❝মোহ মেঘের আলাপন ❞ লেখিকা: “নূরজাহান আক্তার আলো” [০৭]

0
373

❝মোহ মেঘের আলাপন ❞
লেখিকা: “নূরজাহান আক্তার আলো”
[০৭]

তখন দুপুর একটা। গ্রীষ্মের দুপুরে বাইরে কড়া রোদ। মেধা
গোসল সেরে ভেজা চুল মেলে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। ঠিক পূর্বের মতোই এলোমেলো ঘুমানোর স্টাইল। না আছে মাথার নিচে বালিশ আর না আছে পোষাকের শ্রী। আদিত্যের সঙ্গে কথা বলার পরেই গোসল সেরে নুডলস রান্না করে খেয়েছে।
সারাটাদিন টুক টুক করে কিছু না কিছু খাওয়া তার অভ্যাস। একেবারে বেশি কিছুও খাবে না। অল্প অল্প করে একের পর চলবে তো চলবেই। মেধা নুডলস খেয়ে কিছুক্ষণ টিভি দেখে
পুরো বাসা চক্কর দিয়েছে। আমানের রুমে তালা দেওয়া, সে নিজেই তালা দিয়ে গেছে।মামনির রুমেও উঁকি দিতে ভুললো
না সে। অতঃপর আদিত্যের রুমে ঢুকে বিছানায় তিন থেকে চারবার গড়াগড়ি দিয়ে তার স্মরণ হয়েছে, ”এটা তার শত্রুর বিছানা। আর শত্রুর রাতে বিছানায় হিসু টিসু করে দেওয়ার বদ অভ্যাস থাকলেও থাকতে পারে। ”
একথা ভেবে সে ঝটপট উঠে জামা কাপড় ঝেড়ে নিলো। এই কথা আগে স্মরণ হলে কখনো এই বিছানায় শুতো না। বড্ড ভুল হয়ে গেছে তার।এরপর সে আদিত্যের বেলকণিতে গিয়ে
এদিক-ওদিক তাকিয়ে মেলে রাখা তোয়ালেতে মুখ মুছলো। তোয়ালে থেকে দারুণ স্মেল পাচ্ছে বোধহয় বিদেশী শ্যাম্পুর হবে। হুম, পুরো শ্যাম্পুটা হাপিস করতে হবে। ছেলে মানুষের এত নামী দামী শ্যাম্পুর ব্যবহার করার কি দরকার? তাদের জন্য দুই টাকার মিনি প্যাক গুলোই যথেষ্ট।সেখানে কিছুক্ষণ
দাঁড়িয়ে এসব ভেবে পুনরায় রুমে আসলো। ড্রেসিংটেবিলের
সামনে আদিত্যের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সাজিয়ে রাখা।
সে এক এক করে বারোটা হাত ঘড়ি পেলো।সুন্দর ঘড়িগুলো
একসাথে পাঁচটা পড়ে হাতনাচা করে রেখে দিলো। না চুড়ির মতো সুন্দর দেখাচ্ছে না। তারপর আদিত্যের অতি পছন্দের পারফিউম গুলো থেকে একটা নিয়ে নিজের শরীরে দিলো।
জেন্স হলেও স্মেণ দারুণ। তাছাড়া সে তো বাইরে যাচ্ছে না মনের খোরাক মিটাতে রুমেই থাকছে।
অতঃপর সে সেখান থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে গিয়ে মুখে ক্রিম মেখে চোখে গাঢ় করে কাজল দিলো। তারপর টকটকে লাল রঙের লিপস্টিক ঠোঁটে দিয়ে কী মনে করে ঘষে মুছেও ফেললো। হাতে কাজ নেই, বাসাও ফাঁকা। একবার ভাবলো ছাদ থেকে ঘুরে আসবে। যেই ভাবা সেই কাজ। কিন্তু দরজা খুলতে গিয়ে দেখে দরজা বাইরে থেকে লক করা। আদিত্যর কাজ বুঝতে বাকি নেই তার। দরজা ধরে কিছুক্ষণ টানাটানি করে না পেরে আদিত্যকে মন খুলে গালিও দিলো। তারপর জানালার পাশে বসে পথচারীদের যাতায়াত দেখলো। একটা সময় অলসতা ভর করল তার মাঝে। সে শুয়ে শুয়ে আকাশ
দেখতে লাগল। আকাশ নিয়ে আবোলতাবোল গানও গাইল।
যে গানের আগামাথা কিছুই নেই আর না আছে সুর। যদিও এটাকে গান বলা যাবে না, তবে পাগলের প্রলাপ বললে ভুল হবে না। গান থামিয়ে সে আকাশ কুসুম ভাবতে ভাবতে ঘুমে
তলিয়ে গেল। ধীরে ধীরে ঘুম গাঢ় হয়ে স্বপ্নের দেশেও পাড়ি
দিলো। এর প্রায় ঘন্টা খানিক পরে আদিত্য বাসায় ফিরলো।হাতের ব্যাগ রান্নাঘরে রেখে একবার মেধার রুমে ঢু মারতেই তার চোখ চড়কগাছ। সে দৃষ্টি সরিয়ে দ্রুত প্রস্থান করল। এই মেয়ে এত বড় হয়েছে অথচ ড্রেস…! সত্যিই কিছু বলার নেই গাধীটাকে। একটু যদি বুদ্ধি থাকত এর মাথায়।আদিত্য রুমে
ফিরে ঝটপট ফ্রেশ হয়ে আগে খাবার গরম করলো। তারপর
সেগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে আবার গেল মেধাকে ডাকতে। কুম্ভকর্ণ নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে, সময় যে গুটি গুটি পায়ে তিনটার ঘরে পৌঁছে সে খেয়াল নেই। কোথায় ওকে সুন্দর করে বেড়ে খেতে দিবে তা না ওকেই…! আদিত্য এবার মাঝসিঁড়ি থেকে
মেধাকে ডাকতে ডাকতে গেল। যাতে সে ডাক শুয়ে নড়েচড়ে সুন্দর করে শোয়। সত্যি সত্যিই মেধা আদিত্যের ডাক শুনে
ঘুমের ঘোরে পোশাক ঠিক করে ওর কানে বালিশ চাপা দিয়ে
রাখল। যাতে আদিত্যের ডাক তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে। ওর কান্ড দেখে আদিত্য বালিশটা কেড়ে নিয়ে বলল,

-”খেতে হবে, ওঠো তাড়াতাড়ি, মেধা এ্যাই মেধা ।”

উপরোক্ত কথাটাবার দু’য়েক বলেও মেধার সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। সে ঘুমে বিভোর। আদিত্য বেশ কয়েকবার ডাকলে এবার প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে উত্তর দিলো,

-”বা* খাবে।”

একথা বলে সে পুনরায় ঘুমের দেশে তলিয়ে গেছে। আদিত্য টেনে বসিয়েও কাজ হলো না। একপর্যায়ে মেধা বসে থাকতে থাকতেই বিছানায় কাত হয়ে পড়ে গেল। আর সেই অবস্থাতে আবার ঘুম। অর্থাৎ পৃথিবী উল্টে যাক তার কাছে ঘুম আগে। ঘুম থেকে উঠেই নাহয় দেখবে পৃথিবী কোন দিকে উল্টালো।
আদিত্য বিরক্ত হয়ে কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে সেও
পাশে শুয়ে পড়ল। একাজটা কেন করলো সে জানে না তবে মন বললো তাই করেছে। কেন জানি এই মুহূর্তে ঠিক ভুলের বিচার করতে ইচ্ছে হলো না তার। ইচ্ছে হলো পাশের চঞ্চল মেয়েটাকে দু’চোখ ভরে দেখার, আলতো করে স্পর্শ করার, অবাধ্য মনের সঙ্গে যুদ্ধে করে দুরুদুরু বুকে তার অলক্ষ্যেই ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেখার। এইটুকু বাদে তার নিষিদ্ধ কোনো চাওয়া নেই। তবে মাঝে মাঝেই ভীষণ ইচ্ছে করে মেয়েটাকে হৃদয় চিরে দেখিয়ে চিৎকার করে বলতে, “দেখ পাগলি দেখ ঠিক কতটা ভালোবাসি তোকে।”
মনে মনে এসব কথা ভেবে যখনই আদিত্য মেধার গাল ছুঁতে যাবে, তখন মেধা আচমকা তার পেটের উপর পা তুলে গলা জড়িয়ে ধরে বলল,

-”এই বল বল আমার সঙ্গে বল।”

-”কি আশ্চর্য, কি বলবো?”

-”যেটা বললাম কিছুক্ষণ আগে সেটা বল।”

-”সেটা মানে কোনটা?”

-”আচ্ছা আমার সঙ্গে সঙ্গে বলবি ওকে?”

-”হুম।”

-”আমরা দুই ভাই
বাদাম বেচে খাই।
বাদামভর্তি পোকা
তুই একটা বোকা।”

আদিত্য হতবুদ্ধি হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। কী বলে এই মেয়ে? মাথা কী পুরোটা গেছে এর? মেধা ততক্ষণে বালিশ ছেড়ে আদিত্যের বুকে মাথা রেখেছে। শক্ত করে ধরে রেখেছে আদিত্যকে।আদিত্যও নেত্রজোড়া বন্ধ করে অনুভব করছে প্রিয়সীকে।তখন আরো একটা জিনিস খেয়াল হলো তার, মেধার শরীর থেকে ওর পারফিউমের স্মেল পাচ্ছে। সে এবার নিঃশব্দে হাসল।তারপর দ্বিধা ঝেড়ে মেধাকে আলতো করে আগলে নিলো তার তৃষ্ণার্ত বুকে।তখন অনাবিল সুখরা হানা দিলো আদিত্যর বুকের বাঁ পাশে।বেশ কিছুক্ষণ এভাবে
থেকে আদিত্য মুখ উঁচিয়ে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো মেধার ললাটে। যা মেধার অজানায় রয়ে গরল।একপর্যায়ে আদিত্য কিছু ভেবে আস্তে করে মেধাকে সরিয়ে দিয়ে উঠে পড়ল। এই মেয়ে উঠে গেলে কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে।এমনিতে অহেতুক অভিযোগের তীর ছুঁড়ে তার দিকে। এখন এমন অবস্থায় দেখলে ধর্ষকের অপবাদ দিতে একটুও কৃপণতা করবে না। এসব ভেবে সে আরো একবার ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে নিলো, চারটা বাজতে বিশ মিনিট বাকি। সে আর না দাঁড়িয়ে নিচে গিয়ে খেয়ে রুমে গেল রেডি হতে।

To be continue……!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here