কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে #পর্ব_১৮

0
211

#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_১৮
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা

“আজ কেস কোর্টে উঠবে। তবে আমার মনে হয় না এই কেস খুব বেশিদিন চলবে। আশা করছি, তোমার প্রথম কেস দুই দিনেই শেষ হয়ে যাবে।”

কুয়াশা নিজের গায়ে কালো গাউন জড়াতে জড়াতে বলে,

“আজকেই এই কেস বন্ধ হয়ে যাবে কিনা এটা ভাবছি। মিহি নামের মেয়েটা এত কাঁচা কাজ করে পুলিশের কাছে আসলো কীভাবে?”

“পাগল হলে যা হয়।”

সাফওয়ানের কথায় কুয়াশা হাসিমুখে উত্তর দেয়,

“এমন কেসে নিজেকে জড়াতে হবে কখনো ভাবিনি। না মানে আমিই হয়তো প্রথম নারী যে কিনা নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে আসা এমন অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এই জীবন নিয়ে হাসব নাকি কাঁদব বুঝতে পারি না!”

“আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে কুয়াশা। এখন মন খারাপ না করে কোর্টে চলো। তোমার জীবনের প্রথম কেস এটা। খুব সাবধানে কথা বলতে হবে।”

“হ্যা জানি। দেখা যাক কি হয় আজকে।”

“চলো এখন।”

সাফওয়ান আর কুয়াশা একসাথে বের হয়ে যায় কোর্টের উদ্দেশ্যে। কোর্টের সামনেই তুরাবের সাথে দেখা হয়ে যায় তাদের। কুয়াশা তুরাবের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,

“ভয় পাবেন না। এটা খুব ছোট একটা কেস। হ্যা, অভিযোগটা বড়ো। কিন্তু আমাদের কাছে অনেক প্রমাণ আছে। আশা করছি আজই এই কেস বন্ধ করে দেওয়া হবে। খুব বেশি হলে আগামী ডেট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু আপনার কোনো ক্ষতি হবে না এটুকু বলতে পারি। কারণ এই কেসে আপনি সত্যিই নির্দোষ। তবে জীবনের খাতায় নন!”

কুয়াশার শেষ বাক্য শুনে তুরাবের মুখ অন্ধকারে ছেয়ে যায়। সব সময় এই মেয়েটা তাকে খোঁচা দিয়ে কথা বলে। এটা করে যে মেয়েটা কি এমন শান্তি পায় তা তুরাব কিছুতেই বুঝতে পারে না।

“কুয়াশা আমাদের এখন ভেতরে যাওয়া উচিত।”

“হ্যা চলো।”

কুয়াশা সাফওয়ানের সাথে ভেতরের দিকে চলে যাওয়ার সাথে সাথে তুরাবও এগিয়ে যায় সেদিকে। কোর্টে সবাই উপস্থিত। এখন শুধু জজ আসার অপেক্ষা। যথা সময়ে জজ সাহেব চলে আসেন। নিজ আসন গ্রহণ করে কেসের কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। প্রথেই কাঠগড়ায় তুরাবকে তোলা হয়। অপরপক্ষের উকিল ইচ্ছামতো তুরাবের উপর দোষ দিতে থাকে। কুয়াশা নিশ্চুপ হয়ে সব শ্রবণ করছিল। অতঃপর কুয়াশার সময় আসলে সে মিহিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। এরপর একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে।

“মিস মিহি আপনার কথা অনুযায়ী মিস্টার তুরাব তৌহিদ আপনার সাথে প্রেমের নাটক করে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। কিন্তু পরবর্তীতে আপনাকে বিয়ে করতে সে রাজি হয়নি। ঠিক তো?”

“হ্যা।”

“এখন আমার প্রশ্ন হলো, আপনাদের ব্যক্তিগত সময়ের মুহূর্ত কে ভিডিয়ো করল? আর সেই ভিডিয়ো আপনিই বা কীভাবে পেলেন? পুলিশকে দেখালেন কীভাবে?”

কুয়াশার কথায় মিহি চুপ করে যায়। কোনো উত্তর দিতে পারে না।

“চুপ করে থাকবেন না। উত্তর দিন।”

“আসলে তুরাব যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায় এই ভয় থেকে আমি নিজেই ভিডিয়ো ধারণ করেছিলাম।”

“আপনি এমন আমতা আমতা করছেন কেন? যাইহোক, এখন প্রশ্ন হলো যার কাছে এত ভয় তার কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিলেন কেন?”

“ভালোবাসি তাই। ওকে হারানোর ভয় পেতাম আমি। তাই ওও যা যা বলেছে সেটাই করেছি আমি।”

“আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন, আপনি যদি মিস্টার তুরাবকে এতটা ভালোবেসে থাকেন তাহলে ওনার থেকে দশ লাখ টাকা কেন চেয়েছেন?”

কুয়াশার এমন প্রশ্নে চমকে যায় মিহি। তার চোখেমুখে ভয় ফুটে উঠেছে।

“আমি কোনো টাকা চাইনি। এসব মিথ্যা কথা।”

কুয়াশা আপনমনে হেসে জজকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“মহামান্য আদালত আপনি অনুমতি দিলে আমি আমার মক্কেলের হয়ে কিছু প্রমাণ পেশ করতে চাই।”

জজের পক্ষ হতে উত্তর আসে,

“অনুমতি দেওয়া হলো।”

কুয়াশা একটা পেন ড্রাইভ আর তুরাবের ফোন জজের সামনে দিয়ে বলে,

“এই ফোনে যে ভয়েস রেকর্ড করা আছে তা শোনার জন্য অনুরোধ করছি।”

জজ সাহেব ভয়েস চালু করতেই কিছু দিন আগে তুরাবের সাথে মিহির কথপোকথন শুনতে পায়। যেখানে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে, মিহি এই কেস তুলে নেওয়ার জন্য তুরাবের থেকে দশ লাখ টাকা চাচ্ছে।

এই ভয়েস শোনার পর পেন ড্রাইভে থাকা ভিডিয়ো চালু করে জজ সাহেবকে সেটা দেখতে অনুরোধ করে কুয়াশা। ভিডিয়ো চালু করার পর কুয়াশা বলতে শুরু করে,

“এখানে দেখা যাচ্ছে মিস্টার তুরাব চোখ বন্ধ অবস্থায় বিছানায় শুয়ে আছে। মেয়েটার চুলের জন্য তা স্পষ্ট বোঝা না গেলেও খানিকটা বোঝা যাচ্ছে। এছাড়া মেয়েটার শরীর থেকে মিস্টার তুরাবের হাত বারবার সরে যাচ্ছে। এখন আমার প্রশ্ন হলো, একজন অচেতন ব্যক্তি কীভাবে মেয়েটার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে পারে? এটা কী নিছকই একটা ষড়যন্ত্র নয়?”

কুয়াশার এহেন কথায় মিহির গলা শুকিয়ে যায়। তার হাত-পা কাঁপতে শুরু করে।

“মিস মিহি প্রশ্নের জবাব দিন। কেন এমন কাজ করলেন আপনি?”

মিহিকে চুপ থাকতে দেখে কুয়াশা পুনরায় জিজ্ঞেস করে,

“কী হলো? আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।”

বারবার প্রশ্ন করার পরেও মিহিকে চুপ করে থাকতে দেখে কুয়াশা চিৎকার করে বলে,

“উত্তর দিন বলছি।”

মিহি নিজেকে সামলাতে না পেরে সমস্ত সত্যি স্বীকার করে নিয়ে বলে,

“হ্যা এসব আমার সাজানো নাটক। আমি টাকার জন্য এসব করেছি। আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দিন। আমি আর কখনো এমন করব না।”

কথাটা বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে মিহি। কুয়াশা জজ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে,

“মিস মিহি নিজেই সব কথা স্বীকার করে নিলেন। এখানে আমার মক্কেলের কোনো দোষ নেই তা পরিষ্কার। সুতরাং, আমি আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে আসা এই অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। বিনা দোষে আমার মক্কেলকে যেন শাস্তি পেতে না হয় তার জন্য জজ সাহেবের কাছে অনুরোধ করছি।”

জজ সাহেব সমস্ত প্রমাণের উপর ভিত্তি করে এই কেস বন্ধ করে দেওয়ার আদেশ দেয়। একইসাথে মিহির এমন ঘৃণ্য কাজের জন্য তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড প্রদান করে।

এমন রায়ে সবার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। একটা কেস এত সহজে শেষ করার জন্য কুয়াশাকে নিয়ে সবাই বাহবা দিতে থাকে। তুরাব খুশিমনে কুয়াশার দিকে এগিয়ে আসতে গেলে কুয়াশা তাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতে চায়। তুরাব কুয়াশাকে পেছন থেকে ডাকলেও সে সেই ডাক উপেক্ষা করে হাঁটতে থাকে। এমতাবস্থায় তুরাব কুয়াশার হাত ধরে ফেলে।

“কোন সাহসে আপনি আমার হাত ধরলেন?”

“কেন এমন করছ তুমি আমার সাথে?”

“আপনার কেস হাতে নিয়েছিলাম আমি। আপনাকে অনেক বড়ো অভিযোগ থেকে মুক্ত করেছি। আর কী চান?”

“তোমাকে চাই!”

“নিজের সীমানার মধ্যে থাকুন আপনি। এমন কিছু বলবেন না যার জন্য এখন আমাকেই আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে হয়।”

“নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাও?”

“বারবার আমার স্বামী হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে কী প্রমাণ করতে চান? আপনি আমাকে ভালোবাসেন? আমাকে বউ হিসেবে মানেন? আমাকে ফিরে পেতে চান? এসব প্রমাণ করতে চান?”

“যেটা সত্যি সেটা প্রমাণ করার জন্য কিছু করতে হয় না কুয়াশা। আমি সত্যিই তোমাকে ফিরে পেতে চাই।”

“আমাকে ফিরে পাওয়ার খুব ইচ্ছা আপনার তাই না?”

“হ্যা।”

“কিন্তু কেন? আমি আপনাকে বাঁচিয়েছি বলে দয়া দেখাতে এসেছেন?”

“না। মন থেকে তোমাকে অনুভব করতে পারি এখন। এজন্যই চাই যেন আমাদের সম্পর্ক আবার ঠিক হয়ে যায়।”

তুরাবের এমন প্রশ্নে কুয়াশা হাসতে আরম্ভ করে। যেন সে খুব মজার কিছু শুনেছে।

“কী হলো? তুমি এমন করে হাসছ কেন?”

কুয়াশা কোনোরকমে হাসি থামিয়ে তুরাবের দিকে তাকিয়ে বলে,

“আপনাকে আমার কিছু দেওয়ার আছে তুরাব!”

“কী?”

“একটু অপেক্ষা করুন।”

কথাটা বলে কুয়াশা সাফওয়ানকে কাছে ডাকে। তারপর তুরাবকে উদ্দেশ্য করে বলে,

চলবে??

বিঃদ্রঃ একটা কেস শেষ করতে অনেক দিন লাগে। কখনো কখনো অনেক বছর লেগে যায়। কিন্তু আমার পক্ষে গল্পে একটা কেস এক বছর ধরে চালানো সম্ভব নয়। কারণ গল্পটা খুব বেশি বড়ো হবে না। তাই এক পর্বেই কেসের ব্যাপারটা শেষ করতে হলো। তার জন্য আমি দুঃখিত। আশা করি এতে করে কেউ আমাকে ভুল বুঝবেন না।
আর সবার কাছে একটা প্রশ্ন, কুয়াশা তুরাবকে কী দিতে চলেছে? কমেন্টে সবার মতামত আশা করছি। 💙

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here