#আড়ালে_অন্তরালে
#মাহমুদা_লিজা
পর্বঃ২৩
কানে ব্লুটুথ ডিভাইসটা অনবরত লাগিয়ে আছে রায়হান। নিরুপমার দৃঢ়তায় তার বিশ্বাস আছে। মেয়েটা যতটা মায়াবী, যতটা দয়ালু ঠিক ততটাই নির্মম। রায়হানের ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে সাদমানের গলা টিপে ধরতে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার নিশ্বাস বন্ধ হয়। এখন সেখানে যাওয়া মানে অহেতুক ঝামেলা বাড়ানো। তাইতো নিজের ইচ্ছাকে সংবরণ করতে হলো। এর মধ্যেই শুনতে পেল করুণ আর্তনাদ। রায়হান চোখ বন্ধ করে সম্পূর্ণরূপে এলার্ট হয়ে আছে প্রতিটা কথা রেকর্ডিং করতে। আবার শোনা গেল নিরুপমার কন্ঠস্বর।
মতিন খানের দু কাঁধে নিজের নখগুলো চেপে ধরে নিরুপমা রুক্ষভাষী হয়ে বলল – মুখ খুলুন, এখান থেকে ফেরার পথ নেই। অযথা নিজের কষ্ট বাড়াচ্ছেন।
মতিন খান আবারো চিবিয়ে বলল – কিছু বলব না, তোর বাপের ক্ষমতা নেই আমাকে আঁটকে রাখার।
মতিন খানকে ছেড়ে দিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ালো নিরুপমা। কিঞ্চিৎ ভয় পাওয়ার অভিনয় করে বলল – আমি ভয় পাচ্ছি।
হো হো শব্দে হেসে হাতের রডটা দিয়ে সজোরে আঘাত করল মতিন খানের হাঁটুতে। তীব্র ব্যাথায় আর্তনাদ করার সুযোগও পেলো না মতিন। তার আগেই তার মুখে মরিচের গুঁড়া দেয়া হয়েছে। নিরুপমার নখের চাপে কাঁধের ঐ অংশটায় মরিচ গুঁড়ো ঢেলে তাতে গরম পানি দেয়া হচ্ছে। বাবার অমন পরিণতি দেখে ফারহান ভয় পেয়ে বলল – আমি বলছি, আমাকে মারবেন না। সব বলছি।
নিরুপমা হেসে বলল – এইতো গুড বয়। বলুন আপনার বাবার সম্পর্কে।
ফারহান কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল – আমি জানি যে, বাবা, সাদমান কাকু এবং জামশেদ কাকু ব্যবসা করতেন। তারা নারী পাচারসহ বিদেশে শরীরের বিভিন্ন অরগান পাঠাতেন। তাছাড়া বিভিন্ন মহলে অর্থের বিনিময়ে নারী পাঠাতেন এবং তাদের ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদা আদায় করতেন।
আমি এটুকুই জানি।
গর্জে উঠল নিরুপমা। চেচিয়ে বলল – তানভীরের বিরুদ্ধে অমন অভিযোগের মূল হোতা কে?
ফারহান ভয়ে ভয়ে বলল – জামশেদ রহমান। তানভীরের সকল গতিবিধি তাকে বাবা বলত।
নিরুপমা তার পাশে দাঁড়ানো একজনকে ইশারা করল ফারহানকে সরিয়ে নিতে। নির্দেশ দিল ফারহানের বিরুদ্ধে মাদক সেবন, ব্যবসা ও মাদক সরবরাহের অভিযোগে মামলা করার জন্য।
নিরুপমা এবার মতিন খানকে আবার বলল – বিস্তারিত বলুন।
মতিন খান মুখ না খুলে তখনও চুপ করে আছেন। নিরুপমা যখনই আঘাত করতে যাবে তখনই বলল – বলছি, বলছি।
নিরুপমা তখন কাউকে বলল ভেতরে আসেন আপনি।
মতিন খানকে ইশারা করে বলল – শুরু করুন।
কালো মুখোশে ঢাকা লম্বা লোকটা তখন দরজা খুলে দ্রুত পায়ে মতিন খানের সামনা সামনি চেয়ার নিয়ে বসল।
নিরুপমা সোজা দাঁড়িয়ে বলল – স্যার, উনি বয়ান শুরু করছেন।
মতিন খানকে ইশারা করে বলল – বলুন মিস্টার খান।
যন্ত্রণায় কোঁকাতে কোঁকাতে মতিন খান বলল – মাহতাব আর জামশেদ বন্ধু ছিল। মাহতাব সামরিক বাহিনীতে থাকলেও জামশেদ ছিল স্হানীয় বাজারে কাপড়ের ব্যবসায়ী। তার দোকানে আসা যাওয়ার মাধ্যমে তামান্নার প্রতি জামশেদ ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে পড়ে। মাহতাবের বিশাল সম্পত্তির প্রতি আমার একটা টান ছিল। বিভিন্নভাবে তাই চেষ্টা করছিলাম সম্পত্তির কিছু অংশ নেয়ার। এরমধ্যে তামান্নাও জামশেদের সাথে জড়িয়ে পড়ে। জামশেদও তার বাসায় আসা যাওয়া শুরু করে। তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কটা ততদিনে তৈরী হয়ে যায়। তামান্নাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার সে ক্ষমা চেয়ে বলে আর করবে না। কিন্তু আমার মাথায় তখন সম্পত্তির চিন্তা। এরমধ্যে আমি আবার সাদমানের সাথে পরিচিত হই জামশেদের মাধ্যমে। তার বাসায় আসা যাওয়া করতে করতে সাদমানের বোনের সাথে অনিচ্ছায় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি, এক পর্যায়ে বিয়ে করে নেই।
কথাটা বলে থামতেই মতিন খানকে নিরুপমা বলল – না থেমে পুরোটা বলুন।
নিরুপমা খেয়াল করেনি মতিন খান হাতের বাঁধন খুলে ফেলেছে। ব্যাপারটা খেয়াল করে তার সামনে বসা মুখোশের আড়ালে থাকা লোকটা। সে তৎক্ষণাৎ মতিন খানকে চেয়ারের সাথে চেপে ধরে, পাশ থেকে আরেকজন এসে আবার বেঁধে ফেলে শক্ত করে। নিরুপমা এগিয়ে এসে মতিনের পেছনে দাঁড়ায়। হাতে থাকা রডটা মতিনের মাথার উপর দিয়ে এনে গলায় বসিয়ে পেছনে টান দিয়ে বলে – আরেকবার চালাকির চেষ্টা করলে ভবলীলা সাঙ্গ করে দেব।
কিছুক্ষণ ওভাবে ধরে ছেড়ে দিতেই কাশতে শুরু করে মতিন। নিরুপমা ঘাড় চেপে ধরে বলল – বাংলা সিনেমা কম করুন। তারপর বলুন।
আবার বলতে শুরু করল মতিন। হাঁফাতে হাঁফাতে বলল – বিয়ের কথা জেনে জেবিন অশান্তি শুরু করে। তামান্নাও সুযোগটা লুফে নেয়। সে এবার আরো বাঁধা ছাড়া জামশেদের সাথে জড়িয়ে পড়ে। তামান্না আবার পিছ পা হয় সন্তানদের কথা ভেবে। কিন্তু জামশেদ আবারো তাকে তার কথার দ্বারা বশীভূত করে নেয়। জেবিন ততক্ষণে তামান্নার ঘটনাও জেনে যায়। আমাকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখাতে থাকে যে আমার বিরুদ্ধে সে প্রতারণা মামলা করবে এবং তার বাবার বাড়ির লোকদের বলে আমাকে শাসায়।
জামশেদ তখন পরিকল্পনা করে সে তামান্নাকে বিয়ে করবে। তামান্নাও রাজি হয়ে যায়। এদিকে সাদমানের বোন মানে সাহারা আমাকে চাপ দিতে থাকে তাকে যেন আমার বাসায় নিয়ে আসি।
এরমধ্যেই আমি আবার সাদমানের সাথে মিলে নারী পাচারে জড়িত হয়ে যাই। নিত্যনতুন নারী দেখে আমিও অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। জেবিন কিভাবে যেন সবটা জেনে যায়। সে পুলিশকে ঘটনাটা জানাবে বলে মনস্থির করে। আমি তখন তাকে একপ্রকার বন্দী করে রাখি। এক পর্যায়ে তার বাড়াবাড়িতে বিরক্ত হয়ে পরিকল্পনা করি জামশেদই পারে আমাকে এর থেকে মুক্তি দিতে। তারপর জামশেদ, আমি,সাদমান এবং তামান্না মিলে পরিকল্পনা করি যে করেই হোক জেবিনকে না সরালে সে ঝামেলা করবে। তামান্না ততক্ষণে জামশেদের ফাঁদে পড়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছে।
একদিন জামশেদ তার ঘরে আসে, তারা দুজনে একান্ত মুহূর্তে জড়াতেই মারিয়াম তাদের দেখে নেয় এবং চিৎকার করতে থাকে। তামান্না তখন ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হ-ত্যা করে ফেলে। জেবিন পুরোটা দেখে নেয় এবং আয়েশাও দেখে নেয়। জেবিন তখন চিৎকার করে ঘর থেকে বেরিয়ে মানুষ ডাকতে যায়। আমিও তখন নিজের রাস্তা পরিষ্কারের জন্য একটা পরিকল্পনা করে ফেলি। জেবিনকে টেনে নিয়ে আসি এবং বন্ধ করে রাখি ঘরে। জামশেদকে পুরো ব্যাপারটা জানাই। ততক্ষণে জামশেদ তার বন্ধু সাদমানকে গাড়ি নিয়ে আসতে বলে যেন তামান্নাকে নিয়ে সে পালিয়ে যেতে পারে। আমি তখন জামশেদকে বলি জেবিন দেখে নিয়েছে, তাকেও রাস্তা থেকে সরাতে হবে। জামশেদও রাজি হয়, সে ভেবেছে আমি তাকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছি। ততক্ষণে সাদমান আসে। তারা দুজনে মিলে জেবিনকে শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু জেবিনকে দেখে তারা অবাক। জেবিনের সৌন্দর্য দেখে দুজনেই মত পাল্টে নেয়। তারা সিদ্ধান্ত নেয় তাকে আগে ভোগ করে তারপর শেষ করবে। তারা তাই করে। পুরো ব্যাপারটা আয়েশা দেখে ফেলে। তবে আয়েশা এটা দেখেনি যে আমি তাদের পালাতে সাহায্য করি। ভয়ে আতংকে মেয়েটা খাটের তলায় লুকিয়ে থাকে। আমি তখন সাজানো পরিকল্পনামত কুমিরের কান্না করি। আমার কান্নায় ভুলে গিয়ে আয়েশা আমায় আঁকড়ে ধরে কাঁদতে থাকে। ততক্ষণে তানভীরের ছুটি হয়। সে ফিরতেই আয়েশা তাকে সব বলে। আমি পুরোটা শুনে বুঝতে পারি আমার পরিকল্পনা তারা ধরতে পারেনি। তখন আমি তাদের কাছে টেনে নেই, বুঝতে পারি সম্পত্তিটা এবার অনায়াসে পাব।
এতটুকু বলার সাথে সাথেই সামনে বসা লোকটা মুখোশ সরিয়ে বলল – তারপর বলুন।
মতিন খান চমকে উঠে নিজের ছেলেকে দেখে। হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। রায়হানের চোখে তখন ক্রোধানল। তারপর নিরুপমা বলে – এরপর মাহতাব খানকে খবর দিয়ে সব বলেন। তিনিও সব ফেলে, সামরিক আইন অমান্য করে ফিরে আসে সন্তানের কাছে। এজন্য চাকরিচ্যুত হন তিনি। তাকে গ্রামেও বদনাম করে গ্রামছাড়া করেন। তিনি সব সম্পত্তি বিক্রি করে পটিয়ায় আসতে বাধ্য হন। সে সুযোগে আপনি তার অর্ধেকের বেশি সম্পত্তি লাপাত্তা করেন। কিন্তু সহজ সরল মাহতাব খান আপনার কুটিলতা ধরতে পারেন নি। আপন ভেবে নিজের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করে। কিন্তু আপনার ইচ্ছেতে বাদ সাধে মিস্টার তানভীর। তিনি প্রতিশোধের স্পৃহায় মুখিয়ে থাকেন। কিন্তু তার ভুল তিনিও আপনাকে আপন ভেবে সব বলত। আপনি সব পাচার করতেন।
মতিন খান সব স্বীকারোক্তি জানায়। সকল প্রমাণ নিয়ে জামশেদকে আনার ব্যবস্হা করে নিরুপমা। নিরুপমা ততক্ষণে সাদমানকে পাঠিয়ে দেয় রায়হানের কাছে। রায়হান তাকে দুহাত পেছনে বেঁধে টুকরো কাঁচের উপর চেপে ধরে বলে – আমার মা কত কষ্ট পেয়েছে তাইনা? তোকে আমি মারব না, শাস্তি দিবে আইন। কিন্তু তোকে আমি যন্ত্রণা দিব।
মতিন খানকে তখন চোখ বেঁধে, হাতগুলো পেছনে বেঁধে অন্য রুমে নিয়ে যায় নিরুপমা। তীব্র চিৎকারে আর্তনাদ করে উঠছে নিরুপমা। পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার আগে খানিক খাতির যত্ন করে নেয় সে।
_____
ঘরে ঢুকে তানভীরকে দেখতে না পেয়ে রায়হান বুঝেছে তানভীর নিজের ঘরে গেছে।
আলমারি খুলে মায়ের ছবিটা হাতে নিয়ে বুকে চেপে ধরে বলল – ও মা, ঐ লোকটা তোমায় বাঁচতে দিলো না মা। মা, আমি আইন নিজের হাতে নিতে পারলাম না। আমার হাত বাঁধা। মা ঐ নিরুপমা এসে সব জানাল। নয়ত জানতামই না। ও মা, একবার আসোনা।
সব রেখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে নিজেকে স্হির করল রায়হান। টি শার্টটা গায়ে জড়িয়ে নিল। পুরো ঘরটা ফাঁকা। বিষাক্ত লাগছে সব। নিজের বাবার এমন রূপ কখনো ভাবেওনি। ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা চলে এলো তানভীরের কাছে। বন্ধ দরজায় কড়া নাড়তেই দরজা খুলে দিল আয়েশা। রায়হানকে দেখেই হাসিমুখে বিরক্তির ছাপ এলো। অথচ সে একটু খেয়াল করলেই দেখত কতটা বিধ্বস্ত হয়ে আছে ছেলেটা। আয়েশার দিকে তাকিয়ে ঈষৎ হেসে রায়হান বলল – তানভীর কই?
রায়হানের কথার জবাব না দিয়ে আয়েশা নিজের ভাইকে বলল – ভাইয়া, তোকে ডাকে।
রায়হান ভেতরে এসে দেখল তানভীর বসে আছে। রায়হানকে দেখেই বলল – কখন এলি?
রায়হান ছোট্ট করে বলল – এই তো। তুই চলে এলি যে।
তানভীর হেসে বলল – একা বোর হচ্ছিলাম। আরেকটু সুস্থ হলে মায়াকে আনতে যাব। ওকে একটা ফোন কিনে দিতে হবে। একটা কথাও হচ্ছে না।
রায়হান ভণিতা না করে বলল – খবর দেখেছিস?
তানভীর মাথা নাড়ালো।
রায়হান শান্তস্বরে বলল – দেখিস না, ঘৃণা করবে। জানিস তামান্না রহমানের বিরুদ্ধে হ:ত্যা মামলা হয়েছে। জামশেদের খোঁজ নেই। কিন্তু আমি জানি জামশেদকে থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি থেরাপি দেয়া হচ্ছে।
মতিন খানকেও গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সাদমানের অবস্থা শোচনীয়। অপেক্ষা শুধু জামশেদের পরিণতি জানার।
তানভীর হেসে বলল – প্রতিশোধ নিতে পারিনি রায়হান ভাই।
রায়হান হেসে বলল – আইন নিজের হাতে তুলিস না। নিরুপমা সম্ভবত তোর বিরুদ্ধে আইন নিজের হাতে তোলার অভিযোগ আনতে পারে।
তানভীর হেসে বলল – কোন প্রমাণ আছে?
রায়হান হাসতে হাসতে জবাব দিল – ঊনিশ বছর আগের ঘটনা খুঁচিয়ে বের করে এনেছে, ধূলো জমা ফাইলটা মুছে নতুন করে তদন্ত হচ্ছে। তবে তোর বিরুদ্ধে সামান্য অভিযোগ না ও আনতে পারে।
আয়েশা দাঁড়িয়ে শুনলো সবটা। এগিয়ে এসে বলল – আমার মারিয়াম বিচার পাবে?
রায়হান মাথা নিচু করে বলল – মা তা লের সাথে কিসের কথা তোর? তুই বরং এক কাপ চা খাওয়া।
আয়েশা রেগে বলল – মিথ্যে বলি নাকি? বোতল খেয়ে বুঁদ হয়ে থাকেন না? ইস, উনি সাধু।
তানভীর খেয়াল করল রায়হানের চোখ লাল হয়ে আসছে কিন্তু আয়েশা থামার নাম নিচ্ছে না।
আয়েশা আবার বলল – সিগারেট, মদ কোনটা না খান? আমারতো এটা ভাবতে ঘৃণা লাগে। আচার- আচরণ, সৌজন্য কিছু নেই। মিনিমাম ম্যানার জানেনা, আর আমি সেটা বললে দোষ। জানিস ভাইয়া, সেদিন আমাকে বলে আমি নাকি রাস্তার মেয়ে। আমি বুড়ি হয়ে যাচ্ছি, আমাকে নাকি কেউ বিয়ে করে ঘরে আপদ তুলবে না। আরো কত বাজে কথা বলে প্রতিদিন। অশ্লীল, নোংরা লোক।
তানভীর তাকিয়ে আছে আয়েশার দিকে। সম্বিৎ ফিরতেই তানভীর বলল – ভদ্রভাবে কথা বল আয়েশা।
রায়হান নির্বাক চেয়ে আছে আয়েশার দিকে। চোখের কোণে জল চিকচিক করছে। কোন কথার উত্তর না দিয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল – আমি না থাকলে তুই ভালো থাকবি তাইনা? দোয়া করিস যেন ফিরে না আসি, ফিরে আসলে তোর সাথে আমি এভাবেই কথা বলব সবসময়।
কথাটা বলে হনহন করে চলে গেল রায়হান। আয়েশা রাগে ফুঁসছে। তানভীর বুঝতে পারলো রায়হান কষ্ট পেয়েছে।
____
বন্ধ ঘরে হাত উপরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে জামশেদের। পাশে নিরুপমা বসে বসে পানি খাচ্ছে। তার মুখে ক্রোধ আর ঘৃণা। যাকে ফেরেশতা ভাবত তার এই রূপ সে কস্মিনকালেও ভাবেনি।
ছোট্ট ব্লেডটা দিয়ে জামশেদের দু হাতে বারটা টা-ন দিয়েছে নিরুপমা। তাতে বালুগুলো ঘষে কষিয়ে লাথি মেরে বলল – তোকে দগ্ধে দগ্ধে মারব। শত মেয়ের আর্তনাদে তোর মন গলেনি। আজ তোর আর্তনাদ আমাকে গলাতে পারবে না।
কাঁচের টুকরোগুলো হাতে নিয়ে ছুঁড়ে মারল নিরুপমা। একটা একটা করে সেগুলো বিঁধে গেল জামশেদের গায়ে। লোকটা চিৎকারও করতে পারছেনা, মুখ বাঁধা। মোটা দড়িতে গিট বেঁধে সেই দড়িটা দিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে পেটাচ্ছে মেয়েটা। তামান্নাকে আইনের হাতে ছেড়ে দিয়ে জামশেদকে আগে কিছু খাতির করার জন্য এখানে এনেছে সে।
চিৎকার করে নিরুপমা বলছে – তোর যদি ফাঁ”সি না হয় তাহলে তোকে আমি নিজ হাতে খু:ন করব। ধূলি জমে যাওয়া সব ফাইল আবার পরিষ্কার করেছি, সেসব মেয়েদের আর্তনাদের জবাব দেব বলে। ধূলি জমা ফাইলগুলো আজ আবার কোর্টে তোলা হয়েছে। সব প্রমাণ জোগাড় করেছি। তোর মুক্তি অসম্ভব।
পাশে থাকা তুষারকে নিরুপমা স্পষ্ট স্বরে বলল – তার সমস্ত কুকর্মের প্রমাণ আমি পেশ করে দিয়েছি। তাকে চিকিৎসা করে তারপর পুলিশের হাতে তুলে দিন। যাতে তারা স্বচ্ছন্দে পেটাতে পারে।
নিরুপমার মনে পড়ে রুবির মুখখানা। শেষ নিশ্বাস নেয়ার আগে মেয়েটা আর্জি করেছিল তার সাথে বিভৎস অন্যায়ের শাস্তি চেয়েছে সে। ইমতিয়াজও বোনের খুনির বিচার চেয়েছে, সমস্ত কাজ এগিয়ে দিয়েছে তারা। নিরুপমা তার যবনিকাপাত করেছে।
ইমতিয়াজের কানেও পৌঁছে গেছে জামশেদের নিরুদ্দেশ হওয়ার কথা। তাহলে এবার সে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবে। নিজের স্ত্রী সন্তানকে বুকে আগলে নিতে পারবে।
রায়হানকে কল করল নিরুপমা। ওপাশ থেকে কলটা রিসিভ করে রায়হান বলল – কাজ কি সমাপ্ত হলো? আপনার বর এবার উড়ে চলে যাবে। মায়ার রূপে ফিরুন।
নিরুপমা হেসে বলল – স্যার, ঠিক আছেন আপনি?
এই মেয়েটার কাছে রায়হান কখনো কিছু আড়াল করতে পারেনা। বড় বোনের মত শাসন করে মেয়েটা। বয়সে অনেকটাই ছোট।
রায়হান গম্ভীর স্বরে বলল – আপনার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার জন্য আপনাকে পুরষ্কৃত করা হবে। আবার নতুন কোন কেসে আপনাকে স্মরণ করা হবে সবার আগে। নিজ আলয়ে ফিরে যান নিরুপমা।
চলবে……..