#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ9+10
মাঝখানে কেটে গেলো আরো চারদিন। সিয়া রা তাদের নতুন ফ্ল্যাটে উঠে এখন সেখানেই থাকছে। সবকিছু বেশ ঠিক ঠাক ভাবেই চলছে। অর্নীলের সাথে সিয়ার প্রায় সারাদিনই ফোনে কথা হয়। তাদের সম্পর্ক টা যেনো আগের থেকে আরো বেশি গাঢ় হয়ে গেছে। সিয়ার জন্য অর্নীল বলতে গেলে পুরো পাগল। অর্নীলের কাজে বাইরে যাওয়াতে তো কয়েকদিন যাবত দেখা হয় না শুধু ফোনেই যোগাযোগ হয় তাদের। এতে সিয়ার কাছে তাদের সম্পর্ক টা কেমন যেনো একটু লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপের মতো লাগে। তবে সিয়া তাদের ব্যাপারে এখনো কাউকে সোজা সাপটা কিছু বলে নি। সিয়া রুম থেকে নেমে এসেই নিচে গিয়ে বসে পরে৷
দোলা;; কিরে আজ কলেজ নেই তোর?
সিয়া;; না, ক্লাস নেই তো গিয়ে কি করবো। তবে কফি শপে শান্তি আর অনুর সাথে দেখা করার কথা।
দোলা;; ওহহ তো কখন যাবি?
সিয়া;; ঘন্টা খানিক পর।
এভাবেই বেশ সময় চলে যায়। সিয়াও বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। হঠাৎ দরজাতে কলিং বেলের আওয়াজ শুনে সিয়া গিয়ে দরজা খুলে দেয়৷ দেখে একজন মাঝ বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে আছে সিয়া তাকে দেখে বেশ অবাকই হয়।
সিয়া;; জ্বি আপনি..?
লোকটি কিছু বলতে যাবে তার আগেই দোলা এসে পরে৷ তারপর লোকটিকে ভেতরে আসতে বলে। সিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে৷ সে লোকটিকে চেনে না। লোকটি গিয়ে দোলার সাথে বেশ কিছু কথা বলে৷ তারপর কিছু পেপারে দোলার সিগন্যাচার নিয়ে বের হয়ে পরে।
সিয়া;; মা লোকটি কে ছিলো?
দোলা;; উনার কাছে আমাদের জমি টা বিক্রি করে দিয়েছি।
সিয়া;; নানভাইয়ের জমি?
দোলা;; হ্যাঁ।
সিয়া;; কেনো?
দোলা;; আমরা তো এখানেই থাকবো। একটা ফ্ল্যাট কিনে নিবো, জমি টা অযথা পরিত্যক্ত হয়ে পরে থাকার চেয়ে বিক্রি করে দিলাম।
সিয়া;; ওহহ আচ্ছা। আচ্ছা আমি যাই।
দোলা;; আচ্ছা মা শোন না!
সিয়া;; হ্যাঁ
দোলা;; তুই পারলে একটু জলদি আসিস আমাকে একটু তোর বিল্লাল চাচার কাছে যেতে হবে।
সিয়া;; সেকি চাচ্চুর বাসায় যেতে তো বেশ সময় লাগবে আবার আসবে আরো সময় লাগবে।
দোলা;; না না তোর চাচ্চু আমার জন্য অপেক্ষা করবে আমি শুধু যাবো। কিছু কাজ আছে। বেশি না আধা ঘন্টা লাগবে।
সিয়া;; আব… আচ্ছা।
এই বলেই সিয়া বের হয়ে পরে৷ একটা রিকশা নিয়ে চলে যায় কফি শপে। যেতেই দেখে শান্তি আর অনু আগে থেকেই সেখানে বসে আছে।
শান্তি;; ওই যে ম্যাডাম আসছে।
সিয়া;; সরি রে, দেরি হয়ে গেলো।
শান্তি;; আরে ঠিক আছে।
সিয়া;; কখন এসেছিস তোরা?
অনু;; বেশি না ১০ মিনিটের মতো হবে।
সিয়া;; ওহহ।
অনু;; কিরে তোরা নাকি বাসা চেঞ্জ করেছিস?
সিয়া;; হ্যাঁ। করতে হলো।
শান্তি;; আচ্ছা বল কি খাবি! অর্ডার দেই।
সিয়া;; ক্যাপাচিনো।
শান্তি;; ওকে, থ্রি ক্যাপাচিনো।
শান্তি অর্ডার দিয়ে দেয়। আর এদিকে অনু সিয়ার লেগ পুল করতে ব্যাস্ত।
অনু;; তো, সিয়া বাবু তোমাদের তো ভালোই চলতাছে।
সিয়া;; মানে? (হেসে দিয়ে)
শান্তি;; আহা, মানে বুঝো না তাই না।
সিয়া;; আরে কচু, সত্যিই বুঝি নাই।
অনু;; আহাম, আহাম। শান্তি রে বইন ওরে বুঝা।
সিয়া;; মানে কি?
শান্তি;; ওইই অর্নীল স্যার আর তুই যে চুটিয়ে প্রেম করছিস কি ভেবেছিস তা জানি না আমরা, বুঝি না কিছু।
সিয়া;; না মানে আসলে…
অনু;; হইছে, ওই আসল নকল নিয়াই পইরা থাকো তুমি।
শান্তি;; এখন ট্রিট দে।
সিয়া;; ট্রিট?!
অনু;; অবশ্যই প্রেম করো তলে তলে আর ট্রিট দিবা না! ট্রিট দাও, ট্রিট দাও।
সিয়া;; তোরা তো দেখি আচ্ছা প্যাচে ফেললি। হ্যাঁ করছি প্রেন যা স্বীকার করেই নিলাম। এখন ট্রিট টাও দয়া করে অর্নীলের কাছ থেকেই নিয়ে নিও।
শান্তি;; এখন থেইকা তাইলে দুলাভাই বইলা ডাকমু।
সিয়া;; আগে বিয়ে তো হইতে দে মেরি মা।
অনু;; হতে কতোক্ষণ!
শান্তি;; একদম, আমার তো মন বলে যে কবে যেনো শুনতে পারবো আমাদের সিয়া পালিয়ে গিয়েছে৷
এই বলেই অনু আর শান্তি হাসতে লাগে। আর সিয়া কথা টা উপেক্ষা করে যায়। এভাবেই তিন জন মিলে বেশ সময় আড্ডা দিচ্ছিলো কিন্তু হুট করে শান্তি আর অনু অবাক হয়ে সিয়ার পেছনের দিকে তাকায়। সিয়া তাদের দুইজনের নজর কে অনুসরণ করে তার পেছনের দিকে তাকাতে যাবে কিন্তু সাথে সাথে শান্তি আর অনু সিয়া কে আটকে দেয় পেছন দিকে তাকানো থেকে৷
শান্তি;; আরে আরে কি করছিস? পেছনে তাকাতে হবে না। তুই এখানে দেখ৷
সিয়া শান্তির সাথে কথা বলতে থাকে। কিন্তু তার কয়েক মিনিট পরেই শান্তি আর অনু কিছুটা হকচকিয়ে বলে ওঠে……
অনু;; আচ্ছা সিয়ু বেবি শোন আমরা এখন যাই কেমন। মানে আমাদের না কিছু কাজ আছে বুঝলি, আমরা এখন যাই!
সিয়া;; আরে কিন্তু এভাবে হুট করে…..
শান্তি;; আরে আগামীকাল তো দেখা হচ্ছেই তাই না। তো আজ আমরা যাই কেমন! থাক হ্যাঁ, বায়।
সিয়া;; কিন্তু তোরা….. আরে!
সিয়াকে আর কিছু বলতে না দিয়েই শান্তি আর অনু কফি শপ থেকে বের হয়ে পরে যেনো এখান থেকে কোন রকমে চলে গেলেই বাঁচে। ওদের চলে যেতেই সিয়া নিজের ক্যাপাচিনো খাওয়ার দিকে নজর দেয়। তখনই পেছন দিক থেকে এক জোড়া হাত এসে সিয়ার চোখ দুটো কে আবদ্ধ করে নেয়। সিয়া প্রথমে অবাক হয়ে চমকে গেলেও পরে শান্ত হয়ে যায়। হাত দিয়ে হাতিয়ে হাতিয়ে সেই হাত জোড়ার মালিক কে চেনার চেষ্টা করছে। কয়েক সেকেন্ড যেতেই সিয়ার মুখ দিয়ে আনমনেই উচ্চারিত হয় “অর্নীল”। সিয়ার বিশ্বাস টা আরো গাঢ় হতে লাগলে সে হাত জোড়া নিচে নামিয়ে দিয়ে ফট করে পেছনে ঘুড়ে তাকায়। সে ঠিক ছিলো, এটা অর্নীলই। অর্নীল কে এই মূহুর্তে এখানে দেখে সিয়া জাস্ট সারপ্রাই’ড। সিয়া বসা থেকে উঠে সোজা অর্নীল কে জড়িয়ে ধরে। অর্নীল নিজেও বেশ হেসে সিয়াকে জড়িয়ে ধরে। আর শপের পুরো মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ মুচকি হাসছে তাদের দেখে। কিন্তু তাদের কে তোয়াক্কা না করে সিয়া অর্নীল কে জড়িয়ে ধরেই আছে। বেশ সময় হয়ে যায় তবুও সিয়ার অর্নীলের বুক থেকে ওঠার নাম নেই। তা খেয়াল হতেই অর্নীল সিয়াকে খানিক টেনে সরিয়ে দেখে মেয়ে কাদছে। অর্নীল হাসবে না কি করবে বুঝে না।
অর্নীল;; সিয়া! আরে বাবা আমি আসছি তো কাদছো কেনো?
সিয়া;; 😓
অর্নীল;; সিয়াজান!
সিয়া;; জানেন আপনাকে আমি কত্তো মিস করেছি, আমি তো ভেবেছিলাম যে আপনি আরো দেরিতে আসবেন।
অর্নীল;; আগেই আসতাম আরো বাট কাজের চাপ বেশি ছিলো।
সিয়া;; আপনি আর কোথাও যাবেন না।
অর্নীল;; আচ্ছা।
অর্নীল সিয়ার মাথার ওপর নিজের থুতনি টা রেখে দিয়ে আরো জড়িয়ে ধরে। অবশেষে ছেড়ে দিয়ে দুজনেই বসে পরে।
সিয়া;; ওহহ আচ্ছা আচ্ছা, এবার বুঝলাম আমি যে কেনো শান্তি আর অনু চলে গিয়েছে। আপনি তাদের ইশারা দিয়ে যেতে বলেছেন তাই না!
অর্নীল;; হ্যাঁ।
সিয়া;; হায়রে,, আচ্ছা আপনি কখন এখানে এসেছেন? আর আমি যে এখানে আছি তা জানলেন কীভাবে?
অর্নীল;; তা জানা কোন ব্যাপার হলো নাকি। আর এসেছি এক ঘন্টা হবে তো সোজা এখানে এসে পরলাম।
সিয়া;; হুমমম।
অর্নীল;; আমরা বিয়ে করছি কবে?
সিয়া ক্যাপাচিনো খাচ্ছিলো কিন্তু অর্নীলের এমন কথায় সিয়া বেশ অবাক হয়েই খাওয়া ছেড়ে তার দিকে তাকায়৷
সিয়া;; বুঝলাম না!
অর্নীল;; আরে বিয়ে বিয়ে, কবে হচ্ছে আমাদের বিয়ে?
সিয়া;; ফেব্রুয়ারির ৩০ তারিখে।
অর্নীল;; আমি ফাজলামি করছি না সিয়াজান। আমার মাথা খারাপ হয়ে গেলে সোজা তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো। তুমি জানো তোমাকে ছাড়া আমি কীভাবে থাকি।
সিয়া;; এহহহহ, তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলবো। মামার বাড়ির আবদার। বললেই হলো।
অর্নীল;; আহা,, শশুড় বাড়ির আবদার।
সিয়া;; আমি ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি,, আরেকটু বড়ো হই তারপর। আপনি তো বুড়া, পড়াশোনা শেষ আপনার।
অর্নীল;; বুড়া বলেন আর যাই বলেন আপনাকে এই বুড়াকেই বিয়ে করতে হবে মিস. জান্নাতা আফরিন সিয়া। এই বুড়ার ই বুড়ি হতে হবে, উপায় নেই। আমাকে ছেড়ে আপনি কোথায় যাবেন সেখান থেকে ধরে বেধে আনবো।
সিয়া;; 😏
অর্নীল;; মুখ টা ত্যাড়া হয়ে যাবে। তখন সবাই বলবে যে অর্নীলের বউ এর মুখ ত্যাড়া।
সিয়া;; এই চুপ করুন।
অর্নীল আর সিয়া এভাবেই বসে বসে খুনশুটি করছিলো কিন্তু হঠাৎ শপের বাইরে সিয়ার মা দোলা আসে। অর্থাৎ উনি ওই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলেন আর কি। দোলা চলেই যেতো রাস্তা পার করে কিন্তু শপের সব দরজা-জানালা গুলো কাচের হওয়াতে ভেতরের প্রায় সবই দেখা যায়। আর কাকতালীয় ভাবে সিয়াকে দোলার নজরে পরে। দোলা তার কপাল কুচকে সিয়ার দিকে তাকায়, কিন্তু সুস্পষ্ট হওয়ার জন্য আরো একটু কাছে গিয়ে খেয়াল করে দেখতেই দোলা বুঝে যায় যে এটাই সিয়া। পাশে তাকিয়ে দেখে অর্নীল বসে আছে। এতে দোলার টনক নড়ে। সে কিছু না বলে সেখান থেকে সোজা চলে আসে। তারও বেশ সময় পরে সিয়ার খেয়াল হয় যে তার মা তাকে একটু জলদি জলদি বাড়ি ফিরতে বলেছিলো। সিয়া তার হাতে থাকা ঘড়ি দেখে দ্রুত বলে ওঠে……
সিয়া;; ওহ হো,, অর্নীল শুনুন আসলে বাসায় নানু একা তো আর মা একটু বাইরে গিয়েছে। সময় অনেক চলে গিয়েছে আমাকে জলদি বাড়ি ফিরতে বলেছিলো মা। So, i have to go now…
অর্নীল;; ওকে ফাইন, তো চলো তোমাকে ড্রপ করে দেই।
সিয়া;; আচ্ছা।
অর্নীল আর সিয়া শপ থেকে বের হয়ে বাইরে এসে গাড়িতে ওঠে পরে। প্রায় ১৫-২০ মিনিট পরেই সোজা সিয়ার বাসার সামনে এসে থামে। সিয়া অর্নীলের গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে তাকে টাটা জানায়। অর্নীল চলে গেলেই সিয়াও ভেতরে এসে পরে, এসেই দেখে তার মা বসে বসে গল্প করছে তার নানুর সাথে।
সিয়া;; ওহ মা তুমি এসে পরেছো?
দোলা;; হ্যাঁ, মানে কাজ তো শেষ তাই জলদি এসে পরেছি।
সিয়া;; ওহহ ভালো করেছো। নানি এই দেখো তোমার জিনিস।
শিউলি;; কি?
সিয়া প্রায় ২০ টা পানের খিলি তার নানির সামনে রেখে দেয়। ওইযে সেইদিন বলেছিলো যে বাইরে গেলে কিছু নাকি আনে না। তাই সিয়া এটা এনেছে। আর সে জানে যে তার নানির পান হলে আর কিছু লাগে না। শিউলি বেগন যেনো পানের খিলি গুলো পেয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো। সিয়া গিয়ে দোলা আর শিউলির মাঝে বসে পরে।
দোলা;; তো শান্তি আর অনুর সাথে দেখা কেমন করলি?
সিয়া;; ভালো, হারামিরা এসেছিলো কিন্তু অনেক তাড়াতাড়ি চলেও গিয়েছে।
দোলা;; হুমমম।
সিয়া;; আচ্ছা তুমি হাসছো কেনো? যখন থেকে এসেছি খালি আমাকে দেখে হাসছো?
দোলা;; তো এখন কি আমি কানমু?
সিয়া;; হেহেহেহেহে, তা বলি নাই। কিন্তু এতো মিটমিট কইরা হাসতাছো কেনো?
দোলা;; ওইটা তোর না বুঝলেও চলবো চুপ থাক। বাইরে থেকে এসেছিস যা ফ্রেশ হ। আমি খেতে দিচ্ছি।
সিয়া;; আচ্ছা।
সিয়া ওপরে চলে যায়। আর দোলা তাকিয়ে দেখে তার মা বসে বসে পান চিবুচ্ছে। দোলা ফিক করে হেসে দেয়।
শিউলি;; আচ্ছা কিছু কি হয়েছে?
দোলা;; তোমার নাতনী ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে।
শিউলি;; মানে?
দোলা;; ছাড়ো,, তুমি পান খাও।
এই বলেই দোলা চলে যায়। আর সিয়া ওপরে রুমে এসে ওয়াসরুমে ঢুকতে যাবে তখনই তার মনে পরে যে হলরুমের সোফাতে সে তার ব্যাগ রেখে এসেছে যদি কারো হাতে পরে তাহলে শেষ আর অর্নীল মিনিটে মিনিটে তাকে ফোন দেয়। এটা মনে পরতেই সিয়া এক দৌড়ে হলরুমে চলে যায়। ব্যাগ টা হাতে নিয়ে আবার এক দৌড়ে সোজা রুমে। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নেয়। সেই দিন টা এভাবেই চলে। রাতের বাজছে ১০ টা সিয়া তার টেবিলে বসে বসে নোটস করছে। তখনই তার মা হাতে এক গ্লাস দুধ নিয়ে সিয়ার রুমে আসে।
দোলা;; এই কি করিস?
সিয়া;; ধুরু আর বইলো না। নোটস করছি। ভালো লাগে না
দোলা;; হুমম কর আর এটা খা।
সিয়া;; কি?
দোলা;; দুধ।
সিয়া;; আমি মাফও চাই দোয়াও চাই। আমি দুধ খাইতে পারমু না। আমার মাথা ঘোরায়।
দোলা;; দুধ না খেলে ব্রেন হবে না পড়তে পারবি না।
সিয়া;; এহহ বলছে তোমারে, দুধ খাইলে যদি ব্রেনই হইতো তাহলে গরুর বাচ্চা রাই ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হইতো। আর আমরা ঘাস, লতা-পাতা খাইতাম।
দোলা;; বাজে কথা না বলে এটা খা।
সিয়া;; আম্মুউউউউ
দোলা;; আচ্ছা অর্ধেক খা।
সিয়া ২-৩ ঢোক খেয়েই দুধের গ্লাস টা সরিয়ে রাখলো। তার পক্ষে আর সম্ভব না।
দোলা;; আচ্ছা এগুলো লিখালিখি শেষ করে ঘুমিয়ে পরিস।
সিয়া;; গুড নাইট।
দোলা;; গুড নাইট সোনা।
কয়েক ঘন্টা চলে যায়। ঘড়ির কাটা যখন প্রায় বারো টা ছুই ছুই তখন দিয়া আর বসে থাকতে না পেরে সব অফ করে হাই তুলতে তুলতে বিছানাতে গিয়ে শুয়ে পরে। নিজের ফোন টা চেক করে। অবাক হওয়ার বিষয়। অর্নীল তাকে এই তিন ঘন্টার মাঝে একটাও ফোন বা মেসেজ দেয় নি। হয়তো ব্যাস্ত কাজে, এই ভেবেই সিয়া চাদর টা দিয়ে একদম মাথা অব্দি মুড়ি দিয়ে অগোছালো ভাবে ঘুমিয়ে পরে। বেশি না ২০ মিনিট যেতে না যেতেই ফোনের কর্কশ আওয়াজে সিয়ার ঘুম ভেঙে যায়। বিরক্তির চরম পর্যায়ে এখন সে, তবুও ঘুমের ঘোরেই ফোন টা কোন রকমে হাতিয়ে নিয়ে কানের কাছে ধরে।
সিয়া;; হ্যালো
অর্নীল;; হ্যালো সিয়াজান।
সিয়া;; আপনি?
অর্নীল;; না তো কে থাকবে। আচ্ছা শুনো ঘুম থেকে ওঠো জলদি।
সিয়া;; কিন্তু কেনো?
অর্নীল;; আরে জলদি ওঠো আর করিডরে এসো। ফোন কাটবে না, কানে নিয়েই করিডরে এসো।
সিয়া;; আরেএএএএ,, আচ্ছা আসছি।
সিয়া ঢুলু ঢুলু পায়ে বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে করিডরে দাঁড়ায়। দেখে বাড়ির নিচে অর্নীল দাঁড়িয়ে আছে। সিয়া তার চোখ দুটো কিছুটা ডলে নিয়ে তারপর আবার দেখে। হ্যাঁ অর্নীল আসলেই দাঁড়িয়ে আছে। অর্নীল তার হাত নাড়িয়ে হাই দেয়।
সিয়া;; আপনি এতো রাতে এখানে কি করেন?
অর্নীল;; নিচে নেমে এসো তারপর বলছি।
সিয়া;; কি? এতো রাতে নিচে কেনো?
অর্নীল;; আরে আসতে বলেছি আসো।
সিয়া;; না না আমি এখন যেতে পারব না। আর আপনি বাসায় যান।
অর্নীল;; তুমি নিচে নামবে নাকি আমি ওপরে আসবো?
সিয়া;; ধমকাচ্ছেন?
অর্নীল;; অবশ্যই। এখন কি তুমি নামবে নাকি, আচ্ছা আমিই আসছি দাড়াও।
সিয়া;; এই এই না না
অর্নীল;; তাহলে তুমি নিচে আসো। আর হ্যাঁ আমি ওপরে গেলে অবশ্যই তা তোমার জন্য বেশি একটা সুবিধের হবে না সিয়াজান।
সিয়া;; কি মুশকিল রে বাবা,, আচ্ছা আসতাছি আমি আসতাছি।
এই বলেই সিয়া ফোন কেটে দিলো। ওরনা টা গলায় জড়িয়ে আস্তে করে রুম থেকে বের হতে ধরে কিন্তু আবার থেমে যায়। কখন কি হয় বলা যায় না, তাই সিয়া একটা কোল বালিশ আর একটা নরমাল বালিশ কে বেশ মুড়িয়ে চাদরের নিচে এমন ভাবে রেখে দেয় যেনো দেখে মনে হয় কেউ একজন এখানে মরার মতো করে ঘুমাচ্ছে। তারপর দিয়া রুম থেকে বের হয়ে পরে। উঁকি ঝুকি মেরে একদম গুটি গুটি পায়ে হলরুমে চলে যায়। বাড়ির চাবি টা হলরুমের ড্রয়ারেই রয়েছে। সিয়া সেটা হাতে নিয়ে মেইন দরজা আস্তে করে খুলে বাইরে চলে যায়। খুব সাবধানে বাইরে এসে সোজা অর্নীলের কাছে।
সিয়া;; কি হয়েছে?
অর্নীল;; চলো।
সিয়া;; আবার চলো মানে কোথায় যাবো?
অর্নীল;; আমার সাথে যাবে।
সিয়া;; না অর্নীল দেখুন হাত ছাড়ুন,, প্লিজ পাগলামো করবেন না। কেউ যদি দেখে ফেলে সর্বনাশ।
অর্নীল;; এই এতো ভয় পাও কেনো বলোত,, ভালোবাসবে আবার ভয়ও পাবে। এ কেমন কথা? ভয় আর ভালোবাসা এক জায়গায় একসাথে থাকে না। থাকতে পারে না বুঝলে।
সিয়া;; আপনার জন্য ব্যাপার টা ইজি অর্নীল কিন্তু আমার জন্য মোটেও না। আমি যাই হ্যাঁ কাল কথা হবে।
এই বলেই সিয়া উল্টো ঘুরে চলে যেতে ধরবে আর ওমনি অর্নীল সিয়ার হাত ধরে এক টান দিয়ে সোজা গাড়িতে বসিয়ে লক করে দেয়। সিয়া নিজের মতো করে বকর বকর করে যাচ্ছে কিন্তু এদিকে অর্নীল গাড়ি চালাচ্ছে। সিয়া একটা সময় হাপিয়ে যায় কথা বলতে বলতে আর না পেরে তাই চুপ করে বসে আছে। কোথায় যাচ্ছে, কেনো যাচ্ছে সিয়া জানে না। একটা সময় অর্নীল গাড়ি থামায়। নিজে নেমে গিয়ে সিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে গাড়ির দরজা খুলে দেয় আর সিয়া হুড়মুড় করে নেমে পরে। অর্নীল আবার সিয়াকে হাত ধরে নিয়ে যায়। অর্নীল সিয়ার চোখ একটা সাদা কাপড় দিয়ে বেধে দেয়। সিয়া প্রথমে ছটফট করলেও এখন চুপ। অর্নীল তাকে হাত ধরে সামনে নিয়ে যায়। তারপর আস্তে করে সিয়ার চোখ থেকে কাপড় টা সরিয়ে দেয়। এবার যেনো নিজের সামনে তাকিয়ে সিয়া নিজেই তাক লেগে গেলো। খোলা আকাশ, ঘন সবুজ ঘাস তার ঠিক মাঝখানে একটা ছোট নীল-সাদার কাপড়ে মুড়ানো টেবিল। আশে পাশে অনেক বেলুন। টেবিলের ঠিক মাঝখানেই নীল আর সাদা কালারের মোমবাতি, তাতে জ্বলজ্বল করে হলুদ আলোতে আগুন জ্বলছে। অর্থাৎ বলতে গেলে সিম্পলের মাঝেক অনেক সুন্দর একটা ক্যান্ডেল লাইট ডিনার। ডিনার না তবে হ্যাঁ ক্যান্ডেল লাইট। সিয়া তাকিয়ে তাকিয়ে এইসব কিছু দেখছিলো, পাশে ফিরে অর্নীল কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অর্নীল হাতে ইয়া বড়ো একটা ফুলের বুকে নিয়ে সিয়ার সামনে এসে হাসিমাখা মুখে বলে………
“” Happy birthday to you, Happy birthday to you.. Happy birthday~Happy birthday ”” Happy birthday to you Siyajaan….””
সিয়া খানিক কপাল কুচকে অর্নীলের দিকে তাকায়। তারপর মনে পরে যে বারো টার ওপরে বেজে গেছে আর আজ সিয়ার বার্থডে। সিয়া নিজেই অবাক। তার যে বার্থডে এটা তার মাথা থেকে একদম বের হয়ে গিয়েছিলো। একদম মনেই নেই। তবে সে এটাই ভেবে পায় না যে অর্নীল কীভাবে জানলো। অর্নীলের দেওয়া সারপ্রাইজ দেখে সিয়া সত্যি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছে। সে নিজের দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে।
অর্নীল;; Happy birthday my Love…
সিয়া;; থ্যাংক ইউ সো মাচ। আমার সত্যি বলতে মনেই ছিলো না যে আমার বার্থডে। আমি একদম ভুলেই গিয়েছিলাম।
অর্নীল;; সমস্যা নেই আমি আছি তো মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। এবার এসো।
অর্নীল সিয়াকে নিয়ে গিয়ে টেবিলের পাশে দাড় করি দেয়। তারপর একটা বড়ো সড়ো চকোলেট কেক আনে। সিয়া কেক প্রথমে কেটে অর্নীল কে খাইয়ে দেয় তারপর নিজে।
অর্নীল;; আচ্ছা আমার একটা গিফট চাই।
সিয়া;; বার্থডে আমার তো গিফট আমার চাই।
অর্নীল;; I wanna kiss..
সিয়া;; হুয়াট..
অর্নীল;; ইয়েস।
সিয়া;; না মানে বলছিলাম কি যে আজ না ওকে। আজ না অর্নীল প্লিজ।
সিয়া না না করলেও অর্নীল সিয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই লাগে। অর্নীল সিয়ার কোমড় নিজের দুই হাত দিয়ে পেচিয়ে ধরে। সিয়া ভয়ে দুই চোখ খিচে বন্ধ করে নিলে অর্নীল টুপ করে সিয়ার দুই গালে চুমু দিয়ে দেয়। সিয়া চোখ মেলে তাকায়। অর্নীল সিয়ার কপালে চুমু দিয়ে দেয়। চুমুরত অবস্থায় কয়েক মিনিট ধরে রাখে। সিয়া মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে রাখে। আচ্ছা সব প্রেমিকরা বা প্রিয়জন তার প্রিয়তমার কপালে চুমু দিলে কি এমন অনুভূতি হয়। ভালোবাসার গভীরতা মাপা যায়? এত্তো ভালো লাগা কাজ করে। কপালে চুমু দেওয়া বুঝি ভালোবাসার বিশেষ বহিঃপ্রকাশ। অর্নীল সিয়াকে কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেয়।
অর্নীল;; আসলে যতো টা লুচু তুমি আমাকে মনে করো ঠিক ততটা লুচু আমি নই।
সিয়া হেসে দেয়।
আর ওদিকে সিয়ার মা পানি খাওয়ার জন্য হলরুমে আসে। তারপর বড়ো দেওয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে বারো টা চল্লিশ বাজছে। হঠৎ দোলার মনে পরে যে আজ সিয়ার জন্মদিন। দোলা কপালে হাত দিয়ে দেয়। হায়, মেয়ের জন্মদিন আর তার কিনা মনে নেই। দোলা আর দেরি না করে সোজা সিয়ার রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
।
।
।
।
চলবে~~
#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ১০
অর্নীল আর সিয়া পাশাপাশি বসে আছে। তাদের সামনেই ছোট্ট একটা নদীর মতো। যাতে পানির জোয়ার বয়ে চলেছে আপন গতিতে। মৃদু হাওয়া রয়েছে, যা গায়ে এসে লাগছে। অর্নীলের পাশেই সিয়া বসে আছে। তার মাথা টা অর্নীলের কাধে রাখা আর হাত টা অর্নীলের দুই হাতের ভাজে। দুজনের নজরই সামনে স্থির। এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। মন চাইছে না যে এখান থেকে চলে যাক। মন বলছে সময় টা যদি এখানেই থেমে যেতো তাহলে কতোই না ভালো হতো। কিন্তু সময় প্রবাহমান। তারা বসে ছিলো হঠাৎ অর্নীল বলে ওঠে….
অর্নীল;; সিয়া, কখনো ছেড়ে যাবে না তো?
সিয়া মাথা তুলে অর্নীলের দিকে তাকায়। অর্নীলের হঠাৎ এমন করা প্রশ্নে সিয়ার কিছু বুঝে ধরে না।
অর্নীল;; বলো না!!
সিয়া;; হঠাৎ এই কথা কেনো?
অর্নীল;; এমনি, মনের মাঝে এলো আর বলে ফেললাম। তুমি বলো না?
সিয়া;; কখনোই না। যদি ছেড়েই যাওয়ার হতো তাহলে আর আপনার হাত ধরতাম না। যেহেতু একবার ধরেছি তো সেখানে ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
অর্নীল;; সবসময় আমার পাশে থাকবে? সব রকম সিচুয়েশনে?
সিয়া;; সবসময়।
অর্নীল সিয়ার কপালে চুমু একে দেয়। সিয়া কিছুটা অবাক হয়েই অর্নীলের দিকে তাকায়। মাঝে মাঝে যে কি বলে বসে তা নিজেই জানে না।
অর্নীল হুট করেই সিয়াকে উলটো ঘুড়িয়ে এক হেচকা টান দেয় যার ফলে সে গিয়ে সোজা অর্নীলের কোলে গিয়ে পরে। অর্নীল তার দু হাত দিয়ে সিয়াকে আবদ্ধ করে জড়িয়ে ধরে। সিয়াও কিছু না বলে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আধোশোয়া হয়ে থাকে। আর অর্নীলের এক একটা আজগুবি কথা হাসছে।
।
।
অন্যদিকে দোলা তার ভারি ভারি কদম ফেলে সিয়ার রুমের দিয়ে এগোচ্ছে৷ উদ্দেশ্য সিয়াকে বার্থডে উইশ করা। যেতে যেতে একটা সময় পৌঁছেই গেলো সিয়ার রুমে, গিয়ে আস্তে করে দরজা খানিক মেলে দেয়। তাকিয়ে দেখে সিয়া একদম মাথা অব্দি চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে। আসলে সিয়া বলতে সিয়ার নামে চাদরে প্যাচিয়ে থাকা সেই বালিশ গুলো। আর দোলা জানে যে সিয়ার এই মাথা অব্দি চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর স্বভাব টা আছে। দোলা ভাবে সিয়া একদম গভীর ঘুমে আছে। তাই আর ডাক দিয়ে তার কাচা ঘুম টা নষ্ট না করে দোলা এসে পরে,, এই ভেবে যে কাল সকালে উইশ করা যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ দোলা এসে নিজের রুমে চলে যায়। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে দোলার চলে যাওয়ার সাথে সাথেই একটা বালিশ গড়িয়ে নিচে পরে যায়। ভাগ্যিস দোলার চোখে সেটা পরে নি তা না হলে ভান্ডা একদম ফুটে যেতো।
বেশ সময় চলে যায়। আর তখন গিয়ে সিয়ার মনে পরে যে রাত বেশ ভারি হয়ে গিয়েছে,, আর তার মা যদি কোন কিছু ভেবে বায় এনি চান্স তার রুমে যায় তাহলে তারপরে যে কি হবে তা আর ভাবতে পারছে না। সিয়া এক ঝটকায় অর্নীলের কাছে থেকে সরে আসে।
অর্নীল;; সিয়া আর ইউ ওকে?
সিয়া;; না, অর্নীল প্রায় দুটো বাজতে চললো আর আমি এখনো বাড়ির বাইরে। আমকে বাসায় যেতে হবে।
অর্নীল;; ভীতুর ডিম, আচ্ছা চলো।
সিয়া;; হ্যাঁ হয়েছে আমি ভীতু। এবার কি আমাকে বাড়ি দিয়ে আসবেন আপনি?
অর্নীল;; আচ্ছা চলো।
সিয়া অর্নীলের আগে আগেই পা ফেলে দ্রুত এসে পরলো। এসে সোজা গাড়িতে উঠে পরে। অর্নীলও গিয়ে গাড়িতে উঠে সাই করে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। প্রায় আধা ঘন্টা পর সিয়ার বাসায় সামনে গাড়ি এসে থামে। গাড়ি থামতেই সিয়া দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে চলে যেতে ধরতে অর্নীল খপ করে তার হাত ধরে ফেলে৷ সিয়াকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে গালে একটা চুমু দিয়ে দেয়।
অর্নীল;; এবার যাও।
সিয়া মুচকি হেসে গাড়ি থেকে নেমে চলে আসে। বাড়ির মেইন দরজার কাছে গিয়ে সিয়া হাত নাড়িয়ে বিদায় জানায়। তারপর অর্নীল এসে পরে। এবার সিয়া খুব সাবধানে বাড়ির দরজা খুলে ভেতরে যায়। তারপর আবার লক করে এসে পরে। আশে পাশে ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখে নেয়। নাহ, কেউই নেই। গুটিগুটি পায়ে সিড়ি বেয়ে ওপরে রুমে যেতে ধরে কিন্তু একটা মোটা গলার আওয়াজে থেমে পরে সিয়া। শুকনো কিছু ঢোক গিলে। আস্তে আস্তে ঘুরে নিজের পেছনে তাকায়। দেখে শিউলি দাঁড়িয়ে আছে কপাল কুচকে। শিউলি কিছুটা সিয়ার কাছে এসে বলে…..
শিউলি;; কিরে কি করিস এখানে? এতো রাতে নিচে কেনো?
সিয়া;; না মানে ওই পানি, হ্য হ্যাঁ পানি খেতে এসেছিলাম আর কি। আমার রুমে ওয়াটার পটে পানি শেষ তো তাই খেয়ে এসেছিলাম।
শিউলি;; ভালো, কিন্তু পায়ে বাইরের জুতো কেনো?
শিউলির কথায় সিয়ার ভেতর টা যেনো কাচের মতো ভেঙে গেলো। এখন কি থেকে কি বলবে আর ভেবে পাচ্ছে না। কি দিয়ে সামলাবে ব্যাপার টা তাই ভাবছিলো তার মাঝেই আবার শিউলির ডাক।
শিউলি;; ওইই ছেরি!
সিয়া;; আরে ধুরু বাইরে না কুকুর গুলো অনেক ঘেউঘেউ করছিলো তাই একবার দেখে আসলাম।
শিউলি;; কি কস?
সিয়া;; 🤦♀️,, আম আ আমি যাই। আমি রুমে যাই। ঘুমাসতে হবে আমার।
শিউলি কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সিয়া এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে গিয়েই দেখে একটা বালিশ নিচে পরে আছে। সেটা তুলতে গিয়ে সিয়ার কি হাসি। পুরা গোজামিল! কি কি করে যে বাসা থেকে বের হয়েছে। সিয়ার এখন সত্যি সত্যি খুব ঘুম পাচ্ছে। অর্নীল তাকে একদম ঘুম থেকে তুলেই নিয়ে গেছে। সিয়া এবার উপুড় হয়ে শুয়ে পরে। শুতে দেরি কিন্তু ঘুমাতে দেরি না।
।
।
পরেরদিন সকালে সিয়ার ঘুম ভাঙে তার মায়ের কন্ঠে…..
দোলা;; হ্যাপি বার্থডে সোনা।
সিয়া;; 😊,, তোমার মনে ছিলো?
দোলা;; ওমা তো মনে থাকবে না। এখন উঠ উঠ উঠ
সিয়া;; গিফট কই?
দোলা;; কি চাস?
সিয়া;; তুমি কি দিবে বলো?
দোলা;; বিয়ে দিয়ে দেই!
সিয়া;; কিহ?
দোলা;; মজা করছি 😆
সিয়া;; আমি এইসব বিয়ে টিয়ে তে নেই। মানে এখনই কেনো?
দোলা;; আরে এখনই কে বিয়ে দিচ্ছে তোকে।
সিয়া;; হুমম, আজ ক্লাস আছে। কলেজে যাবো।
দোলা;; আচ্ছা তাহলে রেডি হ।
দোলা চলে যায় আর সিয়া অর্নীল কে ফোন দেয়। প্রথমে বেজে কেটে যায় কিন্তু দ্বিতীয় বার ধরে।
সিয়া;; হ্যালো!
অর্নীল;; হুমম।
সিয়া;; কোথায় আপনি?
অর্নীল;; অফিসে আছি।
সিয়া;; সকাল বাজে ৪ঃ৩০, এখন অফিসে? মানে এতো জলদি?
অর্নীল;; ওইতো একটু কাজ ছিলো তাই। তুমি উঠেছ?
সিয়া;; হ্যাঁ, কলেজ যাবো।
অর্নীল;; আচ্ছা যাও তাহলে।
এই বলেই অর্নীল ফোন কেটে দেয়। সিয়া কিছুটা অবাকই হয়। আর কিছুই বললো না ফোন কেটেই দিলো। যাই হোক, দিয়া উঠে চলে যায়। তারপর ঘন্টা খানিক পর কলেজে চলে যায়। কলেজে যেতেই সোয়াদ, সজিব, শান্তি আর অনু সিয়াকে এক প্রকার আকড়ে ধরে। সবাই একসাথে হ্যাপি বার্থডে উইশ করে। আর সিয়ার ওপরে কিছুটা পার্টি স্প্রে দিয়ে দেয়। সিয়া তো সেই খুশি।
সিয়া;; হারামি গুলা তোদের মনে ছিলো!
অনু;; তো থাকবো না। তুমি মিয়া ট্রুট দাও। তাও দুইটা।
সিয়া;; দুইটা?
শান্তু;; এক বার্থডে এর জন্য আরেক প্রেম করার জন্য।
সিয়া;; হায়রে।
সোয়াদ;; এই আজকে কিন্তু প্রফেসরের ক্লাস আছে।
সজিব;; ওই যে ওই টাক্কু? আল্লাহ, আমি তো কোন প্রিপারেশন কিছুই নেই নাই রে।
সিয়া;; ওই বুইড়া ধাম। আরে বাদ দে তো৷ কি করবো আর বেশি হলে ক্লাস থেকে বের করে দিবে।
দিবো নি, ওর ক্লাস করার থেকে বের হয়ে যাওয়াই ভালো।
সবাই হেসে দেয়। তরপর একসাথে ক্লাস চলে যায়। দিয়া অনু শান্তি এক ব্রেঞ্চেই বসে পরে৷ তার কিছু সময় পর প্রফেসর আসে। বাপরে বাপ কি গম্ভীর মুখ। যাই হোক এসে কোন কথা না বলে হাতে থাকা পেপার গুলো ডেস্কের ওপর রেখে চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পরেই বোর্ডে লিখা শুরু করে।
অনু;; ওই ওই
সিয়া;; কিতা?
শান্তি;; কিরে স্যারের লিখা কিছু বুঝোস?
সিয়া;; কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং।
অনু;; রাগি রাগি লাগতাছে আইজকা বুইড়া রে।
সিয়া;; হেহেহেহে, নিশ্চিত বউ এর সাথে মহাভারত হইছে।
শান্তি-অনু;; 😆😆
ক্লাসে ফিসফিস আওয়াজ শুনে প্রফেসর দেয় সবাইকে এক ধমক। কি আর সরাই মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে লিখা শুরু করে। তবে ক্লাসের টাইম বেশি একটা যেতে না যেতেই অর্নীল এসে সোজা সিয়ার ক্লাস রুমে ঢুকে পরে। অর্নীল কে দেখে ক্লাসের সবাই দাঁড়িয়ে পরে। প্রফেসর নিজেও থেমে যায় অর্নীল কে দেখে। কিন্তু এদিকে সিয়া এক মনে লিখেই যাচ্ছে। তাকে দেখে অনু সিয়াকে কুনি দিয়ে ধাক্কা দেয়। সিয়া সামনে তাকায় দেখে অর্নীল। অর্নীল কে দেখে সিয়া দাঁড়িয়ে পরে। সাথে অবাকও হয়। সিয়া খেয়াল করে দেখলো শান্তি আর অনু কে বাদ দিয়ে ক্লাসের বাকি সব গুলো মেয়েই তাকিয়ে আছে অর্নীলের দিকে। যা দেখে সিয়ার মাথায় ধুপ করে আগুন জ্বলে উঠলো। অর্নীলকে দেখেই প্রফেসর এগিয়ে যায়।
প্রফেসর;; আরে অর্নীল স্যার যে আসুন আসুন। আপনি এখানে? আপনি আসবেন তা আগে বলতেন আমরা সব এরেঞ্জমেন্ট করে রাখতান।
অর্নীল;; না না ইট”স ওকে। আমি এখানে একজন কে নিতে এসেছি আসলে।
প্রফেসর;; জ্বি কাকে?
অর্নীল আর কিছু না বলেই সিয়ার সামনে গিয়ে দুই হাত ভাজ করে দাঁড়ায়। সিয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের দুই ভ্রু খানিক নাচায়।
অর্নীল;; সিয়াজান চলো।
এটা বলেই অর্নীল সিয়ার হাতে ধরে নিয়ে আসে। সিয়া শুধু কোন রকমে নিজের ব্যাগ টা কাধে নেয় তারপরেই এসে পরে। সবাই অবাক হয়ে এক মনে তাকিয়ে ছিলো তাদের দিকে। অর্নীল তা টের পেয়ে আবার তার পেছন ঘুড়ে তাকায়৷ সবার উদ্দেশ্যে কিছুটা জোর চিল্লিয়ে বলে ওঠে….
অর্নীল;; হুয়াট? যার যার কাজ করুন সবাই।
অর্নীলের এই বলে চলে যেতেই সবাই দ্রুত নিজের সীটে বসে পরে। তারপর আবার ক্লাসে মনোযোগ দেয়। অর্নীল সিয়াকে নিয়ে বাইরে এসে পরে।
সিয়া;; অর্নীল হয়েছি কি? আপনি এভাবে নিয়ে এলেন কেনো?
অর্নীল;; ক্লাস করতে হবে না। আমাকে টাইম দাও তাহলেই হবে।
সিয়া এবার দাঁড়িয়ে পরে। অর্নীল ঘুরে তার দিকে তাকায়।
অর্নীল;; কি? চলো।
সিয়া;; এইটা কোন কথা। তাই বলে আপনি আমাকে ক্লাস থেকে সোজা নিয়ে এসে পরবেন।
অর্নীল;; তা না হলে কি তুমি নিজে উড়ে উড়ে আসতে!
সিয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অর্নীল তাকে নিয়ে এসে পরে। কি আর এখন অর্নীল শুধু সিয়াকে নিয়ে ঘুরবে। তবে ওদিকে দোলা বাইরে কাজ করছিলো তখনই তার নজর যায় বাইরে থাকা আউট ক্যামেরার দিকে। অর্থাৎ বাড়িতে কখন কে যাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে, সব দেখা যাবে। দোলা কিছু একটা মনে করে সেই ক্যামেরা চেক করতে থাকে। দোলা সব রেকর্ড চেক করে দেখে। তবে গতরাতের ফুটেজ চেক করতেই দোলার কপালের চিন্তার ভাজ পরে। রাত বারো টার খানিক পরে সিয়া বাইরে গিয়েছিলো। আর যখন আসে তখন বাজে ১ঃ৪৭ এর মতো। মানে এই সময় টুকু সিয়া বাইরে ছিলো। তবে যে দোলা সিয়ার রুমে গিয়ে তাকে দেখলো সে কে ছিলো। নাকি চাদরের নিচে কোন কিছু দেওয়া ছিলো। আর সিয়া বাইরে এতোক্ষন কার সাথে ছিলো? কোথায় ছিলো? এই চিন্তা-ভাবনা গুলো যেনো দোলার মাথায় এসে ভর করে। দোলা ঠিক করে যে আজ সবকিছু সোজা সাপটা সিয়ার মুখ থেকেই শুনবে। দোলা ভেতরে চলে যায়।
কয়েক ঘন্টা পর যখন সিয়া বাসায় আসে তখন হলরুমে যেতেই দেখে টেবিলের ওপর একটা পিংক কালারের গিফট র্যাপার মুড়ানো। যা দেখে সিয়া খুশিতে গদগদ হয়ে যায়। সিয়া দ্রুত গিয়ে সেটা খুলতে ব্যাস্ত হয়ে পরে আর খুলেই দেখে সিয়ার ছোট বেলার সব ছবি গুলো এক ফ্রেমে বন্দি করা। অনেক সুন্দর একটা ফ্রেমে। যাদের মাঝে সিয়া আর তার মায়ের একটা ছবি। অনেক কিউট। এটা দেখে কেনো জানি সিয়ার চোখে টা হালকা ভিজে ওঠে। তখনই দোলা আসে।
সিয়া;; থ্যাংক ইউ মা।
দোলা;; হুমমম। আচ্ছা শোন না। সিয়া তোকে কিছু জিজ্ঞেস করার আছে আমার। প্লিজ সব সত্যি সত্যি বলিস।
সিয়া;; কি যে বলো না মা। অবশ্যই বলবো। তুমি জিজ্ঞেস তো করো।
দোলা সিয়াকে নিজের পাশে বসে খুব শান্ত ভাবেই জিজ্ঞেস করে।
দোলা;; সিয়া মা, তোর জীবনে কি কেউ আছে? মানে তুই কি কাউকে ভালোবাসিস?
সিয়া;; হ্যাঁ 🙂
দোলা;; কাকে?
সিয়া;; অর্নীল কে।
সিয়া এবার দোলার চোখে নিজের চোখ রাখে। যা সত্যি তাই বলেছে সে, এখন জানে না কি হবে।
।
।
।
।
চলবে~~