#আড়ালে_ভালোবাসি_তোমায়
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব১৬
আজকে একটা ইম্পোর্ট্যান্ট ক্লাস থাকায় বেশ অনেকদিন পর ভার্সিটিতে পা রাখলাম আমি।
যদিও রাশফিন আমাকে আজকে কিছুতেই বেরই হতে দিতে চায়নি। সকাল সকাল এ নিয়ে দু এক প্রস্থ ঝগড়াও হয়ে গেছে আমাদের মাঝে। মামনিও বারবার বারণ করেছিল। তবে ইম্পোর্ট্যান্ট ক্লাস থাকায় আমি কারও কথাই শুনিনি।
অবশেষে রাশফিন আমার জে*দের কাছে হার মেনে আমাকে ভার্সিটিতে পৌছে দিতে রাজি হলো। তবে পথিমধ্যে আমার সাথে একটা বাক্যও বিনিময় করেনি। কেমন যেন ওর মুখটা অসম্ভব রকম লাল হয়ে আছে। রাশফিন রা*গ হয়ে গেলে ওর চোখ মুখ এমন হয়ে যায়।
ভার্সিটির সামনে এসে গাড়িটা থামতেই আমি দ্রুত নেমে পড়ি। রাশফিন গম্ভীর কণ্ঠে ডেকে ওঠে আমায়। আমি পেছন ফিরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই, সে বাজখাঁই কণ্ঠে বলে উঠল
-‘ আমি বারবার করে নিষেধ করেছিলাম বাইরে বেরোতে। কিন্তু তুমি শুনলে না। আজ যদি কোনো অঘটন ঘটে তাহলে তোমার কি অবস্থা করবো সেটা কিন্তু আমি নিজেও জানি না। অতএব বি কেয়ারফুল।
রাশফিনের এমন ভ*য়ংকর কথাগুলো শুনে আমি পরপর কয়েকটা শুকনো ঢোক গিললাম। আমতা আমতা করে বললাম
-‘ আ আসলে আ আজ তো একটা ইম্পোর্ট্যান্ট ক্লাস ছিল। আর সামনে তো আমার সেমিস্টার এক্সাম। তা তাই আরকি।
-‘ ক্লাস শেষ হতেই আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করবে না। সরাসরি আমাকে কল করবে। আমি যত দ্রুত সম্ভব তোমাকে এসে নিয়ে যাব। তুমি বাইরে এখন টোটালি সেইভ না। বিপদ তোমার চারপাশে ওত পেতে আছে। তুমি কি মনে করো ফুপ্পি বা আহনাফ তোমায় ছেড়ে দিবে? সুযোগ পেলেই ক্ষ*তি করার চেষ্টা করবে। সো চোখ কান খোলা রেখে চলবে।
কথাটা বলে আর এক মুহূর্ত দাড়ালো না, গাড়িটা নিয়ে চলে গেল নিজ গন্তব্যে। আমি কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে, আমার ক্লাসরুমে চলে গেলাম। আজ অনেকদিন পর ক্লাস করতে পেরে ভালোই লাগছে।
ক্লাস শেষ হতেই আমি আমার বান্ধবী মিরার সাথে কথা বলতে বলতেই ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে এলাম। অথচ এদিকে গল্প করার কারণে আমি বেমালুম ভুলেই গেলাম রাশফিনকে ফোন দিতে।
মিরার সাথে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমি বেশ কিছুক্ষণ কথা বলি। মিরাকে নিতে ওর ভাই চলে এলেই মিরা চলে যায়। অবশ্য ও আমায় একা ফেলে যেতে চায়নি, তবে আমিই বলেছি চলে যেতে।
আমি একা একা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকি রাশফিনের জন্য। হঠাৎ রাশফিনকে ফোন দেওয়ার কথা ছিল এটা মনে পড়তেই আমার কলিজার পানি যেন শুকিয়ে এলো। রাশফিনের ফোন আসতেই আমি শুকনো ঢোক গিলে আমি দ্রুত রিসিভ করি।
-‘ অরনিশা, ক্লাস শেষ হয়েছে তোমার?
-‘ হ হ্যাঁ।
-‘ কখন শেষ হয়েছে ক্লাস?
-‘ এ এই তো একটু আগেই।
-‘ একটু আগে মানে? আমি না বারবার করে বলেছিলাম, ক্লাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমায় ফোন দিতে। ভুল হলো কেন?
-‘ আ আসলে আমি না একদমই ভুলে গি…
-‘ চুপ একদম চুপ, আমি কোনো এক্সকিউজ শুনবো না। তুমি এখন কোথায় আছো?
-‘ আমার ভার্সিটির গেইটের সামনেই আছি।
-‘ ওখানেই থাকো, আমি আসছি। আর হ্যাঁ ফোন কেটে না। তুমি লাইনেই থাক।
রাশফিনের কথাশুনে অবাক হলাম। তবে কোনো কথা বাড়ালাম না, ওর কথামতোই লাইনে থাকলাম।
হঠাৎ পেছন থেকে ওরনায় টান পরায় পেছন ঘুরে তাকালাম আমি। তাকাতেই ভড়কে গেলাম কিছুটা। অস্ফুট স্বরে বললাম
-‘ আহনাফ।
আহনাফ বাকা হাসল। আমার কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বলল
-‘ কি ডার্লিং, ভ*য় পেয়ে গেলে নাকি? ভ*য়ের কোনো কারণ নেই। আরে আমিই তো।
আমাকে পেছনে পেছাতে দেখে শব্দ করে হেসে উঠল আহনাফ।
-‘ আমি চেয়েছিলাম সারাজীবন তোকে আমার রক্ষিতা বানিয়ে রাখতে তবে না আমি তা করবো না। আমাকে শুধু আজকের রা*তটা দিলেই হবে।
বলেই বি*শ্রী ভাবে হাসতে লাগল আহনাফ। আমার ঘৃ*ণায় গা ঘিনঘিন করে উঠল। ছিহ্ এর মতোই একটা নি*কৃষ্ট মানুষকে কিনা আমার সবচেয়ে ভালো ফ্রেণ্ড মনে করতাম। এসব ভেবে এখন নিজের প্রতিই ঘৃ*ণা হচ্ছে আমার।
আমি আহনাফের মতলব কিছুটা বুঝতে পেরে ফোনটা অতি সতর্কভাবে আড়ালে নিয়ে রাখি। সাথে রেকর্ড অপশনও চালু করে রাখি। যাতে করে কিছুতেই আহনাফ কিছু বুঝতে না পারে।
এদিকে ফোনের অপর পাশ থেকে এসব কিছুই শুনছিল রাশফিন। এইবার যেন ওর র*ক্ত মাথায় উঠে গেল।
আহনাফ আরও কাছে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে ফেলে। বি*শ্রীভাবে হেসে বলল
-‘ এবার কি হবে রে তোর? হিরো তো আর আজ তোকে বাচাতে আসতে পারবে না।
কথাটা বলেই আমার হাত ধরে টানতে টানতে গাড়ির সামনে এনে জোরে ধা*ক্কা দিয়ে আমায় গাড়িতে ফেলে দিল। আমি চিৎকার করতে যাব তখনি আমার মুখে একটা কাপড় দিয়ে শক্ত করে বেধে দেয়। আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। রাশফিনের কথাটাই শোনা উচিত ছিল আমার। না শুনেই চরম ভুল করেছি আমি। আমায় তো বারবার করে নিষেধ করেছিল। কিন্তু আমি-ই শুনিনি।
গাড়িটা এসে থামে আহনাফের বাড়ির সামনে। টানতে টানতে আমায় বাড়ির ভিতর নিয়ে ওর রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয় আহনাফ। মুখ থেকে কাপড়টা সরিয়ে আমায় ধা*ক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আহনাফ।
আমি গুটিশুটি মেরে রুমের এক কোনায় গিয়ে বসে থাকি। আহনাফ এগিয়ে আসতে আসতে বলে
-‘ এবার কে বাচাবে তোকে? আমার হাত থেকে আজকে বাচানোর মতো কেউ নেই তোকে। আজ আমি তোকে খু*ব*লে খু*ব*লে খাব। কেউ আটকাতে পারবেনা আজকে। এখন তুই যত পারিস চিল্লা।
-‘ আ আমায় ছ ছেড়ে দে। আমি তোর কি ক্ষ*তি করেছিলাম?
আহনাফ শব্দ করে হেসে বলে
-‘ রাশফিনের জন্য খুব দরদ না তোর? ওর ভিতর কি এমন আছে, যা আমার ভেতর নেই? ওর জন্যই তো সেদিন থা*প্প*র মে*রেছিলি তুই আমায়। তুই কি ভেবেছিস, প্র*তিশোধ না নিয়ে তোকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিব।
আরও এগিয়ে এসে একটানে আমার ওড়না মাটিতে ফেলে দেয় আহনাফ। আমার গালে হাত দিয়ে বলল
-‘ ইসস, তোর জন্য আমার বড্ড মায়া হচ্ছে রে। কিন্তু কি করব বল।
আহনাফের হাতটা আমার ঠোটের কাছে আসতেই আমি জোড়ে কা*মড়ে দিলাম ওর হাতের একটা আঙ্গুল। আহনাফ চি*ৎকার করে উঠল। ওর আঙ্গুল কে*টে র*ক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগল। আমার দিকে অ*গ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
-‘ তোকে তো আজ আমি শেষ করেই ফেলব। ভেবেছিলাম ছাড় দিব, তবে আর নয়। যেখানে ফারিহা আমায় এতো সাহায্য করা সত্ত্বেও, আমার স্বার্থে আঘাত লাগার জন্য ওকে আমি মেরে ফেলতেও দুবার ভাবিনি, সেখানে তুই কে রে? তোর অবস্থা তো আমি ক*রুণ করে ফেলবো।
বলেই আমার একটা হাত শক্ত করে ধরে ফেলল। আমি চি*ৎকার করে উঠলাম।
দূর হতে এ সবই শুনে ফেলে কেউ একজন। মুহুর্তেই যেন তার মুখের ভাব ভঙ্গি পাল্টে গিয়ে তা অ*গ্নি রূপ ধারণ করল।
অথচ আহনাফ তো জানে এ বাড়িতে শুধু সে আর অরনিশা। কিন্তু এর বাইরেও যে এখানে কেউ আছে এটা তো জানেই না সে। সে তো এখন ব্যস্ত অরনিশাকে নিয়ে। অরনিশাকে যখন নিজের করে পায়নি তখন সে কারও হতে দিবেনা অরনিশাকে।
অরনিশা বেশি ধ*স্তা*ধ*স্তি করছিল বলে রোমালে ক্লোরোফর্ম মাখিয়ে চেপে ধরে ওর নাকে। ফলে কিছুক্ষণ বাদেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে অরনিশা। এইবার কাজ সহজ হয়েছে আহনাফের জন্য।
যখনই অরনিশার গায়ে হাত দিতে যাবে হঠাৎ দরজা ভা*ঙার শব্দে পেছন ফিরে তাকায় আহনাফ। স*জোরে এক লা*থি দিয়ে ভে*ঙে ফেলে রুমের দরজা। রাশফিনকে দেখেই যেন ভ*য়ে আ*তকে ওঠে আহনাফের অন্তরাত্মা।
অরনিশার জামার হাতের কিছুটা অংশ ছিড়েও গেছে। ফলে ওর ফর্সা হাত উন্মুক্ত হয়ে আছে কিছুটা। অরনিশাকে এমন এ*লোমেলো আর অ*জ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে আরও বেশি মেজাজ বি*গড়ে গেল রাশফিনের।
এসেই আহনাফকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এ*লোপাতাড়ি মা*রতে লাগল। আহনাফ কিছুতেই পেরে ওঠে না রাশফিনের সাথে। আহনাফকে মা*রতে মা*রতে ওর গলার চে*পে ধরে ক*টমট করে বলে ওঠে
-‘ তুই কার দিকে নজর দিয়েছিস, খেয়াল আছে তোর কোনো? সি ইজ মাইন, অনলি মাইন। তুই আমার জানের দিকে নজর দিয়েছিস। তোর সাহস হলো কি করে। আর কি ভেবেছিলি, তুই আমার চোখ ফাকি দিয়ে আমার বউয়ের গায়ে হাত দিবি, এতো বড় স্পর্ধা? আমার চোখ ফাকি দেওয়া কি এতোই সহজ? তোকে তো আজ মে*রেই ফেলবো। যে আমার বউয়ের দিকে নজর দিবে তার চোখ উ*পড়ে ফেলব আমি। আর সেখানে কিনা তুই আমার বউয়ের গায়ে হাত দিতে গিয়েছিস, তোর এই হাত ভেঙে গু*ড়োগুড়ো করে দিব আমি।
কথাটা বলেই আহনাফ যে হাত দিয়ে অরনিশাকে স্পর্শ করেছে সেই হাতটায় দাঁড়িয়ে লা*ত্থি দিয়ে দিয়ে ভে*ঙে গু*ড়ো গু*ড়ো করে দেয় রাশফিন। আহনাফ চি*ৎকার করে ওঠে। আহনাফকে লা*ত্থি দিতে দিতে একদম র*ক্তাক্ত করে ফেলে রাশফিন। নিস্তেজ হয়ে পড়ে আহনাফ।
রাশফিন ক্ষ্যান্ত হয় কিছুটা, ক্লান্তও হয়ে পড়ে বেশ। অরনিশাকে গিয়ে কোনো তুলে নিয়ে চলে যায় নিজ গন্তব্যে।
হঠাৎই পেছন থেকে ভেসে আসে পরপর দুটো গু*লির আওয়াজ। র*ক্তের বন্যা বয়ে যায়। এ শব্দের পরে আর শোনা যায় না কোনো শব্দ। চারিদিক ছেয়ে যায় আবারও নিরব নিস্তব্ধতায়। নিস্তেজ হয়ে পড়ে সব।
#চলবে ~