#সাতরঙা_প্রজাপতি
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
||পর্ব:১২||
শোভনকে আসতে দেখেই অধরে হাসি ফোটে উঠল তনিমার। এত মানুষের ভিড়ে এতক্ষণ যেনো এই পুরুষটির জন্যই অপেক্ষা করছিল সে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা খালাতো বোনের দিকে তাকালো। জিজ্ঞেস করল,”আমাকে সুন্দর লাগছে তো?”
তনিমার খালাতো বোন নিতু মুচকি হেসে বললো,
“এই নিয়ে আর কতবার জিজ্ঞেস করবি? বললাম তো অনেক সুন্দর লাগছে।”
“বিরক্ত হচ্ছিস কেন? ভালো করে দেখে বল না।”
“হুম দেখেছি অনেক সুন্দর লাগছে। তা তোর সেই মনের মানুষ কোথায়? কখন আসবে?পরিচয় করাবি কখন?”
“হুম করাবো, আগে তো আমি তার পরিবারের সঙ্গে পরিচিত হয়ে নেই। নিজের মনের কথা জানাই। সব আয়োজন তো তার জন্যই।”
“আচ্ছা আচ্ছা।”
তনিমা এগিয়ে গেলো শোভনের দিকে। জ্যোতি শোভনের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে সামনের দিকে হাঁটছে। কিন্তু চোখ তার চারিদিক দেখতে ব্যস্ত। তনিমা হাস্যজ্জ্বল মুখে তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। আসার পথেই তনিমার জন্য উপহার নিয়ে এসেছে শোভন। উপহারটি তনিমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,”শুভ জন্মদিন ম্যাম।”
তনিমা হাত বাড়িয়ে উপহারটি গ্ৰহণ করল। শোভনের পাশে জ্যোতিকে দেখে ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিলো। বললো,”আপনাকে বলেছিলাম পুরো পরিবারসহ আসতে কিন্তু আপনি তো দেখছি আমার কথাটা রাখলেনই না।”
শোভন মৃদু হেসে উত্তরে বললো,”কে বলেছে আমি আপনার কথা রাখিনি? আমি তো আমার পরিবার নিয়েই এসেছি।”
তনিমার ভ্রু জোড়া আরো কুঁচকে গেলো। বুঝতে পারছে না শোভন কোথায় তার পরিবার নিয়ে এলো? সঙ্গে তো শুধু একজন কম বয়সী মেয়ে। শোভন বুঝতে পারলো কথাটা তনিমার বোধগম্য হয়নি। তাই আর হেঁয়ালি না করে সোজাসুজি জ্যোতিকে দেখিয়ে বললো,”ও হচ্ছে আমার ওয়াইফ মিসেস জ্যোতি।”
কথাটা বুঝতে কিছুক্ষণ সময় লাগলো তনিমার।মুহুর্তেই ভাষাহীন হয়ে গেলো সে। চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেলো তার হৃদয়। শোভন কী বললো এটা? ওয়াইফ মানে? শোভন কী বিবাহিত নাকি? জ্যোতি অধরে হাসি রেখে তাকিয়ে আছে তনিমার দিকে। এবার তনিমাকে দেখিয়ে শোভন জ্যোতির উদ্দেশ্যে বললো,
“ইনি হচ্ছেন আমার বস। আজ উনারই জন্মদিন।”
জ্যোতি সৌজন্যমূলক ভাবে বললো,”শুভ জন্মদিন।”
তাতে কোনো খেয়াল নেই তনিমার। সে শোভনের চোখের দিকে তাকালো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,”এই মাত্র কী বললেন আপনি? উনি আপনার ওয়াইফ? মানে কী শোভন? আমি না ঠিক বুঝলাম না আপনার কথা।”
“না বোঝার কী আছে ম্যাম? সহজ বাংলায় ও হচ্ছে আমার বউ। এই একটামাত্র বউ ছাড়া আপাতত আমার আর পরিবার বলতে কিছুই নেই।”
শোভনের এমন সহজ সাবলীল স্বীকারোক্তিতে জ্যোতির ভেতরে নতুন এক অনুভূতির সঞ্চার হলো। এদিকে তনিমার মস্তিষ্ক যেনো ফাঁকা হয়ে গেলো। যাকে নিয়ে এত স্বপ্ন, ভাবনা সে কিনা এখন এসে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে! তনিমা চমকায়িত কণ্ঠে বললো,”আপনি বিবাহিত শোভন!”
এবারো খুব সহজ ভাবে উত্তর দিলো শোভন,”হ্যাঁ।”
সাজেদ তার স্ত্রী অন্নাকে নিয়ে অনেকক্ষণ আগেই চলে এসেছে। দূর থেকে শোভন আর জ্যোতিকে দেখে এগিয়ে এলো তাদের দিকে। কাছাকাছি আসতেই তাদের কথোপকথন শুনতে পেলো।সাজেদ অন্নাকে কিছু একটা ইশারা করতেই অন্না এগিয়ে এসে জ্যোতির হাত ধরে বললো,”উফ অবশেষে তুমি এলে। কতদিন ধরে তোমার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এবার আমার ইচ্ছে পূরণ হলো। চলো ওদিকে যাই।”
জ্যোতি শোভনের দিকে তাকালো। শোভন ইশারায় অনুমতি দিতেই জ্যোতি অন্নার সঙ্গে অন্যদিকে চলে গেলো। আশেপাশে কী হচ্ছে না হচ্ছে তাতে খেয়াল নেই তনিমার। শোভনের উদ্দেশ্যে বললো,”কবে বিয়ে করেছেন? কই আমি তো জানলাম না?”
“এ আর নতুন কী? বিয়ে করেছি প্রায় এক বছরের বেশি হয়ে গেছে। আমি যে বিবাহিত অফিসের সবাই তা জানে। সাবেক বসও জানতেন।”
“অথচ আমিই শুধু জানলাম না।”
সাজেদ হেসে বললো,”সমস্যা নেই ম্যাম এতদিন জানতেন না আজ তো জানলেন। শোভন সময় করে না হয় একদিন আপনাকে ট্রিট দিয়ে দিবে।”
প্রতিক্রিয়া করল না তনিমা। শোভন বললো,”এ বিষয়ে এখন কেন কথা হচ্ছে বুঝতে পারছি না।আজ তো আপনার জন্মদিন এই আয়োজনও আপনার জন্যই সেখানে আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।”
তনিমা জোরপূর্বক হাসলো। বললো,”তাও ঠিক আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে আমার কথা বলা উচিত হচ্ছে না। আচ্ছা ইনজয় করুন পার্টি।”
কথাটা বলেই স্থানটি ত্যাগ করল তনিমা। কান্না আসছে খুব। সবকিছু দলা পাকিয়ে যাচ্ছে ভেতরে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। ইচ্ছে করছে সবকিছু ভেঙে ফেলতে। এমন একটা পরিস্থিতিতে যে পড়তে হবে জীবনেও ভাবতে পারেনি তনিমা। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলো।চাপা কষ্ট মনের ভেতর ধারণ করেই মোম নিভিয়ে কেক কাটলো। বলতে গেলে অফিসের সব কর্মচারীরাই আজ তনিমার জন্মদিনে উপস্থিত হয়েছে। অন্নার সঙ্গে কথা বলে জ্যোতি বুঝতে পারলো মেয়েটা প্রচুর কথা বলে।
অনুষ্ঠান শেষে সকলের থেকে বিদায় নিয়ে জ্যোতিকে নিয়ে বাড়িতে ফিরলো শোভন।
ঘরে এসে বিছানায় বসে পড়ল তনিমা। চোখ দিয়ে প্রবল ধারায় বর্ষণ হচ্ছে। হাঁটু মুড়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। তনিমার মা এলেন ঘরে। মেয়েকে কাঁদতে দেখে বিচলিত কণ্ঠে শুধালেন,”কী হয়েছে তনু? কাঁদছিস কেন এভাবে?”
মা’কে পেয়ে জড়িয়ে ধরলো তনিমা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললো,”মা আমি যে অনেক বড়ো একটা ভুল করে ফেলেছি। আমি যে ভুল মানুষকে ভালোবেসেছি মা। যাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখলাম আজ জানতে পারলাম সে বিবাহিত। কেন আমার সঙ্গেই এমনটা হলো মা?”
তনিমার মা চমকে উঠলেন। বললেন,”শোভন বিবাহিত?”
“হ্যাঁ মা। একবছর আগেই বিয়ে করে নিয়েছেন উনি। যখন কিনা আমাদের পরিচয়-ই হয়নি।”
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তনিমার মা। যে করেই হোক এখন মেয়েকে সামলানোর দরকার। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,”তুই প্রাপ্তবয়স্ক সাবলম্বী একজন মেয়ে। তোকে কী কাঁদলে মানায়? শুরুতেই তোর উচিত ছিলো ছেলেটির সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে নেওয়ার। যাই হোক এখন তো আর তা বলে লাভ নেই। ভুলে যা সব। বাস্তব মেনে নে। ছেলেটি বিবাহিত, স্ত্রীর সঙ্গে নিশ্চয়ই সুখে আছে। তাই এসব ভেবে মন খারাপ করার প্রয়োজন নেই। নতুন করে স্বপ্ন দেখ। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাব মা। এর থেকেও ভালো ছেলেকে তুই জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবি।”
তনিমা প্রতিত্ত্যুরে “হু” বললো। কিন্তু চাইলেই কী সঙ্গে সঙ্গে নিজের মনোভাব, ভালোবাসা বদলানো যায়? কাল যখন আবারো সেই মানুষটির সামনাসামনি হবে সে, তখনও কী ভুলে থাকতে পারবে সব?
বাহিরের পোশাক বদলে সবে বিছানায় বসলো জ্যোতি। শরীর ক্লান্ত লাগছে। হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে বসে আছে। শোভন তার দিকে তাকালো।কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে শুধালো,”খুব ক্লান্ত লাগছে?”
“হুম।”
“গাড়িতে করে এতটুকু পথ যেতে আসতেই ক্লান্ত হয়ে গেলে? অথচ কিছুদিন আগে ফুল গাছ আনার জন্য হেঁটে হেঁটে কতটা পথ গেলে কিন্তু ক্লান্ত হলে না আবার বাড়িতে এসেও বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলে না। বাহ!”
থতমত খেয়ে গেলো জ্যোতি। সোজা হয়ে বসলো। লজ্জাও পেলো খানিকটা। স্ত্রীর দিকে মুখ করে বসলো শোভন। বললো,”কথায় কথায় এত লজ্জা পাও কেন তুমি?”
বিরক্ত হলো জ্যোতি। লজ্জা কেন পায় তা কী ও জানে নাকি? এ আবার কেমন ধারার প্রশ্ন? বালিশ ঠিক করে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়ল। চোখ বুজে বললো,”কথায় কথায় কেন? আপনাকে দেখলেই আমার লজ্জা করে। ঘুমান এবার।”
ভীষণ আশ্চর্য হলো শোভন। বললো,”আমাকে দেখলেই লজ্জা পাও মানে? আমি তো এখনো তোমার সঙ্গে তেমন কিছু করলামই না।”
“কী করেননি?”
উত্তর দিলো না শোভন। মুখ ফসকে কী থেকে কী বলে ফেলেছে ভেবে নিজেই লজ্জা পেয়ে শুয়ে পড়ল।
_______
আজ আর তনিমা অফিসে এলো না। কয়েকদিনের জন্য ছুটি নিয়েছে। তার জায়গায় অন্য একজন এসেছেন। তনিমার অবর্তমানে এ কদিন নাকি তিনিই তনিমার চেয়ারে বসবেন। এবারের বসটি পুরুষ।
সাজেদ শোভনের উদ্দেশ্যে ফিসফিস করে বললো,
“ব্যাপারটা বুঝলি শোভন?”
“কিসের আবার ব্যাপার?”
“গতকাল যেই ম্যাম জেনেছে তুই বিবাহিত সেই থেকেই উনার আচরণ বদলে গেলো আবার আজ অফিসেও আসেননি। মনে হয় খুব দুঃখ পেয়েছেন।”
“অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে। অযথা কারো সম্পর্কে এসব বলা উচিত নয়।”
“দূর শা’লা। তোকে এসব বলে মজা নেই।”
দুজনেই কাজে মনোনিবেশ করল।
অফিস ছুটি হয়েছে রাত সাড়ে আটটায়। অফিস শেষে বাড়ি ফিরেছে শোভন। জ্যোতি হাস্যজ্জ্বল মুখে তার সামনে এসে দাঁড়ালো। শোভন ভ্রু জোড়া ঈষৎ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,”এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
“ছুটি নিয়েছেন অফিস থেকে? ট্রেনের টিকিট কেটেছেন?”
“টিকিট কেন কাটবো?”
হাসি উবে গেলো জ্যোতির মুখ থেকে। বললো,”কেন, কাল না আমাদের বাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো।”
“ওহ। মনে ছিলো না।”
খুব রাগ হলো জ্যোতির। রাগমিশ্রিত কণ্ঠেই বললো,
“আমার কোনো কিছুই তো আপনার মনে থাকে না। আমার কোনো গুরুত্বই নেই আপনার কাছে। আমি কী ঘুরতে যাবো বলেছিলাম? শুধুমাত্র মা’কে দেখেই চলে আসতাম। তাতেও আপনার বাঁধা। থাকুন আপনি আপনার ভুলো মন নিয়ে। আর কিচ্ছু বলবো আপনাকে।”
চমকে গেলো শোভন। বললো,”বাহ খুব দারুন ঝগড়া করতে পারো তো তুমি! আমি তো এতদিন ভেবেছিলাম ভয় আর লজ্জা পাওয়া ছাড়া তুমি কিছুই পারো না।”
চরম মেজাজ খারাপ হলো জ্যোতির। নিরবে স্থান ত্যাগ করল। শোভন মুচকি হেসে ব্যাগ থেকে টিকিট বের করে জ্যোতির কাছে গেলো। জ্যোতি সেদিন বলার পরেই অনলাইনে টিকিট কেটে নিয়েছিল শোভন। জ্যোতির সামনে টিকিট দুটি ধরে বললো,
“আমার কী তোমার মতো অত ভুলে যাওয়ার রোগ আছে নাকি?”
জ্যোতি চমকায়িত দৃষ্টিতে শোভনের দিকে তাকালো। বললো,”তাহলে আপনি যে বললেন?”
“মজা করেছি। কিন্তু তুমি তো দেখছি সত্যিই ভেবে নিলে।”
চুপ রইলো জ্যোতি। এমনিতেই কিছুদিন ধরে মা’কে দেখতে ইচ্ছে করছে, তার উপর শোভনের এমন একটি উত্তরে রাগ বেড়ে গিয়েছিল মুহূর্তে। শোভন বললো,”সকাল সকাল কিন্তু তৈরি হয়ে থেকো। বের হতে হবে তো।”
“হুম।”
এখনি জামা কাপড় গোছগাছ করতে বসে পড়ল জ্যোতি। শোভন এবং তার কাপড়সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে ভরে নিলো। ভাবতেই মন খুশী হয়ে উঠল কাল সে তার মা’কে দেখতে পাবে।কতদিন পর জড়িয়ে ধরতে পারবে মা’কে। মা,ভাবী তাকে দেখলে হয়তো খুব অবাক হবেন! ভেবেই মুচকি হাসলো জ্যোতি।
গোছগাছ শেষে শোভনের পাশ ঘেষে শুয়ে পড়ল।
______
রোজকার মতো নামাজ শেষ করে বারান্দায় বসে প্রভাতের আবহাওয়া উপভোগ করে রান্না করতে গেলো জ্যোতি। শোভন রান্নাঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি স্ত্রীর দিকে। জ্যোতি হাতের কাজ করতে করতেই প্রশ্ন করল,”এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
শোভন উত্তর দিলো না। জ্যোতি বিরক্তির সুর তুলে বললো,”কী হলো?”
“চোখ আছে তাই তাকিয়ে আছি।”
“তাই বলে আমার দিকে?”
“তুমি জানলে কীভাবে আমি তোমার দিকে তাকিয়ে আছি? তারমানে তুমিও!”
“আমার কী পেছনেও চোখ আছে যে আমি আপনাকে দেখতে পারবো?”
শোভন পেছন থেকে জ্যোতির সামনে এসে দাঁড়ালো। হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে বললো,”তা আগে বলা উচিত ছিলো। নাও এখন দেখো।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুটি বেলছে জ্যোতি। মাঝেমধ্যে শোভনের সঙ্গে কথা বলতে বেশ জড়তা কাজ করে তার। আবার কখনো খুব লজ্জা লাগে সামনাসামনি কথা বলতে। হুট করে কেন যে এমন হয় ভেবে পায় না জ্যোতি।
রান্না শেষে দুজনে খেয়ে নিলো। জ্যোতি তৈরি হয়ে এলো। শোভনও তৈরি হয়ে গেছে জ্যোতির আগেই। দরজা লক করে বের হলো তারা। স্টেশনে আগে আগেই চলে এসেছে। নিজেদের সিটে গিয়ে বসে আছে তারা। ট্রেন ছাড়তে এখনো দশ মিনিট বাকি। বাহিরে কড়া রোদ, খুব গরম লাগছে জ্যোতির। গালে হাত রেখে বাহির দেখতে ব্যস্ত সে। শোভন পাশ থেকে জিজ্ঞেস করল,”খুব গরম লাগছে?”
“হুম।”
খবরের কাগজ কিনে আনলো শোভন। তা দিয়ে বাতাস করতে লাগলো স্ত্রীকে। শোভনের এমন কান্ডে আশ্চর্য হলো জ্যোতি। বললো,”বাতাস করতে হবে না।”
“বললেই হলো? বাতাস না করলে তো আরো গরম লাগবে। ট্রেনটা ছাড়ুক তারপর দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“আপনি কাগজটা আমার হাতে দিন আমি বাতাস করি।”
“কেন? আমি কী ঠিক ভাবে বাতাস করতে পারছি না?”
“তা বলিনি।”
“তাহলে?”
জ্যোতি থেমে গেলো। দৃষ্টি আবারো জানালার বাহিরে স্থির করল। কিছুক্ষণ বাদে ট্রেন ছেড়ে দিলো। দীর্ঘসময় জার্নি করে অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছালো তারা। স্টেশন থেকে একটা অটো অথবা রিকশা নিলেই জ্যোতিদের বাড়িতে পৌঁছে যাওয়া যাবে।
শ্বশুর বাড়িতে এই নিয়ে শোভনের দ্বিতীয়বারের মতো যাওয়া।প্রথমবার যখন এ বাড়িতে সে এসেছিল তখন নতুন জামাই সাজে এসেছিল, জ্যোতিকে বিয়ে করার জন্য।তারপর একবারও এ মুখী হয়নি সে।আনোয়ারা বেগম অনেকবার বলেছিলেন সঙ্গে জাহিদও বেশ কয়েকবার ফোনে আসতে বলেছিল কিন্তু শোভন কাজের বিভিন্ন বাহানা দিয়ে তা এড়িয়ে গেছে। তাই আসাও হয়ে ওঠেনি।
দোকান থেকে মিষ্টি আর বাচ্চাদের জন্য কিছু জাঙ্ক ফুড কিনে জ্যোতিকে নিয়ে একটা অটোতে উঠে পড়ল শোভন।
চলবে _____
(কার্টেসি ছাড়া কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।)