#তোমার রাঙা উঠানে #writer:Alo Rahman #part:5

0
270

#তোমার রাঙা উঠানে
#writer:Alo Rahman
#part:5
.
.
.
স্বপন সাহেব চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন।বললেন,
“যতটুকু জানা দরকার,ততটুকু জেনেছি।বাকি যা আছে সেসব আমার না জানলেও চলবে।”
.
আমি জিঙ্গেস করলাম,
“কেন?আপনি কি আমাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক নয়?মানে আপনার কি আমাকে পছন্দ হয় নি?”
.
“তা কেন হবে?তোমাকে পছন্দ হয়েছে বলেই দেখা করতে এসেছি।নাহলে আসতাম না।”
.
“আচ্ছা।আমার সম্পর্কে আপনি কি কি জানেন?”
.
“তুমি সুন্দরী,শিক্ষিতা,ভালো মেয়ে।তোমার মা-বাবা নেই।এইতো!”
.
“আপনার কি আমাকে কিছু জিঙ্গেস করার আছে?”
.
“না।”
.
“না কেন?আপনি যাকে বিয়ে করতে চান,তাকে আপনি পুরোপুরি জেনে নিতে চান না?এই যেমন ধরুন আমার প্রিয় রঙ,আমার পছন্দ অপছন্দ….”
.
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই উনি বলে উঠলেন,
“শোনো আলো,সংসার করার জন্য এতকিছু জানার দরকার পরে না।শুধু সংসারের নিয়ম মেনে চললেই হয়।”
.
“নিয়ম?”
.
“হ্যাঁ,নিয়ম।এই যেমন,স্বামীর সব কথা মেনে চলা,শ্বশুর বাড়ির সবাইকে খুশি রাখা এটসেটরা এটসেটরা।মানে যেমনটা বাঙালি লক্ষ্মী বউরা হয়ে থাকে,তুমি তেমন হলেই আমি খুশি।আমার বিশ্বাস তুমি তেমনই।এতো বিশ্বাসের কারণ জিঙ্গেস করো।”
.
“বলুন।”
.
“কারণ তুমি এতিম।তোমার মা-বাবা নেই।ছোটবেলা থেকে যে যা বলেছে তুমি তাই শুনেছ।বায়না করা,কথা না শোনা,রাগ দেখানো,জেদ করা,এসব কোনো কিছুরই সুযোগ তুমি পাও নি।ঠিক বলেছি না?”
.
আমি হাসলাম।কিন্তু কিছু বললাম না।বলার কিছু ছিলও না।কারণ উনি ঠিকই বলেছেন।আমি সামনে থাকা কফির কাপ হাতে নিয়ে চুমুক দিলাম।কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে।খেতে ভালো লাগছে না।
স্বপন সাহেব বললেন,
“আমাকে কি কিছু জিঙ্গেস করতে চাও তুমি?”
.
“না।”
.
সত্যিই উনাকে আর কিছুই জিঙ্গেস করার নেই আমার।কারণ উনি কেমন সেটা আমি বুঝে ফেলেছি।উনি শুধু সংসার করার জন্য একজন গৃহিনী চান,জীবনসাথী নয়।একদিক থেকে অবশ্য ভালোই হলো।উনি যদি ভালোবাসার ঘর বানানোর জন্য সাথী চাইতেন আমি তা হতে পারতাম না।কারণ উনাকে আমি ভালোবাসতে পারবো না।কিন্তু একজন সুগৃহিনী আমি অবশ্যই হতে পারি।
.
স্বপন সাহেব জানতে চাইলেন,
“তুমি কি এই বিয়েতে রাজি?”
.
আমি মুখে হাসি টেনে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।এরপর আমি আর একটি কথাও বলি নি।স্বপন সাহেব অনেক কথা বলছিলেন।আমি শুধু মুচকি হেসে উনার কথায় সায় দিচ্ছিলাম।
.
রেস্টুরেন্ট থেকে যখন বেরিয়েছি তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত।ল্যাম্পপোস্টের আলোয় শহরটা হলুদ দেখাচ্ছে।মানুষের কোলাহল তখনও কমে নি।
রেস্টুরেন্টের সামনে স্বপন সাহেবের বিশাল গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“গাড়িতে ওঠো।তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।”
.
আমি গাড়িতে উঠতেই যাচ্ছিলাম।তখনই উনার ফোন বেজে উঠলো।উনি একটু সাইডে গিয়ে কথা বললেন।কিছুক্ষণ পর আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
“আলো,আসলে একটু সমস্যা হয়ে গেছে।”
.
“কি সমস্যা?”
.
“ইয়ে মানে,কিভাবে যে বলি!”
.
“এতো ইতস্তত করতে হবে না,স্বপন সাহেব।আপনি বলুন।”
.
“আসলে আমার ফ্যাক্টরিতে একটু ঝামেলা হয়েছে।তাই আমাকে যেতে হবে।তোমাকে পৌঁছে দিতে পারছি না।সরি।”
.
কথা শেষ করে সাথে সাথেই উনি গাড়িতে উঠে বসলেন।এবং গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন।আমি রেস্টুরেন্টের সামনে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।কি অদ্ভুত লোক!রাতের বেলা একটা মেয়েকে এভাবে রাস্তায় একা ফেলে চলে গেল!?একটা রিকশা তো অন্তত ডেকে দিয়ে যেতে পারতেন।অদ্ভুত!
.
আমি জড়সড় হয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটতে লাগলাম।রেস্টুরেন্ট থেকে একটু সামনে অনেকগুলো রিকশা দাঁড়িয়ে আছে।আমি একটা রিকশাওয়ালার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম,
“মামা,যাবেন?”
.
“কই যাইবেন?”
.
জায়গার নাম বলতেই উত্তর এলো,
“না,আপা।ওইদিকে যাইতাম না।”
.
“চলুন না,মামা।আমি আপনাকে দ্বিগুণ ভাড়া দেব।”
.
দ্বিগুণ ভাড়ার লোভ রিকশাওয়ালাকে টলাতে পারলো না।উনি ঝাঁঝালো গলায় বললেন,
“কইলাম তো ওইদিকে যামু না।যান তো যান।বিরক্ত কইরেন না।”
.
একটা রিকশাও যেতে রাজি হলো না।সোজা গিয়ে ডানদিকে গেলে বাসস্ট্যান্ড।আমি সিদ্ধান্ত নিলাম বাসে করেই ফিরবো।আবার হাঁটতে শুরু করলাম।আমি একা চলাফেরা করে অভ্যস্ত।কিন্তু রাত বলে ভয় ভয় লাগছে।আর লোকাল বাসে যাতায়াতেও আমার বেশ ভয়ই লাগে।তবুও দোয়া পড়তে পড়তে বাস স্ট্যান্ডের দিকে হাঁটছিলাম।
হুট করে আমার সামনে একটা রিকশা এসে থামলো।আমি হকচকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম রিকশায় শুভ্র ভাই বসে আছেন।রিকশা থামতেই উনি একদিকে সরে বসলেন।আমার দিকে না তাকিয়েই বললেন,
“উঠে আয়।”
.
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম।শুভ্র ভাই এখানে কেন!?উনার কি এদিকে আসার কথা ছিল?কোনো কাজ কি ছিল এদিকে?
আমার ভাবনার মধ্যে জল ঢেলে শুভ্র ভাই বলে উঠলেন,
“কিরে?উঠে আসতে বললাম তো।”
.
আমি উনার ধমক খেয়ে চমকে উঠে বললাম,
“কোথায় উঠবো?”
.
উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
“আমার মাথায়।রিকশায় উঠে আয় গাধা।”
.
আমি সাথে সাথে রিকশায় উঠে বসে পরলাম।রিকশা বাড়ির দিকে চলতে শুরু করেছে।আমার শরীরে বাতাসের ঝাপটা লাগতে শুরু করেছে।আমার খোলা চুলগুলো উড়ে শুভ্র ভাইয়ের মুখে পরছে।আমি ভেবেছিলাম,এই বোধহয় ধমক খেতে হবে।কিন্তু তা হলো না।উনি আমাকে কিছুই বলছেন না।
বাতাসে উনার কপালে পরে থাকা চুলগুলো পিছন দিকে সরে যাচ্ছে।উনি চুপচাপ গম্ভীর মুখে বসে আছেন।এই গাম্ভীর্য উনার মুখের সৌন্দর্য আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।উনার সুন্দর মুখটা দেখে আমার বুকের ভেতর কেমন যেন যন্ত্রণা করছিল।মনে হচ্ছিলো,এইতো সময় শেষ হয়ে এলো।এরপর হয়তো আর কখনো শুভ্র ভাইয়ের সাথে একসাথে রিকশায় ওঠা হবে না।এটাই হয়তো শেষ।
আমি জিঙ্গেস করলাম,
“আপনি এইদিকে কেন এসেছিলেন,শুভ্র ভাই?”
.
উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।তারপর সামনে তাকিয়ে বললেন,
“কেন?এদিকে আসা নিষেধ নাকি?”
.
“আমি সেটা কখন বললাম?আমি জানতে চাইছি যে আপনি কোনো কাজে এসেছিলেন?নাকি ঘুরতে এসেছিলেন?”
.
শুভ্র ভাই উত্তর দিলেন না।আমি আবার বললাম,
“ঘুরতে এসেছিলেন?”
.
উনি এবারও উত্তর দিলেন না।উত্তর না পেয়ে আমি আবার প্রশ্ন করলাম,
“তাহলে কি কাজে এসেছিলেন?কি কাজ ছিল?আচ্ছা,অফিস থেকে কি সোজা এখানে এসেছেন?নাকি বাড়ি গিয়েছিলেন আগে?আপনি আমাকে কিভাবে দেখতে পেলেন?”
.
উনি এবার ধমক দিয়ে বললেন,
“আলো,চুপ কর।সবসময় বেশি কথা বলা দরকারি না।”
.
“কি আশ্চর্য!আপনি এদিকে কেন এসেছিলেন সেটা বলে দিলেই তো মিটে যায়।তাহলেই আমি চুপ করে যাই।”
.
“আমি আমার বউকে পাহারা দিতে এসেছিলাম।তোর কোনো সমস্যা?”
.
“বউ!আপনার বউ!?আপনি বিয়ে করে ফেলেছেন?কাকে বিয়ে করেছেন?ফুল মাকে না জানিয়ে এটা কি করে করলেন শুভ্র ভাই?আপনি…”
.
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই উনি চিৎকার করে বলে উঠলেন,
“তোকে চুপ করতে বলেছি,আলো।আর একটা কথা বললে ধাক্কা মেরে রিকশা থেকে ফেলে দেব।”
.
আমি চুপ করে গেলাম।রিকশা থেকে পরে গিয়ে আহত হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই আমার।বাকিটা রাস্তায় আমি আর একটা কথাও বলি নি।শুভ্র ভাইও চুপচাপ বসে ছিলেন।
রিকশা থেকে নেমে বাড়ির ভেতরে ঢুকছি।শুভ্র ভাই পিছন থেকে ডাকলেন।
“আলো,দাঁড়া।”
.
আমি দাঁড়ালাম।শুভ্র ভাই শার্টের বুক পকেট থেকে এক পাতা নীল টিপ বের করলেন।আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আমার কপালে একটা নীল টিপ পরিয়ে দিলেন।আমি বিস্ময় নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।এসব কি করছেন উনি?
টিপ পরিয়ে দিয়ে টিপের পাতাটা আমার হাতে গুজে দিয়ে বললেন,
“এইটার কমতি ছিল।ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল।এইবার ঠিক আছে।”
কথা শেষ করে উনি বাড়ির ভেতরে চলে গেলেন।আর আমি বরাবরের মতই বোকার মতো তাকিয়ে থাকলাম।
.
.
.
.
রাত দশটা।আমরা সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছি।সবার সামনে আমার বিয়ে নিয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।ফুল বাবা আমাকে জিঙ্গেস করলেন,
“ছেলেটাকে কেমন লেগেছে,মা?”
.
আমি ছোট্ট করে জবাব দিলাম,
“ভালো।”
.
ফুল মা বললেন,
“তুই কি তাহলে রাজি?”
.
“হ্যাঁ।”
.
“আমরা তাহলে ওদের জানিয়ে দেই?”
.
“দাও।”
.
“বিয়ের দিন কি ঠিক করে ফেলবো?”
.
“তোমরা যা ভালো মনে করো।”
.
দাদীমনি বললেন,
“যাক,আলোর বিয়েটা অন্তত দেখে যেতে পারবো।এবার ভালোই ভালোই শুভ্রর বিয়েটা হলেই হয়।”
.
শুভ্র ভাই এবার উঠে দাঁড়ালেন।চলে যেতে যেতে বললেন,
“মা,আমাকে চা দিয়ে যেও।”
.
ফুল মা বিন্তিকে ডাকছিলেন।আমি বললাম,
“ফুল মা,বিন্তি তো ঘুমিয়ে পরেছে।ওকে ডেকো না।আর তোমাকেও যেতে হবে না।আমি দিয়ে আসছি।তোমরা গিয়ে শুয়ে পরো।”
.
.
আমি চা বানিয়ে শুভ্র ভাইয়ের ঘরে এলাম।ততক্ষণে সবাই নিজের ঘরে চলে গেছে।আমি শুভ্র ভাইয়ের ঘরে ঢুকে দেখলাম উনি খাটে আধশোয়া হয়ে একটা ইংরেজি উপন্যাস পড়ছেন।আমি কোনো কথা না বলে কাপে আঙুল দিয়ে টোকা দিয়ে শব্দ করলাম।শুভ্র ভাই বই থেকে মুখ না তুলেই বললেন,
“টেবিলের উপর রেখে দিয়ে যা,আলো।”
.
আমি গেলাম না।চা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম।শুভ্র ভাই কয়েক মিনিট পর বই থেকে মুখ তুলে বললেন,
“কি সমস্যা?বললাম তো কোথাও রেখে দিয়ে যা।আমার চা নিতে দেরি আছে।”
.
“থাক দেরি।আমি দাঁড়িয়ে থাকবো।আমার কোনো কাজ নেই এখন।”
.
“কেন?কাজ নেই কেন?তোর তো এখন অনেক কাজ থাকার কথা।”
.
আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,
“হ্যাঁ,তাই তো।আমার তো এখন পেত্নিগিরি করতে যাওয়ার কথা।তাই না?”
.
শুভ্র ভাই এবার হেসে উঠলেন।হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিলেন।আমি শুভ্র ভাইয়ের সামনে বসে পরলাম।উনি চায়ে চুমুক দিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন।বললেন,
“আলো,সত্যি করে একটা কথা বল তো।”
.
“কি কথা?”
.
“তোর কি সত্যি ছেলেটাকে পছন্দ হয়েছে?”
.
আমি হেসে বললাম,
“হ্যাঁ।”
.
“হ্যাঁ মানে?এই ছেলেটার কোনো দায়িত্ববোধ নেই,আলো।রাতের বেলা একটা মেয়েকে রাস্তায় একা ফেলে চলে গেল।তাও আবার সেই মেয়ে যে কিনা তার হবু বউ।মিনিমাম সেন্স থাকলে কেউ এটা করে?কত রকম বিপদ হতে পারতো।তার পরেও বলছিস যে একে তোর পছন্দ হয়েছে!?কিভাবে পছন্দ হলো তোর?”
.
“আসলে শুভ্র ভাই,উনি আমাকে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন।কিন্তু হঠাৎ অফিস থেকে জরুরি ফোন আসায় চলে যেতে হলো।”
.
“বাহ!ফোন এলো আর সাথে সাথে চলে গেল?তুই কিভাবে বাড়ি ফিরবি সেটা ভাবা কি উচিত ছিল না?”
.
“এতো কিছু ভাবার সময় ছিল না।অনেক বেশি জরুরি কল ছিল হয়তো।”
.
“স্টুপিডের মতো কথা বলিস না,আলো।একে বিয়ে করলে বিয়ের পরেও দেখবি এভাবে একা ফেলে চলে যাবে।”
.
“ব্যাপার না,শুভ্র ভাই।আমি ম্যানেজ করে নেব।”
.
শুভ্র ভাই ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন।তারপর বিরক্ত গলায় বললেন,
“তুই আমার ঘর থেকে বের হয়ে যা,প্লিজ।”
.
আমি সাথে সাথে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে এলাম।পশ্চিম দিকের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম।আকাশে একটা টুকরো চাঁদ দেখা যাচ্ছে।চাঁদের হালকা আলোয় আমার মন খারাপ ভাবটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে।আমি সেটা প্রাণপণে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।নিজেকে প্রস্তুত করছি সামনের দিনগুলোর জন্য।
.
#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here