#আড়ালে_ভালোবাসি_তোমায়
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব১৩
রাশফিনের হাত ধরে ওর বেডের পাশে বসে আছি আমি। আইসিউ থেকে রাশফিনকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে আজ। ডক্টররা সফল ভাবে রাশফিনের ব্রে’ই’নে’র’ টি*উ*মা*র’ অ’প’রে’শ’ন করতে পেরেছেন। রাশফিন এখন তুলনামুলক সুস্থ তবে অতটাও না। যদিও এখনও জ্ঞান ফিরে নি রাশফিনের। রাশফিনের চিন্তায় আজ গত কয়েক দিন যাবত ঘুমাতেও পারি নি ঠিক মতো। যে কারণে চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে আমার। প্রতিটা রাত জায়নামাজ ভিজিয়েছি, আমার যা হয় হোক তবুও রাশফিনের যেন অন্তত পক্ষে কিচ্ছু না হয়।
কালকের ঘটনা মনে পড়তেই আমি ফুপিয়ে কেদে উঠলাম। হসপিটালে এসেই আমি মামনিকে কালকের ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলে দিয়েছি। সবটা শুনে তিনি বেশ রে*গে যান। রাশফিনের এ অবস্থা, তার উপর এতো কিছু এসব দেখে যেন নিজেকে এখন সবচেয়ে বেশি অসহায় মনে হচ্ছে আমার। রাশফিনের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কাদতে কাদতে কখন যে সেভাবেই ঘুমিয়ে পড়েছি, নিজেও জানি না। কয়েক দিন যাবত টেনশন আর না ঘুমানোর কারণে বড্ড ক্লান্ত লাগছিল, যার জন্য চোখটা একটু বুজে এসেছিল আমার।
হঠাৎ মাথায় কারো পরম যত্ন সহকারে হাত বুলিয়ে দেওয়ার স্পর্শে ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে দেখলাম রাশফিন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সেই সাথে আমার দিকে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আগের মতো এবারও আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। কেন জানি না এই মানুষটার চোখের দিকে আমি তাকিয়ে থাকতে পারি না বেশিক্ষণ।
রাশফিনের জ্ঞান ফিরেছে বলে আমি উঠে মামনিকে বলতে যাব তখনই আমার হাত ধরে আটকে দেয় রাশফিন। আমি পিছনে ফিরে রাশফিনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই ও ইশারায় আমায় বসতে বলল। আমিও ওর কথা মতো তা-ই করলাম।
আমার এক গালে হাত রেখে শান্ত গলায় রাশফিন বলল
-‘ এতো দিন তোমায় অনেক বেশি ক’ষ্ট দিয়ে ফেলেছি আমি। এর জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আসলে…
রাশফিনকে থামিয়ে আমি বললাম
-‘ আমার এসব কথা শোনার বিন্দু মাত্র ইচ্ছাও নেই। মামনি আপনার জন্য টেনশন করছিল, এখন আপনার জ্ঞান ফিরেছে, এখন মামনি গিয়ে বলতে হবে। তা না হলে টেনশন করবে, এমনিতেই আপনার জন্য অসুস্থ হয়ে পরেছে মামনি।
-‘ আম্মুকে পরেও বলা যাবে। আগে আমার কথাটা তো শোনো…
-‘ আপনার কোনো কথাই শুনতে চাই না আমি।
-‘ তোমার মনে এতো অ’ভি’মা’ন জমে আছে বুঝি আমায় নিয়ে? যদিও তোমার অ’ভি’মা’ন করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তুমি কি জানো, তুমি যতোটা ক’ষ্ট পেয়েছিলে, তার থেকেও দ্বিগুন বেশি ক’ষ্ট আমি পেয়েছিলাম।
আমি কোনো কথা বললাম না, চুপ করে রইলাম। আমায় চুপ থাকতে দেখে রাশফিন আবার বলল
-‘ আমি তো ইচ্ছে করে ভুল করিনি, অরনিশা। আমায় কি মাফ করা যায় না। আমি কি ক্ষমার এতোই অযোগ্য?
রাশফিনের কথা শুনে বাঁকা হাসলাম আমি। মনে মনে বললাম
-‘ এতো সহজে কিছুই হবে না, মিস্টার রাশফিন চৌধুরী। আমি যদি সহজে তোমার কাছে ফিরে যাই তাহলে তুমি আমায় সস্তা মনে করতে পারো। ভবিষ্যতে যে এমন করবে না, তার কি গ্যারেন্টি? তোমাকে ভালো মতোই শিক্ষা দিব আমি। এমন শিক্ষা দিব যে সারাজীবন মনে রাখবা চান্দু, আর কখনো নিজের বউকে রেখে অন্যের কথা বিশ্বাস করে, ভুল বুঝে কষ্ট দিবা? ব্যাটা খারুশ কোথাকার একটা। বোঝো এবার এই অরনিশা কি জিনিস, হুহ।
মনে মনে কথাটা ভেবে রাশফিনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের চুল গুলো উড়িয়ে বেরিয়ে এলাম কেবিন থেকে।
এদিকে রাশফিন বো’কা’র মতো বসে অরনিশার চলে যাওয়ার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। বোঝার চেষ্টা করল অরনিশার ভাব ভঙ্গি, তবে তেমন কিছু আন্দাজ করতে পারল না।
কেবিন থেকে বেরিয়ে মামনিকে রাশফিনের জ্ঞান ফিরে আসার খবরটা দিলাম। মামনি দৌড়ে গেলেন রাশফিনকে দেখতে।
রাশফিনকে সুস্থ দেখে যেন কলিজায় পানি চলে এলো রাহেলা খাতুনের। তিনি জড়িয়ে ধরলেন তার ছেলেকে। জড়িয়ে ধরে কান্নাই করে দিলেন তিনি। রাশফিনের চোখেও অশ্রু কণারা এসে যেন ভিড় জমিয়েছে। কতো দিন পর তার স্নেহমায়ী মাকে দেখেছে।
রাশফিনকে ছেড়ে রাহেলা খাতুন বললেন
-‘ কেমন আছিস এখন, তুই, বাবা? ঠিক আছিস তো? জানিস তোর টেনশনে এই কয়দিন ঘুমাতেও পারিনি আমরা। অরনিশা প্রচুর কেদেছে তোর জন্য।
রাহেলা খাতুনের বলা শেষোক্ত কথাটি শুনে বাকা হাসল রাশফিন। এবার কিছুটা হলেও বুঝেছে আসল কাহিনি রাশফিন, মুচকি হেসে রাহেলা খাতুনের গাল টেনে দিয়ে বলল
-‘ ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। এখন ভালোই লাগছে। তুমি থাকতে কি আমি খা’রা’প’ থাকতে পারি আম্মু?
রাহেলা খাতুন মুচকি হাসলেন রাশফিনের কথা শুনে। ছেলেটা গায়ে পায়েই যা বড় হয়েছে, ওর ছেলে মানুষি বা বাচ্চামো স্বভাবটা এখনো যায়নি।
দূর হতে মা ছেলের ভালোবাসা দেখছিলাম আমি। আমি তো এটাই চাই, সবাই মিলে একসাথে হাসি খুশি থাকতে, আমাদের পরিবার হবে সব থেকে বেশি সুখী হবে। যেখানে থাকবে না কোনো অশুভ বৃক্ষের ছায়া।
কিছু একটা মনে পড়তেই যেন মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো রাহেলা খাতুনের। গম্ভীর কণ্ঠে তিনি ছেলের উদ্দেশ্যে বললেন
-‘ তোকে আমার কিছু বলার আছে। মন দিয়ে শুনবি তুই।
-‘ হুম বলো, সিরিয়াস কিছু নাকি?
-‘ হ্যাঁ, শোন তবে…
রাহেলা খাতুন একে একে ফারিহা মা*রা যাওয়ার আগে ওর বলে যাওয়া সব কথা এবং চ*ক্রা*ন্তে’র’ কথা গুলো খুলে বললেন রাশফিনকে।
সব শুনে রাশফিন যেন রে*গে আ*গু*ন হয়ে গেল। কাটকাট গলায় বলল
-‘ ঐ কা*ল*না*গি*নী কোথায় এখন? আমার বিশ্বাস নিয়ে ছি’নি’মি’নি’ খেলে, সামনে পেলে তো ওকে আমি মে*রেই ফেলবো। আমাকে আর অরনিশাকে ক*ষ্ট দেয়। এত্তো বড় সাহস?
-‘ ফারিহা কা*র এ*ক্সি*ডে*ন্টে মা*রা গেছে গত দুদিন হতে চলল।
এটা শুনে কিছুটা নরম হলো রাশফিন। তবুও বলল
-‘ ভাগ্যিস মা*রা গেছে তা না হলে আমি-ই মে*রে ফেলতাম ওকে। আমি ছোটবেলা থেকে আর যাই হোক কোনো বি*শ্বা*স*ঘা*ত*ক দের স’হ্য করতে পারি না। সামনে দেখলেই আমার মাথা ঠিক থাকে না। মনে হয় যেন খু*ন করে ফেলি।
এতো টুকু বলে থামল রাশফিন। রাশফিনের এতো রা*গ দেখে রাহেলা খাতুন অরনিশার সাথে আহনাফের করা আচরণ গুলো বলার সাহস পেলেন না। তবুও অরনিশার ক্ষ*তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি ছেলেকে সব বলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
-‘ ফারিহা কিন্তু একা দোষী না, সাথে ওর মা এবং আহনাফও জড়িত।
একে একে তিনি কালকের ঘটনাও সব বলে দিলেন রাশফিনকে।
-‘ সামনে কিন্তু অরনিশার বি*প*দ। তুই ওর খেয়াল রাখিস, বাবা।
রাহেলা খাতুনের বলা সব কথা শুনে তো রাশফিন আরও রে*গে আ*গু*ন হয়ে গেল। মুহুর্তেই যেন রাশফিনের ফর্সা মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।
-‘ কিহ্ এতো বড় সাহস? আমি থাকতে কিচ্ছু হতে দিব না আমার অরনিশার। যে ওর দিকে হাত বাড়াবে তার হাত কে*টে দিব আমি। রাশফিন চৌধুরী বেচে আছে এখনও, মরে যায় নি এখনও। আমি বেচে থাকতে আমার বউয়ের দিকে কিনা এমন কু*নজর দেয় আহনাফ। কিছুতেই সম্ভব না। ওকে আমি ছাড়ব না। ওর শে*ষ আমি দেখেই ছাড়ব। দেখে নিব ওকে আমি। অরনিশা শুধুই আমার, ওর দিকে কেউ কু*নজর দিলে আমি তার চোখ উ*প*ড়ে ফেলবো।
#চলবে ~