#হৃদপূর্ণিমা
লাবিবা_ওয়াহিদ
| পর্ব ২৬+28 |
সেই ঘটনার পর থেকে নাশিদ মনিকার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া সামনাসামনিও হয় না। এতে মনিকার খুব একটা ভ্রুক্ষেপ নেই। সে নাফিসাকে নিয়ে খুশি। তবে নাফিসাও মনিকাকে আগের মতো রেসপেক্ট করে না। নিজের ভাইকে চোখের সামনে গুটিয়ে নিতে দেখছে সে, সেখানে মনিকার সামান্য চিন্তাটুকুও নেই যা নাফিসাকে অসন্তুষ্ট করেছে। তাও সে মুখে কোনকিছুই প্রকাশ করে না। অর্পিতা নাশিদের বিয়ের কথা শুনে পরেরদিনই চলে যায়। নাশিদের সকলের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হলেও সে মনিকার দিকে ফিরেও তাকায় না। একপ্রকার দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে। মনিকা নাশিদের ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ না থাকলেও সে ডিরেক্ট বলে দিয়েছে রথির মতো সমাজছাড়া মেয়েকে সে এই বাড়ির ছায়াও মারাতে দিবে না। এতে নিয়মিত বাবা-মায়ের দ্বন্দ্ব চলছেই।
নাশিদ রথির সাথে তাদের বিয়ের রাতের ছবিগুলো দেখছিলো আর ভাবছিলো কীভাবে সে রথিকে তার বাড়ি তুলবে। তখনই নয়ন কিছু চিঠি নিয়ে হাজির হয়! নাশিদ কোণা চোখে নয়নের দিকে তাকিয়ে বলে,
-‘হাতে ওগুলা কী?’
-‘লাভ লেটার স্যার!’ দাঁত কেলিয়ে বলে নাশিদ।
নাশিদের এবার গা জ্বলে উঠলো। নয়নের দিকে অগ্নিময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
-‘আমি এদিকে আমার সংসারের আগুন নিভানোর চিন্তায় আছি আর তুমি আছো এই থার্ডক্লাস চিঠি-পত্র নিয়ে? জলদি এগুলা নিয়ে বিদায় হও নয়তো গাল লাল হতে মিনিটও লাগবে না!’
নয়ন দাঁত কেলানো বন্ধ করে ভ্রুযুগল কুচকে বিড়বিড় করতে করতে বেরিয়ে গেলো। নাশিদ মাথায় একটা চাপড় দিয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে নজর দেয়। রথির কোচিং ছুটির সময় হয়ে এসেছে। নাশিদ দেরী না করে জুনিয়র অফিসারদের কয়েকটা ফাইল বুঝিয়ে দিয়ে সে বেরিয়ে গেলো।
_________________________________
রথি ক্লাস সেরে টিচার্সরুমে আসতেই ফাহাদের মুখোমুখি হলো। ফাহাদ প্রথমেই অমায়িক হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
-‘ক্লাস কেমন হলো?’
-‘জ্বী ভালো।’
-‘আপনার মা ভালো আছেন?’
-‘সকালেই তো জিজ্ঞেস করলেন, এখন আবার..’
-‘ও সরি। রথি, তোমার সাথে আলাদাভাবে কথা বলা যাবে? আই মিন কিছু কথা বলতে চাই, একান্তে!’
রথির তখনই আতিক স্যারের দিকে চোখ যায়। আতিক স্যার ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত। তার এদিকে খেয়াল নেই! রথি পরিস্থিতি সামাল দিতে ঠোঁটে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বললো,
-‘অন্য একদিন স্যার। আজ আমার তাড়া আছে!’
বলেই আর বিড়ম্ব করলো না৷ ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে দ্রুত উল্টোপথে পা চালালো। ফাহাদ স্যার সেখানেই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। হয়তো রথির কথাগুলো বুঝতে তার খানিকটা সময় লেগেছে। রথির অবাক লাগছিলো এই ভেবে ফাহাদ স্যার একেক সময়ে একেক রূপ নেয়। যেমন কখনো ‘আপনি’ তো আবার কখনো ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করে। এই আপনি, তুমির সংমিশ্রণে রথির মনে নানা দুশ্চিন্তা খেলে যায়। ইদানীং নাশিদ নামক মানুষটা ব্যতীত কাউকেই বিশ্বাস করতে তার মন সায় দেয় না। প্রতিদিনের ফোনালাপে রথি, নাশিদের দূরত্বটা কিছুটা হলেও কমেছে। তবে রথি এখন কিছুটা চিন্তিত। তার মা তার বিয়ের কথা বলছে আর এদিকে নাশিদের ঘাড়ের উপর এতো চাপ। নাশিদকে সে চেয়েও বলতে পারে না। মার্জান পরেরদিনই তার বাবার বাড়িতে চলে গিয়েছিলো। সারাদিন তাতানের চোখে জল ছিলো। ওদের সামলাতে আর নাশিদকে সামলাতে গিয়ে রথি বেশ হিমশিম খাচ্ছে। তাও দিনশেষে উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা করছে উনি যেন তাকে সবটা সামলানোর ধৈর্য দেয়।
এসব ভাবতে ভাবতেই রথি কোচিং সেন্টারের বাইরে এসে দাঁড়ালো। মিনিটখানেকের মধ্যে পরিচিত গাড়ি এসে তার সামনে ব্রেক কষলো। রথি প্রথমে হতবিহ্বল হলেও পরমুহূর্তে চিনতে অসুবিধা হয় না। রথি ভাবনার মাঝেই তার কাক্ষিত পুরুষটি গাড়ি থেকে নেমে রথির সামনে দাঁড়ায়। নাশিদকে দেখে রথির ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। নাশিদ বিনাবাক্যে রথিকে জড়িয়ে ধরলো। রথিও পরম আবেশে চোখ বুজে নাশিদের বুকে লেপ্টে রইলো। পরক্ষণে রথি নিজেকে ছাড়িয়ে বললো,
-‘পাবলিক প্লেস এটা! কী করছেন এসব?’
-‘ভুল কী করলাম? আনম্যারিড কোনো মেয়েকে তো জড়িয়ে ধরিনি! ইউ আর মাই ওয়াইফ! চাইলে মসজিদে মাইক দিয়ে সবাইকে ঢোল পিটিয়ে বলে দিবো।’
-‘আপনি না…’
-‘জ্বী আমি-ই! আমি-ই আপনার পেয়ারি সোয়ামী!♥️’ রথির কথায় ফোড়ন কেটে বললো নাশিদ।
নাশিদের কথাগুলোতে রথি না হেসে পারলো না। তৎক্ষনাৎ কেউ পেছন থেকে বলে উঠলো,
-‘এই তাহলে তোমার তাড়া?’
রথি হকচকিয়ে পিছে ফিরে তাকালো। যা ভেবেছিলো তাই। ফাহাদ দাঁড়িয়ে আছে। নাশিদ ভ্রু কুচকে ফাহাদের উদ্দেশ্যে বললো,
-‘হু আর ইউ?’
-‘সেটা আপনার না জানলেও চলবে, জনাব। রথি, কতদিনের রিলেশন?’
নাশিদ রথির হাত ধরে দৃঢ় স্বরে বলে উঠলো,
-‘শি ইজ মাই ওয়াইফ! আপনি ওকে বারবার এসব বলছেন কেন?’
ফাহাদ যেন আকাশ থেকে পরলো। সে যেন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন ফাহাদ কোনো প্রকার পতিক্রিয়া দেখালো না তখন নাশিদ রথি হাত ধরে গাড়িতে বসালো এবং অজানা পথে রওনা হলো। আর ফাহাদ সেখানেই ‘থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়। শকটা একটু বেশি করেই বদহজম হয়েছে।
———————————
-‘ছেলেটা কে ছিলো?’
-‘আমার কলিগ!’
-‘ও আচ্ছা। থাক টেনশন নেই, তুমি তো আমার বউ তাই কেউ আর নজর দিবে না!’
-‘এতো প্রসেসিভ কেন আপনি?’
-‘নিজের জিনিস নিয়ে প্রসেসিভ হওয়া দোষের কিছু না।’
-‘তা হঠাৎ আমার কথা মনে পরলো?’
নাশিদ চট করে রথির কোলে মাথা রেখে বললো,
-‘প্রশান্তির জন্য!’
শহর থেকে নির্জন একটা দীঘির পাশে বসে আছে দুজন। নাশিদ সাধারণত এই জায়গাটা বেশ পছন্দ করে। তাই রথিকে নিয়ে চলে এসেছে। বড় বৃক্ষের আবস্তনে বসে শীতল হাওয়াও অনুভব করা গেলো সাথে প্রিয় মানুষটার সাথে কাটানো মুহূর্তটাও সুখে বিরাজমান রইলো। নাশিদ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে থমথমে গলায় বললো,
-‘উনি আমার মা নন, রথি!’
রথি বিস্মিয়, বিমূঢ় দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করলো নাশিদের পানে। নাশিদের এই ছোট বাক্যটি-ই তাকে অধিকমাত্রায় ভাবিয়ে তোলে। রথি অস্ফুটস্বরে বললো,
-‘মানে?’
-‘সত্যি বলছি।’
বলেই নাশিদ একে একে সব সত্যি খুলে বললো নাশিদকে। মনিকার বলা কথাটাও জানালো। রথি মিনিটখানেকের মতো নীরবতা পালন করলো। অতঃপর স্মিত হেসে বলে,
-‘আমার বড় প্রাসাদের প্রয়োজন নেই পুলিশম্যান। আপনাকে সঙ্গে পেলে ছোট চিলেকোঠায় থাকতেও আমার কোনোরূপ দ্বিধা নেই!’
-‘কিন্তু আমি এখন কী করবো রথ? মা আমায় ডিরেক্ট বলে দিয়েছে তোমায় ঘরে তুলতে পারবো না। তুমি বাড়িতে প্রবেশ করলেই আগুন লাগাতেও পিছপা হবে না। রোজকার বাবা-মায়ের দ্বন্দ্ব, ঝগড়া দেখতে দেখতে আমি হাঁপিয়ে গেছি। শান্তির প্রয়োজন আমার রথ!’
-‘সব ঠিক হয়ে যাবে পুলিশম্যান! এতো টেনশন নিবেন না!’
আবারও কিছুক্ষণের জন্য দুজনের মধ্যে নীরবতা চললো। অতঃপর রথি তার নানান সংকোচ নিয়ে আমতা আমতা করে বললো,
-‘ম…মা আমার বিয়ের জন্য উঠে পরে লেগেছে।’
নাশিদ কর্ণকাচে এই বাক্যটি কড়াঘাত করতেই নাশিদ উঠে বসলো। মিনিটখানেক চিন্তা করে সে এক বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। নাশিদ থমথমে গলায় বলে উঠলো,
-‘আমি কালই তোমার বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছি। তোমায় নিয়ে আলাদা থাকবো, তাও রোজকার অশান্তিতে থাকতে চাই না। তুমি আমার হৃদপূর্ণিমা, আমার হৃদপূর্ণিমাকে আমি নিজের সাজানো স্বপ্নের রাজ্যে নিয়ে যাবো। সে হোক বড় প্রাসাদ বা দুইরুমের দুইটি রুমের ফ্ল্যাট! সুখ তো আর প্রাসাদ দেখে আসে না।’
———————————
নাশিদের কথামতো সে এখন মায়ের সামনা-সামনি বসে আছে। নাশিদের পাশে আছে বাবা, নেওয়াজ ভাই এবং ভাবী। মা তাদের প্রস্তাব পেয়ে খুশিমনে রাজি হলেও আড়ালে সাইফকে জিজ্ঞেস করে,
-‘নাশিদের ব্যাপারে খোঁজ লাগা। যতোই হোক সে পুলিশ। শুনেছি পুলিশরা ঘুষ খায় বেশি!’
-‘নিশ্চিন্তে থাকো মা, আমি আগেই খবর নিয়েছি। এছাড়া নাশিদ যে খারাপ ছেলে তা তোমার এই কয়েক মাসের পরিচয়ে মনে হয়েছে?’
-‘নাহ! আদর্শ পরিবারের ছেলে-মেয়ে তারা। তাও মেয়ের মা বুঝিস-ই তো। চিন্তা থাকতেই পারে!’
নাশিদ যেন মায়ের সংকোচটা ধরতে পেরেছিলো। তাই সে মুচকি হেসে বললো,
-‘চিন্তা করবেন না। আপনার মেয়ে আমার আমানত এবং ভালোবাসা হয়েই থাকবে আজীবন। তার মায়াবী আঁখিতে কখনো জল আসতে দিবো না। কারণ আমি নিজেও জানি ওই চোখে কান্না নয়, চঞ্চলতা মানায়!’
সেদিনের কথায় মা এতোটাই মুগ্ধ হয়েছিলো যে তার চোখের কোণ ভিঁজে গেছিলো। সে নাশিদের হাতদুটো ধরে কান্না গলায় বললো,
-‘আমার মেয়েকে তোমার হাতে আমি চোখ বুজে তুলে দিতে রাজি আছি বাবা। আমার মেয়েটাকে সুখে রেখো!’
পর্দার আড়াল থেকে রথি সবটাই দেখছিলো। তার নয়ন অশ্রুসিক্ত! এই অশ্রুপাত দুঃখের নয়, বেদনার নয় শুধুমাত্র আনন্দের! কতো প্রতিক্ষার পর ভালোবাসার মানুষটাকে পুণরায় নিজের করে পাচ্ছে। এ চেয়ে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে? সেদিনই রথি এবং নাশিদের এঙ্গেজমেন্ট হয়। বাবা এবং রথির মা মিলে সিদ্ধান্ত নেয় আগামীকালই বিয়ের দিন ধার্য্য করা হবে। তাতান তো সেই খুশি। তার ফুপির বিয়ে খাবে বলে কথা!
~চলবে।
গ্রুপঃ LaBiba’s Typescripts
বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। নিন দিলাম ওদের বিয়ের দাওয়াত। এবার কেউ বলতে পারবেন না লাবিবা কিপটা, দাওয়াত ছাড়াই নায়ক-নায়িকার বিয়ে দিয়ে দেয়। সকলে এতো এতো গিফট আনবেন ওদের বিয়েতে, নয়তো নয়নকে বলে রাখবো আপনাদের ঢুকতে না দিতে। তখন আমার বলো না লাবিবা পচা!😌#হৃদপূর্ণিমা
লাবিবা_ওয়াহিদ
| পর্ব ২৭ |
বিয়ের ডেট ফাইনাল হয় আগামী শুক্রবার। এদিক দিয়ে মনিকা এবং অর্পিতা একটা কফিশপে বসে আছে। অর্পির চোখ দিয়ে আগুন বের হওয়ার উপক্রম, সে এতটাই রেগে আছে যে কিছুই বলতে পারছে না। মনিকা কিছুক্ষণ গালে হাত দিয়ে বসে একমনে কফির মগটার দিকে তাকিয়ে থাকলো। অতঃপর গলায় কাঠিন্য এনে বললো,
-‘আমি এদিক দিয়ে বিয়ে ভাঙ্গার চেষ্টা করে যাবো। যদি বিফল হই তুমি তোমার নেক্সট গুঁটিটা আড়াল থেকেই চেলে দিও!’
অর্পি মাথা নাড়ায়। অতঃপর কফি মুখে না তুলেই উঠে চলে যায়।
_________________________________
রথি নাশিদের সঙ্গে শপিং এ এসেছে। নাশিদ হেসে জানায়,
-‘আজকের শপিং টা বাবা এবং নেওয়াজ ভাইয়ের পক্ষ থেকে বউ! অফিসের কাজের জন্য তারা আসতে পারেনি, তাই ভাবী, নাফিসা আর আমি-ই আসলাম!’
রথি প্রতুত্ত্যরে হাসলো। অতঃপর চারজন মিলে শপিং এ মনোযোগী হলো। শপিং শেষে নাশিদ রথিদের নিয়ে একটা ফুড বাজে নিয়ে যায়। সেখানে খাবার অর্ডার দিয়ে আশেপাশে হাঁটতে লাগে। হঠাৎ নাশিদের ফোন আসায় সে রথিকে দাঁড়াতে বলে নাশিদ অন্যদিকে চলে যায়। রথি রাস্তার কিনার দিয়ে হাঁটতে লাগে। তখনই কোথা থেকে একটা মিনি ট্রাক রথির দিকে দ্রুত যেতে লাগে। রথির দৃষ্টি সামনে থাকায় তার সেদিকে খেয়াল নেই। ট্রাকটা যখনই রথির কাছাকাছি চলে আসে তৎক্ষনাৎ নাশিদ রথির হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে সরিয়ে আনে। নাশিদ চোখ লাল করে দ্রুত কোমড়ের পেছন থেকে পিস্তল বের করে সেই ট্রাকের টায়ারে শুট করে। ট্রাক থামতে থামতে একটা গাছের সাথে গিয়ে ধাক্কা খায়। নাশিদ রথির দিকে তাকিয়ে দেখলো রথি থরথর করে কাঁপছে। নাশিদ রথির গালে হাত দিয়ে মৃদু সুরে বললো,
-‘ঠিক আছো?’
রথি ট্রাকটার দিকে দৃষ্টি স্থির করেই কম্পিত গলায় বলে, ‘হুম!’
নাফিসা এবং ভাবীও দ্রুত ওদের কাছে আসলো! নাশিদ রথিকে ওদের সঙ্গে রেখে পিস্তল হাতে নিয়ে রাস্তা পার হয়ে ঘটনাস্থলে গেলো। সেখানে অলরেডি কিছুটা ভীর জমেছে। যাওয়ার আগে নাশিদ নয়নকে একটা এসএমএস করে দিলো। নাশিদ দ্রুত ড্রাইভারের পাশের ডোর খুলে কলার ধরে টেনে বের করলো ড্রাইভারকে। ড্রাইভারের কপালে বিরাট চোট লেগেছে যার কারণে সে খানিকটা দুর্বল। তাও নাশিদের অগ্নিময় দৃষ্টি দেখে লোকটি পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু তার আগেই কঠিন ঝংকারের শব্দে কেঁপে উঠলো,
-‘কে পাঠিয়েছে তোকে? বল! কতো টাকার বিনিময়ে একজনের প্রাণ নিতে গেছিলি?’
লোকটা কেঁদে কেঁদে বলতে থাকলো,
-‘আমি কিছু জানি না! আমি কিছু জানি না!’
নাশিদ তার অপর হাতের গান লোকটির কপালে ঠেকিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে বলে উঠলো,
-‘বল, নয়তো গান চালাতে আমার এক সেকেন্ডও লাগবে না!’
লোকটি ভিষণ ভয় পেয়ে গেলো। সে পুণরায় কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-‘অর্পি ম্যাডাম!’
নাশিদ তৎক্ষনাৎ গান দিয়েই সজোরে লোকটির মাথায় বারি দেয়। আশেপাশের লোকজন নাশিদের হিংস্রতা দেখে ভুলেও কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। নয়ন চলে আসতেই নাশিদ লোকটিকে ধরে তাদের জিপে উঠিয়ে নিলো। দূর থেকে রথিরা নাশিদকে জিপে উঠতে দেখে নাফিসা বলে উঠলো,
-‘আই থিংক ভাইয়া এখন থানায় যাবে। ওয়েট আমি ড্রাইভারকে কল করে আনছি।’
নাফিসা ড্রাইভারকে কল দিতেই ড্রাইভার বলে উঠলো,
-‘রাস্তায় আছি ম্যাডাম। কিছুক্ষণের মাঝেই চলে আসবো!’
নাফিসা বেশ অবাক হয় ড্রাইভারের কথায়। ভাবী অধর জোড়া প্রসারিত করে বললো,
-‘দেবরজি আগেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। দেখলে তো রথি, আমার দেবরজি কতো দায়িত্বশীল?’
রথি প্রতুত্তরে হাসার চেষ্টা করলো। কিছুক্ষণ আগের ঘটনা এখনো তার অক্ষিকাচে বারংবার ভেসে উঠছে। না জানি নাশিদ আজ ওই লোকের কী হাল করবে!
_________________________________
নাশিদ ধপধপ পা ফেলে তার বাড়িতে প্রবেশ করলো। মনিকা তখন আবেশে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলো। নাশিদকে দেখে সে চায়ের কাপ রাখলো এবং পুণরায় নাশিদের দিকে তাকালো। নাশিদের রক্তিম বর্ণের মুখশ্রী দেখে মনিকার চিল করা মুখশ্রী আতংকে ছেয়ে যায়। মনিকা দ্রুত উঠে দাঁড়ায় এবং কম্পিত গলায় বললো,
-‘না..শিদ!’
নাশিদ মনিকার থেকে খানিক দুরত্ব বজায় রেখে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে রাগ দমানোর প্রচেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু ফল ভালো হলো না।
-‘আর কতো নিচে নামবেন আপনি? ভালো কথা কী কানে যায় না? ভুলে যাবেন না নাশিদ একবার রেগে গেলে তার সীমানার বাইরে যেতে তার এক সেকেন্ডও লাগে না। আপনাকে চাইলে আমি এখনই কেস দিয়ে লকাপে পুরতে পারি। তখন ভালো লাগবে? রথি আমার বউ! তাকে ভালোবাসি বলে, তাকে সম্মান করি বলে আমি আবারও তাকে বিয়ে করছি। আপনার যদি এতোই সমস্যা হয় আমি এ বাড়িতে থাকবো না। ইনফেক্ট আমি আগেই বলেছি আমি আমার বউকে নিয়ে আলাদাভাবে জীবন-যাপন করবো। তাও আপনার এতো কিসের জ্বালা যে আজ অর্পিকে দিয়ে আমার বউকে মারার চেষ্টা করলেন? লাস্ট ওয়ার্নিং মিসেস মনিকা! অর্পি কী, রথি ব্যতীত দুনিয়ার কোনো মেয়েই আমার হৃদয়ে সামান্যতম জায়গা পাবে না। আর আমার রথির দিকে আঙুল তুললেই আমি তার আঙুল তৎক্ষণাৎ ভেঙ্গে দিবো!’
মনিকা চমকে গেলো। সে অপার্থিব স্বরে বলে উঠলো,
-‘আমি তো রথিকে মারার কথা বলিনি। আমি তো অর্পিকে বলেছি কিছুদিনের জন্য কিডন্যাপ করতে। বাবা, আমি এতোটাও নিচে নামতে পারি না!’
মনিকার চোখে স্পষ্ট বিভ্রান্তি প্রকাশ পাচ্ছে। নাশিদ চুপ করে গভীরভাবে সেই দৃষ্টির প্রকৃত ভাষা বোঝার চেষ্টা করলো। অতঃপর প্রসঙ্গ পাল্টে কাঠ কাঠ গলায় বললো,
-‘সে যাইহোক, নিশ্চিন্তে থাকুন। এই বাড়ির ছায়াও মারাবো না আমাদের নতুন জীবনে। আপনি থাকুন আপনার সৌখিনতা নিয়ে।’
বলেই নাশিদ তার নিরংশু দৃষ্টি চারপাশে বুলিয়ে বেরিয়ে গেলো। মনিকার দিকে পিছে ফিরেও তাকালো না।
________
আজ রথি এবং নাশিদের গায়ে হলুদ। সকাল সকালই নাশিদের ঘুম ভাঙলো ফোনের মিষ্টি রিংটোনে। নাশিদ বালিশের নিচ থেকে ফোন হাতড়ে হাতে নিয়ে পিটপিট করে ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই রথির হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রীটা দেখতে পেলো। নাশিদ পুণরায় চোখ বুজে ঠোঁটজোড়া প্রসারিত করে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলো। অতঃপর ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠলো,
-‘গুড মর্নিং বউ!’
-‘রাখেন আপনার মর্নিং। মশাই বেলা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছে আবার বলে গুড মর্নিং। আজ কতো কাজ খেয়াল আছে? দ্রুত উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিন!’
-‘কী করবো বলো বিয়ের আগেরদিনও নাইট ডিউটি করতে হয়। আজ প্রথম অনেক বিরক্ত হয়েছি এই পেশা নিয়ে!’
-‘পুলিশরা চোরের পিছে দৌড়াবেই, সেটা পূর্ব থেকেই ঘটে এসেছে। যাইহোক আপনি এখন কোথায়?’
-‘আমাদের তৈরি করা স্বপ্নের রাজ্যে!’
-‘মানে?’
নাশিদ হাসলো। অতঃপর মধুর সুরে বললো,
-‘তোমার লাক ভালো বউ যে এমন শ্বশুড় পেয়েছো। আমি তো ভেবেছিলাম এপার্টমেন্টের ভাড়া বাসায় থাকবো। কিন্তু আমার ভাবনায় এক বালতি জল ঢেলে তোমার শ্বশুড়মশাই তোমাকে আর আমাকে একটি সুন্দর ফার্মহাউজ আমাদের বিয়েতে গিফট করেছে। একবার আমার কাছে তোমায় আনি, আমাদের এই স্বপ্নের রাজ্যে তুমি-ই হবে রানী! আমার রানী!’
রথির গালে তৎক্ষনাৎ লাল আভা সৃষ্টি হয়। রথি তার ওড়না আঙুলে পেচাতে পেচাতে মৃদু সুরে বলে উঠলো,
-‘হয়েছে। এখন দ্রুত উঠে ফ্রেশ হয়ে নিন, নাস্তাও করবেন।’
-‘যথা আজ্ঞা বউ! রাখছি৷ আর হ্যাঁ ভালোবাসি!’
নাশিদের নেশাতুর কন্ঠে ‘ভালোবাসি’ শব্দটা কর্ণধারে পৌঁছাতেই সর্বাঙ্গকে খেলে গেল তীব্র শিহরণ। এই প্রথম নাশিদ তাকে ভালোবাসি বলেছে। এই শব্দটি তার মাঝে বিশাল এক সুখের ঝড় তুলেছে। রথি প্রতিত্ত্যুরে কিছু না বলেই খট করে কল কেটে দিলো। বুকের অন্তঃপুরে তীব্রভাবে হৃদপিন্ড শব্দ করছে। রথি নিজেকে সামলাতে বুকের মাঝ বরাবর হাত রেখে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো। তার এই শান্তিপূর্ণ সময়েই মা হন্তদন্ত হয়ে রথির কাছে এসে বলে,
-‘রথি, জলদি চল। বউমা আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে।’
_________________________________
সাইফ অশ্রুসিক্ত নয়নে জ্ঞানহীন মার্জানের দিকে তাকিয়ে আছে। তার একহাতে মার্জানের লেখা পত্রটি বিদ্যমান। তাতান তার মায়ের বুকে মাথা রেখে ফোঁপাচ্ছে। ডক্টর মার্জানকে চেক করে জানায় মার্জান ঠিক আছে। ভাগ্যিস সময়মতো জানালা দিয়ে মার্জানের ছোট ভাই দেখে নিয়েছিলো। নয়তো কী যে হতো ভাবতেই গা সিঁড়সিঁড় করে উঠে। মার্জান আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলো এবং একটা চিঠিও লিখেছিলো, সাইফের উদ্দেশ্যে। সাইফ সেটা পড়ে নিজের আবেগকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।
‘প্রিয় সাইফ,
তোমার জীবনে হয়তো অনেক বড় বোঝা এবং ঘৃণিত হিসেবে আমি-ই ছিলাম। কেনই বা হবো না? কম তো অন্যায় করিনি আমি। আমার অন্যায়ের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো এই লোভ। হ্যাঁ! লোভের বশেই বাবা মারা যাওয়ার পর নকল কাগজ দেখিয়ে বলেছিলাম ওই বাড়ি আমার। বাবা আমার নামে লিখে দিয়েছিলেন। আমি স্বাধীনভাবে বাঁচতে চেয়েছিলাম, ফ্রেন্ডদের নিয়ে পার্টি করাটা আমার বরাবরের মতোই নেশা ছিলো। তাদের যখন বাড়িতে আনতাম তখন বুক ফুলিয়ে অনেক বড় গলায় বলতাম এই বাড়ি সম্পূর্ণ আমার। আমার শ্বশুড় আমায় তার বাড়ি লিখে দিয়েছেন। কিন্তু তার আগে নানান ছলে মাকে আর রথিকে সরিয়ে দেই। এর কারণ অবশ্য আমার ফ্রেন্ডদের ঘিরেই। মা পুরাতন দিনের মানুষ, ওরা এসব ভালোভাবে নাও দেখতে পারে। এছাড়াও একধরণের স্বার্থপরতার মোহে পরে আমি তাদের আমার জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিলাম। সব ভালোই চলছিলো হঠাৎ আমার জীবনে শামুন নামক ঝড় চলে আসে। শামুন আমায় বেশ কয়েকবার বাড়ি এসে বলে গেছে রথিকে তার পছন্দ হয়েছে। তাকে তার যেকোনো মূল্যে চাই। আমি রাজি হই না কারণ ভালো খারাপের তফাৎ আমার জানা আছে। এ নিয়ে অনেকদিন নাকোচ করায় সে আমার তাতানকে কিডন্যাপ করার হুমকি দেয়। আমি সেই হুমকিতে ভয় পেয়ে তোমাদের সকলের মতামতকে উপেক্ষা করেই ওকে হোস্টেল পাঠিয়ে দেই এই আশায়, যেন শামুন তার ধরা-ছোয়ার বাইরে হয়। কিন্তু সেদিন তোমরা এটা বুঝো নি একজন মায়ের কান্না। তুমি ঘুমানোর পর তাতানের ছবিটা বুকে নিয়ে সারারাত পাগলের মতো কেঁদেছি। এক রাস্তার কুলাঙ্কারের জন্যে আমার তাতানকে আমার থেকে দূরে সরাতে হয়েছে। সন্তানের থেকে দূরে থাকাটা কতোটা কষ্টের সেদিন খুব করে উপলব্ধি করেছিলাম। তবে জানো কী? আমি বেশ চাপা স্বভাবের মেয়ে। আমার দুঃখ-যন্ত্রণাগুলো আমি কারো নিকট প্রকাশ করি না। তাই হয়তো তোমরা আমার ভেঙ্গে পরাটা দেখনি। সে যাইহোক, রথির খারাপ চাইতাম না আমি। তাই ওর প্রতি আমি সবসময় কঠোর ছিলাম। অপমান করতাম এই কারণেই যেন সে এই এলাকা ছেড়ে মাকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যায়। কিন্তু তারা সেখানেই থেকে যায়। এভাবেই দিন চলতে থাকে মাসখানেক পর পর এসেই শামুন হুমকি-ধামকি দেয়া শুরু করে। আমি একদিন রাগাম্বিত হয়ে বলেছিলাম, তাকে যদি বাড়ির ত্রি-সীমানায়ও দেখি তাহলে এলাকার মানুষ ডেকে শামুনের ব্যবস্থা করতে বাধ্য হবো। সেদিন শামুন হাসতে হাসতে বলে,
-‘ঠিক আছে আসবো না। যদি কোনোরূপ চালাকী করো তাহলে আমি নিজে এসে উঠিয়ে নিয়ে যাবো!’
সেদিন ওর কথাগুলোর মানে না বুঝলেও মাসখানেক পর যখন এসে জানালো রথি কোনো ছেলের সাথে ঘুরাঘুরি করছে তখন বুঝতে পারলাম। সেদিন শামুনের হুমকিতে আমি দ্বিতীয়বারের মতো ভয় পেলাম এবং সিদ্ধান্ত নিলাম আবিরের সাথে বিয়ে দিবো। কিন্তু তোমরা কেউ-ই রাজি হতে না। তাই ভেবেছিলাম ভালোভাবে বিয়ে দিয়ে তোমাদের বুঝোবো। বুঝালেই হয়তো তোমরা বুঝবে। কিন্তু তা আর হলো না। রথি পালিয়ে গেলো আর শামুনের থেকে আরেকদফা হুমকির সম্মুখীন হলাম। তাই উপায়ন্তর না পেয়ে তোমাদের বুঝিয়ে দেই রথি কারো সাথে পালিয়েছে। বিশ্বাস করো সাইফ, রথি এবং তাতানের কথা ভাবতে ভাবতে আমি নিজের স্বার্থের কথা ভুলে গেছিলাম। আমার মাথায় শুধু এই দুইজনের প্রাণ নিয়ে চিন্তা থাকতো। রথি আবার ফিরলে তুমি আমায় ডিভোর্সের কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যাও। আচ্ছা সাইফ, আমি কী এতোই নিকৃষ্ট ছিলাম? আমার দুটো কথা শুনলে কী খুব ক্ষতি হতো? ভেতরে ভেতরে আমি-ই মরে গেলাম, কেউ একটু খোঁজ অবধি নিলো না। মানলাম আমি অনেক অন্যায় করেছি তাই বলে একটা সুযোগ দিলে খুব বড় ক্ষতি হয়ে যেত? তুমি যখন বলেছিলে আমি আমার বাবার বাড়ি না গেলে তুমি বাড়ি ফিরবে না তখন আমি অর্ধেক নিঃশ্ব হয়ে গেছিলাম। বারবার মাথায় ঘুরছিলো আমার তাতানকে ছাড়া কীভাবে থাকবো? সারারাত চিন্তা করে পরেরদিন চলে আসি তোমায় মুক্তি দিয়ে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি ভালো ছিলাম না। আমার মন বারবার তাতান এবং তোমার দিকে ছুটে যাচ্ছিলো। এদিক দিয়ে আত্নীয়-স্বজন আর সমাজের নানান কটু কথায় আমি আরও শেষ হয়ে যাই। এ জীবনে যদি তোমরাই না থাকো তাহলে আমার বেঁচে থাকার কী দরকার? আমি এসব বলছি কারণ আমি তোমার ঘৃণা আর নিতে পারছি না। মরার পরেও যেন আমি শান্তিতে থাকি তাই বললাম। জানো তো সাইফ, মানুষ তখনই আত্মহত্যার মতো মহাপাপ করে যখন সে এই পৃথিবীর বুকে নিঃস্ব। হয়তো আমি এখন তোমার থেকে বহুদূরে। তাও এই ভেবে ভালো লাগছে তোমায় সারাজীবনের মতো মুক্ত করে দিলাম। আমার তাতানের খেয়াল রেখো। জানো তাতানের মুখে ‘মা’ ডাকটা শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছি। ওকে পেলে হয়তো আমার দুঃখ গুলো ভুলে যেতাম। কিন্তু তা আর সম্ভব না। ভালো থেকো সাইফ, ভালো থেকো।
ইতি
ঘৃণিত মার্জান।
~চলবে।
গ্রুপঃ LaBiba’s Typescripts
বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।
ছবির ক্রেডিটঃ সাদিয়া আপু।#হৃদপূর্ণিমা
লাবিবা_ওয়াহিদ
| শেষাংশ |
রথি ঘঁষে ঘঁষে পুরো মুখের হলুদ ওঠানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পূর্বেই নাশিদ ওকে বাইরে ডেকে নিয়ে হলুদ ভূতে পরিণত করে দিয়েছে। এদিকে রথির অবস্থা দেখে রথির মামাতো বোন স্পৃহা হেসে লুটিপুটি খাচ্ছে। রথি আয়নার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অগ্নিময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো স্পৃহার দিকে। মেয়েটা কখন থেকে হেসেই চলেছে। ইচ্ছে তো করছে ঝাটা দিয়ে রুম থেকে বের করতে। রথি ফোঁসফাঁস করতে করতে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে।
শাওয়ার সেরে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে স্পৃহা গালে দুই হাত দিয়ে আসমান-জমিন ভাবতে ব্যস্ত। রথির উপস্থিতি টের পেতেই স্পৃহা হেসে বলতে লাগলো,
-‘তুই কতো লাকি রে ইয়ার! তোর ওই খালি হাত দুটোতে জিজা মেহেন্দি দিয়ে দিবে। ইশ! আমার যদি এমন একটা বর হতো যে ঠিক নাশিদ ভাইয়ের মতো জোর দিয়ে বলবে “আমার বউকে আমি-ই মেহেন্দি পরিয়ে দিবো!” হায়! কী রোমান্টিক!’
-‘ঠেঙ্গিয়ে ঘর থেকে বের করবো তোকে। মজা নিচ্ছিস আমার সাথে?’
-‘প্লিজ ইয়ার! মজা কেন নিবো? ফিলিংস জানালাম, ফিলিংস!’
রথি প্রতিত্তোরে কিছু বললো না। তার মাথায় তো এক চিন্তাই ঘুরঘুর করছে, নাশিদ তো পুলিশ, সে তো আজীবন শুধু চোরের পিছেই দৌড়িয়েছে, সে আবার কেমন মেহেন্দি দিবে? আজব! তাও মুহূর্তেই সুপ্ত অনুভূতি তার সর্বাঙ্গে তীব্র শিহরণ খেলিয়ে দিলো।
স্পৃহা রথির পাশেই ঘুমাচ্ছে আর রথি তার ফোনে হলুদের ছবিগুলো দেখছে। সারাদিন মার্জানের বাসায় কাটিয়ে বিকালে বাসায় ফেরে তারা। মার্জানও এসেছে। এখন মার্জান অনেকটা অনুতপ্ত। আগের মতো রুদ্ধদ্বার অবস্থা তার নেই। তাকে নিয়েই ঘরোয়াভাবে হলুদের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। সাইফ চেয়েছিলো বোনের ধুমকধাম করে বিয়ে দিতে। কিন্তু রথি নাকোচ করে দেয়। তার এত মানুষের গিজগিজ একদমই পছন্দ না। রথিকে অনেকবার বোঝানো হয়েছে কিন্তু তার হলুদের অনুষ্ঠান ঘরোয়া ভাবেই হতে হবে। তার জেদে বেশি কিছু করতেও পারেনি। ওদিক দিয়ে নাশিদের হলুদের অনুষ্ঠান বড় করেই হয়। বিয়েটা ঘরোয়াভাবে হলেও তারা রিসিপশন বড়ো করেই করবে। রথি রিসিপশন নিয়ে মাথা ঘামায় না।
রথির ভাবনার মাঝেই নাশিদের কল আসে। রথি কাঁপা হাতে রিসিভ করে ফোন কানে ধরলো।
-‘ইশ বউ! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে কাল আমি একা নই আমার বুকের উপর তোমার মাথা থাকবে। আমি তোমায় নিয়ে ঘুমাবো!’
-‘এসব স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেন। আমাকে তো হলুদ দিয়ে ভূত বানিয়ে দিয়ে গেছেন!’
-‘আহা আমার রাগী বউতাহ। তোমার এই হলুদের সাজে আমার তোমায় খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছিলো। আমি তো সামান্য হলুদ মাখিয়েছি, খেয়ে ফেললে সহ্য করতে পারতে?’
-‘এসব কথা রাখেন তো! যত্তোসব লাগামহীন কথাবার্তা। আর কোনো কাজ নেই? ঘুমান তো, আমিও ঘুমাবো!’
-‘ভাগিয়ে দিচ্ছো তো? ওকে জাস্ট ওয়েটিং ফর আওয়ার ওয়েডিং নাইট।’
রথি কিছু না বলেই খট করে কল কেটে দেয়। কিছুক্ষণ পর নাশিদ আবারও মেসেজ করলো,
-‘আগামীকাল শুধে-আসলে সব শোধ নিবো!’
রথি হেসে মেসেজটার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে আর রিপ্লাই করেনি। নাশিদের এই ছোট ছোট পাগলামি গুলোই রথিকে খুশি করতে যথেষ্ট।
★
বঁধূরূপে নিজের ঘরে বসে ফোঁপাচ্ছে রথি। কিছুক্ষণ আগেই কাজীসাহেব বিয়ে পড়িয়ে গেলো। এখন আপাতত রথি ব্যতীত এই ঘরে কেউ নেই। সকাল থেকে বুকটা তার ফেঁটে যাচ্ছে শূন্যতায়। তিন কবুল বলেই সারাজীবনের জন্য বাবার বাড়িতে মেহমান হয়ে গেলো। মা সকাল থেকেই আড়ালে আঁচলে মুখ গুঁজে নিঃশব্দে কাঁদছে। ছোট মেয়েটা আজ এতোই বড় হয়ে গেলো, এ যেন বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে তার। স্পৃহা নাফিসাকে নিয়ে রথির ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
-‘বুঝলি রথি, ছবির চেয়েও আমাদের জিজা আরও কিউট। তুই না থাকলে আমি-ই ওনার সাথে লাইন মারতাম…’
বাকি কথা বলার আগেই স্পৃহা খেয়াল করলো রথি বারংবার টিস্যু দিয়ে চোখ মুছছে। নাফিসা রবং স্পৃহা একে অপরের দিকে তাকিয়ে দ্রুত রথির কাছে গেলো এবং রথিকে বোঝাতে লাগলো। কিন্তু রথির কান্না থামা তো দূরে আরও বেড়ে গেলো। তাতান রথির রুমে এসে রথিকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,
-‘কাঁদছো কেন ফুপি? আম্মু তো চলে এসেছে! দেখো আমি কাঁদি না, তুমিও কেঁদো না ফুপি!’
রথি অনেক কষ্টে নিজের কান্না চেপে রাখলো। স্পৃহা সাবধানে রথির অশ্রুগুলো মুছে দেয়। স্পৃহা রথির চোখ মুছে দেয়ার সময় বিচলিত হয়ে বলে,
-‘এভাবে কাঁদিস না বইন, মেকাপ লেপ্টে গেছে অলরেডি। জিজা তোরে দেখলে পেত্নী ভেবে আগেই পালাবে!’
স্পৃহার কথায় রথির কান্নার মাঝেই ফিক করে হেসে দেয়। খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই বিদায়ের পালা আসে। রথি কান্নাকাটির একপর্যায়ে যখন গাড়িতে উঠবে তখনই মার্জান আসে। মার্জান অশ্রুসিক্ত নয়নে রথির গালে হাত দিয়ে বলে,
-‘অনেক পাপ করেছি বোন। পারলে এই পাপীকে ক্ষমা করে দিস!’
-‘ক্ষমা করেছি অনেক আগেই। এই বিদায়ের সময় অন্তত ক্ষমা চেয়ে আমায় ছোট করো না!’
বলেই রথি ডুকরে কেঁদে মার্জানকে জড়িয়ে ধরলো।
★
এক ঘন্টা হয়ে গেলো। রথির ঘুমে অবস্থা ঢুলুঢুলু। কই একটু শান্তিতে ঘুমাবে তা না নাশিদের পাগলামি বেড়েই চলেছে। এক ঘন্টা লাগিয়ে তাকে মেহেদী দিয়ে যাচ্ছে যার কোনো আগাও নাই মাথাও নাই। ভাব এমন যেন প্রফেশনাল মেহেন্দি ডিজাইনার। রথি হাত সরাতে নিলে নাশিদ এমন ধমক দেয়, সেইই ধমকে রথি চুপসে যেতে বাধ্য। মনের মতো মেহেন্দির ঝাল মিটিয়ে তবেই খান্ত হলো নাশিদ। রথি অসহায় দৃষ্টিতে একবার হাতের দিকে তো আরেকবার নাশিদের দিকে। নাশিদ মুখটা বাচ্চাদের মতোন করে মৃদ্যু স্বরে বলে,
-‘জানি পচা হয়েছে। তবে আমার কোনো দোষ নেই, এই টিউবটার দোষ! সহজে বেরই হয় না। এতো যুদ্ধ করতে হয়, উফফ!’
রথি বিছানা থেকে নামতে নিতেই নাশিদ থামালো।
-‘কোথায় যাচ্ছো?’
-‘হাত ধুঁতে!’
-‘এই না! কম করে হলেও এক ঘন্টা রাখবা!’
রথি আবারও অসহায় দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করলো। তার ইচ্ছে করছে এই মেহেন্দিটা নাশিদের দু’গালে ভালো করে লাগিয়ে দিতে৷ এসব টর্চারের কোনো মানে হয়? রথি গাল ফুলিয়ে ওভাবেই বসে রইলো। নাশিদ কিছুক্ষণ তাকে দেখছে তো কিছুক্ষণ রথির হাতে ফুঁ দিচ্ছে। এসব করতে করতেই ফজরের আযান দিয়ে দেয়। দুজন একসঙ্গে নামাজ আদায় করে ঘুমিয়ে যায়।
সকালে ব্রেকফাস্ট সেরেই রথি নাফিসাকে নিয়ে উঠে আসলো। নিচে ছেলেরাসহ মেহমানরা নানান কাজে ব্যস্ত৷ আজ রিসিপশন, এই ফার্মহাউজের পিছের বাগানেই বিরাট করে অনুষ্ঠান হবে। আত্নীয়-স্বজনে বাড়ি পুরো গিজগিজ করছে। মনিকা ওদের বাড়ি আসেনি। সে তার এক আত্নীয়ের অসুস্থতার নাম করে আগেই বাবার বাড়ি চলে গেছে। এখানে সকলকে সামলাচ্ছে নাশিদের বাবা এবং ফুপি। রথি নাফিসার সাথে রুমে যেতে যেতে খেয়াল করলো নাফিসা কেমন মনমরা হয়ে আছে। এই কারণটা নাশিদ তাকে আগেই জানিয়ে দিয়েছে তাই রথির ধরতে অসুবিধে হয় না। রথি নাফিসার উদ্দেশ্যে বলে,
-‘কালকেই ফ্লাইট?’
নাফিসা থতমত খেয়ে রথির দিকে তাকালো। অতঃপর আমতা আমতা করে বলে,
-‘হ্যাঁ!’
-‘এভাবে যাওয়া কী ঠিক হলো নাফু? তোকে ছাড়া থাকবো কী করে?’
-‘আরে চিন্তা করিস কেন? কয়েক বছরেরই তো ব্যাপার। তুই তো জানিস, কানাডায় মাস্টার্স করার আমার কতো সখ। ফাইনাল ইয়ারের ইক্সাম দিয়ে দিলাম, রেজাল্টও বের হলো, তাই আর দেরী করতে চাই না!’ হাসার চেষ্টা করে নাফিসা বললো।
-‘আবিরের কী হবে?’
নাফিসার মুখে আঁধার নেমে গেলো। নাফিসা আনমনে বলে ওঠে,
-‘হয় অপেক্ষা করবে নয়তো অন্যকাউকে… ধুর এসব বাদ দে। কিছুক্ষণ পরেই পার্লার থেকে লোক চলে আসবে। তুই একটু রেস্ট কর তো!’
রথি নাফিসাকে আর ঘাটলো না। নির্বিঘ্নে তপ্তশ্বাস ফেলে নাফিসার কথামতোন রুমে চলে গেলো। বেশ ধুমধাম করে ওদের রিসিপশনের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। মায়েরা এসেছিলো। রথি ওদের সাথেই বেশি সময় কাটিয়েছে। নাশিদ বেচারা গেস্টদের চাপে রথির ধারেকাছেই ঘেঁষতে পারেনি। কী এক মহা জ্বালায় ছিলো।
—————-
-‘নাফিসা?’
-‘হু!’
-‘না গেলে হয় না?’
নাফিসা শূন্য দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকায়। তারা এখন এয়ারপোর্টের বাহিরেই অবস্থানরত। আর কিছুক্ষণ বাদেই নাফিসার ফ্লাইট। নাফিসা হাসার চেষ্টা করে বললো,
-‘না, হয় না। আমায় যেতে হবে, আমার পড়াশোনার ইচ্ছেটা অপূর্ণ রাখতে চাই না। মাত্র কয়েক বছর, তারপর ঠিকই ফিরে আসবো তোমার নিকট! অপেক্ষা করবে না?’
আবির কিছুক্ষণ থমকে তাকিয়ে রয় নাফিসার পানে। অতঃপর কাতর কন্ঠে বলে উঠলো,
-‘করবো অপেক্ষা। তোমায় ছাড়া আমি কাউকে এই মনকুঠুরিতে জায়গা দিতে পারবো না!’
নাফিসা মুচকি হেসে আবিরকে বিদায় দিয়ে চলে গেলো অজানা পথে। আবির সেখানেই দাঁড়িয়ে নাফিসার চলে যাওয়া দেখছে। একসময় এতো এতো মানুষের মাঝে সে হারিয়ে গেলো।
কেটে যায় এক বছর। এই এক বছরে নাশিদ অনেকবার রথিকে পড়ানোর চেষ্টা করেছিলো কিন্তু রথি সবসময় এক কথাই বলেছে, ‘আমার পড়ার সময় অনেক আগেই ছুটে পিছে চলে গেছে। তাই নতুন করে পড়াশোনা করার চেয়ে আমি এভাবে শিক্ষক হয়েই আমার বাকিটা জীবন কাটাতে চাই!’
নাশিদ প্রথমদিকে রথির উপর রাগ করলেও পরবর্তীতে সে আর জোর করে না। এক সংস্থাতেও রথি কর্মরত। তার উপার্জনের ৮০% সেই সংস্থাতে দান করে আর বাকি ২০% তার মায়ের খরচ হিসেবে সাইফের কাছে পাঠিয়ে দেয়। সাইফ নিতে না চাইলেও রথি জোর করে দিয়ে দেয়। নাশিদ এসবের জন্য খুবই খুশি রথির উপর। রথি যে নাশিদের জীবনের, সংসারের হৃদপূর্ণিমা সেটা রথি বারংবার নাশিদের চোখে আঙুল তুলে প্রমাণ করে দিয়েছে। নাশিদ একদিক দিয়ে যেমন কেস হ্যান্ডেল করে তেমনই রথির সাথে তার খুঁনসুটিময় ভালোবাসা পুরো জমে ক্ষীর! রথি নিজেও অনেকটা খুশি নাশিদের মতো হাসবেন্ড পেয়ে, যে কিনা রথির প্রতিটি পদে তার ঢাল হয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে নয়নকেও নাশিদ বাসায় আনে, তারপর রথি একের পর এক নাশিদের নামে বিচার দেয়। নয়ন শুধু হ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকে। নাশিদ অবশ্য এসব বেশ মজা নিয়ে দেখে। এই এক বছরে মনিকা একবারের জন্যেও ওদের খবর নেয়নি। বাবা প্রায়ই এসে থেকে যায় ছোট ছেলে আর বউমার সঙ্গে। রথি মনিকার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও নাশিদ কখনোই করতে দেয়নি। কারণ, সে রথিকে কথা দিয়েছিলো, তার হৃদপূর্ণিমার গায়ে কোনোরূপ কালো দাগ লাগতে সে দিবে না। নেওয়াজ এবং ভাবী বর্তমানে দেশের বাইরে ট্যুরে গিয়েছে।
আজ রথি নাশিদের সঙ্গে তার মায়ের কাছে এসেছে। মায়ের জোরাজুরিতে আজ রাত তারা এখানেই থাকবে। রাত বাড়তেই রথি নাশিদের কাছে এসে মৃদ্যু সুরে বলে,
-‘এক জায়গায় যাবেন?’
-‘কোথায়?’ ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো নাশিদ। রথি নাশিদকে ইশারা করে বলে,
-‘গেলেই দেখতে পাবেন, আসুন আমার সাথে!’
বলেই রথি নাশিদকে নিয়ে ধীরে ধীরে সদর দরজার দিকে চলে গেলো। সদর দরজাটা খুব সাবধানে খুলে দুজন বেরিয়ে যায়। চাঁদের আবছা আলোয় রথি মই বেয়ে তার সেই ছোট ছাদটায় উঠলো। নাশিদও রথির পিছু নিয়ে মই বেয়ে ছাদে উঠলো। এখানে দুই জন বসার মতোই জায়গা আছে। রথি টাংকিটার সাথে হেলান দিয়ে বসে নাশিদকেও ইশারায় বসতে বললো। নাশিদ বিনাবাক্যে রথির পাশের ছোট জায়গাটিতে বসে পরলো। রথি এবার অদূর অম্বরের থালার ন্যায় চাঁদটির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে,
-‘এখান থেকে পূর্ণিমা বিলাসের মজাই আলাদা। জানেন, আমার যখন মন খারাপ থাকতো আমি এখানে বসে চুপটি করে আকাশ দেখতাম। যেদিন হাজারো তারার মেলা বসতো, সেই তারার মাঝে বাবাকে খুঁজতাম। তবে খুব নিঃসঙ্গত অনুভব হতো। আপনার সাথে এই সময়টা সত্যি-ই মোহময়!’
নাশিদ রথিকে বুকে টেনে নিয়ে বলে,
-‘আমি আছি তো। নিঃসঙ্গ কিসের? নাশিদ সর্বদাই তার হৃদপূর্ণিমার নিকট থাকবে। আকাশের চাঁদের চেয়ে তোমার মায়া বেশি নেশাতুর!’
রথি লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে। অতঃপর নরম বুলিতে বলে,
-‘জানেন, বিয়েরদিন যখন আপনায় প্রথম দেখি তখনই আল্লাহ’র কাছে আপনার মতো মানুষকে চেয়েছিলাম। দেখেন, গরিবের কথা বাঁশি হলেও সত্যি হলো। আল্লাহ আমায় আপনিটাকেই আমায় দিয়ে দিলেন। ভালোবাসি আপনায়, পুলিশম্যান!!’
-‘আমিও আমার হৃদপূর্ণিমাকে ভালোবাসি!’ রথিকে নিজের সঙ্গে আরও আগলে নিয়ে নাশিদ বললো।
~সমাপ্ত।