#প্রেমোদ্দীপক। (পর্ব-১৩)
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা
হাসপাতালের করিডোরে বসে মুখে হাত চেপে অনবরত কেঁদে যাচ্ছে তাহিয়া। তার দু’পাশের দুটোর চেয়ারের একটায় বসেছে তুহিন, অন্যটায় অভীক। মাহমুদাকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাসপালের আসার সময়টা ঘন্টাখানেক পেরিয়েছে। তাহিয়া বিধ্বস্ত হয়ে সেই তখন থেকেই কেঁদে যাচ্ছে। মায়ের অবস্থা দেখে ভীষণ ভয় পেয়েছে সে, ভেবেছিল আজ মাকে হারিয়ে ফেলবে। সেই ভয় এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অভীক গম্ভীর ভঙিমায় বসে আছে, খানিক পরপর আড়চোখে তাকাচ্ছে। এত আবেগী কেন মেয়েটা!
তুহিনের মুখটা চিন্তায় অস্থির। নিজেরই বুক কাঁপছে। তবুও সে নিজের অস্থিরতাকে প্রাধান্য না দিয়ে বোনকে সান্ত্বনা দিল,
‘আপু কাঁদিস না, মা ঠিক হয়ে যাবে। এভাবে কেঁদে তুই-ই অসুস্থ হয়ে যাবি। একটু শান্ত হ।’
তুহিনের কথা তাহিয়ার কর্ণকুহরে পৌঁছল কি না বুঝা গেল না। তার অবস্থার কোন পরিবর্তন হলো না।
তাহিয়া-তুহিনের সম্পর্কে ঝগড়ার সেতুতে দাঁড়িয়ে আছে। ঝগড়া ছাড়া ভালো কথা হয়না তাদের। মাহমুদার বদ্ধমূল ধারণা, তার ছেলেমেয়ে দুটোর মাঝে রক্তের টান নেই। নাহয় ভাই বোন এত ঝগড়া কিভাবে করে। একজন একজনকে হেয় করে কথা বলেই যেন মজা পায়। তুহিনকে প্রায়শই রেগে বলতে শোনা যায়, তুই আমার শত্রু। আমি একদিন তোকে মেরে ফেলব।
অথচ আজ বোন নামক সেই শত্রুর চোখের পানিটাও সহ্য হচ্ছে না তুহিনের। বোনের কান্নাটা পীড়া দিচ্ছে তাকে। মায়ের অসুস্থতায় যতটা কষ্ট লেগেছে, বোনের কান্নায় ততটাই ব্যাথা অনুভব করছে বুকে। তাহিয়া যখন ওর সাথে তুমূল ঝগড়া করে, রাগের বশবর্তী হয়ে তার গায়ে হাত চালায়। তখনও এতটা কষ্ট হয়না।
দুনিয়ার কোন জিনিসটা এনে দিলে বোনের কান্না থামবে, হন্য হয়ে খুঁজে সেই জিনিসটা এনে বোনের হাতে দিতে ইচ্ছে করছো তুহিনে। তবুও কান্না থামুক। তার চঞ্চল বোনের চোখে পানি মানায় না, একদমই না। তাকে হাসলে সুন্দর দেখায়। বোনকে হাসতে দেখে প্রায়শই তুহিন মনে মনে বলে, ‘হাসিতে যদি নাম্বার দেয়া হয়, তবে তুই দশে দশ পাবি। ‘ অথচ মুখে বলে, তোর হাসিটা পেত্নীর মতো।
তাদের ঝগড়া আড়ালে যে একটা গাঢ় টান আছে, সেটা এখন প্রকাশ পাচ্ছে।
সাধারণত, তাহিয়ার সাথে তুহিন কোমল স্বরে কথা বলে না। সবসময় রাগ বা ব্যাঙ্গাত্মক থাকে তার গলা। আজ যেন বোনকে রাগ দেখানো মানা তার। বিগত কয়েক বছরে আজ প্রথম বারের মতো কোমল স্বরে কথা বলল তুহিন,
‘রাতে তোর ঘুমটা ভালো হয়নি। ঘুম না হলে তো তোর মাইগ্রেনের ব্যাথা উঠে যায়। তাড়াহুড়ায় চশমাটাও আনিস নি। একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর! আমি আর ভাইয়া জেগে মায়ের খবর নিব। কান্না বন্ধ করে একটু ঘুমা, আপু! অসুস্থ হয়ে যাবি তো!’ শেষে কথা গুলো বোনের কাধে হাত রেখে অভয় দিয়ে বলল তুহিন।
তাহিয়ার আজ তুহিনকে ভীষণ আপন লাগল। রক্তের টান কথা বলল যেন। মুখ থেকে হাত সরিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল । কিশোর তুহিন যেন আকস্মিক বড়ো হয়ে গেল, তাহিয়ার বড়ো ভাইয়ের ভূমিকায় চলে গেল। বোনকে আগলে ধরল। বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে অভয় দিল,
‘কাঁদিস না। আল্লাহ, আমাদের মাকে ঠিক করে দিবে। মায়ের কিছু হবে না। প্লিজ, কান্না বন্ধ কর আপু! আমার খারাপ লাগছে।’
তাহিয়ার কান্নার মাত্রা খানিকটা কমে এলো। তুহিন বলল,
‘আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, তুই ঘুমা। আমি আছি তোর পাহারায়।’
তুহিন বয়সে ছোটো হলেও দৈহিক গড়নে তাকে নির্দ্বিধায় তরুণ সাদৃশ বলা যায়। এত অল্প বয়সে পাঁচ ফুট সাত পেরিয়ে গেছে। তাহিয়ার বাবা ছিল লম্বা চওড়া মানুষ, ছেলে বাবার গড়নই পেয়েছে।
ভাইয়ের শক্তপোক্ত কাধে জায়গা হলো তাহিয়ার। তুহিন আলতো হাতে বোনকে আগলে রেখেছে। ভাই-বোনের আসল সংজ্ঞাটা এতক্ষণে প্রকাশ পেয়েছে যেন। ভালো সময়ে ঝগড়া করো, খারাপ সময়ে ঢাল হয়ে থাকো।
এই চমৎকার দৃশ্য বিমোহিত করল অভীককে। তুহিনের মাঝে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেল। অবনীর বিয়ের আগে সারাক্ষণ তারা ঝগড়া করতো, কিন্তু দুজনের একজনের যদি সামান্য জ্বর হয়, তবে বাবা মায়ের থেকে বেশি অন্যজন অস্থির হতো। রাত জেগে সেবা করতো, একটু ভালো হলে আবার ঝগড়া করতো। ভাই-বোনের সম্পর্কটাই বোধহয় এমন। টক,মিষ্টি, ঝালের মধুর একটা সম্পর্ক। ভাই-বোনের চমৎকার দৃশ্য দেখে মনের মেঘ সরে গেল।
ফোঁপাতে ফোপাঁতে জ্ঞান হারাল তাহিয়া। তুহিন ভেবেছে তাহিয়া ঘুমিয়ে গেছে। সে অভীকের উদ্দেশ্য বলল,
‘আপু এভাবে কিছুক্ষণ থাকলে ঘাড়ে ব্যাথা পাবে। আপনি কি দেখবেন, কোন খালি কেবিন আছে কি-না?’ তুহিনের স্বরটা একবারেই ক্ষীন। তার কথার শব্দে আবার বোন না জেগে যায় এই নিয়ে বেশ সতর্ক সে।
অভীক উঠে দাঁড়াল। তুহিনের ঝাকড়া চুল ভরতি মাথায় হাত রেখে হেসে বলল,
‘আমি দেখছি। তুমি নিশ্চিন্তে বসো।’
অভীক চলে গেল। ঘুরে ফিরে একটা কেবিন খালি পাওয়া গেল। কেবিনটা এখনো বুক হয়নি। বুক হওয়ার আগ অবধি থাকা যাবে। অভীক এসে তুহিনকে জানাতেই তুহিন বোনকে কোলে তুলে নিতে ধরল। অভীক থামিয়ে বলল,
‘তুমি ছোটো মানুষ, পারবে না। আমি নিয়ে যাচ্ছি। তুমি একটু বিশ্রাম নাও।’
আলতো হাতে তাহিয়াকে কোলে তুলে কেবিনের দিকে নিয়ে গেল। তাদের যাওয়ার পানে চেয়ে তুহিন বিড়বিড়াল,
‘আল্লাহ, আমার জীবনের দুই নারীকে ভালো রেখো, অনেক ভালো রেখো। আমার ভালোটাও তাদের দিও। ওদের খারাপ যে আমার সহ্য হয়না, বুকটা ভারি হয়। দম আটকে আসে।’
★
অনিবন্ধিত কেবিনের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল অভীক। সিঙ্গেল বেডের কাছে গিয়ে চোখ নামিয়ে এক পলক তাকাল তার কোলে ঘুমিয়ে থাকা শ্যামবতীর পানে। কান্নার প্রভাবে চোখ ফুলে গেছে, চোখ থেকে জলপ্রপাত ধারায় বেয়ে চলা অশ্রুতে বাদামী গাল ভিজে জবজবে হয়ে আছে। গায়ে কফি কালার পাতলা টি-শার্ট, কালো প্রিন্টেড প্লাজো, গলায় ওড়না প্যাচানো। গলার কাছে ওড়নাটা ভিজে আছে, চোখের নোনাজলে। খোলা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পিঠে ছড়িয়ে আছে। যেভাবে ঘুমিয়েছে ওভাবেই চলে এসেছে বোধহয়। ড্রেসটা অবধি পরিবর্তন করেনি। কেমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে! অল্পতেই ভেঙে পড়ে মেয়েটা। কোথায় ছোটো ভাইটাকে সামলাবে, উলটো ছোটো ভাই ওকে সামলাচ্ছে।
চোখ সরিয়ে বেডের দিকে তাকাল। বেডটা ভালো করে পরখ করে আলতো করে বেডে শুইয়ে দিল। তাহিয়া নড়েচড়ে উঠল। অভীক শিয়রে বসে বিলি কাটল মাথায়, আদুরে হাতে। আবার ঘুমিয়ে পড়ল তাহিয়া। অভীক হাফ ছাড়ল। মেয়েটা এখন জেগে থাকলে, ওকে দেখে কাঁপা-কাঁপি ঘামাঘামিতে ব্যস্ত হয়ে যেত। এই একটা কাজই মেয়েটা নিঁখুতভাবে করতে পারে।
স্বামী হওয়ার সাথে সাথে সে একজন জামাতা। স্বামীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জামাতা হওয়ার দায়িত্ব ও পালন করতে হবে, এই মননে উঠে দাঁড়াল। মাহমুদার কী অবস্থা তা দেখা জুরুরি। তুহিন বাচ্চা ছেলে। মায়ের দেখাশোনা, ডাক্তারদের সাথে আলাপ আলোচনা এসবের দায়ভার বইতে পারবে না। জামাতার ভূমিকায় অভীক থাকতে অন্তত তুহিনকে এত দায়ভার কাধে নিতে হবে না।
দরজা অবধি গিয়ে আবার ফিরে এলো অভীক। মেয়েটা এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে, দৃষ্টিকটু লাগছে। কেউ হুটহাট চলে এসে তার স্ত্রীকে এমন এলোমেলোভাবে দেখুক, এমনটা চায় না অভীক। আশপাশে চোখ বুলিয়ে কিছু একটা খুঁজল। ব্যর্থ হয়ে আবার তাহিয়ার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল। ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভেবে হাত বাড়াল তাহিয়ার দিকে। সচেতন ভাবে তাহিয়ার গলা থেকে ওড়না খুলে নিল। ওড়নাটা মেলে স্বস্তিবোধ করল, ওড়নাটা বেশ বড়ো এবং মোটা কাপড়ের। ভাগ্যিস আজ স্কার্ফ পরেনি। খানিকটা ঝুঁকে ওড়নাটা দিয়ে তাহিয়ার গলা থেকে মাথা অবধি ঢেকে দিল। কপাল আর গলায় চুল এসে পড়েছে, চুল সরিয়ে দিল। কাত হওয়া ঘাড়টা সোজা করে সটান দাঁড়াল। রুমের ফ্যান ছেড়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে।
করিডোরে ফিরে এসে দেখল তুহিন চেয়ারে শরীর এলিয়ে বসে আছে। ক্লান্তময় গতর নেতিয়ে পড়ার উপক্রম। অভীক তুহিনের কাছে গিয়ে বলল,
‘ তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে তুহিন। কেবিনে দুটো বেড আছে, তুমি একটায় গিয়ে শুয়ে পড়ো। আমি জেগে থেকে আন্টির খোঁজ নিব।’
সোজা হয়ে বসল তুহিন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘এখন ঘুম আসবে না।’
অভীক তুহিনের পাশে বসল। ধীর স্বরে বলল,
‘তাহিয়া বড্ডো আবেগী, অল্পতেই ভেঙে পড়ে। দেখলে না কেমন কাঁদল! তুমি যথেষ্ট শক্ত এবং সাহসী। মনোবল ঠিক রাখো। ভেঙে পড়ো না। আন্টিকে সাহস জোগাতে হবে তো। আন্টির যা অবস্থা, আমার আন্দাজ মাফিক কালই হয়তো সার্জারি করে ফেলতে হবে। হাসপাতালে থাকতে হবে, ঘুমানোর সুযোগ পাবে না। আন্টির সামনে নিজেকে ঠিক রাখতে হবে তোমার, আন্টির সাথে সাথে তাহিয়াকে ও সাহস জোগাতে হবে। ও ভেঙে পড়ছে, এখন তুমিও যদি ভেঙে পড়ো তবে কেমন হবে বলো? জ্ঞান ফেরার পর তোমাদের দেখে আন্টি আরও অসুস্থ হয়ে যাবেন। ‘
তুহিন মলিন হাসল। অভীক কাধ চাপড়ে বলল,
‘কাল অনেক ধকল যাবে। তার জন্য এনার্জি দরকার হবে। না ঘুমালে শরীর দুর্বল হয়ে যাবে। যাও, এখন কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নাও। আমি আছি এখানে। নিশ্চিন্তে যাও।’
তুহিন যেতে চাইল না। শেষে অভীক যখন বলল,
‘তাহিয়া একা। ওর একা থাকা অনিরাপদ লাগছে আমার, তুমি গেলে একটু স্বস্তি পাব। ঘুমোতে হবে না, শুধু গিয়ে তাহিয়াকে পাহারা দাও। আবার কে না কে এসে ঢুকে পড়ে।’ এতেই কাজ হলো। তুহিন গেল বোনের কাছে। অভীক লম্বা শ্বাস ফেলল।
আমাদের সমাজে বিয়ের পর শুধু মেয়েদের কাধে শ্বশুর শ্বাশুড়ির দেখাশোনার দায়ভার তুলে দেয়ার প্রথা আছে। কিন্তু একটা ছেলেকে শ্বশুর শ্বাশুড়ির দেখাশোনার দায়ভার দেয়া হয়না। কালেভাদ্রে একটা কল, আর শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় কয়েক কেজি ফল নেয়া মানেই জামাতার দায়িত্ব শেষ।
অভীকের ধারণা, শ্বশুর শ্বাশুড়ির প্রতি একটা ছেলের তেমনই দায়িত্ব আছে, যেমনটা একটা মেয়ের থাকে। বরং বেশি থাকা উচিত, কারণ শ্বশুর শ্বাশুড়ি থেকে তাদের মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে শ্বশুর শাশুড়ির দেখাশোনার সুযোগ কেড়ে নেয়, ছেলে তো নিজের বাবা মায়ের ভালো মন্দ দেখার সুযোগ পায়, সংসার ভার বইতে গিয়ে মেয়ে সেটাও পায়না। অভীকের নিজস্ব ভাবনা থেকেই শ্বাশুড়ির দেখাশোনার দায়ভার নিজের কাধে নিয়ে নিয়েছে।
দায়িত্ববোধ থেকে তুহিন যাওয়ার পরপর ডাক্তারের সাথে দেখা করল। ডিউটি ডাক্তার দেখছেন মাহমুদাকে। অভীক গিয়ে অবস্থা জানতে চাইল, ডাক্তার কিছু টেস্ট দিলেন। টেস্ট করে বুঝা যাবে হার্টে নতুন কোন সমস্যা হয়েছে কি না। অভীক নিজ উদ্যোগে সব টেস্ট করাল। এরপর মাহমুদাকে ঘুমের কেবিনে শিফট করে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অভীক রিপোর্ট নিয়ে গেল ডাক্তারের কেবিনে। ডিউটি ডাক্তার মনিরুজ্জামান রিপোর্ট দেখে জানালেন, অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। যত দ্রুত সম্ভব সার্জারি করানো উচিত। সকালে কার্ডিওলজিস্ট আসলে তার সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্তে যাবেন।
জবাবে অভীক বলল,
‘আপনাদের যা ভালো হয় করুন, শুধু আন্টির যেন ক্ষতি না হয়। কোন মৃত্যুঝুকি নেই তো!’
মনিরুজ্জামান বললেন,’ নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না।’
আতঙ্কে ছেয়ে গেল অভীকের চোখ মুখ। তুহিন আর তাহিয়ার চেহারা ভেসে উঠল চোখের সামনে। মাহমুদার কিছু হলে ছেলে মেয়ে দুটো নিঃশেষ হয়ে যাবে। তুহিন তাও নিজেকে সামলে নিতে পারবে, কিন্তু তাহিয়া! মায়ের সামান্য অসুস্থতায় কেঁদে জ্ঞান হারাবার জো মেয়েটার। মায়ের কিছু হলে মেয়েটাকে ও বাঁচানো যাবে না বোধহয়। আর ভাবতে পারল না অভীক। আতঙ্কিত স্বরে বিড়বিড় করল,
‘আল্লাহ, রক্ষা করো।’
ডাক্তারের উদ্দেশ্যে বলল,
‘যত টাকা প্রয়োজন আমি দিতে রাজি, শুধু রোগী যেন বিপদমুক্ত হয়। একটু দেখুন! ‘ অনুরোধ ঝরে গেল অভীকের স্বরে। মনিরুজ্জামান আশ্বাস দিলেন।
সকালে কার্ডিওলজিস্ট এসে মাহমুদার অবস্থা দেখে জানালেন, একদিন অবজারভেশনে রেখে তারপরদিন সার্জারি করাবেন। এখন সার্জারি করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
★
‘তাহিয়া, উঠো!’ পুরুষালি স্বরের ডাকে ঘুম ভাঙল তাহিয়ার। চোখ খুলে চারদিক তাকিয়ে নিজের অবস্থান বুঝার চেষ্টা করল। নিজেকে শুভ্র বর্ণের তুলতুলে বিছানায় আবিস্কার করল।
‘অবশেষ ঘুম ভেঙেছে তোমার! যাও, ফ্রেশ হয়ে আসো। ‘ সেই স্বরটা এসে আবারও কানে বাজল তাহিয়ার। নজর ঘুরাতেই ধূসর ন্যানো চিনো গ্যাবার্ডিন প্যান্টের সাথে বাদামী টি-শার্ট পরিধেয় অভীক দৃষ্টিগোচর হলো। কেবিনে দুটো বেড। একটায় ও শুয়ে আছে, আরেকটায় অভীক। দৃষ্টি ওঁর দিকেই নিবদ্ধ। আকস্মিক মায়ের কথা স্মরণে এলো তাহিয়ার। ও তড়িৎ উঠে বসে অস্থির ভঙিমায় বলল,
‘মা কোথায়? আমি মায়ের কাছে যাব।’
অভীক উঠে এলো। তাহিয়ার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
‘আন্টি অন্য কেবিনে আছেন। ঘুমাচ্ছেন। এখন কারো যাওয়া নিষিদ্ধ।’
‘মা, ঠিক আছেন? ডাক্তার কী বলল?’ উদ্ধিগ্ন হয়ে উঠে দাঁড়াল তাহিয়া। ওড়না পড়ে গেল গা থেকে।
অভীক চোখ সরিয়ে বলল,
‘ডাক্তার বলেছেন, চিন্তার কিছু নেই। হার্টের রোগীদের এমন হয়, স্বাভাবিক ব্যাপার।’
আসল কথা চেপে গেল অভীক। কোমল হৃদয়ের মেয়েটা ভেঙে পড়বে বলে। তাহিয়া কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলো। দরজার দিকে পা বাড়িয়ে বলল,
‘চলুন।’
অভীক তাহিয়ার হাত ধরে বসিয়ে দিল বিছানার উপর। তারপর বাড়তি বিছানার উপর থাকা এক কালো পলিথিন আর ছোটো ফ্লাক্স নিয়ে এলো। তাহিয়া ভ্রু কুঁচকাল,
‘এসব কী! কোথা থেকে এসেছে।’
অভীক পলিথিন থেকে একটা ওয়ান টাইম কাপ বের করে ফ্লাক্স থেকে চা ঢালতে ঢালতে বলল,
‘মা এনেছেন। নাস্তা করে নাও, তারপর আন্টির কাছে যাবে। ‘
তাহিয়া মাথা নাড়াল,
‘খেতে ইচ্ছে করছে না।’
অভীক পলিথিন থেকে একটা পরোটা বের করল। রোল করার ফাঁকে গম্ভীরমুখে বলল,
‘এই মুহুর্তে তোমাকে ধমক দিতে আমারও ইচ্ছে করছে না। চুপচাপ খাও। না খেয়ে এক পাও নড়তে পারবে না তুমি।’
‘সত্যিই আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।’ মাথা নাড়িয়ে বলল তাহিয়া। অভীক তাহিয়ার পাশে বসে পরোটার রোলটা চায়ে চুবাল। তাহিয়ার মতো করে মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘সত্যিই আমার ধমক দিতে ইচ্ছে করছে না।’
এরপর চা থেকে রোল উঠিয়ে তাহিয়ার মুখের সামনে বাড়িয়ে দিল। তারপর বলল,
‘খেতে হবে না। শুধু পরোটায় কামড় দিয়ে চিবোবে। ব্যাস। আমার কাজ শেষ, তারপর খাওয়া না খাওয়া তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ‘
অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুখ খুলল তাহিয়া। এক কামড় গিলে বলল,
‘তুহিন খেয়েছে?’
‘হ্যাঁ।’
‘আপনি?’
ধীর স্বরে বলল তাহিয়া। অভীক খুশি হলো বোধহয়। কেমন করে হাসল! মেয়েটা সহজ হতে শুরু করেছে। সে বলল,
‘ তুমি ছাড়া সবার খাওয়া শেষ।’
পরপরই বলল,
‘আন্টিকে দেখে বাসায় যাবে তুমি। ‘
তাহিয়ার মুখে পরোটা ছিল। উত্তর দিতে পারল না। শুধু মাথা নাড়ল। অভীক বলল,
‘ এই ড্রেসাপে হাসপাতালে ঘুরবে তুমি?’
তাহিয়া নিজের দিকে তাকাল। তারপর অভীকের দিকে। লোকটা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসছে। হাসিটা হৃদয় নাড়া দিল, লজ্জার আভা ছড়িয়ে দিল মুখে। মুখের খাবারটা শেষ, আর নিল না তাহিয়া। অভীক শব্দ করে হেসে দিল। হেসে বলল,
‘ লজ্জার অধ্যায় পরে পড়ে নিও, এখন খাও। দেরি হচ্ছে, কেবিনটা যখন তখন বুক হয়ে যেতে পারে। এখন সসম্মানে না গেলে তখন নার্সের কটু কথা শুনে অসম্মানে যেতে হবে। ‘
তাহিয়া ওড়না গলায় প্যাঁচিয়ে মুখে নিল পরোটা। অভীক হাসি থামিয়ে বলল,
‘দুটো কারণে বাসায় যেতে হবে তোমাকে। এক, তোমাদের কাজের মেয়েটা বাসায় একা আছে। সে তোমাদের বাসায় থাকাকালীন সময়ে তার ভালো মন্দ দেখা তোমাদের দায়িত্ব। একা বাসায় থাকা সেফ না। কত কী ঘটে আজকাল। তাই তাকে নিয়ে আসতে হবে।
দুই, তোমার ড্রেসাপ বদলাতে হবে। সেই সাথে আন্টির কাপড় চোপড় নিতে হবে। গোসল সেরে নামাযে দাঁড়াবে, কান্না টান্না যা করার সেজদায় করবে। আন্টির সুস্থতার দোয়া করবে। সন্তানের দোয়া কবুল হয়। তারপর লম্বা ঘুম দিবে, লাঞ্চের পর আসবে একবারে। আমি নিতে যাব।’
‘কিন্তু হাসপাতালে?’
‘আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসব। আমি থাকব, তুহিন আছে, মা আছে, তোমার মামা আসছেন।’
তাহিয়া কথা বাড়াল না। বস্তুত, বাসার বাইরে এই গেঞ্জি-প্লাজোতে যাওয়া হয়না। অস্বস্তি অনুভব করে, এখনো করছে। তাড়াতাড়ি বদলানো উচিত। খাওয়া শেষ করে মায়ের কাছে বসল কিছুক্ষণ। তারপর নীলিমার সাথে কথা বলে বেরিয়ে গেল। অভীক বাসার গেটে নামিয়ে দিল। নিত্যকার নিয়মে দাঁড়িয়ে রইল তাহিয়ার ফোনের অপেক্ষায়। ফোন পেয়ে আবার ছুটে এলো হাসপাতালে।
*
বাসায় ফেরার পর রিনার সাথে তুমুল ঝগড়া হয়ে গেল তাহিয়ার। রিনা টিভি দেখছে, তাহিয়া টিভি বন্ধ করে রান্না বসাতে বলেছে। রিনা তার কথা না শুনে টিভি দেখতেছিল। মায়ের অসুস্থতায় এমনিতেই মন খারাপ, তার উপর রিনার এহেন আচরণে রাগটা মাথায় উঠে গেল। রিমোট কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলল তাহিয়া। রিনা চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে গেছে। তারপর আকস্মিক ব্যাগ গুছিয়ে চলে গেল। তাহিয়া কিছু বলার সু্যোগ পেল না। এই কাজটা রিনা এ অবধি অনেকবারই করেছে। রিনার স্বভাব অনেকটা অদ্ভুত ধরণের, কিছুটা পাগলাটে। একটু থেকে একটু রাগ দেখালেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, দুদিন যেতে না যেতেই আবার ফিরে আসে। তবে সে ভাবেনি মাহমুদার এ অবস্থার কথা জানা সত্ত্বেও আজ চলে যাবে।
রিনা যাওয়ার পর রান্নার কথা মাথায় এলো। হাসপাতালে লাঞ্চ নিয়ে যেতে হবে। আন্টি, মামা, স্যার, তুহিন সবাই খাবে। রিনা চলে গেছে, রান্না কে করবে? রান্নাঘরে গিয়ে ভাবনায় পড়ল। ‘ইউটিউব দেখে আমি রান্না করে নিয়ে যাই না হয়’ এই ভাবনা থেকেই জীবনের প্রথম বারের মতো রান্নায় হাত দিল তাহিয়া। ইউটিউব থেকে সহজ রেসিপি দেখল। ‘খিচুড়ি’টাই সহজ মনে হলো।
যেহেতু অভীক তাকে নিতে আসলে ওকে দিয়েই প্রথম টেস্ট করাবে। প্রথম রেঁধেছে, ভালো হওয়া না হওয়ার ব্যাপার আছে। রান্না খাওয়ার যোগ্য হলে হাসপাতালে নিয়ে যাবে, অন্যথায় রেখে যাবে। নানান কথা ভাবতে ভাবতে ইউটিউব থেকে রেসিপি দেখে নিল। মায়ের চিন্তা, অভীকের চিন্তা মাথায় নিয়েই রান্না সারল। রান্না শেষ করার মাঝেই অভীকের কল এলো। সে নিচে এসে গেছে। তাহিয়াকে নামতে বলছে।
তাহিয়া বাহানার আশ্রয় নিয়ে বলল,
‘মায়ের ব্যাগটা বেশ ভারি, আমি একা নিতে পারব না। রিনাও নেই। আপনি কি আসবেন?’
রিনা নেই শুনে অভীক অবাক হলো,
‘নেই মানে? কোথায় গেছে?’
‘টিভি দেখতে না দেয়ায় রাগ করে নিজের বাসায় চলে গেছে। ‘
‘পাগল না কি!’
সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে সে। কলিংবেল চাপার পর তড়িৎ দরজা খুলে দিল তাহিয়া। যেন ওরই অপেক্ষায় ছিল। অভীক বলল,
‘ ব্যাগ দাও?’
তাহিয়া আমতাআমতা করল,
‘ ব্যাগ মায়ের রুমে।’
অভীক মাহমুদার ঘরে গেল। ব্যাগ নিয়ে ডাইনিং রুম পার করার সময় তাহিয়া ইতস্ততভাবে বলল,
‘আমি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য খিচুড়ি রেঁধেছি, দিব?’
ভ্রু কুঁচকাল অভীক। দৃষ্টিতে একরাশ বিস্ময় খেলা করছে। ঘটনার সারমর্ম বোধগম্য হচ্ছে না তার। তাহিয়ার দিকে অন্তর্ভেদী নজর দিল, মেয়েটার মনে চলছেটা কী! মন পড়ে নিল বোধহয়। সে বলল,
‘দাও দেখি, কেমন রাঁধুনি তুমি।’
বলতে দেরি তাহিয়ার রান্নাঘরে ছুটতে দেরি নেই। দ্রুত বেগে রান্নাঘরে গিয়ে খিচুড়ি বেড়ে রাখা বাটি নিয়ে এলো। টেবিলে পাতানো প্লেটে এক চামচ খিচুড়ি দিয়ে বলল,
‘বসুন।’
বিস্ময় মাথায় করেই টেবিলে বসল অভীক। এক গ্রাস মুখে তুলতেই থমকে গেল। এমন খিচুড়ি ইতঃপূর্বে খায় নি ও, বোধহয় কেউই খায়নি। মিষ্টি খিচুড়ি কেইবা খায়? লবনের বদলে চিনি দিয়েছে মেয়েটা। আরও কিছু উপাদান এদিক ওদিক করেছে। খেতে এতটাই বিস্বাদ লাগছে যে গলা পাকিয়ে বমি আসছে। খিচুড়ি চিবানোর কিংবা গিলার সাহস পাচ্ছে না। ‘খিচুড়ি’ অভীকের সবচেয়ে পছন্দের খাবার। তাহিয়ার হাতের খিচুড়ি মুখে দেয়ার পর পছন্দের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাবে নিশ্চিত । দ্বিতীয়বার খিচুড়ি দেখলেই তার দোয়া ইউনুস পড়তে ইচ্ছে করবে। এগুলো না কি হাসপাতালে যাবে। সবাই খেলে কী হবে?অসুস্থ টসুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। নাহ্! এই খাবার হাসপাতালে নেয়া যাবে না।
অভীক তাহিয়ার দিকে তাকাল এক পলক। মেয়েটা আগ্রহী চোখে তাকিয়ে আছে। চোখাচোখি হতেই উৎসুকভাবে জিজ্ঞেস করল,
‘ কেমন হয়েছে?’
তাহিয়ার আগ্রহভাব দেখে অভীক নেতিবাচক উত্তর দিতে পারল না। ছোটো বেলায় খেতে বসলে রেজাউল আহমেদ প্রায়ই বলতেন,
‘জীবনে কখনো খেতে বসে খাওয়ার বদনাম করবি না। তোর সামনে পাতানো খাবারটার পিছনে একটা রাঁধুনির অক্লান্ত পরিশ্রম আছে। কটু কথা বলা মানে তার পরিশ্রমকে অপমান করা। এমনটা কখনো করবি না। যা পাস খেয়ে নিবি। ‘
অভীক বাবাকে দেখেনি কখনো মায়ের রান্নাকে খারাপ প্রতিপন্ন করতে। যদিও নীলিমার রান্না যথেষ্ট ভালো। তবুও যদি কালে ভাদ্রে খারাপ হয়, তখনো টু শব্দ না করে খেয়ে নেন। না পারলে কোন বাহানা দিয়ে উঠে যান। বাবার দেয়া শিক্ষার কথা মনে পড়ল তৎক্ষনাৎ। সেই শিক্ষাই তাকে নেতিবাচক উত্তর দিতে বাধা দিল। মন বিস্বাদে পুড়লেও মুখে প্রসন্ন হাসল অভীক। তাহিয়াকে বুঝাল ভালো হয়েছে। মেয়েটার মলিন মুখে উৎফুল্লতা আভা দেখা গেল। অভীক মনে মনে দোয়া পড়ল,
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন জাহদিল বালা-ই, ওয়া দারাকিশ শাকা-ই, ওয়া সু-ইল কদা-ই, ওয়া শামাতাতিল আ‘দা-ই।’
তারপর না চিবিয়েই গিলে ফেলল। গলা পাকিয়ে বমি আসছে। আটকে রাখা দায় হচ্ছে, এদিকে মেয়েটা তাকিয়ে আছে বলে মুখভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারছেনা। কী কঠিন পরিস্থিতি! এই তো কদিন আগেই ডিস্কোভারি চ্যানেলে ‘বিয়ার গিলস’ এর ‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ প্রোগ্রামটা দেখছিল অভীক। আকস্মিক বিয়ার গিলস একটা পোকা মুখে দিয়ে বসল। মুখ কুঁচকে টিভি বন্ধ করে ফেলেছিল অভীক। বলেছিল, ‘কীভাবে খায় এগুলো!’
এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে বিয়ার গিলসের মতো সেও পোকামাকড় খেতে পারবে। এই খিচুড়ির মতো এতটা বিস্বাদ হবে না।
তাহিয়া আগ্রহ দৃষ্টির কাছে পরাস্থ হয়ে আরো কয়েক গ্রাস খেতে হলো। খেতে খেতে সিদ্ধান্ত নিল, তাহিয়াকে মাস্টার সেফ দিয়ে রান্না না শেখানো অবধি তার রান্না মুখে তুলবে না। অসম্ভব। বমির আটকে রাখা দায় হয়ে পড়ল। ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল এ পর্যায়ে। তাহিয়া বলল,
‘আপনি খান। আমি তৈরি হয়ে নিচ্ছি।’
অভীকের মনে হলো এই কথার চেয়ে চমৎকার কথা হতে পারেনা। সে প্রশান্ত হেসে যাওয়ার ইশারা করল। তাহিয়া চলে যেতেই উঠে দাঁড়াল। দ্রুত বেগে গেস্ট রুমের ওয়াশরুমে গিয়ে গরগর বমি করে ফেলল।
বের হলো থমথমে মুখে। তাহিয়া তৈরি হওয়ার পর চুপচাপ বেরিয়ে গেল। সবার জন্য খাবার ভরতি টিফিন বক্স নিতে চাইলে কায়দা করে রেখে গেল অভীক।
হাসপাতালের গেটে গিয়ে বলল,
‘তুমি যাও, আমার একটু কাজ আছে। আসছি।’
উলটো হাটা দিল অভীক। পিছু ফিরে বলল,
‘তোমার বান্ধবীদের এতটা ফাজিল হওয়া উচিত হয়নি।’
তাহিয়া বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকাল।
চলবে…