#এক_সায়াহ্নে_প্রেমছন্দ
লেখিকাঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৫
দুইদিন পর,
ক্লাস ও টিউশন শেষে বাড়ি ফেরার পর তিতির দেখে বাড়ির সদর দরজা হাট করে খোলা! তিতিরের মনের মধ্যে অশনি সংকেত দিচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে দেখে ওর মায়ের ঘরের দরজা বাহির থেকে লাগানো আর হিয়ার ঘর থেকে অস্ফুট গোঙানির আওয়ার আসছে। এই মেঘ-বৃষ্টির শিতলতার মাঝেও তিতির ভয়ে ঘেমে ওঠছে। দ্রুতপদে হিয়ার ঘরে যেয়ে দেখে হিয়া পেটে হাত দিয়ে বিছানায় মাথা হেলিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে। ফ্লোরে র*ক্ত! তিতির হড়বড়িয়ে ওর কাছে গিয়ে গালে হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে অস্থীর কণ্ঠে বলতে লাগে,
“হিয়া! কী হয়েছে তোর? ফ্লোরে র*ক্ত কেনো? বল না। তুই এমন করছিস কেন?”
হঠাৎ ঘটনায় অস্থীরতায় তিতিরের মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গেছে। নয়নযুগল বেয়ে অনবরত অশ্রুধারা বইছে। হিয়া অস্ফুট স্বরে বলে,
“প..পলাশরা! এসে.ছিল। আআমাকে টে..নে নিতে চাইছিল। ম..মাকে মা..থায় বা..ড়ি দিয়েছে। খা..খাট থেকে পড়ে ব্লি..ডিং শুরু হ..ওয়ার কারণে পা..লিয়ে গেছে।”
তিতির চোখ মুছে কোনোমতে উঠে দৌঁড়ে মায়ের ঘরের দরজা খুলে দেখে মা ফ্লোরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। ডাইনিং থেকে পানি ভর্তি জগ এনে মায়ের মুখের উপর ছিঁটিয়েই দৌঁড়ে আবার হিয়ার কাছে আসে। কাঁপা কাঁপা হাতে দ্রুত ফোন বের করে সিএনজি ড্রাইভারকে ফোন লাগায়। প্রথমবার ফোন রিসিভ হয় না। দ্বিতিয়বার কল করার পর ফোন রিসিভ করে সিএনজি ড্রাইভার জানায়,
“মা, আমি তো গাড়িতে যাত্রী লইয়া নিউ মার্কেট মোরে আইছি। কিছু হইছে মা?”
“চাচা আপনি না পারলে দয়া করে জলদি কাউকে পাঠান। প্লিজ হিয়ার অবস্থা ভালো না। বিশ্বস্ত কাউকে পাঠান।”
তিতিরের কান্নারত অস্থীর কণ্ঠে ও হিয়ার কথা শুনে সিএনজি ড্রাইভার রহিম চাচা ভয় পেয়ে যান। তিনি বলেন,
“একটু অপেক্ষা করো মা। আল্লাহ ভরসা কিছু হইব না। আমি জামালরে কইতাছি।”
“আচ্ছা। জলদি আসতে বলেন।”
তিতির এবার নিজে হিয়ার পালস চেক করছে। যা যা তার সাধ্যমত সব করতেছে। নাজমা বেগমও মাথা চেপে ধরে হিয়ার সামনে বসে কাঁদছে। তিতির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে গুছিয়ে নেয়। প্রায় পনেরো মিনিটের মধ্যে একটা সিএনজি এসে হাজির হয়। সিএনজি আসার পর ড্রাইভার ও তিতির মিলে হিয়াকে গাড়িতে তুলে। এবার আশেপাশের কিছুটা দূরের বাড়ি থেকে দুয়েকজন মহিলা বেড়িয়ে আসে। এসে জিজ্ঞেসা করে,
“কী হয়েছে?”
তিতির রেগেই যায়,
“মানুষ ম*রা*র পর এসে জিজ্ঞেসা করেন, কী হইছে? সুজন, পলাশরা এসে আমাদের মে**রে ফে’লে গেলেও তো জানতে পারবেন না। মানলাম আপনাদের বাড়ি একদম কাছে না। কিছুটা দূরে। কিন্তু ওই মা*স্তা*নদের রাস্তায় ঘোরাফেরা করতে কী দেখেন না? শুধু দেখতেন, ওরা যখন আমার পিছু নিতো সেটাই! তাও আমি নাকি তাদের সাথে রঙ করি এমন অবাস্তব কিছু! তারপর আমার বাবার কানে আপনাদের স্বামীরা আপনাদের বানোয়াট কথা লাগাত। আমার চলাফেরা নিয়ে কতো অভিযোগ! আমি নাকি রাস্তার ছেলেদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করি! কিন্তু অভিযোগ যদি মেয়রের কাছে সুজন, পলাশদের নিয়ে করতেন তাহলে মহল্লার মেয়েরা এদের কুদৃষ্টি থেকে রেহাই পেতো। যাক গে। থাকেন আপনারা।”
“তুমি শুধু শুধু আমাদের ভুল বুঝতেছ। আমরা কিভাবে জানব ওরা তোমাদের বাড়িতে যাচ্ছে? আমাদেরও তো কাজ আছে।”
প্রতিবেশি মহিলার প্রত্যুত্তরের জবাবে তিতির বলে,
“থাকেন আপনাদের কাজ নিয়া।”
নাজমা বেগম তিতিরকে টেনে গাড়িতে উঠায়। সিএনজি ড্রাইভার জলদি স্পিড তোলে। তিতিররা হিয়াকে জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। অনবরত কথা বলছে। পানি খাওয়াচ্ছে। হিয়া ব্যাথায় অস্ফুট চিৎকার করে চলেছে। সিএনজি ড্রাইভার গাড়ি চালাতে চালাতে বলে,
“আফা, সুজনরা এলাকাতে নাই দেইখা জলদি আইতে পারছি। ওরা মনে হয় ভয়ে পলাইছে। কতোগুলা কেসের আসামি ওরা। প্রত্যেকবার গা ঢাকা দেয় তারপর জামিনে ছুটে। কোর্টে হাজিরা তো দেয়ই। লাজ-সরম আল্লাহ এগো দেয় নাই।”
“আমি এবার আর ওদের ছাড় দিবো না। আমার ভাইকে গাড়ি চাপা দিয়ে খু**ন করেছে। আমার জীবনটা এই অবস্থা করার জন্য দায়ী ওরা। ওদের জন্য জলদি বিয়ে দিয়েছে। হিয়া সুস্থ হোক তারপর আমি কোর্টে গিয়ে মা*ম*লা করব। এখানকার পু*লি*শরা ওদের কিছুই করবে না।”
“হ আফা। এলাকায় টিকন যায় না। আমার ছোডো নাইনে পড়া বইনডার দিকেও নজর দিছে। আব্বায় ওর বিয়া ঠিক করতাছে। আমার কতো শখ আছিল, নিজে ফাইব পর্যন্ত পড়ছি তো কি হইছে? বইনেরে ভার্সিটিতে পড়ামু। বইনে আমার লেখাপড়ায় অনেক ভালা।”
তিতির দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“আপনার মনের ইচ্ছা পূরণ হোক। ভাই পারলে আরেকটু দ্রুত চালান।”
“এর তে জোড়ে চালাইলে আমি সামলাইতে পারুম না। রাস্তা তো ভিজা। চিন্তা কইরেন না আপা, বেশিক্ষণ লাগব না। আর পাঁচ-সাত মিনিট লাগব।”
তিতির হসপিটালে এক সিনিয়র নার্সকে কল করে সব বলে রাখে যাতে হসপিটালে পৌঁছানো মাত্রই চিকিৎসা শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা পৌঁছে যায়। হসপিটালের গেইটের কাছেই পৌঁছাতেই দুইজন নার্স ও তিতিরের বন্ধু সাইফ ও হাসিব এসে হাজির। তিতির ওদেরকেও ফোন করে রেখেছে সাহায্যর জন্য। সিএনজি ড্রাইভারকে ধন্যবাদ ও প্রাপ্যটা দিয়ে হিয়াকে স্ট্রেচারে করে ভিতরে নিয়ে যায়। হিয়ার আঁখিযুগল প্রায় নিভু নিভু। র**ক্তে ওকে প্যাঁচানো চাদর ভিজে গেছে। ডাক্তাররা ইমিডিয়েট চেক করে বলেছে বাচ্চা ডেলিভারির পজিশনে চলে এসেছে। ব্লি*ডিং অনবরক হচ্ছে বলে অতিসত্তর দুই ব্যাগ র*ক্ত যোগাড় করতে বলে। সাইফ ও হাসিবের রক্তের গ্রুপ হিয়ার সাথে ম্যাচ করে বলেই তিতির ওদের ডেকেছে। জলদি ওদের থেকে এক ব্যাগ করে দুই ব্যাগ র*ক্ত নেওয়া হয়। ডাক্তাররাও সময় নষ্ট না করে কাজে লেগে পরে। বাচ্চা নরমাল ডেলিভারিতেই হচ্ছে কারণ জরায়ুর মুখ খুলে গেছে।
তিতির ও নাজমা বেগম করিডোরে অস্থীর ভাবে অপেক্ষা করছে। প্রায় কিছু সময় পর নার্স এসে জানায়,
“তিতির তোমার ভাতিজি হয়েছে।”
তিতির ও নাজমা বেগম খুশিতে ক্রন্দনরত অবস্থায় একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। হিয়ার অবস্থা জানতে নার্সকে জিজ্ঞেসা করে,
“আপু হিয়া কেমন আছে?”
“ও খুব দুর্বল। ও সেন্সলেস। ব্লি*ডিং এখন কিছুটা কমেছে কিন্তু পুরোপুরি না। আরও রক্ত লাগবে মনে হয়। ব্যাবস্থা করে রাখো।”
নার্সকে প্রত্যুত্তরে বলে,
“সকালেই হয়ে যাবে। আমার এক বান্ধুবীর ব্লা*ড গ্রুপ হিয়ার সাথে মিলে কিন্তু ওর বাড়ি একটু দূরে তাই সকালে আসবে। রাতে কি ব্লা*ড লাগবে?”
“না। তোমরা বাচ্চাটাকে দেখে যাও।”
“জি।”
তিতির ও নাজমা বেগম বাচ্চাটাকে দেখতে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
পর্ব ছোটো কিন্তু আমি আজকেও ভার্সিটি থেকে বাসায় এসেছি রাত নয়টার দিকে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।