তোর ভুল হচ্ছে কোথাও।”
“না ভাইয়া। ভাইয়া? তুমি তো ভাইয়া বলার লায়েক নও। তোমাকে ভাইয়া বলা যায় না৷ খুনি বলা যায়। আমি তোমার ল্যাপটপ হ্যাক করেছি, তোমার মোবাইল ব্যবহার করে সব জানতে পেরে গেছি আর নাটক করো না।”
শানের পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছে। পিউ তাহলে সব জেনে গেছে। এখন তাহলে উপায় কি বাঁচার। কি করে পিউকে বুঝাবে। পিউ যদি ভালোয় ভালোয় না বুঝে তবে ওকেও আদ্রিশের সাথে মেরে ফেলবে।
শান নিজেকে মনে মনে বুঝিয়ে বলল,
“আমি কিছু বুঝে করিনি পিউ। বিশ্বাস কর। কি করতে কি করে ফেলেছি। কি করতাম বল। ভাইয়া অতিরিক্ত নীতিবান ছিল। বাবার খুনিকেও ছেড়ে দিল। কিছু বলল না। আমি তাকে মারার চেষ্টা করলাম বলে আমাকে থাপ্পড় মেরে দিল। ভাইয়া রাজনীতি করত, অনেক দলবল ছিল তার। কিন্তু তাদের ব্যবহার করত না। আরে ক্ষমতা যদি না দেখাই তাহলে কেউ দাম দিবে? ভয় পাবে আমাদের? আমার সব কিছুতেই তার সমস্যা। ব্যবসায়ের দায়িত্ব আমার অথচ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। সবকিছু তাকে জিজ্ঞেস করে করতে হবে। আমার কোন অস্তিত্বই নেই। যতদিন তার ব্যবসা, তার দুনিয়া থেকে দূরে ছিলাম ততদিন আমাকে ভালোবাসত। তারপর যখন সবকিছুতে হস্তক্ষেপ করেছি তখনই তার চোখের বালি হয়ে গেলাম। আসলে ভাইয়া আমাদের ভালোবাসা দেখাত কিন্তু সম্পত্তি, ব্যবসা সবকিছুতে তার একার হস্তক্ষেপ পছন্দ করত। দেখা যেত দুদিন পর আমাকেই তার রাস্তা থেকে সরিয়ে দিত৷ তাই ভয়ে ঝুঁকের বশে আমি এই কাজটা করে ফেলেছি।”
রুশা রাগে শরীর কাঁপছে। মাথায় যেন ধপ করে আগুন জ্বলে উঠল। চিৎকার করে বলল,
“লেম এক্সকিউজ। তুমি সম্পত্তি, ব্যবসায়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করার জন্য বড় ভাইকে মেরে দিলে? এত লোভ তোমার? ছোট একটা বাচ্চাকেও মেরে ফেললে? তুমি মানুষ নয় রাক্ষস একটা। বড় ভাইকে খেয়ে ফেলেছো। নর্দমার কিট, খুনি যার শাস্তি একমাত্র ফাঁসি। পুরো দুনিয়ার কাছে তোমার আসল রুপ দেখাব৷ জানোয়ার একটা।”
রুশা প্রচন্ড রেগে গেছে।
শান রুশার দিকে তেড়ে এলে আদ্রিশ রিভলবার বের করল।
চলবে…
#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন
৩৬.
আদ্রিশ শানের দিকে রিভলবার তাক করে বলল,
“অনেক খেল দেখিয়েছিস নিজের বোন আর আমার সাথে। এইবার তোর খেলা শেষ। সময় হয়ে গেছে পুরো পৃথিবীর কাছে তোর মুখোশ উন্মোচন করার। সময় হয়ে গেছে তোর পাপের শাস্তি পাওয়ার। যে সম্পত্তি আর ক্ষমতার জন্য নিজের আপন বড় ভাইকে খুন করেছিস সে সম্পত্তি জেলে বসে ভোগ করিস। চল।”
রুশা আদ্রিশের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। শান আড়চোখে ডানে-বামে তাকাচ্ছে। এখন যদি নিজেকে ধরা দেয় তাহলে আর বাঁচতে পারবে না। তাই যেভাবেই হোক পালাতে হবে। শান আদ্রিশের কথামতো ওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দুই পা এগিয়ে সামনের কাচের টি-টেবিলটা ধাক্কা মেরে আদ্রিশের দিকে ফেলে দিল। আদ্রিশের পায়ের উপর পড়াতে আদ্রিশ আলতো ভাবে ঝুঁকে পড়ে আর ওর হাত থেকে রিভলবার পড়ে যায়। রুশাও আদ্রিশের সাথে ধাক্কা খেয়ে পেছনে পড়ে যায়। এই সুযোগে শান দৌড়ে উপরে উঠে যায়। আদ্রিশ রুশাকে হাত ধরে তুলে, মেঝে থেকে রিভলবার তুলে শানের পেছনে গেল। রুশাও ওর পেছনে পেছনে যাচ্ছে। হঠাৎ করে আদ্রিশ থেমে গেল।
রুশা আদ্রিশকে থেমে যেতে দেখে প্রশ্ন করল,
“কি হলো দাঁড়িয়ে গেলে কেন?”
“তুমি এখানেই থাকো। শান কিছু একটা প্লান করছে। নয়তো উপরে যাবে কেন? ওর পালানোর হলে দরজা দিয়ে পালাবে।”
রুশাও তাই ভাবছে কিন্তু আদ্রিশের সাথে যাবে এই বায়না করে আছে।
অতঃপর ওরা দুজন ধীরে ধীরে উপরে যাচ্ছে।রুশা, শানের রুম দেখাল। ওর রুমের দরজা বন্ধ। আদ্রিশ রিভলবার পজিশন মতো রেখে দরজা খোলার চেষ্টা করল। কিন্তু দরজা খুলছে না।
আদ্রিশ রুশার দিকে চেয়ে বলল,
“ভেতরে থেকে লক করা। লক করে ভেতরে কী করছে?”
রুশা কপাল কুঁচকে ঠোঁট কামড়ে কিছু ভেবে বলল,
“দরজাটা ভেঙে ফেলো।”
আদ্রিশ কয়েকবার দরজায় আঘাত করল। রুশা হঠাৎ করে বলল,
“বারান্দা দিয়ে পালায়নি তো?”
আদ্রিশ ওর কথা শুনে শেষবারের মতো জোরে দরজায় আঘাত করল। দরজা খুলে গেল। আদ্রিশ অতি সাবধানে ধীরে ধীরে ভেতরে ঢুকল। তারপর রুশা। ভেতরে কেউ নেই। আলমারি হাট করে খোলা। এলোমেলো ভাবে জামাকাপড় পড়ে আছে। রুশা খেয়াল করল বেডসাইড ড্রয়ারও খোলা। ওরা গাড়ির শব্দ পেয়ে দৌড়ে বারান্দায় গেল। একটা গাড়ি বাড়ি থেকে ছুটে বেরিয়ে গেল।
রুশা উৎকন্ঠিত হয়ে বলল,
“ভাইয়া পালিয়েছে। ঘরে থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়েছে। ওর পেছনে যেতে হবে।”
রুশা আর আদ্রিশ যত দ্রুত সম্ভব উপর থেকে নামল। ওরা গাড়ি ছুটিয়ে শানের গাড়ি খুঁজতে লাগল। আদ্রিশ ফুল স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে।
“রুশা, সেজানকে কল করে লাউডস্পিকার দেও। ওর সাহায্য প্রয়োজন।”
“ওকে, দিচ্ছি।”
রুশা দ্রুত সেজানকে কল করল। রিসিভ করতেই লাউডস্পিকার দিল। আদ্রিশ ওর প্রয়োজনীয় কথা সেড়ে আবারও গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিল।
দীর্ঘ দুই ঘন্টা পর ওরা শানের লোকেশন জানতে পারল। শান একটা জঙ্গলে গা-ঢাকা দিয়েছে। ওর প্লান রাত হলে এই শহর ছাড়বে তারপর খুব দ্রুত দেশ ছাড়বে। শান গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর বিরক্ত লাগছে এই জঙ্গলের মধ্যে। সন্ধ্যা নেমে আসছে। পাখি, পোকামাকড় ডাকছে। মশাও কামড় দিচ্ছে। এখন এখানে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। আরেকটু অন্ধকার নামলেই এখান থেকে বের হওয়া যাবে। শান কাউকে কল করছে।
হঠাৎ গাড়ি আসার শব্দে সাবধান হয়ে যায়। যেদিক থেকে গাড়ি আসছে সেদিকে কান পেতে রাখল। তারপর আর গাড়ির শব্দ পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে গাড়ি থামিয়ে দিয়েছে। এর মানে হলো যারা এসেছে তারা গাড়ি থেকে নেমে গেছে। শানকে সাবধান হতে হবে। শান গাড়ির সামনে থেকে সরে গেল।
আদ্রিশ রুশাকে গাড়ি থেকে নামতে দিল না। এই জঙ্গলের মধ্যে ও সেভ নয়। শান নিশ্চয়ই লুকিয়ে আছে। ওর স্বার্থের জন্য সব করতে পারে। রুশাকেও গুলি করে দিতে পারে। আদ্রিশ রুশার জীবনের রিক্স নিতে পারবে না। রুশা নামার জন্য জোরাজোরি করলে আদ্রিশ গাড়ির দরজা লক করে দিল। রুশা রাগে ফোঁসফোঁস করছে।
আদ্রিশ দুই তিনজন গার্ড নিয়ে আদ্রিশকে খুঁজছে সাথে সেজানও আছে। রুশার পাহারায় একজনকে রেখে এসেছে৷ ওরা জঙ্গলে ঢুকে শানকে খুঁজছে। ওর গাড়ি পেয়ে গেলেও শানকে কোথাও পায়নি। ওরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গাড়ির আশেপাশে খুঁজতে লাগল। কিন্তু শানকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না। আদ্রিশের ডানপাশে জঙ্গলের ছোট ছোট গাছগুলো নড়ে ওঠে আর কারো পায়ের শব্দ পায়। আদ্রিশ সেদিকে ঘুরে কাউকে না পেয়ে গুলি মারে। রুশা গুলির শব্দ শুনে আরো ছটফট শুরু করে দিয়েছে বের হওয়ার জন্য।
আদ্রিশ সেদিকে ছুটে শানকে পেছন থেকে দেখে ওর পেছনে পেছনে ছুটতে লাগল আর চেঁচিয়ে বলতে লাগল,
“শান দাঁড়া বলছি। দাঁড়া নয়তো গুলি করব।”
আদ্রিশের কন্ঠ শুনে সেজানও সেদিকে গেল।
রুশা গাড়ির দরজা অনবরত ধাক্কাচ্ছে, লাথি মারছে। হঠাৎ করে দরজা খুলে গেল। রুশা গাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। গার্ড রুশাকে বাঁধা দিচ্ছে কিন্তু রুশা ওকে ধাক্কা মেরে চলে গেল। জঙ্গলে দিকবিদিকশুন্য হয়ে দৌড়াচ্ছে। হঠাৎ করে কারো আসার শব্দে রুশা দাঁড়িয়ে যায়। মনে হচ্ছে কয়েকজন দৌড়ে আসছে। হঠাৎ শানকে দৌড়ে আসতে দেখল, পেছনে আদ্রিশ। কিছু বোঝার আগে শান এসে ওর মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। শান হাপাচ্ছে, জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। রুশা ভয় পেয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। আদ্রিশও থেমে গেল। রুশার উপর রাগ হচ্ছে, বারবার নিষেধ করেছিল বের হতে। আদ্রিশ হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
“ও তোর বোন। ওকে ছেড়ে দে।”
“আরে কিসের বোন? ও যদি আমার সঙ্গ দিতো তবে ছেড়ে দিতাম কিন্তু ও সাজ্জাদ চৌধুরীর মতো। তার আদর্শে বড় হয়েছে। বড়বড় নীতি কথা ঝারছে। যেখানে বাবার মতো বড় ভাইকে ছাড়িনি সেখানে ও কে? আমি আমার লাইফে কোন বাঁধা চাইনি। নিজের ইচ্ছে মতো লাইফ লিড করতে চেয়েছি, পুরো সম্পত্তির মালিক হতে চেয়েছি। সাজ্জাদ ভাই নাকি কখনো বিয়ে করবে না তাই এই রাজত্বের একচ্ছত্র রাজা ভেবে এসেছি নিজেকে। কিন্তু বিয়ে করে নিল। আবার বাচ্চাও। সহ্য হলো না আমার। তাই সাজ্জাদ চৌধুরীকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়েছি। সাথে তার অনাগত সন্তান। পুরো রাস্তা ক্লিয়ার। রকির সাথে পিউর বিয়ে কনফার্ম করে ফেললাম। ভাইয়াকে কেউ মেরেছে সে ভূত ওর মাথায় চেপে বসল। ও রাগে পাগল হয়ে যাচ্ছিল। তারপর বুদ্ধি করে তোকে ফাঁসিয়ে দিলাম। তোর জন্য সাজ্জাদ চৌধুরী আমাকে ভরা মজলিসের মধ্যে অপমান করেছে। তার শোধ নিতে চেয়েছি। পিউও প্রতিজ্ঞা করল ভাইয়ের খুনিকে নিজের হাতে মারবে। ওকে খুব ভালো করে জানতাম। ও ওর প্রতিজ্ঞা পূরণ করবে। তাই করছিল কিন্তু মাঝখান থেকে সব বিগড়ে দিল। তাই আজ ওকেও রাস্তা থেকে সরিয়ে দেব আর তোকেও। আমার জন্য কেউ বাঁধা সৃষ্টি করতে পারবে না। তোদের দুজনকে কেউ আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না। কেউ না। কেউ জানতে পারবে না সাজ্জাদ চৌধুরীর রহস্য, কেউ জানতে পারবে না তোদের রহস্য।”
রুশার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। কত সহজে নিজের আপন ভাইকে মারার ঘটনা বলছে। কত সহজে নিজের বোনকে মেরে ফেলার কথা বলছে। ওর মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
কেউ সজোরে শানের মাথায় মোটা লাঠি দিয়ে আঘাত করে। শানের হাত থেকে রিভলবার পড়ে যায়। লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। রুশা ছাড়া পেয়েও সেখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেজান সামনে এসে দাঁড়ায়। আর সেই লোক যে শানের মাথায় আঘাত করেছে।
আদ্রিশ সেজানের দিকে চেয়ে বলল,
“রেকর্ডিং কমপ্লিট?”
“ইয়েস ডান।”
শান হাত বাড়িয়ে রিভলবার ধরার চেষ্টা করছে। আদ্রিশ চিৎকার করে রুশাকে ডাকল।
“রুশা, শানকে আটকাও।”
রুশা শানের দিকে ঘুরে চেয়ে দেখে ও হাত বাড়িয়ে রিভলবার ধরার চেষ্টা করছে। রুশা এক পা আগাতেই শান রিভলবার ধরে ফেলে। আদ্রিশ কোন উপায় না পেয়ে ওর হাতে গুলি করল। হাত থেকে রিভলবার ছিটকে সরে যায় আর শান চেঁচিয়ে উঠে ব্যথায়। রুশা পা দিয়ে রিভলবার দূরে সরিয়ে দেয়। রুশা আদ্রিশকে গুলি করতে না করল। রুশা দৌড়ে গিয়ে আদ্রিশের হাত থেকে রিভলবার কেড়ে নেয়।
আদ্রিশ কিছুই বুঝতে পারছে না রুশা কি চাইছে। রাগ হচ্ছে ওর রুশার প্রতি।
শান রক্তেমাখা হাত চেপে ধরে আকুতি মিনতি করছে।
“পিউ, আমি তোর ভাই। আমি ছাড়া তোর আর কেউ নেই। এই আদ্রিশ তোকে ছাড়বে না। মেরে ফেলবে। তারচেয়ে আমার সঙ্গ দে। আমাকে ওর হাত থেকে বাঁচিয়ে নে। দুই ভাইবোন মিলে বিদেশে চলে যাব। সেখানে নতুন করে জীবন শুরু করব। আদ্রিশকে মেরে ফেল।”
রুশা লাল টকটকে চোখে তাকাল। ওর চোখ লাল হওয়ার সাথে সাথে ছলছল করছে। ওকে ভয়ংকর লাগছে। খোলা চুলগুলো উড়ছে। মনে হচ্ছে ভয়ানক প্রতিশোধ নিতে উদ্বত হয়েছে। রুদ্রাণী রুপ নিয়ে রিভলবার উঁচু করে শানের দিকে ধরল।
তারপর শক্ত কন্ঠে বলল,
“বলেছিলাম না সাজ্জাদ ভাই আমার প্রান ছিল। বলেছিলাম না তার জন্য আমি সব করতে পারি? বলেছিলাম না তার খুনিকে আমি ছাড়ব না? বলেছিলাম না নিজ হাতে তাকে হত্যা করব? প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। আর তুমি তো জানো আমি প্রতিজ্ঞা পূরণ করি যেকোনো মূল্যে। এট এনি কস্ট। তাই করছি।”
রুশা এক সাথে তিনটা গুলি ছুড়ল শানের দিকে। শান ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। রুশা ধপ করে বসে পড়ল। কেমন পাথর হয়ে গেছে। সবাই ওর কাজ দেখে হতবাক। আদ্রিশ বুঝতে পারেনি রুশা এমন কিছু করবে।
রুশা এহেন অবস্থা দেখে প্রশ্ন করল,
“রুশা, তুমি ঠিক আছো?”
“প্রতিশোধ নিয়েছি আমি। আমার ভাইয়ের খুনের প্রতিশোধ নিয়েছি।”
আদ্রিশ কিছু ভেবে উঠে গিয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে শানের পিস্তল তুলে নিজের হাতে একটা গুলি করল। সেজানসহ সবাই কেঁপে উঠল।
সেজান দৌড়ে গিয়ে বলল,
“ভাই এটা কী করলেন?”
আদ্রিশ ব্যথায় কুকড়াতে কুকড়াতে বলল,
“ঠিক আছি। ভিডিও তো আছেই স্বীকারোক্তির। আমি চাই শানের অপরাধ আইনের সম্মুখে আসুক। কেসটা এমন ভাবে সাজাতে হবে যাতে রুশার শাস্তি না হয়। শান রুশাকে মারতে চেয়েছে তাই আমি শানের হাতে গুলি করেছি। শান আমাকে আর রুশাকে মারতে চেয়েছে তাই রুশা নিজেদের বাঁচানোর জন্য ওকে গুলি করেছে। আমাকে শান একটা গুলিও করেছে ওর রিভলবার দিয়ে। এমনিতেই শান ফাঁসির আসামী হত। শহরের সবচেয়ে বড় ল-ইয়ার হাইয়ার করো। রুশার যেন কিছু না-হয়। আর পুলিশকে কল করো। এখান থেকে গার্ডদের সরিয়ে দেও।”
আদ্রিশ রুমাল দিয়ে নিজের হাত চেপে ধরে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করছে। রুশা নিস্তেজ হয়ে আছে। নীরবে চোখের পানি ফেলছে। সেজান, শানের লাশের দিকে একবার চেয়ে পুলিশকে কল করছে।
চলছে……