#ইতি_আলাপী কলমে: মম সাহা পর্ব সংখ্যা: দুই

0
233

#ইতি_আলাপী
কলমে: মম সাহা

পর্ব সংখ্যা: দুই

৫.

সালাম সাহেব বহু পুরোনো অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার। অনেক ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর কেইস তিনি সমাধান করেছেন। তিনি আশা রাখেন, এই কেইসটাও সে সমাধান করবে। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। সে উঠেপড়ে লেগে গেল সমাধানে।

মিত্রের সাথে পালিয়ে যাওয়া মেয়েটার নাম সালেহা। বয়স মিত্রের চেয়ে বেশি। একুশ বছর। মেয়েটির দিন দুনিয়ায় কেউ নেই। গার্মেন্টসে চাকরি করেই নিজের ভার বহন করতো। মিত্রের দেহের টুকরো টুকরো অংশ পাওয়া গিয়েছে, আপাত দৃষ্টিতে দেখলে বুঝা যায় মেয়েটিই হয়তো করেছে কাজটা। আবার চিরকুটে ‘ইতি আলাপী’ লিখাটাও ইঙ্গিত করছে কোনো মেয়েকে। কিন্তু সালামের বিজ্ঞ মস্তিষ্ক তা মানতে চাচ্ছে না।

সালাম সাহেব নিজের চেয়ারে বসে গভীর ভাবনায় মগ্ন। তন্মধ্যেই তার ঘরে প্রবেশ করল তার সহকারী দীপন। সালাম সাহেবকে চিন্তিত দেখে সে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“স্যার, কিছু হয়েছে?”

সালাম সাহেব মাথা নাড়ালেন, চিন্তিত কণ্ঠে উত্তর দিলেন,
“কেইসটা নিয়ে চিন্তা করছি। আচ্ছা তুমি কী সালেহার আশেপাশে কোনো খোঁজ পেলে? মেয়েটা কেমন ছিল বা অন্যকিছু?”

“হ্যাঁ স্যার। সালেহা একটা বস্তিতে থাকত, তার সাথে কেউ থাকতো না। বস্তিতে মাফিন নামে একটা ছেলে ছিল যে সালেহার পেছনে সবসময় নাকি পরে থাকত। মাফিন জানাল বস্তির মালিক ইব্রাহিম শেখ লোকটা নাকি সালেহাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল এবং প্রায় বিরক্ত করত তাই মাফিন একদিন লোকটাকে মারধরও করে। সে সালেহাকে এত বেশিই পছন্দ করতো যে সালেহার আশেপাশে কাউকে পছন্দ করতো না।”

সালাম সাহেবের গম্ভীরতা বাড়লো। সে ভাবুক স্বরে বলল,
“তবে কী মাফিন এমনটা করেছে? সে হয়তো জেনে গিয়েছিল পালিয়ে যাওয়ার কথা? আর তারপর হয়তো এমন করেছে?”

“মাফিন, ইব্রাহিম শেখ দু’জনই সন্দেহের তালিকাতে আছে স্যার।”

“দু’জনকেই থানায় আনো, জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।”

দীপন মাথা নাড়িয়ে বের হতে নিলেই সালাম সাহেব পিছু ডাকলেন,
“আচ্ছা দীপ, তোমার কী আর কাউকে সন্দেহ হয়?”

দীপন দাঁড়ালো, স্যারের দিকে তাকিয়ে সন্দিহান কণ্ঠে বলল,
“স্যার, মিত্রের বাবাকেও কিন্তু এই তালিকায় রাখা যায়। কালকে যখন গেলাম ভদ্রলোকের বাড়ি, মিত্রের কাটা মাথাটা দেখে আমরাও থমকে গিয়েছিলাম কিন্তু ভদ্রলোক অটুট ছিলেন। তার একমাত্র ছেলে হিসেবে তার তো ভেঙে পড়ার কথা ছিল তাই না?”

“গুড থিংকিং। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এমনটা না-ও হতে পারে। তুমি এক কাজ করো, উনার সম্পর্কেও খোঁজখবর নেওয়া শুরু করো।”

দীপন মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যেতেই সালাম সাহেব আবার চিরকুট গুলো খুলে দেখলেন। একই রকম হাতের লিখা, একই রকম পার্সেল। কোনো মেয়ের দ্বারা এটা আদৌও সম্ভব!

সালাম সাহেব ওঠে দাঁড়ালেন। হাবিলদারকে বলে গাড়ি বের করলেন। তাকে যে অনেক খাঁটতে হবে তা আর বুঝতে বাকি নেই।

৬.

শাহাদের রুমের বারান্দায় বসে আছে সালাম সাহেব। তার হাতে কফির মগ। তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে শাহাদ। ভীতু আর দুর্বল দৃষ্টি নিয়ে। সালাম সাহেব আয়েশি ভঙ্গিতে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে প্রশ্ন করলেন,
“তা শাহাদ, তোমার শরীর কী ভালো?”

শাহাদ মাথা উপর-নীচ করল। যার অর্থ ‘ভালো’। সালাম সাহেব আবার প্রশ্ন করলেন,
“বল তো, তোমাদের পাঁচজনের মাঝে পড়াশোনায় কে ভালো ছিল?”

“রিবু সবচেয়ে ভালো। তারপর ভালো ছিল মিত্র এরপর আমি তারপর রিদান ও কবির দু’জন একই রকম।”

“বাহ্! আচ্ছা, মিত্রের সাথে তোমাদের কখনো ঝামেলা হয়েছিল?”

“তেমন তো ঝামেলা কখনো হয়নি। তবে কবিরের সাথে কয়েকমাস আগে একবার ঝামেলা হয়েছিল ছোটোখাটো। তাও ওর প্রেমিকা সালেহাকে নিয়ে। সালেহাকে কবিরও পছন্দ করেছিল কারণ ও দারুণ সুন্দরী ছিল। সে নিয়ে লেগেছিল দু’জনের কিন্তু তারপর আবার সব ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছিল।”

“আচ্ছা। মিত্রের সাথে আর কারো কোনো সমস্যা ছিল?”

“না, স্যার। তেমন কোনো কিছু তো আমি জানিনা। মিত্র ভালো ছিল, সকলের সাথে মিশতো অনেক।”

সালাম সাহেব কফিটা শেষ করলেন। ধীরে উঠে গিয়ে শাহেদের রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখল।

৭.

কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আছে রিবু তার সাথে আছে রিদান ও কবির। সালাম সাহেব তাদের সামনেই পিচ ঢালা উঁচু একটা জায়গায় বসলেন, বেশ হাসিহাসি মুখে প্রশ্ন করলেন,
“বলো তো, তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট কে ছিল?”

রিদান উত্তর দিল, “রিবু। আর তারপর মিত্র, শাহাদ আর আমরা।”

সালাম সাহেব মাথা দুলালেন। কবিরের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“বলো তো সালেহার পছন্দের রঙ কী?”

সবার আগে কবিরই উত্তর দিল, “নীল।”

রিবু এবং রিদান তখন চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে কবিরের দিকে। সালাম সাহেব হাসলেন। মাথা দুলিয়ে বললেন,
“গুড। তা কবির, সালেহা কী বেশি সুন্দরী ছিল?”

কবির জবাব দিল খুব দেরিতে। আমতা-আমতা করে বলল,
“স্যার, মিত্র একদিন সালেহার পছন্দের রঙের কথা বলেছিল তো, তাই জেনেছিলাম।”

“জানতেই পারো, নরমাল ব্যাপার সেটা। আমাকে কৈফিয়ত দিচ্ছ কেন?”

কবিরের গলা শুকিয়ে এলো। চোরা চোখে আশপাশ তাকাতে শুরু করল। সালাম সাহেব তাকে আরেকটু বিভ্রান্ত করতে প্রশ্ন করলেন,
“সালেহা কোথায় কবির?”

কবির চমকে উঠল। বার বার মাথা নাড়িয়ে বলতে লাগল,
“আমি জানিনা স্যার। আমি সত্যিই জানিনা।”

সালাম সাহেব হাসলেন। পা দুলাতে দুলাতে বললেন,
“মিত্রের সাথে নাকি তোমার ঝামেলা হয়েছিল একদিন? সেজন্যই কী মেরেছ?”

কবিরের শরীর দিয়ে তড়তড় করে ঘাম বেয়ে পড়ছে। সে শার্টের হাতে ঘামটা মুছে হড়বড়িয়ে বলতে শুরু করল,
“সালেহাকে আমার পছন্দ হয়েছিল ঠিক কিন্তু সেটা ওখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমি আর এগিয়ে যাইনি, স্যার।”

“কিন্তু শাহেদ যে বলল অনেক ঝামেলা হয়েছিল নাকি তোমাদের মাঝে?”

এবার কবির বুঝতে পারল এই কথাটা কে সালাম সাহেবের কাছে পৌঁছিয়েছে। কবির রেগে চেঁচিয়ে ওঠল,
“শাহেদ এটা বলেছে? ও নিজেও তো মিত্রের সাথে ঝামেলা করেছে। পড়াশোনায় মিত্র ওর চেয়ে একটু ভালো দেখে সবসময় হিংসে করতো। কতবার ঝগড়া করেছে। তাহলে তো বলা যায় ও ই মেরেছে মিত্রকে।”

সালাম সাহেব এবার আড়চোখে দীপনের দিকে তাকাল। তার চোখে কেমন একটা রহস্য খেলে গেলো। তিনি এবার রিদান এবং রিবুর দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমরাও কী খু ন করার সময় ওদের সাথে ছিলে?”

রিবু শান্ত কণ্ঠে বলল, “না, স্যার।”

রিদানও ভয়ার্ত স্বরে জবাব দিল, “আমরা খুন করিনি স্যার, খুন করতে পারিনা। ও আমাদের বন্ধু ছিল।”

সালাম সাহেব মাথা নাড়ালেন। স্মিত হেসে বললেন,
“তোমরা এবার যেতে পারো ইয়াং বয়েস্, সাবধানে থেকো।”

রিবু, রিদান ও কবির ওঠে চলে গেল। সালাম সাহেব নিজের গোঁফে হাত দিয়ে বিজ্ঞ কণ্ঠে বললেন,
“বলো তো দীপ, খু ন করেছে কে?”

দীপন ভ্যাবাচ্যাকা খেল, আমতা-আমতা করে বলল,
“আমার তো সবাইকেই সন্দেহ হচ্ছে, স্যার।”

৮.

মিত্রের বাবা বড়ো ব্যবসায়ী হওয়ায় তার একমাত্র পুত্রের এমন নৃশংস ঘটনার কথা ছড়িয়ে গেছে চারপাশে। মিত্রদের পরিবারে তখন শোকের ছায়া। ঘটনা এত দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়ায় সালাম সাহেবের উপর চাপ সৃষ্টি হলো অনেক। কেইস দ্রুত গতিতে আগানো শুরু করলেও ফলাফল গুটিয়ে আগের জায়গাতেই এসে দাঁড়াচ্ছে।

দীপন অনুমতি নিয়ে সালাম সাহেবের কক্ষে প্রবেশ করল। সালাম সাহেব তখন ফাইল দেখছিলেন। দীপন রুমে প্রবেশ করেই সালেম সাহেবকে বলল,
“স্যার, মাফিন আর ইব্রাহিম শেখকে থানায় আনা হয়েছে। আপনি কী এখন জিজ্ঞাসাবাদ করবেন?”

“আমি আসছি, এখনি জিজ্ঞেস করবো। ওদের ফাইলই ঘাটছিলাম।”

“আচ্ছা, স্যার।”

“দীপ, আমরা আজকে একটা জায়গায় যাবো।”

“আচ্ছা, স্যার।”

সালাম সাহেব বরাবরের মতন হাসি ঝুলালেন মুখে। দীপনের কাঁধে হালকা চাপড় মেরে বললেন, “জিজ্ঞেস করবে না কোথায় যাব?”

দীপন মাথা নত করল, লাজুক স্বরে বলল, “আপনি বললে পৃথিবীও ছেড়ে যেতে রাজি স্যার।”

“সিনিয়র অফিসারকে পটাতে এসে, মেয়ে পটানোর ডায়লগ দিচ্ছ দীপ! ভেরি ব্যড।”

কথাটা বলেই সালাম সাহেব হো হো করে হেসে উঠলেন। হাসলো দীপনও। সে কথাটা মজা করে বললেও কথাটার সত্যতা এক বিন্দুও মিথ্যে নয়। সে এই চাকরিতে জয়েন করার পরেই সালাম সাহেব নামক সদা হাস্যোজ্জ্বল লোকটার একনিষ্ঠ ভক্ত হযে গিয়েছে। মানুষটা বললে হয়তো সে হাসতে হাসতে প্রাণও দিয়ে দিতে পারবে।

৯.

হলুদ বাল্বের নিচে কাঠের চেয়ার পেতে বসে আছে সালাম সাহেব। তার সামনেই বসানো হয়েছে ইব্রাহিম শেখ ও মাফিনকে। দু’জনের দৃষ্টিই ভীত। সালাম সাহেব প্রথমে প্রশ্ন করল মাফিনকে,
“বলো তো মাফিন, মিত্র কে?”

মাফিনের কণ্ঠ ভীত ও কম্পনরত। সে মিনমিন করে উত্তর দিল,
“চি চিনি না, স্যার।”

সালাম সাহেব কাঠের টেবিলে থাকা পানির গ্লাসটা মাফিনের দিকে এগিয়ে দিল। গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “পানিটা নেও, এটার প্রয়োজন তোমার।”

মাফিন সাথে সাথেই পানির গ্লাসটা নিল। গটগট করে পান করে ফেলল সবটুকু পানি। তার বুক কাঁপছে, তবুও সে উত্তর দিল,
”মিত্র সালেহার প্রেমিক।”

“বলো তো, সালেহা এখন কোথায়?”

মাফিন থেকে থেকে উত্তর দিল, “স্যার, আমি সত্যিই জানিনা সালেহা কোথায় গেছে। ওরে আমি ভালোবাসতাম ঠিকই, কিন্তু তাই বইলা কারোরে মাইরা ফেলুম, আমি এতটাও পাষাণ না।”

“ইব্রাহিম শেখ, বলুন তো মিত্রকে আপনি কীভাবে মা র লেন?”

সালাম সাহেবের এমন প্রশ্নে ইব্রাহিম শেখ নামক লোকটা বোধহয় হোচট খেল। দু-হাত জোর করে বলল, ”সাহেব, আমি সালেহাকে কিছুটা পছন্দ করতাম তা ঠিক, কিন্তু তাই বলে সালেহার এসব প্রেমিক ফেমিককে মে রে ফেলব তেমন পছন্দও করতাম না। আমার বিবি মারা গিয়াছে দশ বছর পূর্বে। আমার কাছে তাই সব মেয়েকেই ভালো লাগে। সে জন্য কী আমি এসব খু ন খারাবি করে এই বুড়ো বয়সে জেল খাঁটবো? না সাহেব, মোটেও না।”

সালাম সাহেব অভিজ্ঞ চোখে দু’জনকে পরখ করলেন। দুজনের চোখই তার দিকে নিবদ্ধ। চোখে একটা ভয়, কণ্ঠে নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করার একটা আকুতি। সালাম সাহেব উঠে দাঁড়ালেন, রাশভারি কণ্ঠে বললেন,
“ইব্রাহিম শেখ ও মাফিন, দু’জনই এখন যেতে পারেন। তবে, আপনারা শহরের বাহিরে যেন যাবেন না।”

লোকগুলো যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বিদায় হলো। সালাম সাহেবের কপালে চিন্তার গাঢ় ভাঁজ। সে কোনো মতেই হিসাব মেলাতে পারছেন না। দীপন সাথেই ছিল। পরিচিত হাস্যোজ্জ্বল লোকটার মুখে চিন্তার রেখা দেখে সে বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করল,
“স্যার, জল খাবেন? আনবো?”

সালাম সাহেব মাথা নাড়ালেন। ভাবুক স্বরে বললেন,
“দীপ, চলো তো, একটু মিত্রদের বাড়ি যাওয়া যাক।”

১০.

মৃণী বসে আছে তাদের বাগানে। ক্যানভাসে রংতুলি দিয়ে কি যেন আঁকছে। কণ্ঠে গুনগুন শব্দ। সালাম সাহেবের ভ্রু কুঞ্চিত হলো। যার ভাই মারা গিয়েছে কয়েকদিন হলো, তাও এত নৃশংস ভাবে তার কণ্ঠে এত সুর! তার হাতে শিল্পের তুলি! বড্ড বিস্মিত ব্যাপার।

সালাম সাহেব এগিয়ে গেলেন। দূর থেকে ক্যানভাসে আঁকা চক্ষুদ্বয়ে তার নজর পড়ল। কারো হাঁটার শব্দ পেতেই মৃণী হাত থামিয়ে দিল। ক্যানভাস নামিয়ে উল্টো করে রাখল বসার বেঞ্চিতে। পেছন ফিরে সালাম সাহেব ও দীপনকে দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে উঠে দাঁড়াল।

সালাম সাহেব হাসলেন। বেঞ্চিতে বসে প্রশ্ন করলেন,
“তোমার নাম কী?”

“মৃণী।”

মেয়েটা ছোটো কণ্ঠে জবাব দিলো। সালাম সাহেব আবার প্রশ্ন করল,
“কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?”

“ক্লাস টেইন।”

“বাহ্। নিশ্চয় সাইন্স নিয়ে তাই তো? ভাইয়ের সাথে মিল রেখে?”

মৃণী কাঠ কাঠ কণ্ঠে জবাব দিল, “না। আর্টস।”

“ভালো তো। তা, তুমি তো দারুণ আঁকতে জানো! কবে থেকে শিখছ?”

“খু্ব ছোটোবেলা থেকে।”

“আমি কী দেখতে পারি?”

“না। আসলো পুরোটা তো আঁকা হয়নি তাই আরকি…..”

“আচ্ছা, কোনো সমস্যা নেই। আচ্ছা, তুমি কী তোমার ভাইয়ের প্রেম বিষয়ক কথাটা জানতে?”

মৃণী আশপাশে চোরা দৃষ্টিতে চাইল। কাউকে না দেখতে পেয়ে প্রায় ফিসফিস কণ্ঠে বলল,
“হ্যাঁ, স্যার। এ নিয়ে আমাদের বাড়িতে রোজ ঝামেলা হতো। বাবা তো একবার ঐ মেয়েকে নাকি মে রে ফেলার হুমকিও দিয়েছিল। সে নিয়ে ভাই তুলকালাম চালিয়ে ছিল। বাবা মা’কে প্রচুর মেরেছিল সেদিন।”

“ওহ্ আচ্ছা। তুমি তোমার ভাইকে কতটা ভালোবাসো, মৃণী?”

মৃণী থেমে গেল। কিছু বলার আগেই তাদের সদর দরজা দিয়ে বাবার গাড়ি আসতে দেখেই মেয়েটা ক্যানভাস হাতে নিয়ে ঘরের ভিতর ছুটে চলে গেলো। ততক্ষণে মিত্রের বাবাও গাড়ি থেকে নেমে বাগানের দিকে এগিয়ে এলো। সালাম সাহেবকে দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“কোনো খোঁজ কী পেলেন?”

“খোঁজ চলছে। সন্দেহের তালিকা থেকে কিন্তু কেউ বাদ যাচ্ছে না, এমনকি আপনিও না।”

“বাদ রাখবেনই বা কেন আমাকে? সন্দেহ করুন। কিন্তু দিনশেষে আমার ছেলের খু নীর বিচার চাই।”

“অবশ্যই।”

মিত্রের বাবা ঘরে প্রবেশ করতেই সালাম সাহেব দীপনের দিকে তাকাল। ভাবুক স্বরে বলল,
“ওদের বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরা আছে খেয়াল করেছ? পার্সেল কে দিয়েছে তা জানাটা কতটা সহজ হবে আমাদের জন্য বলো তো? অথচ এতদিন খেয়ালই করলাম না!”

দীপন মাথা নাড়াল। অবাক কণ্ঠে বলল,
“সত্যিই তো স্যার! এতদিন খেয়াল করিনি যে!”

১১.

সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় সালেম সাহেবসহ দীপন। খুব ভোরে কোনো এক বোরখা পরিহিতা নারী এই পার্সেল রেখে গিয়েছিল। গেইটের দারোয়ান তখন ঝিমুচ্ছে। সালাম সাহেব মাথায় হাত রাখলেন, বেখেয়ালি কণ্ঠে বললেন,
“দীপ, আমার কেন যেন মনে হচ্ছে রাজশাহীর ট্রেনে উঠলেও রাজশাহী হয়তো যায়নি মিত্ররা। কারণ দেখো, এই বোরখা পরে মেয়েটা হেঁটে আসছে পার্সেল নিয়ে। তার মানে এদের কাছেপিঠের কোনো অলিগলি থেকে বের হয়েছিল।”

“স্যার, এই মৃণী মেয়েটাকে আমার সন্দেহ হচ্ছে।”

“তা যা বলেছ, সেও সন্দেহের বাহিরে না। কিন্তু মেয়েটাকে দেখে তেমন মনে হলেও আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এত বড়ো কাজ অতটুকু মেয়ের দ্বারা সম্ভব নয়। আর তাছাড়া যে সময় পার্সেল আসে তখন ও বাড়িতে ছিল।”

দীপনের ভাবনা বাড়ে সাথে যোগ হয় সালাম সাহেবও।

নতুন ক্লু পেয়ে কেইস আরও জটিল হয়ে উঠল যেন। দীপন মিত্রদের আশেপাশের কয়েকটা গলির সিসিটিভি ফুটেজ কালেক্ট করলেও আশানুরূপ ফল পেল না। মেয়েটা ঠিক কোন রাস্তা থেকে এসেছে বুঝা গেলো না। তার মাঝে ঘটলো আরেকটা ঘটনা। মৃণী নামের মেয়েটা হুট করে নিখোঁজ হয়ে গেলো। একদিন কোচিং করার জন্য বেরিয়ে ছিল তারপর আর বাসায় ফিরেনি। যা এই কেইসটার মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

#চলবে

[অলরেডি অনেক শব্দ হয়ে গেছে বলে অর্ধেক দিলাম আর অর্ধেক রাতে দিব]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here