এক_সায়াহ্নে_প্রেমছন্দ #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_৪৩(প্রেমময় প্রহর)

0
433

#এক_সায়াহ্নে_প্রেমছন্দ
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪৩(প্রেমময় প্রহর)
বান্ধবীর হোস্টেলে গিয়ে আসরের নামাজটা পড়ে প্যাকেটটা খুলে দেখে তাতে সিগ্রীন ও ব্ল্যাক এর মিশেলে একটা সুন্দর শাড়ি। তিতির শাড়িটা উলটে-পালটে দেখছে। তার চোখ-মুখের অভিব্যক্তিতে প্রকাশ পাচ্ছে শাড়িটা তার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।

“ওহো ভাইয়া তবে নিজের পাঞ্জাবির সাথে ম্যাচিং করে তোর জন্য শাড়ি এনেছে। যাই বল আর তাই বল লোকটার কালার সেন্স জাস্ট অসাম।”

নাদিয়ার কথায় বাকিরাও মজা নেয়। তিতির তাড়া দেখিয়ে বলে,
“আমি যে উনার কাছ থেকে ১৫ মিনিট চেয়ে এনেছি এই শাড়ি পড়তেই তো আমার ১৫ মিনিটের বেশি চলে যাবে। তারপর আবার হিজাব, কাজল এগুলো করতে হবে তো!”

ফাইজা বলে,
“চিন্তা করিস না। ১৫ মিনিটকে ২ দ্বারা গুন করে নিতে হয়। এটা সাধারণ ম্যাথ। প্রত্যেক ছেলেকে এটা জানতে ও বুঝতে হয়।”

“না আমার বেশি দেরি করা যাবে না। পরে যদি..!”

“তুই হুট করে এতো জেলাস হয়ে গেলি কেন বুঝতে পারলাম না। ভাই তো শুধু তোকেই ভালোবাসে তাতো তুই ভালো করেই জানিস।”

জারিনের প্রশ্নের তিতির কোন উত্তর দিল না। জারিন আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত ওকে তৈরি হতে বলে।

________

প্রায় আধাঘন্টা পর তিতির মাশরিফের সামনে এসে দাঁড়াল। মাশরিফ কিছু মুহূর্ত অপলক মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর তিতিরের বান্ধবীদের হাসির শব্দে স্বাভাবিক হয়ে ঘড়িতে সময় দেখে বলে,

“এই তোমার ১৫ মিনিট? ৪০ মিনিট হতে চলল।”

“ভাইয়া আপনি দিবেন শাড়ি! তো ১৫ মিনিটে শাড়ি পড়া হয় নাকি! গাউন, বোরখা, থ্রিপিস নাহয় ৫ মিনিটে পড়া হয়ে যায়। এই চৌদ্দহাত পেঁচানো শাড়ি পড়তেই চৌদ্দ প্যাঁচ খেতে হয়।”

ফাইজার কথা শুনে মাশরিফ হালকা কেঁশে বলল,
“ঠিক আছে। সমস্যা নাই। সন্ধ্যা হতে আরও সময় বাকি।”

এই বলে মাশরিফ তিতিরকে ইশারায় রিকশাতে উঠতে বললে নাদিয়া বলে ওঠে,
“এই ভাই দাঁড়ান। আমরা যে আপনার বউকে এতো সুন্দর করে সাঁজালাম, তার জন্য আমরা কী পাব?”

মাশরিফ বোকার মতো বলে,
“কী পাবে?”
“কী আর! ট্রিট পাব। আমাদের সবাইকে আপনার ট্রিট দিতেই হবে।”

মাশরিফ হেসে বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে। এখন যাই? অলরেডি অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

তিতিরের বান্ধবীরা বেশ খুশি হলো। জারিন এসে তিতিরের কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
“বেস্ট অফ লাক! ফিরে এসে বলবি কিন্তু তোর ডেট

তিতির জারিনকে মা*রতে উদ্দত হলে সে হাসতে হাসতে সটকে পরে।

________

পড়ন্ত বিকেলে পার্কের রাস্তায় পাশাপাশি হাটছে মাশরিফ ও তিতির। আশেপাশে অনেককে যুগলবন্দী অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ তাদের বাচ্চাদের সাথে করে নিয়ে এসেছে। দুই-একজন বৃদ্ধ দম্পতিকেও একসাথে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। সূর্যের হালকা রশ্নিতে আকাশের পরিছন্নতা পরিলক্ষিত। অথচ দুপুর পর্যন্ত আকাশ কেমন ঘোলাটে ছিল। মনে হচ্ছিল আজ আকাশের মন খারাপ। যেকোনো মুহূর্তে তার বুক চিঁড়ে দুঃখ বর্ষণ করবে। মৃদু সমিরণে তিতিরের শাড়ির আঁচল বারবার মাশরিফের বাহুতে এসে বা*ড়ি খাচ্ছে। দুজনেই অনেকক্ষণ যাবৎ নীরব হয়ে হাঁটছে। এই নীরবতাকে মাশরিফই প্রথমে ভাঙল। সামনে একটা আইসক্রিমের ফেরিওয়ালা দেখিয়ে বলল,

“আইসক্রিম খাবে?”

তিতির মাশরিফের দিকে দৃষ্টি ফেরাল। অতঃপর হালকা হেসে ঘাড় নাড়িয়ে সায় দিল। মাশরিফ তিতিরকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে নিজে একাই আইসক্রিম কিনতে গেলো। আইসক্রিম কিনে আসতে আসতে দেখে তিতিরের সামনে পাঁচ কি ছয় বছরের একটা বাচ্চা উদোম গায়ে কতগুলো ফুলের ক্রাউন হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সম্ভবত তিতিরকে ক্রাউন কিনতে বলছে। মাশরিফ সেখানে পৌঁছে বাচ্চাটিকে শুধাল,

“কি হয়েছে বাবু? তোমার হাতের ক্রাউন গুলো তো খুব সুন্দর।”

“নেন না ভাইজান, দুইটা ব্যান্ড নেন। একটু আগে মায় বানায় দিছে। নেন না ভাইজান।”

বাচ্চাটির আকূল অনুরোধে মাশরিফ হালকা হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“আচ্ছা তোমার ক্রাউন গুলো কত করে?”

“একটা ৩০ টাকা কইরা।”

“আচ্ছা আমাকে একটা দাও। আমার তো একটাই বউ! তাই আমার একটা ক্রাউনেই হবে। তবে তোমাকে আমি দুইটা ক্রাউনেরই দাম দিব। একটা তোমার মাকে পড়াবে।”

মাশরিফের প্রথম কথাটার রেশ ধরে তিতির তার দিকে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায়। কিন্তু শেষোক্ত কথায় মুচকি হাসল। মাশরিফ ওকে রাগাতে রম্য সুরে বলে,
“আমি কি কিছু ভুল বলেছি? সত্যি বলেছি না বল? আমার তো একটাই বউ! তো একটা বউয়ের জন্য একটা ক্রাউনই তো যথেষ্ট। তাই না?”

তিতির কিছু বলল না। মুখ বাঁকিয়ে অন্যদিকে ফিরল। মাশরিফ বাচ্চা ছেলেটিকে দাম পরিশোধ করে দেওয়ার পর বাচ্চাটি চলে গেলে মাশরিফ তিতিরের মাথায় ফুলের ক্রাউনটা পরিয়ে দেয়। তারপর হাতে আইসক্রিমটা দিয়ে বলে,

“নাও এখন আইসক্রিম খাও। এত মুখ ফুলিয়ে থাকতে হবে না। আমি আমার একমাত্র বউকে ভীষণ ভালোবাসি। আমার আর দ্বিতীয় কোন বিয়ে-টিয়ে করার ইচ্ছেও নেই। কেউ এসে গলায় ঝুলে পড়লেও তাকে আমি বিয়ে করব না। মেজর মাশরিফ ইকবাল এক নারীতে আসক্ত। বুঝলে? তাই তুমি অযথা চিন্তা করে নিজের ব্লাড প্রেসার বাড়িও না।”

তিতিরের হঠাৎ হাসি পেল। সে মুখ চেপে হাসি আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু তাতে সে ব্যর্থ হয়। হাসি আটকাতে আইসক্রিমের কৌটাটা খুলে এক চামচ ভর্তি আইসক্রিম মুখে পু*ড়ে দেয়। তৎক্ষণাৎ ঠান্ডায় দাঁত ও নাসা গহ্বর শিরশির করে ওঠে। যার দরুণ চোখ-মুখ কুঁচকে আসে। মাশরিফ হেসে বলে ওঠে,

” তুমি যখন নাক-মুখ কুঁচকে ফেল তখন তোমাকে কিউটি বাচ্চার মতো লাগে। বাচ্চাদের মুখে যখন লেবু দেওয়া হয় তখন ওদের রিয়াকশন এমনটাই থাকে।”

“কী বললেন আপনি এটা!”

তিতির এবার আর হাসি আটকাতে পারে না। মাশরিফ তিতিরের থেকে কিছুটা সামনে গিয়ে ওর একটা হাস্যজ্জল ছবি ক্যামেরা বন্দি করে নেয়। অতঃপর ওর কাছে এসে ফোনের স্ক্রিনে ছবিটা দেখিয়ে বলে,

“দেখো হাসলে তোমাকে কতটা সুন্দর লাগে। আর তুমি কী-না কালেভদ্রে হাসো!”

তিতির ছবিটা এক পলক দেখে নিয়ে মাশরিফের দিকে দৃষ্টি সরায় ঠোঁট কোলে তার ফুটে আছে মৃদু হাসি। মাশরিফ স্ক্রিনেই ছবিটা জুম করে দেখছে। তিতির বলে,

“আপনি আমাকে খুব গভীর ভাবে লক্ষ্য করেন তাই না?”

“বারে! করব না কেন? আমার একমাত্র বউ বলে কথা।”

তিতিরের মনে অদ্ভুত এক প্রশান্তি কাজ করছে। সে দৃষ্টি নিচু করে বলে,
“জানেন? আপনি মিশনে যাওয়ার পর আমি প্রতিটা মুহূর্ত ঘাবড়ে ছিলাম। মনের মধ্যে একগাদা ভয়-আশংকা ঘিরে ছিল। আপনার খোঁজ পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিলাম। অবশেষে যখন ফোনে আপনার কণ্ঠস্বর শুনলাম তখন মনের সব ভয়-আশংকা নিমিষেই কর্পূরের ন্যায় হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিল।”

মাশরিফ ওদের মধ্যকার দূরত্ব কমালো। তিতিরের এক হাত মুঠোবন্ধি করে বলে,
“লম্বা সফরের জন্য এই হাত ধরেছি। এতো সহসা তোমার পিছু ছাড়ছি না।”

তিতির নিজের অক্ষিকোণে জমে উঠা জলবিন্দু গুলোকে আকাশের দিকে মুখ করে শুষে নিতে চাইল কিন্তু অবাধ্য জলকণা অশ্রু রূপে কপোল বেয়ে নিজের জেদ বজায় রাখল। মাশরিফ আচমকা তিতিরের চোখ বেয়ে অশ্রু গড়াতে দেখে হতবিহ্বল হয়ে দ্রুত হস্তে নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা তাদের গতি রোধ করে বলল,

“আজকে অন্তত কাঁদবে না। আমার সামনে তো নাইই। তোমাকে কাঁদতে দেখতে আমার একটুও ভালো লাগে না। সবসময় হাসবে। তোমার চোখের পানি আমার হৃদয় অম্বরে অবিশ্রান্ত বর্ষণ ঘটায়। আর হাসলে, মনে হয় সূর্য হেসে তার প্রেমময় মৃদু রোদ বর্ষণ করছে। যেমনটা আজকের বিকেলে সূর্য আজ ভীষণ খুশি।”

“আমার ভয়ের কারণটা আপনি জানেন। আগেরবারও বিয়ের পরপর উনি মিশনে গিয়েছিলেন। তারপর আর ফেরেননি। তাই এবারও বিয়ের পরপর আপনি মিশনে যাওয়াতে মনের মাঝে না চাইতেও ভয় ভর করেছিল। আমি বলে বুঝাতে পারব না যে …!”

মাশরিফ আচানক তিতিরের ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে ওর মুখনিঃসৃত বাক্য অসমাপ্ত রাখতে বাধ্য করল। অতঃপর তিতিরের কপালে নিজের অধর যুগলের উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে বলল,
“পুরোনো কথা বাদ দাও। একদম ভুলে যাও। আমরা নতুন শুরু করেছি। সবটা নতুন ভাবে। আরেকবার যদি তুমি ওসব মনে করো তবে আমি তোমার সাথে রাগ করে আবারও এক সপ্তাহ তোমার সাথে যোগাযোগ রাখব না। আসলে এর বেশি হয়তো পারব না!

তিতির অশ্রুসিক্ত চোখেই হেসে ফেলল। মাশরিফ বলে,

“আমি আসলাম তোমাকে নিয়ে একটু হাঁটতে আর তুমি কী-না আগের কথা ভেবে নিজের চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছ। দিস ইজ নট ডান। দেখো, তোমার কান্নায় আইসক্রিম বেচারাও গলে গেছে।”

দুজনে একসাথে গলে যাওয়া আইসক্রিমের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। ওদের যুগলবন্দী হাসির সাক্ষী রৌদ্রজ্জ্বল নীলাভ অন্তরীক্ষ।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
একটা বাজে পরীক্ষা দিয়ে এসে যতোটুকু লেখা ছিল সেটার কিছুটা বাড়িয়ে পর্বটা শেষ করলাম। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here