#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(20+21)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
রাতের বাস করে সবাই কক্সবাজার যাবে।সেখান থেকেই সেন্টমার্টিন যাবে।সবাই যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে।অনেকেই বাসে উঠে বসেছে।হেমন্ত,আরাফ আর অর্থ জিনিসপত্রগুলো বাসের ডিকিতে রাখছে।প্রাহি বাসের মাঝখানের সারিতে জানালার ধারের সিটে বসে ইয়ারপোড্স দিয়ে গান শুনছে।ওর ভালোলাগছে না কিছুই।কিছুক্ষন যাবত খেয়াল করছে আরাফদের সাথে আসা একটা মেয়ে ওর দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে।বিষয়টা ওকে চরম বিরক্তি দিচ্ছে।তাই উপায় না পেয়ে গান শুনছে ও ফোনে।মেয়েটা এসে থেকেই ওর দিকে কেমন যেন কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে।কি করছে প্রাহি এই মেয়েকে?এই মেয়েকে তো প্রাহি চিনেও না।তাহলে?এমন কেন সবাই?ওর সাথে কেন এমন করে?ও কি এতোই খারাপ যে মানুষ ওকে ঘৃনার নজরে দেখে।ও তো সবসময় সবার সাথে ভালো ব্যবহার করে।আর সবাই যেন ভালো থাকে সেই দোয়া করে।লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।এর মাজেই প্রাহির পাশে থপ করে ওর পাশে কেউ বসে পড়লো।প্রাহি তাকিয়ে দেখে অর্থ বসে আছে আর ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।প্রাহি মাথা নিচু করে ফেলে।অর্থ ভ্রু উচু করলো,
-” কি হয়েছে?”
প্রাহি কাচুমাচু স্বরে উত্তর দেয়,
-” কি হবে?”
-” আমি সেটাই কুয়েশ্চেন করেছি এন্ড তোমাকে আন্সার দিতে বলছি।উলটো আমাকে কুয়েশ্চেন করতে বলিনি।এখন ডিরেক্টলি বলো কি হয়েছে?”
প্রাহি আমতা আমতা করছে।অর্থ এইবার ধমকে বলে,
-“এই মেয়ে বলছো না কেন?”
প্রাহি ধমক খেয়ে প্রায় সিট থেকে উড়ে যাওয়ার উপক্রম।ও এইবার অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,
-” আমার ভালো লাগছে না।”
অর্থ ভ্রু-কুচকে বলে,
-” কেন?”
প্রাহি আশেপাশে চোখ বুলালো।দেখে অন্যসারির সিট থেকে মেয়েটা এখনো ওর দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।প্রাহি বললো,
-” আমাদের বরাবর ওই পাশের সাড়িতে যে মেয়েটা বসেছে ও কে?”
অর্থ কপালে ভাজ ফেলে ওদের বরাবর পাশের সিটে তাকায়, দেখতে পায় আরাফের চাচাতো বোন ইলফা বসে আছে।ওর ভ্রুজোড়া আরো কুচকে আবার প্রাহির দিকে ফিরে বলে,
-” ও আরাফের বোন ইলফা।সেদিন যে ওদের বিয়ের কথাবার্তা চলার সময় আরাফের চাচিকে দেখেছিলে না?তার মেয়ে।কেন কি হয়েছে?”
প্রাহি মাথা নিচু করে বলে,
-” আসছে থেকে আবার দিকে কিভাবে যেন তাকাচ্ছে।মনে হয় আমাকে তার চোখ দিয়েই ভষ্ম করে দিবে।আমি কি করেছি উনি এইভাবে তাকাচ্ছেন কেন?”
অর্থ এইবার গম্ভীর স্বরে বললো,
-” হাইপার হবা না ওকে।আমি আছি তো তোমার সাথে।কিছু হবে না তোমার।আসলে আরাফের সাথে বন্ধুত্ব আমার অনেক দিনের।আমরা তো এব্রোড ছিলাম তাই ওদের ফ্যামিলির বেশি কেউ আমাকে দেখেনি।ইনফেক্ট বিদেশ যাওয়ার পর কারো সাথে ভিডিও কলে কথা বলিনি ওদের বাড়ির মানুষদের সাথে।কিন্তু হিয়ার যখন এংগেজমেন্ট করালাম সেখানেই ইলফার সাথে পরিচয় হয়।আর ওইখান থেকেই মেয়েটা আমার পিছনে পরে আছে।মানে ইউ নো নাহ্ আমাকে লাইক করে।ওর মাও চায় তার মেয়েকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিতে।বাট সি ইজ আ ক্যারেক্টারল্যাস গার্ল।ইনফেক্ট আই ডোন্ট লাইক হার এট ওল।শুধু আত্মীয়তার খাতিরে সহ্য করতে হয়।আমার সাথে অনেকবার জোড়াজুড়ি করেছিলো রিলেশনে যাওয়ার জন্যে।বাট তখন আমার এমন একটা বয়স যে আমি পুরোপুরি বদলে গিয়েছে ওসব রিলেশন, প্রেমের প্রতি আমার কোন ইন্টেরেস্ট ছিলো না।মানে আগেও ছিলো না।বাট বাহিরের দেশের কালচার ইউ নো।ইউনিভার্সিটিতে থাকা কালিন দু চারটা করেছিলাম।বাট গ্রানি মারা যাবার পর আর কখনো ওসবের ধারে কাছেও যায়নি।”
কথাগুলো বলে প্রাহির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রাহি ওর দিকে চোখ ছোট ছোট করে ঠোঁট উলটে তাকিয়ে আছে।অর্থ হঠাৎ প্রাহির এমন রিয়েকশন দেখে ও কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।বললো,
-” কি ফেস রিয়েকশন এতো উইয়ার্ড কেন?”
প্রাহি কাঁদো গলায় বলে,
-” আপনি প্রেম করেছেন?তাও দু চারটে?”
অর্থ অবাক হয়ে বললো,
-” হ্যা তো?এমন করছো কেন?”
-” প্রেম যেহেতু করেছেন সেইসব নাউযুবিল্লাহ কাজও নিশ্চয়ই করেছেন?”
প্রাহির এরূপ কথায় অর্থ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
-” কেন কি হয়েছে?এটা আবার কেমন কথা?”
-” সেটা জিজ্ঞেস করেছি উত্তর দিন না?”
অর্থ শান্ত চোখে প্রাহির দিকে তাকায়।তারপর ওর গালে একটা হাত রেখে বলে,
-” আমাকে এতোটাও খারাপ ভেবো না।যে আমি মেয়েদের সাথে ওইসব করবো।আরে আমি যাদের ভালোই বাসতাম না তাদের স্পর্শ করবো কিভাবে?আমি সেসব জীবনেও করিনি।”
একটু থেকে তারপর অবাক হয়ে প্রাহির দিকে তাকিয়ে বলে,
-” ওয়ান মিনিট?তুমি এইসব কিভাবে জানো যে প্রেম করলেই সেসব করে।”
প্রাহি একটু ভাব নিয়ে বলে,
-” ইসস, আমি জানি হ্যা।আমার আগের স্কুলের অনেক বান্ধবীরা প্রেম করতো।আর ওরা আমাকে বলতো ওদের বয়ফ্রেন্ডরা ওদের অনেক আদর করে।”
অর্থ এইগুলো শুনে রেগে যায়।বললো,
-” তুই ওরকম খারাপ মেয়েদের সাথে চলতে কেন?”
-“আরে তেমন ফ্রেন্ড না।মানে একক্লাসে পড়তাম একটু আধটু তো কথা হতো তাই না।ওই সময় বলতো।”
অর্থ একটু মজা নেওয়ার জন্যে বললো,
-” আচ্ছা প্রাহি তুমি কেন জিজ্ঞেস করলে আমি কোন মেয়ের সাথে খারাপ কিছু করেছি নাকি।আমি কিছুই করেনি।তারপরেও যদি ধরো করলাম। তাহলে তোমার কি?তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না।তো?”
অর্থ দুষ্টু হেসে ভ্রু নাচালো।প্রাহি এইবার নিজেই ফেসে গেলো। কি বলবে ও?আচ্ছা, ও কি সত্যিই অর্থকে ভালোবাসে?ভালো না বাসলে অর্থকে নিয়ে এতো ইন্সিকিউর ফিল কেন করে?কেন অর্থ যখন বললো ও অনেক প্রেম করেছে তা শুনে ওর বুকের বাপাশে একটা মোচড় দিয়ে উঠলো। তবে কি সত্যিই ও ভালোবেসে ফেলেছে অর্থকে।হ্যা,ভালোবাসে ও অর্থকে।ভালোবাসে।কিন্তু এই কথা তো ও মুখে কোনদিন বলতে পারবে না।ও তো লজ্জায় নির্ঘাত হার্ট এট্যাক করে মারা যাবে।এটা তো জীবনেও বলতে পারবে না।এখনি প্রাহির লজ্জায় গালফুলো গরম হয়ে গিয়েছে।অর্থ শীতল কন্ঠে বললো,
-” কি হলো লজ্জা পাচ্ছো কেন?আমি কি এখানে লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু বলেছি?”
প্রাহি নিজেকে সামলে নিয়ে কপালে ভাজ ফেলে বলে,
-” আপনি একটা পাষাণ লোক।কথা বলবেন না আমার সাথে।”
মুখ ফুলিয়ে কথাগুলো বলে অন্যদিকে ফিরে চাপা হাসি দিলো প্রাহি।অর্থ এইবার হেচকা টানে প্রাহিকে নিজের দিক ঘুরিয়ে আনে।বাঁকা হেসে বলে,
-” নিজেকে কি অনেক চালাক ভাবো?মানে আমি কিছু বুজি না?কথা ঘুরানোর ভালো টেকনিক ইউজ করলা!”
প্রাহি ছোট করে জীভে কামড় দেয়।ইসস,ধরা পড়ে গেলো।প্রাহি এইবার জোড়পূর্বক হেসে অর্থর দিকে তাকালো।অর্থ প্রাহির গাল টেনে দিয়ে হেসে বলে,
-” ইউ আর সো কিউট প্রাহি।আ’ম জাস্ট ব্যাডলি লাভ ইউথ ইউ।”
প্রাহির এইবার এমনভাবে লজ্জা পেলো কথাটা শুনে ও সাথে সাথে অন্যদিকে ফিরে গেলো।ইসস,শেষ কথাগুলো শুনে এখনো ওর বুকটা ধুকপুক ধুকপুক করছে।লোকটা ওকে এতো লজ্জা দেয় কেন?পাশ থেকে অর্থ’র হাসির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। সেই হাস্যজ্জ্বল মুখটা প্রাহির বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু প্রাহি তাকাবে না।একটুও তাকাবে না লোকটার দিকে।অর্থ হাসি থামিয়ে সিটে গা এলিয়ে দিলো।বাস চলতে শুরু করে দিয়েছে অনেক আগেই।বাসের লাট্সগুলোও ওফ।জানালা হালকা করে একটু খুলে দেওয়া সেখান থেকে বাতাস আসছে আর বাতাসে প্রাহির চুলগুলো এলোমেলো উড়ে এসে অর্থ’র চোখেমুখে বারি খাচ্ছে।অর্থ চোখ বুজে তা উপভোগ করছে।ইসস,সমটা যদি থেমে যেতো পারতো ও আর প্রাহি সারাজীবন এইভাবেই একে-অপরের সাথে থাকতো।অর্থ’র কাছে অপেক্ষা করাটা ভীষন দুষ্কর হয়ে পড়েছে।এই মেয়েটাকে ছাড়া এখন আর একমুহূর্তও ওর ভালো লাগে না।অর্থ চোখ বুজে একটা কবিতা বললো,
ভালোবাসা কি বয়স মানে?
কিংবা প্রতিবন্ধকতা?
ভালোবাসা ভালোবাসতে জানে;
কিসের এতো জড়তা?
সময়ের সাথে বাড়লে বয়স,
কমবে প্রেম কে বলেছে?
বৃদ্ধ বেলায়- কথা সরস;
আদিখ্যেতা! কে জেনেছে?
পাকা চুলেও হয় যে খোপা; বেনির গাথুনি-
পাঞ্জাবিতেও লুকনো যায় গাজরা, ফুলের রানী।
ঘামের বিন্দু মুছে আজও বিবর্ণ আচল,
শখ করে আনাও যায় আলতা আর কাজল।
বৃদ্ধ বুকে শ্রান্তি খুজে, বৃদ্ধার আলিঙ্গন,
দুজনেই নীড় খুজে পাই, ছাপিয়ে সকল মহারন।
যুবককালে কদমে কদম যেমন রাখা যায়,
বাড়লে বয়স কদমরা সব ঠিকানা খুজে পায়।
দেহ-মনের সৌন্দর্য সব বয়সে বাড়ে,
অনুভূতির পরিপক্বতা হৃদয় জুড়ে-
ভালোবাসা নেই যে বয়স, নেই যে জড়তা
খাটি ভালোবাসায় মেলে সকল পূর্নতা।
~~~~ভালোবাসার পূর্ণতা
লিখেছেনঃ সাকিসেফ উম্মে ফাতেমা
#চলবে______
আমি একটু ঝামেলায় আছি।ফ্রি হলেই প্রতিদিন গল্প দেবো।সাথে বোনাস দেওয়ার চেষ্টা করবো।কিন্তু আপনারা তো কেউ একটু গঠনমূলক মন্তব্য করেন না।আমি এতোই খারাপ লিখি?আমার উপর কি আপনারা রেগে আছেন কোন কারনে?তাহলে আমি অনেক দুঃখিত।ভালোবাসা নিবেন সবাই।
#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(২১)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
বাস গিয়ে কিক্সবাজার থামলে।ওরা একদিনে কক্সবাজার কোন হোটেলে বিশ্রাম নেয় রাত্রিটা।পরেরদিন সকাল ৯টায় সমুদ্র জাহাজে করে টেকনাফ হতে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।প্রাহি তো খুশিতে আটখানা।কি সুন্দর দেখতে।চারদিকে শুধু পানি আর পানি।থেকে থেকে ওর ঝাঁক বেধে পাখিরা উড়ে যাচ্ছে।প্রাহি লাফাতে লাফাতে হেমন্ত’র কাছে গেলো।গিয়েই হেমন্তকে জড়িয়ে ধরলো।হেমন্ত ইশিকে প্রানভরে দেখছিলো তখনি প্রাহিকে এসে জড়িয়ে ধরায় ওর ধ্যান ভাংগে।প্রাহিকে এতোটা খুশিতে দেখে প্রানটা জুড়িয়ে যায় ওর।মুচঁকি হেসে বলে,
-” আমার বোনটা বুজি অনেক খুশি?”
প্রাহি প্রাণোজ্জ্বল একটা হাসি দিলো।বললো,
-” হ্যা হ্যা! এতোগুলা খুশি।ইসস,ভাইয়া দেখো কতো সুন্দর না চারপাশ দেখতে।কতো কতো পানি।ইসস,আমি যদি সারাজীবনের জন্যে এখানে থাকতে পারতাম।আমার যদি একটা বাড়ি হতো এখানে।তাহলে আমি প্রতিদিন সমুদ্র দেখতে পারতাম।”
হেমন্ত হেসে দিলো প্রাহির কথায়।বলে,
-” তুই আসলেই পিচ্চি।তুই এখানে থাকলে আমার ভাইটা তো মরে যাবে।তোকে ছাড়া থাকতে গিয়ে।”
হেমন্ত’র কথা শুনে প্রাহি চোখ পিটপিট করলো।বললো,
-” ইসস,ডং।সে তো খালি পারে আমাকে ধমক দিতে।আর থাপ্পড় মারতে।বদ লোক একটা।”
তারপর আবার রাগি চোখে হেমন্ত’র দিকে তাকিয়ে বললো,
-” দেইখো তোমার ভাইকে আমি একদিনে অনেক কাঁদাবো।সে আমাকে ধমক দেয় না।আমি না থাকলে তখন বুজবে।তখন অনেক কাঁদবে।কিন্তু আমি থাকবো না।”
হেমন্ত প্রাহির এমন কথায় ওর কলিজা কেঁপে উঠে।বোনটাকে অনেক কষ্টে খুজে বাহির করেছে।আবার হারিয়ে গেলে।এইবার ও নিজে আর বাড়ির লোকতো পাগল হবেই।সাথে ওর ভাইটা মরেই যাবে।হেমন্ত জলদি প্রাহিকে দু হাতে জড়িয়ে নিয়ে।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
-” কেন এসব বেহুদা কথা বলছিস হ্যা?আমার সামনে বলেছিস। বলেছিস।কিন্তু ভাইয়ের সামনে ভুলেও এইগুলা উচ্চারন করিস না।তোকে তো মেরে ফেলবেই সাথে সে নিজেও মরে যাবে।”
প্রাহি বুজতে পারলো একটু বেশিই বারাবারি করে ফেলেছে।তাই হেমন্তকে ছেড়ে দিয়ে এককানে ধরে কিউটভাবে সরি বললো।হেমন্ত হেসে দিলো।তারপর বলে,
-” তা তোর সেই বদলোকটা কোথায়?”
প্রাহি মুখ ফুলিয়ে বলে,
-” আমি কি জানি।আমাকে বললো, এখানেই থাকবে হেমন্ত’র আশেপাশে আমি নিচ থেকে আসছি।সেই যে গেলো।আর কোন খবর নেই।”
-” আচ্ছা।আমি নিচে গিয়ে দেখছি।তুই হিয়া আর ইশির কাছে যা।ওদের কাছে কাছে থাকবি।জাহাজের রেলিং এর কাছে বেশি যাবি না।ঠিক আছে?”
প্রাহি ঘার কাত করে সায় দিলো,
-” আচ্ছা।”
হেমন্ত চলে যেতেই প্রাহি গিয়ে হিয়া আর ইশির কাছে গেলো।ইশি প্রাহির গাল টেনে দিলো।ইশির নাকি প্রাহির ছোট্ট পুতুলের মতো লাগে।তাই সদা ওর গাল টেনে দেয়।ইশি বলে,
-” কোথায় ছিলে প্রাহি?”
প্রাহি হিয়ার বাহু জড়িয়ে ধরে ওর বললো,
-” হেমন্ত ভাইয়ার কাছে ছিলাম।”
হিয়া বললো,
-” কেন অর্থ ভাইয়া কোথায়?”
প্রাহি নাক মুখ কুচকে ফেললো।বললো,
-” আচ্ছা,একটা কথা বলবা।তোমরা উনার কথা শুধু আমার কাছে জিজ্ঞেস করো কেন?আমি কি তার সিসি টিভি ক্যামেরা যে,উনি কোথায় কোথায় কি করেন তা সব আমি দেখি।”
হিয়া আর ইশি একে-অপরের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে দিলো।
প্রাহি গুমড়া মুখ করে বলে,
-” হাসছো কেন তোমরা?”
হিয়া কিছু বলবে তার আগেই ওর ফোনে মেসেজ আসলো আরাফের।আরাফ ওকে ওর কেভিনে দেখা করতে যেতে বলছে।হিয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।এই লোকটাও না।একটু আগেই তো দেখা করে আসলো।এখন আবার ডাকছে।হিয়া, প্রাহি আর ইশিকে বলে চলে গেলো নিচে।ইশি আর প্রাহি নানান রকম কথা বলতে লাগলো আর চারপাশ দেখতে লাগলো।ওরা জাহাজের দোতলায় সবার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।প্রাহি আর ইশির কথার মাজে হঠাৎ ইলফা আসলো সেখানে।এসেই ন্যাকামি স্বরে বললো,
-” হেই ইশি, আন্টি ইজ লুকিং ফোর ইউ।”
ইশি বলে,
-” কেন?”
-” আমি কিভাবে জানবো?তুমি গিয়ে দেখে আসো।”
ইশি ভ্রু-কুচকে প্রাহির হাত ধরে বলে,
-” আচ্ছা! প্রাহি চল।”
প্রাহি ভয়ে আড়ষ্ঠভাবে দাঁড়িয়ে আছে।ইলফা প্রাহির দিকে তীক্ষ্ম নজরে তাকিয়ে বললো,
-” কেন? ও কেন যাবে?”
ইশি ভ্রু-কুটি করে বললো,
-” মানে ও যাবে না কেন?আমি কি ওকে একা ফেলে যাবো না-কি?”
ইলফা বোধহয় একটু ঘাবড়ে গেলো।আমতা আমতা করে বলে,
-” না মানে।আমি আছি তো এখানে।আবার আমি ওকে চিনিও না।শুনলাম অর্থ নাকি ওকে ভালোবাসে।তাই একটু কথা বলতে আসলাম।”
ইশি না চাওয়া সত্তেও ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলে,
-” পরে কথা বলে নিও।এখন প্রাহিকে আমার লাগবে।”
ইশি প্রাহিকে নিয়ে চলে গেলো।পিছনে ওদের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসছে ইলফা।এই মেয়েটা এখন ওর পথের কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কি আছে এই মেয়েটার মাজে?আনস্মার্ট,ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ে।ও দেখতে এই মেয়ের থেকে হাজার গুন বেশি সুন্দর,স্মার্ট,ম্যাচিউর্ড,শিক্ষিত একটা মেয়ে।তাহলে কেন বার বার অর্থ ওকে ফিরিয়ে দেয়।নাহ,ও কিছুতেই অর্থকে নিজ হতে দূরে সরতে দিবে না।অর্থ ওর হবে মানে হবেই।যদি ওকে প্রাহিকে খুন করে হলেও সরাতে হলে সরাবে।বাট অর্থকে ওর চাই চাই।ইলফা চিৎকার করে বলে,
-” অর্থ ইজ মাইন।হি উইল বি মাইন এট এনি কস্ট।”
——
মাথা নিচু করে অর্থ’র সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রাহি।আর অর্থ নেশাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রাহির দিকে।সাদা রাউন্ড ফ্রোক,মাথায় সুন্দরভাবে হিজাব বাধা।শুভ্রতায় ঘেরে কোন এক স্নিগ্ধপরি লাগছে দেখতে প্রাহিকে অর্থ’র কাছে।অর্থ বললো,
-” নিচে কেন আসলে?আমাকে মিস করছিলে বুজি?”
প্রাহি হালকা করে ঘার উঁচু করে বলে,
-” ইসস,আপনাকে মিস করতে আমার বয়েই গেছে।আমি তো ইশি আপুর সাথে নিচে এসেছে।আর আপনি অসভ্যলোকের মতো সবার সামনে দিয়ে আমার হাত টেনেটুনে এখানে নিয়ে এসেছেন।”
অর্থ ভ্রু-কুচকে বলে,
-‘ আমি অসভ্য?”
-” হ্যা! সাথে ঘাড়ত্যাড়াও।বদলোক।”
অর্থ ওর ঘাড়ে হাত বুলালো।ঠোঁটে ঠোঁট চিপে বলে,
-” তোমার কি মনে হয়?তোমার সাহসটা একটু বেশিই হয়ে গেলো না।আমাকে অসভ্য, ঘাড়ত্যাড়া আবার বদলোকও বললে।”
প্রাহি হালকা ঘাবড়ে গেলো।এখন কি এসব বলার কারনে লোকটা ওকে জাহাজ থেকে ফেলে দিবে? ও তো সাতার জানে না।তাহলে ওর কি হবে?ও তো মরে যাবে।কিন্তু প্রাহি তো এতো তাড়াতাড়ি মরতে চায়না,কিছুতেই না।প্রাহি ভয়ে ভয়ে তাকালো অর্থ’র দিকে।সাথে সাথে অর্থ ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে প্রাহির মাথাটা ওর বুকে চেপে ধরলো।প্রাহিও চোখ বুজে ফেললো।এতোক্ষন যাবত ইলফাকে নিয়ে মনের ভীতরে যেই খচখচানিটা ছিলো সেটা যেন এক নিমিষেই গায়েব হয়ে গেছে।ভালোলাগে এই লোকটার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকতে।শান্তি পায় খুব।অর্থ প্রাহিকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজেই বলে,
-” প্রাহি।আমি জাস্ট থাকতে পারছি না তোমাকে ছাড়া।আর একমাস পর তোমাত সতেরো বছর পূর্ণ হবে।আমার আরও একবছর অপেক্ষা।ইসস,তুমি এতো ছোট কেন হলে প্রাহি?তুমি এতো ছোট না হলে তো আমাকে ক্ষনে ক্ষনে এই অপেক্ষার দহনে পুড়তে হতো না।”
প্রাহি বোকার মতো বললো,
-” আমি বড় কিভাবে হবো আজব?আমি মেজিক বল যে আমাকে পানিতে ভিজিয়ে রাখলে আমি বড় হয়ে যাবো।”
অর্থ হাসবে না কাঁদবে বুজতে পারছে না।ও কি সুন্দর করে আবেগপ্রবন কথাগুলো বললো।আর এই মেয়ে কিসের ভীতরে কিসের কথা বলে।আসলেই ওর কপালে দুঃখ আছে বহুত।এই বাচ্চা বউ নিয়ে।অর্থ প্রাহির গাল টেনে ধরলো।বলে,
-” এতো বোকা কেন তুমি?”
প্রাহি মুখ গুমড়া করে রাখলো।অর্থ হেসে দিলো।তারপর হঠাৎ কিছু একটা ভেবে সিরিয়াস ভঙিতে বলে,
-” লিসেন প্রাহি।আমি বিয়ের আয়োজনের জন্যে ব্যস্ত থাকবো।তাই তোমার খেয়াল হয়তো ঠিকভাবে রাখতে পারবো না।কিন্তু তুমি নিজের সর্চোচ্চ খেয়াল রাখবে।হিয়া আর ইশির সাথেই বেশি থাকবে বুজেছো।তুমি তো জানো তোমার কিছু হলে আমি পাগল হয়ে যাবো।আর ইলফা এন্ড ওর মায়ের থেকে দশহাত দূরে থাকবা।ডাকলেও যাবে না।ঠিক-আছে?”
প্রাহি মাথা দুলালো।অর্থ মুচঁকি হেসে প্রাহির কপালে চুমু দিয়ে ওকে একপাশ হতে জড়িয়ে ধরে সমুদ্র দেখতে লাগলো।
#চলবে________