#চোরাবালি_মন (পর্ব ৩)

0
331

#চোরাবালি_মন (পর্ব ৩)

২য় পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/permalink/1472863599895329/

১.
তাহসান মাথা ঠান্ডা করে ভাবছিল এমন পরিস্থিতিতে কি করা যায়। নীলার হাসব্যান্ড ঠিক এই সময়ে এখানেই আসবে এটা খুব বেশি কাকতাল হয়ে গেল। আচ্ছা আসুক তাতে ওর কিছু যায় আসে না। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ভালো হয় স্বাভাবিকভাবে বসে থাকা। কিন্তু নীলাকে দেখে মনে হচ্ছে না ও স্বাভাবিক থাকতে পারবে। মুখটা শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেছে, খুব মায়া হয় তাহসানের। দ্রুত ভাবে, উপায় কী?

হঠাৎ একটা কথা মনে হতেই তাহসান মুখটা নামিয়ে নিচু গলায় বলে, ‘আমাদের খাবার তো এখনও আসেনি। এক কাজ করি, আমি এখান থেকে ওয়াশরুমে যাচ্ছি, তারপর ওখান থেকে সরাসরি বাইরে বের হয়ে যাব। আমাকে তো চেনে না, তাই সমস্যা নেই। তুমি তোমার মতো খেতে থাকো, বলবে তুমি কেনাকাটা করতে এসেছিলে।’

কথাটা বলেই তাহসান উঠে দাঁড়িয়ে সোজা ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়। নীলা মাথা নিচু করে বসে থাকে, বুকটা ধুকপুক করছে। আবিরের দিকে ও পেছন ফিরে বসেছে, তাই ঠিক দেখতে পাচ্ছে না আবির এখন কি করছে। আবির কি ওকে পেছন থেকে চিনতে পারবে? আচ্ছা ও কি আগে এগিয়ে যাবে নাকি আবিরের জন্য অপেক্ষা করবে? দিশেহারা বোধ করে নীলা, সেইসাথে নিজের উপর খুব রাগ হয়। একটাই স্বস্তি তাহসান এখন ওর টেবিলে নেই। আহারে বেচারা, এত বড় একজন মানুষ, এমন চোরের মতো লুকাতে হলো!

খাবারের অর্ডার দিয়ে আবির সাদাতের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তুমি একটু বসো, আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসি।’

আবির একটু তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমের দিকে এগোয়, বড্ড চাপ পেয়েছে। ঢোকার দরজাটা জোরে টান দিতেই এক লোক হুড়মুড়িয়ে ওর উপর পড়ে যায়, কী কেলেংকারী! আবির তো সরি বলতে বলতে অস্থির। তা যে লোকটা অমন করে পড়ে গেল তার কোনো ভ্রুক্ষেপই নাই। ওর দিকে একবার তাকালও না, it’s ok, কথাটাও বলল না। কেমন তড়িঘড়ি করে একটা সুন্দর পারফিউমের ঘ্রাণ পেছনে ফেলে রেখে চলে গেল। লোকটা অদ্ভুত তো!

আচ্ছা লোকটা বাথরুম থেকে কিছু চুরি করে নিয়ে যায়নি তো? ভাবনাটা ভাবতেই হাসি পায় আবিরের, অমন ধোপদুরস্ত পোশাকআশাকের মানুষ কী চুরি করতে পারে! আবির আর দেরি করে না, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়াটাই এখন উত্তম।

এদিকে নীলা চোখের কোণায় পুরো ঘটনাটা খেয়াল করে। ইশ, তাহসান তো ধরাই পড়ে যাচ্ছিল! আবির ওয়াশরুমে ঢুকল। নীলার হঠাৎই মনে হয়, আচ্ছা, ও তাহলে বসে আছে কেন? এই সুযোগে এখনই বের হয়ে যাওয়া যাক। ভাবনাটা ভাবতেই নীলা ওঠে পড়ে, পা বাড়াতেই ওয়েটার হাসিমুখে বলে, ‘ম্যাডাম, আপনাদের খাবার রেডি।’

নীলার পা থেমে যায়, ইশ, টেনশনে ও অর্ডারের কথাটাই ভুলে গেছিল। ঠোঁটটা কামড়ে ভাবে, কী করা যায়? এখন তো বসতেই হবে। কিন্তু দু’জনের খাবার দেখলে তো আবির সন্দেহ করবে। নীলা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়, বলে, ‘একটা খাবার পার্সেল দিন প্লিজ।’

ওয়েটারটা অবাক হয়, এই ম্যাডামের সাথের লোকটা গেল কই?

এদিকে আবির ভারমুক্ত হয়ে চোখেমুখে পানি দিয়ে বের হয়। তারপর ধীরে সুস্থে টেবিলের দিকে এগোতে যেতেই থমকে দাঁড়ায়, হা হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে, এটা কী নীলা! নীলাই তো। নতুন শাড়িতে ও চিনতেই পারেনি প্রথমে। কিন্তু নীলা এই ভর দুপুরে অফিস ফেলে এখানে একা একা খাচ্ছে!

আবির কাছে গিয়ে বিস্মিত গলায় বলে, ‘নীলা তুমি এখানে?’

নীলা অবাক হবার ভানটা করে, তারপর চোখমুখে বিস্ময় ফুটিয়ে বলে, ‘তুমি এখানে কী করছ অফিস ফেলে? তাও এই দুপুর বেলা।’

আবির থতমত খেয়ে যায়, যে প্রশ্নটা ওর করার কথা ছিল সেটা নীলা করেছে। ও পুরোই এলোমেলো হয়ে যায়। জিভে আসা প্রশ্নটা ভুলে যায়, উল্টো নিজেই আমতাআমতা করে বলে, ‘এই পাশের একটা অফিসে আসছিলাম। এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম, ভাবলাম লুঙ্গিটা কিনে নিয়ে যাই।’

নীলা এবার মনে মনে জিভ কাটে, হায় হায়, ওর না লুঙ্গি কেনার কথা ছিল। দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, ‘বাহ, মিলে গেল কী করে? আমি আমার জন্য একটা পার্স কিনতে আসছিলাম আর সাথে তোমার লুঙ্গিটা। তুমি কিনে ফেলেছ?’

আবির মাথা নাড়ে, আসলে ওর মাথায় কিছু ঢুকছে না। নীলা কেনাকাটা করতে এসে এখানে খাচ্ছে কেন? ওর অফিসে কি আজ ক্যান্টিন বন্ধ?

নীলা এবার নিজেই ব্যাখ্যা দেয়, বলে, ‘আসলে খুব ক্ষুধা পেয়েছিল, তাই একটু খেয়ে নিলাম। আর টুকুনের জন্যও একটা পার্সেল নিয়ে নিলাম।’

এবার আবিরের কাছে ব্যাখ্যাটা সন্তোষজনক মনে হয়। আবির এবার আরেকটা প্যাকেট থেকে একটু আগে কেনা শাড়িটা বের করে, বলে, ‘,দেখো তো পছন্দ হয় কি না। তোমার জন্য কিনলাম।’

নীলা শাড়িটা হাতে নেয়, তারপর গম্ভীরমুখে বলে, ‘সুন্দর। কিন্তু শাড়িটা কি আমার জন্য কিনেছ না অন্য কারও জন্য? তুমি তো কখনও শাড়ি কোনো না।’

নীলার কথা সত্য, ও সাধারণত শাড়ি কেনে না। আজ শখ করে কিনে কী বিপদে পড়ল! আবিরের এবার মুখ শুকিয়ে যায়। এই রে, উলটো ও প্যাঁচে পড়ে যাচ্ছে। তোতলানো গলায় বলে, ‘কী বলছ এসব! তোমার জন্যই তো কিনেছি। ওই যে সাদাতকে জিজ্ঞেস করো।’

আবির দ্রুত সাদাতকে ডাকে,’এই, এদিকে আসো। তোমার ভাবির সাথে পরিচয় হও। তোমার ভাবির জন্য শাড়িটা তো তুমিই পছন্দ করে দিলা।’

নীলা কটমট করে আবিরের দিকে তাকায়। মনে মনে ও বাহবা দেয় নিজেকে। যাক, পরিস্থিতি এখন ওর নিয়ন্ত্রণে।

সাদাত এসে সালাম দেয়, ওর চোখ ছানাবড়া। আবির ভাইয়ের বউ তো পুরো নায়িকাদের মতো। নীলা ছেলেটার চোখে মুগ্ধতা টের পায়।

এরপর ওরা তিনজনে মিলে খাওয়া দাওয়া করে। বিল দিয়ে বের হতেই আবির বলে, ‘তুমি তাহলে তোমার পার্স কেনো, আমার একটু তাড়া আছে। অফিস যাই। আর ভুল করে কিন্তু আবার আমার লুঙ্গি কিনো না।’

নীলা হাসে, তারপর হাত নেড়ে বিদায় দেয়।

আবির চলে যেতেই নীলা একটা হাঁপ ছাড়ে। উফ, কী একটা উত্তেজনা গেল! নাহ, এমন আর না। তাহসানকে আর প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। কথাটা ভাবতে ভাবতে নীলা আড়ংয়ে ঢোকে, পার্সটা কিনতে হবে।

২.
তাহসান অফিসে ফিরে নিজের টেবিলে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকে। এটা কি হলো আজ? ইশ, নীলা না জানি কি করে সামলিয়েছে। আচ্ছা মেয়েটা তো আবার ভয় পেয়ে ওর কথা বলে দেয়নি তো? একটা খবর যদি পাওয়া যেত। ফোনও করা যাচ্ছে না, মেসেজও দিতে ভয় লাগছে এখন। ভীষণ চিন্তা হচ্ছে নীলার জন্য। অনেক ভেবে বিকেলের দিকে নীলাকে একটা মেসেজ লিখে, ‘আপনার অফিস ঠিকঠাক চলছে তো?’

মেসেজটা পাঠিয়ে তাহসান উদ্বেগ নিয়ে অপেক্ষা করে নীলার উত্তরের। একটু পরেই ওপাশ থেকে ‘টুন’ শব্দে মেসেজ আসে। মেসেজের এই ছোট্ট শব্দেই তাহসানের বুকে যেন ভূমিকম্প হয়, ধড়ফড় করে উঠে। তাড়াহুড়ো করে মেসেজটা খুলতেই দেখে একটা হাসির ইমোজি, আর তার নিচেই লেখা, ‘জ্বি, আমার অফিস ঠিকঠাক। আপনার কী অবস্থা, লাঞ্চ করেছিলেন?’

মেসেজটা পড়ে তাহসানের যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে, তার মানে সব ঠিকঠাক আছে। উফ, বাঁচা গেল। হঠাৎ করেই মনে হয় ওর ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে, এই উত্তেজনায়, দুশ্চিন্তায় এতক্ষণ ভুলেই গিয়েছিল যে ও এখনও খায়নি।

তাহসান একটা দুঃখের ইমোজি দিয়ে লিখে, ‘না খাইনি। তোমার সাথেই তো খাওয়ার কথা ছিল আজ। সেটা যখন হলো না, থাক, আজ নাই বা খেলাম।’

নীলা অফিসে বসে কফি খাচ্ছিল। মেসেজটা পড়ে মন খারাপ হয়ে যায়। ইশ, তাহসান না খেয়ে আছে এখনও! আহারে বেচারা, ওর সাথেই তো দুপুরে খাওয়ার কথা ছিল। অফিস থেকে নিশ্চয়ই বাইরে খাওয়ার কথা বলে বের হয়েছিল, সেটা তো হয়নি। তাই অফিস যেয়ে খেতেও পারেনি।

নীলা সাথে সাথে ফোন দেয়, মায়া নিয়ে বলে, ‘প্লিজ কিছু খেয়ে নাও। আমি আসলেই সরি। হুট করে অমন ভয় পেয়ে গেলাম। আমার জন্য তোমাকে এমন করে পালিয়ে আসতে হলো।’

তাহসানের একটু আগের সমস্ত মন খারাপ দূর হয়ে যায়, নীলা ওকে তুমি করে বলছে। একটা দারুণ ভালো লাগা ওকে জড়িয়ে ধরে, গাঢ় গলায় বলে, ‘না, ঠিক আছে, কোনো সমস্যা হয়নি আমার। আর তোমাকে অনেক অনেক থ্যাংক্স, তুমি করে বলার জন্য।’

নীলা একটু লজ্জাই পায়, আলতো করে বলে, ‘আচ্ছা, আমি ছাড়ছি। তুমি খেয়ে নিও প্লিজ।’

ফোনটা রাখতেই তাহসানের মনটা ভালো হয়ে যায়। পিয়নকে ডেকে একটা স্যান্ডউইচ আনতে বলে।

৩.
আবির নতুন লুঙ্গি পরে বসে বসে টিভি দেখছে। লুঙ্গিটা কেমন যেন ফুলে ফেঁপে আছে। নীলা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে, ‘এই, তুমি এটা না ধুয়েই পরে ফেলছ? আশ্চর্য মানুষ। এজন্যই তো কেমন যেন ফুলে আছে। আর কত মানুষ এটা ধরেছে, সেটাই পরে বসে আছ। এখনই পাল্টাও।’

আবির হাসে, বলে, ‘ঠিক বলেছ তো। আমি ভাবছিলাম এমন লাগছে কেন। যাই চেঞ্জ করে আসি। আর তোমার শাড়িটা ভালো করে দেখেছ?’

নীলা মাথা নাড়ে, তারপর সন্দেহের গলায় বলে, ‘আচ্ছা, তুমি সত্যি করে বলো তো, শাড়িটা কী তুমি অন্য কারও জন্য কিনেছিলে? তা না হলে হঠাৎ করেই শাড়ি কিনতে যাবে কেন? আবির, তুমি অন্য কারও সাথে জড়িয়ে পড়নি তো?’

নীলার কথা বলার ধরন দেখে আবির ভয় পেয়ে যায়। একটা অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে বলে, ‘তুমি আবার এই কথাটা বললা? তুমি সাদাতকে এখনই ফোন দাও। ওকে বলেছিলাম, তোমার ভাবির জন্য একটা শাড়ি কিনব। আর ওই তো শাড়ির রঙটা পছন্দ করে দিল।’

নীলা এবার সহজ হয়, মজা করে বলে, ‘আচ্ছা। এবারের মতো ছেড়ে দিলাম।’

আবির স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে, তারপর বেডরুমের দিকে যেতে যেতে ভাবে, আচ্ছা একটা প্রশ্ন নীলাকে জিজ্ঞেস করা হলো না। আজ অমন অসময়ে ও একা একা লাঞ্চ করছিল কেন?

আবির বেডরুমে চলে যেতেই নীলা ঠোঁট কামড়ে ভাবে আবিরকে এভাবেই একটু চাপে রাখতে হবে। ভাবনাটা ভাবতে ভাবতে ও টুকুনের রুমে ঢোকে।

টুকুন মনোযোগ দিয়ে মোবাইলে কী যেন করছে। নীলার ভ্রু কুঁচকে ওঠে, কড়া গলায় বলে, ‘টুকুন, তুমি পড়া রেখে মোবাইলে কী করছ?’

টুকুন চোখ তুলে তাকায়, তারপর বলে, ‘আম্মু, আমাদের ক্লাশের গ্রুপে একটা পড়া নিয়ে কথা বলছিলাম।’

নীলা বিরক্তির সাথে বলে, ‘সারাদিন তো স্কুলেই থাকো, তখন জিজ্ঞেস করো না কেন? পড়ার সময় আমি যেন মোবাইল হাতে না দেখি।’

টুকুন মন খারাপ করে মোবাইলটা রেখে বই নিয়ে বসে। একটা অভিমান ঘিরে ধরে, আম্মু ওকে শুধু শুধু বকল। কাল একটা ক্লাশ এক্সাম আছে, তাই নিয়ে ও মাত্রই মোবাইলটা খুলেছিল।

ঠিক এই সময় নীলার মোবাইলে একটা মেসেজ আসে, তাহসানের। নীলা সাথে সাথে মোবাইলটা খুলে, একটা জোকস পাঠিয়েছে, দারুণ হাসির। নীলা হেসে ফেলতেই টুকুন ঘুরে আম্মুর দিকে তাকায়। তারপর মুখ গম্ভীর করে আবার পড়ায় মনোযোগ দেয়। টুকুনের হঠাৎ একটা কথা মনে হয়, আম্মু ইদানীং ওর সাথে কম গল্প করে। প্রায়ই ফোনে কিসব মজার ভিডিও দেখে আর হাসে।

নীলা টুকুনের গম্ভীরমুখটা খেয়াল করে। মাথা নেড়ে নিজেকে একটু শাসন করে, নাহ, টুকুনের সামনে আর মোবাইল দেখবে না। পাশে বসে আদর গলায় বলে, ‘টুকুন, তোর জন্য বাইরে থেকে খাবার এনেছি আজ। খাবি এখন, গরম করে দেই?’

মুহুর্তেই টুকুনের মনটা ভালো হয়ে যায়। আম্মু মাঝে মাঝেই বাইরে থেকে মজার মজার খাবার নিয়ে আসে। ওর খুব ভালো লাগে বাইরের খাবার খেতে। একটু আগের আম্মুর উপর মন খারাপটা উধাও হয়ে যায়। এই আম্মুটা অনেক ভালো।

৪.
ঢাকার তিনশ ফিট রাস্তাটা এখন আগের চেয়ে দ্বিগুণ প্রশস্ত। অনেকগুলো লেন করা হয়েছে, তাতে গাড়ি চলাচল অনেকটাই সহজ হবে। বিশেষ করে উত্তর পাশের পূর্বাচলে যখন বসতি গড়ে উঠবে। এখনও জায়গাটা অনেকটাই খালি, কিছু কিছু ঘরবাড়ি হচ্ছে। জায়গাটা ফাঁকা বলে খুব ভালো লাগে, অনেকেই বিকেলের পর এখানে ঘুরতে আসে। ভালো ভালো কিছু রেস্টুরেন্টও হয়েছে। ঠিক এমনই একটা রেস্টুরেন্টের সামনে একটা কালচে ছাই রঙের লেক্সাস গাড়ি এসে থামে।

তাহসান গাড়িটা থামাতেই নীলা মাথা নাড়ে, বলে, ‘না, কিছু খাব না। আর রেস্টুরেন্টে বসার চেয়ে গাড়িতেই ভালো। কারও চোখে পড়ে যাবার সম্ভাবনা নেই।’

তাহসাম মাথা নাড়ে, কথাটায় যুক্তি আছে। হেসে ও আবার গাড়ি স্টার্ট করে। পূর্বাচলের ভেতরের রাস্তাগুলো খালিই থাকে। তাহসান গাড়ির গতি কমিয়ে কথা বলতে থাকে। একটা মিষ্টি ঘ্রাণ ভেসে আসছে, নীলার শরীর থেকে। দু’জনেই এলোমেলো কথা বলতে থাকে। হঠাৎ করে সামনে একটা কি যেন পড়তেই তাহসান জোর পায়ে ব্রেক চেপে ধরে। নীলা শেষ মুহুর্তে তাহসানের বাহু খামচে ধরে নিজেকে সামলায়। তাহসান এবার ভালো করে সামনে দেখে নেয়, তারপর একটা হাঁপ ছেড়ে বলে, ‘কিছু হয়নি, একটা কুকুর দৌড়ে রাস্তা পার হচ্ছিল।’

নীলা তখনও তাহসানের বাহুটা ধরে আছে। তাহসান হেসে নীলার হাতে একটু চাপ দেয়, বলে, ‘ভয় পেয়েছিলে?’

নীলা মাথা নাড়ে, তারপর আরও কাছে সরে বসে, হাতটা ছাড়ে না। তাহসান একটা দারুণ সুখের সাগরে ভেসে যেতে থাকে। ভাবে, আজকের বিকেলটা এত সুন্দর কেন?

ফেরার সময় নীলা একটা অদ্ভুত কথা বলে, ‘আমার সামনের মাসের ২১ তারিখে দেশের বাইরে একটা ট্রেনিং আছে, financial integrity এর উপর। আপনাদের এমন ট্রেনিং হয় না?’

তাহসান চমকে ওঠে, বলে, ‘আরে আমিও তো যাচ্ছি এই ট্রেনিংয়ে। সিংগাপুরে তো?’

নীলা খুশিতে চিৎকার করে ওঠে, ‘হ্যাঁ, সিংগাপুরেই। ওয়াও। কী মজা! অনেক অনেক ঘুরে বেড়াব।’

তাহসানের মনে হচ্ছে খুশিতে ও আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। নীলাকে নিজের মতো করে কাছে পাওয়া যাবে ক’টা দিন। ওর মনের সব কথাগুলো বলতে পারবে। আর এদিকে নীলা ভাবছিল, যাক, তাহসান যাচ্ছে খুব ভালো হবে। এটা একটা ইন্টারন্যাশনাল ট্রেনিং, অন্য অনেক দেশ থেকেই লোকজন আসবে। ওদের অফিস থেকে ও একাই যাচ্ছিল, তাই মনটা খারাপ ছিল। এখন আর একা একা লাগবে না। একজন পরিচিত মানুষ পাওয়া গেল। আচ্ছা শুধুই পরিচিত মানুষ নাকি আরও কাছের মানুষ?

(চলবে)

মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সুবাস
শিমুলতলী, গাজীপুর
২৫/০৭/২০২২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here