#আড়ালে_ভালোবাসি_তোমায়
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব৩
ধা*ক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ায় টেবিলের কার্নিশে লেগে আমার কপাল কে*টে র*ক্ত গড়িয়ে পরে। এদিকে রাশফিন সমস্ত ঘরের জিনিসপত্র ভা*ঙতে ব্যস্ত। অবশেষে সে ক্ষ্যান্ত হয়ে, ধপ করে বিছানায় বসল। আমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রয়ে আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার গাল শক্ত করে চেপে ধরে। ফলে আমার ফর্সা গাল মুহূর্তেই লাল বর্ণ ধারণ করে। দাতে দাত চেপে সে বলল
-‘ ভুলিয়ে ভালিয়ে যেভাবে হোক বিয়েটা তো হয়ে গেছে আমাদের। তুই তো আমার সাথে রা*ত কা*টানোর জন্য বিয়েটা করেছিস তাই তো?তাহলে দেরি কিসের চল গিয়ে বা*সরটা সেরে ফেলি, কি বলিস?
বলেই সে বিশ্রিভাবে হাসতে লাগল। ছিহ্ মানুষ এতো নি*চ মনমানসিকতার হয় কিভাবে? এই মানুষটার সাথে আমি কিভাবে থাকব বুঝতে পারছিনা। সে আমার দিকে এগিয়ে আসতে থাকল। আমি কাপা কাপা কণ্ঠে বললাম
-‘ প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন। আচ্ছা আমি কি দোষ করেছি সেটা তো বলবেন?
রাশফিন কোনো উত্তর না দিয়ে হাসতে লাগল। আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম। সে কোনো উত্তর না দিয়ে আমার কাছে এগিয়ে আসতে লাগল। আমি ভয়ে জোরে চি*ৎকার দিলাম। সে এতো জোরে আমার মুখ চেপে ধরেছে যে আমার ঠোঁট কে*টে র*ক্ত বের হতে লাগল। আমি অ*সহ্য য*ন্ত্রনায় কেদে উঠলাম। উপায় না পেয়ে আমি আমার শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে ধা*ক্কা দিয়ে তাকে দুরে সরিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে এলাম। ততক্ষণে মামনিও চলে এসেছেন। তাকে দেখে আমি জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলাম। একে একে সবকিছু বলে দেই মামনিকে। সব শুনে মামনি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন তার ছেলের দিকে।
রাশফিন সেদিকে কোনো পাত্তা না দিয়ে রা*গী কণ্ঠে বলল
-‘ তোর শরীরের প্রতি আমার বিন্দুমাত্রও ইন্টারেস্ট নেই। চলে যা তুই। আমার রুমে প্রবেশ করবি না কখনো।
বলেই কাওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঠা*স করে দরজাটা লাগিয়ে দিল রাশফিন। মামনি বেশ কয়েকবার ডাকলেন তবে ভেতর থেকে কোনো সাড়া দিল না রাশফিন। শেষে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিয়ে গেলেন তার রুমে।
ক্ষ*তস্থান গুলোতে মলম দিয়ে, খাবার খাইয়ে আমায় শুয়ে দিলেন মামনি। তার চোখে জল স্পষ্ট। সে কখনো ভাবতেও পারেনি তার ছেলে এমন অ*মানুষ হবে। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে তিনি চলে গেলেন বেলকনিতে। আর আমি শুয়ে শুয়ে আমার বালিশ ভিজাতে লাগলাম।
বেলকনিতে গিয়ে মন খারাপ করে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন রাহেলা খাতুন অর্থাৎ রাশফিনের মা। তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না কিছুক্ষণ আগের ঘটনা। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তিনি বিড়বিড় করে বলেন
-‘ আমার স্বামীর মতো কি তবে আমার ছেলেটাও এমন অ*মানুষ হলো?
তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল কয়েক ফোটে লোনা জল। বারবার মনে পড়তে লাগল তার অতিতের স্মৃতি কিন্তু তিনি তার অতিতের সেই বি*ষাক্ত স্মৃতি আর মনে করতে চান না। তাই কাল বিলম্ব না করে তিনিও ঘুমাতে যান অরনিশার পাশে।
.
.
.
রকিং চেয়ারে বসে এক মনে তাকিয়ে আছে ফোনের স্ক্রিনের ছবিটির দিকে রাশফিন। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে একটা মেয়ে একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে এবং ছেলেটি একপাশ দিয়ে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরেছে। এটা হয়তো অরনিশাই হবে। যদিও স্পষ্ট ভাবে অরনিশার চেহারা বোঝা যাচ্ছে না, তবে এক সাইড থেকে অরনিশার মতোই দেখতে। কিছুক্ষণ আগে ফারিহাই এই ম্যাসেজগুলো দিয়ে রাশফিনকে ইমোসোনাল ব্ল্যাকমেইল করে।
অরনিশা যদি কাউকে ভালোবেসেই থাকে তাহলে শুধু শুধু বিয়েতে রাজি কেন হলো। রাশফিন তো বারবার বলেছিল বিয়েটা ভাঙতে। তাহলে কেন এমন করল। আর ভাবতে পারছেনা রাশফিন। অরনিশাকে এর ফল ভোগ করতেই হবে। রাশফিন চেয়ার ছেড়ে উঠে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে যাবে তখনই ওর ফোন বেজে ওঠে। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে ফারিহা। ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ দিয়ে ফারিহা ন্যা*কা কান্নার সুরে বলে উঠল
-‘ রাশফিন, তুমি কিভাবে আমাকে ফেলে ওই থার্ড ক্লাস মেয়েটাকে বিয়ে করতে পারলে? তুমি জানো আমি তোমায় ঠিক কতোটা ভালোবাসি। কতোবার বলেছি তুমি পাত্তাই দাও না আমায়। দেখলে তো ওই অরনিশা নামের মেয়েটা কত্তো খারাপ।
-‘ আমার এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে ইচ্ছা করছে না, ফারিহা।
-‘ কেউ না বুঝলেও আমি তো তোমার কষ্টটা বুঝতে পারি। আমি জানি তোমার ঠিক কতোটা কষ্ট হচ্ছে। চিন্তা করো না আমি খুব শীগ্রই চলে আসবো তোমাদের বাসায়।
-‘ আসবি আয়, তবে নতুন করে কোনো ঝামেলা করিস না তো। এমনিও আমি অনেক ঝামেলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।
-‘ আমি আসলেই সব প্রবলেম সলভ হয়ে যাবে। আর হ্যাঁ ওই মেয়েকে তুমি ডিভোর্স দিয়ে দাও। আমাকে বিয়ে কর। দেখবে তুমি ঝামেলা মুক্ত হবে।
-‘ বাদ দে তো এসব। ভালো লাগছেনা আর।
বলে ফারিহাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিল রাশফিন। ফারিহা অপর পাশ দিয়ে ক্রুর হাসল। তার মানে ওর প্ল্যান এখন কাজ করতে শুরু করেছে।
ফারিহার বলা কথাটাকেও একেবারে উড়িয়ে দিতে পারল না রাশফিন। আর ফারিহা তো নিশ্চয়ই ওকে মিথ্যা বলবে না। আর এমন একটা মেয়ের সাথে সংসারও করা যায় না। তাই অবশেষে রাশফিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। আর না ভেবে সে ঘুমিয়ে পড়ল।
.
.
.
দেখতে দেখতে কেটে গেল প্রায় অনেক দিন…
রাশফিন সেদিনের পর থেকে আমার সাথে আর কোনো কথা বলেনি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া। আমিও আর কথা বলার প্রয়োজনবোধ করিনি। মামনি অবশ্য বেশ কয়েকবার বুঝিয়েছে তবে কোনো লাভ হয়নি। আমিও চুপচাপ মুখ বুজে সয়ে নিলাম। তবে ভেতরে ভেতরে আমার মাঝে ঝড় তুফান বয়ে গেল। এমন কোনো রাত নেই যেটা আমি নির্ঘুম কাটাইনি।
সকাল সকাল কলিংবেলের আওয়াজে দ্রুত ছুটে গেলাম। দরজা খুলতেই দেখলাম অপরিচিত একটি মেয়ে। তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে আমাকে সরিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়ল। ইতোমধ্যে সেখানে উপস্থিত হলেন রাহেলা খাতুন। তিনি ভ্রু কুচকে তাকলেন। বিরবির করে বললেন
-‘ ও এই অসময়ে এখন এখানে কেন? নতুন করে কোনো ঝামেলা করতে আসেনি তো?
আমি মামনির কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলাম মেয়েটা কে?
তিনি আমায় বললেন ও হচ্ছে ফারিহা, তার ননদের মেয়ে অর্থাৎ রাশফিনের কাজিন।
ফারিহা এসে মামনিকে জড়িয়ে ধরল। তারা টুকটাক কথা বলছিল, তবে এতোটুকু বুঝলাম ফারিহা আসাতে মামনি মোটেও খুশি হয়নি। মামনির সাথে কথা বলতে বলতে আমার দিকে যেন কেমনভাবে তাকাচ্ছিল ফারিহা। ব্যাপারটা আমার কাছে তেমন ভালো লাগল না।
এরই মধ্যে চলে এলো রাশফিন। রাশফিনকে দেখামাত্রই ফারিহা ছুটে রাশফিনকে জড়িয়ে ধরল। রাশফিন বিরক্ত হলো কিছুটা, এই মেয়েটা এমনই গায়ে পড়া স্বভাবের।
রাশফিনের চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে নিলাম আমি। আমার বুকটা যেন ধক করে উঠল। পরে নিজেকে স্বান্তনা দিলাম, কাজিনই তো, জড়িয়ে ধরতেই পারে। তবুও মন স্বায় দিল না আমার। আমি আর সেখানে দাড়াতে পারলাম না বেশিক্ষণ রান্নাঘরে চলে এলাম।
রান্না শেষে খাবার নিয়ে চলে এলাম রাশফিনের রুমে। আর তারপরেই তো…
.
.
.
এতোক্ষণ অতিতের স্মৃতি চারণ করছিলাম। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল কয়েক ফোটা নোনাজল। আর কতো সহ্য করব আমি। এই কয় দিনেই আমার জীবনটা একেবারে বি*ষিয়ে দিল রাশফিন। চোখমুখ মুছে নিলাম। আমি অনেক সহ্য করেছি আর না। নিজেকে শক্ত হতে হবে। ভেঙে পড়লে চলবেনা।
#চলবে ~
ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।