#নিভৃত_কুহক (পর্ব ২)
অক্টোবর, ২০০২
রেহনুমা পুরনো একটা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলটা ঠিক করে নিচ্ছিল। আয়নাটা কেমন হলদেটে হয়ে গেছে, মাঝে মাঝে ঢেউ খেলানো। চেহারাটা কেমন যেন আসে। যদিও আয়না মসৃণ হলেও ওর মুখচ্ছবি যা তাই আসত। হালকা করে একটু পাউডার মাখে, তাতে করে কালো মুখে পাউডারটা কেমন বিশ্রী রকম ভেসে ওঠে। রেহনুমা হতাশ চোখে একবার তাকায়, আসলেই ও এত অসুন্দর কেন? গায়ের রঙটা কালো, তা হোক, কিন্তু চোখ, নাক, মুখ কিছুই সুন্দর না।
পড়াশোনাতে একটু ভালো হতো, তাও না। একটা সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স। চাকরির চেষ্টা করেও ভালো কিছু হয়নি। শেষ পর্যন্ত শাহবাগে ছোট্ট একটা জামা কাপড় সেলাইয়ের দোকান দিয়েছে। এই একটা গুণ ওর আছে, ছোটবেলা থেকেই। দোকান থেকে যা আয় হয় মন্দ না। তাতে সংসারে খুব উপকার হয়।
বাবার ছোটোখাটো একটা চাকরি, বলার মতো কিছু না। গুলবাগের এই দু’রুমের ছোট্ট একটা ভাড়া বাসায় কোনোমতে থাকা।
বিয়ের বাজারে কোনোদিক দিয়েই বলার মতো কিছু নেই ওর। এ পর্যন্ত কম করে হলেও ছয়জন দেখে গেছে, ফলাফল শুন্য। আজ সাত নম্বর। রেহনুমা মনে মনে হাসে, লাকি সেভেন। মিতা আপার জোরাজুরিতেই আজকের এই সাক্ষাৎকার। প্রতিবারের মতো এবারও একটা রেস্টুরেন্টেই বসার ব্যবস্থা। আধুনিক এই ব্যবস্থাটা খুব ভালো। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীর কাছে কৈফিয়ত দিতে হয় না। তারপরও কি করে যেন খবর পৌঁছে যায়, তারা ফিসফাস করে। ইদানিং এটা বেড়েছে। আম্মাও ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেন।
মনোয়ারা একটু রাগ করেই সেদিন বলছিলেন, ‘কত মানুষের কত জায়গায় প্রেম হয়, তোর কি এমন একটাও হয় না? তোর ছোট বোনের বিয়ে প্রায় ঠিক। ওর হবু শ্বশুর বাড়ি থেকে তোকে নিয়ে ফিসফাস। দু’ একজন তো বলেই বসেছে, বড় বোন রেখে ছোট বোনের বিয়ে। আমার এত ঝামেলা ভালো লাগেনা।’
সেদিন ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল ওর। মন খারাপ হলেই ও সোজা কার্জন হলের ভেতর শহীদুল্লাহ হলের পাশে বড় পুকুরটার সামনে বসে থাকে। সেদিনও গিয়েছিল। পুকুরপাড়ে বসার ছোট ছোট সিমেন্টের ঢালাই দেওয়া বেঞ্চি আছে। পাশেই নারিকেল গাছগুলো ছায়া দেয়। দুপুরবেলা অনেকটা সময় বসেছিল ও। জলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় জলের ভেতর ডুব দেয় মনটা। ডুবেই থাকে হিমশীতল জলে, যেখানে আর কারও তির্যক শব্দ পৌঁছে না।
রেহনুমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাত ঘড়ির দিকে তাকায়। চারটা বেজে গেছে, একদম সময় নেই হাতে। মিতা আপা বারবার বলে দিয়েছেন বিকেল পাঁচটার মধ্যেই যেতে। রেহনুমা শেষবারের মতো একবার আয়নাতে মুখটা দেখে নেয়, তারপর মাকে বলে বেরিয়ে পড়ে। মা তাকিয়ে থাকেন, কিছু বলেন না। ইদানিং কিছু জানতেও চান না, ও কোথায় যায়। কেমন একটা উদাসীনতা ওর ব্যাপারে। অথচ ছোট বোন সুমির ক্ষেত্রে উলটো। সবসময় চোখে চোখেই রাখেন। সুমির গায়ের রঙটা সুন্দর, বাবার মতো হয়েছে। তাই তো ওর অনার্স শেষ হবার আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। একটু যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচছে বাবা মা। বাকি রইল রেহনুমা, বোঝার মতো চেপে বসে আছে!
এইসব এলোমেলো ভাবতে ভাবতে রেহনুমা বেইলি রোডের সুইস বেকারির সামনে এসে দাঁড়ায়। মিতা আপা এখানেই অপেক্ষা করতে বলেছে ওকে। মানুষটা ভীষণ ভালো। বহুদিন যাবৎ ওর কাছ থেকেই জামা কাপড় বানিয়ে নেন। আপার চেষ্টাতেই শাহবাগে খুব অল্পতেই দোকানটা পেয়ে গিয়েছিল। ইউনিভার্সিটির অনেক মেয়েরাই এখন ওর কাছ থেকে জামা বানায়। সেই দিক থেকে মিতা আপার কাছে ওর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। মানুষটা ওকে এত স্নেহ করেন। ওর বিয়ে নিয়ে খুব ভাবেন। তাই আজকে আবার নতুন করে এই পাত্রের খোঁজ নিয়ে এসেছেন। রেহনুমা মনে মনে হাসে, আজকের পাত্র নাম্বার সাত, লাকি সেভেন। মিতা আপাকে দুষ্টুমি করে কথাটা বলেছিল।
মিতা আপা সিরিয়াসলি বলেছিল, ‘দেখিস, এই পাত্রটা সত্যিই তোর জন্য লাকি হবে।’
রেহনুমা হেসেছিল এই পৃথিবীতে ওর জন্য লাকি বলে কিছু নেই, সবই আনলাকি।
এই যখন ভাবছে তখন মিতা আপাকে আসতে দেখা যায়। মিতা আপা তো মনে হয় আজ একটু সেজেগুজে এসেছেন। ওর বানানো কমলা রঙের নতুন জামাটাই পরে এসেছেন। আপা খুব বেশি হলে ওর চেয়ে বছর পাঁচেকের বড় হবে। কিন্তু দেখে আরও বেশি বড় মনে হয়। চেহারায় কেমন একটা মা মা ভাব চলে এসেছে।
কাছে আসতেই মিতা আপা হেসে বলে, ‘বাহ, তুইতো ঠিক সময়মতো চলে এসেছিস। চল, সামনের ওই রেস্টুরেন্টে আরিফ আসবে।’
ছেলের নাম আরিফ, এটা অবশ্য আগেই জানে। একটা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করে। ওর মতোই বিয়ের মার্কেটে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া চাকরির একটা। রেহনুমা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে, ওর জন্য তো আর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা বিসিএস ছেলে আসবে না। দেখা যাবে এক মাথা টাক একটা ছেলে এসে হাজির।
রেহনুমা মিতা আপার সাথে সামনে এগিয়ে যায়। একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে মিতা আপা থেমে বলেন, ‘এখানেই আসবে। চল ভেতরে যেয়ে বসি।’
রেহনুমা নড়ে না। মিতা আপা একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়, ‘কী রে, আয়।’
রেহনুমা মাথা নাড়ে, তারপর বলে, ‘আপা, এখানে একটু সমস্যা আছে। ওই ছেলেকে পাশের রেস্টুরেন্টে আসতে বলো না।’
মিতা আপা ভ্রু কুঁচকে তাকায়, তারপর কাছে এসে বলে, ‘এখানে কী সমস্যা?’
রেহনুমা অস্বস্তির সাথে বলে, ‘এই রেস্টুরেন্টে এর আগেও দু’বার এসেছিলাম। মানে পাত্রপক্ষ আমাকে দেখতে এসেছিল। রেস্টুরেন্টের ওয়েটারও আমাকে চিনে গেছে। ওদের কৌতুহলী চাহনি ভালো লাগে না।’
শেষ কথাটা রেহনুমা মাথা নিচু করেই বলে। মিতার মনটা হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে যায়। ওর দ্বিধাটায় যে কত কষ্ট লুকিয়ে আছে! মেয়েটা এত ভালো, কিন্তু গায়ের রঙটা কালো বলে ছেলেরা শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে যায়।
মিতা মাথা নেড়ে বলে, ‘আচ্ছা, অসুবিধে নেই। আমি আরিফকে ফোন করে দিচ্ছি।’
মিতা আপা ব্যাগ থেকে সিলভার রঙের একটা মোবাইল ফোন বের করেন। জিনিসটা নতুন এসেছে দেশে। রেহনুমা কৌতুহলী চোখে চেয়ে দেখে, কী সুন্দর সেটটা! মাথায় একটা ছোট্ট আঙুলের মতো চোখা মাথা। ইশ, একটা ফোন যদি থাকত! মিতা আপা খুব তাগাদা দেয় একটা ফোন নেবার জন্য, তাতে নাকি অর্ডার আরও বাড়বে। কিন্তু এত দাম মোবাইলের, আবার কথা বলার খরচও অনেক। সুমির বিয়ের জন্য অনেক টাকা লাগবে, মা ইতোমধ্যেই ওর কাছে টাকা চেয়ে রেখেছে। সুমির বিয়েটা হয়ে যাক, তারপর মিতা আপার মতো একটা ফোন ও কিনবে।
মিতা আরিফকে ফোন করতে যেয়েও করে না। একটা মেসেজ লিখে নতুন রেস্টুরেন্টের নাম জানিয়ে দেয়। ফোন করলে অনেক টাকা কেটে নেয় মিনিটে।
নিরিবিলি দেখে ওরা রেস্টুরেন্টের এক কোণে বসে। এক বাটি স্যুপ আর অন্থনের অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। আরিফ এখনও এসে পৌঁছায়নি। মিতা আপা বলল মেসেজ দিয়েছে, চলে আসবে।
মিতা আপা এক গ্লাস পানি খেতে খেতে বলে, ‘ছেলেটা খুব ভালো। আমার অফিসে প্রায়ই আসে। কেউ ওর কাছ থেকে ইনস্যুরেন্স করে না। সহজ সরল ছেলে, এই লাইনের জন্য ফিট না। দেখে খুব মায়া হয়েছিল। তাই একদিন ডেকে একটা ইন্স্যুরেন্স করলাম। তারপর থেকেই আমাকে খুব মানে। প্রতি মাসে ও নিজে এসে কিস্তির টাকা নিয়ে যায়। আবার টাকা জমার রশিদও দিয়ে যায়। খুবই ভালো ছেলে।’
রেহনুমা মিতা আপার কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিল। হঠাৎ করেই মনে হয় এই আরিফ ছেলেটা কৃতজ্ঞতাবশত ওকে দেখতে আসছে। নেহায়েত আপার ইন্স্যুরেন্স করা আছে, তাই আপার কথা ফেলতে পারেনি। কেন জানি নিজেকে হঠাৎই খুব ছোট মনে হয়। শুধু ওর জন্য কেউ আগ্রহ নিয়ে আসবে না কোনোদিন, এমন কেউ নেই এই পৃথিবীতে।
এমন সময় কেউ একজন আসে। মিতা আপা উচ্ছ্বসিত গলায় বলে, ‘আরিফ, এসেছ। বাহ, এই এখানে বসো।’
রেহনুমা একবার আড়চোখে দেখে, নাহ, মাথায় চুল আছে। দেখতে তো মন্দ না। একবার ওর দিকেও তাকায়, রেহনুমা চোখ নামিয়ে নেয়।
আরিফ ওর মুখোমুখি সামনের চেয়ারটায় বসতেই মিতা আপা হেসে পরিচয় করিয়ে দেয়, ‘আরিফ, এই হলো রেহনুমা। এত লক্ষ্মী একটা মেয়ে, এই বয়সেই নিজের একটা চালু সেলাইয়ের দোকান আছে।’
আরিফ ওর দিকে তাকিয়ে হাসে, তারপর নিজে থেকেই বলে, ‘আমি আরিফ।’
রেহনুমার মনটা ভালো হয়ে যায়, ছেলেটার হাসি সুন্দর। জড়তা কাটিয়ে ও বলে, ‘আমি রেহনুমা।’
মিতা আপা ওর দিকে চোখ ইশারা করে বলে, ‘তোমরা একটু বসো। আমার একটু কেনাকাটা আছে। এক ঘন্টার মধ্যে চলে আসব।’
আরিফ বোকার মতো উঠে দাঁড়ায়, বলে, ‘আপা, আমি আসি? আপনি কষ্ট করে একা একা শপিং করবেন?’
মিতা আপা জোরে মাথা নেড়ে বলে, ‘আরে তোমার আসতে হবে না। তোমরা একটু গল্প করো, আমি আসছি।’
মিতা আপা আর সুযোগ দেন না, তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যান।
রেহনুমার ভীষণ রাগ হয়। ওকে দেখতে এসে মিতা আপার সাথে শপিংয়ে যেতে চাচ্ছে। এই ছেলে বোকা নাকি ইচ্ছে করেই ওকে এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে। নাকি মিতা আপা ওকে বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলেইনি?
আরিফ বসে পড়ে, বোকার মতো হেসে বলে, ‘আপা খুবই ভালো মানুষ। ওনার জন্যই আমি অনেকগুলো ইন্স্যুরেন্স করাতে পেরেছি। আচ্ছা, আপনি ইন্স্যুরেন্স করেছেন?’
রেহনুমা কটমট করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। একদম টিপিক্যাল ইন্স্যুরেন্সের মানুষদের মতো।পাত্রী দেখতে এসেও ইন্স্যুরেন্সের কথা জিজ্ঞেস করছে।
রেহনুমা বাঁকা গলায় বলে, ‘আপনার কাছে করব বলেই এতদিন ইন্স্যুরেন্স করা হয়নি। আপনার ব্যাগে কাগজপত্র থাকলে বের করুন, এখনই করে ফেলি।’
আরিফ একটু থমকায়, ঠিক বুঝতে পারে না, মেয়েটা ওর সাথে কি মজা করছে?
দ্বিধান্বিত গলায় বলে, ‘না থাক। আপনার ঠিকানাটা দিয়ে রেখেন, আমিই একদিন যাবনে আপনার ওখানে।’
রেহনুমা একটু সামনে ঝুঁকে বলে, ‘হ্যাঁ, তাই ভালো হয়। আচ্ছা, আপনি সত্যিই ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে কাজ করেন?’
আরিফ একটু থতমত খেয়ে যায়, বলে, ‘কেন বলুন তো?’
রেহনুমা ফিচেল গলায় বলে, ‘না মানে আপনার গলায় টাই দেখছি না তো তাই।’
আরিফ একটু চুলে হাত বোলায়, কৈফিয়ত দেবার ভঙ্গিতে বলে, ‘সারাদিন পরেছিলাম তো তাই এখন খুলে রেখেছি। টাই পরলে আমার দমবন্ধ লাগে। ব্যাগে ভরে রেখেছি।’
রেহনুমা বুঝদারের ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে, তারপর উপদেশ দেবার মতো করে বলে, ‘ব্যাগ থেকে বের করে পরে ফেলুন। টাইটা পরে থাকলে আপনারই লাভ। পেটের কাছের বোতামটা মনে হয় ছিঁড়ে পড়ে গেছে। ভেতরে স্যান্ডো গেঞ্জিও পরেননি মনে হয়, বিশ্রী লাগছে দেখতে।’
আরিফের চোখ বড় হয়ে যায়, দ্রুত নিচের দিকে তাকাতেই দেখে আসলেই তো, একদম পেটের কাছেই বোতামটা নাই। সকালেও তো ছিল, কী হলো? কখন যে খুলে পড়েছে বোতামটা খেয়ালই করেনি। দ্রুত ডান হাত দিয়ে বোতাম ছেঁড়া অংশটুকু ঢেকে ফেলে।
আমতা আমতা গলায় বলে, ‘কখন যে ছিঁড়ে গেছে একদম খেয়াল করিনি। আপনি না বললে বুঝতেই পারতাম না।’
রেহনুমার মায়া হয়, ছেলেটা আসলেই সহজ সরল। ও আশ্বাস দেবার ভঙ্গিতে বলে, ‘আমি সেলাইয়ের কাজ করি তো, তাই প্রথমেই জামার ছেঁড়া ফাটার দিকে নজর যায়। আপনি আমার দোকানে যেদিন ইন্স্যুরেন্সের ফরম পূরণ করতে আসবেন সেদিন শার্টটা নিয়ে এসেন। বোতাম লাগিয়ে দেবনে।’
আরিফ বোকার মতো হাসে, তারপর বলে, ‘আপনি খুব ভালো মানুষ। আসব একদিন।’
রেহনুমা একটা মলিন হাসি দেয়, তারপর বলে, ‘আমাকে একবার দেখার পর কেউ তো আর দ্বিতীয়বার ফিরে আসে না। আচ্ছা এবার বলুন আমাকে পাত্রী হিসেবে কেমন দেখলেন? পছন্দ হবার মতো?’
একজন ওয়েটার এর মাঝেই স্যুপ আর অন্থন দিয়ে যায়। রেহনুমা যত্ন করে দুটো বাটিতে স্যুপ ঢালে, তারপর বলে, ‘নিন, খেতে খেতে বলুন। আমার চেহারা কি পছন্দ হবার মতো? সত্যিটা বলবেন।’
আরিফ স্যুপে চুমুক দিতে দিতে গম্ভীরমুখে বলে, ‘বিয়ের প্রচলিত মাপকাঠিতে বললে পছন্দ হবার মতো না। অবশ্য, পাত্র হিসেবে আমিও আহামরি কিছু না।’
কথাটা সত্য, কিন্তু কেন জানি বুকের ভেতর ছুরির মতো বেঁধে কথাটা। মুখটা কালো হয়ে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে কিছু বলতে যেতেই আরিফ মুখ তুলে আবার বলে, ‘তবে, আপনার ভেতরে একটা মায়ার বসতবাড়ি আছে। কেমন নিঃসংকোচে আমার ছেঁড়া বোতামটা সেলাই করে দিতে চাইলেন। স্যুপটা অনেক যত্ন করে বেড়ে দিলেন।’
রেহনুমা একটু কেঁপে ওঠে, এমন করে কেউ কখনও ওকে বলেনি। ক্ষণিকের জন্য একটা সুখের অনুভূতি ছুঁয়ে যায়। তারপর ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে, ‘অন্থনটা খান, মচমচে আছে এখনও। ঠান্ডা হয়ে গেলে আর ভালো লাগবে না। আর ওসব মায়ার বসতবাড়ির কথা ভুলে যান, এসব কিছুই না। বাস্তবতা ভীষণ রুঢ়।’
আরিফ বলতে চায়, মায়াটাই আসল, অন্য কিছু না। কিন্তু বলা হয় না। মেয়েটা কেমন মন খারাপ করে মুখ নিচু করে স্যুপ খাচ্ছে। আরিফ একটা অন্থন মুখে দিতে দিতে ভাবে, বাস্তবতা আসলেই রুঢ়। সেটা নিজেও ও জানে। মানিব্যাগে টাকা না থাকলে তখন মায়াটা আসলেই বেকার মনে হয়। এই যে এখানে খাচ্ছে, কত বিল হবে কে জানে। মিতা আপা না আসলে ওর গ্রামে বাবা মাকে পাঠানো টাকায় টান পড়বে। আরিফ অধীর আগ্রহে মিতা আপার ফিরে আসার অপেক্ষা করতে থাকে।
(চলবে)
*মুনিয়া-সাব্বির, রেহনুমা-আরিফ এর গল্প চলবে পাশাপাশি, এক পর্ব পর পর। অন্তত আগামী কয়েকটা পর্ব।
মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সুবাস
শিমুলতলী, গাজীপুর
১৭/০৪/২০২৩