#তোমার রাঙা উঠানে #writer:Alo Rahman #part:4

0
239

#তোমার রাঙা উঠানে
#writer:Alo Rahman
#part:4
.
.
.
রাতের খাবার না খেয়েই শুয়ে আছি।আমি ঘুমাই নি।তবে ঘুমের ভান করছি।মটকা মেরে পরে আছি বিছানায়।আমাকে একবার একবার করে সবাই ডেকে গেছে।শুধু শুভ্র ভাই ছাড়া।আমি কারোর ডাকেই সাড়া দিচ্ছি না।
আমার যে খেতে ইচ্ছা করছে না ব্যাপারটা তেমন নয়।আমি যাচ্ছি না শুভ্র ভাইয়ের উপর রাগ করে।ঠিক রাগ নয়,বোধহয় অভিমান।বিকালবেলা শুভ্র ভাই আমাকে পেত্নি বলেছিল বলেই আমার মন খারাপ হয়েছে।তাই ঠিক করেছি,শুভ্র ভাইয়ের সামনে আমি একদমই যাব না।
বাইরে সবার কথাবার্তার আওয়াজ কমে আসতেই আমি বিছানায় উঠে বসলাম।নিচে নেমে গিয়ে দেখলাম ফুল মা সবকিছু গুছিয়ে রাখছেন।আমাকে দেখতে পেয়েই বললেন,
“উঠেছিস?এতক্ষণ যে ডাকলাম,সাড়া দিচ্ছিলি না কেন?”
.
আমি একটা চেয়ার টেনে বসলাম।বললাম,
“কখন ডেকেছ?শুনতে পাইনি তো।”
.
“তুই তো কখনো এভাবে ঘুমাস না,আলো।দুপুরে এতক্ষণ ঘুমিয়েছিস।আবার সন্ধ্যা থেকে এভাবে ঘুমাচ্ছিস!তোর শরীর খারাপ নয় তো?”
.
হঠাৎ শুভ্র ভাই কোথা থেকে চলে এলো।আমার পাশের চেয়ারে বসেই বলে উঠলেন গা জ্বালানি কথা।
“ওর কিছুই হয়নি,মা।ও আসলে ঢং করছিল।”
.
আমি বিরক্ত চোখে শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম।কিন্তু উনার কোনো ভাবান্তর হলো না।ফুল মা ভ্রু কুঁচকে বললেন,
“এসব কি ধরণের কথা,শুভ্র?”
.
“এসব সত্যি কথা,মা।ও মোটেও ঘুমাচ্ছিল না।মটকা মেরে পরেছিল।”
.
আমি হঠাৎ রাগী গলায় বলে উঠলাম,
“হ্যাঁ,আমি তো সবসময় ঢঙই করি।”
.
উনি দাঁত কেলিয়ে বললেন,
“যাক,এতদিনে সত্যি কথাটা স্বীকার করলি তাহলে।”
.
“আপনি এখানে কেন এসেছেন?”
.
“আমার বাড়ি,আমি যেখানে খুশি যাব।তোকে বলতে হবে নাকি?”
.
আমি দমে গেলাম।ফুল মা বললেন,
“শুভ্র,তুই এভাবে কথা বলবি না।যা,ঘরে যা।”
.
শুভ্র ভাই উঠে দাঁড়ালেন।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“এই যে ঢঙী কন্যা,আমার ঘরে এক কাপ চা নিয়ে আয়।”
.
কথাটা বলেই উনি চলে গেলেন।ফুল মা বললেন,
“আলো,চা আমি বানাচ্ছি।তুই গিয়ে দিয়ে আয়।”
.
আমি নাক ফুলিয়ে বললাম,
“আমি বারবার এতো উপর নিচ করতে পারবো না,ফুল মা।আমার খিদা পেয়েছে।”
.
ফুল মা আমার কথার ধরণে হেসে ফেললেন।খাবার বেড়ে দিতে দিতে বললেন,
“ঠিক আছে।তুই খা।আমি বিন্তিকে পাঠাচ্ছি।”
.
খাওয়া শেষ করে আমি ছাদের উপরে গেলাম।ছাদে শুভ্র ভাইকে বসে থাকতে দেখে আমার মাথায় হঠাৎ দুষ্টু বুদ্ধি এলো।আমি মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে নিলাম।পা টিপে টিপে শুভ্র ভাইয়ের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।পিছন থেকে খপ করে শুভ্র ভাইয়ের গলা চেপে ধরলাম।তারপর গলাটা বেশ খানিকটা চিকন করে বললাম,
“হিহিহিহি….আমি তোর ঘাড় মটকাবো।”
.
শুভ্র ভাই পিছনে না ঘুরেই বলল,
“কে?”
.
আমি প্রায় নাকের ভেতর থেকে সুর বের করে বললাম,
“আমি পেত্নি।তোর ঘাড় মটকাতে এসেছি।তোর রক্ত শুষে নেব আজ।”
.
“আমার রক্ত কেন শুষে নেবেন,পেত্নি সাহেবা?আমার কি অপরাধ?”
.
“তুই সবসময় আমাকে জ্বালাতন করিস।তাই তোর রক্ত খেয়ে আমি তার শোধ নেব।”
.
শুভ্র ভাই এবার হুট করে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন।তারপর আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার হাত মুচড়ে ধরলেন।হাসতে হাসতে বললেন,
“এই বাড়ির পেত্নি কে সেটা আমি জানি না ভেবেছিস?”
.
আমি এবার ভয়ে ভয়ে বললাম,
“সরি,শুভ্র ভাই।সরি সরি।আমি আর এরকম করবো না।আমাকে ছেড়ে দিন,প্লিজ।”
.
“কেন,পেত্নি সাহেবা?ভয় পাচ্ছেন?”
.
আমি করুণ গলায় বললাম,
“প্লিজ,শুভ্র ভাই।”
.
কিন্তু আমার এই আকুল আবেদন উনার কানে ঢুকলো বলে মনে হয়না।উনি হেসে বললেন,
“এবার আপনার কি হবে,পেত্নি সাহেবা?আপনাকে এখান থেকে তুলে নিচে ফেলে দেই?দেবো?”
.
আমি হঠাৎ চিৎকার করে বলতে শুরু করলাম,
“ফুল মা,কোথায় তুমি?আমাকে বাঁচাও।তোমার ছেলে আমাকে মেরে ফেললো।”
.
শুভ্র ভাই এবার আমার হাত ছেড়ে মুখ চেপে ধরলেন।ধমক দিয়ে বললেন,
“চুপ।এখন ফুল মাকে ডাকছিস কেন?বাচ্চামি করার সময় মনে থাকে না?কদিন পরে বিয়ে হবে।আর উনি এখনও ফাজলামি করে বেড়াচ্ছেন।ইডিয়ট।”
.
আমি সুযোগ বুঝে শুভ্র ভাইয়ের হাতে কামড় বসিয়ে দিলাম।সাথে সাথে উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন।আমি আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ছুটে নিজের ঘরে চলে গেলাম।ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় বসে হাঁপাতে লাগলাম।ইশ!কেন যে শুধু শুধু এরকম করলাম!?কি বিশ্রীভাবে ধরা পরে গেলাম।শিট!
.
.
.
.
আজ আমি খুব সকাল সকাল উঠেছি।আর ঘুম থেকে উঠেই রান্নাঘরে ঢুকেছি।আমার উদ্দেশ্য হলো নাস্তা বানানো।বিন্তিকে সরিয়ে দিয়ে আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পরোটা ভাজছি।মন দিয়ে কাজটা করছিলাম আমি।কিন্তু এই বাড়িতে আমি কোনো কাজই ঠিক মন দিয়ে করতে পারি না।যখনই কোনো কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করি,তখনই সেই মনোযোগে কোনো না কোনোভাবে ব্যাঘাত ঘটিয়ে দেন শুভ্র ভাই।এই মুহূর্তেও তাই হলো।
পরোটা বানানোর সময় আমার মাথায় পিছন থেকে একটা নীল রঙের ওড়না এসে পরলো।আমি প্রথমে কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না।ওড়নাটা হাতে নিয়ে পিছনে ঘুরে তাকালাম।কাউকে চোখে পরলো না।ওড়নাটা উল্টেপাল্টে দেখছিলাম।ওড়নার এক কোণায় কিছু একটা বাঁধা আছে দেখতে পেলাম।বাঁধন খুলতেই একটা চিরকুট পেলাম।চিরকুট খুলে দেখলাম তাতে শুভ্র ভাইয়ের লিখা।উনি লিখেছেন-
“হ্যাঁ,ওরনাটা আমিই দিয়েছি।কিন্তু এতো খুশি হওয়ার কোনো দরকার নেই।সেদিন ওড়নাটা ছিড়ে ফেলেছিলাম বলে দিয়ে গেলাম।পেনাল্টি হিসেবে।শুভ্র কখনো কোনো ঋণ রাখে না।”
.
চিরকুট পড়ে মাথা তুলতেই দেখলাম চুলার উপরে দেওয়া পরোটা পুড়ে যাচ্ছে।আমি তাড়াতাড়ি চুলা বন্ধ করে দিলাম।ধুরর!কত শখ করে পরোটা বানাচ্ছিলাম।শুভ্র ভাইয়ের জন্য সেটাও পুড়ে গেল।ভাল্লাগে না!
.
নাস্তার টেবিলে সবাই খুব প্রশংসা করছে আমার।আমি নাকি খুব ভালো পরোটা বানিয়েছি।কিন্তু শুভ্র ভাই কিছু বলছেন না।চুপচাপ খেয়ে চলেছে।
দাদীমনি বললেন,
“আলো,খুব ভালো হয়েছে।আমার নাতজামাই এর ভাগ্য খুব ভালো।তার বউ এতো ভালো রান্না করে তাকে খাওয়াবে।”
.
শুভ্র ভাই এবার মুখ খুললেন।গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বললেন,
“না,দাদীমনি।তোমার নাতজামাই এর কপাল খুব খারাপ।কারণ তার বউ রান্না করতে গিয়ে সেটা পুড়িয়ে ফেলবে।”
.
আমি মুখ গোমড়া করে বললাম,
“একটা পরোটাই তো পুড়েছে।বাকিগুলো তো ঠিকই আছে।”
.
ফুল মা আমার কথায় সায় দিয়ে বললেন,
“তাই তো।প্রথম প্রথম রান্না করতে গেলে এরকম একটু আধটু হতেই পারে।সমস্যা কি তাতে?”
.
শুভ্র ভাই বললেন,
“মা,আজ একটা পুড়িয়েছে।কাল আরেকটা পোড়াবে।প্রত্যেক দিন একটা একটা করে কতগুলো ক্ষতি হবে তোমার কোনো আইডিয়া আছে?ওর বর বেচারার জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে।আহারে!”
.
কথা শেষ করে উনি অফিসের উদ্দেশ্যে উঠে গেলেন।আমার মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল।পরোটা তো উনার জন্যই পুড়লো।উনি তখন ওড়নাটা না দিলে তো এমন হতো না।আর এখন দেখ,আমাকেই সবার সামনে কথা শুনিয়ে দিয়ে গেল।ইচ্ছা তো করছিল উনার নাক বরাবর ফ্রি স্টাইল ঘুঁসি মারি।যত্তসব!
.
.
.
.
বিকাল সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে।আধ ঘন্টা ধরে রেস্টুরেন্টে বসে আছি।স্বপন সরকার নামক লোকটার পাঁচটায় আসার কথা ছিল।কিন্তু এখনও তার আসার নাম নেই।
আমি আজ খুব সেজেছি।নীল শাড়ি পরেছি,চোখে গাঢ় করে কাজল পরেছি,ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক লাগিয়েছি,হাত ভর্তি নীল কাঁচের চুড়ি পরেছি,পায়ে নূপুর পরেছি।
.
সাড়ে পাঁচটা পার হতেই লোকটা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।ছবিতে যেমন দেখেছিলাম,তেমনই দেখতে।তবে ছবির থেকে বয়সটা একটু বেশি লাগছে।বোধহয় ছবিটা দুয়েক বছর আগের।আমি হাসিমুখে বললাম,
“স্বপন সাহেব?”
.
স্বপন হেসে আমার পাশের চেয়ারে এসে গা ঘেঁষে বসলেন।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“আলো।তোমায় ছবিতে দেখেছি।তুমি ছবির মতই সুন্দর।”
.
উনি আমার পাশে এসে বসায় আমার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে।অদ্ভুত লোক তো!প্রথম দেখাতেই একটা মেয়ের এতো কাছে এসে বসে পরলেন!হুমায়ূন স্যার একটা কথা বলেছেন।পুরুষ মানুষ দুই দলে বিভক্ত।একদল তাকায় মেয়েদের চোখের দিকে,আরেকদল তাকায় মেয়েদের বুকের দিকে।এই স্বপন সাহেবকে দ্বিতীয় দলের বলে মনে হচ্ছে।
আমি অস্বস্তি চাপা দিয়ে মুখে হাসি টানার চেষ্টা করে বললাম,
“আপনার এতো দেরি হলো যে?”
.
“আসলে অফিসে কাজের খুব প্রেসার।তাই দেরি হয়ে গেল।”
.
“আপনি কি আমার সম্পর্কে সব জানেন?”
.
#চলবে…..
(অনেকে আমাকে জিঙ্গেস করছেন,ফুল বাবা আর ফুল মা ডাকের মানে কি?তারা হয়তো প্রথম পর্ব পড়েন নি।আলোর মা বাবা নেই,ছোটবেলায় মারা গেছেন।তারপর আলোর দায়িত্ব নেন শুভ্রর মা-বাবা।আলোর ভাষ্যমতে,শুভ্রর মা-বাবা তাকে জলে ভাসা পদ্ম থেকে টবে লাগানো যত্নের গোলাপ বানিয়েছেন।সেই জন্যই আলো উনাদের ফুল বাবা আর ফুল মা বলে ডাকে।আশা করি,আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here