কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে #পর্ব_২ ও ৩

0
331

#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_২ ও ৩
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা

বিকালে বিশুদ্ধ বাতাস গায়ে লাগানোর আশা নিয়ে ছাদে উঠতেই শুনতে পাই তুরাব কাউকে কলে বলছে,

“শোনো তিন্নি তুমি হেরে গিয়েছ। তুমি নাকি কখনো হারতে শেখোনি? আজ দেখ তুমি আমার কাছে হেরে গেলে। তোর ফুপাতো বোনকে ব্যবহার করে তোমাকে হারিয়ে দিলাম আমি। কীভাবে জানো? তুমি আমাকে স্পর্শ করার জন্য অপেক্ষা করেছ। কিন্তু আমায় ছুঁতে পারোনি। আর তোমার বোন কোনো অপেক্ষা ছাড়ায় আমাকে কাছে পেয়েছে। কতটা কাছে পেয়েছে জানো? স্বামী-স্ত্রী যতটা কাছে আসতে পারে ঠিক ততটাই কাছে এসেছি আমরা দু’জন। আজ কোথায় গেল তোমার জেতার অহংকার? ফয়সাল নিশ্চয়ই আমার মতো সবদিক দিয়ে সেরা নয়। তুমি অপরূপ সুন্দর হয়েও আমার মতো সেরা একজনকে পেলে না। আর তোমার বোন তোমার মতো আহামরি সুন্দর না হয়েও আমাকে পেয়ে গেল। তবে কী জানো তিন্নি? তোমার থেকে কুয়াশা অনেক ভালো। ওর সাথে এতদিন ভালোবাসার নাটক করলেও এটুকু বুঝেছি যে তুমি ওর মতো সবদিক দিয়ে সুন্দর নও। অন্তত ওর মন তোমার থেকে অনেক সুন্দর। তাহলে আমার প্রাক্তন প্রেমিকা তার প্রাক্তন প্রেমিক এবং ফুপাতো বোনের কাছে হেরে গেল। শেষ হাসি আমিই হাসলাম হাহাহাহাহ!”

আরো অনেক কথা হয় ওদের মধ্যে। আপু ওকে কি বলেছে সেটা আমি জানি না। কিন্তু আমি তুরাবের প্রতিটা কথা শুনে চমকে গিয়েছি। ওকে মন থেকে বিয়ে না করলেও প্রায় আট মাস একসাথে থাকার পর আমার মনের কোণে কিছুটা হলেও সুপ্ত অনুভূতি তৈরি হয়েছে ওর জন্য। ভেবেছিলাম আমি ওকে একটু হলেও পাল্টাতে পেরেছি। আফসোস! সে একটুও পাল্টায়নি। কিন্তু একটা কথা মানতেই হবে। তুরাব অভিনয়ের দিক থেকে অসাধারণ একজন। অভিনয়কে নিজের কর্মক্ষেত্র বানাতে পারলে অভিনেতা হিসেবে নিজের যোগ্যতা ভালোভাবেই প্রমাণ করতে পারবে সে।

কুয়াশার কথা শুনে মলি কিংবা মিসেস নাহার কেউই বুঝে উঠতে পারে না যে কিভাবে কুয়াশাকে স্বান্তনা দেবে। মলি কুয়াশার পাশে বসে ওর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,

“কলি কষ্ট পাবি না একদম। তুই না মলির কলি। তোকে তো ভেঙে পড়া মানায় না দোস্ত।”

কুয়াশার চোখ বেয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ে। কয়েকবার লম্বা শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করে সে। অতঃপর হেসে বলে,

“আমি কষ্ট পাব না। তবে এত বড়ো ধাক্কা মেনে নিতে সময় তো লাগবে। কিছুটা সময় দরকার আমার। চিন্তার কিছু নেই। আমি নিজেকে ঠিক সামলে নিব। আমি একটু ঘরে যাচ্ছি।”

কথাটা বলে কুয়াশা নিজের ঘরে চলে যায়। এখন রাত প্রায় নয়টা। কুয়াশার বাবা আর ভাইয়ের বাড়িতে আসার সময় হয়ে গিয়েছে। মিসেস নাহার মলিকে আজ রাতে কুয়াশার সাথে থাকার জন্য অনুরোধ করে রান্নাঘরে চলে যায় খাবার তৈরি করার জন্য। মেয়ের এমন অবস্থায় তার কোনোকিছুই ভালো লাগছে না। একমাত্র মেয়ের সামান্য কষ্ট হলেও তার বুকের ভেতর ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। সেখানে এত বড়ো সত্যি মেনে নেওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপারই বটে!

কুয়াশা বিছানায় শুয়ে আছে। মলি কুয়াশার মা থা র পাশে বসে আলতো হাতে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। এমন সময় কুয়াশার ফোন বেজে ওঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে স্ক্রিনে নাম ভেসে উঠেছে,

“তিন্নিপু”

কুয়াশা ফোন হাতে নিয়ে উঠে বসে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তিন্নি চিৎকার করে বলে,

“লজ্জা করল না তোর এসব করতে? নিজের আপুর সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকতা কীভাবে করলি তুই?”

কুয়াশা কিছু বুঝতে না পেরে পাল্টা প্রশ্ন করে,

“কী বলছ কী এসব তুমি?”

“একদম না বোঝার ভান করবি না কুয়াশা। বিয়ের দিনই তোকে আমি বলেছিলাম তুরাবের কাছে না যেতে। অথচ তোরা এতটা কাছাকাছি চলে গেলি যে,,,”

“থাক আপু তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না। বুঝেছি আমি তুমি আসলে কি বলতে চাও। কিন্তু তোমার কথা কেন রাখব আমি? নিজে তো ঠিকই প্রাক্তনকে ভুলে প্রাক্তনের বন্ধুর সাথে সংসার করছ। শুনলাম তুমি নাকি আবার মা হতে যাচ্ছ। এতকিছুর পরেও প্রাক্তনের দিকে চোখ দিতে লজ্জা করে না তোমার? তাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমাকে ব্যবহার করলে তুমি। কেন বলো তো? আমি তোমার আপন বোন নই বলে এত বড়ো চক্রান্ত করলে? আরে তোমার যদি নিজের প্রাক্তনের উপর এত রাগ তাহলে আমাকে আগেই সব বলে দিতে পারতে। বিয়ের আগে এসব বললে আমি তুরাবকে বিয়েই করতাম না।”

“এজন্যই তো বলিনি। তোর তো সবার সামনে ভালো সাজতে হবে। একদম নিষ্পাপ মেয়ে সেজে ঘুরে বেরাস। আমি যদি আগেই সব বলে দিতাম তাহলে তুই তুরাবকে বিয়ে করতি না। আর আমার পরিকল্পনা ভেস্তে যেত।”

“বাহ আপু বাহ! কতটা স্বার্থপর তুমি এটা ভাবতেই লজ্জা করছে আমার। আর কী বললে? আমি নিষ্পাপ হয়ে ঘুরে বেড়াই? সত্যি বলতে আমার নিষ্পাপ সাজতে হয় না। আমি এমনিতেই কারোর ক্ষতি চাই না। কিংবা নিজের চরিত্রকে নিলামে তুলি না তোমার মতো। তাই আমি বরাবরই এমন। নাটক করে ভালো সাজার প্রয়োজন হয় না আমার।”

“মুখ সামলে কথা বল কুয়াশা। তোর মতো বোনের প্রাক্তনের সাথে ঘনিষ্ঠ হইনি আমি।”

“বিয়ে করা বরের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েছি আপু। তোমার মতো একসাথে দুইজনের সাথে সম্পর্ক চালাইনি আমি। আগে নিজেকে দেখ। তারপর আমাকে এসব বলতে আসবে। যার নিজের চরিত্র ঠিক নেই সে আমাকে এসব বলার অধিকার রাখে না।”

“কুয়াশা!”

“চিৎকার করে লাভ নেই। সত্যি মেনে নিতে কবে শিখবে? তোমার জন্য আমার জীবনে অশান্তি নেমে এসেছে। তোমার কথা শুনে তুরাবকে বিয়ে না করলে আজ আমি খুব সুখে থাকতে পারতাম। আমার সাথে যা করেছ তারপর তোমার সাথে কথা বলার ইচ্ছা বা রুচি কোনোটাই আমার নেই। তুমি আমার সুখ সহ্য করতে না পারলেও আমি বরাবরই চাই, ভালো থাকো তুমি। অনেক সুখী হও নিজের বিবাহিত জীবনে। আর কখনো আমাদের কথা না হলেই ভালো হয়।”

কথাগুলো বলে ফোন রেখে দিয়ে কুয়াশা মলির কাঁধে মা থা রাখে। খারাপ সময়গুলোতে মায়ের পাশাপাশি এই মেয়েটা ছায়ার মতো তার সাথে থাকে।

“মলি জানিস, আমি তিন্নি আপুকে নিজের বোনের চোখে দেখতাম। কখনো ওর খারাপ চাইনি। ওর যেকোনো বিপদে নিজের সমস্যা হলেও ওর পাশে থেকেছি। আর সেই বোন আমার সাথে কী করল? তুরাব একা আমাকে কষ্ট দিলে মেনে নিতাম। এত বেশি কষ্ট হতো না যতটা এখন হচ্ছে। আপন মানুষের থেকে পাওয়া আঘাত হয়তো এমনই হয়। যে আঘাত একজনকে ভেঙে দেয়।”

মলি কিছু বলে না। এই অবস্থায় প্রিয় বান্ধবীকে শান্ত করার উপায় তার জানা নেই। তবুও কিছু একটা ভেবে কুয়াশাকে জিজ্ঞাসা করে,

“আচ্ছা তুই তুরাব ভাইয়ার সাথে সম্পর্ক রাখবি নাকি রাখবি না?”

কুয়াশা শান্ত কণ্ঠে জবাব দেয়,

“এত জঘন্য একজনের সাথে এক ছাদের নিচে থাকা কী সম্ভব?”

“এজন্যই প্রশ্নটা করলাম। তুই এখন কী করতে চাচ্ছিস? তুরাব ভাইয়াকে ডিভোর্স দিবি?”

মলির কথায় কুয়াশা হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়ে। যেন মলি খুব মজার কিছু বলেছে।

“কী হলো? তুই হাসছিস কেন? এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও তোর হাসি পাচ্ছে?”

“হাসির মতো কথা বললে হাসব না? আমি কোন দুঃখে ওকে ডিভোর্স দিতে যাব? আমি তো তুরাবকে ডিভোর্স দিব না।”

“তুই ওর সাথে থাকবি না। তাহলে এই সম্পর্ক রেখে কী করবি?”

“ওকে ডিভোর্স দিয়ে মুক্ত করে দিব? আমি গুমরে গুমরে শেষ হয়ে যাব আর সে মুক্ত পাখির ন্যায় আকাশে উড়বে? আমি এটা কখনোই হতে দিব না মলি, কখনোই না!”

চলবে??

বিঃদ্রঃ গল্প সম্পর্কে সবার থেকে গঠনমূলক একটা করে মন্তব্য আশা করছি। গল্পটা সবার কাছে কেমন লাগছে এটা বললে আমি গল্প লিখতে আরো বেশি আগ্রহী হব।
ধন্যবাদ। 💙

#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_৩
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা

“কুয়াশা তুমি কোথায়? রাত বাজে এগারোটা। আর তুমি বাসায় নেই। তোমাকে কম করে হলেও ত্রিশ বার কল দিয়েছি। কল পর্যন্ত রিসিভ করলে না। আমাকে না বলে কোথায় গিয়েছ তুমি?”

“অভিনয়ের আর কোনো প্রয়োজন নেই মিস্টার তুরাব তৌহিদ। আমি সবকিছু জেনে গিয়েছি।”

“মানে? কীসের অভিনয়? আর কী জেনে গিয়েছ তুমি?”

“আহা এত অভিনয় করে ক্লান্ত হয়ে যান না আপনি? আর কত অভিনয় করবেন? আমি কী খেলনা বস্তু? অনেক তো খেললেন আমার জীবন নিয়ে। এইবার এসব বন্ধ করুন।”

“কী বলছ তুমি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

প্রায় ঘন্টা খানেক বিছানায় গড়াগড়ি করার পর চোখটা একটু লেগে এসেছিল কুয়াশার। এমন সময় বিছানা কেঁপে উঠলে সে খেয়াল করে তার ফোনে কল এসেছে। ফোন হাতে নিতেই মেজাজ বিগড়ে যায় কুয়াশার। একে তো মেজাজ আগে থেকেই বিগড়ে আছে। তার উপর তুরাবের এখনো কিছু না বোঝার ভান করা ক্ষেপিয়ে তুলছে কুয়াশাকে।

“এই কী সমস্যা আপনার? আমার সামনে নাটক কম করবেন বুঝতে পেরেছেন? আপনি যে তিন্নি আপুর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমাকে ব্যবহার করেছেন সেটা আমি জেনে গিয়েছি।”

“তোমাকে এসব তিন্নি বলেছে? আরে ওই মেয়ে আমাদের ভালো চায় না। তাই এসব বলেছে তোমাকে। সব মিথ্যা কথা। আমাকে একটু বিশ্বাস কর কুয়াশা।”

“বিশ্বাস? সেটাও আপনাকে? আমি বিকেলে ছাদে উঠে নিজের কানে আপনার সব কথা শুনেছি। তাই এখন অবুঝ শিশু হওয়ার ভান করবেন না। আপনার ওই কুবুদ্ধি দিয়ে ভরা মস্তিস্ক এখন যত ইচ্ছা বানোয়াট গল্প তৈরি করুক। কিন্তু আমাকে সেইসব গল্প বিশ্বাস করাতে পারবেন না আপনি।”

“কুয়াশা আমার কথা তো শুনবে তুমি!”

“কী শুনব হ্যা? কী শুনব?”

“আরে ওসব তিন্নিকে কষ্ট দেওয়ার জন্য বলেছি আমি। মন থেকে একটাও কথা বলিনি।”

“ভাই রে ভাই! আপনি কী দিয়ে তৈরি বলুন তো। লজ্জা বলতে কিছু নেই আপনার মধ্যে? মিথ্যা বলতে বলতে মিথ্যার পাহাড় বানিয়ে ফেলেছেন। এবার থামুন দয়া করে। নয়তো এর জন্য উপরওয়ালাও কখনো আপনাকে মাফ করবে না।”

“তুমি আমাকে ভুল বুঝে দূরে সরে যাচ্ছ। এমন কর না কুয়াশা।”

“আহারে বেচারা! কষ্ট হচ্ছে খুব? নিজের পরিকল্পনা সফলের জন্য এত দূর পর্যন্ত এসে শেষমেশ হেরে গেলেন। আমি আপনার ব্যাথাটা বুঝতে পারছি। আপনার জন্য সমবেদনা জানিয়ে কল রাখছি। ভবিষ্যতে আমাকে কল দিয়ে এমন নাটক আর করবেন না আশা করি।”

কথাগুলো বলে ফোন রেখে দেয় কুয়াশা। অতঃপর বিরক্ত হয়ে নিজেকে নিজেই বলে,

“এমন অসভ্য মানুষ আমি জীবনে দ্বিতীয় আর কাউকে দেখিনি। তুই আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করলি। রীতিমতো ঠকিয়ে বিয়ে করলি আমাকে। ভুলভাল বুঝিয়ে আট মাস তোর সংসার করালি। আজকে আবার তোর সব সত্যি জেনে গেলাম। এরপরেও তোকে কোনোকিছু বলিনি। এজন্য তোর আমার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। সেটা না করে তুই এখনো অনায়াসে মিথ্যা বলেই যাচ্ছিস। নির্লজ্জ ছেলে কোথাকার!”

“কিরে কী বিরবির করছিস তুই?”

মলি খাবারের থালা হাতে কুয়াশার সামনে এসে জিজ্ঞেস করল কথাটা। কুয়াশা প্রশ্নের জবাবে ছোট করে উত্তর দিল,

“ওই বিশ্বাসঘাতক আমাকে কল দিয়ে এখনো মিথ্যা বলেই গেল। মানে তুই শুধু একবার ভাব, একটা ছেলে ঠিক কি রকম নির্লজ্জ হলে এমন করতে পারে!”

“আচ্ছা হয়েছে এখন আর এত রাগ করতে হবে না। আগে খেয়ে নে তুই। আমি আজ তোর সাথেই থাকব। সারারাত ধরে তোর কথা শুনব ঠিক আছে? আপাতত লক্ষ্যি মেয়ের মতো খেয়ে নে।”

“আরে এত অনুরোধ করছিস কেন? তোর কি মনে হয় যে আমি শোকে পাথর হয়ে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিব? ছোট থেকে দেখছিস আমাকে। কখনো অন্যের উপর রাগ করে নিজেকে কষ্ট দিয়েছি আমি?”

“একবার দিয়েছিলি।”

“ওটা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি তাই আর কি!”

“আচ্ছা বাদ দে। আজকে আন্টি আমাদের জন্য খিচুরি আর কালা ভুনা রান্না করেছে। তোর পছন্দের খাবার। একসাথে খাই চল।”

“তুই বস এখানে। আমি হাত ধুয়ে আসি।”

কুয়াশা হাত ধুয়ে এসে মলির পাশে বসে খাওয়া শুরু করল। দু’জন সম্পূর্ণ খাবার শেষ করে এঁটো থালা রান্নাঘরে রেখে হাত ধুয়ে পানি খেয়ে ঘরে চলে এলো। কুয়াশা বিরক্ত হয়ে মলিকে বলল,

“আমার না খুব বিরক্ত লাগছে। আজ বিকেলের ঘটনাগুলো মনে পড়লেই শরীর জ্বলে যাচ্ছে একদম। মানুষ এত নিখুঁত অভিনয় কী করে করে?”

“মানুষের চেয়ে নিখুঁত অভিনয় বিশ্বে আর কোনো প্রাণী করতে পারে নাকি? একজন মানুষকে বিশ্বাস করতে এখন দশবার ভাবতে হবে বুঝলি।”

“কমই বললি তুই। অন্তত পঞ্চাশ বার ভাবা উচিত। আমি অবাক হচ্ছি এটা ভেবে যে তুরাব যখন আমার কাছে এসে আমাকে স্পর্শ করত তখন এত সুন্দর করে অভিনয় করত যেন মনে হতো ওও সত্যি সত্যি ভালোবেসে আমার কাছে এসেছে। এমন অনুভূতিগুলো কিভাবে মিথ্যা হয়!”

“এই তুই কী ওকে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছিস?”

“মিথ্যা বলে লাভ নেই। আট মাস একসাথে থাকার পর একটু হলেও ভালোবেসে ফেলেছি। ব্যাপার না এটা। আমি বিশ্বাসঘাতককে মনে জায়গা দিই না। এর প্রমাণ অনেক আগেই পেয়েছিস তুই। কয়েকদিন কষ্ট হবে ঠিকই। কারণ আমিও তো মানুষ। সব রকম অনুভূতি আমার মধ্যেও বিদ্যমান। কিন্তু হ্যা, আমি অতি আবেগি নই। পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলতে পারি। সুতরাং, মিস্টার তুরাব তৌহিদের কপালে শনি নাচছে এটুকু গ্যারান্টি দিতেই পারি।”

কুয়াশার এমন কথা শুনে মলি কিছুটা অবাক হয়। এই মেয়েটা সব পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে এটা সত্যি। কিন্তু এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও স্বাভাবিক থাকা অস্বাভাবিকই বটে!

“আচ্ছা কলি তুই কী করতে চাচ্ছিস তুরাব ভাইয়ার সাথে?”

“এক বছর আগের কথা মনে কর। তখন যা করেছিলাম এখনো সেটাই করব৷ আমি বদলাইনি মলি। ঠিক আগের মতোই আছি। আগেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতাম। এই মুহূর্তেও সেটাই করব।”

“যা করবি একটু ভেবে করিস। পরে যেন নিজেকেই কাঁদতে না হয়।”

“আচ্ছা তুই একটু মা’কে ডেকে নিয়ে আয় তো।”

“কেন?”

“মা আসুক। তারপরেই বলছি।”

“আচ্ছা।”

মলি মিসেস নাহারকে ডেকে আনার পর কুয়াশা বিছানায় বসে বলল,

“আমি ভাবছি কাজ করা শুরু করব।”

“মানে?”

“মানে আমি তো ‘ল’ নিয়ে আমার পড়াশোনা শেষ করেছি। কিন্তু এরপরই আমার বিয়ে হয়ে যায় গতবছর। এরপর আর এগোনো হয়নি। এখন আমি নতুন করে সব শুরু করতে চাই।”

“তুই এসব করে ভালো থাকলে অবশ্যই করবি।”

মলির কথার প্রতিত্তোরে কুয়াশা বলে,

“কিন্তু আমি এই শহরে থেকে কিছু করতে চাই না। আমি অন্য কোথাও যেতে চাই।”

“কোথায় যাবে?”

“মা এখনো এসব নিয়ে ভাবিনি। আগে তোমার অনুমতি চাই আমি।”

“অনুমতি দিব আমি। তুমি যেটাতে ভালো থাকবে তাতেই খুশি আমি। কিন্তু তুরাবের কী হবে? তুমি তো ওর সাথে আর সংসার করবে না। তাহলে কী ডিভোর্স দিবে?”

“আমি ওকে ডিভোর্স দিব না। ওর জীবনে থেকেই ওকে শাস্তি দিতে চাই আমি।”

“তোমার জীবন কেবল শুরু। এসব করে নিজের জীবন নষ্ট কর না। মা হয়ে এটুকু তো আমি চাইতেই পারি।”

“আমার জীবন এত সস্তা নাকি যে কিছু মুখোশধারীর জন্য নষ্ট হয়ে যাবে। আমাকে নিয়ে চিন্তা কর না তোমরা। আমি ঠিকই ভালো থাকব। আর যারা আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাদের ভালো থাকা নষ্ট করার জন্য আমি প্রস্তুত।”

“যা করবে আমাকে জানিয়ে করো কেমন? আমার একমাত্র মেয়ে তুমি। রাগের বশে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ো না।”

“মা তুমি আমার উপর ভরসা রাখতে পারো।”

“বাকি কথা কাল সকালে হবে। এখন তোমরা দু’জন ঘুমাও। আমি আসি।”

“শুভ রাত্রি মা।”

“শুভ রাত্রি।”

মেয়ের মা থা য় হাত বুলিয়ে দিয়ে মিসেস নাহার চলে যান নিজের ঘরে। কুয়াশা ঘরের দরজা বন্ধ করে এসে মলিকে নিয়ে শুয়ে পড়ে। ঘুম আসছে না তার। সে আপনমনে কিছু ভেবে যাচ্ছে।

চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here