#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(22+26)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে সাগর বক্ষের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এ দ্বীপ ৭.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার। এ দ্বীপকে ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ও বলা হয়। মূল দ্বীপ ছাড়াও আরও একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে যা ‘ছেড়াদ্বীপ’ নামে পরিচিত। যেদিকে চোখ যায় শুধু নীল আর নীল। আকাশ আর সমুদ্রের নীল সেখানে মিলেমিশে একাকার। এখানে অগভীর দীর্ঘ সমুদ্রতট, সামুদ্রিক প্রবাল, সাগরের ঢেউয়ের ছন্দ সবাইকে মুগ্ধ করে। নান্দনিক নারিকেল গাছের সারি যেন চিরল পাতায় দোলা দিয়ে যায়। সাগরতীরে বাঁধা মাছ ধরার নৌকা-ট্রলার, সৈকতজুড়ে কাঁকড়া, ঝিনুক, গাঙচিল- এসবই সেন্টমার্টিন দ্বীপের বৈশিষ্ট্য। যা ছোট্ট এ দ্বীপকে করেছে অনিন্দ্যসুন্দর। স্বচ্ছ পানিতে জেলি ফিশ, হরেক রকমের সামুদ্রিক মাছ, কচ্ছপ এবং প্রবাল এ দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ।
সবাই সাড়িবদ্ধভাবে হাটছে।কারন সেন্ট-মার্টিন ফেরিঘাট হতে একটু দূরেই ব্লু মেরিন রিসোর্ট আছে।হিয়ার বিয়ের জন্যে সেটাই বুকিং করা হয়েছে।হিয়া, প্রাহি আর ইশি একসাথে হাটছে।আর নিজ নিজ প্রেয়সীদের চোখে চোখে রাখছে আরাফ,অর্থ আর হেমন্ত।
প্রাহি তো হা করে চারদিক দেখছে।চোখের সামনে প্রকৃতির এমন সুন্দর জ্বলসানো রূপ দেখে ও বিমোহিত।মানে ওর চোখের কোণে অস্রু কনা এসেও ধরা দিয়েছে।কিন্তু হঠাৎ হাটার পাশে পিছন হতে ধাক্কা অনুভুত হওয়ায় হুরমুড়িয়ে সামনে উপুর হয়ে পরে প্রাহি।ওর সামনেই একটা ছোট্ট পাথর ছিলো সেখানেই কপালটা লেগে অনেকখানি কেটে গেলো।ফলে গলগল রক্ত ঝরে পুরো অবস্থা খারাপ।এদিকে আকস্মিক কি হলো কেউ বুজতে পারলো না।প্রাহির শরীরে একবিন্দু শক্তি নেই যে ও উঠে দাড়াবে।মাথায় ভীষন আঘাত পেয়েছে।অর্থ দৌড়ে গেলো প্রাহির কাছে।বাকিরাও প্রাহির দিকে এগিয়ে আসলো।অর্থ গিয়েই প্রাহির মাথাটা উঠিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো।অস্থির কন্ঠে বলে,
—-” প্রাহি, হেই প্রাহি।এই মেয়ে তাকাও আমার দিকে।চোখ খুলে রাখো।আমি এখনি তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।ডোন্ট ক্লোজ ইউর আইছ ওকে।”
অর্থ জলদি প্রাহিকে কোলে তুলে নিলো।এরমাজে হিয়া প্রাহির কপাল একটা রুমাল দিয়ে বেধে দিয়েছে।প্রাহির চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে।এ স্পষ্ট বুজেছে কে ওকে ধাক্কা মেরেছে।কিন্তু আপাততো সেটা বলার মতো ও কোন শব্দ পাচ্ছে না।ওর শরীর আর ওকে চোখ খুলে রাখার সায় দিচ্ছে না।আস্তে আস্তে প্রাহি চোখ বুজে নিলো।এতে যেন অর্থ’র ভয়টা আরো বেড়ে গেলো।অর্থ চিৎকার করে প্রাহির নাম ডাকতো লাগলো।
এদিকে হেমন্ত সবাইকে রিসোর্টে যেতে বলে প্রাহিকে নিয়ে অর্থ আর হেমন্ত আবারও টেকনাফ রওনা হলো।কারন সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কোন চিকিৎসা ব্যাবস্থা নেই।একটা হস্পিটাল আছে কিন্তু সেখানে কখনো ডাক্তার থাকে না।
—–
—-“কাজটা কি ঠিক করলে?যদি মেয়েটা তোমার নাম বলে দেয়?”
ইলফার মা’র কথায় ইলফার মধ্যে কোন ভাবান্তর হলো না।মুখে শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে বলে,
—-“তুমি চিন্তা করোনা।ওই মেয়ে কাউকেই কিছু বলবে না।শুধু মনে রেখো অর্থকে আমার চাই।যেকোন মূল্যে চাই।ওই মেয়েটাকে তো আমি এখানেই মেরে সমাধি দিয়ে দিবো।”
ইলফা মা এসে মেয়ের কাধে হাত রাখলেন।চিন্তিত স্বরে বলে,
-” আরাফ জানতে পারলে কিন্তু আমাদের বাড়ি থেকে বাহির করে দিবে।আর অর্থ যে কি করবে সেটা কল্পনার বাহিরে।”
ইলফা রিরক্ত হয়ে বললো,
-” উফফ! মা এতো ভাবাভাবি করলে কি কোন কাজ করা যাবে?সাহস নিয়ে একটা কাজ করতে হয় যাতে কাজটা অনায়াসে আমরা কমপ্লিট করতে পারি।”
ইলফা ভয়ানকভাবে হেসে কাউকে ফোন দিলো।
—-” যেই কাজ দিয়েছিলাম।সেটা করলে আমি আরো ফিফটি কে বারিয়ে দিবো।বাট কাজটা হওয়া চাই।এখানে কখন আসবে? গুড,জলদি আসো আমার কাজটা হওয়া চাই মানে চাই।”
ইলফা হা হা করে হাসতে লাগলো।আর ওর মার মুখে চিন্তার আভাস।
——-
প্রায় চারঘন্টা কেটে গেছে।রিসোর্টের বিশাল বড় একটা টেবিলে সবাই একসাথে লাঞ্চ করতে বসেছে।কিন্তু কারও মুখে কোন কথা নেই।সবাই চিন্তিত।রায়হানা বললেন,
—-” মেয়েটার উপর দিয়েই যতো ঝড়ঝাপ্টা আসে।কেন যে আল্লাহ্ ওকে এতো কষ্ট দেয়।”
হেনা চোখ মুছে বলেন,
—-” আমার মেয়েটা কারো সাথে কোনদিন খারাপ কিছু করেনি।আল্লাহ্ কেন যে ওকে বার বার আঘাতের সম্মুখীন করেন।”
হিয়াজ সবাইকে শান্ত হতে বলেন,
—-” চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।অর্থ আর হেমন্ত গিয়েছে তো।”
ইশি খাবার খেতে খেতে ওর সামনে বসা ইলফার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এখন অর্থ আসলেই ওকে যা করার যা করার করতে হবে।এই ডায়নীটাকে ওর একটুও দেখতে ইচ্ছে করে না।প্রাহিকে যে ইলফা ধাক্কা দিয়েছে সেটা ইশি নিজেও দেখেছে।এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
খাওয়া দাওয়া প্রায় হয়ে গিয়েছে।এর মধ্যেই রিসোর্টে প্রবেশ করলো অর্থ,হেমন্ত,আর প্রাহি।প্রাহিকে কোলে নিয়ে আসছে অর্থ।প্রাহি নিষ্প্রান হয়ে অর্থ’র বুকের সাথে ল্যাপ্টে আছে।ওরফ কপালে আর আর ডানহাতে ব্যান্ডেজ করা।সবাই টুকিটাকি জিজ্ঞেস করছিলো।কিন্তু অর্থ একটা কথায় জবাব দেয়নি।হেমন্ত সবাইকে টুকটাক বুজিয়ে শুনিয়ে দিয়েছে।অর্থ গম্ভীর কন্ঠে হিয়াকে উদ্দেশ্যে করে বলে,
-” হিয়া তোদের রুমটা কোথায়?”
হিয়া যেতে যেতে বলে,
-” আসো ভাইয়া দেখিয়ে দেই।”
হিয়া পিছু পিছু অর্থ প্রাহিকে নিয়ে চললো।যাওয়ার আগে রায়হানাকে স্যুপ নিয়ে আসতে বলেছেন।আর আপাততো প্রাহির কাছে ভীর করতে মানা করেছেন।যার যার রুমে তারা তারা যেন বিশ্রাম নেয়। অর্থ রুমে প্রবেশ করে প্রাহিকে বিছানায় সুয়িয়ে দিলে ওর ডানহাতের কনুইতে হালকা ব্যাথা পেয়ে ‘ আহহহ’ করে উঠে।অর্থ তড়িঘড়ি করে বলে,
—-” সরি! সরি! আমি দেখিনি।দারাও হাতের নিচে একটা পিলো দিয়ে দেই।”
অর্থ সাবধানে প্রাহির হাতের নিচে বালিশ দিয়ে তার ওপর প্রাহির হাতটা রাখলো।এর মাজে রায়হানা এসে স্যুপ দিয়ে গেলেন।এর বাকি সবাইকে একটু সময়ের জন্যে রুম ত্যাগ করতে বললেন।সবাই যেতেই অর্থ প্রাহির দিকে ঝুকে ওর বুকে মাথা রাখলো।প্রাহি ওর বাম হাতটা অর্থ’র মাথায় রাখলো।অর্থ ধরা গলায় বলে,
—-” কেন এমন করো?কেন নিজের খেয়াল রাখো না?আমাকে কষ্ট দিতে কি তোমার ভালো লাগে?”
প্রাহি মৃদ্যু হেসে বলে,
—-” আমি ঠিক আছি। চিন্তা করবেন না।”
অর্থ প্রাহির বুক হতে মাথা উঠিয়ে বললো,
—-” হ্যা তা তো দেখছি।ঠিকভাবে কথাও বলতে পারছো না।এখন চুপচাপ এই স্যুপ টুকু খাবে।”
অর্থ উঠে প্রাহিকে স্যুপ খাওয়াচ্ছে, প্রাহিও খেয়ে নিলো।তারপর মেডিসিন খাইয়ে দিলো।তাপর প্রাহিকে বুকে জড়িয়ে নিলো।প্রাহি হালকা আওয়াজে বলে,
-” এই সামান্য আঘাত কিছু না।আপনি শুধু শুধু অস্থির হচ্ছেন।এর থেকেও কতো বেশি আঘাত পেয়েছি।মামা মামি কতো জঘন্যভাবে অত্যাচার করেছে।এইগুলা কিছু না।শুধু শুধু চিন্তা করবেন না।”
অর্থ প্রাহির কপালে চুমু খেয়ে বলে,
—-” আমার সামনে আর কোনদিন যেন এইসব কথা আর বলতে না শুনি।আর আমার কাছে আসলে এইসব কঠিন কথা বলবে না। সবার সামনে আমি তোমাকে কঠিন প্রাহি হিসেবে দেখতে চাই।আর আমার সামনে তুমি হবে আহ্লাদি আহি। তোমার সব আহ্লাদ আমি পূরন করবো।তুমি আমার সামনে যতোটা নরম হয়ে থাকবে,বাচ্চামো করবে এক একটা জিনিস আবদার করবে।কিন্তু বাকি সবার কাছে তুমি কঠিন মনের অধিকারি হবে প্রাহি।তোমাকে শক্ত মনের হতে হবে।পরিস্থিতি সামলে উঠার ক্ষমতা রাখতে হবে।”
প্রাহি ছলছল চোখের অর্থ’র দিকে তাকালো। বললো,
-” আমাকে একটু সময় দিন।আমি ইনশাআল্লাহ আপনার মনের মতো প্রাহি হয়ে দেখাবো।আমাকে আরেকটু সময় দিন।আমি পড়ালেখা করে নিজের পায়ে দাড়াবো।আমার আব্বু আম্মুর মনের ইচ্ছা পূরন করবো। শুধু একটু অপেক্ষা আর আপনি সাথে থাকলেই হবে।কি থাকবেন তো আমার সাথে?”
প্রাহি ওর হাতটা বাড়িয়ে দিলো অর্থ’র দিকে।অর্থ প্রাহির হাতটা নিজের হাতের মুঠোও নিয়ে চুমু খেলো।প্রাহি হালকা কেঁপে উঠে।চোখ বন্ধ করে নিয়ে আবার খুলে তাকালো।অর্থ প্রাহির হাতটা ওর বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
—-” তুমি তো আমার অস্থিত্বে মিশে আছো।নিজের অস্থিত্ব ছাড়া কি কেউ কোনদিন ভালো থাকে।এই আমি অর্থ তোমার সাথে থাকবো সারাজীবন। শেষ নিশ্বাস অব্দি।আমার বেচে থাকার কারন তুমি।তোমার কিছু হলে আমি থাকবো কিভাবে?তুমি আমার।শুধু এবং শুধু আমার।”
#চলবে________
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।আমি চেষ্টা করছি প্রতিদিন দেওয়ার।কিন্তু হয়ে উঠছে না।আমাকে ক্ষমা করবেন।#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(২৩)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
রিসোর্টের নিচের হলে অর্থ’র পরিবার, আরাফের পরিবার দাড়িয়ে আছে সাথে ইশিও আছে।আর বাকি যারা তাদের রুম হতে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।প্রাহি ঘুমাচ্ছে।ওকে ঘুমের ঔষুধ দেওয়া হয়েছে।অর্থ ইলফা আর ওর মায়ের দিকে ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।চোখজোড়া রক্তিম লাল বর্ণ।নাক,কান লাল হয়ে আছে রাগের কারনে।কালচে খয়েরী ঠোঁটজোড়া তিরতির করে কাঁপছে।কালচে বাদামী চোখজোড়া দিয়ে যেন পারলে সব ধ্বংশ করে দিবে।অর্থ ধীরপায়ে এগিয়ে যায় ইলফার দিকে।অত্যন্ত শীতল কন্ঠে বলে,
—” তা ইলফা শুনলাম তোমার সাহসীকতা নাকি অনেক বেশি?”
অর্থ’র এমন শীতল কন্ঠস্বর শুনে যেন ইলফা হালকা ঘাবড়ে গেলো।তবুও বাহিরে তা প্রকাশ করলো না।বুকের উপর দুহাত আড়াআড়িভাবে ভাঁজ করে বলে,
—” ইয়েস। ইউ আর রাইট।আমার সাহসটা একটু বেশি।”
অর্থ হাসলো।হিংস্র দেখালো সেই হাসি।বিদ্রুপি কন্ঠে বললো,
—” তাই বলে একটু বেশি-ই সাহস দেখালে নাহ?ডোন্ট ইউ নো দ্যাট আই আম অর্থ সিকদার।আর এই অর্থ’র কলিজাকে কেই আঘাত করলে যে অর্থ সেই ব্যাক্তির কলিজা ছিড়ে শিয়াল কুকুরদের খাইয়ে দেয়। স্যে সামথং?ডোন্ট ইউ নো?”
ইলফা ভয় পেলো।মেয়েটা কি তবে ওকে দেখে ফেলেছিলো ধাক্কা দেওয়ার সময়।কিন্তু কিভাবে হলো?এতোটা আড়ালভাবে সে ধাক্কা দিয়েছিলো বুঝার উপায় ছিলো না।
এর মাজে আরাফ প্রশ্ন করে উঠলো,
—” কি হয়েছে অর্থ? তুই এতো রেগে কেন? আর এইরাতে এখানে সিনক্রিয়েট কেন করছিস?ভুলে গেছিস এটা আমাদের বাড়ি না এটা একটা রিসোর্ট। এখানে আরো অনেক মানুষ আছে অর্থ।দোস্ত কোন সমস্যা হলে আমাকে খুলে বল।”
অর্থ ওর অগ্নিঝরা চোখ দিয়ে আশপাশ তাকালো।দু একটা হোটেল কর্মিচারি আছে।আর বাকিরা ঘুমাচ্ছে।অর্থ চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে নিলো।ইলফা আর ওর মা আরাফের ফ্যামিলি।ও কে একটু মাথা ঠান্ডা করতে হবে।কারন ও তার বন্ধুর থেকে বেশি ভাইকে কষ্ট দিতে চায়না।অর্থ রাগ সামনে চাপা স্বরে বলে,
—” তোর কাজিন কি করেছে ওর থেকেই আস্ক কর।”
আরাফ ভ্রু-কুচকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায় ইলফার দিকে।এই অসভ্য মেয়েটা আবার কি করেছে।এটাকে একদম দেখতে পারেনা আরাফ।ও বলে,
—” ইলফা কি করেছিস তুই যে,অর্থ এমন রেগে আছে?”
ইলফা ভয়টাকে সামলে নিলো।ফাঁকা ঢোক গিলে বলে,
—” আমি কিছুই করিনি তো ভাই।”
ব্যস,এটাই যথেষ্ট ছিলো অর্থ’র চাপা রাগটা সিংহের ন্যায় বেড়িয়ে আসার।অর্থ রায়ে হংকার দিয়ে বলে,
—“আই উইল কিল ইউ, আই উইল কিল ইউ নোইংলি। তুই আমার প্রাহিকে ধাক্কা দিয়ে রক্তাক্ত করেছিস।তুই কি বুজেছিস আমি জানবো না।ডু ইউ নো দ্যাট ফোর দিছ ওয়ার্ক ওফ ইউর্স নাউ আই ওয়ান্ট টু কাট ইউ ইন্টু পিছেছ।শুধু আরাফের কাজিন বলে এখনো কিছু বলছিনা। ক্যারেক্টারলেছ ওমেন।”
ইলফা রেগে গেলো।চিল্লিয়ে বলে,
-” প্রমান ছাড়া এই কথা কিভাবে বলছো তুমি অর্থ?”
অর্থ বাঁকা হাসলো।ধীর কন্ঠে ইশিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” ইশি কাম এন্ড সো দেম দ্যাট ভিডিও।”
ইশি এগিয়ে এসে নিজের ফোন বাহির করে একটা ডিডিও সবাইকে দেখালো সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ইলফা প্রাহিকে ধাক্কা দিয়েছে।আসলে তখন রিসোর্টে আসার পথে ইশি নিজের ফোন দিয়ে সমুদ্র আর আশেপাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো ক্যামেরায় বন্ধি করছিলো আর সেই ভিডিওটায় ইলফার এই জঘন্য কাজটাও রেকর্ড হয়ে যায়।ইলফা ভয় পেয়ে তরতর করে ঘামতে লাগলো।তবু দমে না গিয়ে গলার স্বর খানিক জোড়ালো করলো
—” আমি তো ইচ্ছে করেনি।ওটা ভুলবশত হাটতে গিয়ে প্রাহির সাথে ধাক্কা লেগে গিয়েছিলো।আর ধাক্কা খেয়ে প্রাহি পরে গিয়েছে।”
অর্থ’র রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।একটা মেয়ে কতোটা মিথ্যে বলতে পারে তা ইলফাকে দেখলে বুজা যেতো না।রাগে অর্থ হাতের কাছে একটা সো-পিছ পেয়ে তা সজোড়ে আছার মারলো।রায়হানা দৌড়ে ছেলের কাছে গেলেন।অর্থ বাহুতে আলতোভাবে হাতের স্পর্শ করে বললেন,
—” রাগে না বাবা।মাথাটা ঠান্ডা কর বাবা।তোর আব্বু তো আছেন তোর চাচা আছে আরাফের বাবা আছেন উনারা দেখছেন বিষয়টা তুই শান্ত হো বাবা।”
অর্থ মায়ের কোমল হাতের স্পর্শ পেয়ে খানিকটা ঠান্ডা হলো।এই মানুষটার সামনে ও কখনই রাগ নিয়ে থাকতে পারে না।তার মা কমল হৃদয় ধারন করা জননী।যিনি তার সন্তানকে অনেক ভালোবাসে।ইলফা সেদিক থেকে দৃষ্টি সরালো।সাহস নিয়ে আবার কিছু বলতে নিবে তার আগেই চটাস করে একটা রাম চড় এসে তার গালে পরলো।গালে হাত দিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো ইলফা।ফর্সা মুখ রক্তিম হয়ে গিয়েছে।মাথা উচিঁয়ে তাকিয়ে দেখে আরাফের বাবা রাগী চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।ইলফা কাঁপা গলায় কিছু বলবে তার আগে আরেকটা চর মারেন তিনি।ইলফা এইবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠেন।আরাফের বাবা চেঁচিয়ে বলেন,
—” তুই কি মনে করেছিস?আমি বুজিনি যে তুই সব কিছু ইচ্ছে করে করেছিস?আরে তোকে আমি হারেহারে চিনি।তোর বাবা নেই।আর আমার একটা মেয়ে নেই।আমি ছোট থেকে তোকে নিজের মেয়ের থেকেও বেশি আদর যত্নে বড় করেছি।তাই তুই কি করতে পারিস আর পারিস না আমি খুব ভালোভাবেই জানি।তুই কালই চলে যাবি বিদেশে আবার।এখানে তোর থাকা চলবে না।”
ইলফার মা ভয়ে ভয়ে মেয়ের হয়ে কিছু বলতে নিবেন তার আগেই আরাফের বাবা হাত উঠিয়ে উনাকে থামিয়ে দেন।বলেন,
—” তুমি অন্তত কিছু বলো না।মেয়েটাকে নষ্ট করার পিছনে এক মাত্র হাত তোমার।তাই অন্তত তুমি কোন সাফাই গাইতে আসবে না।এখন দুজনে উনাদের কাছে ক্ষমা চাও।নাহলে আমি ইলফাকে জেলে পুরে দিবো।কারন ও যা করেছে তা একপ্রকার এটেম টু মার্ডার কেস। ”
ইলফা আর ওর মা জেলের কথা শুনে ভয় পেলেন।তড়িঘড়ি করে অর্থ’র ফ্যামিলির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন।ইলফা বললো ও আর কখনই এই কাজ করবে না।রায়হানা বেগম আরাফের বাবাকে বুজালেন।ইলফা যেহেতু ক্ষমা চেয়েছে তাই ওকে আর বিদেশে যেতে দিতে না
একমাত্র ভাইয়ের বিয়েটা অন্তত এঞ্জয় করুক।পরে নাহয় চলে যাবেন।আরাফের বাবা রাজি হলেন তিনিও ক্ষমা চাইলেন অর্থ’র ফ্যামিলির কাছ থেকে।তারপর আস্তে আস্তে মুরব্বিরা যার যার বরাদ্ধ করা রুমে চলে গেলো।অর্থ, আরাফ আর হিয়াও চলে যাচ্ছে।ইশি সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছে।এর মাজেই হেমন্ত ওর কানে কানে বলে,
—” আমি তো ভাবি তুমি ভীতুর ডিম।কিন্তু সঠিক জায়গায় সুষ্ঠভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে খুব ভালোভাবে স্টেপ নিতো পারো।একটুও ভয় পাও না।আই লাইক ইট।কিন্তু আমার বেলাতেই তোমার যতো ভয়। এন্ড আই ডোন্ট লাইক ইট।”
শেষের বাক্যটা মুখ গুমড়া করে বললো ইশির দিকে তাকিয়ে হেমন্ত।তারপর চোখমুখ অন্ধকার করে নিজের রুমে চলে গেলো।ইশি হা করে হেমন্ত’র দিকে তাকিয়ে রইলো।পরক্ষনে মাথা নিচু করে হেসে দিলো।এই লোকটাও না আস্তো পাগল।নিজে তো ‘ ভালোবাসি ‘ বলবেই না।আবার নিজে নিজেই কষ্ট পাবে।কি মনে করেছে ইশি কি বুজে না যে হেমন্ত ওকে ভালোবাসে?উহুম! ইশি সব জানে তবুও কিছু বলে না।ইচ্ছে করেই হেমন্তকে এভোয়েট করে।কি করবে আর ও?রাগ লাগে ইশির প্রচন্ড রাগ? এই লোকটা এমন কেন?কে বলবে যে হেমন্ত অর্থ’র ভাই।অর্থ কি সুন্দর নিজের মনের কথা অকোপটে বলে বেড়াচ্ছে।আর সেখানে হেমন্ত ওকে শুধু দেখতেই থাকে দেখতেই থাকে।’ ভালোবাসি’ তো দূরে থাক, ‘ ভালো আছো?’ এটাও ঠিকভাবে জিজ্ঞেস করতে পারে না সে ইশিকে।ইশি শুধু অপেক্ষায়ই করে কবে হেমন্ত ওকে নিজের মনের কথা বলবে।আর ইশিও অকোপটে সেদিন ওর মনের কথা বলে দিবে।কিন্তু লোকটা কিছুই বলে না।মুখ ফুলিয়ে ইশিও রুমে চলে গেলো।
——–
—” আমি ছারবো না ওই মেয়েকে। কিছুতেই ছাড়বো না।বাবা আমাকে আজ মারলো ওই মেয়ের কারনে।আমি এই অপমান ভুলবো কিছুতেই না।অর্থ আমার হবে। আমারই হবে। আর ওই মেয়েকে মরতে হবে।” নিজের রুমে বসে মদ গিলছে ইলফা আর ক্ষনে ক্ষনে এই কথাগুলো বলেই হিংস্র হাসিতে মেতে উঠছে।ওর চোখে মুখে হিংস্রাতা স্পষ্ট।
কি হতে চলেছে প্রাহির সাথে।সামনে কি হবে প্রাহির।অর্থ কি পারবে তার প্রাহিকে ঠিকঠাক তার বুকের মাজে আগলে রাখতে?যদি না পারে তবে……!
#চলবে_______
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।ভালো রেস্পন্স করলে কাল সকালই আরক পর্ব দিবো।#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(২৪+২৫)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
—” আপনি আমাকে কিভাবে ধোকা দিতে পারেন অর্থ ভাইয়া?কিভাবে?যদি ধোকাই দিবেন তাহলে ভালোবাসার এতো অভিনয় কেন করলেন?কেন?”
কথাগুলো বলেই ফুফিঁয়ে কেঁদে উঠলো প্রাহি।আজ মনে বড় ব্যাথা ওর।নিজের সবচেয়ে আপন ভালোবাসার মানুষটা আজ ওকে জীবনের বেঁচে থাকার সম্পূর্ণ আশা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে।কিভাবে পারলো লোকটা ওকে এভাবে ঠকাতে।ও যে লোকটাকে ভালোবেসে ফেলেছে।এখন কি করবে প্রাহি?কি করবে?অর্থ বাঁকা হেসে প্রাহির সামনেই ইলফার কোমড় জড়িয়ে ধরলো।চুমু খেলো ইলফার গালে।তারপর প্রাহিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—” ওহ কামন প্রাহি।তুমি আমার মোহ ছিলে।যা কেটে গিয়েছে।এখন তোমার মাজে আমার কোন ইন্টেরেস্ট নেই।একটু ছুলেই তুমি ছাড়াছাড়ি শুরু করে দেও।আই ডোন্ট লাইক দিস।আমার জন্যে ইলফাই ঠিক আছে।লুক এট হার,ইলফা ইজ মাচ প্রিটি দেন ইউ।সি ইজ গোর্জিয়াস বিউটিফুল,সেক্সি লেইডি।এন্ড আই লাভ হার।নট ইউ।এখন আমার একটাই লাস্ট কাজ আর সেটা হলো……!”
বাকি কথা বলার আগেই অর্থ প্রাহিকে পাহার থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।প্রাহি আর্তনাদ চারদিকে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।আর অর্থ আর ইলফা মুখে শয়তানি হাসি।
ঘুম থেকে চিৎকার করে লাফ দিয়ে উঠলো প্রাহি।সারা শরীর ওর ঘেমে নেয়ে একাকার।ওর এমন চিৎকারে পাশে ঘুমিয়ে থাকা হিয়া আর ইশিও উঠে বসেছে।হিয়া অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,
—” কি হয়েছে প্রাহি?এভাবে চিৎকার করলি কেন?ভয় পেয়েছিস বলনা?”
প্রাহি কিছুই বলছে না শুধু বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছে।দম আটকে আসছে ওর।চোখ দিয়ে অবিরাম অস্রুকনা গড়িয়ে পরছে।হাতপা ঠান্ডা হয়ে আসছে।বুকের মাজে অসহ্য যন্ত্রনা করছে।হৃদপিন্ড যেন কেউ খামছে ধরেছে।ওর শরীরের এমন অস্থির আন্দোলন দেখে ভয় পেয়ে যায় হিয়া আর ইশি।ইশি প্রাহির গালে হাত দিতেই চমকে উঠে।প্রাহির শরীরের আগ্নেয়গিরির ন্যায় উত্তপ্ত হয়ে আছে।ইশি ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,
—” হিয়া প্রাহির তো জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে।ব্যাথার কারনেই বোধহয় জ্বর এসেছে।কি করবি এখন?”
হিয়া ততোক্ষনে গায়ে উড়না জড়িয়ে নিয়েছে।রুমে র দরজা খুলে যেতে যেতে বলে,
—” আমি অর্থ ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আসছি।তুই একটু ওকে সামলা।”
ইশি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।হিয়া যেতেই ইশি প্রাহিকে সুইয়ে দিয়ে ও উঠে ওয়াশরুমে মগ ভর্তি পানি এনে রুমাল দিয়ে প্রাহির গলা,ঘার মুছে দিলো। অসম্ভবভাবে ঘেমে গেছে মেয়েটার শরীর।জলপট্টিও দিতে পারবে না।কারন মাথায় ব্যান্ডেজ করা।
হিয়া গিয়ে অর্থ’র দরজার সামনে দাড়ালো দু তিনবার নক দিতেই দরজা খুলে বের হলো অর্থ।ও এখনো ঘুমায়নি।অফিসার কাজ করছিলো।হিয়া এতো রাতে এভাবে অস্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ও নিজেও ঘাবড়ে যায়।প্রাহির কিছু হলো নাতো আবার?অর্থ দ্রুত বলে,
—” কি হয়েছে হিয়া? এভাবে হাপাচ্ছিস কেন?”
হিয়া হাপাতে হাপাতে বলে,
—” ভাইয়া তুমি চলো আগে আমাদের রুমে চলো।”
হিয়া বলেই দ্রুত ওদের রুমের দিকে চলে গেলো।অর্থও নিজের রুমের গেট লক করে ছুটলো প্রাহিদের রুমে।গিয়ে দেখে প্রাহি বিছানায় নিস্তেজ হয়ে সুয়ে আছে।বিধ্বস্তপ্রায় যন্ত্রনাময় ফ্যাকাশে মুখশ্রী।অর্থ হৃদয়টা যেন কেউ যন্ত্রনার পাথর দিয়ে থেতলে দিলো।তাড়াতাড়ি প্রাহির কাছে গিয়ে ওকে টেনে বুকের মাজে নিয়ে বলে,
—” এই প্রাহি? কি হয়েছে?তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?হিয়া ওর কি হয়েছে?”
হিয়া কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,
—” আমরা ঘুমোচ্ছিলাম।হঠাৎ ও চিৎকার করে উঠিলো।উঠে দেখলাম ও কেমন যেন করছে।গায়ে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে।”
অর্থ আর কথা বাড়ালো না।বিছানা থেকে নেমে প্রাহিকে আলগোছে কোলে নিয়ে হিয়া আর ইশির উদ্দেশ্যে বলে,
—” আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।রুম লক করে দে।আর ভোরের আগে ফোন করলে রুম খুলে দিস।জ্বর কমলে রেখে যাবো।আমার কাছেই রাখতাম।বাটা মানুষ খারাপ বলবে।বুজেছিস?চিন্তা করিস না ঘুমিয়ে পরিস।”
ইশি প্রাহি সহমত পোষন করলো।অর্থ প্রাহিকে নিয়ে নিজের রুমে ডুকলো।প্রাহিকে সুইয়ে দিয়ে ওর গায়ে কম্বল দিয়ে দিলো।প্রাহির চোখে মুখে পানির ছিটা দিতেই পিটপিট করে চোখ খুলে প্রাহি।প্রাহি চোখ খুলতে দেখে শ্বাস ছাড়লো অর্থ এতোক্ষন মনে হচ্ছিলো দম আটকে আসছে।অর্থ আদুরে কন্ঠে বলে,
—” ভয় পেয়েছিলে প্রাহি?ঘুমের ঘোরে চিৎকার কেন করছিলে?”
প্রাহি ওর নিস্তেজ শক্তিহীন শরীরটা নিয়েই চটজলদি উঠে অর্থকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর ফুফিঁয়ে কেঁদে উঠে।কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
—” আপনি আমাকে রেখে আর কাউকে ভালোবাসেন না আমি জানি।আমি ব্যাথা পেলে তো আমার থেকে বেশি কষ্ট আপনার হয় আপনি তাহলে আমাকে মেরে ফেলবেন কিভাবে বলেন?বলুন না?আপনি আমাকে ভালোবাসেন না?আমি মরে যাবো বলুন না?”
অর্থ বুজলো প্রাহি খারাপ কোন স্বপ্ন দেখেছে।প্রাহির মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরলো।প্রাহির শরীরের মাত্রারিক্ত উষ্মতা যেন ওর শরীর পুড়িয়ে দিচ্ছে।কিন্তু এতে অর্থ’র কিছুই যায় আসে না।অর্থ প্রাহির চুলের ভাঁজে ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে বলে,
—” লিসেন প্রাহি।আমি জানি না তুমি স্বপ্নে কি দেখেছো না দেখেছো।বাট ট্রাস্ট মি এই আমি অর্থ পুরোটাই তোমার।আর তুমি আমার।আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসি না।হাজারও মেয়েদের ভীরে আমি তোমাকেই ভালোবাসি,তোমাতেই মুগ্ধ হয়।তাহলে কেন অযথা ভয় পাচ্ছো?”
প্রাহি অর্থ’র কথাগুলো শুনে অর্থকে আরো জোড়ে জড়িয়ে ধরলো। অর্থ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
—“দেখি আমাকে একটু ছাড়ো তো,আমি মেডিসিন আনছি।”
প্রাহি নিভু নিভু চোখে তাকালো, আড়ষ্ঠ কন্ঠে বলে,
—” নাহ,আপনি কোথাও যাবেন না।আপনি গেলেই ওই ইলফা আপনাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবে।”
অর্থ এতোক্ষনে বুজলো প্রাহির মনে ইলফাকে নিয়ে ভয় ডুকে গেছে।ইলফাকে নিয়ে প্রাহির মনে অনেক ভয়।অর্থ কিছু একটা ভাবলো।তারপর বললো,
—” ইলফা আমাকে তার কাছে নিয়ে গেলে তোমার কি প্রাহি?”
প্রাহি ঠোঁট উলটে বলে,
—” আমারই তো সব!”
—” কেন আমাকে নিয়ে গেলে কি হয়েছে?তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না।তাহলে ইলফার কাছে গেলে তোমার কি?”
প্রাহি মাথা তুলে তাকালো।ওর চোখে অর্থকে হারিয়ে ফেলার ভয় স্পষ্ট।চোখে পানি টলমল করছে।কান্নারত কন্ঠে বলে,
—” কে বলেছে ভালোবাসি না?আমি তো আপনাকে অনেক ভালোবাসি।আমার নিজের থেকেও বেশি।আপনি যাবেন না ওই ইলফার কাছে।আমি আপনাকে যেতে দিবো না।”
অর্থ হাসলো।তৃপ্তির সেই হাসি।কোনকিছু নিজের করে পাওয়ার সন্তুষ্টজনক হাসি।ভালোলাগায় মনটার চারপাশ ছেয়ে গিয়েছে।অসহ্য সুখে ওর মরে যেতে ইচ্ছে করছে।শেষমেষ ওর পিচ্চি পাখিটার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা শুনতে পারলো।অর্থ জানে প্রাহি জ্বরের ঘোরেই ওর মনের কথা বলেছে।কারন সজ্ঞানে তো আর জীবনেও এই মেয়ের মুখ থেকে ও ভালোবাসি শুনতে পারবে না।তাই তো এই বুদ্ধি খাটালো।
প্রাহিকে আলগোছে সুইয়ে দিয়ে।অর্থ ওর লাগেজ হতে মেডিসিন বাহির করে প্রাহিকে খাইয়ে দিলো।সারারাত অর্থ প্রাহির সেবা করলো।ভোরের দিকে প্রাহির জ্বর ছেরে দিলে অর্থ প্রাহিকে কোলে নিয়ে হিয়াকে বলে ওদের রুমে রেখে আসে।আর বলে ওর একটু খেয়াল রাখতে।তারপর অর্থ নিজেও চলে যায় ঘুমোতে।
——
স্নিগ্ধ পরিবেশ,এলোমেলো হাওয়া বইছে,সমুদ্রের গর্জন যেন কোন সুরেলা গীতের মতো শুনাচ্ছে।সমুদ্র সৈকতের বালির ওপর খালি পায়ে হাটছে প্রাহি।আজ সবাই ঘুরাঘুরি করবে। কারন কাল থেকেই হিয়ার বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু।কাল মেহেদি অনুষ্ঠান।আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেও কাল রাতের স্বপ্নের কথা ভেবে ভয় মনটা একটু খানি হয়ে ছিলো প্রাহির।অর্থ তা বুজতে পেরেই আজ সবাইকে নিয়ে ঘুরার প্লানিং করলো।প্রাহিকে নিয়ে আজ সারাদিন ঘুরবে ও।মেয়েটার মন খারাপ ওর ভালো লাগে না।বুকটা বড্ড পুড়ায় ওর।অসহনীয় ব্যাথা হয় বুকে। প্রাহি যখন আনমনে এসব ভাবছিলো হাতে ডাব নিয়ে সেখানে আসে অর্থ।প্রাহির দিকে তাকাতেই ভ্রু-জোড়া কুচকে ফেলে সে।এই মেয়েটার জ্বর সেরেছে মাত্র কয়েকঘন্টা।তাও শরীর অনেক দূর্বল।শুধু মাত্র মন ভালো না ওর তাই অর্থ ওকে নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছে।আর এই মেয়ে নাকি খালি পায়ে হেটে বেড়াচ্ছে।ডাবগুলো বালির মাজে সাবধানে গেঁধে রাখলো যাতে না পরে যায়।তারপর প্রাহির জুতো জোড়া নিয়ে প্রাহির পায়ের কাছে দিয়ে।একপ্রকার ধমকে উঠে বলে,
—” এই মেয়ে তোমার কোন কমনসেন্স নাই?এমন কেন তুমি?যেই একটু চোখের আড়াল হলাম ওমনি তুমি বেখায়ালি হয়ে গেলে! এতো কেয়ারলেস কেন তুমি?তাড়াতাড়ি জুতো পায়ে দেও।”
প্রাহি ছলছল চোখে অর্থ’র দিক তাকালো।বুকটা ধ্বক করে উঠলো অর্থ’র।চিনচিনে ব্যাথা যেন বুকের বা’পাশটা গ্রাশ করে নিলো।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো মানুষজন অনেক দূরে ওদের থেকে তাই দ্রুত প্রাহিকে নিজের বাহুডোরে নিয়ে নিলো।বললো,
—” কেন ভয় পাচ্ছো প্রাহি?অযথা একটা স্বপ্ন নিয়ে এভাবে কেঁদোনা।আমার বুকে ব্যাথা হয় তুমি কাঁদলে।আমি তোমার প্রাহি।শুধু এবং শুধুই তোমার।”
প্রাহি হালকা আওয়াজে কেঁদে উঠে দুহাতে অর্থ’র গলা জড়িয়ে ধরলো।অর্থ ওর থেকে লম্বা হওয়ায় অর্থ প্রাহির কোমড় জড়িয়ে ধরলো।ফলে প্রাহির পাজোড়া শূন্যে ভাসছে।প্রাহি শান্তিতে অর্থ’র কাধে মাথা গুজে দিলো।তারপর কাঁদতে লাগলো।অর্থ প্রাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে,
—” কাঁদেনা,কাঁদেনা লক্ষিটি। আমি আছিতো।”
প্রাহি হালকা করে মাথা উঠালো।মাথা উঠিয়ে সামনে চোখ যেতেই দেখে ইলফা ওদের দিক তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন ওকে সেই দৃষ্টির আগুনে ধ্বংশ করে দিবে।প্রাহি ভয় পেয়ে যায়।ভয় পেয়ে অর্থকে আরো জোড়ে আকড়ে ধরে।অর্থ’র ঘারে প্রায় প্রাহির নখ গেঁধে যাওয়ার উপক্রম।অর্থ হালকা ব্যাথা পেলেও টু শব্দ করলো না।ইলফা প্রাহিকে আঙুল উঠিয়ে শাষিয়ে গেলো যে,ওকে পরে দেখে নিবে।প্রাহিকে তাড়াতাড়ি অর্থকে ছেড়ে নিচে নেমে দাড়ালো।প্রাহি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো।অর্থ হালকা হেসে প্রাহির মুখটা উঁচু করে দুহাতে প্রাহির চোখের জল মুছে দিলো।তারপর প্রাহিকে চোখের ইশারায় ডাবগুলো দেখালো।প্রাহি জোড়পূর্বক হাসলো।অর্থ প্রাহির হাত ধরে বালুর কাছে আসলো অর্থ নিজের গায়ে ব্লেজারটা খুলে সেটা বালির উপর বিছিয়ে দিলো।প্রাহি অবাক হয়ে দ্রুত বলে,
—” আরে কি করছেন? এটা তো নষ্ট হয়ে যাবে।”
অর্থ প্রাহি বাহু ধরে ব্লেজারের উপর বসিয়ে দিয়ে নিজেও প্রাহির পিছনে গিয়ে বসলো।প্রাহির পিঠ অর্থ’র বুকে ঠেকানো।অর্থ প্রাহির কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
—” এই আস্তো তুমিটা আমার কাছে সবচেয়ে দামি।তোমার ভালোর জন্যে আমি নিজেকেই বিলিয়ে দিতে পারি সেখানে এই সামান্য ব্লেজারই বা এমন কি?”
প্রাহির হাসলো।লাজুক সেই হাসি।গালদুটো রক্তিম আভা ধারন করলো।শরীরে মৃদ্যু কম্পন। অর্থ তা দেখে হাসলো।মেয়েটা লজ্জা পেলে এতো সুন্দর লাগে তখন। মন চায় ওকে তখন বুকের মাজে একদম ডুকিয়ে রাখতে।
প্রাহি পরম আবেশে অর্থ’র উষ্ম আলিঙ্গনে নিজেকে জড়িয়ে নিলো।তারপর চরম এক সুখময় ভালোলাগা নিয়ে দুই কপোত কপোতী সমুদ্রবিলাশ করতে লাগলো।
——-
প্রাহিকে কিভাবে শেষ করবে তারই প্লানিং করছিলো ইলফা আর ওর মা।কাল রাতের চরম অপমানের বদলা নিবে ওরা।ওই পুচকে মেয়েটাকে একেবারে জানে মেরে ফেলবে।ইলফা রাগে ফুসতে ফুসতে বলছে,
—” ওই মেয়েকে মরতে হবে মা।যেকোনভাবে মরতে হবে।আমার অর্থকে ওই মেয়ে কখনো পাবে না।দরকার পরলে আমি..আমি অর্থকেও মেরে ফেলবো।তাও ওই প্রাহিকে আমার অর্থকে নিতে দিবো না।ওই প্রাহিকেও মেরে ফেলবো সাথে অর্থকেও।”
ইলফার মা ঘাবড়ে গেলেন।তিনি খারাপ ঠিক আছে কিন্তু এতো খুন খারাপির থেকে তিনি একশো হাত দূরে থাকে।আর তার মেয়েই কিনা এইসব করতে চাচ্ছে।তিনি ইলফাক্র বুজানোর জন্যে বলেন,
—” ইলফা মা এইভাবে জেদ করে না।অর্থ তোর হবে না।আমি তোকে এর থেকেও বড়লোক আর সুন্দর ছেলে দেখে বিয়ে দেবো।তাও এইসব করিস না মা।”
ইলফা নাক মুখ কুচকে ধমকে উঠে ওর মাকে,
—” উফফ মা! জাস্ট সাট আপ।তুমি তোমার এইসব ফাউল কথা আমার সামনে বলবে না।তুমি….!”
হঠাৎ কথার মাজে ইলফার ফোন বেজে উঠে।প্রাইভেট নাম্বার।ভ্রু জোড়া কুচকে ফেলে ইলফা।এটা আবার কে?এই নাম্বার থেকে তো কেউ তাকে কখনো ফোন করেনি।তাহলে?
ইলফা ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলো সাথে সাথে ভরাট গলার একটা পুরুষালি কন্ঠ বলে উঠলো,
—” যা করার প্লানিং করছিস তা ভুলে যা।প্রাহির কোন ক্ষতি তুই করবি না।যদি প্রাহিকে কিছু করিস তাহলে তোকে আমি জানে মেরে দিবো।একদম জানে মেরে দিবো।”
ইলফা ভয় পেয়ে যায়।কাঁপা কন্ঠে বলে,
—” আপ…আপনি কে?”
লোকটা হাসলো।খুবই কুৎসিত আর বিশ্রি শোনালো সেই হাসি।ইলফা সেই হাসির আওয়াজ শুনে থরথর করে কাঁপতে লাগলো।লোকটা বলে,
—” আ’ম কিং ওফ ডার্ক ওয়ার্ল্ড।দ্যা ব্লাকহান্টার।”
তৎক্ষনাৎ ফোনটা কেটে গেলো।ইলফা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে ওর মায়ের দিকে তাকালো।এই লোকটা তো সেই যে ওর বাবাকে মেরে ফেলেছে।ও জানে এটাই কারন ওর বাবাকে যখন মৃত অবস্থায় তারা পেয়েছিলো তখন ওর বাবার হাতে একটা চিরকুট ছিলো সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে ব্লাক হান্টার লিখা ছিলো।ইলফা ভয়ে চোটে দ্রুত কাউকে ফোন লাগালো।তারপর কাঁপা গলায় বলে,
—” তোমা..তোমাদের যেই কাজ দিয়েছিলাম।তা ক্যান্সাল করো।টেন্সন করবা না।কাজ ছাড়াই তোমরা টাকা পাবে।তবে কাজটা করবে না।ওকে,রাখি।”
ইলফা মা বুজার চেষ্টা করছে।কে এমন ফোন করলো যে উনার মেয়ে এইভাবে ভয় পাচ্ছে।তিনি কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই ইলফা ‘ আমার ভালো লাগছে না!’ বলে চলে গেলো।ইলফার মা চিন্তিত হয়ে নিজেও মেয়ের পিছনে চলে গেলেন।তা দেখে আড়াল থেকে একটা লোক হাসলো।হিংস্র সেই হাসি।বাঁকা হেসে বলে,
—” ছোট থেকে নিজের শিকারকে খাইয়ে দাইয়ে যত্ন করে এই পর্যন্ত আনলাম।আর তোর মতো দুদিনের আশা মেয়ে নাকি আমার শিকারকে শিকার করতে আসছিস।শিকার তো আমি করবই শুধু সময়ের অপেক্ষা।আর মাত্র একটা বছর।তারপর সব রাজত্ব আমার। আমার এতো বছরের কষ্ট সফল হবে।তারপর প্রাহিকে তো মারবই সাথে ওই অর্থকেও শেষ করবো।আমার প্লান গুলো সব ঘুরানো লাগছে তোর জন্যে।যেই প্লান করেছিলাম সেখানে আমার প্রাহিকে মারা লাগতো না।কিন্তু শুধু মাত্র তোর কারনে অর্থ সিকদার।শুধু মাত্র তোর জন্যে আমার এতো বছরের প্লানিং বিফলে গেলো।এখন তোর প্রানপাখিকে তোর ভুলের কারনে তোর চোখের সামনে তিলে তিলে মরতে দেখবি।সাথে তোকেও মরতে হবে।শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা।আমাকে দেখে তুই জীবনের সবচেয়ে বড় ঝটকাটা তুই খাবি অর্থ তারপর তোর ভালোবাসাকে মারবো।তুই কাতরাবি অনেক আকুতি মিনুতি করবি।আমি পৈচাশিক আনন্দ পাবো।তারপর তুইও শেষ। হাহাহহাহাহা!”
লোকটা ভয়ানকভাবে হাসতে লাগলো।ভবিষ্যতে কি হতে চলেছে অর্থ আর প্রাহির জীবনে।আবার কোন ঝর আসতে চলেছে।
#চলবে_______
কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমা করবেন।আজ অনেক বড় করে দিলাম।দু পর্ব একসাথে।গেস করেন তো আসল ভিলেন কে?কে হতে পারে বলেন তো?#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(২৬)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
‘ সুন্দরভাবে এই ড্রেসটা পরে রেডি হয়ে একেবারে ইশি আর হিয়ার সাথে নিচে আসবে।তার আগে একা একা পাকনামি করে নিচে আসার দরকার নেই তোমার।যদি দেখি যে একা একা বাহিরে বের হয়েছো মেরে তোমার ঠাং ভেঙ্গে দিবো।’
মেসেজটা পরেই মুখ ফুলালো প্রাহি।লোকটা এতো অসভ্য কেন?ড্রেসটা দিয়েছে ভালো কথা। তা ভালোভাবে বলা যায় না?এইভাবে মেসেজেও হুমকি ধামকি দেওয়া লাগবে তার?এ কেমন লোকের প্রেমে পরলো সে।প্রাহির এমন পেঁচার মতো মুখ দেখে ইশি হেসে দিয়ে বলে,
—‘ কি হয়েছে প্রাহি?এইভাবে মুখ ফুলিয়ে আছো কেন?’
প্রাহি ইশিকে মেসেজটা দেখালো।মেসেজটা পরেই খিলখিল করে হেসে দিলো।প্রাহি নাক মুখ কুচকে বললো,
—‘ হেসো না তো আপু।ভালো লাগে না একদম।উনি সদা এমন করেন।শুধু শুধুই ধমক দেন আমাকে।’
ইশি দুষ্টু হেসে বললো,
—‘ শুধু ধমকই দেন ভাইয়া। আদর সোহাগ বুঝি করে না?’
ইশি ভ্রু নাচাচ্ছে প্রাহির দিকে তাকিয়ে।আর প্রাহির মুখ লজ্জায় রক্তিম আভা ধারন করলো।ইসস,এই লোকটার কথা ভাবলেই চারপাশটা কেমন ভালোলাগায় ছেঁয়ে যায়।ইশি খপ করে প্রাহির পাশে বসে কৌতুহলি স্বরে বলে,
—‘ এই প্রাহি বড় বোনের মতো একটা কথা জিজ্ঞেস করবো।মাইন্ড করবে তুমি?’
প্রাহি চোখ পিটপিট করে তাকালো ইশির দিকে।অতোশতো না বুঝো ডানে বামে মাথা নাড়ালো।মানে না সে মাইন্ড করবে না।ইশি এইবার চওড়া একটা হাসি দিলো। তারপর বলে,
—‘ আচ্ছা ভাইয়া কি তোমাকে কখনো লিপ কিস করেছে?’
কথাটা শোনা মাত্রই প্রাহির বড় বড় চোখ করে তাকালো। নেত্রপল্লবগুলো পর পর ঝাপ্টালো।ঠোঁট দুটো নিজের অজান্তেই আলাদা হয়ে ছোট খোট হা হয়ে গেলো।কি বলে এসব ইশি।সে ইশির থেকে এমন একটা কথা জীবনেও আশা করেনি।কে বলবে এই মেয়ে এইসব প্রশ্নও জিজ্ঞেস করতে পারে।নিজে দেখো ছেলে মানুষ দেখলে একশো হাত দূরে থাকে।বড় মুরব্বি মানুষদেরকেও অনেক সম্মান করে।বিধায় তাদের সামনে চুপচাপ থাকে।তবে যখন একা থাকে একমাত্র হিয়া আর এখন প্রাহির সামনেই ওর চাঞ্চল্য স্বভাবগুলো বেড়িয়ে আসে।নাহলে বোম মারলেও অন্যসব মানুষদের সামনে একটু জোড়ে কথা বলাতে পারবে না।যা করবে সব চুপচাপ করে যাবে।
প্রাহি লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো।তারপর দ্রুত ডানে বামে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বললো,
—” আরে আপু এসব কি বলছো?ছিঃ ছিঃ উনি এসব কখনই করেননি।আস্তাগফিরুল্লাহ!! এসব বলো না!’
ইশি উঠে দাড়ালো। দু হাত কোমড়ে রেখে বলে,
—‘ মিথ্যে কেন বলছো?তোমরা যেহেতু প্রেম করছো তাহলে এটা তো স্বাভাবিক।’
প্রাহি মাথা নিচু করে বললো,
—‘ নাহ আপু।উনি কখনও এসব করেন নি।ইনফেক্ট কখনো ওইসব ভাবনা চিন্তা নিয়ে আমাকে স্পর্শও করেননি।আমি বুজতে পারি।’
ইশি হা হয়ে তাকিয়ে রইলো প্রাহির দিকে।মেয়েটার চেহারা দেখে বুঝলে প্রাহি সত্যি বলছে।ইশি অবাক কন্ঠে বলে,
—‘ তাহলে তোমাকে একটা কিসও করেনি?’
প্রাহি আঁড়চোখে তাকালো ইশির দিকে।তারপর হালকা আওয়াজে বলে,
—‘ কপাঁলে,গালে চুমু খান।আর মাজে মাজে দু এক সময় ঘাড়ে চুমু খেয়েছিলেন।এর বেশি আর কখনো না।’
বলতে বলতে লজ্জায় প্রাহির গাল দুটো লাল টমেটো হয়ে গেলো।ইশি প্রাহিকে জড়িয়ে ধরলো।হেসে বললো,
—‘ হয়েছে। আর লজ্জা পেত হবে না।এখন এই ড্রেস পরে নেও।ফাংশন আর কিছুক্ষন পরেই শুরু হবে।’
প্রাহি মাথা নাড়ালো।ঠিক তখনি ওয়াশরুম থেকে বের হলো হিয়া।সবুজ রঙের লেহেঙ্গায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে।মুখে কোন মেক-আপ নেই।প্রাহি গিয়ে হিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।খুশির আমেজ কন্ঠ নিয়ে বলে,
—‘ ইসস! আপু তোমাকে এই ড্রেসে কি সুন্দর লাগছে।ভাইয়ার পছন্দ অনেক সুন্দর।আজ ভাইয়া তোমাকে দেখলেই কুপোকাত।’
হিয়া প্রাহি আর ইশির দিকে তাকিয়ে দুষ্টু কন্ঠে বলে,
—‘ সে নাহয় আরাফকে আমি সামলে নিবো।তোরা দুটো আমার দুভাইকে সামলে রাখিস।’
প্রাহি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো।আর ইশি হকচকিয়ে গিয়ে বলে,
—‘ দু ভা..ভাই মা…মানে কিসব বলছিস?’
হিয়া হাসলো।তবে আর কিছু বললো না।এর মাজে দরজায় টোকা পরলো।ইশি তড়িঘড়ি করে দরজা খুলতে চলে গেলো।দরজা খুলেই দেখে পার্লারের দুটো মেয়ে।এদেরকে তারা হায়ার করেছে।এখানে তারা যতোদিন থাকবে মেয়েগুলোও ততোদিন থাকবে।বিনিময়ে যতোটাকা নেয়।ঢাকা থেকে আনা হয়েছে।মেয়েগুলো এসেই ওদের তিনবোনকে সাজাতে লাগলো।অন্যান্য যারা সাজঁতে চেয়েছে তাদের সাজিয়েই মেয়েগুলো সবার শেষে ওদের তিনজনকে সাজাতে এসেছে।
একে একে সবার সাঁজ কমপ্লিট।হিয়া লেহেঙ্গা পড়েছে সাথে সুন্দর করে হিজাব বাধা আর ম্যাচিং গহনা হালকা মেক-আপ।ইশি আর পরেছে সবুজ রঙের আনারকালি সাথে ম্যাচিং হিজাব আর গহনা,হালকা মেক-আপ।প্রাহি পরেছে সবুজ বড় ঘের-ওয়ালা গাউন।সাথে ম্যাচিং হিজাব আর গহনা আর হালকা মেক-ওভার।তিনজনকেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
——–
অর্থ অস্থির হয়ে বারবার ছাদের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।কখন দেখবে সে ওর হৃদয়হরনীকে। ইসস,কেমন লাগছে ওর পরিটাকে কে জানে?
ওকে এতোটা অস্থির হতে দেখে আরাফ অর্থ’র কাঁধে হাত রাখলো।তারপর হেঁসে দিয়ে বলে,
—‘ ভাই বিয়ে আমার।আমি আমার বউকে দেখার জন্যে অস্থির হয়ে থাকবো।তাহলে তুই এমন করছিস কেন?’
অর্থ কপালে ভাঁজ ফেলে তাকালো আরাফের দিকে।দাঁত খিচে বলে,
—‘ দেখ এমনিতেই আমার মাথা খারাপ।তার উপর তুই তোর আজগুবি কথা বার্তা বলিস না।তাহলে তোর বিয়ে ক্যান্সেল।’
আরাফ জোড়পূর্বক হাসলো।তারপর বলে,
—‘ রেগে যাচ্ছিস কেন ভাই?এতো রাগার কি আছে এখানে?’
অর্থ বিরক্ত হয়ে বলে,
—‘ আমি কি করবো ইয়ার।এখানে দেখেছিস।মেয়েরা কিভাবে ঘুরঘুর করে তাকাচ্ছে।অসহ্য লাগছে আমার।এভাবে তাকানোর কি আছে?আমি কি এলিয়েন?’
আরাফ হেসে দিলো অর্থ’র কথা শুনে।হাসি বজায় রেখে বলে,
—‘ ভাই কি আর করার।তুই যে হ্যান্ডসাম তোর দিকে তো এভাবে তাকিয়ে থাকবেই। একটু কম রূপচর্চা ক……!’
আর বলতে পারলো না কারন তখন ছাদে প্রবেশ করেছে তিন তিনটে অপ্সরি নিচে নামছে।তার মধ্যে হিয়ার দিকে আরাফ হা করে তাকিয়ে আছে।হেমন্তও তাকিয়ে আছে ওর যেন চোখই সরছে না ইশির থেকে।মেয়েটাকে এতো সুন্দর লাগছে। তা ওর বলার বাহিরে।
এদিকে অর্থ যেন নিজের ধ্যান জ্ঞান সব হারিয়ে ফেলেছে।নিমগ্ন হয়েছে এক অপরূপার দিকে।প্রাহিকে দেখে ওর হৃদস্পন্দন জোড়ে জোড়ে আওয়াজ করতে লাগলো,শ্বাসরুদ্ধকর লাগছে ওর কাছে।চোখজোড়া যেন শীতল হয়ে তার প্রানপাখিতেই আটকে গিয়েছে।তার ছোট্ট পরিটা যেন ওকে তার একেক রূপে ঘায়েল করে একেবারে মেরেই দম নিবে। আরাফ এগিয়ে হিয়ার হাত ধরে নিয়ে স্টেজে বসালো।প্রাহিও বারবার আঁড়চোখে তাকাচ্ছে।লোকটাকে কালো আর সবুজ রঙের কম্বিনেশনের পাঞ্জাবিতে মারাত্মক লাগছে।বার বার বেহায়া চোখজোড়া অর্থ’র দিকেই চলে যাচ্ছে।ইসস,হৃদয়টা এতো জোড়ে লাফাচ্ছে কেন?প্রাহি ওর হৃদয় মনে মনে বলছে,
—‘ আরে বাবা এতো জোড়ে লাফাচ্ছিস কেন?আমাকে কি মেরে ফেলবি?’
মনে হলো প্রাহির হৃদয়টা ওকে পালটা জবাব দিচ্ছে,
—‘আরে গাধি।সামনে এতো সুদর্শন একটা লোককে দেখলে আমার তো লাফাতেই ইচ্ছে করবে।তুই তোর চোখজোড়াকে নিষেধ কর যেন বার বার উনাকে না দেখে।’
প্রাহির নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হলো।পরক্ষনে ফিক করে হেঁসে দিলো।অর্থ তাকিয়ে রইলো সেই হাসির দিকে।মারাত্মক হাসি এই মেয়ের।একদম ঝিম ধরানো হাসি।অর্থ’র সারাশরীর শীরশীর করছে প্রাহির হাস্যজ্জ্বল মুখটা দেখে।অর্থ প্রাহির পিছনে গিয়ে দাড়ালো।প্রাহি হকচকিয়ে গেলো।এতোগুলো মানুষের সামনে লোকটা ওর এতো কাছাকাছি কেন এসেছে।এদিকে ওর নিজেরও কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে।প্রাহি ধীর আওয়াজে বলে,
—‘ কি করছেন?দূরে সরুন।মানুষ আমাদের এভাবে দেখলে খারাপ ভাব্বে প্লিজ।’
অর্থ’র কানে প্রাহির এই কথা গেলো কিনা কে জানে।ও ঘোরলাগা কন্ঠে বলে উঠলো,
—‘ তোমাকে মারাত্মক লাগছে প্রাহি।আমার নিঃশ্বাস আটকে আসছে তোমার এই রূপ দেখে।তুমি আমার কাছে কি প্রাহি আমি তোমাকে বুঝাতে পারবো না প্রাহি।পারবো না।’
কথা বলেই চলে যেতে নিয়ে আবার ফিরে এলো।প্রাহির চোখে চোখ রেখে ধীর কন্ঠে বললো,
‘ নারী তুমি
আমার হৃদপিন্ডের একটি মহাখন্ড
তুমিহীনা এই জীবন যেন মহাপ্রলয়ের লন্ড-ভন্ড
তুমি লজ্জাবতীর লাজ, ফুলশয্যার সাজ, তুমি ধ্রুবতারার আলো
কোটি নক্ষত্রের মাঝে তুমিই শুধু আমার হৃদয়ে সুখের প্রদীপ জ্বালো।’ [কবিতাটি সংগ্রহ করা]
#চলবে________