#আড়ালে_ভালোবাসি_তোমায়
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব৯
সোফায় বসে বসে টিভি দেখছে আর পপকর্ণ খাচ্ছে ফারিহা। আজকে অনেক দিন পর নিজের বাসায় এসেছে, মাকে মিস করছিল অনেক। নাফিয়া রহমানের ডাকে ফিরে তাকাল ফারিহা। মায়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারিহা। নাফিয়া রহমান মেয়ের পাশে গিয়ে বসে বললেন
-‘ ওদিকের কি অবস্থা ফারিহা?
আবার টিভির দিকে মনোনিবেশ করল ফারিহা।টিভি দেখে পপকর্ণ খেতে খেতে বলল
-‘ কোন দিকের অবস্থা?
মেয়ের এমন হেয়ালিপনা মার্কা কথা শুনে কিছুটা বিরক্ত হলেন নাফিয়া রহমান। তবে তা বুঝতে না দিয়ে বললেন
-‘ রাশফিন দের, ওদিকের কি অবস্থা, তাই জিজ্ঞেস করেছি তোমায়।
মায়ের দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকায় ফারিহা। কালকে রাতের ঘটনা মনে পড়তেই মেজাজ বি*গড়ে গেল ওর।
কালকে রাতে রাশফিনের শরীরে ইনজেকশন পুষ করেছিল ফারিহা। উদ্দেশ্য ছিল রাশফিনকে একান্তেই নিজের আপন করে পাওয়া। রাশফিন যখন ফারিহার গায়ের উপর জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গিয়েছিল, তখন আস্তে ধীরে কষ্ট করে রাশফিনকে এনে বেডে শুয়িয়ে দেয় ফারিহা। ওকে শুয়িয়ে দিয়ে যখনই রুম থেকে বেরিয়ে যাবে তখনই মাথায় চাপে দু*ষ্টু বুদ্ধি। দ্রুত রাশফিনের পাশে গিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে নেয় আর সেই ছবি গুলোই সেন্ড করে দেয় অরনিশার ফোনে। যাতে করে রাশফিন যেমন ভুল বুঝেছে অরনিশাকে, অরনিশাও যেন রাশফিনকে ভুল বুঝে। দুজনের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হলেই ফারিহা তার লক্ষ্য পৌঁছাতে পারব। তখন আর রাশফিনের বউ হওয়া কোনো ব্যাপারই না।
যখনই রাশফিনের গায়ে হাত দিয়ে একটু কাছাকাছি যেতে নিল, ওমনি ঘুমের মধ্যে রাশফিন খপ করে হাত ধরে ফেলল। ঘুমের মাঝেই বলল
-‘ অরনিশা, তুমি এসেছো?
এই অরনিশা নামটা শুনলেই গা একদম জ্বলে যায় ফারিহার। জেগে থাকতে তো অরনিশা অরনিশা করে মাথা খা*রাপ করে দেয়। আর ঘুমের ঘোরেও। একটু শান্তিতেও থাকতে দিবে না, এই মেয়েটা। কি জাদু করেছে রাশফিনের উপর, এই মেয়েটা। সেটাই বুঝতে পারছে না ফারিহা। নিজের রা*গটাকে কোনো মতো দমিয়ে দাতে দাত চেপে বলল
-‘ হ্যাঁ তো, সোনা।
বলে যখনই রাশফিনের আরও কাছে যেতে নিবে তখনই ঘুমের ঘোরে ঠা*স করে চ*ড় বসিয়ে দিল ফারিহার গালে রাশফিন। ফারিহা রা*গে যেন আ*গুন হয়ে গেল। রাশফিনকে হালকা ধা*ক্কা দিয়ে, রা*গে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে চলে এলো রাশফিনের রুম থেকে ফারিহা। ধুর মুডটাই ন*ষ্ট করে দিল রাশফিন।
কাল রাতের এ সমস্ত কথা মনে পড়তেই রা*গটা মাথায় চড়ে বসল ফারিহার । নাফিয়া রহমান এখনও মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি বোঝার চেষ্টা করছেন, আসলে হয়েছে টা কি। কিন্তু তিনি কিছুই বুঝতে না পেরে এক সময় উঠতে নিলেই হাত ধরে ফেলে ফারিহা। নাফিয়া রহমান আবার বসে পড়লেন মেয়ের পাশে। ফারিহা লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে বলল
-‘ রাশফিন আর অরনিশার মধ্যে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছি আমি। সব কিছুই এখন আমার প্ল্যান মতোই হচ্ছে। আর তোমার প্ল্যান মতোও আমি কাজ করেছি। সব কিছু ঠিক ঠাক, প্ল্যান মাফিক করতে পারলেও। রাশফিন কে এখনও নিজের আয়ত্তে আনতে পারলাম না আমি।
শেষোক্ত কথাটি ফারিহা কটমট করে বলল।
নাফিয়া রহমান মেয়ের কথা শুনে মুচকি হাসলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
-‘ রাশফিন ছেলেটা ছোটোবেলা থেকে এমনই। একটু কষ্ট করো। ধৈর্য ধরতে হবে। একদিন ঠিকই তোমার আয়ত্তে চলে আসবে ও। আর হ্যাঁ সব কিছুতেই তোমার তাড়াহুড়া। বেশি তাড়াহুড়ো করলে কিন্তু সব প্ল্যান ভেস্তে যাবে আমাদের। আর একবার হাত ফসকে গেলে, তখন কিন্তু আর কেদেও কুল পাবে না। তাই বি কেয়ারফুল। অতি সাবধানতা অবলম্বন করতে প্রতিটা কাজ করতে হবে। প্রতিটা পদক্ষেপ সতর্কতার সহিত নিতে হবে। বুঝলে।
ফারিহা মাথা নাড়ালো। মায়ের কাধে মাথা দিয়ে সুয়ে রইল ফারিহা। নাফিয়া রহমান মেয়ের মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলেন।
এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠল। এই অসময়ে কলিং বেলের আওয়াজে বিরক্ত হলেন নাফিয়া রহমান। বেশ বিরক্তি নিয়েই চলে গেলেন মেইন গেটের সামনে।
দরজা খুলতেই সামনে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে খুশির ঝিলিক ফুটে উঠল নাফিয়া রহমানের মুখ পানে। নিমিষেই সকল বিরক্তি এক মুহূর্তেই কেটে গেল। সামনে থাকা ব্যক্তিটির উদ্দেশ্যে নাফিয়া রহমান বললেন
-‘ আরেহ্, বাবা। ভেতরে এসো। তো এখন, এ সময়, কোনো কি সমস্যা হয়েছে?
সামনে থাকা ব্যক্তিটি মুচকি হেসে জবাব দিল
-‘ না, আন্টি। কোনো সমস্যা নেই। এমনিই ফারিহার সাথে দেখা করতে এলাম।
-‘ ওহ, বাইরে দাড়িয়ে কেন? আসো, ভেতরে আসো৷ ফারিহা ড্রয়িং রুমেই আছে। তোমরা কথা বলো, আমি বরং তোমাদের জন্য স্নাকস্ আইটেম বানাই।
নাফিয়া রহমানের কথা শুনে মুচকি হেসে ড্রয়িং রুমে চলে গেল ব্যক্তিটি। ব্যক্তিটি গিয়ে ফারিহার পাশে সোফায় বসল। ফারিহা চমকে তাকাল। পর মুহূর্তে ব্যক্তিটিকে দেখে ফারিহার মুখে ফুটে উঠল হাসির রেখা। একপাশ থেকে ব্যক্তিটিকে জড়িয়ে ধরল। এতে ব্যক্তিটি বেশ বিরক্ত হলো। এই মেয়েটি এমন গায়ে পড়া কেন। ওর কোনো কাজে ফারিহা হেল্প না করলে ফারিহাকে কষে চ*ড় মারত আজ। তবুও ওকে কিছু বুঝতে না দিয়ে কোনো মতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।
তবুও ফারিহা ওর গা ঘেষে বসে বলল
-‘ কেমন আছো, বেইব? এতো দিন পর মনে পড়ল বুঝি আমার কথা?
নিজের মাঝে বিরক্তিটা চেপে রেখে মুখে জোর পূর্বক হাসি ফুটিয়ে বলল
-‘ আছি তো কোনো রকম। ভালো না থাকলে কি হয় নাকি? তুমি আমার জন্য যা করলে। তা আমি কোনো দিন ভুলব না। তুমি আমায় হেল্প করলে হয়তো আমি ওকে পেতামই না।
-‘ তুমিও তো আমায় কম হেল্প করো নি। প্ল্যানটা তো তোমারই ছিল। তোমার কথা না শুনলে এতো তাড়াতাড়ি আমরা হয়তো কোনো দিনই আমাদের লক্ষ্যে পৌছাতে পারতাম না।
-‘ হুম, তা ঠিক। তো আমার পেমেন্টটা দাও। আমার খুব প্রয়োজন। আজকে আর ঘুরিও না আমায়।
টাকার কথাটা শুনে মুখটা মলিন হয়ে গেল ফারিহার। এই ছেলে গুলা এমনই ছ্যাচড়া। টাকা টাকা করে ফারিহার মাথাটা খারাপ করে দিচ্ছে এই ছেলেটা।
.
.
.
মা বাবার মুখে আবারও নিজের বিয়ের কথাটা শুনতেই থমকে গেলাম আমি। তাও কিনা আবার আমারই বেস্ট ফ্রেণ্ড আহনাফের সাথে। আমি কিছুতেই মেনে পারছি না এটা। আমি জীবনে একটা মানুষকেই ভালোবেসেছি, আর সেটা হলো রাশফিন। একমাত্র রাশফিন ছাড়া আমি আর কাওকে ভালোবাসি না। অতএব প্রশ্নই উঠে না এ বিয়ের।
আমার মা কে এই কথাটা বলতেই তিনি রে*গে গিয়ে বললেন
-‘ তোর সাথে তো রাশফিনের ডিভোর্স হয়ে গেছে। তাহলে এখন বাধা কিসের? আর আহনাফ ছেলেটা অনেক ভালো। ও নিজে তোকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সারা জীবন কি একা থেকে তুই রাশফিনের জন্য কষ্ট পাবি?
-‘ দরকার পড়লে সারা জীবন কষ্ট পাব। তবুও আমি আহনাফকে কিছুতেই বিয়ে করব না। মেয়েদের জীবনে বিয়ে এক বারই আসে। বহু বার নয়। আগের বার আমাকে চাপিয়ে দিয়েছ। এবার আর করবে না এমন, হাত জোর করে বলছি। আমায় একা থাকতে দাও। আর খুব বেশি অসুবিধে হলে আমায় বলো। আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।
মা আর কোনো কথা বলতে পারল না আমার মুখের ওপর। তিনি শান্ত গলায় বললেন
-‘ আচ্ছা, আমি আসছি, তবে আহনাফকে পাঠাচ্ছি। ও এসে তোর সাথে কথা বলুক। তারপর তোরাই সব ঠিক কর।
বলেই চলে গেলেন মা। আমি তখনও ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছি মায়ের চলে যাওয়ার পানে।
একটু পর আহনাফ চলে এলো। আমি ঘৃ*ণায় তাকালাম না ওর দিকে। ছিহ্, ল*জ্জা করে না আহনাফের, অন্যের বউকে বিয়ে করতে।
আহনাফ হয়তো বুঝতে পারল আমার অবস্থা। পিনপতন নিরবতার পর আহনাফ নিরবতা কাটিয়ে বলল
-‘ তোর তো এখন ডিভোর্স হয়েই গেছে অরনিশা। তাহলে আমায় বিয়ে করতে সমস্যা কি তোর?
-‘ লজ্জা করে না তোর। অ*সভ্য, কেমন ফ্রেণ্ড তুই, সুযোগ পেলি আর চলে এলি।
-‘ তুই আমায় যা নয় তাই বলছিস, আমি তোর বিপদের সময় পাশে দাড়িয়েছি। তোর ডিভোর্স হয়েছে, এ কথাটা শুনেই আমি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি তোকে। আর তুই কি না আমায় অ*পমান করলি?
আমি চমকালাম কিছুটা। আমার জানামতে আমার মা বা কেউ-ই আহনাফকে এ ব্যাপারে কিছুই বলে নি। তাহলে আহনাফ জানল কিভাবে এ ব্যাপার। আমি সন্দেহের দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললাম
-‘ তোকে আমার ডিভোর্স হয়েছে, এ ব্যাপারে কে বলল? আমি যত দূর জানি, আমার মা বাবা কেউ তোকে এ বিষয়ে বলে নি, তাহলে?
আহনাফ আমতা আমতা করতে লাগল। ওর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। আর না আমার চোখের দিকে ঠিক মতো তাকিয়ে কথা বলতে পারছে। আহনাফ কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বলল
-‘ অরনিশা, আজ আসি রে। পরে কথা হবে। আমার একটু জরুরি কাজ আছে।
আহনাফ কথাটা বলে আর এক মুহূর্তেও অপেক্ষা করল না, দৌড়ে বেরিয়ে যেতে পারলেই যেন বাচে। আমি আহনাফের যাওয়ার পানে সন্দেহ ভরা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।
#চলবে ~