#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৬১
চন্দ্রের আঙুলের দিক তাকিয়ে পাথর চমকে উঠলো। ওর সামনে বড়সড় একটা মিরর রাখা আছে। পাথর চোখ বন্ধ করে হাতের মুঠো বন্ধ করে নিলো। মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আশেপাশে খেয়াল রাখা উচিত ছিল। ওষুধের প্রভাবে যতই নিজেকে পরিবর্তন করুক মিররের সামনে তা লুকিয়ে রাখা যায়না। এই ওষুধের দ্বারা মূলত মানুষের চোখে ধোয়ার সৃষ্টি করা হয়। জাদুকরেরা যা করে আর কি। কিন্তু এখন কি হবে? চন্দ্র ওকে চিনে ফেলবে। মিররে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত সুদর্শন পাথর দাঁড়িয়ে আছে। মিরাক্কেল কিছু ঘটলে আপাতত রক্ষা পাওয়া যেতো। এই মূহুর্তে ওকে পালাতে হবে। কথাটা ভেবে ও ঢোক গিলল। কিছুতেই ধরা খেঁলে চলবে না। কথাটা ভেবে ও আশেপাশে তাকালো। জায়গাটা কোথায় চেনা যাচ্ছে না। কিন্তু চন্দ্রের দৃষ্টি একেবারেই শান্ত। পাথর পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে। হঠাৎ চন্দ্রের কথা শুনে ওর ধ্যান ভাঙলো।
> অর্ধমানবেরা কি আজকাল ছলচাতুরি করতে শুরু করেছে? আমার আবেগ অনুভূতি নিয়ে খেলা করার সাহস কি করে হলো তোমার? আমি চন্দ্র, সাধারন কোনো রমনী না। সুলতান ফারাবী ফারুকীর দ্বিতীয় স্ত্রী চন্দ্র নিজের বুদ্ধি আর ক্ষমতার জোরে এখনো অবধি পৃথিবীতে টিকে আছে।
চন্দ্রের হুঙ্কার শুনে পাথর ভ্রু কুচকালো। ওর মেজাজ খারাপ হলো। ওকে ধমকানোর সাহস এই মহিলার কিভাবে হলো? কথাটা ভেবে ও উত্তর দিলো,
> কিসের ক্ষমতা শুনি? নিজের শরীর নেই। পিশাচিনীর ন্যায় অন্যর শরীর দখল করে দম্ভ করতে লজ্জা করেনা?এতো এতো মানুষের ক্ষতি করে কিসের লাভ হচ্ছে তোমার? আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। তোমার শাস্তি হবে।
চন্দ্র হাসলো পাথরের কথা শুনে। ভুবন ভুলানো সেই হাসি। বাতাসের সঙ্গে ঝঙ্কার তুলে গহিন অরণ্যের চারদিকে মৃদু ছন্দের সৃষ্টি করছে। পাথর বুঝতে পারছে না এভাবে বোকার মতো হাসির কি আছে। কিছুক্ষণ পরে চন্দ্র থামলো। যেখান থেকে কথা শেষ করেছিলো সেখান থেকেই শুরু করলো,
> যা বলছিলাম কথা হচ্ছে আমার অস্তিত্বকে আমি অস্বীকার করি না। সমাজে অসহায় আর দুর্বল কোনো মেয়ের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হয় এটা কারো অজানা নেই। আমার আম্মা অসহায় ছিলেন। উনার বাবা মা ছিল না। চাচা চাচির কাছে মানুষ। ঘাড় থেকে বোঝা নামাতে বিয়ের নামে কোন এক চরিত্রহীন লম্পটের নিকটে উনাকে বিক্রি করা হয়। তারপর শুরু হয় মায়ের গণিকাবৃত্তি সূচনা। কয়েকদিন পরে মাতাল লোকটা আম্মাকে বিক্রি করে দিলেন। সেখানেই আমার জন্ম। আমাকে ছোট থেকে খারাপ নজরে দেখা হতো। তবে পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আম্মা আমাকে পড়াশোনা শিখিয়েছিলেন। সে সময় মুসলিম মেয়েদের লেখাপড়া শেখা ঘোর অপরাধ হিসেবে পরিগণিত হতো। আম্মা সমাজের ধার ধারতেন না। তাছাড়া গণিকার আবার পাপ পূর্ণ কি? প্রতিদিন নিত্যনতুন পুরুষের সঙ্গে যাদের উঠাবসা। আম্মা তোয়াক্কা করেননি। আমি রূপসী শিক্ষিত সঙ্গে বুদ্ধিমতি। আর কি চাই ফারাবী ফারুকীকে হাতের মুঠোয় নিতে? আমার তপস্যাতে খুশী হলেন কালো জাদুর শয়/তান। আমার গৃহ পরিচারিকাকে আমি প্রথম নিজ হস্তে ব/লি দিতেও দুবার ভাবলাম না। ষোলো বছর বয়সী সেই ছোট্ট প্রাণটা আমার চোখের সামনে ঝটপট করতে করতে মা/রা গেলো। মেয়েটা আমাকে অন্ধের ন্যায় বিশ্বাস আর ভরসা করতো আমি ওর ভরসা রাখতে পারিনি। স্বার্থপর হয়ে উঠেছিলাম। তবুও দুফোটা নেত্রজল গড়িয়ে পড়েছিলো ওর শান্ত শরীরের উপরে তারপর আর কখনও কাঁদতে হয়নি। আমার রূপের পসরা আমাকে মনোবল দিলো। হাছিল করলাম কহিনুর রত্ন কিন্তু আফসোস। কালো জাদুর শয়/তান আমাকে বলে দিলো ওটার ব্যবহার আমি করতে পারবো না। ওটা শুধুমাত্র ফারাবী ফারুকীর জন্য। আমার মনে কোনো প্রশ্ন আসেনি। শুনেছিলাম কালোজাদুর থেকে কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। আমার থেকে তেমন কিছুই চাওয়া হয়নি তখনও আমার মনে কোনো প্রশ্ন আসেনি। কষ্ট করে কহিনুর অর্জন করলাম অথচ সেটা জমিদার মশাই কেনো পাবেন এটা আমার মাথায় আসেনি। আমার মনে তখন বড় ঘরের বউ হাওয়ার লোভ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়েছে। কালো শক্তির ফলে আমি আগেই জেনে গিয়েছিলাম সেদিন জমিদার মশাই ওই রাস্তা ধরে গঞ্জের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমিও টোপ ফেললাম। অধীর আগ্রহ নিয়ে ওই খোলা দীঘির পানিতে অঙ্গ ভিজিয়ে বসে পড়লাম। পুরুষ মানুষ, সেই সঙ্গে আছে ক্ষমতা আর প্রচুর অর্থের পাহাড়। আমার মতো রূপসীর রূপে ঘায়েল না হয়ে যাবে কোথায়? নিজের পরিচয় গোপন করে ওকে মিথ্যা বললাম। সেদিন রাতেই আমাদের বিয়ে হলো। জমিদারের ঘরণী হলাম আমি, সৌভাগ্য আমার দ্বারপ্রান্তে এসে গেছে। ভেবেছিলাম এভাবেই হয়তো দিন যাবে কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। জমিদার মশাই নিজের প্রথম স্ত্রীর উপরে দুর্বল ছিলেন যেটা আমি কখনও সহ্য করতেই পারতাম না। এখনো করিনা। কালো শক্তির সাহায্যে উনার মন আমার দিকে ঘুরিয়ে নিলাম। শশুর সাহেব জানতেন না আমাদের এহেন কাজকর্মের কথা। শয়/তান আমার সঙ্গে কুটিল বুদ্ধিতে এগিয়ে গিয়ে শশুর সাহেবের কাছে খবর পৌঁছে দিলেন। ফলাফল হিসেবে উনি জমিদার মশাইকে হুমকি ধামকি দিয়ে পত্র পাঠাতে শুরু করলেন। শয়/তান আবারও আমাকে বুদ্ধি দিলো সময় এলো কহিনুর রত্নটাকে উনার হস্তে তুলে দেয়ার। শয়তা/নের কথা অনুযায়ী আমি উনাকে বললাম,” এই বিশেষ পাথরটার ক্ষমতা সাধারণ না। এটার কাছে মানুষ যা চাইবে তাই পাবে আপনিও চাইতে পারেন। ”
উনি চাইলেন নিজের চাওয়া আর না পাওয়ার কথাগুল। বিনিময়ে খোয়ালেন সুলতান বংশের মেয়েদের কন্ঠস্বর। মানব নিষিদ্ধ মানবীরা জন্ম নিতে শুরু করলো সুলতান পরিবারে। জমজ সন্তানের জন্ম হতে লাগলো। মেয়েরা অর্ধমানবদের আর দুজন জমজ ছেলের মধ্যে একজনকে শয়তায/নের নামে উৎসর্গ করা করার প্রচলন শুরু হলো। কিন্তু তাঁর আগে কন্ঠস্বর হারিয়ে জমিদার সাহেবের বোন আত্মহ/ত্যা করে বসলেন। যে ছিল উনার চোখের মনি, প্রাণাধিক আদরের বোন। বড় বিবির সন্তান প্রসবকালীন মৃ/ত্যু সব মিলিয়ে উনি আমার উপরে ক্ষিপ্ত হলেন। ভাগ্য বিধাতা আমার উপরে সদয় হলেন না। রুষ্ট হয়ে শয়/তানের কাজে বাধা দিতেই এক কলঙ্কিত অধ্যায়ের সূচনা হলো। ফারাবি ফারুকী কহিনুর পাথরটাকে গহীন অরণ্যে সমাধিতকরে আত্মহ/ত্যা করে বসলেন। আমি মানতে পারলাম না। কেনো মানবো? যার জন্য এতো কিছু করলাম তাকেই যদি নাই পাই? আমার সঙ্গে কালো শক্তি ছিল সেটা আবারও ব্যবহার করলাম। শয়তা\নের সন্তুষ্ট করতে আমি নিজের জীবন ব/লি দিলাম। দেখেছো কখনও ঝুলন্ত লা/শের শরীর থেকে ফোটা ফোটা তাজা র/ক্ত ঝরতে? আমি ঝরিয়েছি। ফলাফল হিসেবে আমার মৃ/ত্যু হলো। তবে ওকে আর নাগালে পেলাম না। হারিয়ে গেলাম কোন এক প্রান্তে। আমার আত্মা কবরে জায়গা পেলো না। তাছাড়া লা/শ তখন কালো শক্তির দখলে। আমি দিশেহারা হয়ে কতকাল যে ঘুরেছি জানা নেই। ভেবেছিলাম এভাবেই হয়তো আমি কষ্ট পাবো কিন্তু শেষমেশ আবারও উনাকে পেলাম। কালো শক্তি উনাকে শক্তি দিলেন। জমিদার মশাই নিজের পরিবারের এক পুরুষের শরীরে তখন বসতি গড়েছেন। উনি শয়তা\নের শক্তির কাছে মাথা নত করে নিয়েছিলেন নয়তো এভাবে কষ্ট পাওয়ার কোনো মানে ছিল না। উনি আমার লাশ/টাকে ফিরিয়ে নিয়ে বলি দিতে শুরু করলেন। একশো একটা রমণীর র/ক্ত পেয়েই আমার অত্না উনার কাছে ফিরতে পেরেছে। শয়তানের খাদ্যের যোগান হিসেবে সেই মেয়েগুলোর শরীর ভেট দিয়েছেন। এতোকিছুর পরে আমি ফিরেছি।সহজে পারবে না আমার সঙ্গে। কহিনুরের শরীরের শেষ র/ক্ত বিন্দু নিয়ে তবে ছাড়বো। ওর মৃ/ত্যুর পরে ওর শরীর আমি দখল করবো। পাথরের শক্তি দিয়ে পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকবো। শরীরের মৃ /ত্যুর ভয় থাকবে না। কতটা মজা হবে ভাবো?
চন্দ্র প্রথম থেকে সবটা বলে দিলো। পাথর হতভম্ভ এই মহিলার কথা শুনে। স্বার্থের জন্য কতটা নিচে নেমেছে এই মহিলা। পাথর হুঙ্কার দিয়ে বলল,
> কহিনুরের চুল ছুয়ে দেখাতে পারলে দেখিও। আগে এই অর্ধমানবের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতে হবে তবেই ওকে পাবে। জীবন থাকতে আমি ওর ক্ষতি হতে দিবো না। কহিনুর আমার স্ত্রী। ওকে আগলে রাখা আমার দায়িত্ব।
চন্দ্র চমৎকার হাসলো। ওষ্ঠ ফুলিয়ে বলল,
> বোকা ছেলে নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে শত্রুকে সাহায্য করতে এসেছো? কহিনুর তোমার মতো বোকা না। ও কখনও তোমার স্বার্থের জন্য নিজের পরিবারের ক্ষতি করবে না। আমি যদি এখন তোমাক মে /রে ফেলি ও পারবে না বাঁচাতে। আমি কিন্তু জানি অর্ধমানবের কিভাবে মৃ /ত্যু হবে? আমার সঙ্গে আপোষ করো। ঝঞ্ঝাট করোনা।
পাথর বাঁকা হাসলো। ততক্ষণে চন্দ্রের পেছনে কহিনুর এসে দাঁড়িয়েছে। মেয়েটাও ঠিক চন্দ্রের মতো সেজেছে। চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। কহিনুর ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করলো রাজি হতে। পাথর কিছু একটা ভেবে বলল,
> ভাবতে হবে হুটকরে সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। আচ্ছা মারিয়া ফারুকীর বিষয়টা ঠিক বুঝলাম না। তুমি তো উনাকে ব্যবহার করছ তবে উনাকে ছেড়ে হঠাৎ কহিনুরের শরীরের কোনো প্রয়োজন হচ্ছে?
মারিয়া ফারুকীকে দিয়ে চলছে না?
চন্দ্র আবারও শব্দ করে হাসল। রহস্য খেলা করছে সেই হাসিতে। পাথরের কৌতূহল দেখে মজা নিচ্ছে ভেবে ওর রাগ হলো কিন্তু কিছু করার নেই। ওদিকে কহিনুর চোখ রাঙিয়ে চুপ থাকতে বলছে। চন্দ্রের কথায় ওর ধ্যান ভাঙলো।উনি বললেন,
> আগে বলো সুলতান পরিবারের মেয়েরা সবাই জমজ হয়ে জন্মেছে কিন্তু সেকি জমজ? বোবা বধির মেয়েগুলো মধ্যে ও আলাদা। কিন্তু কেনো? প্রশ্ন আসেনি? চোখের দেখা বা শোনার মধ্যেও ভুল থাকে ঠিক তেমনি ঘটেছে মারিয়ার ক্ষেত্রে। মারিয়া সুলতান পরিবারের কেউ না। ওকে ব্যবহার করা হয়েছে।
চন্দ্রের কথা শুনে পাথর হতভম্ভ হলো। সুলতান পরিবারের মধ্যে আর কত রহস্য লুকিয়ে আছে কে জানে। পাথর প্রশ্ন করলো,
> উনার পরিচয়? উনার সঙ্গে সুলতান পরিবারের কি সম্পর্ক ঠিক বুঝলাম না।
> মারিয়াকে ফারাবী ফারুকী আমার জন্য এনেছিলেন ওই বাড়িতে। আমার ফেরার জন্য একটা শরীর দরকার ছিল। সুলতান পরিবারের মেয়েরা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। আমি ত্রুটিপূর্ণ শরীরে প্রবেশ করতে পারিনা। মারিয়ার বাক শক্তি কালো জাদু দ্বারা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ও বোবা ছিল না কখনও। নিজের মেয়েকে বন্ধি করে কোন বাবা বাড়িতে শান্তিতে ঘুমাই? এইটুকু বিষয় ভাবতে পারেনি কহিনুর? আমি তার শক্তি নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবো না তবে সে এখনো অনেক বাচ্চা। যাইহোক অনেক সময় নষ্ট করেছো আর না। আমার সময় কম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার গোসলের প্রয়োজন। জমিদার সাহেবকে কোথায় রেখেছো? নিতে আসো। উনি ঘুমন্ত শরীরে প্রবেশ করতে পারেন না।
চন্দ্রের কথা শুনে কহিনুর পেছন থেকে বলে উঠলো,
> অনুমান করেছিলাম আর দেখো কি সুন্দর কাজে লাগলো। সুলতান ফারাবি ফারুকী এখন গভীর ঘুমের অচেতন। আজ কেনো আগামী দুদিন উনার ক্ষমতা নেই নিজে থেকে এখানে আসার। সে যাইহোক কহিনুর নিজে থেকে হাজির হয়েছে খুশীতো চন্দ্র?
কেনো জানি চন্দ্র ঘাবড়ে গেলো। এই মূহুর্তে কহিনুরকে ও আশা করেনি। তাই পাথরের দিকে তাকিয়ে চাপা কন্ঠৃ বলল,
> প্রচারক তোকে ছাড়বো না আমি। কি ভেবেছিস চন্দ্র দুর্বল?
পাথর উত্তর দিতে চাইলো কিন্তু পারলো না। কহিনুর আগেই বলে উঠলো,
> না চন্দ্র দুর্বল কেনো হবে? চন্দ্রের প্রচুর শক্তি। এই যে শেষ বলিটাও গায়েব। জমিদাম মশাই গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। এসব অসমাপ্ত কাজগুলো কে করবে চন্দ্র? তোমার তো আবার শরীর নেই। বলির টাটকা র\ক্ত ছাড়া তোমার শরীর পচতে শুরু করবে। এক সময় সেটা নষ্ট হবে সেই সঙ্গে তোমার আত্মাও বিলীন হবে ঠিক বলেছিনা? এতো যত্ন করে কারো লা/শ রাখা তো আর এমনি এমনি হয়নি। একটা কাজ করি লা/শটাকে পুড়িয়ে কাহিনি খতম করি ঠিক আছে?
চন্দ্র রেগে গেলো। যেই মেয়েটাকে বলির জন্য এনেছিলো তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এই নির্জন স্থানে ও আর জমিদাম সাহেব ছাড়া সঙ্গে কেউ থাকে না বিধায় আজ এই খারাপ অবস্থা। বলিটা আজ ওর জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কালো শক্তির সাহায্য নিতে হবে কথাটা ভেবে ও বিড়বিড় করলো। কহিনুর ওর ওষ্ঠের দিকে তাঁকিয়ে আছে। কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না। চন্দ্রের কফিন খুঁজতে হবে। ওটা ভীষণ দরকার। কথাটা ভেবে ও পাথরকে ইশারা করলো সরে যেতে। তারপর নিজেও সরে আসলো। সেই পুরাতন প্রাসাদের ভেতরে এসে ওরা প্রতিটা জায়গা খুজে ফেলল। কিন্তু ফলাফল শূন্য। কহিনুর চোখ বন্ধ করে ভেবে নিলো আর কোথায় থাকতে পারে। এই চন্দ্রের সব রাস্তা বন্ধ করতে হবে। কথাটা ভেবে ও দ্রুত বেরিয়ে এসে জঙ্গলে রাস্তায় নেমে আসলো। কেমন অদ্ভুত লাগছে। চন্দ্র ওর পেছনে আসেনি। এমনটা আশা করেনি। পাথর চুপচাপ থাকতে না পেরে বলল,
> এই চন্দ্র আবার কোনো কাহিনী করছে আমার বিশ্বাস। ফারাবী ফারুকী অচেতন ঠিক আছে যদি অন্য কেউ করে তবে?
> জানিনা কিছু। শুনুন চন্দ্রের কফিন খোঁজার আগে সাঈদের আম্মীকে খোঁজা দরকার। কিভাবে উনার কাছে পৌঁছনো যাবে কিছুই বুঝতে পারছি না। সুলতান ভিলাতে আমাদের ফিরতে হবে। আজকের রাতটুকু ফারাবি ফারুকীকে পাহারা দিতে হবে। চন্দ্র র/ক্ত না পেলে দুর্বল হবে। ওর শরীর পচে যাবে। দ্রুত চলুন।
পাথর উত্তর দিলোনা। কহিনুরের কথামতো ছুটে চললো বাড়ির দিকে। চন্দ্রের মুখোমুখি হওয়ার জন্য এইটুকু করতেই হতো। কিছু জানার দরকার ছিল জানা হয়েছে। চন্দ্রকে শেষ করতে যা যথেষ্ট।
*********
হাতের কফির মগটা ফ্লরে ছুড়ে দিয়ে রাগে ফুলছে ঐশ্বর্য। অধরা ওর জন্য কফি এনেছে যেটা ওর পছন্দ হয়নি। কাজের মেয়েটাকে ওর জন্য নামে মাত্র রাখা হয়েছে। সব সময় কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে খোঁজ নেই। ওরকি কোনো মূল্য নেই? অধরা বিরক্ত হচ্ছে ঐশ্বর্যের ব্যবহার দেখে। মেয়েটা দিনকে দিন বেয়াদব হচ্ছে। শব্দ শুনে জুবায়ের হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে এসে অবাক হলো। ঐশ্বর্যের কাছে গিয়ে ওর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে স্নেহের সঙ্গে বলল,
> মা আমার এভাবে রাগারাগি কেনো করছো? আন্টির লেগে যেতো তাইনা? কি দরকার আমাকে বলবে। ড্যাড আছে না?
জুবায়েরের আল্লাদি কথাবার্তা শুনে অধরা ভীষণ চটে গেলো। দুদিন আগের কথাগুলো মনে পড়ছে। রাগ এখনো আছে। সেই রাগের সঙ্গে এই রাগ মিলেমিশে একাকার। নীরবতা ভেঙে ঐশ্বর্য ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলল,
> কাজের মেয়েটাকে আন্টি নিজের কাজে ব্যবহার করছে ড্যাড। আমার কোনো মূল্য নেই এই বাড়িতে। তুমি আমাকে এতিমখানাতে রেখে এসো ভালো হবে। এখানে থাকতে চাইনা আমি।
জুবায়ের অধরার দিকে তাঁকিয়ে আছে। বউয়ের রাগ এখনো পযর্ন্ত ভাঙাতে পারেনি। নিজের কাছে নিজের অপদার্থ মনে হচ্ছে। এখন মেয়েকে সাপোর্ট করে কি আবার ফেঁসে গেলো? কথাটা ভেবে ও মিনমিনে কণ্ঠে বলল,
> রাগ ছিল, না খেতে কিন্তু কফিটা এভাবে ফেললে কেনো? ঠিক করোনি। আন্টিকে সরি বলো।
ঐশ্বর্য মুখের উপরে চুল রেখে ঢেকে রেখেছে। অনেক চেষ্টা করেও দাগ মেলানো যায়নি। দগদগে ঘা হয়ে আছে। নিজেকে সামলে নিয়ে ও জুবায়েরকে সরিয়ে দিয়ে বলল,
> সরি আন্টি আমার ভুল হয়েছে। এমন আর হবে না।
অধরা উত্তর দিলো না যেভাবে এসেছিল সেভাবেই চলে গেলো। জুবায়েরও ছুটলো বউয়ে পিছু পিছু। ওরা যেতেই ঐশ্বর্য চুলগুলো সরিয়ে মিররটা সামনে তুলে ধরলো। কিন্তু একি মিররে এটা কার ছবি দেখা যাচ্ছে?
চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। গল্পটা শেষের পথে, হুটকরে সবাইবে অবাক করে শেষ করবো ইনশাআল্লাহ। আর দুই থেকে তিন পর্ব হবে।