বসন্ত_এসেছে #মাহিমা_রেহমান #পর্ব_৯

0
342

#বসন্ত_এসেছে
#মাহিমা_রেহমান
#পর্ব_৯

সকলে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে নিজের রুমে আবিষ্কার করে বেলা।অবাক হয় বৈকি! পরমুহুর্তে বুঝে নেয়,,এটা রায়াযেরই কাজ।মুচকি হেসে উঠে যায় ফ্রেশ হতে।নাস্তা খেয়ে দুজন বেরিয়ে পরে।বেলাকে কলেজ নামিয়ে দিয়ে রায়ায চলে যায় অফিসে।মেয়ের সকল কার্যকলাপ আড়চোখে লক্ষ্য করেন রুমি রওশন।আড়ালে তপ্ত শ্বাস ছাড়েন তিনি।রায়াযকে তার পছন্দ না,,তেমন কিছুই না।তবে কোথাও একটা কিন্তু রয়েই যায়! রায়ায যে তার মেয়েকে পাগলের মত ভালবাসে,,সে কথা তার অজানা নয়।তিনি নিজেও চায় রায়ায নিজেকে প্রমাণ করুক সে বেলার জন্য যোগ্য পাত্র। কিন্তু রায়ায পারবে তো? চিন্তিত মুখে তিনি নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হন।
.
.
কলেজ শেষে বেলাকে আনতে তার কলেজে যায় রায়ায।ক্লান্ত মুখের স্নিগ্ধ হাসি দেখে বুক ভারী হয় বেলার।এতো খাটুনির পর ও মানুষটা কী*রকম ওষ্ঠ কোণে অমায়িক হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।রায়াযের নিকটবর্তী এসে নিজের ওড়না দিয়ে তার ললাট বেয়ে পরা স্বেদজলটুকু মুছে দেয়।মৃদু হাসে রায়ায।বেলার কোমরের দুপাশে নিজের শক্তপোক্ত হাত চেপে ধরে নিজের কাছে টানে তাকে। নিজের ওষ্ঠের সাহায্যে বেলার মুখের উপর ফুঁ দেয়।মৃদু কেঁপে উঠে বেলা।ওষ্ঠ কোণে স্নিগ্ধ হাসি ফুটিয়ে বলে,

-“চল।”

বাড়িতে পৌঁছে বেলাকে নামিয়ে পুনরায় অফিসে যাওয়া জন্য উদ্যত হতেই রায়াযের হাত টেনে ধরে বেলা। প্রশ্নবিদ্ধ চোখে সেদিক তায়ায় রায়ায।বেলা বলে,

-“এখন থেকে আমি বাড়ির গাড়ি দিয়েই কলেজ থেকে ফিরব।আপনাকে আর কষ্ট করে আমাকে আনতে হবে না।”

কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ পড়ে রায়াযের।জিজ্ঞেস করে,

-“আমি গেলে সমস্যা কোথায় তোর?”

মাথা নিচু করে বেলা জবাব দেয়,

-” আপনি না বললে ও আমি বুঝতে পারি রায়ায ভাই আপনার বেশ কষ্ট হয়। সারাদিন অফিসে তো খাটুনি, তার উপর আমাকে নিয়ে আসা-যাওয়া করা,,আপনার জন্য অনেক বেশি কষ্টকর হয়ে যায়। শুধু শুধু দরকার কি এত কষ্ট করার? ড্রাইভার আছে না? উনি আমাকে নিয়ে আসবেন।”

মৃদু হেসে রায়ায আলতো করে বেলার গালি স্পর্শ করে জবাব দেয়,

-“তোর কি মনে হয় যেখানে আমি তোকে পাওয়ার জন্য এত কষ্ট করছি? সেখানে এত সহজে তোকে আমি একা একা ছেড়ে দিব কখনোই না। অনেক কথা হয়েছে,,এবার তাড়াতাড়ি বাড়িতে যা। গিয়ে ঝটপট দুপুরের খাবার সেরে নে। আমি একটু পর ফোন করবো। ফোন করার সাথে সাথে যেন শুনি তুই খেয়েছিস। নয়তো,, তোর একদিন কি, আমার একদিন।”

কথাটুকু শেষ করে বেলা ললাটে নিজেরই ওষ্ঠের সিক্ত স্পর্শ একে দেয় রায়ায। আবেশে চোখ বুঝে নেয় বেলা। বেলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয় রায়ায। তার যাওয়ার পানে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে বেলা। কান্না আসে তার। নবাবের মতো পায়ের উপর পা তুলে বসে খাওয়া ছেলেটাও এখন সারাদিন ব্যস্ত থাকে কাজ নিয়ে। কতইনা অদ্ভুত এই পৃথিবী! কি থেকে কি হয়ে যায়? কেউই তা ধারণা করতে পারে না। দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে বাড়ির ভেতরে চলে যায় বেলা।

কেবলমাত্র ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে বেলা। সাথে সাথে তার পাশে পড়ে থাকা মোবাইল*টি বেজে ওঠে। যা দুদিন আগেই তাকে কিনে দিয়েছিল রায়ায। ফোন রিসিভ করতে ওপাশ থেকে ভেসে আসে রায়াযের ভারী কণ্ঠস্বর,

-“খেয়েছিস?”

সাথে সাথে লাফ মেরে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় বেলা। আমতা আমতা করে বলতে লাগে,

-“ইয়ে! এক্ষুনি যাচ্ছি! ভুলে গেছিলাম তো।”

গম্ভীর কন্ঠে অপর পাশ থেকে পুনরায় উত্তর আসে,

-“যা তাড়াতাড়ি।”

কথা শেষ করে ফোন কাটতে নিলেই থামিয়ে দেয় বেলা। মায়াবী কন্ঠে সুধায়,

-“আপনি খাবেন না?”

ক্লান্তি মাখা কন্ঠে রায়ায উত্তর দেয়,

-“খেয়ে নিব সময় হলে। তুই তাড়াতাড়ি খেয়ে নে।”

কথাটুকু শেষ করে ফট করে ফোন কেটে দেয় রায়ায। তার কথা বলার ধরন শুনেই বুঝে যায় বেলা,, এই সময় তার আর খাওয়া হবে না। তাই নিজে আর খেতে যায় না। সিদ্ধান্ত নেয় রায়ায বাড়িতে ফিরলে একসাথেই খাবে দুজন।
.
.
রাত দশটা পনের মিনিট। ঠিক তখনই বেলার ফোনে কল আসে রায়াযের। রিসিভ করতেই সে জিজ্ঞেস করে,

-“কিছু কি লাগবে তোর? নিয়ে আসবো?”

দুর্বল কণ্ঠে বেলা উত্তর দেয়,

-“তেমন কিছুই লাগবে না। শুধু আপনি হলেই চলবে!”

মুচকি হাসে রায়ায। শীতল কন্ঠে বলে,

-“আচ্ছা ঠিক আছে।”

-“আচ্ছা কখন আসবেন?”

-“একটু পরই আসছি।”
.
.
প্রতিদিনের মতো আজও রায়াযের অপেক্ষায় বসে বেলা। সকালে ততক্ষণে খেয়ে-দেয়ে যার যার রুমে চলে গেছে। কলিং বেল বাজাতেই দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললো বেলা। দরজা খুলতেই তার দৃষ্টিতে এসে ধরা দিল রায়াযের ক্লান্তি মাখা ঘামার্ত মুখখানা। বেলা কে দেখতে পেয়ে ঠোঁটের কার্নিশে মৃদু হাসি ফুটিয়ে তুললো রায়ায। সহসা বেলাকে পাঁজাকোল তুলে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল সে। তখনও রায়াযের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বেলা। একেবারে নিজের রুমে এনে নিচে নামিয়ে দিল সে। বেলাকে খাটে বসিয়ে তার পায়ের কাছে বসে পড়ল রায়ায। নিজের মাথায় এলিয়ে দিল বেলার কোলে। মুখ গুঁজে দিল বেলার উদরে। মৃদু কেঁপে ওঠে চোখ বুঝে নিল বেলা। বেলার উদ্দেশ্যে রায়ায বলল,

-“বেলা! একটা কথা রাখবি আমার?”

কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সে উত্তর দিল,

-“বলুন।”

তখনই রাজ নিজের পাশে থাকা প্যাকেটটা বেলার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

-“এই শাড়িটা পড়ে একটু সাজবি বেলা? শাড়িতে তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।”

ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নিজের কান্না আটকালো বেলা। মাথা নেড়ে সায় জানাল। যার অর্থ সে পরবে। পর মুহুর্তে উদাস কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“কিন্তু আমি তো শাড়ি পড়তে জানিনা।”

নেশাক্ত কন্ঠে রায়ায উত্তর দিল,

-“আমার কাছে আয়। আমি পরিয়ে দিচ্ছি।”

খুব সুন্দর করে শাড়ি পরানো শেষ হলে বেলা কে নিয়ে ভেনিটির সামনে বসালো রয়েছে। পকেটে গুজে রাখা দুটো বেলি ফুলের মালা বের করল। যা দেখে বেশ অবাক হলো বেলা। অতি সন্তর্পণে একটি ফুলের মালা গুজে দিল বেলার খোপার অন্তরালে। অপরটি নিয়ে বেলার বাঁ হাতে বেঁধে দিল। বেঁধে দেওয়া শেষে নিজের স্পষ্ট স্পর্শ করল হাতের তালুতে। পুরো শরীরে এক অদম্য শিহরণ বয়ে গেল বেলার। সাথে করে নিয়ে আসা এক মুঠো চুড়ি পরিয়ে দিল বেলার হাতে। চোখ ভিজে আসছে বেলার। তার কপালে যে এত সুখ লেখা ছিল,,, তা সে ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি।অজান্তেই
চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরলো দুফোঁটা জল।ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসা পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার! বেলাকে তৈরি করা শেষ হতেই,,কপালের মাঝ বরাবর নিজের ওষ্ঠ স্পর্শ এঁকে দিল রায়ায।আলগোছে বেলাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডের দিকে অগ্রসর হলো।তখনও রায়াযের চোখের গভীরতায় হারিয়ে বেলা।
.
.
.
চলবে কী…??

[ আসসালমুআলাইকুম। গল্পকে কখনো বাস্তবতা সহিত তুলনা করবেন না।আর আজকেই পর্বটা বেশ ছোট হয়েছে।কিছু মনে করবেন না। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here