#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ০৬
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
১৫,
যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে ফুচকার স্টলে দাড়িয়ে একসাথে ফুচকা খাচ্ছে রাইমা ও শার্লিন। ফুচকায় বেশি ঝাল দেওয়ার ফলে ঝালে দুজনের চোখ মুখের অবস্থা কাহিল। তবুও খাওয়া থামানোর নাম নেই কারোরই। দুজনেই ২প্লেট করে ৪প্লেট ফুচকা খেয়ে এরপর থামলো তাদের খাওয়া। ফুচকার বিল মিটিয়ে ফুচকার স্টল থেকে একটু দূরে গিয়ে শার্লিন রাইমার হাত চেপে দাড়িয়ে পরে। রাইমা শার্লিনের দিকে তাকিয়ে জিগাসা করে,
“কি হলো তোর?”
“আরও এক প্লেট ফুচকা খাই চল প্লিজ!”
শার্লিন রাইমার হাত ধরে অনুরোধের সুরে বলে। রাইমা চোখ রাঙায়। শাসনের স্বরে বলে,
“আর এক প্লেট কেনো একটা ফুচকাও যদি খেতে চেয়েছিস? তোরে উ’স্টা দিয়ে এখানেই ফেলে দিবো। পাজি মেয়ে, একগাদা ঝাল দিয়ে ফুচকা খাইয়ে ছাড়লি। সেটাও এক প্লেট না, দু প্লেট। আরও এক প্লেট খেয়ে নিজে তো ম”রবি। সাথে আমাকেও মা”রবি।”
“এমন করিস কেন তুই? চল না খাই।”
শার্লিন বাচ্চাদের মতো বায়না ধরে কথাটা বলে। রাইমা ঠোঁট টিপে হাসে শার্লিনের অবস্থা দেখে। হাসি লুকিয়ে রাইমা বলে,
“খাইলে তুই একা খা। আমি খাবো না। আমার ম”রার শখ নেই। অবশ্য ফুচকায় ঝাল দিয়ে খেয়ে কেউ ম”রেনা। শুধু সকালে ওয়াশরুমে গেলে ঝাল দিয়ে ফুচকা খাওয়ার রিয়েকশন টের পায়।”
শার্লিন রাইমার কথার প্যাচ বুঝতে পারে। সে কথা ঘোরাতে বলে,
“আচ্ছা খেলাম না চল। ম”রে লাভ নেই৷ এখনও শ্বশুর বাড়ি তো দূর যাওয়ার রাস্তাই দেখলাম না।”
“তোর বিয়ের কথা বলবো আংকেলকে। বিয়ে পাগল কোথাকার!”
“কোথাকার নই। তোরই বান্ধবী।”
“আচ্ছা আমরা রাস্তায় দাড়িয়ে বকবক করছি কেনো? ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে টেনে আনলি এখানে। কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।”
রাইমা চেয়েছিলো কোনো একটা পার্কে গিয়ে হাঁটাহাটি করতে করতে শার্লিনের সাথে কথা বলবে। কিন্তু শার্লিন তাকে ডাকতে গিয়ে বাসা থেকে বেরুনোর পর জানায় যমুনা ফিউচার পার্কে আসবে। তার কিছু দরকার আছে। তাই তাদের এখানে আসা। শার্লিন রাইমার কথার উত্তরে বলে,
“৫মিনিট ওয়েট কর। ১০মিনিটে এখানে আসার কারণ বুঝতে পারবি।”
“এটা কেমন কথা হলো? ৫মিনিট অপেক্ষা করে ১০মিনিটে যদি কারণ বুঝতে হয়। তবে ১০মিনিটই অপেক্ষা করা ভালো।”
“তার আগে চল ভেতরে যাই।”
১৬,
শার্লিন আর রাইমা পা বাড়ায় পার্কের ভেতরে ঢোকার জন্য। ভেতরে ঢুকে সোজা চলে যায় রাইমা আর শার্লিনের এই পুরো পার্কের ভেতরে তাদের সবথেকে প্রিয় জায়গা ইন্ডিয়ান ডোসা ঘরে। এখানে আসলে তারা প্রায়ই ইন্ডিয়ান খাবারগুলো টেস্ট করে। নিজ দেশের খাবার তো অনেক খায়, মাঝেমাঝে এখানে এসে খাবারের স্বাদ বদলায়। দুজনের ফুডকোর্টের ভেতরে বসে শার্লিন চটপট ওয়েটারকে ডেকে ইন্ডিয়ান রাজকাচুরী, ছোলা বাটুরা অর্ডার করে দেয়। দিয়ে অপেক্ষা করে যার জন্য এখানে আসা। ওয়েটার খাবার দিয়ে যেতেই শার্লিন খাবারের উপর হাম’লে পরার মতো খাওয়া শুরু করে। রাইমা তা দেখে বলে,
“বাড়ি থেকে বের করলি আমার কথা শুনবি বলে। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে খাবার তোকে ডাকছিলো বলে বাইরে আসছিস। খাদক, পেটুক মেয়ে।”
“খেয়ে মাথাটা ঠান্ডা করি। এরপর শুনবো। না শুনে তো তোকে ছাড়বো না।”
শার্লিন হেসে কথাটা বলে। এরপর চামচ দিয়ে রাজকাচুরী মুখে পুরে নেয়। খেয়ে একটু থেমে পানি খায়। রাইমা আস্তে আস্তে খাচ্ছে আর শার্লিনের খাওয়া দেখছে। এতোগুলো ফুচকা খাওয়ার পর তো পেটে আর কিছু খাওয়ার জায়গা নেই। অথচ এই মেয়ে গপাগপ খেয়ে যাচ্ছে। এরপরও শার্লিন চিকন স্বাস্থ্যের অধিকারী। কিছু মানুষই থাকে, তারা প্লেটের পর প্লেট খাবার খেয়ে যায়, তবুও চিকনই থাকে। শার্লিন বোধ হয় সেই কিছু মানুষের একজন। রাইমা আনমনে এসব ভাবতেই মুচকি হাসে। এই মেয়েটাই তার মুচকি হাসির কারণ। সবসময় ভালোবাসাই যে হাসির কারণ হয়! এমনটা নয়। কিছু মানুষই থাকে এভাবে কারণে অকারণে হাসানোর জন্য।
“হেই শার্লিন।”
কারোর মুখে নিজের নাম শুনে শার্লিন খাওয়া থামিয়ে সামনের দিকে তাকায়। রাইমা উল্টোপিঠ করে বসেছিলো শার্লিনের মুখোমুখি হয়ে। শার্লিনের চাহনী লক্ষ্য করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। এমনিই গলার স্বর শুনে ভেতরে ভেতরে কেমন একটা খচখচানি অনুভূতি অনুভব হচ্ছিলো। ঘাড় ঘুরিয়ে মানুষটিকে দেখতেই রাইমার ঠোঁটের কোণের হাসি মিলিয়ে যায়। তার সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটিও বোধ হয় রাইমাকে আশা করেনি। সেজন্য সেও একপ্রকার থমকেই আছে। রাইমা ঘাড় ঘুরিয়ে নেয়। টেবিলের দিকে মাথা এলিয়ে জোড় কদমে কয়েকটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেয়। এমনটা কি করে হলো! এই লোক এখানে কি করে? রাইমার মাথা ঘুরিয়ে উঠে। অনাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে কেমন একটা হাসফাস অনুভূতি হচ্ছে তার। শার্লিন এতোক্ষণে উঠে লোকটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শার্লিনের পাশের চেয়ারটায় বসিয়েছে। রাইমা নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। শার্লিন রাইমাকে মাথা নিচু করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিগাসা করে,
“তোর কি শরীর খারাপ লাগছে? এমন হাসফাস করছিস কেনো?”
“না আ’ম অলরাইট। আমার কিছু হয়নি। কিন্তু ইনি?”
রাইমা নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টায় হাসার চেষ্টা করে প্রশ্নটা করে। লোকটিও অবাক নয়নে রাইমাকে দেখে যাচ্ছে। শার্লিন হেসে বলে,
“তোরে আমার বাসায় ডেকেছিলাম যে কারণে, এই সেই কারণ। মিঃ ইফরাদ। যাকে শর্টে আমি ইফু ডাকি। যদিও ইফু নামটা মেয়ে মেয়ে লাগে। তবুও আমি এটাই ডাকি।”
রাইমা হালকা হাসার চেষ্টা করে শার্লিনের কথায়। শার্লিন ইফরাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি আপনি এখানে এসে বোবা হয়ে গেলেন? এমনিতে তো আমায় কল দিয়ে কানের পোকা নাড়িয়ে ফেলেন। এখন আমার বান্ধবীকে একটা হাই হ্যালো বলতেও আপনার সমস্যা হচ্ছে?”
“একচুয়ালি বিষয়টা তা নয় শার্লিন। তোমার বান্ধবী আমার চেনা মানুষ। ৪বছর পর দেখছি তো! তাই একটু শকড হয়ে বসে আছি।”
১৭,
রাইমার গলা শুকিয়ে যায়। বারবার ফাকা ঢোক গিলে ইফরাদের কথা শোনার পর। শার্লিন অবাক হয়ে দুজনের দিকে তাকিয়েই জিগাসা করে,
“মানে?”
“মানে তেমন কিছু নয়। তোমার বান্ধবী আমার বোনের বান্ধবী ছিলো একসময়। সেই থেকে চেনাজানা। এরপর আমরা এলাকা ছেড়ে চলে যাই। সেই থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। দেখাসাক্ষাৎ সেটাও হয়নি একপ্রকার। তো সেজন্য এতোদিন পর দেখে একটু অবাক হলাম।”
ইফরাদ মুচকি হেসে উত্তর দেয়। শার্লিন বললো,
“আপনার বোন আমার বান্ধবীর বান্ধবী ছিলো বলতে? আর যদি বান্ধবীই হতো! তবে যোগাযোগ দেখাসাক্ষাৎ কি করে বন্ধ হলো? আমায় একটু কেউ ক্লিয়ার করে বিষয়টা বলবে?
ইফরাদ রাইমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি ব্যাপার রাই? আমায় দেখে এরকম চুপচাপ হয়ে গেলে কেনো? কিছু তো বলো! তোমার বান্ধবী তো কিছু বুঝতে পারছেনা।”
রাইমা মাথা নিচু করে নেয়। ভেতরে ভেতরে কান্নার দমক আঁটকে রাখার ফলে ইফরাদের কথার উত্তর দেওয়ার আগেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠে রাইমা। শার্লিন অবাকের পর অবাক হচ্ছে। সে রাইমার কান্না দেখে উঠে আসে। রাইমার পাশে বসতেই রাইমা জাপ্টে ধরে শার্লিনকে। ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলে,
“বাসায় চল। আমার কষ্ট হচ্ছে।”
শার্লিন অসহায় চোখে ইফরাদের দিকে তাকায়। ইফরাদ চোখের ইশারায় শার্লিনকে আশস্ত করে। বলে,
” চলো তোমাদের বাসায় পৌছে দিই!”
“চলুন।”
শার্লিন রাইমাকে ইশারায় উঠতে বলে। ফুডকোর্টের বিল দিয়ে দুজনের ধীরে ধীরে হেটে পার্কের ভিতর থেকে বের হয়। ইফরাদ ওদের পিছন পিছনই আসছিলো। রাইমা নিজেকে স্থির রাখতে পারছেনা। সময়ে সময়ে কেঁপে উঠছে। হালকা হালকা শীতের আবেশ থাকার জন্য রাইমার একটু ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভব হচ্ছিলো। শার্লিন বুঝতে পারে, কিন্তু কিছু করার নেই। হাতে শুধু ছোট্ট পার্স এনেছে দুজনই। ফোন আর টাকা রাখার জন্য। এখন শাল কেনার কথা বললেও রাইমা বারণ করবে। শার্লিন ফোন বের করে ইফরাদকে টেক্সট করে বিষয়টা শেয়ার করে। এরপর ইফরাদের দিকে ইশারা করে ফোন চেইক করতে বলে। ইফরাদের ফোন হাতেই ছিলো। শার্লিন ইশারা করার আগেই সে টের পেয়েছে। সে শার্লিন আর রাইমার উদ্দেশ্যে বলে,
“তোমরা একটু অপেক্ষা করো। আমি ১০মিনিটে আসছি।”
“অপেক্ষা করার বদলে আমরা চলে যাই?”
রাইমা দুর্বল কণ্ঠে বলে। শার্লিন কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,
“তুই একটু নিজেকে শক্ত করবি প্লিজ। আমার তোর এই অবস্থা দেখে কান্না পাচ্ছে। একটু অপেক্ষা করি। আমার একা একা ভয় করছে তোকে নিয়ে বাসায় যেতে। সন্ধ্যাও হয়ে আসবে যেতে যেতে। ইফরাদ যাক না আমাদের সাথে প্লিজ!”
“আচ্ছা অপেক্ষা করি। আপনি যান কি দরকার সেরে আসুন।”
১৮,
ইফরাদ চলে যায় রাইমার সম্মতি পেতেই। ইফরাদ সরে যেতেই রাইমার কান্নার গতি বেড়ে যায়। আশপাশের কিছু মানুষ অবাক নয়নে রাইমাকে দেখে চলে যাচ্ছে। শার্লিন একহাতে রাইমার হাত অন্যহাতে বাহু আকড়ে দাড়িয়ে আছে। রাইমা নিজেকে সামলাতে ফাকা হাতে নিজের পরণের জামা খামচে ধরে। তখনই ওদের সামনে কোথা থেকে জানি দিগন্ত এসে দাড়ায়। রাইমা নিচ দিকে জুতা পরা পা দেখে মাথা তুলে তাকায়। দিগন্তকে দেখে অস্ফুটস্বরে বলে,
“আপনি এখানে?”
“তার আগে এটা বলুন তো! রাইমা খন্দকারকে তেজের সহিত দেখলাম পরপর দুদিন। সেখানে আজ তাকে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে কাঁদতে দেখে আমার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না বিষয়টা। নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করছেন? নাকি লড়াই করার সৎ সাহস নেই?”
“দেখুন না ভাইয়া, আমি ওকে কিছু বুঝিয়ে সামলাতেই পারছি না। কেঁদেই যাচ্ছে।”
শার্লিন দিগন্তের কথার আগমাথা বুঝতে পারেনা। পর জানা যাবে এই ভেবে সে পাশ থেকে কথাটা বলে। দিগন্ত হেসে উঠে। রাইমার কান্নার গতি কমে এসেছে। শার্লিন অবাক হয়ে দিগন্তকে হাসতে দেখে প্রশ্ন করে,
“আপনি হাসছেন?”
“দুই ছিচকাদুনে এক জায়গায় হলে কারোর কথায় কি কারোর কান্না থামে?”
“আমরা মোটেও ছিচকাদুনে নই মি:। জাস্ট কিপ ইউর মাউথ শাট। আপনার সাথে কথা বলার মুড নেই আমাদের।”
রাইমা ঝাঁজালো স্বরে কথাটা বলে। দিগন্ত নিজের হাসির মাত্রা বাড়িয়ে বলে,
“পারেন তো শুধু তেজ দেখি এটাই বলতে। আর কোনো কথা মুখ দিয়ে বেরিয়েছে কিনা মনে পরছেনা আমার। আপনার কি মনে পরে? আপনি আমায় চুপ হতে বলা ব্যতিত আর কিছু বলেছেন?”
“আপনার সাথে মোটেও এখন রাস্তায় দাড়িয়ে ঝগড়া করার মতো এনার্জি নেই আমার। কি বলেছি না বলেছি ভালো করেই মনে আছে। সময় মতো সেটা বোঝা যাবে। এখন সামনে থেকে সরুন। যা করতে এসেছেন। তা করতে যান।”
“নিজেই বললেন এটা রাস্তা। তো সেই হিসেবে রাস্তায় চলাফেরা করুন। রাস্তায় ঝগড়া যদি শোভা না পায়। তবে কান্না করাও শোভা পায়না মিস রাইমা খন্দকার।”
রাইমা চুপ করে থাকে দিগন্তের এই কথায়। তার একটুও ভালো লাগছেনা কথা বাড়াতে। দিগন্ত নিজের চশমা ঘুরিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। যাওয়ার আগে বলে,
“নিজের দুর্বলতা যেখানে সেখানে দেখাতে নেই। আর একটা কথা। ইন ফিউচার সম্পর্কে আমার বেয়াইন সাহেবা হচ্ছেনা। চোখের জল জমিয়ে রাখুন। বলা তো যায়না কখন কাজে লেগে যায়। আমার কাছে নাকানিচুবানি খাওয়ার পরও তো জেদের চোটে কাঁদতে হবে।”
দিগন্ত চলে যায়। এসেছিলো বোনের জন্য শপিং করতে। তার আগেই রাইমাকে কাঁদতে দেখে তাদের সামনে এসে বাড়তি কথাগুলো বললো। কান্না দিগন্তের পছন্দ নয়। এজন্য আগ বাড়িয়ে কথা বললো। নতুবা তার কথা বলার প্রয়োজন ছিলো না। দিগন্ত চলে যেতেই রাইমা তেলে বেগুনে জ্ব’লে উঠার মতো মেজাজ নিয়ে শার্লিনকে বললো,
“দেখলি! দেখলি লোকটা কিভাবে অপমান করে চলে গেলো।”
“তার আগে এটা বল উনার সাথে দেখাই হলো একদিন। উনি বললে দুদিন তোদের দেখা হয়েছে। তারমানে পরিচয় হওয়ার আগ থেকেই চিনতি। গতকালের পর থেকে তুই বাসাতেই ছিলি যতোটুকু মনে হয়। এরপর আমার সাথে। তাহলে ২য় দেখা কি করে হলো?”
“আগে থেকেই চিনতাম। অ”সভ্য লোক একটা। আবার আমায় বলে অ’সভ্য।”
“আচ্ছা সব কাহিনী বাসায় গিয়ে শুনবো। আমার সব কেমন জট পাকিয়ে যাচ্ছে। ইফরাদ তোকে চিনে, দিগন্ত ভাইও চিনে। মাঝখানে আমি অবলা নারী, তোকে গতো ৪বছর ধরে চিনেও এখন অচেনা অচেনা লাগছে।”
শার্লিন মুখ গোমড়া করে কথাটা বলে। তখনই ইফরাদ শাল কিনে নিয়ে চলে আসে। এসে শার্লিনের হাতে তুলে দেয়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পরে রিকশা খোজায়। শার্লিনের হাতে ব্যাগ দেখে রাইমা ভ্রু কুঁচকে জিগাসা করে,
“এটা গিফট দিলো নাকি? কি এটা?”
“ধুর গিফট না। তোর জন্য শাল আনালাম। তোর ঠান্ডায় কাঁপাকাপি উঠে গিয়েছে টের পেলাম। রিকশায় উঠলে আরও বাতাসে অবস্থা কাহিল হবে। সেজন্য ইফরাদকে আনতে আমিই বলেছিলাম।”
“এতোটাও ঠান্ডা নয়।”
রাইমা নাক মুখ কুঁচকে উত্তর দেয়। শার্লিন ধম’কের সুরে বলে,
“ভদ্র মেয়ের মতোন গায়ে জড়িয়ে নে।”
“রিকশা পেয়ে গেছি। আসো তোমরা।”
শার্লিন রাইমার শরীরে শাল জড়িয়ে দিতেই ইফরাদ এসে কথাটা বলে। দুটো রিকশা ঠিক করেছে সে। একটায় দু বান্ধবী উঠে বসে। অন্যটায় ইফরাদ। উঠে বসতেই এক রিকশা অন্য রিকশাকে অনুসরণ করে চলতে শুরু করে। ঠিকানা ইফরাদ আগেই বলে দিয়েছে। রাইমা রিকশায় বসে শার্লিনের কাধে মাথা এলিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে থাকে সে। চোখের সামনে ভেসে উঠে খিলখিলিয়ে হেসে উঠা একজনের মুখ। রাইমার চোখ বন্ধ অবস্থায় কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে শার্লিনের কাধ ভিজিয়ে দেয়। শার্লিন টের পেয়েও কিছু বলেনা। বাসায় গিয়ে যা জানার জিগাসা করবে সে। আপাতত কেঁদে মন হালকা করুক। রাইমা বন্ধ চোখের পাতায় অস্পষ্ট মুখটা ক্রমশ পুরোপুরি ভেসে উঠে। রাইমার কন্ঠস্বর দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে আসে,
“মাফিন।”
শার্লিন রাইমা আস্তে করে নামটা বললেও নামটা শুনতে পায়। নামটা কেমন তার কাছে চেনা চেনা লাগছে। কার কাছে শুনেছে! মনে করতে পারছেনা শার্লিন।
চলবে?
ভুলত্রুটি মার্জনীয়। লিখতে অনেকটা দেরি হয়ে গেলো। রিচেইক করিনি।ভুলগুলো ক্ষমা করবেন। আর একটু প্রবলেম থাকায় অনিয়মিত হয়ে গেলাম। দুঃখিত৷ রাত করেই গল্প দিবো এখন থেকে। আসসালামু আলাইকুম