#My_First_Crush
#পর্ব-০৩
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
প্রত্যেকটা মেয়ের কাছেই বিয়ে একটা অর্থ বহুল অনুভূতি প্রকাশ করে। ছোটবেলায় ঘোড়ায় চড়া রাজপুত্রের গল্প শুনিয়েই আমাদের মনে একটি স্বপ্নের বীজ বুনে দেওয়া হয়। যার ভাব তখন প্রকাশিত না হলেও আস্তে আস্তে বীজটি অঙ্কুরিত হয়ে তার ডালপালা ছড়াতে ছড়াতে বড় হয়ে আমাদের জীবনের একটা বিরাট অংশকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। যার প্রভাব থেকে যায় বাকিটা জীবন জুড়েই। প্রতিটা মেয়েই বিয়ের মাধ্যমে একটা বিশ্বস্ত হাত চায়। যে তাকে সম্মান করবে, সবসময় তার পাশে থাকবে, তাকে ভালোবাসবে। তার জীবনের রাজকুমার হয়ে উঠবে। হয়তো এ কারণেই বিয়ের দিন একধরনের উৎকণ্ঠা, ব্যাকুলতা তার মধ্যে কাজ করে। আর থাকে স্বপ্ন পূরণের আকাঙ্ক্ষায় লুকায়িত একধরণের চাপা খুশি। আমিও আমার বিয়ে নিয়ে অনেক খুশি। কারণ আমি তাকেই পেতে চলেছি যাকে নিয়ে এতোদিন কল্পিত সুতোয় গল্প গেঁথেছি আমি। বিয়ের জন্য আমাকে যখন রাইয়ানের দাদীমার দেওয়া গোলাপি বেনারসি শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে আয়নার সামনে সাজানো হচ্ছিল তখন আমার মনে হচ্ছিল আমার সামনে বুঝি বসে আছে চৌদ্দ বছরের হৃদি নামের কিশোরী মেয়েটা। মেয়েটা মুগ্ধ হয়ে আমাকে দেখছে। কারণ আমি রাইয়ানের বউ হবার জন্যই সাজছি। সেই রাইয়ান, যাকে প্রথম দেখায় এক মুহুর্তের জন্য পৃথিবী অন্যরকম ভাবে থমকে গিয়েছিল তার। সেই সাড়ে আট বছর আগে তাকে আমার প্রথম দেখা, এই সাড়ে আট বছর ধরে তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে ভালোবেসে যাওয়া, আর আজ অবশেষে তার সাথে আমার বিয়ে হওয়া সবকিছু যেন একটা স্বপ্নের মতো বলেই মনে হচ্ছে আমার। বিশেষ করে বিগত কয়েকদিন, বিয়ের প্রস্তাব পাওয়া থেকে বিয়ের দিন পর্যন্ত দিনগুলো এতো দ্রুত কাটছে যে আমি ঠাওর করতে পারছি না। এর মাঝে একদিন আমার রাইয়ানের সাথে কথা হয়েছে। কথা বলতে ঐ একটু হাই হ্যালো। রাইয়ানের দাদীমাও ছিলেন পাশে। হয়তো একারণেই কথা বেশি বাড়েনি। আর আমি তো জানিই রাইয়ান একটু কম কথাই বলে। আমি সেদিন খুব হাসিখুশি ছিলাম। হয়তো রাইয়ানও ছিল। আসলে তার মুখ দেখে মনের ভাব বোঝা একটু শক্ত।
আমাকে সাজানো হলে রাইয়ানদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো। বিয়ের আয়োজনটা সেখানেই করা হয়েছে। খুব বড় আনুষ্ঠানিকতা করা হচ্ছে না। ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা হচ্ছে। এটা রাইয়ানের ইচ্ছা। সে এই মুহুর্তে কাজের চাপের কারণে বড় আয়োজনের মধ্যে যেতে চাচ্ছে না। তবে দাদীমা বলেছেন, রাইয়ানের ব্যস্ততা কমলে দেরিতে হলেও তিনি এই বিয়ের একটা বড় করে রিসিপশন করবেন। আপাতত আমাদের ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধু আর নেইবারদের নিয়েই বিয়েটা সম্পন্ন হবে। যাই হোক, অনুষ্ঠান বড় করে হলো নাকি ছোট করে এসব নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। আমি তো রাইয়ানকে বিয়ে করতে পেরেই খুশি। রাইয়ানদের পুরো বাড়িটা সাদা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। ফুলের শুভ্র রঙে সম্পূর্ণ বাড়িটা যেন আজ বহন করছে পবিত্রতার প্রতিফলক। বাতাসে অন্য রকম সুভাস ছড়িয়ে আছে। কিছু আত্মীয় স্বজনের হাসিমুখে তাকানো সতেজ করে রেখেছে পরিবেশটাকে। দাদীমা আমাকে দেখে এগিয়ে এসে একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, ‘বাহ! তোমাকে শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে।’
আমার পাশ থেকে বৃদ্ধ মিসেস পিটারও দাদীমার কথায় সমর্থন করলেন। আমি এর আগে কখনো শাড়ি পরিনি। আজই প্রথম। দাদীমার প্রশংসায় কিঞ্চিৎ লাজুক হয়ে উঠলো আমার মুখ। আমাকে নিয়ে বাড়ির মাঝখানটিতে রাখা সোফায় বসানো হলো। আমি আড়চোখে একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলাম। যাকে দেখার আকাঙ্ক্ষায় দৃষ্টি ঘুরলো সে আসলো কিছুক্ষণ পর। সাদা শার্টের উপর অ্যাশ রঙের ব্লেজার স্যুটে তাকে কি দারুণই না মানিয়েছে! রাইয়ান যখন এসে আমার ডান পাশে বসলো….মনে হচ্ছিলো হৃদয়ে একশো এক রঙিন প্রজাপতি তাদের ডানা মেলে দিলো। সোফায় বসে একবার আমার দিকে তাকালো সে। আমিও তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে ঠোঁটে হাসি আঁকলাম। সে দৃষ্টি ঘুরিয়ে চারপাশ দেখতে লাগলো। মিসেস পিটার বললেন,
‘রাইয়ান কি তোমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে এলে?’
রাইয়ান আস্তে করে মাথা নেড়ে বলল, ‘হুম।’
ওহ! একটা কথা বলতে তো ভুলেই গেছি। আজ চার মাস হলো অফিসের সুবিধার জন্য রাইয়ান তার নিজের কেনা অ্যাপার্টমেন্টে শিফট করেছে। এর জন্য আমার কতো অসুবিধা হয়েছে! প্রতিদিন তাকে দেখতে পারিনি। জগিংয়ে যেতে পারিনি। দেখতে পেতাম শুধু প্রতি উইকেন্ডের সময়। যখন সে দাদীমার সাথে দেখা করতে আসতো। তবে এখন আর অসুবিধা নেই। কারণ এখন আমিও তো রাইয়ানের সাথে তার অ্যাপার্টমেন্টেই থাকবো।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো। খানিকবাদে আমাদের এক নেইবার মিস স্যামান ওয়েডিং রিং এর কথা তুললেন। দাদীমা রাইয়ানের দিকে ঝুঁকে বললেন, ‘আংটি এনেছিস?’
রাইয়ান পকেট থেকে একটা নীল রঙের আংটির বাক্স বের করে দাদীমাকে খুলে দেখালেন। সেখানে দেখা গেলো স্বর্ণের কারুকার্য খচিত একটি আংটি। দাদীমা রাইয়ানের কাঁধে একটা চাপর দিয়ে আস্তে আস্তে বললেন, ‘হীরার একটা আংটি আনতে পারলে না?’
রাইয়ান মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘আমি এখন গরিব। আমার টাকা সঞ্চয় করা দরকার।’
দাদীমা আবারও রাইয়ানের কাঁধে একটা বারি দিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে সৌজন্যতা মূলক হাসি দিলেন। তারপর এলো সেই সময় যখন আমার চারপাশে ভেসে উঠলো রংধনুর সবকটা রং। আংটির বাক্স থেকে আংটি বের করে আমার আঙ্গুলে পরিয়ে দিলো রাইয়ান। আমি আবেগি চোখে তার দিকে তাকালাম। সেই মুহুর্তে পৃথিবীর সবটুকু আনন্দ, সবটুকু সুখ আমার হাতের সেই মধ্যমা আঙ্গুলটিতে জমা হলো। একে একে সব রীতি শেষ হলে সবার পরে আমাদের সামনে বিয়ের রেজিষ্ট্রি পেপার রাখা হলো। প্রথমে দেওয়া হলো রাইয়ানের সামনে। হাতে কলমটি নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে সে তাকালো দাদীমার দিকে। তারপর নিজের সিগনেচার দেওয়ার পর আমার দিকে রেজিষ্ট্রি পেপার আস্তে করে ঠেলে দিলো সে। কলমটি হাতে নিয়ে আমি একবার জোরে দম নিলাম। তারপর এক নিঃশ্বাসে সিগনেচার করে দিলাম। কাজী সাহেব স্পষ্ট গলায় বললেন, ‘আপনারা দুজন এখন থেকে স্বামী স্ত্রী।’
আমি ঝট করে উঠে দাঁড়ালাম। সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। রাইয়ানও। আমার পাশে যেই মধ্য বয়স্ক ইংরেজ মহিলা দাঁড়িয়ে ছিলেন আমি তাকে দম আটকে রাখা অবস্থার মতো আস্তে করে বললাম, ‘আমি ওয়াশরুমে যাবো।’
তিনি ফিসফিস করে আমার কানে বললেন, ‘তোমার মাত্রই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এখনই যাবে! হোল্ড করতে পারবে না?’
আমি ইঞ্জিনের মতো দ্রুত মাথা নাড়ালাম। তিনি আমাকে ওয়াশরুমের রাস্তা দেখিয়ে দিলেন। ওয়াশরুমে ঢুকেই আমি দ্রুত দরজা বন্ধ করে সেভাবেই দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। এতক্ষণে আটকে রাখা দম ছাড়া পেতেই আমার বুক দ্রুত ধড়ফড় করতে লাগলো। হঠাৎ আমার চোখ পড়লো ওয়াশরুমের আয়নার উপর। তার সামনে দাঁড়িয়ে আমি দু হাত মুখে চেপে ধরলাম। আমার সাড়ে আট বছরের ভালোবাসার মানুষটির সাথে আমার এই, এই মাত্রই বিয়ে হলো! আমার জীবনের ফার্স্ট ক্রাশ এখন আমার…স্বামী!
আয়নায় আমার হাতের বিয়ের আংটি টা মনে হলো যেনো একটা ঝিলিক দিয়ে উঠলো। আংটি ধরেই আমি হঠাৎ তীব্র উত্তেজনায় ফেটে পড়লাম। দু হাত মুঠো করে বিশ্বকাপ জেতার ন্যায় ইয়েস! ইয়েস! করে লাফাতে লাগলাম। হাসি ফুটে ঠোঁট প্রশস্ত হতে হতে চেহারা অতিক্রম করে বেড়িয়ে যাবার উপক্রম হলো। আমি লাফাতে লাগলাম। নাচতে লাগলাম। হাত পা নেড়ে চাপা আনন্দের সুর করতে লাগলাম। উল্লাসে যেনো আমি ফেটে যাবার মতো অবস্থা। আমি আবারো আমার হাতের আংটির দিকে তাকালাম। এটা আমার বিয়ের স্বীকৃতি, অ্যান্ড….ইট লুকস লাইক মাই লাইফ’স বিগগেস্ট এচিভমেন্ট।
নিজেকে ধাতস্থ করে কিছুক্ষণ পর বের হতেই দেখলাম একজন বৃদ্ধ মহিলা দরজার সামনে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি বের হতেই একবার ওয়াশরুমের ভেতরে দৃষ্টি বুলিয়ে পুনরায় আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন তিনি। আমি শান্ত মেয়েটির মতো চেহারায় একটা নির্দোষ ভাব নিয়ে দ্রুত সেখান থেকে কেটে পড়লাম।
________________________________________________
অ্যাপার্টমেন্টের সামনের গার্ডেনে অন্ধকারে একাই দাঁড়িয়েছিল রাইয়ান। বিল্ডিংয়ের ভেতর থেকে আসা সাদা লাইটের আলো ঝোপ গাছগুলোর মধ্যে কিছুটা আলোর আভা এনেছে। রাইয়ানকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এলো জিশান। একটু আগেই তারা রাইয়ানের নিজের অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছেছে। আজকের জন্য জিশান ছিল ওদের ড্রাইভার। রাইয়ান যখন বুকে হাত গুঁজে নিজের ভাবনায় ব্যস্ত তখন জিশান এসে রাইয়ানের কাঁধে হাত রেখে মজা করার ভঙ্গিমায় বলল,
‘আর কতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি? তোর নিউলি ব্রাইড তোর জন্য অপেক্ষা করছে না?’
রাইয়ান শীতল দৃষ্টিতে জিশানের দিকে তাকাতেই জিশান একটু চেপে যাওয়ার ভাণ ধরলো। তারপর ঠোঁটে হাসি চেপে বলল,
‘বিয়ে হলো মাত্র কোথায় একটু হাসিখুশি থাকবি তা না! মুখটাকে এমন ভালুকের মতো করে রেখেছিস কেন?’ তারপর গলার আওয়াজ একটু নামিয়ে জিশান বলল,
‘কাম অন ব্রো! প্রথমবার কোন মেয়ের সাথে এক ছাদের নিচে থাকতে যাচ্ছিস। ইনজয় ইট!’
কনুই দিয়ে জিশানের পেটে জোরে একটা গুঁতা দিলো রাইয়ান। জিশান পেটে হাত রেখে সেখান থেকে আস্তে আস্তে চলে যেতে লাগলো। রাইয়ান আবারো আগের মতো ঘুরে দাঁড়াতেই জিশান ঝট করে দৌড়ে কানের কাছে এসে বলল,
‘বলা তো যায় না, কখন কি হয়ে যায়?’
রাইয়ান কংক্রিটের একটা বড় টুকরো তুলে জিশানকে মারতে উদ্যত হলো। তার আগেই সেখান থেকে দৌড়ে পালালো জিশান।
একটুপর বাসার ভেতরে ঢুকলো রাইয়ান। নিজের রুমের দিকে উঁকি দিতে দিতে আস্তে আস্তে করে ভেতরে ঢুকলো। ভেতরে ঢুকে দেখে রুম ফাঁকা। বিছানায় কিছু গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছিটানো। এটা নিশ্চয়ই জিশান বদমাশটার কাজ। রাইয়ান ভেবেছিল হৃদি আছে ভেতরে। কিন্তু মেয়েটা গেলো কই! ভাবতে ভাবতে পা টিপে টিপে এদিক ওদিক চোখ বুলাতে বুলাতে রাইয়ান বিছানার কাছে চলে এলো। হৃদিকে কোথাও দেখতে না পেয়ে গায়ের ব্লেজারটি খুলে ফেললো রাইয়ান। হঠাৎ রুমের লাইট শর্ট সার্কিটের মতো কাঁপতে লাগতো। আকস্মিকতায় রাইয়ান পেছনে ঘুরতেই হঠাৎ কারো পায়ে বেজে তাকে নিয়ে একসাথে বিছানায় পরে গেলো। তৎক্ষনাৎ লাইট ঠিক হয়ে গেলো। পুরো রুম আলোকিত হতেই রাইয়ান দেখতে পেলো তার উপরেই হৃদি। একে অপরের দিকে তাকিয়ে দুজনেই স্ট্যাচুর মতো হয়ে গেলো কিছুক্ষণের জন্য। রাইয়ানের হুট করে মনে পড়লো জিশানের আজ বলা একটা কথা,
‘এই পৃথিবীতে সবথেকে রিস্কি জিনিসটা হলো একটা ছেলে আর একটা মেয়ের একা একরুমে থাকা।’
আস্তে করে গলা খুক করে উঠলো রাইয়ান। হৃদি তাড়াতাড়ি ওর উপর থেকে সরে যেতেই রাইয়ান গলার টাই ঠিক করতে করতে উঠে বসলো। তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। চুপচাপ সেভাবেই বসে রইলো হৃদি। রাইয়ান ব্লেজারটি নিয়ে সোফার উপর রাখলো। রুমের পুরো পরিবেশটা যেনো হঠাৎ অস্বস্তি নামক গ্যাসে ভরে গেছে। গলার টাই খুলে ফেললো রাইয়ান আর আড়চোখে বারবার হৃদির দিকে তাকাতে লাগলো। একটা মেয়ের সাথে একা এক রুমে থাকা আসলেই খুব অস্বস্তিকর। ইতস্তত করতে করতে রুমের দরজাটা লাগাতে গিয়েই আবারো মাথার মধ্যে জিশানের বলা কথা বাজতে লাগলো,
‘বলা তো যায় না, কখন কি হয়ে যায়!’
মাথা ঝাঁকিয়ে জিশানের কথা মাথা থেকে বের করার চেষ্টা করলো রাইয়ান। হৃদি অবাক হয়ে রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। দম বন্ধের মতো বোধ হতে লাগলো রাইয়ানের। শার্টের কলার একটু আলগা করতে করতে আবারো হৃদির দিকে আড়চোখে তাকালো সে। আর যতবারই ওর দিকে চোখ যেতে লাগলো ততবারই অস্বস্তি ঢাকতে গলায় খুক খুক করে শব্দ করতে লাগলো। হৃদি ভাবলো রাইয়ানের বুঝি ঠান্ডা লেগেছে। তাই টেবিলে থাকা ফ্লাক্স থেকে একটা মগে রাইয়ানের বেখেয়ালে তার জন্য গরম পানি ঢেলে নিলো হৃদি। হৃদির দিকে পিঠ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল রাইয়ান। তাই হৃদি যখন গরম পানির মগটি রাইয়ানের কাছে নিয়ে যাবে ঠিক তখনই হঠাৎ সে পেছনে ঘুরে ফেলায় আংশিক বাঁধার মতো পেয়ে রাইয়ান ঝট করে বিছানায় বসে পরে। ফলে খানিক গরম পানি ছিটকে পরে রাইয়ানের বুকে। রাইয়ান শব্দ করে উঠে। তৎক্ষনাৎ বিচলিত হয়ে হৃদি হাত থেকে মগ রেখে ‘সরি, সরি’ বলতে বলতে রাইয়ানের শার্টের বোতাম খুলতে থাকে। রাইয়ান হতভম্ব হয়ে শার্টে হাত রেখে আটকে দ্রুত বলে, ‘কি করছো?’
বুঝতে পেরে হৃদি স্বাভাবিক হয়ে হাত সরিয়ে আবারো বলে, ‘ও! সরি!’
রাইয়ান খুক করে গলায় শব্দ করে বলল, ‘আমি ঠিক আছি। ইটস ওকে।’
তারপর পাশ থেকে বালিশ হাতে নিয়ে ইতস্তত ভঙ্গিতে আস্তে আস্তে সরতে সরতে বলল,
‘আমার আসলে কারো সাথে বেড শেয়ার করার অভ্যাস নেই। তাই আমি বরং সোফায়….
রাইয়ানের কথা শেষ হবার আগেই হৃদি বলে উঠলো, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ সমস্যা নেই। ঠিক আছে। ঠিক আছে।’
রাইয়ান গিয়ে সোফায় বালিশ রেখে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লো। হৃদিও একটুপর বিছানায় শুয়ে পরে রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার মনে পড়লো এই বাড়িতে আসার আগে দাদীমা তাকে এক কোণায় ডেকে নিয়ে বলেছিল,
‘রাইয়ান ভেতর থেকে একটু চাপা স্বভাবের। নতুন কারো সাথে স্বাভাবিক হতে ওর একটু সময় লাগে। ছোট থেকেই ওঁ এমন। তুমি কিছু মনে করো না। ‘
বৃদ্ধ মানুষটি খুবই ইতস্তত করতে করতে কথাগুলো বলছিল। তার এই অস্বস্তি কাটাতে হৃদি মিষ্টি করে একগাল হেসে বলেছিল,
‘সমস্যা নেই। আমি বুঝতে পারছি।’
হৃদি বাস্তবে ফিরে এলো। সামনে খানিক দূরত্বেই ঘুমন্ত রাইয়ান। হৃদির মুখে হাসি ভেসে উঠলো। দাদীমা তো আর জানেন না হৃদির জন্য এতটুকু দৃশ্যই কত বেশি।
চলবে,
Baki part kobe deoa hbe?