প্রেমোদ্দীপক। (পর্ব-২)

0
359

#প্রেমোদ্দীপক। (পর্ব-২)
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

ড্রয়িংরুমে বসে আছেন তাহিয়ার মামা ফিরোজ খান। মাহমুদার জুরুরি তলব পেয়ে রাজশাহী থেকে ছুটে এসেছেন তিনি। বোনের সাথে আলাপ আলোচনা শেষে তাহিয়াকে বুঝানোর মনস্থির করলেন। তাহিয়াকে দেখে প্রসন্ন হেসে বললেন,
‘এসেছিস তুই! যা ফ্রেশ হয়ে আয়। মামা ভাগ্নী আলাপ করব কিছুক্ষণ।’

আকস্মিক মামার আগমনে অবাক হলো। তাহিয়া আন্দাজ করল, তাকে বিয়েতে রাজি করানো জন্য ফিরোজ খানকে ডেকে এনেছে মাহমুদা। এই কাজটা মাহমুদা প্রায়শই করেন। তাহিয়া মায়ের কোন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধাচরণ করলে মামা অথবা নীলিমাকে দিয়ে বুঝিয়ে রাজি করান। বিয়ের ব্যাপারে নীলিমার সম্পৃক্ততা থাকায় তাকে বাদ দিয়ে ফিরোজ সাহেবকে এনেছেন। তাহিয়া বুঝতে পারল, তার মা আটঘাট বেধে নেমেছেন। তাকে রাজি করানোর কোন পথ বাকি রাখবেন না।

এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুমের দিকে পা বাড়াল তাহিয়া। যেতে যেতে চক কষল মামা বিয়ের কথা উঠালে কিভাবে মামাকে বুঝিয়ে বিয়ে ক্যান্সেল করবে। ফ্রেশ হয়ে আসতেই ফিরোজ সাহেব আলতো স্বরে বিয়ের কথা উঠালেন। তাহিয়ার অমত পোষণ করার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। তাহিয়ার জবাব যেন জিহ্বার আগায় সাজানো ছিল। তড়িৎ জবাব উপস্থাপন করল,
‘উনি আমার স্যার। ছাত্রী-শিক্ষকের সম্পর্ক কীভাবে স্বামী স্ত্রীতে রূপ নিবে! আমি তেমন কিছু ভাবতেই পারছিনা। ‘

ফিরোজ সাহেব হেসে বললেন,
‘এই সামান্য কারণ! শুন, ছাত্রী-শিক্ষকের মাঝে প্রণয় হওয়াটা অশোভন , এতে ছাত্রী শিক্ষকের মাঝের পবিত্র সম্পর্কটা নষ্ট হয়। কিন্তু পরিণয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। পরিণয় একটি পবিত্র বন্ধন, এতে গায়রে মাহরাম যে কোন ছেলে-মেয়ে আবদ্ধ হতে পারে। এতদিন অভীককে স্যারের দৃশ্যতে দেখেছিস, সম্মান করেছিস। এখনও সম্মান করবি সাথে দৃষ্টি কোমল করবি। দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে। সম্পর্কটা নিয়ে ভাব, অভীকের সাথে কলেজের বাইরে কিছুদিন দেখা সাক্ষাৎ কর। ব্যক্তিগত জীবনের অভীককে চেনার চেষ্টা কর, দেখবি তোর আপত্তি থাকবে না। অভীককে পুরো এক বছর অভজার্ভ করেছি আমি। ওর কোন খারাপ দিক আমার চোখে পড়েনি। ছেলেটা ভালো, তোকে সুখে রাখবে। রাজি হয়ে যা। ‘

তাহিয়া নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। কোনভাবেই সে শিক্ষককে বিয়ে করবে না। সে তার মতামত উপস্থাপন করল। যা উপস্থিত দুজনের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পেল না। তার মতামত অগ্রাহ্য করে মাহমুদা কড়া স্বরে জানালেন,
‘ আমার জানামতে তোমার কোন পছন্দ নেই। থাকলে তার সাথে বিয়ে দিতাম। এখন আমাদের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে হবে। তোমার জন্য অভীকের চেয়ে ভালো ছেলে চোখে পড়েনি আমার। তাই আমাদের সিদ্ধান্ত অভীকের সাথেই তোমার বিয়ে দিব। কাল অভীক পরিবার সমেত আসবে তোমাকে আংটি পরিয়ে যাবে। বান্ধবীদের কাউকে বলার থাকলে বলো। যাও!’

পছন্দের কথা আসায় তড়িৎ এক যুবকের অবয়ব চোখে ভাসল তাহিয়ার। স্মরণে এলো একটাই নাম, ‘রেহান’। তাহিয়া রেহানের স্মৃতিতে ডুব দিল।
ক্লাশ টেনে পড়াকালীন সময়ে অংক প্রাইভেট পড়ত তাহিয়া। যে স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তো সেই স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তো রেহান। সে তখন দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত। প্রাইভেটে যাওয়া আসার পথে প্রায়শই দেখা হতো। শুভ্র বর্ণের ছেলেটাকে প্রথম দেখায় ভালো লেগে গিয়েছিল তাহিয়ার। প্রথম প্রেম এসেছিল সেই শরতে। দেখা হলেই লাজুক হাসতো। ছেলেটাও হাসতো। বোধহয় সে ও পছন্দ করতো তাহিয়াকে। আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আসতো। মাধ্যমিক পরীক্ষার পনেরোদিন আগে হুট করেই একদিন প্রপোজ করে বসে রেহান। খুশিতে লাফিয়ে উঠেছিল তাহিয়া। পরীক্ষা মাথার উপর থাকায় তৎক্ষনাৎ সম্পর্কে জড়ানো অনুচিত মনে হলো তার। ভেবেছিল পরীক্ষা শেষ হলে রেহানকে হ্যাঁ বলে দিবে। এমন ভাবনা থেকে রেহানকে জানাল, সে ভেবে জানাবে। তার ভাবনা শেষ হলো পরীক্ষার পর। তার ভাবনা শেষ হতে হতে রেহান অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। এত খুঁজেছে কোনভাবে খোঁজ পায়নি। তার বন্ধুদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারল হুট করেই রেহানের বাবা মারা যায়। বাবার লাশ নিয়ে গ্রামে গিয়েছে, আর ফিরে আসেনি। তারা কেউ রেহানের গ্রামের বাড়ির ঠিকানা জানে না। পরীক্ষা ও দেয়নি সে বছর। তারপর থেকে রেহানের আশায় পথ চেয়েছিল, যদি দেখা পায়! কিন্তু বরাবরই হতাশাকে বরণ করতে হলো তার। বছর খানেক অপেক্ষা করে রেহানের আশা ছেড়ে দিয়েছে। তাহিয়া মনে মনে বলল, ‘ পছন্দের মানুষ আছে, কিন্তু আমার পাশে নেই। থাকলে তোমাদের বলতে পারতাম। রেহান দেখা দাও না একবার!’

তাহিয়ার চোখমুখে অমাবস্যা নেমে এলো। রেহানের ঠিকানা জানা নেই তার। কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে উঠে দাঁড়াল। যেতে যেতে বলল,
‘ অভীক স্যার ছাড়া যে কাউকে পাত্র হিসেবে হাজির করো, আমি খুশিমনে বিয়ে করব। অভীক স্যারকে বিয়ে করতে পারব না। প্লিজ জোর করোনা!’

নিজের মনোউক্তি প্রকাশ করে উঠে দাঁড়াল তাহিয়া। রুম থেকে বেরুনোর জন্য পা বাড়াতেই মাহমুদা বলে উঠলেন,
‘অভীক তোর বাবার ভীষণ পছন্দের পাত্র ছিল। তিনি থাকলে অভীকের সাথে তোর বিয়ে দিতেন। তোর বাবার মৃত্যুর পর কত কষ্ট করে বড়ো করেছি তোদের। আমার এত কষ্টের প্রতিদান এভাবে বিরুদ্ধাচরণ করে দিবি! ‘ মেয়ের দৃঢ়ভাব দেখে এ পর্যায়ে করুণ স্বরে বললেন মাহমুদা। বাবার কথা আসতেই তাহিয়া চোখ জলে ভরে গেল। ছলছল চোখে মায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে দ্রুত বেগে নিজের রুমে চলে গেল।

বাবার কথা মনে পড়লেই বুক ভেঙে কান্না আসে তাহিয়া। আজও ব্যতিক্রম হলো না। বালিশে মুখ গুজে অশ্রু বিসর্জনে মত্ত হলো। কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে গেল। ঘুম ভাঙল রাত ন’টার দিকে। চোখ খুলেই সন্ধ্যার ঘটনা মনে হলো। সর্বপ্রথম মাথায় এলো, কাল স্যার আসার আগে সমন্ধটা ফেরাতে হবে। মায়ের ভাব ভঙ্গিমায় বলা যায়, হাজার বললেও তিনি মেয়ের কথা আমলে নিবেন না। অভীকের সাথে বিয়ে দিয়েই ছাড়বেন। মাকে মানানোর ব্যর্থ চেষ্টা বাদ দিল তাহিয়া। একবার ভাবল নীলিমাকে বলবে, পরক্ষনেই মনে হলো, মাহমুদার মতো তিনিও মানবেন না হয়তো।

তাহিয়ার হুট করেই মনে পড়ল অবনীর কথা। অবনী, অভীকের বড়ো বোন। তাহিয়ার সাথে অবনীর বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে। খানিক ভাব আদান প্রদান আছে দুজনার মাঝে। আচ্ছা তাকে বুঝিয়ে বললে কেমন হয়? অবনী হয়তো নীলিমাকে বুঝিয়ে বিয়েটা আটকাতে পারবে। এমন ভাবনা থেকে ফোন হাতে নিয়ে অবনীর নাম্বার ডায়াল করল। বারকয়েক রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো। ফোন ধরেই অবনী চঞ্চল গলায় ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করল। তাহিয়া উত্তর দিল। কুশল বিনিময় শেষে অবনী বলল,
‘ তোর গলাটা কেমন যেন শুনাচ্ছে। সব ঠিকঠাক? ‘

তাহিয়া আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারল না।কাতর স্বরে বলল,

‘ আপু মাকে একটু বুঝাও না!’

‘কোন ব্যাপারে?’

‘মা দু’দিন ধরে কিসব বিয়ের আলাপ করছেন। বলছেন স্যারের সাথে না কি আমার বিয়ের ঠিক করেছেন তারা। ভালো লাগছে না এসব। ‘

‘বিয়েতে মত নেই তোর?’
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল অবনী। তাহিয়া তড়িৎ উত্তর দিল,
‘না। ‘

‘তুই আন্টিকে জানিয়েছিস?’

‘হ্যাঁ। মাকে জানানোর পর মা মামাকে ডেকে এনেছেন। দুজন মিলে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছেন আমায়। সেই সাথে বলছেন কাল না কি আংটিবদল হবে। আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। তুমি আন্টিকে বুঝাও না, যাতে বিয়েটা ভেঙে দেয়। প্লিজ আপু! আমি স্যারকে বিয়ে করতে পারব না। ‘ কাতর গলায় আকুতি করল তাহিয়া।

অবনী ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে তার বছর ছয়েকের ছেলে অয়নকে পড়াচ্ছে। অয়ন ক্লাশ ওয়ানে পড়ে। অভীকের বিয়ে উপলক্ষে আজ সকালে বাবার বাসায় এসেছে ছেলেকে নিয়ে মায়ের বাসায় এসেছে অবনী। অয়নের স্কুল মিস হয়েছে আজ। অয়নের সহপাঠী থেকে পড়া জেনে নিয়ে ক্লাশে পড়া শেষ করাচ্ছে ছেলেকে। পাড়ানোর ফাঁকে ফোনে কথা বলছিল। তাহিয়ার কাতর কথা নড়ে চড়ে বসল সে। কপালে চিন্তার ভাজ স্পষ্ট তার। কাল আংটিবদল, আজ পাত্রী বেঁকে গেল, চিন্তার ব্যাপার। অয়নের বই বন্ধ করে বলল, ‘আজ আর পড়া লাগবে না। যা।’

খুশিতে ডগমগ হয়ে শোবার গিয়ে টিভি ছেড়ে বসে পড়ল অয়ন। সেদিকে চেয়ে হাফ ছাড়ল অবনী। তখনই ফোন হাতে নিয়ে অভীককে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল। বসার ঘরে আসার সময় অবনীর উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে চাইল। তা লক্ষ্য করে অবনী মুখে আঙুল দিয়ে চুপ থাকতে বলল। তাহিয়ার উদ্দেশ্যে বলল,

‘ অভীকে বিয়ে করতে চাচ্ছিস না কেন?’

বোনের কান্ডে ভ্রু কুঁচকাল অভীক। হলদেটে টি-শার্টের সাথে কালো ট্রাউজার পরনে তার। ট্রাউজারের পকেটে দুহাজ গুজে ঘটনা বুঝার চেষ্টা করল। সেকেন্ড কয়েকে ঘটনা বোধগম্য হলো তার। কপাল চুলকে কিছু একটা ভাবল। তারপর বোনের পাশে বসে ইশারায় ফোন স্পিকারে দিতে বলল। তাহিয়ার আপত্তির কারণ তারও জানা প্রয়োজন। অবনী ফোন স্পিকার দিয়ে মুখের সামনে ধরল।

অপাশ থেকে উত্তর এলো,
‘ উনি আমার শিক্ষক, তাও একই ডিপার্টমেন্টের। অন্য ডিপার্টমেন্টের হলেও একটা কথা ছিল। আমি উনাকে কখনো শিক্ষক ছাড়া অন্য কোন নজরে দেখিনি। দেখা সম্ভব ও না। স্যার থেকে স্যাইয়্যা! আস্তাগফেরুল্লাহ। সবাই হাসাহাসি করবে এসব নিয়ে। আমি হাসির পাত্রী হতে পারব না। তা ছাড়া….

কথার মাঝে থেমে গেল তাহিয়া। অবনী তাড়া দিল,
‘তা ছাড়া কী?’

তাহিয়া গলা খাদে নামিয়ে বলল,
‘তা ছাড়া,তোমার ওই জাঁদরেল ভাইকে আমার পছন্দ নয়।’

অবনী তড়িৎ পাশ ফিরে ভাইয়ের দিকে তাকাল। অভীক নির্বিকার চিত্তে বসে আছে। যেন সে এমন কথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল। অবনী অবাক হলো। অভীকের মতো ছেলেকে জাঁদরেল বলছে অথচ অভীক নির্বিকার! আশ্চর্য! সে বিস্ময়ের সাথেই প্রশ্ন করল,

‘তা কাকে পছন্দ তোর?’

তাহিয়া তড়িৎ উত্তর দিল,
‘ রেহানকে পছন্দ আমার। ‘

‘এই রেহানটা কে?’
ভ্রু কুঁচকাল অবনী। তাহিয়া লাজুক হেসে বলল,
‘আমার প্রথম প্রেম।’
‘তো ওকে বিয়ে কর।’ অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলতে হলো অবনীকে।

‘থাকলে তো করতামই। ‘

‘থাকলে মানে? তোর সাথে এখন সম্পর্ক নেই?’

‘আমাদের কখনো সম্পর্ক হয়নি। প্রেম হয়েছিল দু’পক্ষের। প্রেমটা সম্পর্কে রূপ নেয়ার আগেই রেহান হারিয়ে গেছে। আমিই বোধহয় সময় নিয়ে ভুল করেছিলাম। মাশুল দিতে এত খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি। পেলে এখন নির্দ্বিধায় বিয়ে করে নিতাম। এতে অন্তত তোমার জাঁদরেল ভাইয়ের খপ্পর থেকে বাঁচতে পারতাম।’
মলিন স্বরে বলল তাহিয়া।

অবনী হাফ ছাড়ল। যাক, রেহান নামক তৃতীয় ব্যক্তি উপস্থিত নেই। সে কড়া স্বরে বলল,
‘তুই অভীককে জাঁদরেল বলছিল কেন বারবার!’

‘শুধু জাঁদরেল না আমরা তো আরো অনেক কিছু বলি, তুমি স্যারের বোন বিধায় তোমাকে বলতে পারছিনা। তাই ভালো শব্দটাই উচ্চারণ করছি।’ ব্যাঙ্গাত্মক গলায় বলল তাহিয়া।

অবনী ভাইয়ের দিকে তাকাল। অভীকের ভ্রু কুঁচকে আছে। রেগে যাচ্ছে বোধহয়। অবনী মজা পেল এতে। চোখ সরিয়ে প্রশ্ন করে গেল,
‘এইজন্যই ওকে তোর অপছন্দ?’
‘শুধু আমার নয়, আমাদের ডিপার্টমেন্টে সবার অপছন্দের পাত্র উনি। হাইস্কুলের স্টুডেন্টদের মতো ট্রিট করেন। একটু এদিক ওদিক হলে সিংহের মতো গর্জন করে উঠেন। গম্ভীর মুখভঙ্গি নিয়ে ঘুরেন, দেখলেই ভয় লাগে। এমন মানুষকে কারো পছন্দ হতে পারে, বলো তো!’

নির্দ্বিধায় বলে গেল তাহিয়া। অবনী অবাক হয়ে ভাইয়ের দিকে তাকাল। তার হাসিখুশি ভাইয়ের আরেক রূপ জানতে পারল আজ । ঠোঁট চেপে হেসে বলল,
‘তুই সিংহ মানে অভীকের খপ্পরে পড়েছিস না কি?’

‘কলেজে ভর্তির কিছুদিন পরেই একদিন পড়েছিলাম। পেছনে বসে কথা বলছিলাম। স্যার দেখে সিংহের অবতার সেজে ডেকে ওঠেছিল। আরে ভাই! ভার্সিটি লেভেলের ছাত্রী আমরা। এখন আমরা চিল করব। কথা বলেছি, দেখেছেন, ভালো কথা। সুন্দর ভাষায় বলবেন, “আমার ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের অমনোযোগীতা পছন্দ করি না। সামনে থেকে খেয়াল রাখবে।’ তারপর বসিয়ে দিবেন। ঘটনা রফাদফা। আমরা এর পর কথা বলতাম না।

তোমার গুনধর ভাই তা না করে ক্লাস সুদ্ধ ছাত্রছাত্রীদের সামনে কতগুলো কটু কথা শুনিয়ে দিয়েছিল। আমার জীবনে এত কথা কেউ শুনায় নি, তোমার ভাই যতটা শুনিয়েছে। রাগে দুঃখে কান্না পেয়ে গিয়েছিল। ইচ্ছেমতো অভিশাপ দিয়ে সেদিনই তোমার ভাইকে অপছন্দের তালিকায় ফেলেছিলাম। আজ সকালেও তোমার ভাই ভদ্র ভাষায় অপমান করেছে। আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়েছিল যেন চোখ দিয়েই খেয়ে ফেলবে। মীরা তো কতগুলো অভিশাপ দিয়েছে। একটাও কবুল হলে তোমার ভাই শেষ হয়ে যাবে।’

তাহিয়ার ধীর স্বরে বলা কথায় অবনী উচ্চৈঃস্বরে হেসে দিল। এ দুটোর বিয়ের পর কী হবে ভাবতেই হাসি পাচ্ছে তার। হাসতে হাসতে অভীকের দিকে তাকাল। অভীক গভীর মনোযোগ দিয়ে ফোন দেখছে। যেন সে তাহিয়ার কথায় শুনেই নি। অথচ অবনী নিশ্চিত তাহিয়ার বলা প্রতিটা কথা অভীক হজম করছে।
তাহিয়া দুঃখী গলায় বলল,

‘ তোমার ভাইয়ের ধমকের জোয়ারে আমরা ভেসে যাচ্ছি আর তুমি হাসছো!’

অবনী ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকাল। রগড় করে জিজ্ঞেস করল,
‘তা, কী কী অভিশাপ দিস তোরা? আমাকে ও বল!’

এ পর্যায়ে তাহিয়ার স্বর নরম হলো। ধীর স্বরে অনেকটা ফিসফিসিয়ে বলল,
‘তুমি স্যারকে বলবে না তো! প্রমিজ করো বলবে না।’

অবনী ভাইয়ের দিকে চোখ রেখে বলল,
‘বলব না। বল।’

আকস্মিক তাহিয়ার স্বর প্রফুল্লতায় ভরাট হলো। অপছন্দনীয় মানুষের বদনাম করতে পারার সুখে ভাসছে সে। প্রফুল্লচিত্তে আজ সকালে মীরার বলা সব অভিশাপের বর্ণনা দিল। সেই সাথে বলল,
‘এমন হাজারটা অভিশাপ আমিও দিয়েছিলাম। পুরো ডিপার্টমেন্টের ছাত্রছাত্রীদের বদদোয়ায় তোমার ভাই শেষ হয়ে যাবে। ‘

অবনী হাসির জন্য কথা বলতে পারছেনা। অভীকের দিয়ে তাকিয়ে হেসেই যাচ্ছে। অভীক চেহারায় গম্ভীর্যতা টেনে বসে রইল। তার চোয়ালে দেখা গেল বিস্ময়, রাগ। তার অগোচরে ছাত্রছাত্রীরা যে তার সম্পর্কে এমন মন্তব্য করে আজ তাহিয়ার কথা না শুনলে জানতেই পারতো না। অবনী হাসতে হাসতে বলল,
‘অভীকের সাথে তোর বিয়ের কথা চলছে। বিয়ে হয়ে গেলে তোর দেয়া অভিশাপ তোর উপরই বর্তাবে। ভাবতে পারিস, নিজের অভিশাপে নিজেই শেষ হয়ে যাবি।’

তাহিয়া গম্ভীরমুখে বলল,
‘এজন্যই তো আমি তোমার ভাইকে বিয়ে করব না। অন্যদিনের কথা বাদ দিলাম। আজ সকালে মীরা অভিশাপ কবুল হলে, স্যারের বউ হবে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ। আমি ভালো মানুষ, স্যারের বউ হয়ে খারাপ হতে চাইনা। শত শত ছাত্রছাত্রীদের অভিশাপে নিজের জীবন নরক করতে চাইনা। স্যারের সাথে বিয়ে হলে আমার পরিণতি কী হবে ভাবতেই আত্মা কাঁপছে আমার। না, বাবা! আমি এসব ঝামেলায় নেই। আমাকে ক্ষমা করো।’

‘মীরার দোয়া কবুল হলে তুই কিন্তু একটা অনুগত বর পাবি। যাকে তুই নাকে দড়ি বেধে নাচাবি, দৌড়ের উপর রাখবি। যে তোর সব কথা শুনবে। ভালো টালো ও বাসবে।’

অবনী চোখে মুখে উচ্ছ্বাস। অভীক এসব কথায় বোনের পাশে বসে থাকতে ইতস্ততবোধ করল। সে ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখে উঠে দাঁড়িয়ে হাটা ধরল। কিছুদূর গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। তাহিয়ার উত্তর এলো তখনি,
‘এমন অনুগত বর দরকার নেই আমার। তোমরা অন্য কাউকে দেখো। আমি ভালো মানুষ, খারাপ হতে চাই না।’
থেমে ব্যাঙ্গাত্মক ভঙ্গিমায় বলল,
‘ আর ভালোবাসবে তোমার ভাই! হাসালে। মাসখানেক আগে একদিন ফারদিন স্যারের ফক্সি ক্লাস করতে এসেছিলেন। ”রোমান্টিক পোয়েট্রি” বিষয়ের বই খুলে রোমান্টিক কবিতা পড়ালেন। ক্লাস শেষে আমরা বুঝতে পারলাম না ওটা রোমান্টিক কবিতা ছিল, না কি কোন রশহীন পত্রিকার কালাম। রোমান্টিক কবিতা কিভাবে পড়তে হয় সেটাই যার জানা নেই, তার দ্বারা আর যাই হোক ওসব প্রেম ভালোবাসা হবে না। ‘

অবনী রগড় করে বলল,
‘একদিন আমাদের বাসায় আয়, পেশাগত জীবনের বাইরে প্রাণবন্ত অভীকটাকে দেখে যাস। হয়তো প্রেমে টেমেও পড়ে যেতে পারিস।’

তাহিয়া তড়িৎ বলল,
‘এমন বিপজ্জনক মানুষের প্রেমে পড়তে চাই না আমি। বিয়ে ও করতে চাইনা। মাকে বুঝাতে পারছিনা। প্লিজ আপু তুমি আন্টিকে বুঝাও না! আন্টি যেন প্রস্তাব ফিরিয়ে নেন! আর কাল যেন আংটিবদলের উদ্দেশ্যে না আসেন। ‘

হাসি থামিয়ে গম্ভীর হলো অবনী। কিছু সময় ভেবে উত্তর দিল,
‘আমি মাকে বলব আন্টির সাথে কথা বলতে। তুই একবার অভীকের সাথে কথা বলে নিস।’
‘অসম্ভব! আমি স্যারের সাথে কথা টথা বলতে পারব না। তাইতো তোমায় কল করলাম।’ হকচকিয়ে উত্তর দিল তাহিয়া। অবনী প্রশ্নবিদ্ধ স্বরে বলল,
‘কেন পারবি না!’

‘তোমার সঙ্গিন ভাইকে দেখলেই ভয় লাগে কথা বলা তো দূরের কথা। আমি পারব না। পারলে তুমি স্যারকে বলে দিও, বিয়েতে আমার মত নেই। স্যার যেন বিয়ে ভেঙে দেয়। নাহলে দেখা গেল, আমার অভিশাপে তোমার ভাইয়ের সাথে আমার বাস…

বাক্য সম্পূর্ণ করতে পারল না তাহিয়া। অপাশ থেকে পুরুষালি কাশির শব্দ ভেসে এলো। কথা থামিয়ে ভ্রু কুঁচকাল তাহিয়া। স্বরটা অবনীর নয়। তাহলে কে? আঙ্কেল তো এখনো বাইরে থেকে ফেরার কথা না। তবে কে? নীলিমা আন্টিদের বাসায় পুরুষ বলতে দুজনই, আঙ্কেল আর স্যার। তারমানে এটা স্যার! স্যার সব শুনে নিয়েছেন! লজ্জায় কান গরম হয়ে এলো তাহিয়ার। কীসব বলছিল সে! এবার কী হবে! অবনীর প্রতি রাগ হলো। রাগত স্বরে বলল,
‘আপু এটা ঠিক নয়। তুমি কিন্তু আমাকে প্রমিজ করেছিলে।’

অবনী হেসে বলল, ‘আমি বলিনি। ফোন স্পিকারে ছিল তাই শুনে ফেলেছে। তা কথা শেষ কর। কী বলতে যাচ্ছিলি?’

স্যার কী ভেবে কেশে উঠেছে! সে তো ‘বাসায়’ বলতে চাচ্ছিল। স্যার কী অন্যকিছু ভেবেছেন। স্যারের ভাবনা সম্পর্কে ভাবতেই কেশে ওঠল তাহিয়া। লজ্জা ভয় অস্বস্তিতে ফোন কেটে দিল সে।

ফোন রেখে ঝঙ্কার তুলে হেসে উঠল অবনী। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল পেছনে অভীক দাঁড়ানো। দৃষ্টি ফোনে নিবদ্ধ। হাসি থামিয়ে বলল,
‘ তোকে তো কখনো কারো সাথে রাগারাগি করতে ও দেখিনি। তবে তাহিয়াদের সাথে এমন আচরণ করিস কেন!’

ফোন নজর রেখে অভীক বলল,
‘ সারাবছর গায়ে বাতাস দিয়ে ঘুরিয়ে বেড়িয়ে ছয়টা পরীক্ষার তিনটা পরীক্ষায় ফেইল আসা ছাত্রছাত্রীদের সাথে এর থেকে ভালো আচরণ আসে না আমার। ‘ অভীকের কন্ঠে চাপা রাগ।

অবনী ঘটনার আন্দাজ করতে পেরে ঠোঁট চেপে হেসে বলল,
‘ ভাই মাথা ঠান্ডা কর, এই পাজি মেয়েকে সামলাতে হলে তোর অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। তোকে কোমল হতে হবে, কঠোর হলে ওকে সামলাতে পারবি না। আমার তো ভয় লাগছে, মীরার অভিশাপ না লেগে যায়। দেখা গেল, ব্যাকবেঞ্চার বউয়ের ফলাফল দেখে সত্যি তোর মরণদশা হলো।’

ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অভীক বলল,
‘দুনিয়ার এত মেয়ে থাকতে ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে পাজি আর বোকা ছাত্রীকে আমার জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পছন্দ হতে হলো মায়ের! এখন গাধাকে পটিয়ে কিভাবে ঘোড়ায় রূপ দিয়ে গিয়ে আমার টাক না হলেই হয়। ‘

নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেল অভীক। তার যাওয়ার পানে চেয়ে অবনী মৃদু হাসল। ভাইয়ের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস, অভীক ঠিক সব গুছিয়ে নিতে পারবে।

আকাশের বুকে লক্ষ তারার মেলা বসেছে, মাঝে মস্ত বড়ো চাঁদ। যা রূপালী আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে অবিরত। বারান্দায় মাঝের লবি চেয়ারে বসে গুনগুন করছে তাহিয়া। দৃষ্টি আকাশ পানে। মন থেকে চিন্তার পসরা সরে গিয়ে প্রশান্তিরা উঁকি দিয়েছে। অবনীর সাথে কথা বলে ফোন রাখার পর কিছুক্ষণ লজ্জায় চোখমুখ খিচে বসে রইল। পরবর্তীতে স্যারের মুখোমুখি হবে কিভাবে সেই চিন্তা এসে হানা দিয়েছিল মস্তিষ্কে। খানিক বাদে হঠাৎ মনে হলো অভীক শুনেছে ভালোই হয়েছে। এতসব শুনে নিশ্চয়ই স্যার বিয়ে করতে রাজি হবেন না। নিজ থেকেই বিয়ে ভেঙে দিবেন। এমন ভাবনা মনে উঁকি দিতেই খুশির রেখা দেখা গেল চেহারায়। মন থেকে চিন্তা সরে গিয়ে প্রফুল্লতায় মেতে উঠল। বিয়ে ভাঙার সংবাদের অপেক্ষায় রইল।

আরামদায়ক ঘুমে রাত পার করল। ঘুম ভাঙল মায়ের ডাকে। চোখ খুলে ভাবল, এতক্ষণে নিশ্চয়ই স্যার বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন। মা সেই খবর দিতেই জাগাচ্ছেন। তড়িৎ লাফিয়ে উঠে দরজা খুলল। মায়ের ফ্যাকাশে মুখ দেখার অপেক্ষায় ছিল সে। কিন্তু মায়ের পরিবর্তে দরজায় দাঁড়ানো অবনীর চঞ্চল চেহারা নজরে এলো তার। তাহিয়া অবাক হয়ে বলল,
‘আপু তুমি!’

অবনী এক গাল হেসে বলল,
‘আমার একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র বিয়ের আংটিবদল, আমি আসব না! ‘

তাহিয়া নির্বাক হয়ে গেল। খানিক বাদে হকচকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘কিসের আংটিবদল? আমি বিয়েতে রাজি নই। তুমি আন্টিকে বলো নি!’

অবনী রুমে ডুকে খাটে এসে বসল। তারপর মলিন স্বরে বলল,
‘মাকে বুঝিয়েছি, কাজ হয়নি। উলটো ধরে বেধে এখানে নিয়ে এসেছে। আজ বাগদান হবে তোদের।’

তাহিয়া করুণ গলায় বলল,
‘স্যার কিছু বলেনি?’
অবনী কথা ঘুরিয়ে বলল,
‘অভীক আসেনি, শুধু আমি আর মা এসেছি।’

অবনীর কথা তাহিয়ার কর্ণকুহরে পৌঁছল কি না বুঝা গেল না। নিশ্চল হয়ে বসে রইল সে। তাহিয়াকে পরখ করে উঠে দাঁড়াল অবনী। খাটে বসিয়ে পাশে বসল। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘অভীক প্রাণবন্ত ছেলে। পেশাগত কারণেই গম্ভীর শুধু। মুদ্রার এপিট ওপিঠের মতো ওর অন্য রূপ আছে। এক রূপ দেখে পুরোটা বিচার করিস না। পেশাগত জীবনের বাইরে অভীককে চেনার চেষ্টা কর, দেখবি তোর ধ্যান ধারণা পাল্টে যাবে। তাও যদি তোর মনে হয় বিয়েতে তোর মত নেই তবে বিয়ে ভেঙে দিস। বাগদান মানেই বিয়ে নয়, বাগদানের পর বিয়ে ভাঙা যায়। এখন কোন ঝামেলা করিস না, সময় নে। এর মাঝে আমি মা আন্টিকে আরো বুঝানোর চেষ্টা করব। মন খারাপ করিস না।’

তাহিয়া শূন্য চোখে তাকাল অবনীর দিকে। অবনীর ফোন বেজে উঠল তখন। রিসিভ করে সেকেন্ড দশেক কথা বলল। তারপর ফোনটা তাহিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘ নে, অভীক কথা বলবে তোর সাথে।’

ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠল তাহিয়ার, স্যার কী কথা বলবেন! কাঁপন ছড়িয়ে গেল সারা গতরে। কাঁপা স্বরে বলল,
‘ক্কী ক..ত্থা ব্বলব্বে!’ তাহিয়ার কথা জড়িয়ে গেল।

উত্তরে তাহিয়ার হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে অবনী বলল,
‘ তুই শুনে দেখ কী বলতে চায় অভীক। তোরা কথা বল, আমি দেখি অয়ন কী করছে।’ রুম থেকে বেরিয়ে গেল অবনী। কিছুক্ষণ অসাড় হয়ে বসে থেকে ফোন কানে তুলল তাহিয়া। কোমল পুরুষালি স্বর ভেসে এলো,
‘তাহিয়া, আছো?’

ভয়ে হৃদপিণ্ড লাফিয়ে উঠল তাহিয়ার। অভীক সবসময় ‘আপনি’ সম্বোধন করে। আজ হঠাৎ তুমি সম্বোধন করায় খানিকটা ভড়কে গেল। অস্বস্তিতে চেয়ে গেছে মুখ। স্বর যেন হরতাল ডেকেছে। রা বের হচ্ছে না। সে কথা বলতে পারল না, নিজের উপস্থিতি জানান দিতে গলা খাঁকারি দিল।

অভীক লম্বা শ্বাস টেনে কোন ভণিতা ছাড়াই বলল,
‘ ছাত্রী ছাড়া তোমাকে বিশেষ নজরে ইতঃপূর্বে দেখা হয়নি আমার। ছাত্রীকে বিয়ে করার ব্যাপারে খানিকটা আপত্তি ছিল আমার। মাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। মা আমার জীবনসঙ্গিনী হিসেবে তোমাকে বেছে নিয়েছেন। মায়ের চোখে এই বিয়ে নিয়ে খুশির রেখা দেখে সেই আপত্তিটা মনেই দমিয়ে রাখতে হয়েছে। মায়ের বিরুদ্ধাচরন করার কথা ভাবতে পারিনা আমি। বলা যায়, অনেকটা মায়ের জন্যই বিয়েতে মত দিতে হয়েছে। ‘

থামল অভীক। তাহিয়া ইতস্ততভাবে শুনে গেল। খানিক সময় বাদে অভীক আবার বলা শুরু করল,

‘বিয়েতে তোমার আপত্তির কথা জানার পর আমি মা, আন্টি দুজনের সাথে কথা বলেছিলাম। তোমার আপত্তির কথা শুনে মা আজকের বাগদান বাতিল করতে চেয়েছেন। কিন্তু আন্টির আপত্তির জন্য পারেন নি। আন্টি দৃঢ়তার সাথে জানিয়েছেন, আজ বাগদান হবে। তার সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তিও দাঁড় করিয়েছেন। যা আমি তোমাকে বলতে চাচ্ছিনা। আন্টির জোরাজোরিতে আজ মাকে যেতে হলো। তোমার অমতের দিকে লক্ষ রেখেই আমার যাওয়া হয়নি। এখন ফোন দিয়ে আন্টি জোর করছেন যেতে। আন্টির বক্তব্য অনুযায়ী, আমি গেলে আজই বাগদান সম্পন্ন হবে। এখন তুমি কি চলমান পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিবে? না কি আন্টির সাথে কথা বলে সমাধানের পথ খুঁজবে? যদি মানিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নাও, তবে আমাকে তোমাদের বাসায় আসতে হবে। ‘

অত্যন্ত শান্ত গলায় কথাগুলো বলে থামল অভীক। ইতঃপূর্বে অভীকের এই শান্ত স্বর শোনা হয়নি তাহিয়ার। এতে কিছুটা অবাক হলো। সেই সাথে দ্বিধায় পড়ল। নেতিবাচক উত্তর মনে সাজানোই আছে, কিন্তু গলা দিয়ে কথা বেরুচ্ছেনা। অগত্যা নিরবতায় গা মাড়াল। তার নিরবতা দেখে অভীক প্রশ্ন করল,
‘আমি কি আসব? ইতিবাচক নেতিবাচক যাই হোক নির্দ্বিধায় উত্তর দাও। বিয়েটা ছেলেখেলা নয়, সারাজীবনের প্রশ্ন। তাই যা উত্তর দিবে, ভেবেচিন্তে দিবে।’

তাহিয়া চিন্তার সাগরে ডুব দিল। ফোনের অপাশে উত্তরের অপেক্ষা চেয়ে রইল অভীক।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here