#খেলাঘর_১৪
লিলি ক্লাস থেকে বের হয়ে ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিলো তার আগে ওর মনে হলো, ওর ব্যাচমেট নোমান একটা মেয়ের সাথে সাহেব কে নিয়ে কথা বলছে,নোমান ছেলেটার সাথেই লিলির বান্ধবী আচলের সাথে প্রেম ছিলো, ছেলেটা একটা পাক্কা বেয়াদব লিলি অস্পষ্ট ভাবে ওদের সব কথাই শুনলো।ও সঙ্গে সঙ্গেই কাউকেই ফোন করে বলল,
—আমার একটা শাড়ী দরকার কালো রঙের শাড়ি ম্যানেজ হয়ে যাবে তাইনা?
ডিপার্টমেন্ট হেডের রুম থেকে বের হয়ে গেটের দিকে যাবে ভাবছিলো আসছিলো তারেক আর কায়নাত সেখানেই অপেক্ষা করছে, ওরা সবাই একসাথেই ছিলো কিন্তু তখনই রিদি বলল,ডিপার্টমেন্ট হেড নাকি সাহেব কে ডেকেছেন এমনিতেই তার দরকার হলে সে সাহেবকে সরাসরি কল করেন কিন্তু আজ কেন ডেকে পাঠিয়েছেন আর ডাকলেও সে নিজেই কেন রুমে নেই সেটাই সাহেব বুঝতে পারছিলো না।করিডোর পাড় হয়ে ডানে ঘুরতেই রিদি মেয়েদের ওয়াশরুম থেকে সাহেবের হাত টেনে জোর করে ওকে জড়িয়ে ধরে জোরে চেচাতে লাগলো।প্রায় সাথে সাথেই নোমান ওর কিছু বন্ধু এবং রিদির কিছু বান্ধবীদের নিয়ে সেখানে জড়ো হলো এবং নোমান সাহেবের নামে বাজে কথা বলতে লাগলো, হুট করে সাহেব কিছুই বুঝে উঠলো না ওর কিছু মাথায় ঢোকার আগেই ও খেয়াল করলো অন্য ডিপার্টমেন্টের কিছু স্যার সেদিকে চলে এসেছেন এবং রিদি মেকি কান্না কেদে তাদের বলছে সাহেব তার সাথে অসভ্যতামি করেছে ডিপার্টমেন্টের ওই স্যারগুলো সাহেবের নাম শুনলেও তাকে এর আগে দেখে নি তাছাড়া আর যাই হোক ভার্সিটির মধ্যে সাহেব কোনোরকম ভাবে তার ক্ষমতা কখনো খাটায় নি,এরমধ্যে সাহেবের ডিপার্টমেন্ট হেড এবং পাশেই ভিসি স্যারের রুম হওয়ায় তিনিও এসেছেন তারা সাহেবকে খুব ভালোভাবেই চেনেন, তারা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না সাহেব এমন কিছু করেছে, এদিকে সবার সামনে রিদি আর নোমান এমন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যে চাইলেও তারা সাহেবের হয়ে কিছু বলতে পারছে না,এদিকে তারেক আর কায়নাতও সেখানে চলে এসেছে কয়েকজন তো সাহেবের নামে বাজে কথা বলায় নোমান কে মারবেই, সাহেব অনেক কষ্টে আটকে রেখেছে, সব কিছু যখন এলোমেলো মনে হচ্ছিলো তখনই কোথা থেকে হুট করে লিলি এসে দাড়ালো,কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই রিদি সবার সামনে খুব বাজে ভাবে সাহেব কে প্রেজেন্ট করছিলো, লিলি একটু চুপ থেকে বলল,
—সরি স্যার আপনাদের সবাই কে বদার করার জন্যে আমার জন্যেই এরকম একটা মিসআআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে,
রিদি আমতা আমতা করে বলল,
—লিলি তুমি সাহেবের হয়ে কথা বলো না তুমি কি বলতে চাইছো আমি মিথ্যে কথা বলছি? মেয়ে হয়ে আমি এরকম একটা মিথ্যে কথা বলব?আমি যদি ইচ্ছে করেই এমন করব তাহলে, সাহেব মেয়েদের বাথরুমের বাইরে কি করছিলো তুমি বলো,
—না রিদি আপু তুমি মিথ্যে কথা বলছো আমি কখন বললাম তুমি বুঝতে একটু ভুল করেছো,
নোমান এবার বলে উঠলো
—লিলি তুমি কথা ঘুরিও না আমার কাছে প্রমাণ আছে এই যে দেখো ছবি সাহেব রিদির সাথে অসভ্যতামি করছে।
লিলি একবার কড়া চোখে নোমানের দিকে তাকিয়ে বললো,
—নোমান সাহেব যদি রিদি আপুর সাথে অসভ্যতামিই করে তাহলে তোমার উচিত ছিলো ছবি তোলা বাদ দিয়ে তার প্রতিবাদ করা, আশা করি তুমি জল ঘোলা করতে চাইবে না,
লিলি এবার স্যারদের সামনে গিয়ে বলল,
—স্যার আমি আর সাহেব অফিশিয়ালি স্বামী স্ত্রী আজ আমাদের ভার্সিটি থেকেই একটা ফ্যামিলি ফাংশন এটেন্ড করার কথা ছিলো আমাদের নতুন বিয়ে হয়েছে তাই, মা বলেছিলেন শাড়ি পড়ে যেতে আমি এখানেই চেঞ্জ করছিলাম তাই সাহেবকে বলেছিলাম বাইরেই দাড়াতে, এই যে দেখুন আমার কালো রঙের এই শাড়িটা সাহেবই আজ কিনে দিয়েছে আর রিদি আপুও কালো শাড়ি পড়েছেন তাই হয়তো কিছু একটা ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে আই এম রিয়েলি সরি।সাহেব যে কেমন তা তো আপনারাই আমার থেকে ভালো বোঝেন,
স্যারেরাও যেন হাফ ছেড়ে বাচলেন,ভিসি স্যার সবাইকে ভিড় কমিয়ে সেখান থেকে যেতে বললেন আরো বললেন
—সেটাই তো আমরা সাহেব কে ভালো করে চিনি সে এমন কিছু করতেই পারছে না,
ডিপার্টমেন্ট হেড হেসে এবার বললেন,
—তাছাড়া স্যার ইদানীং আমি রিপোর্ট পাচ্ছি সাহেব লেখাপড়ার প্রতিও মনোযোগ দিচ্ছে।আর
রিদি তুমি এরপর থেকে নিশ্চিত হয়ে তারপর এসব এলিগেশন আনবে, ইজ ইট ক্লিয়ার?
রিদি মাথা নিচু করে রইলো।
ভিড় কেটে যাওয়ার পর কায়নাত, তারেক, সাহেব লিলি, নোমান রিদি আর ওদের কিছু বন্ধু ছিলো ওরা দুজন চলে যাচ্ছিলো তখন লিলি ওদের ডেকে বলল,
—তোমরা একটু দাঁড়াও
লিলি তারেক কে বলল,
—তারেক ভাইয়া তোমার ফোনে ভিডিও রেকর্ড অন করো তো,কি হলো তাকিয়ে আছো কেন?অন করো!
তারেক অবাক হয়ে রেকর্ড অন করলো, লিলি রিদিকে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে বলল,
—আজ দুটো ভিডিও বানালাম এই যে দেখো, তুমি যে সাহেবকে জোর করে জড়িয়ে ধরেছো তার একটা আর এই যে আমি তোমাকে থাপ্পড় মেরেছি তার একটা।শোনো একটা কথা বলি আমি বেশ ভদ্র মেয়ে, তবে এই যে যেসব ছোট খাটো চাল তোমরা চালো এই চালের আড়ত আমার বাবার গোটা বিশেক আছে সেসব দিয়েই ভাত রান্না করা হয় আমাদের বাড়িতে তাই গেলা হয়।ভবিষ্যতে উন্নত মানের চাল হাড়িতে বসাবে কেমন?এখন এই প্রথম ভিডিওটা ভিসি স্যারের কাছে জমা দেওয়ার আগে বরং তুমি আর নোমান সাহেবকে ছোট করে একটা সরি বলো,
নোমান চোখ রাঙিয়ে লিলির দিকেই তেড়ে আসছিলো এতক্ষণে সাহেব নোমানের কলারটা টেনে বলল,
—ছোট ভাই খুব বড় হয়ে গেছো নাকি?
তারপর কলার ছেড়ে দিয়ে বলল,
—এক পা তুই সামনে এগিয়ে দেখা তুই দেখ তোর পা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারিস নাকি,
রিদি ভয়ে কাপতে লাগলো,সে ছোট করে সাহেবকে কোনোরকমে সরি বলে,নোমানকে নিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে গেলো সাহেব রিদির দিকে ফিরেও তাকালো না,শুধু একবার কড়া চোখে নোমানের দিকে তাকালো।
ভার্সিটির গেটের সামনে এসে ওরা চারজন দাড়ালো সাহেব একদম চুপচাপ, গেটের বাইরে বট গাছের কাছে এসেই ও একটা সিগারেট জ্বালালো। কয়েকটা ছেলে আর সাহেবের আরো কিছু বন্ধু এসে সাহেব কে বলল,
—ভাই বলেন নোমানের একটা ব্যাবস্থা করি, ওর এত সাহস,
—হ্যা সাহেব ওরা এত সাহস কই পায়!
সাহেব বলল,
—রিয়াদ তুই ওদের নিয়ে এখন যা এসব নিয়ে পরে কথা বলব ভালো লাগছে না,
তারেক আর কায়নাত ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে
লিলি মুচকি হেসে বট গাছের সিড়িতে বসলো,তারেক বিস্ময় নিয়ে বলল,
—লিলি তুই হাসছিস কেন!তোর কি মজা লাগছে, তোকে রোজ রোজ আমি নতুন ভাবে দেখছি,আর অবাক হচ্ছি বইন তোর পা দুইটা দে ধুয়ে পানি খাই।
কায়নাত তাল মিলিয়ে বলল,
—সত্যি লিলি তোমাকে দেখলে বোঝা যায় না তুমি তো দারুণ সাহসী!
সাহেব ওদের কথাই শুনছিলো একটু দূরে দাড়িয়ে, লিলি কিছু বলার আগেই ওর ব্যাচমেট, মৃদুল সেখানে এলো,কোকড়া চুল চোখে গোল সাদা গ্লাসের চশমা পড়া ফর্সা গায়ের রঙের ছেলেটাকে দারুণ দেখাচ্ছে,মৃদুল এসে লিলিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—লিলি তুই শাড়ি পড়েছিস কেন!দূর থেকে আমি তোকে চিনতে পারি নি একদম এজন্য কাছে এলাম নিশ্চিত হতে
—নিশ্চিত হয়েছিস?
—এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না!তুই না বলতি তোর শাড়ি নেই!
—ছিলো না এখন বিয়ে হয়ে গেছে, শাশুড়ি অনেক স্ট্রিক্ট বলেছে সব সময় শাড়ি পড়তে নাহলে লেখাপড়া বন্ধ
—কি বলিস তোর শাশুড়ি এত কড়া নাকি!এমন দাজ্জাল শাশুড়ি তোর কপালেই জুটলো!
—তোর কি মনে হয় আমি মিথ্যে কথা বলছি?আমার শাশুড়ি আরো বলেছে মাথায় সব সময় ঘোমটা দিয়ে থাকতে, আমি আমার শাশুড়ির সব কথা শুনি শত হোক স্বামীর মা বলে কথা! এখন অনেক গরম তো তাই,দেইনি।
—হোয়াট!
লিলি উঠে দাড়িয়ে বলল
—মৃদুল আমার আর এবার মনে হয় ডিপার্টমেন্ট ফার্স্ট হওয়া হবে না বুঝলি এই সুযোগ তোর সেকেন্ড বয় তকমা ঘোচানোর এবার তুই ফার্স্ট হতে পারবি,ট্রাস্ট মি।বুঝিস তো স্বামী সংসার সামলে ফার্স্ট হওয়া কত টাফ।
—আই ট্রাস্ট ইউ লিলি,
তারেক হা হয়ে দেখছে লিলিকে এই মেয়ে কি বলে!সিগারেট শেষ করে সাহেব এবার ওদের দিকে তাকালো, এই মেয়ে সারারাত পড়ালেখা করে, সারাদিন ওর মায়ের সাথে তর্ক করে এসব কি বলছে!সাহেব আড়চোখে মৃদুলের দিকেও তাকালো,মৃদু বাকা হাসি হেসে লিলির খোপা করা চুলের কাটা খুলে দৌড়ে দূরে গিয়ে বলল,
—মিথ্যে কথা তোকে একদম মানায় না লিলি একটুও না, তুই ঠিক করে মিথ্যে বলা শিখিস নি।
তারপর একটু চেচিয়ে বলল,
—শাড়িতে তোকে খুব সুন্দর লাগছে শাড়ির সাথে খোলা চুল বেশি ভালো লাগে, আমি যাই এবার আমাকে ডিপার্টমেন্ট ফার্স্ট হতেই হবে কারণ তুই বলেছিস।
—আমার চুলের কাটা ফেরত দে মৃদুল…..
কায়নাত হেসে বলল,
—এই ছেলেটাও কি তোমার চুল এলোমেলো করে দেয় নাকি লিলি!আমি ভাবতাম এরকম শুধু সাহেবই করে!
লিলি হাসি থামিয়ে বলল,
—ওর ভয়তে আমি সবসময় চুলে বেণী করে রাখি।
সাহেব লিলির দিকে তাকিয়ে দেখলো আসলেই লিলিকে শাড়িতে দারুণ লাগছে এর আগে সে কখনো লিলিকে শাড়িতে দেখে নি,কালো শাড়ির ছেড়ে দেওয়া আচলে একটা মেয়ে তার অবাধ্য চুল সামলানোর চেষ্টা করছে এরকম সুন্দর দৃশ্য ও ওর জীবনে খুব কম দেখেছে।
—তারেক ভাই দুপুরে আমাদের বাসায় খাবেন তো?সকালে আপনার অনেক খাটুনি হয়েছে চলুন এইটা আমার তরফ থেকে আপনার গিফট।
তারেক আড়চোখে সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল,
—সাহেব এখন বাসায় যাবি নাকি…
—কায়নাত আপুর তো সাহেবের সাথে কথা আছে উনারা কথা বলুক চলুন আমরা যাই।
বলেই লিলি আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাটা ধরলো,তারেক কিছুক্ষণ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল,
—আমি যাই, তুই কথা শেষ করে আয়।
সাহেব একবার কায়নাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
—কোথায় বসবি বল?
—এখানেই বসি
চলবে….
সামিয়া খান মায়া