#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৬২
মানুষের মন যখন দুর্বল হয় তখন সে ভয় পেতে থাকে। ছোট ছোট বিষয়ও আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পূনরায় ভুল করতে থাকে। ঐশ্বর্যের ক্ষেত্রেও তেমনই হয়েছে। মুখের বিশ্রী দাগটা নিয়ে টেনশন হচ্ছে। এতোদিন রূপের বড়াই করে এখন যদি সেই সৌন্দর্য্যটাই না থাকে তবে লোকের সামনে মুখ দেখাবে কিভাবে?। তাছাড়া ও অর্ধমানবি ওর কিছুটা হলেও ক্ষমতা আছে। কহিনুর সাধারণ হয়েও কিভাবে এতো শক্তির অধিকারী হতে পারে ও মানতে পারছে না। মেয়েটা ওকে ঠান্ডা মাথায় কি ভ/য়ংকর শা/স্তিটাই না দিয়ে দিলো। অন্য কেউ হলে প্রা/ণ নিয়ে নিতো কিন্তু এই মেয়ে ওকে মা/রেনি বরং তিলে তিলে য/ন্ত্রণা পেয়ে ম/রার মতো অবস্থা করেছে। মিরর দেখতে ওর ভীষণ পছন্দ ছিল এখন বিরক্ত লাগছে। তাছাড়া ওর ভয় লাগছে। কিছুক্ষণ আগে মিরবে ও ভ/য়ঙ্কর একটা মুখ দেখেছে যেটা ওর কিনা বুঝতে পারেনি। ঐশ্বর্য কাপা কাপা হাতে আবারও মিররটা সামনে ধরলো। আবারও সেই মুখ। এক পাশে লম্বা কাটা দাগ থেকে ইনফেকশন হয়ে পচন ধরেছে। ঐশ্বর্য ছলছল চোখে বিড়বিড় করলো, “না এটা হতে পারে না। আমি অর্ধমাবনি,আমার পরিণতি এতোটা খারাপ কিভাবে হবে? কহিনুরকে ছাড়বো না আমি। “ঐশ্বর্য থামতেই হঠাৎ আরও একটা সুন্দর মুখ দেখে ওর থমকে গেলো। মিররে আবারও নতুন মুখ ভেসে উঠেছে। ঐশ্বর্যের ভ্রু কুচকে গেলো। কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। ঐশ্বর্য চোখ বন্ধ করে আবারও খুললো। ওকে চমকে দিয়ে ভেতর থেকে মিষ্টি কন্ঠে আওয়াজ ভেসে আসলো।,
> এমন ভয়/ঙ্কর চেহারা নিয়ে আমার সম্মুখে এসোনা মেয়ে। আমি সহ্য করতে পারছি না। দূরে যাও তুমি। এই মিরর তোমার জন্য নহে।
মেয়েটার কথা শুনে ঐশ্বর্যের মেজাজ খারাপ হলো। এতো বড় অপমান ওকে কেউ কখনও করেনি। ঐশ্বর্য ঝঙ্কার দিয়ে বলে উঠলো,
> তুমি জানো আমি কে? তোমার সাহস হয় কিভাবে আমাকে এভাবে অপমান করার? আমি ইচ্ছা করলে তোমার প্রা/ণ নিতে পারি। মিররের মধ্যে লুকিয়ে আছো।এতো ভয় নিয়ে ঐশ্বর্যকে অপমান করছো তুমি?
> তুমি যা তাইতো বলেছি। আমি সুন্দর বললেই তো আর তুমি সুন্দর হয়ে উঠবে না। এই চেহারা নিয়ে তুমি কিভাবে বাকীটা জীবন অতিবাহিত করবে ভেবেই আমি সিউরে উঠছি। সাধারণ কোনো মানুষ তোমার এই ভয়ঙ্কর রূপ দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে।
ঐশ্বর্য কানে হাত দিয়ে কেঁদে উঠলো। ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলল,
> থামো তুমি,আমি পারছি না মানতে। কহিনুরের জন্য সবটা হয়েছে। ওকে আমি ছাড়বো না। কাউকে ছাড়বো না। সে আমার বাবাকে মে/রেছে। আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। সব ধ্বংস করে ফেলবো।
কহিনুরের নাম শুনে ভেতরে থাকা রমণী তাচ্ছিল্যপূর্ণ হেসে বলল,
> তুমি মুখেই যা বলো কাজের কাজ কিছুই পারোনা। কহিনুর তোমার চাইতে শক্তিশালী। সে চাইলে তোমার থেকে এই বাড়ির ছাদটুকুও নিয়ে নিতে পারে। তুমি লোভী ছল\নাকারী তোমার স্থান সবার নিচে হবে।
ঐশ্বর্য এবার আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। রাগে দুঃখে হাতের মিররটা ফ্লরে ছুড়ে দিলো। সেটা গিয়ে ফ্লরে ঝনঝন করে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে গেলো। ঐশ্বর্য হাতের তালুতে মুখ ঢেকে নিলো। হঠাৎ রিনরিনে সুরেলা কণ্ঠের হাসি শুনে ও মাথা তুলে তাকালো। ওর সামনে সাদা পোশাকে মিররের সেই মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। ঐশ্বর্য হতভম্ভ হয়ে গেলো। কিছু জিঞ্জাসা করতে মুখ খোলার আগেই মেয়েটা আবারও হেসে উঠলো। হাতের ইশারায় ঐশ্বর্যের দিকে কিছু ছুড়ে দিয়ে বলল,
> আমি তোমার যন্ত্রণা আমি কমিয়ে দিতে পারি এর চাইলে বেশি পারবো না। তুমি আমাকে মুক্তি দিয়েছো ধন্যবাদ তোমাকে। আসছি ভালো থেকো।
ঐশ্বর্যের মুখের ব্যাথাটা কমেছে কিন্তু মেয়েটা ততক্ষণে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। কিছুটা অদ্ভুত লাগলো। মিররটা এখানে এনে ভুল করেছে কি বুঝতে পারলো না। মনে প্রশ্ন জাগলো কে এই নারী?
**********
ভয়ঙ্কর রেগে আছে অধরা। দুদিন ধরে মুখে কুলুপ এটে বসে আছে, জুবায়েরের সঙ্গে কথা বলছে না। বলবেও না বলে ঠিক করেছে। লোকটা একটার পর একটা ভুল করছে অধরা সেটা আর মানবেনা। এবার ভালো করে শিক্ষা দিবে যাতে এমন করার আগে অন্ততপক্ষে দশবার ভাববে। জুবায়েরের বউয়ের মান ভাঙানোর জন্য পিছু পিছু ঘুরছে। লাভ বিশেষ হচ্ছে না তবে হার মানতেও রাজি না। অধরা গভীর মনোযোগ দিয়ে ফোনের দিকে চেয়ে আছে। হঠাৎ বাইরে হৈচৈ শুনে ওর ধ্যান ভাঙলো। তাড়াতাড়ি ফোন রেখে ছুটলো বাইরের দিকে। কারণ এই বাড়িতে হৈচৈ বা আওয়াজ বিশেষ একটা হয়না। অধরা বাইরে এসে অবাক হলো। জুবায়ের বাড়ির সিকিউরিটি গার্ডের কলার ধরে টানাটানি করছে। অধরা দৌড়ে গিয়ে জুবায়েরকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঝাড়ি দিয়ে বলল,
> পাগল হয়েছেন আপনি?কি করছেন এসব? বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধি কমতে শুরু করেছে। বাচ্চাদের মতো মারামারি করছেন।
অধরার ধমকে বিশেষ কোনো ফল হলো না। জুবায়ের আবারও তেড়ে গিয়ে গার্ডের গলা চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
> বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বন্ধ দুদিন হতে চলেছে আর এই অকর্মণ্য আজ সেটা বলছে। ও ইচ্ছে করে এমন করেছে। ওকে টাকা দিয়ে এমনি এমনি রেখেছি? টাকা নিচ্ছে আর কাজ করছে শত্রুর। কেনো করলি এমনটা বল আগে।
জুবায়েরের কথা শুনে বেচারা গার্ড ভয়ে কেঁদে ফেলল। অধরা বিরক্ত হয়ে জুবায়েরের হাত টেনে খানিকটা পিছিয়ে এনে গার্ডকে ইশারা করলো চলে যেতে। বেচারা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। সিগন্যাল পেয়ে দৌড়ে বাড়ির বাইরে গিয়ে বাঁচলো। জুবায়ের রাগে ফুলছে। অধরা ওকে ছেড়ে দিয়ে কোমরে হাত রেখে বলল,
> আপনি কখনও বদলাবেন না তাইনা? সামান্য একটা বিষয়,চুপচাপ জেনে নিতেন তানা করে মারপিট করছেন। বাড়ির গার্ডের কলার ধরে টানছেন। ও বেচারা কিভাবে জানবে বলুন? দায়িত্বে ছিল কে?
জুবায়ের কিছুটা শান্ত হলো। মুখ ফুলিয়ে বলল,
> ও ছুটিতে আছে। গতকাল ছুটি নিয়েছে। ওর মা অসুস্থ তাই কিছুদিন বাড়িতে থাকবে।
অধরা চোখের পাপড়ি নাড়িয়ে বলল,
> এটাই ভেবেছিলাম। ও ভয়ে পালিয়েছে। কারণ সিসি ক্যামেরা কেনো বন্ধ আছে এটা ও ভালো করেই জানে। তাই আগে থেকেই পালিয়ে গেছে আর আপনি পাগলের মতো ওকে দোষারোপ করছেন।
অধরা থামতে দেরী করলো কিন্তু জুবায়ের ফোন করতে দেরি করলো না। কাকে একটা ফোন করে বলে দিলো এক ঘন্টার মধ্যে ছুটিতে থাকা গার্ডটাকে ধরে আনতে। জুবায়ের ফোন রেখে অধরার দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে চাইলো। ভ্রু নাচিয়ে বলল,
> বউটাকে অবশেষ ফিরে পেলাম। আমি জানি আমার বুদ্ধি কম। বউ বুদ্ধিমতী হলে যা হয় আর কি। রাগ কমাও না প্লিজ। আচ্ছা রাগ কমাতে হবে না চুমু দিতে তো পারবে? চোখ বন্ধ করে আমার দিকে এগিয়ে আসো।
জুবায়েরের এলোমেলো কথা শুনে মিরা চোখ বড়বড় করে ফেলল। ও এতক্ষণ অধরার পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিল। বুঝতে পারেনি জুবায়েরের তিল থেকে তালে পৌঁছে যেতে সময় লাগে না। অধরা রাগে কটমট করছে । জামসেদ সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে কিছুটা শুনতে পেলো। তাই ওখান থেকেই উত্তর দিলো,
> আশেপাশে একটু খেয়াল কর ভাই। কক্ষে গিয়ে যা ইচ্ছা কর তবুও আমার বউটার মাথা এভাবে নষ্ট করছিস কেনো?
জুবায়ের উঁকি দিয়ে মিরাকে দেখে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
> মীরা তোমার মাথা কি নষ্ট হচ্ছে?
মীরা তড়িঘড়ি মাথা নাড়িয়ে বলল,
> একদম না। আমি সুস্থ মস্তিষ্কের আলাভোলা ভদ্র মেয়ে। উনি একটু বেশি বেশি।
জুবায়ের কিছু বলতে চাইলো কিন্তু পারলো না। অধরা জামসেদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
> বাড়ির সিসি ক্যামেরা বন্ধ আপনি আগে থেকে জানতেন?
> জানতাম না কিছুক্ষণ আগেই জানলাম। বিষয়টা আমি দেখছি তোমরা কক্ষে যাও। ওর মাথায় পানি ঢেলে ঠান্ডা করো।
জুবায়ের রেগে তাঁকালো কিন্তু জামসেদ ওকে ইগনোর করলো। এখানে তর্কবিতর্ক করে সময় নষ্ট করার মানে নেই। কহিনুর ওকে বিশেষ একটা দায়িত্ব দিয়েছে সেটাই এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জামসেদ বেরিয়ে পড়লো বাড়ি থেকে। অধরা কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলো। কহিনুরের জন্য কিছু রান্না করা দরকার। মেয়েটা হুটহাট চলে যাচ্ছে বলে যাচ্ছে না। খাবার নিয়েও কিছু বলছে না। পাথর আর ও দুজনেই পালা করে দাদুর কক্ষে বসে আছে। এদের মাথায় কি চলছে কে জানে।
অধরা পুডিং তৈরী করতে ডিম ফেটিয়ে নিয়ে রেখে দিলো। কড়াই বসিয়ে দিতেই পেছন থেকে আদি মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো,
> আন্টি কফি হবে?
অধরা চমকে উঠলো।আদিকে দেখে নিজেকে শান্ত রেখে উত্তর দিলো,
> নিশ্চয়ই হবে। দুমিনিট অপেক্ষা করো। আরও কিছু খাবে তুমি? বলো তৈরী করি। সারাদিন কক্ষে চুপচাপ বসে থাকি বাচ্চাদের জন্য কিছু তৈরী করবো সেটাও হচ্ছে না। বাচ্চারা খাওয়া নিয়ে এতো উদাসীন কেনো কে জানে।
অধরার কথা শুনে আদি হাসলো। পকেটে হাত ঢুকিয়ে উত্তর দিলো,
> আন্টি আপনি আমাকে প্রচুর জামাই আদর দিচ্ছেন আরও দিতে চাইলে আমি কিন্তু মানবো না। এভাবে খাওয়াতে থাকলে আমি অচিরেই ফুটবল হয়ে উঠবো। লোকেরা হাসাহাসি করবে। আন্টি বাংলাদেশ থেকে ফোন এসেছিল মৌসুমীরা দুবোন আগামীকাল এখানে আসছে। আপনি কি জানেন বিষয়টা?
আদির কথা শুনে অধরা আনমনা হলো। এখানে মেয়েদুটো সেভ থাকবে না। যদি কিছু হয়ে যায় তবে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না ও। কিন্তু আটকানোও যাবে না। কতটা আশা নিয়ে এখানে পা ফেলছে। তাছাড়া ওরা এখানে বছর খানিকথাকবে না। তিন মাসের জন্য আসছে। অধরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
> চৌধুরী সাহেব ফোন দিয়েছিলেন ওরা এখানেই উঠবে। কথা হয়েছে। বলছিলাম কি তোমরা ওদেরকে নিয়ে সুন্দর একটা ক্যাম্পিং করতে পারো। তোমার আঙ্কেল ব্যবস্থা করতো। এখানে এসে বোরিং হবে ঘুরলে ভালো লাগবে।
আদি কিছু একটা ভেবে বলল,
> ওরা কিন্তু কহিনুরের জন্য আসছে। আচ্ছা আন্টি কহিনুর কোথায়? ওকে দেখছি না কেনো?
> ওরতো বিয়ে হয়েছে তুমি জানো।
অধরা কথা এড়িয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি কফিটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। কবে যে এই ঝামেলা শেষ হবে।
**************
দাদুর মাথার কাছে বসে আছে কহিনুর। গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবছে। পাথর ওকে দেখতে ব্যস্ত। কক্ষের দরজা বন্ধ করা আছে। কহিনুর এই কক্ষে আছে এটা বাড়ির কেউ জানেনা। ওরা বুদ্ধি করে দাদুকে অন্য কক্ষে সরিয়ে এনেছে। সাঈদ বসে বসে আঙুর মুখে পুরছে। মৌসুমী ফল আঙুর। হেকিম সাহেবের সঙ্গে দেখা করে ফেরার রাস্তার ও বেশ কিছু আঙুর নিয়ে এসেছে। সারারাত এখন এগুলোই খাবে। নির্জনতা কাটিয়ে হঠাৎ পাথর বলে উঠলো,
> নূর আমার কেমন জানি অস্বস্তি হচ্ছে। এই বাড়িতে আমি অন্য কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করছি। ওটা ভালো নাকি খারাপ বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে ভালো আবার মনে হচ্ছে খারাপ। কেমন জানি। তুমি কিছু অনুভব করছো?
কহিনুর খানিকটা চমকে উঠলো। মৃদু কন্ঠে বলল,
> আমি আগামীকাল থেকে এই বাড়িতে আর লুকোচুরি করে থাকবো না। আমি চাই শত্রুরা আমাকে দেখুক আর আক্রমণ করতে গিয়ে সামনে আসুক। এভাবে লুকিয়ে থাকা ঠিক হবে না।
কহিনুর এতোক্ষন যা ভাবছিলো তাই বলে দিলো। পাথর বিরক্ত হলো। বলল,
> তোমাকে কি বললাম আর কি উত্তর দিলে? ব্যবসার লাল বাতি জ্বালিয়ে বউয়ের পাহারা দিচ্ছি। তবুও আফসোস নেই কিন্তু যদি কিছু হয়ে যায় তখন? রিস্ক নিতে পারছি না। আপাতত এভাবেই থাকবে কোনো ঝামেলা করবে না। তাছাড়া এই বাড়িতে থাকা এই দুই শক্তির উৎস কি জানা জরুরী।
> এখানে ভালো খারাপ দুটোই আছে তাই আপনার এমন অনুভব হচ্ছে। চিন্তা করবেন না আমি দেখছি বিষয়টা।
কহিনুর এতটুকু বলে চুপ করলো। কেনো জানি মনে হচ্ছে কেউ এই কক্ষের দিকে আসছে। কিন্তু কে? ওকে অবাক করে দিয়ে সত্যিই এক রমনী সেখানে প্রকট হলো। কহিনুর ঝটপট দাঁড়িয়ে পড়লো। কিছু বলার আগেই সাঈদ হন্তদন্ত হয়ে উঠে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে নিয়ে উচ্চারণ করলো,
> আম্মিজান আপনি?
ভদ্রমহিলা কাঁদছে ওকে জড়িয়ে ধরে। কহিনুর বুঝতে পারলো এটাই সাঈদের আম্মি কিন্তু এখানে কিভাবে আসলো বুঝলো না। মা ছেলের মিলন দৃশ্য চললো আরও খানিকটা। পাথরও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে ভদ্রমহিলা ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে কহিনুরের দিকে ফিরলো। চমৎকারভাবে হেসে বলল,
> ধন্যবাদ দিয়ে তোমাকে ছোট করতে চাইনা। তুমি না জেনেই আমার মুক্তির রাস্তা তৈরী করে দিয়েছো। জীবন দিয়ে হলেও আমি তোমাকে সাহায্য করবো। আমার ছেলেটাকে কাছে রেখেছো তোমার কাছে আমার ঋণের শেষ নেই।
কহিনুর ভদ্রমহিলার কথা শুনে খানিকটা ভড়কে গিয়ে বলল,
> আপনার কথা ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। ক্লিয়ার করবেন প্লিজ।
ভদ্রমহিলা সবটা বলে দিলো বৃদ্ধ দাদুর দিকে তাকিয়ে। শুধু বলল,
> ভদ্রলোকের সুন্দর একটা মন ছিল চন্দ্রের জন্য সেটা বিলীন হয়েছে। উনার ভালো আত্মাকে ফিরিয়ে আনো নূর। নয়তো সুলতান পরিবারের শান্তি কখনও ফিরবে না। চন্দ্র ওই আত্মার হাতেই চিরকালের জন্য মুক্তি পাবে। নয়তো ও যেভাবেই হোক বারবার ফিরে আসবে। তাছাড়া এই বাড়িতে আরও দুই রকমের শক্তির অস্তিত্ব আছে। দুজন দুভাবে তোমার ক্ষতি করতে চাইছে।
কহিনুর ভ্রু কুচকে বলল,
> কার মধ্যে এই শক্তির বসবাস আন্টি? কে হতে পারে?
> চন্দ্রকে যে নিজের স্বার্থে ফিরিয়ে এনেছে সে নিজেই এই বাড়িতে আসন পেতে বসেছে। আরেকজন তোমার স্বামীর পরিবারের। নিশ্চয়ই জানো কে সে?
কহিনুর মাথা নাড়িয়ে চোখ বন্ধ করলো। ওর জানা আছে একজন ঐশ্বর্য কিন্তু আরেকজন কে?
চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।