#আড়ালে_ভালোবাসি_তোমায় #নুসাইবা_জান্নাত_আরহা #পর্ব২

0
516

#আড়ালে_ভালোবাসি_তোমায়
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব২

নিজের বিয়ের কথা শুনতেই ধরফরিয়ে আধশোয়া থেকে উঠে বসলাম আমি। তাও কিনা আবার বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছে মামনি, তার নিজের ছেলে অর্থাৎ রাশফিনের সাথে। হঠাৎ করে এই কথা শোনাতে যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। আমি কিছুসময় নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম।

এইতো আজ সকালেই ভার্সিটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। তখন রাশফিন ভাই আমার বলা কথাগুলো সব শুনে ফেললও কিছু বলেনি আমায়। অনেকটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার সাথে করে গিয়েছিলাম। পথিমধ্যে তিনি আমার সাথে একটা বাক্য বিনিময়ও করলেন না আর না আমার দিকে একবারও ফিরে তাকালেন। আমাকে ভার্সিটি পৌঁছে দিয়ে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তিনি গাড়ি ছুটিয়ে চলে গেলেন কোনো এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। আমি হতভম্বের ন্যায় তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। এই মানুষটা এমন কেন। মাথা থেকে এসব চিন্তা ঝেরে ফেলে যোগ দিলাম অনুষ্ঠানে।

অনুষ্ঠান শেষে আমার বাসায় আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। এসে কোনোমতে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। সারাদিনের ধকলে ক্লান্ত লাগছে বেশ। ক্লান্তিতে চোখে এসে ভর করেছে রাজ্যের ঘুম। কেবল চোখের পাতা একটু লেগে গিয়েছিল এমন সময় উপরোক্ত কথাটি শুনে যেন আমার ঘুমটা হওয়ায় মিলিয়ে গেল। আম্মু এসে কেবল এই কথাটি বললো আমায়। মামনিরা তার মানে আমাদের বাসায় এজন্য এসেছিল। মাথায় হাত দিয়ে হতভম্বে ন্যায় বসে রইলাম আমি। আম্মু আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে চলে গেলেন।

আচ্ছা রাশফিন ভাই কি আদৌও রাজি এ বিয়েতে। উনি যে আমাকে দুচোখে দেখতেই পারেন না তবে, প্রস্তাব টা কি মামনিই দিয়েছে না-কি রাশফিন ভাই দিইয়েছে। এতোসব কথা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকল।

-‘ অরনিশা তোমার সাথে আমার কথা আছে। আমি কি ভেতরে আসব?

কারো গম্ভীর গলার আওয়াজে ধ্যান ভাঙল আমার। তাকিয়ে দেখলাম রাশফিন ভাই গম্ভীর চাহনিতে তাকিয়ে আছেন। আমি বিনাবাক্যে মাথা নাড়িয়ে সায় জানাতেই তিনি হুরমুরিয়ে আমার রুমে ঢুকে পড়লেন। আমি কিছুটা অবাকই হলাম। তিনি ধপ করে আমার বিছানায় বসে পরলেন তবে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে। তিনি আমায় বললেন

-‘ তুমি কি জানো আমাদের বিয়ের ব্যাপারে?

-‘ হুম, আম্মু এসে কেবল বলল।

-‘ তুমি কি রাজি এ বিয়েতে?

আমি কি উত্তর দিব ভেবে পাচ্ছি না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। তিনি কিছু বুঝলেন কি বুঝলেন না তা আমি জানিনা। কিছু সময় অতিবাহিত হলেও আমরা কেউই কথা বললাম না। নিরবতা কাটিয়ে তিনি আবার বললেন

-‘ তুমি রাজি কি রাজি না তা জানার আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমি এ বিয়েতে রাজি নই এটাই আমার শেষ কথা। আম্মু আমার কাছে না শুনেই এমন করেছে। এখন তোমার আমাকে হেল্প করতে হবে।

-‘ কি হেল্প?

তিনি এবার আমার দিকে ঘুরে বসলেন। শান্ত দৃষ্টিতে তাকালেন আমার দিকে। আমি তার চোখে বেশিক্ষণ চোখ রাখতে পারলাম না। চোখ নামিয়ে নিলাম। তিনি একটা লম্বা শ্বাস টেনে বললেন

-‘ তোমাকে যেভাবেই হোক এ বিয়েটা ভাঙতে হবেই। তুমি সবাইকে না করে দেও। তুমি রাজি না থাকলে কখনোই বিয়েটা হবে না। আর যদি তা না করতে পার তবে তোমাকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। মাইন্ড ইট। এখন আমি আসছি। তুমি সবাইকে গিয়ে না করে দিবে এখনই।

শেষোক্ত কথাটা তিনি বেশ রাগ নিয়েই বলে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন আমার রুম থেকে।
আমি তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম।

রাতে যখন সবাই একসাথে খেতে বসেছে ঠিক তখনই রাশফিন ভাই আমায় ইশরায় বলতে বললেন। আমি কিছুটা সাহস করে সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলাম

-‘ আমি এ বিয়েতে মোটেও রাজি নই। আমি কখনোই রাশফিন ভাইকে বিয়ে করতে পারবো না।

আমার কথাটা যেন কারও কান অব্দি পৌছালো না। যে যার মতো খেয়েই চলেছে। কেউ কোনো কথা বললনা। যে যার মতো গল্প করছে আর খাচ্ছে। আমার কথার কেউ কোনো পাত্তাই দিল না। আমিও আর কোনো কথা বাড়ালাম না। এখানে কথা বলে কোনো লাভ হবেনা। যা হবার তা হবেই, মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় দেখছিনা।

রাতের খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে এলাম ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে। সারাদিন পর বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। কিন্তু আজকে ঘটনা চিন্তা করতেই সব ঘুম হাওয়া হয়ে গেল। এপাশ ওপাশ করেও ঘুমাতে পারলাম না।তার এমন হাবভাব দেখে আমি ভ*য়ই হচ্ছে।

দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো। আজই সেই কাঙ্খিত দিনটা। শত চেষ্টা করেও বিয়েটা আটকাতে পারল না। অবশ্য রাশফিনও আর অমত করেনি পরবর্তীতে। অবশেষে কোনোরকম অনুষ্ঠান ছাড়াই ঘরোয়া ভাবে আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন হলো। অনুষ্ঠান পরে করা হবে। আব্বু আম্মুকে বিদায় জানিয়ে চলে এলাম রাশফিনদের বাসায়। অবশ্য এই সারাটা সময় রাশফিন আমার সাথে একবারও কথা বলেনি।

বধু বেশে বসে আছি রাশফিনের রুমে। অপেক্ষায় আছি রাশফিনের জন্য, ২ ঘণ্টা হতে চলল এখনো আসার নামও নেই।

—————–

অরনিশার সাথে রাশফিনের বিয়ে হয়ে গেছে শুনে রা*গে, ক্ষো*পে মাথা ফেটে যাচ্ছে ফারিহার। সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা। ফারিহা এখন রুমের সকল জিনিস ভা*ঙতে ব্যস্ত। নাফিয়া রহমান কোনোক্রমেই মেয়েকে ঠেকাতে বা শান্ত করতে পারছেন না। শেষমেষ কিছুটা হাপিয়ে গিয়ে ধপ করে সোফায় বসে পড়ল ফারিহা। কাদতে কাদতে বলল

-‘ এটা কি হলো মাম্মি, সবশেষ হয়ে গেল। আমার যে করেই হোক রাশফিনকে চা-ই চাই। তুমি ওকে এনে দাও আমার কাছে। আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।

নাফিয়া রহমান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তিনি মেয়ের জে*দ সম্পর্কে বেশ ভালো করেই জানেন। তার নিজেরও অবশ্য রা*গ হচ্ছে। তিনি বললেন

-‘ আমি আমার মেয়ের জন্য সব করতে পারি। দরকার পরলে খু*নও করতে পারি।

ফারিহা তার মায়ের কথা শুনে পৈশাচিক হাসল।

সেই ছোটবেলা থেকে রাশফিনকে ভালোবাসে ফারিহা। রাশফিনের বউ হওয়ার কত স্বপ্ন দেখেছে সে। আর সে আশায় কিনা জল ঢেলে দিল অরনিশা নামের একটি মধ্যবিত্ত মেয়ে। অরনিশাকে কিছুতেই ছাড়বেনা ফারিহা। তাতে করে যা করা লাগে সে করবে। দরকার পরলে খু*ন করে ফেলবে তবুও রাশফিনকে নিজের করে নেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে ফারিহা। কিছু একটা মনে পরতেই ফারিহা অট্টহাসিতে মেতে ওঠে। নাফিয়া রহমান মেয়েকে এভাবে হাসতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকালেন। ফারিহা হাসি থামিয়ে একে একে তার প্ল্যান বলতে থাকল। সব শুনে দুজনের মুখেই ফুটে উঠল ক্রুর হাসি।
.
.
.

রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল রাশফিন। রুমে ঢুকতে যাবে এমন সময় রাশফিনের ফোনে কিছু ম্যাসেজ আসে। সে সেগুলো ওপেন করতেই মে*জাজ বি*গড়ে গেল। তার মানে তাকে ঠ*কানো হয়েছে। এত্তো বড় সাহস রাশফিন চৌধুরীকে ঠকায়। মায়ের কথা মতো সবটা মেনে নিয়েছিল, এমনকি বিয়েতে অমত থাকলেও সে মায়ের কথা শুনে পরবর্তীতে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু এখন আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলনা।

রাশফিন রুমে এসেই আমার হাত ধরে টেনে উঠিয়ে টান দিয়ে আমাকে শক্ত করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন। ব্যাথায় আমার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই, সে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি তার এই কর্মকান্ডে অবাক না হয়ে পারলাম না। সবই তো ঠিক ছিল, তাহলে এখন আবার কি হলো এনার। তিনি আমায় জোরে ঝাকি দিয়ে বললেন

-‘ সব তোর চক্রান্ত তাইনা? তোর শ*কুনের মতো দৃষ্টিটা আমার উপর দিলি তো। আমার সহজ সরল আম্মুকে ভুলিয়ে ভালিয়ে তুই আমার গলায় ঝুলে পড়ার ফন্দি এটেছিস, তাইনা? তোকে আমি ভালো মনে করেছিলাম। এজন্য আমার অমত থাকা সত্ত্বেও আম্মুর কথামতো রাজি হয়ে যাই বিয়েতে। ভেবেছিলাম ভালোভাবে সবটা শুরু করব, কিন্তু তুই তো ভালো ব্যবহার পাওয়ার যোগ্যই না। এতোটা নি*চ মনের হলি কিভাবে? আমায় ঠকিয়েছিস, তোকে এর শাস্তি ভোগ করতেই হবে। তোর জীবনটাকে আমি ন*রক বানিয়ে ছাড়ব।

আমি তার এহেন কথার আগামাথাও বুঝতে পারলাম না। তাই হতভম্বের ন্যায় তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। আমি আবার কি করলাম, কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। তবে এতোটুকু বুঝতে পারলাম আমার সাথে খুব খা*রাপ কিছু ঘটতে চলেছে। আমার জীবনটাকে বি*ষিয়ে তুলবে রাশফিন। কিন্তু কেন করছে ও এমন আমার সাথে?

#চলবে ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here