প্রেম এসেছিলো নীরবে -Part 27 & The End

0
696

#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে (27+বোনাস+শেষ পর্ব )
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
তিনদিনে সুন্দরভাবে বেশ শান্তিপূর্ণভাবেই আরাফ আর হিয়ার বিয়ে সম্পন্ন হলো।আজ সবাই যার যার নিজ ঠিকানায় চলে যাবে।হিয়া হাউমাউ করে কান্না করছে।কতোক্ষন মাকে ধরছে তো এই বাবাকে ধরছে।হেমন্তকে ধরে তো সেই চিৎকার।নিজের কাকা কাকির কাছে গিয়েও কান্না করেছে।
প্রাহির কাছে গিয়ে ওর কানে কানে ফিসফিস করে বলেছিলো,’ আমার ভাইটাকে দেখে রেখো প্লিজ।’ প্রাহি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।প্রাহির চোখ দিয়েও জল পরছে।
সবার শেষে অর্থ’র কাছে গেলো।অর্থ ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।কলিজার বোনটা চলে যাবে।আর কখনো কোন বায়না নিয়ে আসবে ওর কাছে।মুখ ফুলিয়ে অভিমান করবে না ওর কাছে।অর্থ’র কলিজাটা যেন কেউ টেনে হিচঁরে ছিরে ফেলছে।ছেলেমানুষ হয়ে এই একসমস্যা সহজে সবার সামনে কাঁদতে পারেনা।তাহলে যে বাহিরের মানুষদের কাছে সে দূর্বল প্রমান হবে।ছেলেদের তো হতে হয় শক্ত মনের। যারা কঠিন পরিস্থিতিতেও কাঁদে না।অর্থ হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম কন্ঠে বলে,’ কাঁদেনা তো।ভাইয়া আছি তো।আবার কালকেই তো চলে আসবি আমার কাছে।কাঁদেনা।’
হিয়া অর্থকে ঝাপ্টে ধরে কেঁদে দিয়ে বলে,’ আমি যাবো না ভাই।আমি যাবো না।’
অর্থ হিয়াকে ধরে নিয়েই আরাফের সামনে এসে দাড়ালো।তারপর আরাফের হাতে হিয়ার হাতটা তুলে দিলো।আরাফ করুন চোখে তাকিয়ে আছে হিয়ার দিকে।মেয়েটার কান্না একদম সহ্য হচ্ছে না ওর।একদম না।অর্থ ভেজা কন্ঠে আরাফকে বলে,’ আমার বোনটাকে দেখে রাখিস প্লিজ।বড় আদরের তো।কখনো কষ্ট দিস না।তোর কাছে এই ভাইয়ের এক করুন অনুরোধ।’
আরাফ একসাইড থেকে জড়িয়ে ধরলো অর্থকে।বললো,’ কেন কষ্ট পাচ্ছিস।তোর বোনের কান্না থামা প্লিজ।ওকে আমি কতোটা ভালোবাসি সেটা তো জানিস তুই।ওর কান্নায় আমার কলিজা ছিরে যাচ্ছে।’
অর্থ শুকনো ঢোক গিললো।নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়ে আরাফকে কিছু একটা ইশারা করলো।আরাফ ইশারা পেয়েই।হিয়াকে টেনে অর্থ’র কাছ থেকে ছাড়িয়ে কোলে তুলে নিলো।তারপর সাবধানে গাড়িতে উঠিয়ে দিলো।দ্রুত দরজা আটকে গাড়ি স্টার্ট করতে বললো।হিয়া জানালা দিয়ে চেচাচ্ছে, ‘ ভাইয়া! আমি যাবো না ভাইয়া।’
দেখতে দেখতেই চলে গেলো গাড়িটি সুদূরে।ওরাও রওনা হবে।হেমন্ত আর অর্থ নিজের মা, চাচিকে সামলালো।তারপর তাদের গাড়িতে উঠিয়ে দিলো।হেমন্ত আর ইশিও তাদের সাথে চলে গেলো।আস্তে আস্তে সব মেহমানও চলে গেলো।শুধু রইলো প্রাহি আর অর্থ।অর্থ প্রাহিকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে তারাও রওনা হলো।পথে একটা কথাও হলো না।গাড়ি যখন ঢাকা এসে পরলো।অর্থ একটা শুনশান খোলা মাঠে গাড়ি থামালো।তারপর হঠাৎ নিজে গাড়ি থেকে নেমে প্রাহিকে নামালো।পরে দ্রুত পায়ে গাড়ির পিছনের দরজা খুলে প্রাহিকে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজেও ঢুকলো।প্রাহিকে একেবারে গাড়ির দরজার সাথে চেপে বসিয়ে দিয়ে।অর্থ প্রাহির কোলে মাথা রাখলো।
আকস্মিক কি হলো প্রাহির সবকিছু মাথার উপর দিয়ে গেলো।প্রাহি অর্থ’র দিকে তাকিয়ে দেখে ওর শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে।তবে কি লোকটা কাঁদছে?প্রাহি আৎকে উঠে বলে,’ কি হয়েছে আপনার?দেখি সোজা হন তো।’
অর্থ নড়লো না প্রাহির কোমড় আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।ধীর কন্ঠে বলে,’ ডোন্ট মুভ প্রাহি।আমি কিছুক্ষন তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমোতে চাই প্লিজ।’
প্রাহি আর কিছুই বললো না।থাক কিছু সময় একান্ত তাদের মধ্যেকার।যেখানে থাকবেনা কেউ।শুধু সে আর অর্থ।প্রাহি মনে মনে বললো,, ‘ হ্যা আল্লাহ্। আমাকে উনাকে সারাজীবন এইভাবেই রেখো।আমরা যেন কোনদিন আলাদা না হই।’
কেটে গেলো কয়েক মুহূর্ত কয়েক ঘন্টা।অর্থ ঘুমিয়ে আছে প্রাহির কোলে ঠিক বাচ্চাদের মতো করে।প্রাহির পা ঝিমঝিম করছে তাও ভালো লাগছে।এইযে লোকটা তার সাথে আছে তার ভালো লাগছে।প্রাহি আলতো হাতে অর্থ’র চুলগুলো নড়াচড়া করছে।কি সুন্দর চুলগুলো অর্থ’র।
প্রায় ঘন্টা খানিক পর উঠলো অর্থ।উঠেই প্রাহির কপালে চুমু খেলো। প্রাহি লাজুক হাসলো।অর্থ ঘড়ির টাইম দেখে প্রাহিকে ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসলো।তারপর রওনা হলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।
—————
পরেরদিন সকালে,,
আজ হিয়া আর আরাফের বউভাত।সবাই রেডি হচ্ছে কমিউনিটি সেন্টারে যাওয়ার জন্যে।প্রাহি সুন্দর একটা পুরো লাল টকটকে রঙের গাউন পরেছে।রেডি হয়ে নিচে নামতেই অর্থ বাঁকা হেসে ওকে চোখ টিপ মেরে দিলো।প্রাহি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো।অর্থ প্রাহিকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।পিছনের সিটে হেমন্ত আর ইশি বসেছে।হেমন্ত বারবার আঁড়চোখে ইশির দিকে তাকাচ্ছে।ইশি মুখটা কাচুমাচু করে বসে আছে।হেমন্ত ওর পাশে বসাতে ওর যেন কেমন লাগছে।আবার ভালোও লাগছে।
অর্থ ড্রাইভিংয়ের ফাকে ফাকে প্রাহির দিকে তাকাচ্ছে।মেয়েটাকে লাল গাউনে যেন একটা ফুটন্ত গোলাপ মনে হচ্ছে।
চোখ সরানো দায় হয়ে পরেছে।
প্রাহি তো লজ্জায় মাথাই তুলতে পারছে না।হেমন্ত আর ইশির সামনে লোকটা কি শুরু করেছে।আবার হাতটাও ধরে রেখেছে।গাড়ির গিয়ারের উপর রেখে তার উপর নিজের হাত রাখা।ইসস, অসম্ভব ভালো লাগছে প্রাহির।কিন্তু আবার লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে।
সেন্টারের সামনে গাড়ি থামতেই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায় ওরা।তারপর সেন্টারের মাজে প্রবেশ করে। রায়হানা,হিয়াজ,হেনা, হিয়ান্ত আর ওদের দাদা অনেক আগেই এসেছে সেন্টারে।শুধু ওদেরই আসতে একটু দেরি হয়েছে।
অর্থ আর হেমন্তকে দেখেই হিয়া প্রায় একপ্রকার দৌড়ে গিয়েই ওদের জড়িয়ে ধরে।তারপর কান্না ভেজা গলায় বলে, ‘ আমার কথা বুজি তোমাদের মনে পড়ে না?এতো দেরি করলে কেন?’
অর্থ আর হেমন্ত’র চোখজোড়াও ছলছল করছে।অর্থ হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,’ এইতো এসে গেছি।আজ আমার বোনটাকে নিয়ে যাবো সাথে করে।’
হেমন্ত হিয়ার মন ভালো করার জন্য দুষ্টুমি করে বললো,’ ইসস, কালকের দিনটা অনেক ভালো ছিলো।শাকচুন্নি বাড়িতে ছিলো না।আজ আবার বাড়িতে শাকচুন্নির তাণ্ডব শুরু হবে।’
হিয়া মুখ ফুলিয়ে কাঁদো গলায় বললো,’ ভাইয়া!!!! এই হেমন্ত ভাইয়াকে কিছু বলবে?’
সবাই হেসে দিলো ওদের দুষ্টুমি দেখে।হিয়া গিয়ে প্রাহি আর ইশিকেও জড়িয়ে ধরে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলো।আরাফও এসে ওদের সাথে হাসি ঠাট্টায় যোগ দিলো।
প্রাহি এর মাজে পানির তৃষ্ণা লাগায় ও সবাইকে বলে একটু পানি খেতে যায়।যাওয়ার পথে একজন ওয়েটারের সাথে ধাক্কা লেগে ওর গায়ে জুস পরে যায়।ওয়েটারটা দ্রুত বললো, ‘ সরি সরি। সরি ম্যাম।আমি খেয়াল করতে পারিনি।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করুন।’
প্রাহি ওর গাউনের জুসগুলো ঝেরে সোজা হয়ে বলে,’ ইট্স ওকে ভাইয়া।আমাকে একটু ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিন। এতেই হবে।’
‘ সিয়র ম্যাম।চলুন।’
প্রাহি ওয়েটারের সাথে ওয়াশরুমের সামনে আসলে ওয়েটারুটাকে প্রাহি চলে যেতে বলে।তারপর ও ওয়াশরুমে ডুকে পানি দিয়ে নিজের জামা ক্লিন করতে লাগলো।হঠাৎ ওয়াশরুমের লাইট ওফ হয়ে গেলো।প্রাহি আচমকা এমন হওয়ায় ভয় পেয়ে যায়।ঘাবড়ানো গলায় বলে, ‘ এক্সকিউজ মি?প্লিজ?কেউ আছেন?এক্সকিউজ মি?’
প্রাহি দরজার কাছে গিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করলেই দেখে দরজা খুলছে না।প্রাহি অনবরত ডাকতে থাকে। কিন্তু কেউ শুনে না কারন বাহিরে লাউডে গান বাজছে।প্রাহির চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে।প্রাহি পিছাতে গিয়েই কারো সাথে ধাক্কা খায়।আৎকে উঠে পিছনে ঘুরতেই।ব্যাক্তিটি ওর মুখে কিছু একটা চেপে ধরে।প্রাহির চোখ ঝাপ্সা হয়ে আসছে।আস্তে আস্তে চোখ বুজে আসছে।শুধু চোখের সামনে ওর অর্থ’র চেহারাটাই ভেসে উঠছে।প্রাহি চোখ বুজে বিরবির করতে লাগে, ‘ অর্থ ভাইয়া।কোথায় আপনি।প্লিজ জলদি আসুন।’
আস্তে আস্তে চোখ বুজে ফেললো প্রাহি।আর ওই ব্যাক্তিটি বিশ্রি ভাবে হাসতে লাগলো। হাসি থামিয়ে প্রাহিকে কাঁধে তুলে নিয়ে বলে, ‘ তোকে ওই অর্থের সাথে এতো সহজে দিয়ে দিবো কিভাবে?যেখানে তোর দিকে আমার সেই কবে থেকেই।ভাবছিলাম তোকে এই একটা বছর কিছুই করবো না।কিন্তু তোর প্রতি অর্থর ভালোবাসা দেখে সহ্য হচ্ছিলো না।আবার তুইও ওকে ভালোবাসিস।দ্যাট্স নট ফ্যায়ের।আমি একরাত হলেও তোকে চাই।চাই মানে চাই।তুই নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলি। এখন থেকে একটা বছর তুই আমার কাছে থাকবি।পাখিকে খাচায় এমন ভাবে আটকাবো যাতে ও কখনই উড়াল দিতে না পারি।যদি বেশি ফর ফর করে ওর ডানাটাই আমি ভেঙ্গে দিবো।’
——————-
অনেকক্ষন যাবত প্রাহিকে দেখছে না অর্থ।নিজে একা একাই এদিক ওদিক খুজে বেরাচ্ছে।তাও পাচ্ছে না খুজে।অবশেষে একা আর না পেরে হেমন্ত আর আরাফকে জানালো কথাটা।আস্তে আস্তে ওদের পুরো পরিবার জানলো যে প্রাহিকে পাওয়া যাচ্ছে না।সবাই ভয় পেয়ে যায়।পুরো সেন্টার তন্নতন্ন করে খুজতে থাকে।কিন্তু না প্রাহি নেই কোথাও নেই।অর্থরতো পাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম।ওর প্রাহি হঠাৎ কোথায় গেলো।কি হলো ওর প্রাহির।এখন কোথায় খুজবে সে।চাইলেও নিজেকে স্থির রাখতে পারলো না অর্থ।চিৎকার করে কান্না ভেজা কন্ঠে বলে, ‘ প্রাহি, কোথায় গেলে তুমি?আর কোথায় খুজবো তোমাকে।প্লিজ প্রাহি।কোথায় তুমি একবার বলো প্লিজ।আর কোথায় খুজবো।কেন বার বার তোমার সাথেই এমনটা হয়।’
অর্থ কিছু একটা ভেবে চোয়াল শক্ত করে হনহন করে হেটে গিয়ে ইলফার গলা চেপে ধরলো।হুংকার ছুরে বলে,’ কোথায় আমার প্রাহি?কি করেছিস ওর সাথে। বল নাহলে আজ তোকে মেরে ফেলবো।’
ইলফার চোখ উলটে আসছে।শ্বাস নিতে পারছে না।হেমন্ত আর আরাফ গিয়ে ওকে ছাড়িয়ে আনে।হেমন্ত বলে,’ কি করছিস ভাই।ও তো মরে যাবে।’
অর্থ রেগে আগুন হয়ে দাঁত খিচিয়ে বলে, ‘ মরে যাক।ওই আমার প্রাহিকে কিছু করেছে।ওকে বল বলে দিতে আমার প্রাহিকে ফিরত দিতে।’
আরাফ তেড়ে গিয়ে ইলফাকে ঠাস করে একটা চর বসালো।তারপর ওর চুলের মুঠি ধরে বলে,’ ভালোই ভালোই বলে দে প্রাহি কোথায়?নাহলে তোকে এক্ষুনি স্যুট করে দিবো।ভুলে যাবো তুই আমার বোন।’
ইলফা কাঁদছে।সাথে কাঁদছে ওর মা।ইলফা কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘ বিশ্বাস করো ভাইয়া।আমি কিছু করেনি প্রাহিকে।সেদিনের পর থেকে তো আমি ওর সামনেও যায়নি।ওর ক্ষতি করার কথা সেই কবেই মাথা থেকে ঝেরে ফেলেছি।’
আরাফ আবারও একটা থাপ্পর মারলো।ওর গাল চেপে ধরে বলে, ‘ সত্যি করে বল।প্রাহি কোথায়?’
ইলফা এইবার চিৎকার করে বলে, ‘ আমি কিছু করনি।যা করেছে অন্য একজন করেছে।আমি সত্যি প্রাহির ক্ষতি করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আমাকে একজন ফোন করে থ্রেড দিলো যে প্রাহির কিছু করলে নাকি আমাকে মেরে ফেলবে সেই থেকেই আমি প্রাহিকে ক্ষতি করার চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলেছি।কারন আমার নিজের জানের মায়া আছে।’
অর্থ রাগি কন্ঠে বলে, ‘ কে কি বলেছে।জলদি বল?কে তোকে থ্রেড দিয়েছে?’
ইলফা একবাক্যে বলে দিলো, ‘ ব্লাকহান্টার নামের একজন ফোন করে থ্রেড দিয়েছিলো।’
হেমন্ত, আরাফ আর অর্থ একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করলো।আরাফ ইলফাকে প্রায় একপ্রকার ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে।ওরা তিনজন হন্তদন্ত হয়ে সেন্টার থেকে বেড়িয়ে গেলো।এদিকে বাড়ির সবাই চিন্তায় অস্থির হয়ে দাড়িয়ে রইলো।তবে একজনের মুখে শুধু শয়তানি হাসি।ও ফিসফিস করে বলে৷,’ যতো খোজার খুজে নে।তোরা পাবিনা ওকে কোনদিনই।’
#চলবে________
কেমন হয়েছে জানাবেন।অনেক বড় করে দিলাম।প্লিজ সবাই রেস্পন্স করবেন।গল্পটা জলদি শেষ হবে।ভালো ভালো মন্তব্য আশা করছি।আপনারা শর্তে হেরেছেন। তাও আমি দিলাম।
#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(বোনাস পর্ব)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
‘ কোথায় আর খুজবো ওকে আমি?কিভাবে খুজে পাবো?না জানি আমার প্রাহিকে ওরা কি অবস্থায় রেখেছে।আমার মাথা কাজ করছে না।’ ধরা গলায় কথাগুলো বললো অর্থ।
হেমন্ত নিজেরও চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।যেতোটুকু পেরেছে প্রায় একপ্রকার তন্নতন্ন করে খুজেছে প্রাহিকে তারা কিন্তু পায়নি। হেমন্ত নিজেকে শান্ত করলো।এই মুহূর্তে ওকে সবটা সামলাতে হবে। নাহলে অর্থ আরো ভেঙে পরবে।হেমন্ত ধীর কন্ঠে বলে, ‘ ভাই চিন্তা করিস না।আরাফ ভাইয়া গিয়েছে তো পুলিশ ফোর্স নিয়ে।আমরা আবারও বের হবো খুজতে।চিন্তা করো না।’
অর্থ চোখ বুজে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে।তারপর উঠে গিয়ে ওয়াশরুমে মাথায় ইচ্ছামতো পানি ঢাললো।মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলো অর্থ।ওকে আবারও প্রাহিকে খুজতে বের হতে হবে।তার আগে এই মাথা ব্যাথা কমাতে হবে।অর্থ ওর ড্র‍য়ার থেকে মেডিসিন বের করতে নিলেই।কিছু একটা ওর চোখে পরে।তা দেখেই অর্থ’র চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করে উঠে।ওর তো মনেই ছিলো না এটার কথা।দ্রুত পায়ে বাহিরে বের হয়ে হেমন্ত’র কাছে গেলো।গিয়ে বললো, ‘ হেমন্ত চল দ্রুত।আর আরাফকে ফোন করে বলে দে আমার গাড়িকে ফলো করতে।
হেমন্ত কোন প্রশ্ন করলো না।শুধু যা বললো তা কথামতো পালন করলো।তারপর ছুটলো গাড়ি নিয়ে তারা।
————-
চোখজোড়া আস্তে আস্তে খুলে তাকালো প্রাহি।মাথাটা ভার ভার লাগছে প্রচুর।অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে।ঝাপ্সা চোখজোড়া স্পষ্ট হয়ে আসতেই আশেপাশে তাকায় প্রাহি।ক্ষীন আলোয় বুজা যাচ্ছে এটা একটা ছোট খাটো বেডরুম।যেখানে একটা স্টিলের বেড, একটা ছোট টেবিল আর চেয়ার বাদে কিছু নেই।চেয়ারটাতেই ওকে বেধে রাখা হয়েছে।প্রাহি হালকা আওয়াজে বললো,’ কেউ আছেন প্লিজ?আমাকে মুক্ত করে দিন প্লিজ।কেউ আছেন?প্লিজা আমাকে যেতে দিন।’
তারপর হু হু করে কেঁদে দিলো প্রাহি।কি হচ্ছে ওর সাথে এসব?ওর সাথেই কেন সবাই এমন করে?মানুষ ওর ভালো চায়না কেন? প্রাহি আবারও কান্না করতে করতে বললো, ‘ প্লিজ আমাকে যেতে দিন প্লিজ।অর্থ ভাইয়া আপনি কোথায়?আমাকে নিয়ে চলুন প্লিজ?আমার ভয় করছে।’
প্রাহি এইবার জোড়েই কেঁদে দিলো।ঠিক তখনি খট করে দরজাটা খুলে গেলো। আর একটা লোক প্রবেশ করলো।প্রাহি অস্রুসিক্ত চোখে সামনে তাকাতেই।ক্ষীন আলোতে যাকে দেখে তাতে ও অবাক না হয়ে পারে না।অবাকের শেষ সীমান্তে পৌছে গেছে ও।অস্পষ্ট কন্ঠে বলে,’ জয় ভাইয়া, তুমি?’
জয় হাসলো।তারপর প্রাহির সামনে গিয়ে ওর গালজোড়া সজোড়ে চেপে ধরলো।প্রাহি ব্যাথায় কুকরে উঠলো।জয় দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘ কি ভেবেছিস?আমি এখানে দেশে না থাকলেই তুই যা মন চায় তাই করবি?এতোই সোজা?আমার এতোদিনের ভালো মানুষির পিছনে যে উদ্দেশ্য ছিলো তা পূরন না করেই তোকে ওই অর্থ’র হতে দিবো?নেভার এভার।কখনই না।তোকে সুযোগ দিয়েছিলাম।তোর আঠোরো বছর বয়স অব্দি অপেক্ষা করতে চেয়েছিলাম।তোকে বিয়ে করবো ভেবেছিলাম।কিন্তু পাখি যে আমার খাচা ছেড়ে, অন্যের খাচাতে ভালোবেসে ঘর বেধেছে।তা কি করে মেনে নেই।’
কথাগুলো বলেই সজোড়ে প্রাহির গালে চর মেরে দিলো জয়।প্রাহির ঠোঁট কেটে রক্ত ঝরতে লাগলো।প্রাহি কাঁদছে আর মনে প্রানে অর্থকে ডাকছে। জয় এইবার চুল মুঠি করে ধরলো প্রাহির। প্রাহি চোখ মুখ খিচে রেখেছে ব্যাথায়।প্রাহি ভেজা চোখে তাকিয়ে বলে, ‘ শেষ মেষ তুমিও ভাইয়া। তুমিও আমার ক্ষতিটাই চাইলে?কেন? বলো কেন তোমরা আমার ভালো দেখতে পারো না?কি এমন ক্ষতি করেছি আমি তোমাদের?’
জয় বিকট হাসলো।হাসতে হাসতে বলে, ‘ এতেই এই অবস্থা?যখন সব রহস্যেগুলো জানতে পারবি তখন কি হবে?’
প্রাহি বুজতে না পেরে বলে, ‘ মানে? ‘
জয় ঘারের পিছে হাত রেখে আয়েশি ভঙ্গিতি বলে, ‘ তোকে ছোট থেকে এতোটা আদর করা।বিদেশে গিয়েও অনবরত তোর খোজ খবর নেওয়া।এইগুলো কি আমি শুধু শুধুই করেছি?উহুম নাহ।তোর কাছে ভালো সাজতে চেয়েছিলাম।যাতে তুই আমাকে পছন্দ করিস।তোকে বিয়ে করতে পারি আর তোর নামের সকল সম্পত্তিও আমার হতে পারে।কিন্তু, কিন্তু আমার ওই ইডিয়েট বাবা মা দুটো।গাধাদের মতো কিসব প্লান করে আমার পুরো প্লানটাই উলটে দিলো।আর এই তোকে বিয়ে দেওয়ার মতো গাধামো করলো।তবে এই বুদ্ধি যে দিয়েছে কে সেটা আমি খুব ভালোভাবে জানি।আসছে হয়তো।আমার লোকেরা জানালো।গার্ডেনে আছে।আমি একটু আটকে রাখতে বলেছি।’
প্রাহির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো এক একটা কথা শুনে। কাঁপা গলায় বলে, ‘ মানে মামা মামিও আমাকে আমার সম্পত্তির জন্যে এসব করেছিলো?আর? কে আসবে?আর কে বাকি আছে বলো?আমিও দেখতে চাই।সে সকল জঘন্য মানুষদের চেহারা।যারা যারা এইসব জানোয়ারের মতো কাজ করছিলো।’
জয় ঠাস করে আরেকটা চর লাগালো প্রাহির গালে।তারপর বলে, ‘ তো তুই কি মনে করিস?তোকে এতোদিন বাচিয়ে রেখেছে এমনি এমনি?সবকিছুর পিছনেই সবার উদ্দেশ্য থাকে।আর আমি তো এসবে যুক্ত হয়েছি সবে মাত্র চার,পাচ বছর হবে হয়তো।কিন্তু আসল কাল্প্রিটকে দেখলে তুই কি বলবি?যে এইসব জঘন্য খেলার আসল মাষ্টার মাইন্ড!’
প্রাহি নিজেকে শক্ত করলো।নরম হলে চলবে না।ওকে জানতেই হবে আসল মানুষটি কে যে এইসব জঘন্য খেলাগুলো সাজাচ্ছে। তাই শক্ত কন্ঠে বলে, ‘ কে সে আমি জানতে চাই।’
জয় হেসে দিয়ে বলে, ‘ অবশ্যই জানবি।তুই আমার বউ হতে যাচ্ছিস।তো আমার বউয়ের ইচ্ছা কি আমি অপূর্ণ রাখতে পারি? ওয়েট আসতে বলছি ওকে।’
প্রাহি ঘৃনায় চোখ ঘুরিয়ে নিলো। এই লোকটা যে এতোটা জঘন্য সে আগে জানতো না।প্রাহির সাথে ওর মামা বাসায় একমাত্র ভালো ব্যবহার কতো ওর এই মামাতো ভাই জয়।কিন্তু তার পিছনে যে এরকম জঘন্য উদ্দেশ্য আছে জানতো না।জয় বিদেশ চলে গিয়েছিলো স্টাডি করতে।প্রাহির যখন তেরো বছর বয়স তখনি প্রাহিকে প্রথম দেখেছিলো।একবছর দেশে থেকেছিলো।সেই একটা বছর প্রাহি অনেক শান্তিতে ছিলো।কারন জয়ের কারনে প্রাহির মামা মামি ওকে কিছু বলতে পারতো না।এক বছর পর বিদেশে চাকরি পাওয়াতে আবার চলে যায় ও।কিন্তু প্রাহির অনেক খোজ খবর নিতো। প্রাহিও নিজের বড় ভাইয়ের মতো ভালোবাসতো জয়কে। কিন্তু জয়ের যে এরকম জঘন্য মতলব ছিলো জানতো না সে।
প্রাহির ভাবনার মাজে দরজায় খটখট আওয়াজ হয়।প্রাহি সেদিকেই তাকালো।জয় যখন দরজা খুলে দিলো তখন দরজা দিয়ে যে প্রবেশ করলো।তাকে দেখে যেন প্রাহির পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো।এই মানুষটা এসব করতে পারে জীবনে ভাবতেও পারিনি ও।তাহলে শেষ মেষ ওর সকল ধ্বংশগুলো ওর কাছের মানুষরাই করলো?
প্রাহির হাত পা কাঁপছে।এতোটা যন্ত্রনা ও সহ্য করতে পারছে না।ঝাপ্সা হয়ে আসছে চোখ।চোখজোড়া বুজে আসতে আসতেই এস্তে করে বললো, ‘ কেন করলেন এমন?কেন করলেন?অনেক বিশ্বাস করতাম আপনাকে?কেন করলেন এমন? সম্মান করতাম।কেন করলেন?’
#চলবে_______
কেমন হয়েছে জানাবেন।নেক্সট পার্ট লাস্ট পার্ট না হলেও।পরের পার্ট লাস্ট পার্ট হবে।সবাই সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করবেন।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(২৮+লাস্ট পার্ট)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
চোখে মুখে পানির ছিটা পড়তেই পিটপিট করে তাকায় প্রাহি।মাথায় একটু জোড় খাটাতেই কিছুক্ষনের আগের সম্পূর্ণ ঘটনা মনে পরে যায়।ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সামনে তাকাতেই দৃষ্যমান হয় সেই পরিচিতো মুখখানা।প্রাহির চোখজোড়া আবারও ভিজে উঠে।প্রাহি কাঁদতে দেখে সেই ব্যাক্তিটি বললো, ‘ আরে আরে! কাঁদছো কেন?আমি তোমাকে এখান থেকে নিতে এসেছি।তুমি চিন্তা করো না।’
ব্যাক্তিটি হু হা করে হাসতে লাগলো।প্রাহি দূর্বল কন্ঠে বলে, ‘ কেন করলেন এরকম?কি ক্ষতি করেছি আমি? ‘
ব্যাক্তিটি হাসি থামিয়ে তেড়ে গিয়ে প্রাহির গাল চেপে ধরে।চোয়াল শক্ত করে বলে, ‘ অনেক কিছু করেছিস।আমার এতো বছরের সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছিস।অর্থকে নিজের ভালোবাসার জালে ফাসিয়ে।’
প্রাহি কাঁদছে।অধিক দুঃখের কান্না।এ কাকে দেখছে।নিজের পিতার মর্যাদা দিয়েছিলো যাকে সেই নাকি আজ ওর চিরশত্রু।হিয়ান্ত সিকদার ওর খালুজান।প্রাহি ভেজা গলায় বলে, ‘ খালুজান, আপনি, আপনি শেষমেষ সামান্য সম্পত্তির লোভে আমার সাথে এমন করছেন?’
হিয়ান্ত হাসলো।বললো, ‘ এতো ভালো মানুষি দেখাস না তো।এইগুলো আমার সহ্য হয়না।মাথা খারাপ হয়ে যায়।তোর বাপ মা ও এই অতিরিক্ত ভালো মানুষি দেখাতে গিয়ে আমার কাছেই খুন হয়েছে।’
প্রাহি মনে হয় বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো।অবাকের চরম সীমানায় পৌছে গিয়ে বলে, ‘ মানে?’
হিয়ান্ত বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, ‘ওহ তুই তো জানিস না আবার।তোর বাবা মা এমনি এমনি মরেনি।তাদের মেরেছি আমি।তাও আবার তোর মামি মামির হাতে।’
প্রাহির একসাথে এতো সত্যতা হজম হচ্ছে না।বুকে ব্যাথা করছে।নিঃশ্বাস আটকে আসছে।তাও নিজেকে সামলালো।এতো সহজে ভেংগে পরলে চলবে না।ওর কপালে যা থাকার তা হবে।ভাগ্যকে কেউ বদলাতে পারে না।ও জয়কে বিয়ে করবে না কোনদিন।দরকার পরলে নিজেকে শেষ করে দিবে তাও না।তবে মৃত্যুর আগে ওকে সবটা জানতে হবে সবটা। প্রাহি শক্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, ‘ কেন মেরে ফেললেন আমার বাবা মাকে?কি দোষ ছিলো তাদের?’
হিয়ান্ত চেয়ারে আরাম করে বসলো।মাথার পিছনে দুহাত রেখে আয়েশি ভঙিতে বলে, ‘ যাক,তোর এই একটা কথা শুনতে পারি।তোর তো অধিকার আছে এটা জানার যে তোর বাবা মা কিভাবে মারা গিয়েছে।তাহলে শোন, তোর বাবাকে আমি অনেক হিংসা করতাম। সালা বিজন্যাসের দিক থেকে অনেক এগিয়ে ছিলো।কোটি কোটি টাকার ডিল শুধু সেই পেতো। হিয়াজ ভাইয়াও সেম ছিলো।তাদের দুজনের বিজন্যাসই অনেক ভালো চলছিলো।সবচেয়ে ভালো চলছিলো তোর বাবারটা।আর আমার শুধু লস খেতাম।তোর বাবা সেই জন্যে তার ডিলগুলো থেকে আমাকে ভিক্ষা দিতো অনেক ডিল।মনে মনে ক্ষুব্দ হলেও টাকার জন্যে নিয়ে নিতাম। সফল হলেও পারতাম না।কারন আমার একটু মদ, টদের নেশা ছিলো।জুয়া খেলতাম এইভাবেই টাকা নষ্ট হয়ে যেতো।এইসব একদিন তোর বাপ জেনে যায় তাই হিয়াজ ভাইকে বলে দেয়।ভাই সেদিন আমাকে অনেক মেরেছিলো।সেই থেকে আমি ভালো মানুষ হওয়ার ভাণ ধরলাম।একেবারে সাধু হয়ে গেলাম সবার সামনে।সবাইও ভীষন খুশি আমার এতো পরিবর্তন দেখে।তারপর তোর খালাকে পছন্দ হলো।আমি ভালো হয়ে গিয়েছিলাম।সেই জন্যে তারাও বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলো। এইদিকে সবার মন আর বিশ্বাস আরো ভালোভাবে অর্জন করলাম। বছর খানিক পর হেমন্ত হলো।ছেলের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করার জন্যে।জোরালো প্লান করলাম।তোর বাবা মাকে মারার প্লান।কিন্তু পারলাম কই।সালারা সব সম্পত্তি নিজেদের নামে না করে তোকে দিয়ে রেখেছিলো।তোর আঠারো বছর বয়স হলে অফিসিয়ালি সব পেয়ে যাবি তুই।তার আগে সেই সম্পত্তিতে কারো অধিকার নেই।তোর বাপ মাকে দিয়ে যেহেতু আমার কোন কাজ নেই।তাই ওদের শেষ করে দেওয়ার প্লান বানালাম।সেটা কোন ক্রমে ইলফার বাবা যেনে যায়।সালা অফিসে এতো কাজ করতো।আমারও মনে ছিলো না যে ও অফিসে আছে।ওই সালা সব জেনে যায়।তাই ওকেও পথ থেকে সরাতে হয়।তারপর তোর মামা মামিকে ভয় দেখিয়ে টাকার লোভ দেখিয়ে বললাম যে করেই হোক তোর বাবা মাকে যেকোন উপায়ে যেন মেরে ফেলে।তারাও তাই করলো দুজন লোককে কাজের লোক বানিয়ে তোদের বাড়ি পাঠালাম।তার কিছুদিন পরেই হেমন্তকে যেদিন এব্রোড পাঠিয়ে দিবো।সেদিন তোকে আগে ভাগে আমাদের বাড়ি নিয়ে আসলাম।যাতে তোর কিছু না হয়।ব্যস,সুযোগ বুজেই খাল্লাস। তোকে হিয়াজ ভাই রাখতে চেয়েছিলো তার কাছে।কিন্তু আমি প্লান করে তোর মামা মামিকে বললাম তোকে নিয়ে পালিয়ে যায়।তুই বড় হতে থাকিস।এর মধ্যেই জয় আসে দেশে তোকে দেখে পছন্দ করে ফেলে।আরেক মুসিবত কাধে।এইটাকে ছলে বলে আমার পরিকল্পনার অংশ বানাই।এই বেটাও কিভাবে যেন আমার ঠিকানা পেয়ে যায়।যেখানে তোর মামা মামিও আমায় কোনদিন দেখেনি।সবাই আমাকে ব্লাক হান্টার নামেই চিনে। জয়কে বললাম সম্পত্তির অর্ধেক ওকে দিবো।আর তোকেও জয়য়ের সাথে বিয়ে দিবো।ভালোই চলছিলো।জয় আবার চলে গেলো।আমিও তোকে বিয়ে দেওয়ার নাটক সাজিয়ে আমার কাছে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম।যাতে সমাজের মানুষ সন্দেহ না করে যে হুট করে তুই কোথাও উধাও হয়ে গেলি।কিন্তু সেখানেও গন্ডগোল।আমার ছেলে যে তলে তলে তোকে খোজাখুজি করছিলো আমি জানতাম না।হেমন্ত ওখানে গিয়ে তোকে নিয়ে আসে। তারপর থেকে তো জানিসই অর্থ তোকে ভালোবেসে ফেলে।কি এক মুসিবত।এতো চেষ্টা করতাম তোকে কিডন্যাপ করার জন্যে কিন্তু ওই অর্থ’র জন্যে পারছিলাম না সাথে আমার ছেলে আর ওই আরাফ তো আছেই।আবার আসলো ইলফা।তোকে মারার প্লান করলো।কিন্তু তোকে মরতে দেই কিভাবে বল?ওকে ফোন দিয়ে শাষালাম। ব্যস এমন ভ্য় পেলো তোর পিছু ছেড়ে দিলো।বউভাতের দিন জয় তোকে কিডন্যাপ করলো।আমার কাজটা সহজ করে দিলো।তোর সব সম্পত্তি আমার হলে ওকে মেরে ফেলবো।কিন্তু সালা এতো সহজে মানবে না।তার আগে তোকে ওর সাথে আজ বিয়ে দিতে হবে। তো কেমন লাগলো আমার এতো সুন্দর পরিকল্পনা।’
প্রাহির চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে। তাও ভেংগে পরলো না।
প্রাহি বলে, ‘ এর শাস্তি আপনাকে চরমভাবে পেতে হবে খালুজান।অর্থ আসবেন।ঠিক আসবেন।হেমন্ত ভাইয়াও আসবে।আজ সবাই জানবে আপনার জঘন্যতম সব সত্য।’
‘ বড্ড বেশি কথা বলছিস।’ বলেই হিয়ান্ত থাপ্পর লাগায় প্রাহিকে।
এর মাঝে রুমে প্রবেশ করে জয়।ওর পিছুপিছু দুটো মেয়ে।জয় এসেই প্রাহির হাত পা খুলে দিতে লাগলো।হাত পা খোলা শেষ হলেই প্রাহির গাল চেপে ধরে বলে, ‘ লিসেন সুন্দর মতো এই শাড়ি গহনা পরে নেহ।কোন চালাকি করবি না।যদি কিছু করার ট্রায় করিস। আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।তোর বাবা মা যেভাবে মরেছে।এখন নতুন যেই পরিবার পেয়েছিস তাদেরও মেরে ফেলবো।’
হিয়ান্ত সিকদার মাথা দুলালেন, ‘ আ আ আ।শুধু অর্থ’র পরিবার, আমার স্ত্রী আর সন্তানের গায়ে যেন একটা আঁচও না লাগে।তাহলে তোমার বাবা মাকে সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো।’
জয় হাসলো, ‘ হ্যা হ্যা অবশ্যই।আপনার কথা অমান্য করি কিভাবে?’
প্রাহি ওর পরিবারকে মারার কথা শুনে ভয় পেয়ে যায়।কি করবে ও? কিভাবে বের হবে এখান থেকে? জয় আর হিয়ান্ত চলে গিয়েছে।মেয়েরা প্রাহিকে শাড়ি গহনা পরাচ্ছে।প্রাহি নিজেকে যতোই শক্ত রাখুক না কেন?কিন্তু পারছে না।বাদ ভাঙ্গা অস্রুগুলো চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে।পাশের মেয়ে দুটোর ওকে দেখে মায়া লাগলো।কি করবে তারা?জানের ভয়ে ওদের এসব করতে হচ্ছে।মেয়েদুটোর নাম রিফা,সাবিহা। রিফা মেয়েটি সাবিহাকে ফিসফিস করে বলে, ‘ আপু, মেয়েটাকে দেখে মায়া লাগছে।কতোটুকুই বা বয়স।আপু আমরা কি কিছু কর‍তে পারি নাহ?’
সাবিহা করুন গলায় বলে, ‘ কি করবো আমরা?ওকে সাহায্য করতে গেলে আমাদের মেরে ফেলবে ওরা।’
রিফা বললো, ‘ আপু ওর এখন এখানে নেই।আমরা বরং ওকে আমাদের ফোন দিয়ে সাহায্য করি।আর ওর কোন পরিচিতো কাউকে ফোন দিয়ে এইখানের ঠিকানা দিতে বলি মেসেজ করে।’
সাবিহা সম্মতি দিলো।নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে ঠিকানাটা নিজেই টাইপিং করে দিলো তারপর প্রাহির দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘ বোন, তুমি কেঁদোনা।এই ফোনটা নেও আমি এখানে এখানে ঠিকানা টাইপ করে দিয়েছি।বাকি তোমার যা লিখতে মন চায়।লিখে তোমার পরিচিত কাউকে পাঠিয়ে দেও।’
প্রাহি চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।কান্না মাখা চোখে কৃতজ্ঞতার হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলে, ‘ ধন্যবাদ আপুরা।তোমাদের এই ঋন আমি কোনদিন ভুলবো না।আমার অর্থ এখানে আসলে তোমাদেরকেও এখান থেকে মুক্ত করবো আমি। আমি কথা দিলাম!’
প্রাহি ফোনটা নিয়ে অর্থকে মেসেজ করে সেন্ড করে দিলো।তারপর সাবিহা, রিফাকে ধরে কান্না করে দিলো।সাবিহা আর রিফা ওকে শান্তনা দিয়ে রেডি করাতে লাগলো।যাতে জয় বা হিয়ান্ত কারও যেন সন্দেহ না হয়।
———————-
হেমন্ত থম মেরে বসে আছে।ওর ঠিক কি করা উচিত ও জানে না।চরম সত্যগুলো যখন ওর সামনে আসলো ও নিজের খৈই হারিয়ে ফেললো।ওর নিজের বাবা এতোটা জঘন্য কিভাবে হতে পারে? কিভাবে? প্রাহির বাবা মা র মতো এতো ভালো মানুষদের সম্পত্তির লোভে মেরে ফেললো ওর বাবা।অর্থ প্রাহিকে একটা লকেট দিয়েছিলো সেটায় ছোট ব্লুটুথ মাইক্রোফোন সেট করা ছিলো ভীতরে।যাতে প্রাহির কোন বিপদ আপদ হলে অর্থ সহজেই বুজতে পারে।অর্থ যখন মেডিসিন বাহির করার জন্যে ড্র‍্যয়ার খুলেছিলো।তখন সেই লকেটটার বক্স দেখেই এটার কথা মনে পরে। আর ও তাড়াতাড়ি সেই ব্লুটুথ চালু করে ফেলে।পরে একে একে সব সত্য হিয়ান্ত সিকদারের মুখে শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়।বাড়ির প্রতিটা লোক সেখানে উপস্থিত।হেনা হাউ মাউ করে কাঁদছেন।নিজের স্বামির এমন কুলসিত রূপটা আজ তিনি মেনে নিতে পারছেন না।অর্থ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। অর্থ’র দাদা ঘুমোচ্ছেন।বেচারা এমনিতেই অসুস্থ।দিনরাত সুয়ে বসে থাকেন।নিজের ছোট ছেলে এতো খারাপ এটা জানলে তিনি হয়তো মরেই যাবেন।হিয়াজ সিকদারেরও চোখ ভিজে আসছে বার বার।রায়হানা আর হিয়া চাপা কান্না কাঁদছে আর হেনাকে সামলাচ্ছেন।অর্থর চোখজোড়া ঝাপ্সা হয়ে আসে।বাবার মতো নিজের চাচার এরূপ স্বরযন্ত্র ও মানতে পারছে না।তবুও নিজেকে সামলাচ্ছে ও।কারন হেমন্তকে এখন ওকেই দেখতে হবে।ছেলেটা ভীতরে ভীতরে নাহলে মরে যাবে।ওর ভাইটাকে সামলাতে হবে।অর্থ হেমন্ত’র মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরলো।ধরা গলায় বলে, ‘ ভাই কিচ্ছু হবে না।নিজেকে সামলা ভাই।আমি আছিতো।কিছু হবে না।’
হেমন্ত মাথা উঠিয়ে তাকালো অর্থ’র দিকে।চোখজোড়া লাল হয়ে আছে।হেমন্ত শক্ত কন্ঠে বলে, ‘ ভাই যেটা নায্য বিচার সেটাই হবে।পাপিকে শাস্তি পেতে হবে।সেটা যেই হোক না কেন?আজ আমার বাবা বলে তাকে আমি ছেরে দিবো।কিন্তু উনি যে আমার মতোই আরেকজনের সন্তানকে এতিম করে দিলো।আমি আমার কথা চিন্তা করলে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে।আর প্রাহির সাথে আবারও অন্যায় হবে।ওই বেচারি নির্দোষ হয়েও পদে পদে কষ্ট পেয়েছে।নিজের মা বাবার খুনিকে ও যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিবো।কিচ্ছু বলবো না।’
হেমন্ত এলোমেলো পা ফেলে হেনার কাছে আসলো।হেনার হাত দুটো ধরে ভেজা গলায় বলে, ‘ মা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দেও।আমি সন্তান হয়ে নিজের বাবার সংগ দিতে পারবো না।কারন তিনি অন্যায় করেছেন।তুমিই বলো মা।এতোটা অন্যায় যে করে তাকে কি ছেড়ে দেওয়া যায়? আমি তাহলে মানুষ হিসেবে হেরে যাবো।নিকৃষ্ট হয়ে যাবো প্রাহির কাছে, হবো নিজের বিবেগের কাছে।’
হেনা হেমন্তকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়।কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘ সে আমার স্বামি আর তোর বাবা ঠিক আছে।তাই বলে যে সে অন্যায় করা সত্তেও আমি ক্ষমা করে দেবো এমনটা না।তিনি আমার বোন আর আমার ভাইয়ের মতো দুলাভাইকে খুন করেছেন।প্রাহিকে এতিম করেছেন।তাকে যোগ্য শাস্তি দিবি বাবা।সে যা করেছে তার কোন ক্ষমা নেই বাবা।ক্ষমা নেই।’
হেমন্ত হেনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।অর্থ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর ফোন একটা মেসেজ আসে।অর্থ ফোন বের করে মেসেজটা ওপেন করতেই।ওর চোখজোড়া স্থির হয়ে যায়।সেখানে লিখা আছে।
‘ অর্থ আমি প্রাহি বলছি।আমাকে ‘******’ এখানে আটকে রাখা হয়েছে আমাকে নিয়ে যান অর্থ।আমি জয় ভাইয়াকে বিয়ে করতে চাইনা।ও আমাকে জোড় করে বিয়ে করতে চাইছে।আমি এটা পারবো না।আপনি জলদি আসুন।যদি এমনটা হয় অর্থ আমি ওকে বিয়ে করবো না।তবে নিজেকে শেষ করে দিবো।আমি শুধু আপনার অর্থ আর কারো না।’
মেসেজটা পড়েই অর্থের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।ওই জয়কে ও ছাড়বে না।ওর প্রাহিকে বিয়ে করার শখ জেগেছে তাই না।এর পরিনাম হারে হারে টের পাবে জয়।অর্থ আরাফ আর হেমন্তকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ আরাফ আর হেমন্ত তাড়াতাড়ি চল।প্রাহি কার ফোন থেকে যেন মেসেজ পাঠিয়েছে।ওকে যেখানে নেওয়া হয়েছে সেখানের ঠিকানা দিয়েছে।ওই জয় ওকে জোড় করে বিয়ে করতে চাইছে।আমাদের জলদি যেতে হবে।নাহলে নাহলে প্রাহি বলেছে ও এই বিয়ে করবে না কখনও নিজেকে… নিজেকে নাকি শেষ করে দিবে।’
সবাই আৎকে উঠে ভয়ে।আরাফ আর হেমন্ত দ্রুত নিজেদের সামলে নিয়ে অর্থ’র সাথে বেড়িয়ে পড়লো।যাওয়ার আগে হিয়াজ সিকদারকে,হিয়াকে আর ইশিকে পুলিশ নিয়ে প্রাহির দেওয়া ঠিকানায় জলদি আসতে বললো।তারাও ছুটলো সেদিকে।
—————–
ড্রয়িংরুমের সোফায় আয়েশী ভঙ্গিতে বসে আছে হিয়ান্ত। ঠিক বিপরীত সোফায় জয় আর প্রাহি বসে আছে।প্রাহি কাঁদছে সে এই বিয়ে করবে না।মনে প্রানে শুধু অর্থকে ডাকছে ও।ওদের সামনে কাজি বসে আছে।যিনি প্রাহিকে কবুল বলতে বলছেন।প্রাহি কবুল বলছে না দেখে জয় ঠা-স করে একটা চর মেরে দিলো।প্রাহি ছিটকে গিয়ে সোফার হ্যান্ডেলের সাথে মাথায় আঘাত পেলো।ব্যাথাটা ব্যাথায় ঝিম ধরে গেলো।তাও নিজেকে সামলে নিয়ে নিভু নিভু চোখে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে, ‘ আমি কখনই তোকে বিয়ে করবো না।মরে গেলেও না।’
এই বলে টি-টেবিলের উপর ফলের ঝুড়িতে যেই ছুড়ি রাখা ছিলো সেটা ছিনিয়ে নিয়ে উঠে দাড়ালো প্রাহি।নিজের হাতের কব্জিতে চেপে ধরলো ছুরিটা।ভয় পেয়ে যায় হিয়ান্ত আর জয়।হিয়ান্ত রাগি চোখে জয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ কিভাবে কি করছিলে?সামান্য এই পুচকে মেয়েটাকে সামলাতে পারোনি।’
জয় ঘাবড়ালো তাও বললো, ‘ দেখ প্রাহি।কিছু উল্টপাল্টা করিস না।নয়তো ওদের মেরে ফেলবো।’
প্রাহি হাসলো।ছুড়িটা আরো একটু শক্ত করে ধরে বললো, ‘ আমি জানি তুই তাদের কিছুই করতে পারবি না।আর আমি মরে গেলেও তোকে বিয়ে করবো না।’
জয় আগাতে নিলেই।প্রাহি সজোড়ে নিজের কব্জিতে চাকুটা দিয়ে আঘাত করে।তীব্র আর্তনাদ করে উঠে প্রাহি।ঠিক তখনি বাহিরে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যায়।ভয় পেয়ে যায় জয় আর হিয়ান্ত।কিছু বুজে উঠার আগেই দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে অর্থ, হেমন্ত,আর আরাফ।অর্থ প্রাহিকে নিচে পড়ে কাতরাতে দেখে চিৎকার করে উঠে।প্রাহির হাতের রক্তে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে।
অর্থ দৌড়ে গিয়ে প্রাহিকে জড়িয়ে ধরে।
জয় পালাতে নিলে আরাফ জয়ের পায়ে গুলি করে। জয় ফ্লোরে মুখ থুবরে পড়ে।হিয়ান্ত কি করবে দিশা পাচ্ছে না।ও যে এভাবে ফেসে যাবে নিজেও জানে না।ওর ছেলে আর পরিবারের কাছে এইভাবে ধরা পরে যাবে কল্পনাও করেনি।পালাতে নিলেই। হেমন্ত দৌড়ে গিয়ে নিজেই ওর বাবাকে আটকে ফেলে।চোখ ভিজে উঠছে।তাও রাশভারি কন্ঠে বলে, ‘ কোথায় পালাচ্ছো বাবা? এভাবে কিভাবে যেতে দেই বলো তোমাকে?’
হিয়ান্ত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে, ‘ যা করেছি সব তোর ভবিষ্যত উজ্জ্বল করার জন্যে করতে চেয়েছি।আমাকে বুঝার চেষ্টা কর বাবা।’
হেমন্ত ঘৃনাভরা চোখে নিজের বাবার দিকে তাকালো।নিজের ছেলের চোখে নিজের জন্যে এতোটা ঘৃনা দেখে থমকালো হিয়ান্ত।স্থির হয়ে গেলো।যে ছেলের চোখে নিজের জন্যে ভালোবাসা আর সম্মান দেখতে পেতো আজ সেই ছেলের চোখে ঘৃনা দেখতে পাচ্ছে।হেমন্ত পুলিশকে ইশারা করলো হিয়ান্তকে নিয়ে যেতে।পুলিশ তাই করলো।হেমন্ত এইবার দৌড়ে প্রাহির কাছে যায়।অর্থ চিৎকার করে কান্না করছে। ‘ প্রাহি! প্রাহি কেন করলে এমনটা?কেন করলে?আমি তোমাকে ঠিক বাচিয়ে নিতাম।তাও কেন করলে এমন?আমার প্রতি বিশ্বাস কেন রাখলে না?’
প্রাহি কাঁপা কন্ঠে বললো, ‘ ভয় পাচ্ছিলাম আ..আমি।আপ…আপনাকে ছা..ছাড়া অন্য..অন্যকাউকে বিয়ে করা সম্ভব না। আমি শুধু আপ…আপনাকে ভালোবাসি অর্থ।আপ..আপনি ছাড়া আমি কারো হ..হবো না।তাই এম..এমনটা কর..করতে বাধ্য হয়েছি।’
‘ প্রাহিইইইইইই!’ প্রাহি চোখ বুজে নিতেই দেখেই চিৎকার করে উঠে অর্থ।
হেমন্ত দ্রুত বললো, ‘ ভাই প্রাহিকে হাস্পাতালে নিতে হবে।ওর কিছু হবে না।তুমি জলদি ওকে তুলো।আমি গাড়ি রেডি করছি।’
অর্থ’র মাথা থেকে হাস্পাতালের কথা বেড়িয়ে গিয়েছিলো।জলদি প্রাহিকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।তারপর ছুটলো হাস্পাতালের দিকে। আরাফ হিয়ান্ত আর জয়কে পুলিশ ফোর্সদের হাতে তুলে দিয়ে।ওদের সাথে আসা হিয়াজ,ইশি আর হিয়াকে নিয়ে নিজেও হাস্পাতালের দিকে রওনা হলো।যেতে যেতে রায়হানাকে ফোন দিয়ে জানালেন সবটা আর হাস্পাতালে আসতে বললেন।রায়হানা, হেনা আর সেলিমা খালাকে নিয়ে হাস্পাতালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলেন।
_______________
হাস্পাতালের করিডোরে চাপা কান্না কাঁদছে সবাই।কি থেকে কি হয়ে গেলো।তাদের হাসিখুশি পরিবারটা এক নিমিষেই ধ্বংশ হয়ে গেলো।আরাফ আর ইশি সবাইকে সামলাচ্ছে ভরসা দিচ্ছে।কারন পরিবারের প্রতিটা মানুষই আজ প্রচুর ভেঙ্গে পরেছে।
হেমন্ত এক কর্নারে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।ইশি এগিয়ে গেলো হেমন্ত’র কাছে।হেমন্ত’র কাধে হাত রাখতেই।হেমন্ত তাকায় ইশির দিকে।হেমন্ত’র চোখজোড়া ফুলে লাল হয়ে আছে।ইশি হেমন্ত’র গালে আলতো করে হাত ছোয়ালো।হেমন্ত আবেশে চোখজোড়া বুজে নিয়ে।নিজেও ইশির হাতের উপর হাত রাখলো।তারপর চোখ মেলে তাকালো ইশির দিকে। ওর চোখজোড়া ছলছল করছে।ইশি ঠান্ডা স্বরে বলে, ‘ নিজেকে সামলান হেমন্ত।আপনি এভাবে ভেঙ্গে পরলে আন্টিকে সামলাবে কে? বলুন তো।এভাবে চুপচাপ থাকলে তো হবে হেমন্ত।আপনাকে স্ট্রোং হতে হবে।এইভাবে চুপচাপ হয়ে গেলে হবে না।’
হেমন্ত ইশিকে ঝাপ্টে ধরলো।কান্না করতে করতে বলে, ‘ বাবা এমন কেন করলো ইশি।আমার তো এতো টাকা পয়সা চাই না। আমার একটা হ্যাপি ফ্যামিলি চাই।কিন্তু সেটা তিনি হতে দিলেন না ইশি।আমি ক্ষমা করবো না উনাকে।কখনো ক্ষমা করবো না।’
ইশি নিজেও কাঁদছে।তারপরেও হেমন্তকে বললো, ‘ প্লিজ শান্ত হোন।সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি আছি তো।সব ঠিক হয়ে যাবে।’
হেমন্ত ইশিকে ছাড়লো। ইশির গালে হাত দিয়ে বলে, ‘ তুমি আমার সাথে সারাজীবন থাকবে তো ইশি।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।আমি তোমাকে হারাতে পারবো না।মা আর তুমিই এখন আমার সবচেয়ে বেশি কাছের।তুমি আমাকে সামলে নিও ইশি।আমি বাকি সব সামলে নিবো।প্লিজ আমাকে ছেরে যেও না।’
ইশির চোখ দিয়ে একফোটা অস্রু ঝরে পরলো, ‘ যাবো না। কখনো যাবো না আপনাকে ছেরে।’
————-
অর্থ একদৃষ্টিতে প্রাহির কেভিনের দিকে তাকিয়ে আছে।বিধ্বস্ত,এলোমেলো হয়ে আছে পুরো ও।কিয়ৎক্ষন পর ডাক্তার বেড়িয়ে আসলো।অর্থ অস্থির কন্ঠে বলে, ‘ প্রাহি?প্রাহি ঠিক আছে তো ডক্টর?’
‘ হ্যা উনি সম্পূর্ণ ঠিক আছেন।আপনারা দেখা করতে পারবেন।আমি কেভিনে যাচ্ছি।নার্সের মাধ্যমে প্রেস্ক্রিপন পাঠাবো।সেই।মেডিসিনগুলো খাওয়াবেন। আর বেশি বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াবেন।অনেক রক্ত ঝরেছে।সেটা পূরন হতে সময় লাগবে।’ বলেই ডক্টর চলে গেলেন।
প্রাহির কেভিনে একে একে সবাই দেখা করে আসলো। হেনা কেদে কেটে নিজের স্বামির কৃতকর্মের জন্যে ক্ষমা চাইলেন।তিনি পুরো ভেঙ্গে পরেছেন।প্রাহি উনাকে অনেক বুজিয়ে শুনিয়ে শান্ত করলো।সবার দেখা করলো।কিন্তু প্রাহি শুধু একজনকেই খুজে চলেছে।হিয়া আর ইশি সেটা বুজতে পারলো।তাই তারা সবাইকে কেভিন খালি করতে বলে ঠেলেঠুলে অর্থকে পাঠালো।
কেভিনে অর্থ প্রবেশ করতেই প্রাহির চোখ দিয়ে অস্রুকনা গড়িয়ে পড়লো। সেতো ভেবেছিলো আর বুজি এই লোকটাকে কোনদিন দেখতে পারবে না।কিন্তু আল্লাহ্ তায়ালা ওকে বাচিয়ে দিলেন।ফিরিয়ে দিলেন ওকে ওর অর্থ’র কাছে।অর্থ এখনো মুখ ফিরিয়ে আছে।একবারও তাকায়নি প্রাহির দিকে।প্রাহি বুজতে পারলো অর্থ অভিমান করেছে ওর উপর।প্রাহি হালকা আওয়াজে দূর্বল কন্ঠে বলে, ‘ আমার কাছে আসবেন না?এইভাবে মুখ ফিরিয়ে রাখলে তো আমি সত্যি সত্যি মরে যাবো।’
অর্থ ঝরের গতিতে প্রাহি কাছে এসে ওর মুখ চেপে ধরে চাপা ধমকে বলে, ‘ চুপ! একদম চুপ।আবারও মরার কথা বললে একেবারে মেরে ফেলবো।একটুও কি বিশ্বাস রাখতে পারলি না।আমি ছিলাম তো আমি আসতাম তোর কাছে।কেন এমনটা করলি?’
প্রাহি ওর ডানহাতটা দিয়ে অর্থ’ হাত সরালো। তারপর অর্থ’র হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,’ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম অনেক।অনেকগুলো সরি।আর কখনো করবো না প্রমিজ।’
অর্থ প্রাহিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, ‘ ভালোবাসি প্রাহি।প্লিজ আর কখনো এমন করো না।প্লিজ।ভালোবাসি! অনেক বেশি ভালোবাসি!’
প্রাহি মৃদ্যু হাসলো।এই গোমরামুখো লোকটা তাকে এতো ভালোবেসে ফেলবে ভাবতেই পারিনি।আর সেই ভালোবাসায় ও নিজেকেও এইভাবে ভাসিয়ে দিবে কল্পনার বাহিরে ছিলো।প্রাহি অর্থ’র কানে কানে প্রাহি ফিসফিস করে বললো, ‘ আমিও ভালোবাসি। তীব্রভাবে ভালোবাসি।’
অর্থ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো প্রাহির দিকে।তারপর কপালে চুমু খেয়ে আবারও জড়িয়ে ধরলো ওকে।
—————–
কয়েকবছর পর________
হিয়ান্ত সিকদার নিজের ছেলে আর স্ত্রীর এতো এতো ঘৃনা আর অপমান সহ্য করতে না পেরে পাগল হয়ে পাগলাগারদে আছে।প্রাহির মামা মামিকে যাবৎজীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে আর জয়কে ১০ বছরের জেল।
অর্থর দাদা ছেলের এই রূপ সহ্য করতে না পেরে মারা গেছেন তার কিছুদিন পরেই।এতো এতো দুঃখের শোক কাটাতে পরিবারের প্রতিটা মানুষের অনেক সময় লেগেছিলো।কিন্তু আজ তারা এখন সবটা সামলাতে শিখেছেন।অনেক ভালো আছেন তারা।পরিবারটা এখন অনেক হাস্যজ্জ্বল।
আজ অর্থ প্রাহি আর হেমন্ত ইশির বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।অনেকটা ঝরঝাপ্টা পার করে তারা এক হয়েছে।
__________
বাসর ঘরে বসে আছে প্রাহি।প্রাহি এখন আর ছোট নেই।সে এখন বড় হয়ে গেছে।প্রাহির এখন বিশ বছর বয়স।সে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে।সবটার পিছনেই অর্থর অনেকটা পরিশ্রম আছে।অর্থ না থাকলে আজ ও এতোদূর পৌছাতে পারতো না।তবে প্রাহি সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ দেয় হেমন্তকে।কারন হেমন্ত ওকে সেদিন ওই নরক থেকে না আনলে ও আজ এতোটা সুখী হতো না।নিজের ভাইয়ের থেকেও বেশি ভালোবাসে সে হেমন্তকে।প্রাহির ঠোঁটের কোন মুচঁকি হাসি ফুটে উঠে।বাহির থেকে চেচামেচির আওয়াজ আসছে।হেমন্ত নিজের বাসর ছেরে অর্থ’র বাসর ঘরের গেট ধরেছে।সাথে আরাফ আর হিয়া।প্রাহির অনেক হাসি আসলো।এরা ভাইবোন পারেও বটে।কিছুক্ষন পর গেট খুলার আওয়াজে।গোমটার আড়াল হতে দেখতে পায় অর্থকে প্রাহি।লজ্জায় মুখ লাল হয়ে আসে ওর।বুকটা ধরফর করেছে।কেমন কেমন যেন লাগছে ওর।প্রাহি খাট থেকে নেমে আলতো পায়ে অর্থর সামনে দাড়ালো।তারপর ঝুকে গিয়ে অর্থকে সালাম করলো।অর্থ প্রাহির বাহু ধরে দাড় করিয়ে ওর ঘোমটা সরিয়ে দিলো।বধুবেশে প্রাহিকে অপরূপ লাগছে।অর্থ আরষ্ঠ ভঙিতে তাকিয়ে রইলো।তাকিয়েই রইলো।এই দেখার যেন নেই কোন শেষ।প্রাহির লজ্জায় মরে যাওয়ার উপক্রম।তা বুজতে পেরে হাসলো অর্থ।কাবার্ড খুলে প্রাহির দিকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘ যাও ফ্রেস হয়ে ওজু করে আসো। নামাজটা পরে নেই।’
প্রাহি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।ওয়াশরুমে গিয়ে বিয়ের শাড়ি,গহনা খুলে অর্থ’র দেওয়া শাড়িটা পরে নিলো।তারপর বের হয়ে আসলো।প্রাহি বের হতেই অর্থ নিজেও গিয়ে ওজু করে আসলো তারপর নামাজটা আদায় করলো।দুজনে মিলে কতোক্ষন কোর-আন তিলায়াত করলো।তা শেষ করে। প্রাহিকে বিছানায় বসতে বললো অর্থ। তারপর কাবার্ড খুলে আবারও হাতে করে কিছু একটা এনে প্রাহির হাতে দিলো তারপর বলে, ‘ এটা তোমার বাসর রাতের উপহার।আর তোমার দেনমোহর পরিশোধ করা।আলমারির লকারে আছে।যখন যা লাগবে নিয়ে খরচ করবে।’
প্রাহি মাথা দুলালো।ব্যাগটা খুলে দেখে তাতে একটা জায়নামাজ,তবসি, একটা হাদিস শরীফ, একটা অজিফা আছে।সব দেখে প্রাহি কিছু হয়ে অর্থকে ধন্যবাদ জানালো।সেগুলো সুন্দরভাবে আলমারিতে তুলে রাখতে গেলো।রাখা শেষে পিছনে ঘুরতে নিলেই।একজোড়া হাত ওর কোমড় স্পর্শ করে।কিছু একটা পরাচ্ছে অর্থ।প্রাহি তাকালো।দেখলো অর্থ ওর কোমড়ে স্বর্নের একটা বিছা পড়িয়ে দিচ্ছে।পড়ানো শেষে অর্থ প্রাহির কোমড়ে চুমু খেলো।কেঁপে উঠে সরে যায় প্রাহি।নিঃশ্বাসের উঠানামা বেরে গেছে প্রবলভাবে।
অর্থ ধীরপায়ে এগিয়ে গেলো প্রাহির দিকে। প্রাহির খোপা করা চুলগুলো একটানে খুলে দিলো। প্রাহির চুলে মুখ গুজে দিলো অর্থ।তারপর ফিসফিস করে বলে, ‘ আমার এতো বছরের অপেক্ষা আজ আজ শেষ হলো প্রাহি।তোমার প্রতি আমার #প্রেম_এসেছিলো_নীরবে, আস্তে আস্তে।সেটা যে কিভাবে এতোটা প্রবলভাবে আমাকে ঝেকে ধরলো আমি বুজতেও পারলাম।পাগলের মতো ভালোবেসে ফেললাম তোমায়।তোমায় ছাড়া আমার একমুহূর্ত থাকা সম্ভব না প্রাহি।আজ তোমাকে ভালোবাসতে চাই প্রাহি।অনেক ভালোবাসতে চাই।তোমাকে নিয়ে রঙিন স্বপ্ন বুনতে চাই।তুমি দেবে কি আমায় সেই সুযোগ?’
প্রাহি হাসলো।লজ্জা মিশ্রিত সেই হাসি।পিছনে ঘুরে লজ্জাবতীর লতার ন্যায় লজ্জায় নুইয়ে পরলো অর্থ’র বুকে।অর্থ প্রাহির সম্মতি পেয়ে প্রাহিকে কোলে তুলে নিলো। প্রাহিকে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে।নিজের গায়ের পাঞ্জাবি খুলে ফেললো।প্রাহির পাশে সুয়ে কতোক্ষন ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।তারপর আচমকা প্রাহির আঁচল সরিয়ে দিয়ে প্রাহির ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে প্রাহি অর্থকে আকড়ে ধরে শক্তভাবে।
আজ তারা মিলেমিশে একাকার হলো।ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো তাদের।এতো এতো অপেক্ষা অবসান হলো।অর্থ ওর সব ভালোবাসা বিলিয়ে দিলো প্রাহিকে আর প্রাহিকে নিজেকে অর্থ’র ভালোবাসায় উজার করে দিলো।
তাদের #প্রেম_এসেছিলো_নীরবে ঠিকই।কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ হয়েছিলো তীব্রভাবে।সেই তীব্রতার প্রখরতা এতোই মজবুত ছিলো যে আজ তারা একে-অপররের নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে রন্দ্রে রন্দ্রে মিশে গিয়েছে।যা আলাদা হবে না কখনই।
[[[[[[সমাপ্ত]]]]]]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here