#তোমার রাঙা উঠানে #writer:Alo Rahman #part:3

0
301

#তোমার রাঙা উঠানে
#writer:Alo Rahman
#part:3
.
.
.
দুপুরবেলা।ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দায় ভেজা চুল এলিয়ে বসে আছি।বারান্দায় রোদ পরেছে।আমি রোদেই বসে আছি।আমার কোলের উপরে একটা বই।মাঝে মাঝে বইটার পাতা উল্টাচ্ছি।যদিও আমি বইটা পড়ছি না।একটা বই সাথে নিয়ে বসে থাকার অনেক সুবিধা।কেউ আসলে পড়ার ভান করা যায়।তার সাথে কথায় যোগ দিতে হয় না।
শুভ্র ভাই নিঃশব্দে এসে আমার পাশে বসলেন।শুভ্র ভাই ঘরে ঢুকতেই আমি টের পেয়েছি।কিন্তু সেটা শুভ্র ভাইকে বুঝতে দিতে চাইছি না।এমনভাবে বইয়ের দিকে তাকিয়ে বসে আছি যেন আমি উনাকে দেখতে পাই নি।উনি বলে উঠলেন,
“তুই কি বিয়েতে রাজি?”
.
আমি না শোনার ভান করে বসে আছি।মানে ভাবখানা এমন,যেন আমি খুব মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছি।আশেপাশের কিছুই আমার কানে ঢুকছে না।
শুভ্র ভাই বললেন,
“উত্তর দিচ্ছিস না কেন?তোকে কিছু জিঙ্গেস করছি আমি।”
.
আমি এবারও কথা বললাম না।শুভ্র ভাই এবার আমার থেকে বইটা টেনে নিয়ে বারান্দা দিয়ে নিচে ফেলে দিলো।আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,
“আরেহ,এটা কি করলেন আপনি?আমার বইটা ফেলে দিলেন কেন?”
.
শুভ্র ভাই আমাকে বারান্দার রেলিং এর সাথে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
“অভিনয় করিস আমার সাথে?আমি খুব ভালো করে জানি যে তুই পড়ছিলি না।আমার কথার উত্তর দিলি না কেন?”
.
আমি কাঁদোকাঁদো মুখে বললাম,
“শুভ্র ভাই,আমাকে ছাড়ুন।আমার লাগছে।”
.
শুভ্র ভাই আমাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালেন।শীতল গলায় বললেন,
“তুই বিয়েতে রাজি কিনা বল।”
.
“এখনো রাজি হই নি।তবে ছেলেকে দেখার পর রাজি হয়ে যাব।”
.
“মানে!?তুই নিশ্চিত যে ছেলেটাকে তোর পছন্দ হবে?”
.
“পছন্দ হবে না কেন?ফুল বাবা নিজে পছন্দ করেছেন।আমি ফুল বাবাকে ভরসা করি।উনি নিশ্চয়ই খারাপ কোনো ছেলেকে পছন্দ করেন নি।”
.
“উফ!আলো তুই বুঝতে পারছিস না।বাবার পছন্দ আর তোর পছন্দ তো এক নাও হতে পারে।তোর যদি ছেলেটাকে পছন্দ না হয়?”
.
“হবে।”
.
শুভ্র ভাই কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।তারপর ঘর থেকে চলে গেলেন।শুভ্র ভাই যেতেই ফুল মা আমার কাছে এলেন।
বললেন,
“কিরে,আলো?শুভ্রকে যেতে দেখলাম।ও কি বলল তোকে?”
.
“কিছু না,ফুল মা।শুভ্র ভাই আমাকে বিয়ের জন্য শুভকামনা জানাতে এসেছিল।”
.
“ওহ!আচ্ছা নিচে চল,খাবি না?”
.
“তুমি যাও।আমি আসছি।”
.
ফুল মা আমার হাত ধরে বললেন,
“আলো,ওরা ফোন করেছিল।”
.
“ওরা কারা?”
.
“আরেহ বাবা,ছেলের বাড়ি থেকে।ছেলেটা কাল তোর সাথে দেখা করতে চেয়েছে।তোর কোনো আপত্তি নেই তো?”
.
আমি মুখে হাসি টেনে বললাম,
“না,ফুল মা।”
.
ফুল মা হাসলেন।আমাকে আদর করে বললেন,
“তুই সত্যি আমাদের লক্ষ্মী মেয়ে।তাড়াতাড়ি খেতে আয়।”
.
আমি ফুল মার সাথে নিচে গেলাম।দাদীমনির পাশে বসে চুপচাপ খেতে লাগলাম।ফুল বাবা আমার দিকে একটা ছবি এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“আলো মা,এই যে ছেলের ছবি।তুই দেখে নিস।”
.
আমি মৃদু হেসে ছবিটা নিলাম।দাদীমনি বললেন,
“ভালো করে দেখিস,বুবু।ছেলে কিন্তু খুব সুন্দর দেখতে।”
.
শুভ্র ভাই হুট করে বলে দিলেন,
“এতই যখন সুন্দর তখন তুমিই বিয়ে করে নাও,দাদীমনি।”
.
দাদীমনি মুখ বেঁকিয়ে বললেন,
“মরণ!কথার ছিরি দেখ।”
.
ফুল মা আমার প্লেটে মাছ তুলে দিলো।সাথে সাথেই শুভ্র ভাই সেটা ছোঁ মেরে নিজের প্লেটে নিয়ে নিলো।আমি কিছুই বললাম না।কারণ এটা শুভ্র ভাইয়ের ছোট বেলাকার স্বভাব।আমার পাতে দেওয়া মাছ সবসময় উনিই ছিনিয়ে নেন।ফুল মা রেগে গিয়ে বললেন,
“শুভ্র!মেয়েটা কদিন পরে চলে যাবে।এখনও তুই এভাবে কেড়ে নিবি?”
.
ফুল বাবা বললেন,
“সত্যি!আলো চলে গেলে বাড়িটা বেমানান হয়ে যাবে।আমাদের পরিবার অন্ধকার হয়ে যাবে।”
.
শুভ্র ভাই বলে উঠলেন,
“তোমরা চাইলে বাড়িটা আলোকিত করে রাখতে পারো।”
.
ফুল মা বললেন,
“মানে?”
.
“মানে,আলো চলে যাবে ভেবে খারাপ লাগছে তোমাদের?”
.
“হ্যাঁ,লাগছে।”
.
“তাহলে এক কাজ করো।তোমরা আলোকে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দাও।আলোর বিয়েও হবে।আর ও এই বাড়ি ছেড়েও যাবে না।”
.
কথা বলা শেষ করে শুভ্র ভাই খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে গেল।সবাই শুভ্র ভাইয়ের যাওয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আমি নিজেও খাওয়া বন্ধ করে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছি।
ফুল মা ফুল বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“শুভ্র কি বলে গেল?”
.
ফুল বাবা হঠাৎ হেসে উঠে বললেন,
“আরেহ,তুমি তোমার ছেলেকে চেন না?ও মজা করেছে।”
.
ফুল মা বিরবির করে বললেন,
“মজা!ইশ,যদি সত্যিই এমন হতো!”
.
আমি আবার খাওয়ায় মন দিলাম।ফুল বাবা ঠিকই বলেছেন।এটা নিশ্চয়ই মজা করে বলেছেন শুভ্র ভাই।আমার ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
.
.
.
.
ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ আমাকে ডাকছে।আমি আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলাম।দেখলাম বিন্তি আমার বিছানায় বসে আছে।নিশ্চয়ই ও ডাকছিল এতক্ষণ।আমি উঠে বসতেই বিন্তি বলল,
“আর কতক্ষণ ঘুমাইবেন,আপা?সেই দুপুর থাইকা ঘুমাইতেছেন।”
.
আমি হাই তুলে বললাম,
“আমার আরও ঘুম পাচ্ছে,বিন্তি।তুই ডাকলি কেন?”
.
“নিচে চলেন।আপনের ফুল বাবা যে আপনের হাতের চা খাইতে বইসা আছে।”
.
“আসছি।যা তুই।”
.
আমি চোখেমুখে পানি ছিটালাম।আয়নায় তাকিয়ে দেখলাম চোখ এখনও লাল হয়ে আছে।আমি আসলে দুপুরবেলা খুব কান্নাকাটি করেছি।যার কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম বুঝতে পারি নি।
আমি আরও কিছুক্ষণ চোখে পানি দিলাম।সুন্দর করে চুল বাঁধলাম।নিচে নেমে দেখলাম,ফুল বাবা বসে আছেন।আমি গিয়ে ফুল বাবার হাত জড়িয়ে ধরে পাশে বসে পরলাম।ফুল বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“ঘুম হলো?”
.
“হ্যাঁ,হয়েছে।”
.
“ছেলেটার ছবি দেখেছিস?”
.
আমি আসলে ছবিটা দেখি নি।কিন্তু তবুও মিথ্যা বললাম।
“হ্যাঁ,দেখেছি।”
.
“কেমন মনে হলো?”
.
“ভালো।যাই,তোমার চা নিয়ে আসি।”
.
আমি সোজা রান্নাঘরে ঢুকলাম।চা বানাচ্ছিলাম।হুট করে শুভ্র ভাই এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করলেন,
“স্বপন সরকার।গায়ের রঙ শ্যামলা,বাবার ফুড প্রোডাক্টের বিজনেস আছে,অনেক বড়লোক,বয়স ৩২,হালকা ভুড়ি আছে,আর হাইট হলো ৫’৭”।আর আমি হলাম ৬’২”।তার মানে আমার চেয়ে কত ইঞ্চি খাটো বল তো?”
.
আমি ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকালাম।উনার হাতে একটা ছবি।উনি ছবিটা আমার দিকে ঘুরিয়ে ধরে বললেন,
“এই ছেলেটাকে তোর পছন্দ হয়েছে,আলো?ছিহ!তোর চয়েস এতো খারাপ হলো কবে থেকে?”
.
আমি ছবিটা হাতে নিয়ে বললাম,
“ছিহ ছিহ করছেন কেন?ভালো করে দেখুন,লোকটার চেহারা কত মায়াবী।”
.
“আচ্ছা!মায়াবী?”
.
“হ্যাঁ,মায়াবী।আর আমার হাইট তো ৫’৩”।আমার জন্য ৫’৭” ই ঠিক আছে।”
.
“খুব না?খুব বিয়ে করার শখ জেগেছে তোর?”
.
আমি দাঁত কেলিয়ে বললাম,
“হ্যাঁ।”
.
“আলো শোন,এই ছেলের বাপ বিরাট বড়লোক।বড়লোকের ছেলেরা ভালো হয় না।”
.
“কিন্তু এই ছেলে নিশ্চয় ভালো।”
.
শুভ্র ভাই ভ্রু কুঁচকে বললেন,
“তুই দেখি খুব নিশ্চিন্ত!”
.
“তো নিশ্চিন্ত হবো না কেন?আর আপনি এই ছেলের এতো খুঁত কেন বের করছেন বলুন তো?ফুল বাবা তো বলেছে যে ছেলেটা খুব ভালো।”
.
“আমি কোথায় খুঁত বের করছি?আমি তো এমনি বলছিলাম।তুই যাকে খুশি বিয়ে কর,আমার কি?তুই বিদায় হলে আমি বাঁচি।”
.
আমার চা বানানো শেষ।আমি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বললাম,
“ঠিক আছে।আমি ফুল বাবাকে বলবো আমাকে যেন তাড়াতাড়ি বিদায় করে দেয়।”
.
কথাটা বলেই চা নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।পিছনে পিছনে শুভ্র ভাইও এলেন।আমি ফুল বাবাকে চা দিয়ে সেখানে বসলাম।ফুল মা হাতে করে একটা নীল শাড়ি নিয়ে এলো।আমার গায়ে শাড়িটা ফেলে বলল,
“আলো,কাল তুই এটা পরে যাস।তোকে খুব সুন্দর মানিয়েছে।”
.
শুভ্র ভাই বললেন,
“কাল ও কোথায় যাবে,মা?”
.
“কোথায় আবার?ছেলেটার সাথে দেখা করতে।”
.
“একটু সাজিয়ে পাঠিয়ো,মা।নইলে এই পেত্নিকে উনি নাও পছন্দ করতে পারেন।”
.
“চুপ কর।পেত্নি মানে?আমাদের আলো যথেষ্ট সুন্দরী।”
.
“হ্যাঁ,পেত্নি সুন্দরী।”
.
কথাটা বলে শুভ্র ভাই হাসতে হাসতে ঘরে চলে গেলেন।আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেল।উনার চোখে কি কখনো সুন্দর হতে পারবো না আমি?
.
#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here