#অব্যক্ত_প্রিয়তমা
#ফাতেমা_তুজ
#part_18
আকাশে কুয়াশা জমেছে। মেঘের মতো আবৃত করে নিয়েছে নিজের ঢাকনায়। আকাশ নাকি কুয়াশার আস্তরন ঠিক ঠাওর করা যাচ্ছে না। বিকেলের এই অপরূপ যেন সবার বুকে দাগ কেঁটে নিয়েছে। অপেক্ষা করছে নির্ভীক। ঘড়ি তে বার বার টাইম দেখছে মুখে ফুটে উঠছে বিরক্তি। পাশেই দোলনা তে দোল খাচ্ছে বাচ্চারা। তৃপ্তির রাজ্যে ভাসছে বাচ্চা গুলো। বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। সাড়ে পাঁচ টায় আসে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি টি। নির্ভীকের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় ,তবে নির্ভীক হাত মেলায় না। তাতে যেন ছেলেটার কিছুই যায় আসে না। বিন্দু মাত্র অপমান বোধ করে না সে। সন্তপর্নে নির্ভীকের মুখোমুখি হয়। বুকে জড়িয়ে পিঠ চাপরে বলে
” কেমন আছিস ? ”
” যেমন টা দেখছিস ? যেমন টা ছিলাম কিংবা যেমন টা থাকবো। ”
” হেঁয়ালি পানা বন্ধ হবে না কোনোদিন ”
বিরক্ত হয় নির্ভীক। ইশারাকের দিকে আড়চোখে তাকায়। ছেলেটার মুখে চুইংগাম। এই বদ অভ্যাস টা এখনো যায় নি। ঠাটিয়ে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে হয় নির্ভীকের। তবে তেমন কিছু ই করে না সে। মুখের চুইংগাম ফেলে দিয়ে আরেক টা মুখে দিবে তখনি বাঁধা দেয় নির্ভীক। মেকি হাসি দেয় ইশরাক। ভ্রু কুটি করে নির্ভীক বলে
” আর একটা ও নয়। ”
” ওকে ওকে হাত টা তো ছাড়। ”
নির্ভীক হাত ছাড়তেই চুইংগাম মুখে পুরে নেয় ইশরাক। ফোঁস করে দম ফেলে নির্ভীক। ইশরাকের মাঝে কোনো পরিবর্তন ই নেই। নির্ভীক বলে
” তোর সাহায্যের প্রয়োজন। ”
” তা তো বুঝতেই পেরেছি। না হলে নির্ভীক মাহতাব আমাকে কল করবে ? আবার কানাডা থেকে আর্জেন্ট আসার কথা বলবে। পুরোই ড্রিম গেম তাই না ? ”
” শাট আপ ইশরাক। দেখ তোর সাথে আমি ঝগড়া করতে চাই না। প্রয়োজন না হলে তোর মুখ টা ও দেখতাম না। ”
ইশরাক উত্তর দেয় না। মুখ ভার করে ঘাসের উপর বসে পরে। দোকান থেকে নন অ্যালকোহল বিয়ার নিয়ে আসে নির্ভীক। বিয়ারের ক্যাপ খুলে বাড়িয়ে দেয় ইশরাকের দিকে। ইশরাক বিয়ারে চুমুক দিয়ে বলে
” বল কি করে সাহায্য করতে পারি। ”
” একজন কে সুস্থ করতে হবে। ট্রিটমেন্ট সহ মোটামোটি পাওয়ারফুল ঔষধ এর ব্যবস্থা ও করতে হবে । মানসিক ভাবে ভেঙে পরেছে তাঁকে সঠিক পথ দেখাতে হবে। ”
অবাক চোখে তাকায় ইশরাক। নির্ভীকের গাঁয়ে হাত দিয়ে বলে
” আর ইউ সিরিয়াস ? আমার কাছে এই বিষয়ের হেল্প চাইছিস ? ”
” হ্যাঁ আমি সিরিয়াস। তোর সাথে এখন একটাই সম্পর্ক সেটা হলো ডাক্তার আর পেসেন্ট। আমি জানি অতি শীঘ্রই তুই সুস্থ করে দিতে পারবি। ”
ইশরাক ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায়। নির্ভীক মুখ ঘুরিয়ে আছে। কিছুক্ষন ভেবে বলে
” আমার একটা শর্ত আছে। ”
নির্ভীক ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ইশরাকের চোখে মুখে অসহায়তায় ভরপুর।নির্ভীকের প্রয়োজন পরে না ইশরাকের শর্ত শোনার। মুখে কাঠিন্য এনে বলে
” আমি চেষ্টা করবো। ”
ইশরাকের চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। নির্ভীক কে জড়িয়ে বলে
” থ্যাংকস দোস্ত। ”
” থ্যাংকস এর প্রয়োজন নেই। আমি শুধুই বিনিময় প্রথা অবলম্বন করছি। এর বাইরে কিছু ভাবা তোর উচিত হবে না। ”
ইশরাকের মুখে তবু ও হাসি ফুটে থাকে। মনে জাগে বসন্তের গান। প্রান ভরে শ্বাস নেয়। নির্ভীকের পাশে বসে বিয়ারে শেষ চুমুক দেয়।
.
বাসায় ফিরে এসেছে প্রায় ঘন্টা খানেক।
অনিন্দিতা কে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে। সেই কখন রেডি হতে গেছে মেয়েটা। অথচ এখনো আসছে না। নির্ভীক বড্ড অধৈর্য হয়ে পরেছে। কাউচ থেকে উঠে গাঁয়ের শার্ট ঠিক করে সে। চোখে গ্লাস লাগিয়ে হাঁটা লাগায় অনিন্দিতার ঘরে। দরজা খোলা থাকলে ও উঁকি দেয় না নির্ভীক। হালকা কেশে বলে
” রুমে আসতে পারবো অনিন্দিতা? ”
” নির্ভীক ভাই ? ”
” হুম। আপনার লেট হচ্ছে কেন ? ”
” ঘরে আসুন। ”
অনিন্দিতার অনুমতি পেলে ও তৎক্ষনাৎ ঘরে আসে না নির্ভীক। মিনিট দেড়েক পর রুমে প্রবেশ করে। আয়নার দিকে মুখ দিয়ে কিছু একটা করছে মেয়েটা। চোখ নামিয়ে নেয় নির্ভীক। বরাবরের মতোই অনিন্দিতার বুক শেলফ এ হাত বুলায়। অনিন্দিতা আবারো প্রেমের বই এনেছে। তবে কিছুই বলে না নির্ভীক। বরং যত্ন করে বই গুলো সাইট করে রাখে। পেছন ঘুরতেই অনিন্দিতা কে দেখে থমকে যায়। পার্পল রঙের শাড়ি পরেছে মেয়েটা। পূর্ন যুবতী কে দেখে যে কেউ কয়েক খানা হার্ট বিট মিস করবে। নির্ভীক সে দিকে চোখ মেলে তাকাতে পারে না। চোখ ফিরিয়ে বলে
” শাড়ি না পরলে ও চলতো। ”
” শাড়ি পরলে আমাকে সুন্দর লাগে না নির্ভীক ভাই ? ”
” সেটা নয়। আসলে ঘটা করে শাড়ি পরে ডাক্তারের কাছে নিশ্চয়ই কেউ যায় না ? ”
” সেটা ঠিক। তবে শাড়িতে বউ বউ ফিল হয়। নির্ভীক মাহতাবের বউ । ”
কথাটা বলেই ফিচেল হাসে অনিন্দিতা। অনিন্দিতা কে অবাক করে দিয়ে নির্ভীক কড়া কথা শোনায় না। বরং ঠোঁটের কোনে স্বচ্ছ এক হাসি ফুটিয়ে বলে
” আপনাকে বরাবর ই সুন্দর লাগে। ”
” তাহলে কেন ভালোবাসেন না আমায় ? ”
” সূর্য কে কেমন লাগে আপনার ? ”
” অবশ্যই সুন্দর। ”
” সূর্যের দিকে হাত বাড়াতে ইচ্ছে হয় ? ”
” হয়। তবে সেটা তো অসম্ভব। ”
” ঠিক তেমনি , আপনি আমার কাছে সূর্যের মতো। যাঁর দিকে হাত বাড়ানো অসম্ভব। আপনাকে স্পর্শ করলে আমি জ্বলসে যাবো অনিন্দিতা। ”
ভিজে চোখে তাকায় অনিন্দিতা। সিক্ত নয়নের মাঝে হাসি ফুটিয়ে বলে
” তবে আমি কি কলঙ্ক নির্ভীক ভাই ? ”
” ছিই। কি সব বলছেন। কলঙ্ক কেন হতে যাবেন। আপনি স্বচ্ছ কাঁচের মতো , যাঁর এপিঠ থেকে ওপিঠ স্পষ্ট। ”
” তাহলে ”
” কোনো কথা নয় অনিন্দিতা। এবার আমরা বের হবো। আপনি আমাকে বলেছিলেন ভদ্র মেয়ের মতো যাবেন। ”
বা হাতের তর্জনির সাহায্যে চোখ মুছে অনিন্দিতা। একটু করে হেসে বলে
” ঘুরতে নিয়ে যাবেন। ”
” এই সন্ধ্যা তে যাওয়া কি ঠিক হবে। ”
” আপনার কাছে আমি নিরাপদ। আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে যদি আপনি খুব বেশি বিরক্ত হন তো যাওয়া লাগবে না।”
অনিন্দিতার দিকে তাকায় নির্ভীক। আঁচল টা এলোমেলো হয়ে আছে। অনিন্দিতার আঁচল টা গুটিয়ে হাতে ধরিয়ে দেয় ছেলেটা। হেসে বলে
” আমার পছন্দের রঙ তাই না ? ”
অনিন্দিতা মাথা ঝাঁকায়। নির্ভীকের চোখে পানি। অনিন্দিতার মায়াবী মুখে হাত বুলিয়ে বলে
” আপনার চোখের জল হাজারো মুক্ত দানার থেকে ও দামী। এই দামী সম্পদ কে এভাবে বিসর্জন দিবেন না। ”
” আমার জন্য অশ্রু কনা নিষিদ্ধ করে দিন নির্ভীক ভাই। তাহলে হয়তো আমি কাঁদবো না। ”
নির্ভীকের কাছে কোনো উত্তর নেই। সে বেরিয়ে যায়। অনিন্দিতার মুখোমুখি হতেই অন্তকর্নে জ্বালা অনুভব হয়। বার বার ভুল কার্য করে ফেলে। তবে এই কয়েক দিন ঠিক ভুল সব মেনে নিতে হবে তাকে। এটাই পরিস্থিতি , ভয়ঙ্কর এক পরিস্থিতি। বড্ড দোষী মনে হয় নিজেকে। নিজ কার্যে বিরক্ত সে। যে ভুল গুলো অতীতে করেছে সে , সেই ভুলের মাশুল গুনে চলেছে অনিন্দিতা। মেয়েটার একটাই দোষ সে ব্রাহ্মন হয়ে চাঁদে হাত বাড়িয়েছিলো।
অনিন্দিতা কে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছে নির্ভীক। মাঝ পথে অনিন্দিতা বায়না ধরে বলল
” আমাকে লেকের ধারে নিয়ে চলুন। ”
” এখন লেকের ধারে কেন যাবেন? ”
” পা ভেজাবো। ”
” অন্য একদিন যাবো । আজ লেট হয়ে যাচ্ছে। ”
” আজ ই যাবো। এমন করছেন কেন ? ”
” আমার কথা টা শুনুন। ”
” একদম নয়। আপনি আমাকে প্রমিস করেছেন। এখন প্রমিস ব্রেক করলে চলবে না। ”
কথা টা বলেই মুখ ভার করে বসে থাকে অনিন্দিতা । নির্ভীকের বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে যায় লেকের ধারে।সুন শান লেকে কারো উপস্থিতি পায় না নির্ভীক। একটু ভয়ার্ত কন্ঠে বলে
” এখানে কেউ নেই অনিন্দিতা। চলুন ফিরে যাই। ”
” আমি যাবো না নির্ভীক ভাই। কেউ না থাকলেই তো ভালো। পুরো লেক টা শুধুই আমার আর আপনার। ”
” অনিন্দিতা যাবেন না। ”
নির্ভীকের কথায় পাত্তা দেয় না অনিন্দিতা। শাড়ির আঁচল মেলে দিয়ে ছুটে যায় লেকের ধারে। নিষ্পলক চাহনি তে তাকিয়ে থাকে নির্ভীক। পাপর্ল রঙের শাড়ি টা যেন অনিন্দিতার জন্য ই তৈরি। নির্ভীক পিছু নেয় , অনিন্দিতার পাশাপাশি এসে বলে
” প্রেমে পড়ার মতো সুন্দর অনুভূতি বোধহয় কিছু তে নেই। যদি না থাকে কোনো আশংকা। ”
” একদম ঠিক। জানেন নির্ভীক ভাই। যখন আমি ক্লাস নাইনে পা দিয়েছি মাত্র , ঠিক তখনি আপনি আমার মন কেড়ে নিলেন। আপনার হুটহাট দেশে আসা যেন আমায় পাগল করে দিলো। অপেক্ষার দিন গুনতে থাকতাম। যখন দেখতাম আপনি এসেছেন মনে হতো পৃথিবীর সমস্ত সুখ যেন আমায় ঘিরে নিয়েছে। ধীরে ধীরে এই আপনি টা আমাকে ঘৃনা করতে লাগলেন। এতো টাই ঘৃনা করেন যে আমার সামান্য দৃষ্টি ও মেনে নিতে পারেন না। এতো টাই ঘৃনিত আমি যে আমার স্পর্শ পাওয়ার থেকে আপনার কাছে মৃত্যু কে সহজ মনে হয়। ”
শেষোক্ত কথা টা বলার সময় অনিন্দিতার ঠোঁট আলতো কেঁপে উঠে। সোডিয়ামের আলো তে সেটা স্পষ্ট দেখতে পায় নির্ভীক। চোখ দুটো সিক্ত হয়ে যায়। শরীরে অদ্ভুত যন্ত্রনা অনুভব হয়। নিষিদ্ধ এক ইচ্ছে জাগে তবে সে ইচ্ছে কে আগাতে দেয় না ছেলেটা। বুকে হাত গুঁজে নিঠাল দাঁড়িয়ে থাকে। তাঁর ই পাশে দাঁড়িয়ে থাকে অনিন্দিতা। দু চোখ মেলে দেখ তাঁর না হওয়া চাঁদ কে।
**উচ্চতর গনিত পরীক্ষা । দোয়া করো সবাই। কয়েক দিনের মধ্যেই পাওয়ারফুল হবো ইনশাআল্লাহ । রোজ গল্প দিবো তখন। কাল প্যাক্টিকাল এক্সাম। তারপর দুই এক দিন হয়তো বাদ যাবে । তবে 26 তারিখ থেকে মিস যাবে না ইনশাআল্লাহ ।
জয়েন
Fatema’s story discussion
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।
চলবে