গল্পঃ_অন্যরকম_প্রেমানুভূতী #Maisha_jannat_nura #পর্ব_৮

0
390

#গল্পঃ_অন্যরকম_প্রেমানুভূতী
#Maisha_jannat_nura
#পর্ব_৮

গাড়ি চৌধুরী ম্যানশনের মূল গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে, একটুপর সবাই গাড়ি থেকে নামে আর তুর্য গাড়ি পার্কিং করতে চলে যায়। আমজাদ চৌধুরী, তীব্র আর তৃপ্তি বাড়িতে প্রবেশ করে,

-কি হলো, কোথায় সবাই দাদুভাই কে নিয়ে তো চলে আসলাম (আমজাদ চৌধুরী)

একটুপর সবাই ড্রয়িংরুমে চলে আসে, সুবর্ণা চৌধুরী (তীব্রের দাদীমা) তীব্রের কাছে এসে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে, সুবর্ণা চৌধুরীর এমন ছলছল দৃষ্টি দেখে তীব্র বলে..

-ওহহ মাই ইয়ং কুইন এখন কান্না করো না দেখো আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছি।

-তুই জানিস এই কয়েকদিন আমাদের কিভাবে কেটেছে, তোর এমন অবস্থায় আমরা কতোটা কষ্টের মাঝে ছিলাম (সুবর্ণা চৌধুরী)

-হুম বুঝতে পেরেছি তো এবার কান্না বন্ধ করো (তীব্র)

তীব্রের কথায় সুবর্ণা চৌধুরী শান্ত হয়, তীব্র ওর দাদীমাকে সোফায় বসিয়ে দেয়। এতোসময় তৃপ্তি আমজাদ চৌধুরীর পাশেই দাড়িয়ে ছিলো সবাই তীব্রকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ওর দিকে তখনও কেও খেয়াল করে নি, একটুপর একজন পিচ্চি তৃপ্তির কাছে এগিয়ে এসে তৃপ্তির ওড়না টেনে ধরে বলে..

-মিষ্টি আন্টি তুমি অনেক সুন্দর দেখতে, কিন্তু তুমি কে?

(পিচ্চিটি হলো তীব্রের কাজিনের মেয়ে, বয়স ৪ বছর, ওর নাম অথৈ)

অথৈয়ের কথায় ড্রয়িংরুমের উপস্থিত সবার স্থির দৃষ্টি এখন তৃপ্তির উপর, তৃপ্তি কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, তীব্রের দাদীমা তৃপ্তির কাছে এসে তৃপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-কে তুমি দিদিভাই?

তৃপ্তি আমজাদ চৌধুরীর দিকে একনজর দেখে দৃষ্টি নিচে নামিয়ে নেয়, আমজাদ চৌধুরী সকলের উদ্দেশ্যে বলে..

-ওর নাম তৃপ্তি, আজ থেকে ওও মোহনা আর রুবাইয়ার (মোহনা তীব্রের ছোট বোন আর রুবাইয়া অথৈয়ের মা) মতো আমাদের পরিবারের একজন সদস্য হয়ে থাকবে।

আমজাদ চৌধুরীর কথায় সবাই বেশ অবাক হয়ে যায়, তানজীব চৌধুরী (তীব্রের বাবা) আমজাদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-কিন্তু বাবা ওর পরিচয়..
-ওর পরিচয় তো দিলাম ই আজ থেকে ওও আমার নাতনী এছাড়া ওর অন্য পরিচয় নেই (আমজাদ চৌধুরী)

আমজাদ চৌধুরীর কঠিন গলায় বলা কথা শুনে তানজীব চৌধুরী আর কিছু জিঙ্গাসা করার সাহস পায় না, আমজাদ চৌধুরী রসিক মনের মানুষ হলেও ওনার রাগ ও অনেক বেশি তাই উনি রাগ হলে সেখানে বাড়ির কেও কথা বলার সাহস জুগিয়ে উঠতে পারে না শুধু তীব্র ছাড়া, তীব্রই একমাত্র যে তার দাদুকে কন্ট্রোল করতে পারে রাগের সময়।

-উপরে তীব্রের পাশে যে রুমটি ফাঁকা আছে আজ থেকে তৃপ্তি সেখানেই থাকবে, রুবাইয়া ওকে রুমে নিয়ে যা, দাদুভাই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট কর এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠিস নি তুই, আর বাকিরাও যার যার কাজে যাও।

আমজাদ চৌধুরী সকলকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলে সেখান থেকে তার রুমে চলে যান, পিছন পিছন সুবর্ণা চৌধুরী ও রুমে চলে আসেন। তীব্র একনজর তৃপ্তিকে দেখে উপরে চলে যায় নিজের রুমে, তৃপ্তির মাঝে এখনও একটু সংকোচবোধ কাজ করছিলো, অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে সে এখনও ওর ওড়না নিজের হাতে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে খেলা করছে, তা দেখে তৃপ্তি হেসে দেয় অথৈয়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে

– এই গুলুমুলু মামনি কি করছো তুমি?

-তোমার ওড়না থেকে কি মিষ্টি গন্ধ আসছে তাই তোমার ওরনা নিয়ে খেলা করছি, এখন বিরক্ত করো না তো (অথৈ)

পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো অথৈয়ের মা রুবাইয়া চৌধুরী, অথৈয়ের এমন কথায় সে তৃপ্তির কাছে এসে ওকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-তুমি ওর কথায় কিছু মনে করো না গো, বাচ্চা মেয়ে এই বয়সেই কেমন পাকনা পাকনা কথা বলতে শিখে নিয়েছে ওকে নিয়ে আর পারি না।

-আরে আপু কি যে বলেন না, ওও অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে ওর এতো সুন্দর ভাবে বলা কথায় কি কিছু মনে করা যায়, আমি কিছু মনে করি নি (তৃপ্তি)

-আচ্ছা চলো এখন তোমাকে তোমার রুমটা দেখিয়ে দেই (রুবাইয়া চৌধুরী)

-ঠিক আছে (তৃপ্তি)

বলেই তৃপ্তি অথৈকে কোলে তুলে নেয় এরপর ওরা ৩জন উপরে চলে আসে, রুবাইয়া তৃপ্তিকে ওপরে ওর জন্য ঠিক করা রুমে নিয়ে আসে আর বলে..

-তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও, আলমারীতে কিছু জামা রাখা আছে আপাতত ঐগুলোর ভিতর একটা পড়ে নিও পরে এসে বাকি জামাগুলো দিয়ে যাবো কেমন।

তৃপ্তি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়, অথৈ এখনও তৃপ্তির কোলেই ছিলো রুবাইয়া অথৈ কে বলে..
-মামনি আমার কাছে এসো, তোমার মিষ্টি আন্টি এখন ফ্রেশ হবেন।

-না যাবো না, আমার মিষ্টির সাথে থাকতে
অনেক ভালো লাগছে মাম্মাম (অথৈ)

-মিষ্টি এখন রেস্ট করবে, আমরা বিকালবেলা এসে অনেকক্ষণ খেলা করবো মিষ্টির সাথে এখন এসো আমার মামনি (রুবাইয়া চৌধুরী)

-আচ্ছা যাবো কিন্তু আমার মিষ্টির ওরনা টা লাগবে, ঐটা আমি আমার সাথে এখন নিয়ে যাবো নয়তো যাবো না (অথৈ)

অথৈয়ের কথা শুনে তৃপ্তি আর দেড়ি না করে ওর ওরনা খুলে অথৈ কে দিয়ে দেয়, অথৈ ও হাসিমুখে ওরনাটা নিয়ে তৃপ্তির গালে একটা পাপ্পি দিয়ে ওর মাম্মার সাথে চলে যায়, বাচ্চা মেয়েটা এমন কাজে তৃপ্তি হেসে দেয়, পরে আলমারী থেকে একটা জামা বের করে ওয়াসরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।

এদিকে তীব্র ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে আছে, কেন যেন ওর তৃপ্তির কথা খুব মনে পড়ছে এইতো একটু আগেই নিচ থেকে আসলো এতো অল্প সময়ে আবার কেন ওর কথা মনে পড়ছে সেটাই বুঝতে পারছে না তীব্র, আগে কখনও কোনো মেয়ের প্রতি ও এতোটা ইফেক্টিভ হয় নি অনেকবার তৃপ্তির কথা চিন্তা করা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চেয়েও ব্যর্থ হয় তীব্র, আর বলে এই পুঁচকে মেয়েটা এই কয়দিনেই আমাকে পাগল বানিয়েছে, নিজের রুমে শান্ত হয়ে বসে থাকতে না পেরে হাটা ধরে তৃপ্তির রুমের উদ্দেশ্যে।

একটুপর তৃপ্তি ওয়াসরুম থেকে বের হয় ভেজা চুল গুলো কমোর পর্যন্ত ছাড়ানো মুখে বিন্দু বিন্দু পানির কণা লেগে আছে যা ওর সৌন্দর্য অনেক বাড়িয়ে তুলেছে, কেও একজন যে তার দিকে নেশাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেদিকে তৃপ্তির যেন কোনো খেয়াল নেই, সে আপনমনে চোখ বুঝে গুনগুন করে গান করছে আর তোয়ালে দিয়ে চুল মুছছে।

একটুপর তৃপ্তি চোখ খুলে সামনে তাকাতেই যেন অবাকের চরম মুহূর্তে পৌঁছে যায়, দেখে তীব্র বিছানা বসে একধ্যানে ওর দিকে তাকিয়ে আছে, তৃপ্তি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর গায়ে ওড়না নেই তোয়ালে দিয়ে নিজেকে কোনোভাবে ঢেকে নিয়ে উল্টো ঘুরে দাঁড়ায়। তৃপ্তিকর এভাবে উল্টো ঘুরতে দেখে তীব্রের ধ্যান ভেঙে যায়, এতো সুন্দর মূহূর্তটা এতো তাড়াতাড়ি নষ্ট হওয়ায় তীব্রের বেশ রাগ হচ্ছে তবুও নিজেকে সংযত করে স্বাভাবিক কন্ঠে তৃপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বলে..

-এখন উল্টোঘুরে কি হবে যা দেখার তা তো দেখে নিয়েছি।

তীব্রের এমন লজ্জাবিহীন কথায় তৃপ্তি অবাকের সাথে রাগ ও হয়, উল্টোঘোরা অবস্থাতেই ক্ষীপ্ত কন্ঠে বলে উঠে..

-এই মি.বজ্জাত আপনি এখন আমার রুমে কি করছেন শুনি, দাদু তো আপনাকে রেস্ট করতে বললো, আপনি সেটা না করে আমার রুমে কেন এসেছেন?

তৃপ্তির কথায় তীব্র বিছানা থেকে উঠে তৃপ্তির কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বলে..
-কেন এসেছি তা তো জানি না, তবে আমার যখন যেইটা করতে ইচ্ছে করে আমি সেটাই করি।

তীব্র তৃপ্তির অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছে ওদের ২জনের মাঝে অল্প জায়গা দুরুত্ব পূরণ বাকি, সেইসময় তৃপ্তি সামনে ঘুরতে নেয় আর তীব্রের বুকের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিলে তীব্র তৃপ্তিকে ধরে নেয়, একহাত তৃপ্তির কমোরে রেখে অন্য হাত দিয়ে ওর হাত ধরে রাখে। হঠাৎ ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিলে তৃপ্তি নিজের চোখ মুখ কুঁচকে নেয় আর বলে..

-রুমের মাঝে আবার এই দেওয়াল কিভাবে আসলো উফফ আমার কমোরটা ভেঙে গেলো নিশ্চয়ই, কি হলো ব্যাথা লাগছে না কেন আমি মরে গেলাম না তো আল্লাহ এখন আমার কি হবে (চোখ বন্ধ করে এসব উল্টোপাল্টা বলছে আর ন্যাকা কান্না করছে)

আবারও তৃপ্তির এমন উল্টোপাল্টা কথা শুনে তীব্র বেশ রাগ হচ্ছে, সে হ্যাচকা টানে তৃপ্তিকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় আর ১হাত দিয়ে তৃপ্তির হাত দুটো পিছনে কোমরের সাথে লাগিয়ে নেয় শক্ত করে ধরে রাখে। হঠাৎ হ্যাচকা টানে তৃপ্তি একটু ভয় পেয়ে যায়, আস্তে করে চোখ মেলতে নিজেকে আবারও তীব্রের বাহুডরে বাঁধা অবস্থায় দেখে তৃপ্তির মাঝে আগের থেকেও বেশি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে, কোনোভাবে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে তীব্রকে উদ্দেশ্যে করে বলে..

-আ আপনি, আমায় ছ ছেড়ে দিন আপনার এমন ছোঁয়ায় আমার ভিতর খুবই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, ছ ছেড়ে দিন পি প্লি…

তৃপ্তিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তীব্র তৃপ্তি ঠোঁটে নিজের একটা আঙুল ঠেকিয়ে বলে..

-চুপ…. কোনো কথা না, আমাকে জ্বালিয়ে মারছো এখন আমি একটু কাছে আসলেই তা তুমি সহ্য করতে পারছো না, তবে আমি আছি কিভাবে তোমার এতো জ্বালা সহ্য করে?

তীব্রের কথায় তৃপ্তি চোখ বড়বড় করে তীব্রের দিকে তাকায়, তৃপ্তিকে এভাবে তাকাতে দেখে তীব্র তৃপ্তিকে নিজের আরো একটু কাছে টেনে নেয় ২জনের গরম নিঃশ্বাস একে উপরের মুখে আছড়ে পড়ছে, আরো কাছে টেনে নিতেই তৃপ্তির নিঃশ্বাস ভাড়ি হয়ে আসছিলো ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করেও লাভ হয় নি, তীব্রের জীম করা এমন বিশাল দেহী, শক্তিশালী মানুষটির সাথে কি আর ওর মতো মেয়ে পেরে উঠতে পারে, তীব্র আবার ও বলে উঠে..

-কেন যে এভাবে অযথা ছটফট করে নিজের শক্তি ক্ষয় করো বুঝি না, জানো আমার সাথে পেরে উঠবে না তবুও বৃথাই চেষ্টা করো।

তীব্রের এমন কথায় তৃপ্তি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে উঠে..
-বজ্জাত, পঁচা ডোবার ডিম, হাতি আমাকে ছেড়ে দিন বলছি।

-উফফফ, আবারও বজ্জাত বললে এবার তো আর ছাড়ছি না, বজ্জাত যখন বললেই এখন বজ্জাতরা কি কি করতে পারে আমিও করি তেমন!

বলেই তীব্র তৃপ্তির মুখের কাছে নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে যায়, তীব্রের এমন কথা ও কাজে তৃপ্তি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়, রাগে নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে ওর, কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে হঠাৎ বলে উঠে..

-আরে দাদুউউউ….
তৃপ্তির মুখে দাদু ডাক শুনে তাড়াতাড়ি করে তীব্র তৃপ্তিকে ছেড়ে দেয়, তীব্র তৃপ্তিকে ছেড়ে দিতেই তৃপ্তি বিছানায় রাখা ওরনাটা নিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে ওকে আর পায় কে, তৃপ্তির এমন কাজে তীব্র বোকাবনে যায় আর বলে..

-এভাবে আমাকে বোকা বানালো পাজি মেয়েটা, এর মজা তো পরে বোঝাবো।

বলেই তীব্র ও তৃপ্তির রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে চলে যায়।

#চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here