এক_সায়াহ্নে_প্রেমছন্দ #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_২৪

0
329

#এক_সায়াহ্নে_প্রেমছন্দ
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৪
মাশরিফ বিষণ্ণ মনে বাসায় ফিরল। চুপচাপ সোফায় বসে আছে। মহিমা বেগম বহুদিন পর নিজেদের বাড়িতে যাবে বলে ছেলের কাছে উচ্ছাস নিয়ে আসলেও ছেলের বিমর্ষ মুখশ্রী দেখে তার খুশি মিইয়ে গেল। তিনি মাশরিফের পাশে বসে কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞাসা করেন,

“কি হয়েছে তোর? মুখটা এমন ভার করে রেখেছিস কেন?”

ফুঁস করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মাশরিফ জবাব দিল,
“কিছু না মা। তুমি কিছু বলবে?”

“ওই যে কখন বের হবি? আজ তো বাড়িতে যাব। অভি, রণিত, রাতুলরাতো দুপুরের খাবার খেয়েই মাঠে খেলতে চলে গেছে। ওদেরকে ফোন করে আসতে বল। ওরাও তো সাথে যাবে।”

” হ্যাঁ বলছি। তুমি ব্যাগ-পত্র গোছাও।”

মাশরিফ কিছু হয়নি বললেও মহিমা বেগমের মন মানতে চাইলো না। তিনি ছেলের মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে আদুরে কন্ঠে শুধালেন,
“কী হয়েছে রে বাবু? মাকে বল।”

মায়ের উৎকণ্ঠা দেখে মাশরিফ মিষ্টি হাসল। তারপর ঘাড় নাড়িয়ে বলল,
“কিছুনা। একটুখানি মাথার ডান পাশে চিনচিনে ব্যথা করছে। রোদের মধ্যে গাড়ি ড্রাইভ করে গিয়েছি আবার এসেছি তো। তাই হয়তো একটুও মাথা ধরেছে।”

” ও মা! সে কী বলিস! তুই ঘরে যা। ঘরে গিয়ে গোসল করে একটু রেস্ট নে। আমি তোর জন্য এখনই কড়া করে লেবু-আদা চা বানিয়ে আনছি।”

এই বলে মহিমা বেগম উঠে যেতে নিলেই তখন তার মনে পড়ে তার ছেলে তো দুপুরের খাবার খায়নি! নিজের ভুলোমনা মনকে তার ঠা*টি*য়ে চ*ড় মারতে মন চাইলো!

“দেখেছিস? আমি ভুলেই গিয়েছি, তুই যে দুপুরে খাবার খাসনি। এখনই তো চা বানাতে যাচ্ছিলাম। গোসল করে ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি তোকে নিজ হাতে খাইয়ে দিব। তারপর কিছুক্ষণ পর চা বানিয়ে দিব। তারপর আধা ঘন্টার মতো রেস্ট নিয়ে তারপর আমরা রওনা হবো।”

মাশরিফ আর মায়ের কথার বিরোধিতা করলো না। চুপচাপ মায়ের কথা মতো চলে গেল।

___________

নাজমা বেগম ও হিয়া বাস থেকে নেমেছে। তিতির অনেকদিন পর ওদেরকে দেখে দ্রুত গিয়ে জড়িয়ে ধরে। কিছু সময় নিরব থেকে বলে,

“আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?”

নাজমা বেগম মেয়ের গালে হাত দিয়ে প্রত্যুত্তর করেন,
“না। সব ঠিক আছে। তুই কেমন আছিস?”

“আলহামদুলিল্লাহ্‌। আর হায়াত বাচ্চাটা দেখি বড়ো হয়ে গেছেরে।”
এই বলে হিয়ার কোল থেকে হায়াতকে নিয়ে একটু আদর করে হিয়াকে বলে,
“ওর তো খাওয়া হয়নি। তাই না? সেই বাসে উঠার পরে ওকে আর খাওয়ানো হয়েছিল?

“ফিটারে একটু দুধ এনেছিলাম। একটু খেয়ে আর খায় না।”

হিয়ার প্রত্যুত্তরে তিতির তাড়া দিয়ে বলল,
“জলদি চল তবে। বাচ্চাটার মুখটা শুকিয়ে গেছে একদম।”

তিতির ইমরানকে ডাকল,
“দোস্ত ব্যাগগুলা গাড়িতে তোল না।”

ইমরান এসে ব্যাগগুলা গাড়িতে উঠায় তারপর ওরা গাড়িতে উঠলে রওনা করে।

________

মির্জাপুর থেকে মাশরিফ ওর মা ও বন্ধুদের নিয়ে টাঙাইলে নিজেদের বাড়িতে যাচ্ছে। গাড়ি অভী ড্রাইভ করছে। বেশি পথ না কিন্তু মাশরিফকে মহিমা বেগম গাড়ি ড্রাইভ করতে মানা করেছেন। অভী, রাতুলরা সবই জানে। এখন তারাও বা কী করবে বুঝতে পারছে না। এক ঘণ্টার মধ্যে ওরা টাঙাইলের বাড়িতে পৌঁছে গেল। গাড়ি গেইটের কাছে আসতেই করিম চাচা মেইন গেইট খুলে দেন। গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করিয়ে বাগানের কর্নারে পার্ক করে রাখে। করিম চাচা এসে হাসিমুখে সালাম দেন।

“আসসালামু আলাইকুম ভাবী। আপনেরা আসবেন শুইনা আমি সব ব্যাবস্থা কইরা রাখছি। বাজার সদাই কইরা আনছি এখন কামালের আম্মায় রান্না করতাছে।”

মহিমা বেগম হালকা হাসেন তারপর বলেন,
” এত কষ্ট করতে গেলেন কেন করিম ভাই? আমরা মা-ছেলেরা মিলে রান্না করে নিতাম।”

” কি যে কন ভাবি! এতদিন পরে আইলেন। কামালের আম্মায় তো শখ কইরা রান্না করতাছে। আপনারা জার্নি কইরা আইছেন এখন গিয়া রেস্ট নেন। মাগরিবের আজান পরব এখনই।”

করিম চাচার কথায় মহিমা বেগম মৌন সম্মতি দেন। মাশরিফ ও তার বন্ধুদের ডেকে বলেন,
“তোরা ব্যাগ পত্র নিয়ে ভিতরে যা। আর মাশরিফ তোর না শরীর খারাপ রেস্ট কর গিয়ে।”

পুরোটা রাস্তা যেমন মাশরিফ চুপচাপ ছিল এখনো তেমনটাই চুপচাপ। বিষন্নতা যেন তাকে আঁকড়ে ধরেছে। আজ তো বৃহস্পতিবার। শুক্রবার, শনিবার এখানে থেকে রবিবার মাকে নিয়ে কোয়াটারে ফিরে সোমবার বা মঙ্গলবারে সে সেনানিবাসে ফিরে যাবে। এর মধ্যে ময়মনসিংহতে আর যাওয়ার ইচ্ছে নেই। তার প্রেয়সী তার থেকে দূরত্বের আবদার করেছে। প্রেয়সীর এই কাঠিন্যতম আবদার পূরণ করতে সে সবকিছু করতে পারে। নিজেরই সামান্য সুখটা নাহয় বিসর্জন দিল!

নিজের জন্য বরাদ্দ করে রাখা ঘরটার মধ্যে গিয়ে বসলো মাশরিফ। মাথা নিচু করে হাত দুটি মুষ্টিময় করে বসে আছে। রনিত গিয়ে মাশরিফের কাঁধে হাত রেখে ওর পাশে বসলো। অভি ও রাতুলো ঘরের দরজা বন্ধ করে সামনে এসে দাঁড়ালো। রনিত জিজ্ঞাসা করে,

” দেখ ভাই, মেয়েটা তোকে ভালোবাসে না বাদ দে! তুই একটা ভালো মেয়ে পাবি দেখিস। তাও এমন চুপচাপ বসে থাকিস না। তোকে এতো বিমর্ষ অবস্থায় মানতে পারছি না।”

রণিতের কথায় মাশরিফ বড্ড বেশি অসন্তুষ্ট হলো। কন্ঠে অসন্তোষ নিয়ে বলল,
“ও আমার সাথে যেমনটাই ব্যবহার করুক না কেন আমি ওকেই ভালোবাসি।”

রাতুল বলল,
“আচ্ছা বুঝেছি। এখন কতোক্ষণ এভাবে গোমড়া মুখে ঘাপটি মে*রে বসে থাকবি? চল মসজিদে যাই। সেখানেই কিছুটা সময় বসে থাকলে মন ভালো হয়ে যাবে।”

“চল। আজান তো পরবে এখনি।”

ওরা চারজন হাত-মুখ ধুঁয়ে ওজু করে মহিমা বেগমকে বলে মসজিদে যায়।

নামাজ শেষে মাশরিফরা অনেকটা সময় মসজিদে বসে থেকে এলাকার টং এর দোকানে যায়। চার জনে খেতে খেতে গল্প করছিল তখন দোকানী মাশরিফকে বলে ওঠে,

“বাজান, তোমরা তো অনেকদিন পরে আইলা।”

মাশরিফ হালকা হেসে বলে,
“হ্যাঁ চাচা। প্রায় আড়াই-তিন মাস। আমি ছুটিতে না আসলে তো মা এখানে আসতে পারেনা। একা একা মাকে বাড়িতে রাখতে আমার মন সায় দেয় না। তাছাড়া মা চাকরিও করেন। তাই দুটো মিলেই আসা হয় না। এই যে আমি ছুটিতে আসলাম, কাল-পরশু মায়েরও ছুটি বলে এখানে আসলাম। আমি আসার পরপরই মা এখানে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মায়ের জন্য কলেজটা প্রতিদিন জার্নি করে যাওয়া-আসাটা কিছুটা কষ্টকর হয়ে যায়। তাই আমিই বলেছিলাম, বৃহস্পতিবার বিকালে যাব। শুক্র-শনি থাকব। রবিবার দিন সকালে আবার ব্যাক করব।”

দোকানী চাচা বলেন,
“ঠিকই কইছো বাবা। তোমার মায়ের বয়স হইছে। একা একা থাকাটা কেমন জানি ভয় ভয় লাগে। এখন যেখানে থাকে সেখানেও কি একা একাই থাকে?”

মাশরিফ হ্যাঁ বোধক বুঝলে দোকানী চাচা আবার বলেন,
“তুমি একখান বিয়া করলা ফেলাও বাবা। বুড়া মানুষ আর একা একা কতদিন থাকব? কখন কি হইয়া যায়! এক মুহূর্তেরও কোন বিশ্বাস নাই। হায়াত-মওতের কি বিশ্বাস আছে? তাছাড়া তোমার বাবা ও জীবিত নাই। তোমার মায় একলা থাকে। এখন যদি পোলার বউ-বাচ্চা না দেইখা যায়, তয় কেমন লাগে কও?”

দোকানীর কথা শুনে মাশরিফের মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল। তুমি নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। চায়ের কাপে আর চুমুক দিচ্ছে না। অর্ধ খাওয়া চায়ের কাপটা বেঞ্চে রেখে দিয়েই দাম মিটিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করে। রাতুল, অভী ও রণিত হা করে তাকিয়ে থেকে তারাও চায়ের কাপটা রেখে মাশরিফের দিকে ছুটল। অভী দ্রুতপদে হেঁটে মাশরিফের পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বলল,

“কী হলো? চলে আসলি কেনো?”

“ভালো লাগছে না।”

রাতুলও পাশাপাশি এসে বলে,
“দোকানদার কিন্তু মিথ্যে কিছু বলেনি। আন্টি আর কতকাল একা একা থাকবেন বল? শেষ বয়সে তিনি একা একাই থাকছেন। মেয়ে থাকে শ্বশুর বাড়ি আর ছেলে থাকে সেনানিবাসে। দোকানদার তো এটাই বললেন। তুই শুধু শুধু রাগ করছিস।”

মাশরিফ চোখ বন্ধ করে হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
“আমি রাগ করছি না। কিন্তু আমার এখন এগুলো শুনতে ভালো লাগছে না। আমার মন মেজাজ এমনিতেই ভালো নেই। ”

রণিত কিছু একটা ভেবে বলল,
“চল নেটফ্লিক্সে থ্রিলার মুভি দেখি। সারারাত ধরে দুই-তিনটা মুভি দেখে কাটাব!”

“তুই দেখ। সাথে তোর সাথের দুইটারে নিয়ে দেখ। আমি দেখব না। আমি তো ঘুমাব। মাথায় যন্ত্রণা করছে।”

মাশরিফের কথায় রণিত মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“ভালো বুদ্ধি দিলাম ভালো লাগলো না। যা তোর দেখতে হবে না। দেখবনে, রাত বারোটার পরে এসে দরজা খট খট করছিস।”

“দেখা যাবে।”

হাঁটতে হাঁটতে ওরা বাড়ির কাছে চলে এসেছে। বাড়ির ভেতরে ঢোকা মাত্রই মহিমা বেগম জোড়ালো কন্ঠে বললেন,
“এই তোরা বস কামালের মা কতো পদের পিঠে দিয়ে গেল। চা বানিয়ে নিয়ে আসছি। সোফায় বস।”

অভী, রাতুল, রণিতরাতো মহা খুশি! তিনজনে সমস্বরে চিল্লিয়ে বলে,
“জলদি আনেন আন্টি। পেটে ইঁ*দু*র দৌঁড়াচ্ছে।”

এদের আহ্লাদীপনা দেখে মাশরিফ হেসে নিজের ঘরের দিকে অগ্রসর হয় কিন্তু নিজের ঘরে দোরগরায় দাঁড়িয়ে তার মেজাজ প্রচণ্ড খারাপ হয়ে যায়। প্রচণ্ড রেগে মাকে চিৎকার করে ডাকে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
শুভ বসন্ত। আগামীকালই আরেক পর্ব পাবেন। জানি দীর্ঘ অপেক্ষা করেছেন। দুঃখীত। কিন্তু আমি সত্যি হেল্পলেস ছিলাম।
গতকালকেই পর্বটা দিতাম রবিবারে ৪০০+ লিখে রেখেছিলাম। তারপর গতকাল ভোর ৬.৪৮ এ ভার্সিটির জন্য বের হয়ে সন্ধ্যা ৬.২৭ এ বাড়ি ফিরলাম। হ্যাঁ! আমি বাসা থেকে বের হওয়ার ও ঢোকার পর সময় দেখি এবং সারা রাস্তা এই সময় ক্যালকুলেশন করতে করতে যাই! দুপুরের ক্লাসে একে একে চারটা মিনি সাইজের এসাইনমেন্ট দিয়ে দিল! তিনটা পিপিটিতে আর একটা হ্যান্ড রিটেন। সেটা জমা দেওয়ার শেষ সময় ফাল্গুন আসার আগে! মানে রাত ১২টার আগে। তাহলে এবার বোঝেন! ১১টার একটু পর জমা দিয়ে তারপর আমি হাঁচি-সর্দিতে জর্জরিত! অবশ্য দশটা থেকেই। আমার ঠান্ডার এ*লা*র্জি আছে। ইনসটেন্ট কমার জন্য ডাক্তার যেই মেডিসিনটা আজীবন খেতে বলছেন সেটা খেলাম। জানতাম প্রচুর ঘুম আসবে। আবার সকালে ক্লাসও আছে। আরও ২০০ শব্দ লিখতে লিখতে কফিও খেলাম। কিন্তু! লাভ হলো না। মেডিসিন খাওয়ার ঘণ্টা পেরোনোর আগেই আমি আর চোখ খুলে রাখতে পারলাম না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here