এক_সায়াহ্নে_প্রেমছন্দ #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_২৮

0
317

#এক_সায়াহ্নে_প্রেমছন্দ
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৮
মহিমা বেগম বেশ অবাক হয়ে বললেন,
“তোকে কে বলেছে আমি বাধা দিব? আমি তো মসে মনে চাইছিলাম নাজমার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিব যাতে ওর চিন্তা কমে। কিন্তু তোর যে পছন্দ আছে, সেটা জানতাম বলে কিছু বলিনি। তোর পছন্দ যে তিতির তাতো জানতাম না। আমার কোনো সমস্যা নাই এতে। আমার তো গর্ব হচ্ছে তোর উপর। তুই গতানুগতিক ধারাতে বয়ে যাসনি।”

মাশরিফ হা করে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে মহিমা বেগম হাসলেন। অতঃপর ছেলের মাথায় আলতো মা*রা*র ভাণ করে বললেন,

“আরে আমার পা*গ*ল ছেলে! আমি কখনোই তোকে বাধা দিতাম না। কারণ আমি জানি আমার ছেলে যথেষ্ট বুঝদার। তার পছন্দ যে খারাপ হবে এটা তো আমি কল্পনাও করতে পারিনা। তাইতো দ্বিধাতে পরে গিয়েছিলাম। আমি চাইছিলাম আমার বোনের কষ্ট ও চিন্তা কিছুটা হলেও কমাতে কিন্তু এদিকে তোর পছন্দ! তার জন্য তোকে বলতেও দ্বিধা করেছিলাম। কারণ আমি চাই না আমার নিজের ছেলের কাছে একজন খারাপ মা হিসেবে সারাটা জীবন থাকতে। আমি নিজের ক্ষেত্রে যা মানতে পারিনি সেটা তোর ক্ষেত্রে কিভাবে মানব! কিন্তু এখন জেনে খুব শান্তি লাগছে যে তোর পছন্দ আমার পছন্দ মিলে গেছে। এটা যে কতটা স্বস্থির সেটা এক মা বুঝে।”

মাশরিক ফুঁস করে সকল অস্বস্থির নিঃশ্বাসগুলো ঝেড়ে ফেলল। অতঃপর হাস্যজ্জল কণ্ঠে বলল,
“একটা চিন্তা কমলো তবে! এখন শুধু তিতির রাজি হওয়া বাকি। ”

“কেন তিতির রাজি না? ”

মাশরিফ হেসেই মাথা দুলায়। মহিমা বেগম বললেন,
“হয়ে যাবে চিন্তা করিস না। তাছাড়া আমি তো আছি তোর পক্ষে। মেয়েটা মেবি স্পেস চাইছে।”

“হ্যাঁ। আমি ওকে কথা দিয়েছি, ও না ডাকলে ওর সামনে যাব না। তবে তোমাকে নিয়ে যাওয়াতে সামনে পরতে হয়েছে কিন্তু আমি ওর সাথে যেচে কথা বলতে যাইনি। আত্মীয়তার সুবাদে সামনাসামনি দেখা তো হবে।”

মহিমা বেগম ছেলের মাথায় হাত রেখে বললেন,
“তোকে কিন্তু ওর সিচুয়েশনটাও বুঝতে হবে। মেয়েটা আর দশটা মেয়ের মতো নরমাল সিচুয়েশনে নেই। সময় নিক। আমারও এখনি পুত্রবধূ আনার তাড়া নেই।”

এই বলে মহিমা বেগম হাসলেন। মাশরিফও হেসে গাড়ি স্টার্ট করল।

________

কয়েকদিন পর ইনায়ারা তিতিরকে ডেকে পাঠাল। হঠাৎ সিনিয়রদের থেকে ডাক পেয়ে এর কারণ সে ধরতে পারল না। সে তো এমন কিছু করেনি যে আবার ডাকাবে। এসব ভাবতে ভাবতে নানারকম কল্পনা-ঝল্পনার মধ্যেই তিতির ইনায়াদের সামনে গিয়ে সালাম দিল। ইনায়া তিতিরকে দেখে মিষ্টি হেসে সালামের প্রত্যুত্তর করল। অতঃপর বলল,

“কেমন আছো তিতির? আমি ডেকেছি বলে ভয় পেয়েছিলে?”

তিতির দারুণ অস্বস্থিতে পরে গেল। হাসার চেষ্টা করে বলল,
“না আপু। এমনিতেই। আপনি বলুন।”
“তবে শোনো যেই কারণে ডেকেছি। আমার পরিচিত এক আপু আছেন। যার শাশুড়ির ট্রিটমেন্টের জন্য হসপিটালে প্রায়ই আসেন। সেখান থেকেই পরিচয় আরকি।”

এটুকু বলে ইনায়া থামল। তিতির বুঝে পেলো না, এসব তাকে বলার কারণ কী! সে বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। ইনায়া আবার বলতে শুরু করে,

“আপুর বাচ্চাটা ক্লাস সিক্সে পড়ে। বাচ্চাটা দৌঁড়াদৌঁড়ি করে টিউশন করতে করতে সিক হয়ে যাচ্ছে তাছাড়া বাচ্চাটার ব্রেন একটু.. বুঝোই তো। অনেকবার একই পড়া পড়াতে হয় যা ধৈর্য্যের ব্যাপার। আপু তাই তার মেয়ের জন্য বাসায় এসে ধৈর্য সহকারে পড়াবে এমন টিউটর খুঁজছেন। দুই মাসে দুইটা টিচার বদলিয়েছে। উনারা বাচ্চাটাকে ভালো করে ট্রিট করতে পারছেন না আসলে বাচ্চাটা পড়া ক্যাচ করতে পারছে না। এখন টিউটর লাগবে বাচ্চাটার জন্য। তুমি পড়াতে পারবে? আগেই বলে রাখি যে দিনে কম করে হলেও দুই-আড়াই ঘণ্টা পড়াতে হবে। বেতন নিয়ে চিন্তার কিছু নাই। সিক্সের সব সাবজেক্ট পড়াতে হবে তাই বেতনটা ভালোই দিবে। এই ধরো, ছয়-সাত! এর বেশি দিতে পারবে না। প্রতিদিন পড়াতে হবে না কিন্তু সপ্তাহে চার দিন মাস্ট। পারবে?”

তিতির অবাক হলো। এখনি টিউশনির খোঁজ কেউ তাকে যেচে দিতে আসবে তা সে ভাবতেও পারেনি।
তিতিরকে চুপ থাকতে দেখে ইনায়া আবারও বলল,

“বাচ্চাটাকে যেহেতু অনেকটা সময় পড়াতে হবে তাহলে বাচ্চাটাকে কোনো কিছু পড়তে দিয়ে তুমি নিজেও নিজের পড়া পড়তে পারবে। তুমি ওকে পড়া বুঝিয়ে দিয়ে পড়তে বলবে তারপর তুমিও পড়লে।”

তিতির কিছু ভেবে বলল,
“সমস্যা নাই আপু। আমি পারব। উনাদের বাড়ি কি বেশি দূরে?”

ইনায়ার ঠোঁটে হাসি ফোটে। সে বলে,
“উম! না। রিকশাতে গেলে পনেরো-বিশ মিনিট। আর হেঁটে গেলে জানিনা। আমি তবে আপুকে বলে দেই। তুমি নাহয় সামনের মাস থেকে পড়ানো শুরু করো। কয়েকটা দিনই বাকি এই মাসের। কাল বিকেলে নাহয় তোমাকে নিয়ে বাড়িটা চিনিয়ে দিয়ে আসব।”

তিতির কৃতজ্ঞতার স্বরে বলল,
“ধন্যবাদ আপু। আপনারা আমাকে এতো সাহায্য করছেন তা আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে শেষ করতে পারব না। আমি টিউশনি খুঁজছিলাম। আর আপনি খোঁজ পাইয়ে দিলেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।”

“আরে ধন্যবাদ দিতে হবে না। সিনিয়র-জুনিয়র বন্ডিংটাই এমন। যাও এখন ক্লাসে যাও। আমার একটু কাজ আছে।”

ইনায়া হালকা হেসে চলে যায়। তিতির সেখানেই কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে রৌদ্রদীপ্ত নীল আকাশের দিকে তাকায়। মাথা থেকে যেন একটা চিন্তা নেমে গেল। এখন আরেকটা টিউশনি জোগাড় করতে পারলেই আর চিন্তা থাকবে না।

এদিকে ইনায়া রাফির কাছে গেলো। রুষ্ট স্বরে বলল,
“তুমি যা করছ তা কি ঠিক করছ? আমাকে বললে একটা টিউশনি খুঁজতে। খুঁজলাম। কিন্তু তোমরা কেনো তিতিরের সাথে কথা বলো না? ওর কী দোষ?”

রাফি ইনায়ার দিকে একবার তাকিয়ে আবার নজর ফিরিয়ে নিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
“ইচ্ছে হয়না বলিনা। আমাদের আগে দেখেছ? জুনিয়র মেয়েদের সাথে বেশি কথা বলতে? দুয়েকজন বাদে দরকার ছাড়া কথা বলিনা। আর তিতিরের সাথে বলতাম আমার ফ্রেন্ডের জন্য। তাও জানো। তবে?”

ইনায়া এবার মোলায়েম কণ্ঠে বলল,
“তোমাদের হুট করে ওকে ইগনোর করে চলাটাতে ও তো অন্যকিছু ভাবতে পারে। তাই না?”

“ভাবুক! কারও ভাবনার উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নাই। তাছাড়া আর কয়েকটা দিন পর ময়মনসিংহ ছেড়ে চলে যাব নিজ শহরে। তখন এখানে আসা পরবে কী-না জানিনা। তাই অতো লাগাম বাড়ানোর কী দরকার?”

রাফির চলে যাওয়ার কথা শুনে ইনায়ার মন খারাপ হয়ে গেল। সে জানে যে ওরা চলে যাবে। কিন্তু মন মানতে চায় না। ইনায়া করুণ স্বরে বলে,
“আমাকে ভালোবাসা যায় না? তুমি বন্ধুত্বের হাত বাড়ালে, গ্রহণ করলাম। এখন আমি ভালোবাসার হাত বাড়ালে কি তুমি গ্রহণ করবে?”

রাফির দৃষ্টি নিশ্চল! সে কিছুটা সময় ইনায়ার দিকে তাকিয়ে চুপ করেই চলে গেল। ইনায়া সেই স্থানে দাঁড়িয়ে সম্মুখে প্রিয়র চলে যাওয়া দেখল। নেত্রকোণে জমে উঠা জলবিন্দুকে প্রশ্রয় দিলো না। বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা গতি রোধ করল। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেও স্থান ত্যাগ করল।

_________

সেনানিবাসে রুটিনের মধ্যেই দিন গুলো অতিবাহিত হচ্ছে মাশরিফ, অভীর। মাশরিফ আসার দুইদিন পর অভী এসেছে। এবার প্রায় অনেকটা ছুটি কা*টিয়েছে তাই আবার পরবর্তী ছুটি বেশ দূরে। বিকেলের সময়টা ঘুরতে বেরিয়েছে মাশরিফ, অভী ও আরও দুইজন মেজর। হাঁটতে হাঁটতে একটা চায়ের দোকানে বসল ওরা। তাদের মধ্যে সাদ নামে একজন বলে ওঠে,

“আপনাকে বেশ অন্যমনস্ক লাগছে মেজর মাশরিফ।”

কথাটা শুনে মাশরিফ ক্ষীণ হাসল। বলল,
“কই নাতো। প্রকৃতি অনুভব করছিলাম। পাখির কলতানে মুগ্ধতাকে হয়তো আপনার কাছে আমাকে অমনোযোগী লাগছিল।”

“তা বলতে পারেন। তবে আপনার লক্ষণে প্রেম ভাব সুস্পষ্ট!”

মাঝ দিয়ে অভী বলল,
“তা আপনি কীভাবে বুঝলেন মেজর সাদ? আপনিও কি প্রেমরোগে আক্রান্ত?”

মেজর সাদ হেসে ওঠলেন। বললেন,
“সেসব প্যাঁ*চ-গোচে যাওয়ার ইচ্ছে নাই। সরাসরি বিয়ে করব। মা মেয়ে দেখেছেন। আমিও পছন্দ করেছি। সামনে বাড়ি গেলেই বিয়ে। আপনারা কিন্তু আসবেন। যদি আমার হবু বউয়ের কোনো বোন-টোন থাকে তবে আপনাদের আলাপ পারা যাবে!”

আরেকজন মেজর আদিব সহাস্যে বলে ওঠেন,
“আমার জন্য করা লাগবে না মেজর সাদ। বিয়ে করেই মিশনে গিয়েছিলাম। উনাদের জন্য দেখুন।”

মাশরিফর চায়ের কাপ হাতে নিল। তারপর হালকা হেসে বলল,
“আমার মন কারও নামে দাখিল করা আছে। তাই আপনি অভীর জন্য দেখুন।”

“আরে বাহ! তাহলে দাওয়াত কবে পাচ্ছি?”

“পাবেন যখন সময় হবে।”

কথাটা বলে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ঠোঁট এলিয়ে হেসে গাছের নিম্ন ডালের আড়ালে হেলে পরা সূর্যটার দিকে দৃষ্টি স্থীর করে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here