খেলাঘর_১৯

0
356

#খেলাঘর_১৯

তারেক কে দেখতে আজ খুব সুন্দর লাগছে, সাহেবের হঠাৎ মনে হলো তারেক ওর থেকেও সুন্দর ছিল কিন্তু নিজেকে কখনো প্রকাশ করে নি।আর যাই হোক ভার্সিটি তে যখন সাহেব যেত তখন মেয়েদের অদ্ভুত ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকাটা ও খুব ইনজয় করতো।এখনও সাহেব হেটে গেলে মেয়ের দ্বিতীয় বার ফিরে তাকায়, আগে ব্যাক্তিত্ববোধ বজায় রাখতে পাত্তা দেয় নি আর এখন তো…
—তুই তো যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে খুউব হ্যান্ডসাম হয়ে গেছিস তারেক!
—কারণ ওইখানে তুই ছিলি না
দুজনেই হাসলো,
—তারপর? হঠাৎ তোর আমার কথা মনে পড়লো যে!
—সাহেব, গত তিন বছরে আমি তোকে কখনো ভুলি নি যে মনে পড়তে হবে।
—হ্যা যোগাযোগও রাখিস নি।
—সেটা অন্য কারণ
—কি জানি,সবার কত সব কারণ থাকে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার আমিই পারি না।

তারেক কিছুক্ষণ চুপ রইলো,তিন বছর আগে সাহেবই তারেক কে ঠেলে পাঠিয়েছিলো মাস্টার্স করতে অথচ এখানে তখন ও মাঝামাঝি মাস্টার্সের! তারেকের অনেক অভিমান সাহেবের ওপর অনেক বেশী।তবে সাহেবকে সে মনে মনে ধন্যবাদ জানায় তারেকের বাবা ওর উপর খুবই সন্তুষ্ট এই একটা কাজই সে করেছে যাতে তার বাবা তার উপর খুব খুশী।তারেক শিকাগোতেই একটা ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে জয়েন করেছে।দুই মাসের ছুটিতে এসেছে, দেশে এসেই হাজার রাগ থাকা শর্তেও সে আগে সাহেবের কাছে এসেছে।
—ভালো কথা সাহেব মৃদুলের কথা মনে আছে তোর?
—লিলির ব্যাচমেট?
—হ্যা,
সাহেব মুচকি হেসে বলল,
—মনে থাকবে না!
তারেকও হাসলো।মৃদুলের সাথে লিলির অতিরিক্ত রকমের বন্ধুত্ব দেখলেই কেন জানি সাহেবের মাথায় রক্ত চড়ে যেতো।সাহেবের মাঝে মাঝে ইচ্ছে হতো চ্যাঙদোলা করে ছেলেটাকে ভার্সিটির পাশের ডোবায় ফেলে দিতে কিন্তু লিলির ভয়ে তা সম্ভব হয় নি।তবে একদিন উপর তলা থেকে এক বালতি আঠা বেচারার মাথায় ফেলে দিয়েছিলো আর পরদিন ভার্সিটিতে সে এসেছিলো তার ঝাকড়া চুল ফেলে টাক মাথা নিয়ে।কি লাভ হলো! সেই তো মৃদুলের মন ভালো রাখার জন্যে সারাদিন লিলি মৃদুলকে সঙ্গে নিয়ে,নিউ মার্কেট থেকে সুন্দর একটা ক্যাপ কিনে দিয়ে, হাতির ঝিল,সংসদ ভবন ঘুরে বেড়ালো! সাহেব কি সেসব খবর রাখে নি? সাহেবের তখন ইচ্ছে করছিলো নিজের মাথার চুলই নিজ হাত ছিড়তে। তাই নিয়ে দুইদিন লিলির মনও খুব খারাপ ছিলো।
—কিন্তু তুই হঠাৎ মৃদুলের কথা কেন বলছিস?
—আরে ওকে এয়ারপোর্টে দেখালাম,তখন বুঝলাম আমরা একই প্লেনে দেশে ল্যান্ড করেছি। অথচ ওদের সাথে আমার কতবার দেখা হয়েছে ওরা কেউ বলে নি দেশে আসছে।
—ওরা মানে?
—ওরা মানে মৃদুল আর লিলি।ওরা দুজনেই আমার ইউনিভার্সিটি থেকে গতবার মাস্টার্স কম্পলিট করেছে।
সাহেব নিঃশ্বাস আটকে কিছুক্ষণ বসে রইলো।ওর মাথা হুট করেই কাজ করা বন্ধ করে দেয়।ও তারেকের পায়ের কাছে বসে পড়ে বলে
—তুই জানিস লিলি কোথায় আছে?আমি ওকে কোথায় কো
এবার তারেক অবাক না হয়ে পারে না
—তুই লিলিকে কেন খুজছিস সাহেব!?তুই না কায়নাত কে…
সাহেব তারেকে হুট করে লিলির উধাও হওয়ার কথা থেকে শুরু করে ওকে আকাশ পাতাল খুজে বেড়ানোর সব রকম চেষ্টার কথা জানালো,
—তুই জানিস কতবার আমি ওর মামা বাড়ির সামনে, কত রাত ওদের বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে ছিলাম তার কোনো হিসেব আমি দিতে পারবো না!
—লিলি তো আমাকে বলেছিলো এরকমই কথা ছিল তা তো আমার জানা আর ও বলল,আমি তো এটাও জানি তুই কায়নাত কে ভালোবাসিস তাই ওর চলে আসা টা তো স্বাভাবিক ও আমাকে রিকুয়েস্ট করে যেন ওর কথা কখনো তোকে না বলি,তখন আমি ওকে বলি যে তোর সাথে আমার যোগাযোগ নেই।
সাহেব অসহায়ের মতো প্রশ্ন করলো,
—মৃদুল আর লিলি কি…
—মৃদুল ওখানেই একটা মেয়েকে মাস দুই হলো বিয়ে করেছে।
সাহেবের চোখ চকচক করে উঠলো সে লাফিয়ে উঠে বলল,
—চল…
তারেক অবাক হয়ে বললো
—কোথায়!?
—অনেক হিসেব বাকি অনেক…
তারেক কোনো হিসেব মিলাতে পারলো না, সে জানতো সাহেব কায়নাত কে ভালোবাসে স্বার্থহীন ভালোবাসা আর সে এটাও জানে কায়নাত আর প্রহরের সম্পর্ক টা ভেঙে গেছে… তাহলে!?

আহসান চৌধুরী দুপুরে কোথাও থেকে এসে শুয়ে পড়েছেন, এখন প্রায় সন্ধ্যে তার ওঠার নাম নেই।রেহেনা খাটের কোণায় বসে বললেন,
—তোমার কি কষ্ট হচ্ছে?
আহসান চৌধুরী চোখ বুজেই রইলো সে ঘুমায় নি জেগেই আছে,রেহেনা আবার বলল,
—আমি জানি তুমি ঘুমাওনি।ঘুমিয়ে পড়লে তোমার মুখ কিছুটা খুলে যায় ঘুমিয়ে তুমি গাল দিয়ে শ্বাস নাও অনেকটা মাছের মতো।৩৮ বছর অনেক সময়,এই ৩৮ বছরে আমি তোমাকে চিনি সবচেয়ে বেশী আমি বাজি ধরে বলতে পারি।কুসুম গরম পানি ছাড়া তুমি গোসল করতে পারো না,তুমি যখন বিরক্ত হও তখন ঘরময় পায়চারি করো,রেগে গেলে তুমি এক জায়গায় বসে ক্রমাগত ডান পা নাড়তে থাকো।টেনশনে থাকলে তোমার ঘুম আসে না।এসব শুধু আমি জানি আর কেউ না।তেমনি আমি এইটাও জানি অন্যায় করলে তুমি কারো চোখের দিকে তাকাতে পারো না। তুমি ভাবলে কি করে আমার পাশে শুয়ে তুমি যখন অন্য কারো কথা ভাবতে তখন আমি বুঝতে পারি নি?
আহসান চৌধুরী চমকালেন।রেহেনা উঠে যেতে যেতে বলল,
—আমি তোমার গায়ের গন্ধ যেমন চিনি তেমনি তোমার গায়ের সাথে লেগে থাকা অন্য কারো গন্ধও আমি আলাদা করতে পারি।আমি জানি নীরা তোমার ক্ষণিকের মোহ ছিলো,তবুও তো সে তোমার স্ত্রী তার মৃত্যুতে তোমার খারাপ লাগবে এটা স্বাভাবিক। খুব স্বাভাবিক।তুমি কি চা খাবে?
আহসান চৌধুরী এক লাফে উঠে বসলেন,ভয়ার্ত কণ্ঠে ডাকলেন
—রেহেনা!
—হ্যা বলো
আহসান চৌধুরী চিনে উঠতে পারলেন না এই কি তার সেই সহধর্মিণী যাকে সে বরাবর দুর্বল,আবেগী, নরম মনের মানুষ হিসেবে চিনতো! তবে কি সে এতদিনেও রেহেনাকে চিনতে পারে নি!
আহসান চৌধুরী কিছু বলার আগেই সাহেব দরজার সামনে দাড়িয়ে পাশে থাকা ফ্লাওয়ার বাস্ক টা ছুড়ে ফেললো রাগে কাপতে কাপতে সে বলল,
—বিশ্বাস ঘাতক!এত বড় বিশ্বাস ঘাতকতা!
সাহেব যে লিলির খোজ পেয়েছে সেটাই সে তার বাবাকে জানাতে এসেছিলো কিন্তু এখানে এসে সে যা জানতে পারলো তাতে তার পুরো পৃথিবীই উল্টোপাল্টা হয়ে গেলো।
—তুমি কি করলে পারলে বাবা!ওহ সরি! তোমাকে বাবা ডাকতেও আমার লজ্জা লাগছে একজন চরিত্রহীন মানুষ কিছুত্তেই আমার বাবা হতেই পারে না!
রেহেনা এবার শান্ত কণ্ঠে বললেন
—সাহেব! ভদ্রভাবে কথা বলো আমি কোনোদিন তোমাদের গায়ে হাত তুলি নি, আশা করি তুমি আমাকে এই কাজটা আজ করতে বাধ্য করবে না।
—মা..!
—তোমার বাবা যা করেছেন সেটা আমার আর তোমার বাবার মধ্যেকার ব্যাপার, সে ভুল করেছে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।তোমার কোনো অধিকার নেই আমাদের মাঝে কথা বলার।বাবা হিসেবে তার কোনো ভুল নেই।তুমি এভাবে বলতে পারো না।
আহসান চৌধুরী এবার উঠে দাড়ালেন,তিনি মাথা নিচু করে বললেন
—পারে রেহেনা।তোমার সাথে যতটুকু অন্যায় আমি করেছি,তার চেয়েও হয়তো বেশি অন্যায় আমি সাহেবের সাথে করেছি।নিজের সংসার বাচাতে ওর সংসার আমি নষ্ট করে দিয়েছি।
আহসান চৌধুরী আজ আর কিচ্ছু লুকালেন না সবটা খুলে বললেন,তার মুখ থেকে সব শুনে রেহেনা এবার ফ্লোরে বসে পড়লেন সাহেব কিছুক্ষণের জন্যে থমকে গিয়ে দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

চলবে…
সামিয়া খান মায়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here