অব্যক্ত_প্রিয়তমা #ফাতেমা_তুজ #part_16

0
348

#অব্যক্ত_প্রিয়তমা
#ফাতেমা_তুজ
#part_16

” নির্ভীক ”
বলে চিৎকার করে উঠে অনিন্দিতা। শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে। অগোছালো চুল গুলো কপালে লেপ্টে আছে। বুকে হাত দিয়ে হাঁফাতে থাকে সে। আশে পাশে চোখ বুলিয়ে নিজেকে রুমে আবিষ্কার করে। গাঁয়ে জড়িয়ে রাখা চাদর টা ছো মেরে ফেলে দেয়। পায়ে ঘরের স্লিপার না পরেই দৌড়ে আসে ডয়িং রুমে। পুরো ঘরে কাউকে দেখতে না পেয়ে পাগলের মতো ছুটতে থাকে। উম্মাদের মতো আচারনের নমুনা স্বরূপ ঘরের দরজা খুঁজে পায় না সে। মাথার নিউরন গুলো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে । মাথায় একটাই কথা ঘুরছে নির্ভীক আর নির্ভীক। ডাইনিং এর গ্লাস গুলো ফেলে দেয় সে , চুল খামচে ধরে চিৎকার করে উঠে। পাগলের মতো আর্তনাদ আর গ্লাস ভাঙার আওয়াজে ছুটে আসেন শাহানা , চারুলতা সহ সকলে। নিজের চুল নিজেই ছিড়ছে অনিন্দিতা। সকলে অবাক চোখে তা দেখতে থাকে। এই অনিন্দিতা যেন সকলের অচেনা। শাহানার মাথা ঘুরে যায়। চারুলতা দু হাতে জড়িয়ে ধরেন। সকলের চেঁচামেচি শুনে ঘুরে তাকায় মেয়েটি। এক জোড়া নয়ন দেখেই শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। নির্ভীকের শীতল দৃষ্টি যেন অনিন্দিতার আত্মা কাঁপিয়ে দেয়। সে পর পর পলক ফেলে। নির্ভীকের অবাক চাহনি তে ঘোর লাগা চোখে তাকায়। অধর কোনে হাসি ফুঁটিয়েই জ্ঞান হারায় সে।

নির্ভীকের ব্যাথাতুর দৃষ্টি কারো চোখে পরে না। আড়াল থেকে অনিন্দিতা কে দেখছে সে। শাহানা অতি যত্ন নিয়ে মেয়ে কে খাবার খাওয়াচ্ছেন। আজকে পৃথিবীর বাসা তে যাওয়া ক্যানসেল করে দিয়েছেন। অনিন্দিতার পাগলামি নিয়ে একটা ও প্রশ্ন তুলে নি কেউ। শাহানা ঘর থেকে বের হতেই নির্ভীক কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, ডুকরে কেঁদে উঠেন তিনি। নির্ভীক বলে
” আমি দেখছি কি হয়েছে অনিন্দিতা। কথা বলছি আমি। শান্ত হোন আপনি। ”

” দেখো বাবা কিছু করতে পারো কি না। এ কেমন পাগলামি করছে মেয়েটা ? ”

” চিন্তা করবেন না। অনিন্দিতা ঠিক হয়ে যাবে। ”

শাহানা আরো কিছু কথা বলে চলে যান। পর পর শ্বাস ফেলে রুমে প্রবেশ করে নির্ভীক। বেডে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে অনিন্দিতা। সেই কষ্টের মুখ খানায় তাকিয়ে থাকতে পারে না নির্ভীক। চোখ ঘুরিয়ে নেয়। অনিন্দিতার পাশে বসে আদুরে কন্ঠে বলে
” সকালে এমন করছিলেন কেন ? ”

চোখ মেলে তাকায় অনিন্দিতা । নির্ভীক কে দেখে আধশোয়া হয়ে বসে। সিক্ত নয়নে পর পর পলক ফেলে বলে
” আমাকে আগের বিষয় নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবেন না। কারন সেই উত্তর আমি বহু বার দিয়েছি।”

” আচ্ছা করবো না। এখন বলুন কেন এমন করছিলেন আপনি ? ”

” স্বপ্ন দেখেছি আমি , ভয়ঙ্কর স্বপ্ন। ”

” কেমন স্বপ্ন। কি এমন দেখেছেন আপনি। ”

অনিন্দিতা নির্ভীকের দৃষ্টি তে দৃষ্টি দেয়। ডুকরে কেঁদে উঠে মেয়েটা । নির্ভীক কে নিয়ে দেখা পুরো স্বপ্ন টাই বলে ফেলে। নির্ভীক কথা বলে না। তাঁর চোখে পানি চিক চিক করছে। ডোরের দিকে লক্ষ্য রেখে অনিন্দিতার হাত মুঠো বন্দী করে। হালকা হাতে হাত বুলিয়ে বলে
” আপনাকে বাঁচতে হবে অনিন্দিতা। এই যে নির্ভীকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরেছেন এতে আপনি মরে যাবেন। এ ভাবে দিন যাবে না। নিজের মাঝে ফিরে আসুন অনিন্দিতা। ”

নাক টেনে কান্না আটকায় অনিন্দিতা। নির্ভীকের হাতে মাথা রেখে বলে
” আমাকে কেন ভালোবাসেন না ? ”

” ভালোবাসার কোনো দিক নির্দেশনা কারন হয় না। কাছে পেলেই কি ভালোবাসা হয়ে গেল ? দূর থেকে ও ভালোবাসা যায়। ”

” সে ভালোবাসা দগ্ধ দেয় নির্ভীক ভাই। অতিরিক্ত কাছের মানুষ কে অন্য জনের সাথে দেখে সুখি হওয়া যায় না। সেটা হয় অভিনয়। ”

নির্ভীক কথা বলে না। ধীর হাতে অনিন্দিতার হাত ছাড়িয়ে নেয়। তারপর সে বলে
” আপনার উচিত এখানেই থেমে যাওয়া। আর দগ্ধ হবেন না। পড়াশোনায় মনোযোগী হোন। আপনার জন্য শুভকামনা। ”

” আপনি ছাড়া আমার জীবনের সব শুভ কামনা অশুভ হয়ে যাক। ”

অনিন্দিতা চিৎকার করে কথা টা বললে ও নির্ভীক থামে না। এক পলক ও তাকায় না সে। টাওজারের পকেটে হাত পুরে নিয়ে হাঁটা লাগায়।
‘ সব কেন এর উত্তর হয় না। আর না সব ভালোবাসার পূর্ন হয়। ‘
.

রুগ্ন দেহ নিয়ে উঠে দাঁড়ায় অনিন্দিতা। রাত প্রায় দুটোর কাছাকাছি। দু চোখের পাতাতে ঘুম নেই। মাথা টা ও কেমন করছে। মনে হচ্ছে মাথায় কেউ পেরেক লাগাচ্ছে। এতো টাই যন্ত্রণা হচ্ছে যে বিছানায় শুয়ে কাতরাতে লাগলো। বাঁচার জন্য যেমন হাহা কার করে ঠিক তেমনি আচারন করছে মেয়েটা। হঠাৎ করেই পেটে ব্যথা শুরু হয়। নির্ঘাত গ্যাসটিকের ব্যথা। ঠিক মতো না খাওয়ার কারনেই এই অবস্থা। পেটে হাত দিয়ে উঠে বসে। কোনো ভাবেই স্বস্তি মিলে না। হালকা আওয়াজ তুলে আর্তনাদ করে। চোখ ফেটে ধারা নেমে যায়। উপায় না পেয়ে হীরের ঘরে চলে আসে। পুরো ঘরে কাউকে না দেখতে পেয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। কয়েক সেকেন্ড পরে খেয়াল হয় হীর তো শশুর বাড়ি তে। অসহ্য ব্যথায় মাথার চুল ছিড়ে অনিন্দিতা। বাবা মায়ের রুমের দরজায় কয়েক বার খটখট আওয়াজ তুলে চাঁপা স্বরে ডাকে
” আম্মু , আব্বু , আমার কষ্ট হচ্ছে। ”

মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাওয়ার মতো ব্যথা অনুভব হয়ে। চিৎকার করে উঠে অনিন্দিতা। আরশাদ দরজা খুলে অনিন্দিতা কে পরে থাকতে দেখে চিৎকার করে উঠেন। শাহানা তো কেঁদেই দেন। প্রচুর জোড়ে কান্না শুরু করেন। আশে পাশে মানুষ জড়ো হয়। চারুলতার চোখে মুখে বিস্ময়। দৌড়ে যান ঘরে। স্বামী আর বড় ছেলে বাসায় নেই। নির্ভীকের রুমে নক করেন তিনি। দরজা খুলতেই চাঁপা কান্না করে বলেন
” তাড়াতাড়ি আয় , অনিন্দিতা যেন কেমন করছে। ”

কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকে। যখন বিষয় টা বুঝতে পারে তখন পা থমকে যায়। হাত কাঁপতে থাকে। শাহানা আবারো ডাকেন। নির্ভীক হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায়। আরশাদ একজন ডাক্তার হলে ও এই মুহুর্তে হতবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেন। আপন মানুষের চিকিৎসা করার শক্তি পান না। কি থেকে কি করবেন বুঝে উঠেন না। এ দিকে এক হাতে মাথা আর অন্য হাতে পেট চেপে ধরে রেখেছে অনিন্দিতা। শাহানার বিলাপ বন্ধ হবার নয়। নির্ভীক ধীর হাতে অনিন্দিতার হাতে স্পর্শ করে। অনিন্দিতার হাত দিয়েই পেটে হালকা চাঁপ দেয়। আহ বলে জোড়ে আর্তনাদ করে উঠে অনিন্দিতা। চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেছে। নির্ভীকের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। অনিন্দিতার মুখে হালকা হাতে স্পর্শ করে বলে
” অনিন্দিতা, কোথায় কষ্ট হচ্ছে ? মাথায় যন্ত্রনা হচ্ছে কি ? ”

” মাথা ফেটে যাচ্ছে নির্ভীক ভাই। মনে হচ্ছে মাথায় পেরেক লাগানো হচ্ছে। পেটে ও ব্যথা হচ্ছে। ”

নির্ভীক থম মেরে থাকে। অনিন্দিতার পরিস্থিতি খারাপ। আরশাদ পূর্ন জ্ঞানে নেই। নির্ভীক বুঝতে পারে অনিন্দিতা কে হসপিটালে এডমিট করাতে হবে। কোলে তুলে নেয় অনিন্দিতা কে। পিছে তাকিয়ে বলে
” আম্মু সবাই কে নিয়ে সিটি হসপিটালে আসো। কয়েক দিন আগে হেলথ চেকাপ করেছে না সেটার ফাইল ওহ নিয়ে আসো।”

চারুলতা মাথা ঝাঁকায়। অনিন্দিতা কে কোলে করে নেমে আসে নির্ভীক। গাড়ি তে বসিয়ে দিয়ে হাই স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করে। বার বার অনিন্দিতার দিকে তাকাচ্ছে সে। অনিন্দিতার চোখ যেন উল্টে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই নির্ভীক কে জড়িয়ে ধরে অনিন্দিতা । চাঁপা আর্তনাদ আর কান্না জড়িত কন্ঠে বলে
” আপনাকে মুক্ত করে দিচ্ছি নির্ভীক ভাই। এই অনিন্দিতার পাগলামি সহ্য করতে হবে না আপনাকে। ভালোবেসে আক্ষেপ টা বোধহয় রয়েই গেল। ”

” কি সব বলছেন অনিন্দিতা । আপনার কিচ্ছু হবে না। আমি আপনার কিছু হতে দিবো না। ”

” যন্ত্রনা হচ্ছে নির্ভীক ভাই। ”

গাড়ি থামিয়ে দেয় নির্ভীক। অনিন্দিতার মাথা বুকে চেপে ধরে। চোখ দিয়ে অশ্রু গড়ায়। অনিন্দিতার শ্বাস ভারী হয়। নির্ভীকের টি শার্ট খামচে ধরে সে। নির্ভীক তাঁর ঠান্ডা হাতে অনিন্দিতার বাহু স্পর্শ করে। হালকা হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। অনিন্দিতার দম যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মাথায় এতো টা ব্যথা হচ্ছে যে মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। অনিন্দিতার মাথায় চুম খায় নির্ভীক। বুকে জড়িয়েই বলে
” কিচ্ছু হবে না আপনার। ”

** রসায়ন পরীক্ষা গাইস। সবাই দোয়া করো প্লিজ। পদার্থে যে বড় বাঁশ খাইছি। ঢাকা বোর্ড এবার ফেল।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here