#আড়ালে_ভালোবাসি_তোমায়
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব৭_৮
বেশ কয়েক দিন যাবত রাশফিনের শরীরটা বড্ড খারাপ। মাথা কেমন যেন ঝিমঝিম করে ওর। আগের মতো মাথা ব্যথাটা আবার অনেক বেশি বেড়েছে। ব্যাথায় যেন মাথাটা ফেটে যাওয়ার উপক্রম রাশফিনের। সব কিছুই কেমন যেন বি*ষিয়ে তুলছে রাশফিনকে। নিজেকে পাগল পাগলই মনে হয় এখন নিজের কাছে রাশফিনের।
ইতোমধ্যে বেশ ভালো মতোই উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, অরনিশা ওর জীবনে ঠিক কত টুকু জুড়ে ছিল। অরনিশা ছাড়া বাড়িটা কেমন যেন ফাকা ফাকা লাগে। বার বার অরনিশার মুখচ্ছবিটা ভেসে উঠে তার কল্পনাতে। জ্ঞান হবার পর যে ছেলেটাকে কেউ কখনোই কাদতে দেখেনি, আজ সে-ই কাদছে শুধু মাত্র অরনিশা নামক মেয়েটার জন্য। বড্ড বেশি ভালোবাসে সে অরনিশাকে, সেটা এই কয় দিনেই বেশ ভালো ভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছি।
তীব্র মাথা ব্যাথা নিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসল রাশফিন। এই মাথা ব্যাথাটা বেশ আগে থেকেই ওর। মাঝখানে কিছু বছর ভালো ছিল। তবে আবার কেন এই অ*সহনীয় ব্যাথা বাড়ল সেটা বুঝতে পারছে না। মাথার চুল গুলো খামচে ধরে বসে রইল রাশফিন। মনে পড়ে যাচ্ছে সেই তিক্ত অতিতের স্মৃতি গুলো।
.
.
.
রাশফিনের বাবা ছিলেন বড় লোকের বি*গড়ে যাওয়া ছেলে ছিল। তিনি জু*য়া খেলতেন। এমন কোনো রাত নেই, যেদিন তিনি নে*শা করে বাড়ি ফিরতেন না। টলতে টলতে তার বাড়ি আসতে কখনো ১২ টা বা কখনো ১ টা, এমন বেজে যেত। মাঝে মাঝে রাত ৩ টাও বেজে যেত। প্রতিদিন রাত করে বাড়ি ফিরে তিনি অ*ত্যাচার করতেন রাহেলা খাতুনের উপর। কখনো কখনো মা*র ধরও করতেন। রাহেলা খাতুন সবটা মুখ বুজে সইতেন।
দিনে শাশুড়ি, ননদের অ*ত্যাচার আর রাতে স্বামীর। এরই মাঝে বেশ ক’টা বছর পেরিয়ে যায়। রাশফিনের জন্ম হয়। ধীরে ধীরে রাশফিন বড় হয়। ভেবে ছিল রাশফিন বড় হলেই বুঝি সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু না, আরও খা*রাপ হতে থাকল পরিস্থিতি।
এমনই এক দিন বেশ রাত করে বাড়ি ফিরলেন রাশফিনের বাবা। তাকে আসতে দেখেই রাহেলা খাতুন দ্রুত খাবার বেড়ে দিলেন। রাশফিনের বাবা কোনো কথা না বলে চুপ চাপ খেতে বসলেন। যখনই মুখে এক লোকমা খাবার দিলেন, তার মেজাজ বি*গড়ে গেল। তরকারিতে লবণ বেশি হওয়ায় তিনি তে*ড়ে গেলেন রাহেলা খাতুনের কাছে। মে*রেও তিনি ক্ষ্যা*ন্ত হলেন না, বে*ত নিয়ে এলেন মা*রার জন্য।
রাশফিন তখন আট বছরের বাচ্চা ছেলে। রাশফিনের সামনেই প্রায় সময়ই মা*রতেন তিনি তার স্ত্রীকে। এতে করে ছোট রাশফিনের মনে বিরূপ প্রভাব পড়তে থাকে। বাবার সম্পর্কে এক সময় খা*রাপ ধারণা সৃষ্টি হতে শুরু হতে থাকে। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। তবে এতো দিন চুপ চাপ সব সহ্য করলেও আজ আর সহ্য করেনি রাশফিন। বাবাকে এমন করে তার মাকে মারতে দেখে তার হ্রদয় কেপে উঠল। মাকে যে বড্ড বেশি ভালোবাসে রাশফিন। দ্রুত ছুটে গেল মাকে বাচানোর জন্য ছোট্ট রাশফিন।
যখনই মা*রতে যাবে তখনই রাশফিন সামনে চলে আসাতে রাহেলা খাতুনের গায়ে লাগার বদলে রাশফিনের মাথায় গিয়ে সজোরে আ*ঘাত লাগে। মাথায় হাত দিয়ে চি*ৎকার করে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে রাশফিন। মাথা ফে*টে ফিনকি দিয়ে অনবরত র*ক্ত গরিয়ে পড়তে থাকে রাশফিনের। তত ক্ষণে রাশফিন সেন্স লেস হয়ে পড়েছে। আকস্মিক এমন ঘটনা ঘটায় থমকে যান রাশফিনের বাবা। তিনি তার স্ত্রীর সাথে খা*রাপ ব্যবহার করলেও ছেলেকে ভালোবাসতেন।
দ্রুত ডক্টরের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। মাথায় পড়ল ৩ টে সেলাই। বেশ কিছু দিন যাবত মাথা ব্যাথায় ভুগলে ডক্টরের দেওয়া ওষুধ খেয়ে কিছুটা সুস্থ হয় রাশফিন। তবে এ ঘটনার পর থেকেই কেমন যেন চুপ চাপ হয়ে যায়। এক মাত্র রাহেলা খাতুন ছাড়া ঠিক মতো কারও সাথেই কথা বলতো না রাশফিন। আর ওর বাবাকে তো দু’ চোখে সইতেই পারত না রাশফিন। দিন দিন দূরত্ব তৈরি হয় বাবা ছেলের মাঝে। এমন একটা সময় চলে এলো যখন রাশফিন ওর বাবার নাম শুনলেই ওর মাথায় র*ক্ত উঠে যেত।
রাশফিন আস্তে আস্তে এতো টাই সেনসেটিভ হয়ে যায়, রা*গ, কষ্ট, অভিমান সব নিজের মাঝেই চেপে রাখতে শুরু করল। কারও কাছে শেয়ার করতে পারত না। আর এসবের কারণেই দিনে দিনে নিজের মাঝে রা*গ, ক্ষো*প, অভিমান চেপে রাখতে রাখতে একটা সময়ে বদ*মেজাজিতে পরিণত হয়। একটুর থেকে একটু কিছু হলেই মাথা গ*রম হয়ে যায় রাশফিনের।
এরই মাঝে একদিন খবর পাওয়া যায় রাশফিনের বাবা মা*রা গেছেন। ম*দ খেয়ে গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ি ফিরছিলেন, সেদিন চারি দিকে ছিল কুয়াশা আর কুয়াশা, ফলে তিনি ঝাপসা চোখে সামনে কিছু দেখতে পাচ্ছিলেন না। এমন সময় ট্রাক এসে ধা*ক্কা দেওয়ায় গুরুতর আঘাত পান রাশফিনের বাবা, ঘটনা স্থলেই তিনি মৃ*ত্যু বরণ করেন।
রাশফিনের বাবা মা*রা যাওয়ার পর, রাহেলা খাতুন আর রাশফিনের জীবনে যেন বি*ষিয়ে উঠতে থাকে। প্রতি মুহূর্তে রাহেলা খাতুনের শাশুড়ী অ*পয়া বলতে থাকেন রাহেলা খাতুনকে। তখন আরও বেশি কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। তিনি যে ছেলেকে নিয়ে তার বাবার বাড়ি চলে যাবেন, তারও কোনো উপায় ছিল না।একেই তো বাপ মা ম*রা মেয়ে, এখন যদি যায় ভাইদের ঘাড়ের উপর বসে খেতে হবে যা ভাই, ভাবীরা কেউ-ই মেনে নিত না। তাই সকল কষ্ট ভুলে আর ছেলের নিষ্পাপ চেহারাটার দিকে তাকিয়ে সব কিছু নিরবে দাতে দাতে চেপে মেনে নেন রাহেলা খাতুন।
রাহেলা খাতুনের শাশুড়ি চেয়েছিলেন তার নাতিকে তাদের কাছে রেখে, রাহেলা খাতুনকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিবেন। কিন্তু রাহেলা খাতুনের শশুড়ের জন্য তা হয়নি। আর এসবই রাশফিনের মনে ফেলে ছিল বিরূপ প্রভাব। আস্তে আস্তে রাশফিন একটা ট্রমার মাঝে চলে যায়। এর পর থেকে রাশফিনের চোখে কেও কখনো পানি দেখেনি। হাসি খুশি ছেলেটা একদম মনমরা, নির্জীব হয়ে যায় পারিবারিক সমস্যার কারণে। আরও যখন দেখত ওর বন্ধুদের পরিবারের সবাই সুখী, কিন্তু ওর পরিবারেরই এই দশা তখন আরও বেশি ডিপ্রেশনে চলে যেত রাশফিন।
রাশফিনের এই অবস্থা দেখে রাহেলা খাতুন সব কিছু ফেলে ছেলেকে সময় দিতে থাকেন। ছেলেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে সব টাই তিনি করেন। তিনি চেয়ে ছিলেন তার ছেলেটা মানুষের মতো মানুষ হোক, তার স্বামীর মতো যেন অ*মানুষ না হয়। মনের মাঝে একটা ভ*য় থেকেই যেত রাহেলা খাতুনের।
যদিও এর জন্য পরিবার থেকে অনেক কথা শুনতে হয়েছিল রাহেলা খাতুনকে, তবে রাশফিনের জন্য আর কেও কিছু বলেনি। কারণ রাশফিনকে ঐ বাড়ির সবাই ভালোবাসত, একমাত্র বংশের প্রদীপ বলে কথা, ভালো না বাসলে কি হয় নাকি। তবে রাশফিন ওদের কাওকেই সহ্য করতে পারত না, তার মায়ের সাথে খা*রাপ ব্যবহারের জন্য।
আস্তে আস্তে রাশফিন স্বাভাবিক হয়, কিন্তু সমস্যা একটা থেকেই যায়। এখনও পুরনো কথা গুলো মনে পড়লেই চি*ৎকার করে ওঠে রাশফিন।
আর এ সমস্যা টারই সু্যোগ নিল ফারিহা। রাশফিনকে শুধু মাত্র নিজের করে নেওয়ার জন্য, সময়, সুযোগ পেলেই ওর শরীর ড্রাগ দিত। ফলে কিছু সময়ের জন্য রাশফিন আর নিজের মধ্যে থাকে না। তখন রাশফিন কাকে কি বলে, পরে গিয়ে আর মনেও থাকে না। সেই দিন ফারিহা আর ফারিহার মা মিলে এই প্ল্যান টাই করে। তবে ফারিহা নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এতোই মশ গুল হয়ে গিয়ে ছিল যে বেমালুম ভুলে গিয়েছিল এটার সাইড ইফেক্টের কথা। এর জন্য রাশফিনের শরীরের মা*রাত্মক ক্ষতি হবে। এমনকি মা*রাও যেতে পারে রাশফিন।
.
.
.
আজও তার ব্যতিক্রম হলো না, বাবার মুখটা ভেসে উঠতেই চি*ৎকার করে ওঠে। লাইফে এই মানুষটাই ওকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে, এই মানুষটাই ওকে আর ওর মাকে কাদিয়েছে। এই মানুষটার জন্যই আজ সব হয়েছে। ওর লাইফের ডাউনফল এর পেছনে শুধুমাত্র ওর বাবা কেই দায়ী করে রাশফিন।
ছেলের চি*ৎকারে ছুটে এলেন রাহেলা খাতুন।
ছেলেকে এমন পা*গলের মতো করতে দেখে তিনি উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন
-‘ কি হয়েছে? এমন করছিস কেন? তোকে এরকম কেন দেখাচ্ছে রাশফিন?
রাশফিন মাথা তুলে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় তার মায়ের দিকে। কোনো কথা না বলে মাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগল রাশফিন। হঠাৎ ছেলেকে এমন হাওমাও করে কাদতে দেখে তিনি চমকালেন বেশ। রাশফিন কাদতে কাদতে তার মাকে একে একে অরনিশার ব্যাপারে সবকিছু খুলে বলল। সবকিছু নিজের মাঝে চেপে রাখলেও মাকে কখনো কিছু না বলা হয়নি রাশফিন আর না কিছু লুকিয়েছে রাহেলা খাতুনের থেক। রাশফিন আজ পর্যন্ত তার মাকে কখনো মিথ্যাও বলেনি, যা বলেছে সব সত্যি বলেছে।
সব শুনে রাহেলা খাতুন হত ভম্ব হয়ে গেলেন। তিনি বলে উঠলেন
-‘ অরনিশা এমন মেয়ে হতেই পারেনা, আমি ওকে ছোটে দেখে আসছি। দেখ তোর কোনো ভুল হচ্ছে। আর অরনিশা তোকে ঠ*কাতে যাবে কেন?
রাশফিন কোনো জবাব না দিয়ে মলিন হাসল শুধু। ফোনটা বের করে তার মাকে ছবি গুলো দেখাল, যে ছবি গুলো ফারিহা দিয়ে ছিল রাশফিনকে ওদের বিয়ের দিন।
রাহেলা খাতুন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলেন ছবি গুলোর দিকে। কিছু্ ক্ষণ পর তিনি গম্ভীর গলায় বললেন
-‘ তুই শিওর এটা অরনিশা? এটা যদি অরনিশা হয় তাহলে ওর ফেস দেখা যাবেনা কেন? সাইড থেকে দেখলেই কি অরনিশা হয়ে গেল।
-‘ এটা অরনিশা না হলে কে হবে তাহলে? এখানে যে ছেলেটা আছে, তার সাথেই আমি অরনিশাকে রেস্টুরেন্টে দেখেছি। আমি রা*গ করে যখনই বের হয়ে আসতে যাব, তখন আমার ঠিক কি হলো, আমার আর মনে নেই। হুশ আসতেই নিজেকে বাড়িতে আবিষ্কার করলাম আমি।
-‘ তুই একবারও ছবিটা দেখিয়ে অরনিশাকে বলেছিস, ছবিতে এই মেয়েটা অরনিশা কি-না?
-‘ না, আমি তা বলার প্রয়োজন মনে করিনি ওকে। তখন রা*গ হয়েছিল ওর প্রতি আমার।
-‘ এই খানেই তো ঝামেলা বাধিয়েছ, ওকে বললে তো আর এতো সমস্যা ফেস করতে হতো না আজ। আর অরনিশা এমন মেয়ে না, আমি ওকে ভালো ভাবেই চিনি। এখানে নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলা আছে। আচ্ছা, এই ছবিগুলো দিয়েছে কে তোকে?
-‘ ফারিহা দিয়েছে।
-‘ কা*ল*না*গি*নের জন্ম তো কা*ল*না*গি*নই হয়। আমার সংসার ভা*ঙতে চেয়েছিল ওর মা। আর এখন মেয়েকে দিয়ে আমার-ই ছেলের সংসার ভা*ঙার চেষ্টা করছে। সব ফারিহার চ*ক্রা*ন্ত। বে*য়া*দ*ব মেয়ে কোথাকার । আমি ওকে ছাড়ব না। ওর যেন খুব ক*রু*ণ পরিনতি হয়।
বলেই তিনি রা*গে গটগট করে চলে যান রাশফিনের রুম থেকে রাহেলা বেগম। রাশফিন এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে ওর মায়ের চলে যাওয়ার দিকে।
.
.
.
বেলকনিতে আন মনা হয়ে বসে আছি। বড্ড বেশি ক*ষ্ট হচ্ছে আমার। চোখের পলকেই কি থেকে কি হয়ে গেল। সব শেষ। হঠাৎ ফোন বেজে ওঠায় চমকালাম। আন নোন নম্বর থেকে ফোন আসায় রিসিভ করতে মন চাচ্ছিল না আমার। বার কয়েক ফোন আসায় বিরক্ত হয়ে রিসিভ করলাম। তবে অপর পাশ থেকে কেউ কোনো কথা বলছে না। শুধু শুনতে পেলাম নিশ্বাসের শব্দ। আমি বিরক্ত হয়ে ফোনটা কাটতে নিলেই অপর পাশ দিয়ে পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে থমকে গেলাম। এটা তো রাশফিন। আমি অনেক অভিযোগ করতে চেয়েছিলাম, তবে কথা গুলো আর মুখ দিয়ে বের হলো না। গলার মধ্যেই আটকে রইল।
রাশফিন ধরা গলায় বলল
-‘ অরনিশা, তোমাকে কিছু বলার আছে আমার। সো প্লিজ, মন দিয়ে শু…
-‘ কি বলবেন কি আপনি, আমায়, হ্যাঁ। সব তো নিজ হাতেই শেষ করে দিলেন। আমার জীবনটাই ত*ছ*ন*ছ করে দিলেন। ভুলেও আপনি আমায় ফোন দিবেন না বলে দিচ্ছি।
-‘ আমার কথাটা শুনো একবা…
রাশফিনের কথা শোনার কোনো ইচ্ছে বা আকাঙ্খা আমার নেই। তাই খট করে ফোনটা কেটে দিলাম। ফোনটা বুকে জড়িয়ে অঝোরে কাদতে লাগলাম আমি। আমার কাছে এখন রাশফিনের কথা গুলো জাস্ট বি*ষের মতো লাগে।
এদিকে রাশফিনের গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে নোনা জল। ও আর ফোন দিয়ে অরনিশাকে ডিস্টার্ব করল না। মলিন হেসে বলল
-‘ আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি কাদিয়েছে আমার বাবা। যে মানুষটা আমার জীবনটাকে বি*ষিয়ে তুলেছিল, তাকে আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃ*ণা করি। আবার অরনিশাও আমাকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দিয়ে চলেছে। আমায় বিরহের আ*গুনে পু*ড়িয়ে প্রতিনিয়ত ছা*ড়*খা*র করে দিচ্ছে অরনিশা। তবে এতো কিছুর পরও তোমায় অনেক ভালোবাসি প্রিয়তমা। গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠল
“কারণে অকারনে নিষেধে বা বারণে
তোমার নামেই যতো জোছনা নিলাম
ভেতরে বাহিরে দহনে বা ধারণে
আমায় নিখোঁজ ভাবো বা পাশেই ছিলাম
চোখে জল নোনা কি
নিয়ে গেল জোনাকি
কেনো আমি পথে একা দাঁড়িয়ে
আলোদের পিয়নে সোডিয়াম নিয়নে
যেন সবই কোথায় হারিয়ে…
আমি তোমার দ্বিধায় বাচি
তোমার দ্বিধায় পুড়ে যাই
এমন দ্বিধার পৃথিবীতে
তোমায় চেয়েছি পুরোটাই
আমি তোমার স্বপ্নে বাচি
তোমার স্বপ্নে পুড়ে যাই
এমন সাধের পৃথিবীতে
তোমায় চেয়েছি পুরোটাই…”
চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল অসংখ্য অশ্রু কণা। নিজেকে আজ পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় ব্যক্তি মনে হচ্ছে রাশফিনের। ভালোবাসার মানুষটাকে বুঝিতা চেয়েও পারল না কিছুই বোঝাতে। কষ্টে বুকটা ফে*টে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। দূর অন্তরীক্ষের পানে চেয়ে ধরা গলায় রাশফিন বলল
-‘ তুমি যে আমায় ভুল বুঝে আছো, অরনিশা। ভুল ভাঙাতেই যে ফোনটা দিয়ে ছিলাম। কিন্তু তুমি আমায় বুঝলে না। দোষটা হয়তো আমারই, ফারিহার কথা বিশ্বাস করে, তোমায় ভুল বুঝেছি। আমায় ক্ষমা করে দিও, প্রিয় তবে আর কবে অভিমান ভাঙবে আমার প্রতি তোমার? আমার হাতে যে আর বেশি সময় নেই অরনিশা। আমি চলে গেলে আফসোস করবে না তো তুমি? তুমি কি আমায় একটুও ভালোবাসবে না, অরনিশা? আর কবে ভালোবাসবে তুমি আমায়? মরে যাওয়ার পর বুঝি। তখন কেদেও লাভ হবে না কিন্তু কোনো। ভালো থেকো, প্রিয় তমা। আমি তোমায় ছেড়ে চলে যাব বহু দুর। তবে, তুমি আমায় ভালোবাসো এটা যদি দেখে মরতে পারতাম তবে শান্তিতে, মরেও শান্তি পেতাম আমি।
#আড়ালে_ভালোবাসি_তোমায় প্রিয়তমা। আমার ভালোবাসা তুমি বুঝলে না, আর না তোমায় বোঝাতে পারলাম আমি। আমার ভালোবাসা আড়ালেই রয়ে গেল। জানতেও পারলে না তুমি।
আস্তে আস্তে চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হয়ে যেতে লাগল রাশফিনের। চোখ টা বন্ধ হয়ে আসতে লাগল। বড্ড বেশি কষ্ট হচ্ছে। বুকের বা পাশ টায় বড্ড ব্যথা অনুভুত হচ্ছে। আর পারছে না রাশফিন, অবশেষে চোখটা তার বুজেই এলো। যেন মৃ*ত্যু নামক পথের পথ যাত্রী হতে চলেছে রাশফিন…
#চলবে ~